কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

তবু যারা ক্ষমা পেল না...

post title will place here

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَّا نَبِيَّ بَعْدَهُ

প্রত্যেক আদম সন্তানেরই ভুল হয়। ভুলের অনিবার্য পরিণতি পাপ। সেই পাপ স্বীকার করে যারা মহান প্রতিপালকের সামনে অবনত হয়, তারাই শ্রেষ্ঠ মানুষ। মানুষ পাপ করে। সেই পাপ যখন মাথার বোঝা হয়ে আসে, তখন পাপের ভার নামিয়ে দিয়ে তাকে পবিত্র করার জন্য রামাযানের আগমন ঘটে। ‘রময’ অর্থ জ্বালিয়ে দেওয়া, পুড়িয়ে দেওয়া (লিসানুল আরাব)। তাই রামাযান মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মহান আহ্বান। কৃত পাপ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মানুষকে খাঁটি সোনায় পরিণত করার আহ্বান।

রামাযান মাস আসলে ছালাত আদায়কারীর সংখ্যা বেড়ে যায়। মসজিদগুলো কানায় কানায় ভরে উঠে। গায়ে পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি পরা লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বাহারি আইটেমের ইফতারীতে দস্তরখান পূর্ণ হয়ে উঠে। আতর-সুরমার ব্যবহারে পরিবেশে সুবাস ছড়ায়। কিন্তু মূল লক্ষ্য হাছিলের পথে কয়জন পা বাড়ায়! ছিয়ামের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কয়জন খোঁজ নেয়। ছিয়াম তো তাক্বওয়া অর্জনের জন্য মহান রব ফরয করেছেন (আল-বাক্বারা, ২/১৮৩)। জৈবিক চাহিদা থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রিয় নবী। কিন্তু সেইদিকে কে ফিরে তাকায়?

রামাযান মাস মানেই নেকী অর্জনের প্রতিযোগিতা করার মাস। মহান আল্লাহ শয়তানকে শৃঙ্খলিত রেখে মানবজাতিকে দিয়েছেন পুণ্য সন্ধানের অবারিত সুযোগ। এই মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ থাকে উন্মুক্ত। জাহান্নামের দরজাগুলো থাকে বন্ধ। এজন্যই রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ওহে কল্যাণের সন্ধানী! অগ্রসর হও। ওহে মন্দের অন্বেষী! পিছিয়ে যাও’ (ইবনু মাজাহ, হা/১৬৪১; মিশকাত, হা/১৯৬০)

রামাযান মাস রহমতের মাস। এই মাসে যে রহমত পেল, সে সত্যিকারের সৌভাগ্যবান। আর যে বঞ্চিত হলো, সে চরম পর্যায়ের হতভাগ্য। রামাযান মাস ক্ষমা চাওয়ার মাস, ক্ষমা পাওয়ার মাস। তবুও যারা আলস্যে দিন কাটিয়ে দিল, ইবাদত, যিকির-আযকার, কুরআন তেলাওয়াতে রত থাকতে পারল না, কেঁদে-কেটে মহান রবের কাছে কৃত পাপের ক্ষমা ভিক্ষা নিতে পারল না তারা কতই না হতভাগ্য! আবূ হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘ঐ লোকের নাক ধুলায় ধূসরিত হোক, যার কাছে রামাযান আসলো, আবার শেষও হয়ে গেল; কিন্তু নিজের গুনাহ-খাতা মাফ করিয়ে নিতে পারল না’ (তিরমিযী, হা/৩৫৪৫; মিশকাত, হা/৯২৭)। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবার মিম্বারে ওঠার সময় বললেন, আমীন! ছাহাবীগণ কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে বললেন, যে ব্যক্তি রামাযান পেল, অথচ নিজের পাপ ক্ষমা করিয়ে নিতে পারল না, সে ধ্বংস হোক! বলুন, আমীন! তাই আমি বললাম, আমীন!’ (ছহীহ ইবনু খুযায়মা, হা/১৮৮৮)। জাবের ইবনু সামুরা রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে ওঠার সময় জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে বললেন, ‘যে রামাযান মাস পাওয়ার পর মারা গেল, কিন্তু নিজের পাপের ক্ষমা পেল না, ফলে তাকে জাহান্নামে যেতে হলো, আল্লাহ যেন তাকে আরো দূরে ঠেলে দেন; বলুন, আমীন! রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, আমীন! (আল মু‘জামুল কাবীর, হা/২০২২; ছহীহতারগীব, হা/২৪৯১)। চিন্তা করুন, সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতার দু‘আতে যদি সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটি আমীন বলেন, তাহলে সেই দু‘আ ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ আছে?

আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে একে-অন্যকে সহযোগিতা করো। আর পাপকর্ম ও আল্লাহদ্রোহিতার কাজে একে-অন্যকে সহযোগিতা করো না’ (আল-মায়েদা, ৫/২)। তাহলে যে সকল মুনাফালোভী রামাযান মাসে দিনের বেলা খাবারের হোটেল-রেস্টুরেন্ট খুলে রেখে মানুষকে ছিয়াম তরক করার সুযোগ করে দেয়, যারা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে অসহায় মানুষদের জীবনকে আরো কষ্টের মধ্যে ফেলে দেয়, তারা কোন স্তরের মুসলিম? মহান রবের আনুগত্যে অবিচল থাকা, মনের সাথে আপসহীন যুদ্ধ করে পাপকাজ থেকে নিজেকে নিবৃত রাখা, কষ্ট ও ধৈর্যের সাথে ভিক্ষুকের ন্যায় রবের সামনে নত হয়ে অতীতের কৃত অন্যায়, পাপ, ভুলত্রুটির ক্ষমা প্রার্থনাই ছিয়ামের শিক্ষা।

তাই রামাযান শেষ হয়ে গেল, অথচ আমার গুনাহ-খাতা ক্ষমা করিয়ে নিতে পারলাম না; এমন হতভাগ্য যেন আমরা না হই, সে প্রত্যাশায় শেষ হোক এবারের রামাযান। আল্লাহ কবুল করুন। আমীন!

Magazine