اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَّا نَبِيَّ بَعْدَهُ
গত ৬ ডিসেম্বর ২০২১ সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন বিষয়ক একটি সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন। যেখানে চতুর্থ থেকে অষ্টম এই পাঁচ বছরে ধর্মশিক্ষা, ভালো থাকা, শিল্প এবং সংস্কৃতি পাঠ্যক্রমে যুক্ত করার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে উঠে আসে। শিক্ষামন্ত্রীকে একটি প্রশ্ন করা হয় এভাবে— ‘পরমতসহিষ্ণুতা যেটা আপনারা সমাজে প্রমোট করতে চান, সেটার জন্যে আপনার কী মনে হয় না, সবারই কম বেশি অন্য ধর্ম সম্পর্কে জানা উচিত? সেটা কী করবেন আপনারা?’ উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই। আমিতো চাই… আমিতো আশা করছি সেটা করা হবে। প্রত্যেকটি ছাত্র-ছাত্রীকে অন্য ধর্ম সম্পর্কেও জানতে হবে। একটা হচ্ছে, নিজের ধর্ম চর্চা, সেটা একটা জায়গা। আরেকটা হচ্ছে, ধর্মীয় শিক্ষা’।
আমরা বলতে চাই, গত নভেম্বর ২০২১ সংখ্যায় ইসলামে ধর্মীয় উদারতার উপর সম্পাদকীয়তে আমরা লিখেছিলাম, ‘ইসলামের মতো আর কোনো ধর্ম অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে উদারতা ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করতে পারেনি। এমনকি যুদ্ধেও নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও বেসামরিক নিরপরাধ নাগরিকের উপর হামলা করতে ইসলাম নিষেধ করেছে। অনুরূপভাবে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নষ্ট করাও নিষেধ। সেজন্য মুসলিমদের হৃদয়ে অন্যদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ, প্রতারণা লুক্কায়িত থাকে না। বরং একজন মুসলিম ইসলামের ন্যায়পরায়ণতা, সমতা, অঙ্গীকার রক্ষা, দয়ার্দ্রতা ও নিরাপত্তা দ্বারা সকল মানুষের সাথে চলে। তবে এক্ষেত্রে সে ইসলামী আক্বীদা ও আচার-অনুষ্ঠানের অপমান বরদাশত করে না’। জি, ঠিক তাই; আমরা ইসলামের নির্দেশনা মোতাবেক ধর্মীয় উদারতা ও সহিষ্ণুতা দেখাতে মোটেও কার্পণ্য করি না। কিন্তু তাই বলে অন্য কোনো ধর্ম ও মতাদর্শ পড়ে সেটা আমাদেরকে শিখতে হবে— ব্যাপারটা মোটেও সে রকম নয়। বরং ইসলামেই রয়েছে এর সব রসদ। কোমলমতি মুসলিম শিক্ষার্থী যখন অন্য ধর্মের মতাদর্শ পড়বে, তখন নিজের অজান্তেই সে চোরাবালিতে তলিয়ে যাবে। তার কচি হৃদয়ের গহীন কোণে ইসলাম সম্পর্কে নানা বিভ্রাট ও সংশয় বাসা বাঁধবে। তার মধ্যে জন্মাবে অন্য ধর্ম, মতাদর্শ ও এর ধ্বজাধারীদের প্রতি ভালোবাসা, যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ (মুমতাহিনাহ, ৬০/৪; মায়েদাহ, ৫/৫১)। এক সময় সে ঈমান-আমল খোয়াবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের সকলের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর নিকট ইসলামই একমাত্র মনোনীত জীবনবিধান (আলে ইমরান, ৩/১৯)। ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম মহান সৃষ্টিকর্তা কস্মিনকালেও গ্রহণ করবেন না (ঐ, ৩/৮৫)।
বস্তুত একজন মুসলিমের আক্বীদা-আমলে সামান্যতম চিড় ধরাতে পারে এমন কোনো কথা শোনা ও পড়া কখনই জায়েয নেই এবং এ ব্যাপারে কোনো যুগের মুসলিম স্কলারগণের মধ্যে দ্বিমত পাওয়া যায় না। সেকারণে ছোট ছেলে-মেয়েরা তো দূরে থাক, এমনকি বয়স্ক মুসলিমেরও এমন কোনো লেখা পড়া যাবে না বা বক্তব্য শোনা যাবে না, যা তাদের ঈমান ও আমলে বিন্দুমাত্র বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। দ্বিতীয় খলীফা উমার রযিয়াল্লাহু আনহু কোনো এক আহলে কিতাবের নিকট থেকে তাদের কোনো একটি কিতাব পান এবং তা তিনি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এনে পাঠ করেন। এতে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীষণ রাগ করেন (আহমাদ, হা/১৫১৫৬, ‘হাসান’)। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সে সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! ইয়াহূদী হোক আর খ্রিষ্টান হোক, যে ব্যক্তিই আমার এ আহ্বান শুনেছে, অথচ আমার রিসালাতের উপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করেছে, অবশ্যই সে জাহান্নামী’ (মুসলিম, হা/২৪০)। অবশ্য প্রয়োজনে অন্যান্য মতাদর্শের ভ্রান্তি ও অসারতা তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই কেবল সে সম্পর্কে পড়াশুনা করা যাবে। তবে সেক্ষেত্রেও শক্ত শর্ত মানতে হবে; তা হচ্ছে, হক্ব ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করার মতো পরিপক্ক জ্ঞান ব্যক্তির মধ্যে থাকতে হবে এবং নিজে ফেতনা ও বিভ্রাটে পড়ে যাওয়ার সব রকমের ঝুঁকিমুক্ত হতে হবে। তাই যদি হয়, তাহলে কচিকাচা শিক্ষার্থীদের জন্য অন্য ধর্মের জ্ঞান অর্জন কতটুকু নিরাপদ হতে পারে, যাদের ঈমান-আমলের জ্ঞান একদম শূন্যের কোঠায়?! আমরা মনে করি, ইসলামে ধর্মীয় উদারতা সম্পর্কে মুসলিম শিক্ষার্থীদেরকে পূর্ণ ওয়াকিফহাল করাই যথেষ্ট; উদার বানানোর লক্ষ্যে অন্য ধর্মের জ্ঞান তাদের মোটেও দরকার নেই।
পরিশেষে, ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করার কারণে আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। সাথে সাথে আবেদন জানাই: (১) ধর্মীয় শিক্ষাকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত শুধু নয়, বরং অন্তত উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করুন। (২) তবে ইসলাম শিক্ষায় যেন অবশ্যই পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ ভিত্তিক খাঁটি জ্ঞান স্থান পায়, সেদিকে গুরুত্বের সাথে নজর রাখুন। (৩) বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিমরাষ্ট্রে ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বের মতো আরো যেসব নাস্তিক্য মতবাদ পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছে, সেগুলো অবিলম্বে সরিয়ে ফেলুন। (৪) কোনোভাবেই যেন সেক্যুলারিজম আমাদের শিক্ষা-সংস্কৃতিতে বিষদাঁত বসাতে না পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখুন। মহান আল্লাহ আমাদের ঈমান-আমল রক্ষা, অতঃপর দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!