اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَّا نَبِيَّ بَعْدَهُ
দেখতে দেখতেই বিদায় নিল নানামুখী নেকী কামাই ও প্রশিক্ষণের মাস রামাযান মুবারক। কিন্তু প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে বের হয়ে সৈনিক কি বসে থাকবে? অবশ্যই না। বরং প্রশিক্ষণের বাস্তব প্রয়োগ ঘটাবে। অন্যথা প্রশিক্ষণ বিফলে যাবে। রামাযানের দ্রুত বিদায় আমাদের দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের বার্তা দিয়ে গেছে। রামাযানের মতো আমাদেরও দুনিয়া থেকে দ্রুত বিদায় নিতে হবে। সুতরাং এ স্বল্প সময়ের জীবনে মোটেও সময় নষ্ট না করে পরকালের পাথেয় সঞ্চয়ের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। তাছাড়া ইসলাম কেবল অনুষ্ঠান ও মৌসূম সর্বস্ব কোনো জীবনব্যবস্থা নয়; বরং ইসলামে আমরণ আল্লাহর ইবাদত করে যেতে হয় (আল-হিজর, ১৫/৯৯)। পরিমাণে অল্প হলেও নিয়মিত ও অব্যাহত আমল মহান আল্লাহর কাছে বড় প্রিয় (বুখারী, হা/৬৪৬৪)। রামাযানের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে তাক্বওয়া অবলম্বন, যা একজন মুমিনকে চিরসঙ্গী করে থাকতে হয়। ঈমানসহ ছওয়াবের আশায় মহান আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলাই তাক্বওয়ার গোড়ার কথা, যা ছাড়া কেউ মুমিন হতে পারে না। সুতরাং তা শুধু রামাযানের খাঁচায় বন্দী করা চলে কী করে!
মাহে রামাযানে মসজিদগুলো মুছল্লীর পদভারে মুখরিত ছিলো, যা হওয়া উচিত ছিল প্রতিটি মুসলিম সমাজের প্রতিদিন পাঁচবারের চিত্র। কিন্তু রামাযানের বিদায়ের সাথে সাথে মসজিদগুলো মুছল্লীশূন্যতায় হাহাকার করতে শুরু করেছে। মুছল্লীরা মসজিদ ও ছালাতকে গুডবাই জানিয়ে চলে যাচ্ছে। অথচ ছালাত বিনা একজন মানুষ মুসলিম থাকতে পারে না (আর-রূম, ৩০/৩১; মুসলিম, হা/৮২; ফাতাওয়াল লাজনাহ আদ-দায়েমাহ, ২/২৮৪)। বরং ছালাত ত্যাগকারীর ছিয়ামসহ অন্যান্য ইবাদত কবুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই (দ্র. ফাতাওয়াল লাজনাহ আদ-দায়েমাহ, ১০/১৪০)। অতএব, ছালাত চালিয়ে যাওয়া বা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনাকেই।
মাহে রামাযানের ফরয ছিয়াম বিদায় নিলেও অন্যান্য ছিয়াম কিন্তু বিদায় নেয়নি। শাওয়ালের ৬টি ছিয়াম (তিরমিযী, হা/৭৫৯), শা‘বানের ছিয়াম (বুখারী, হা/১৯৭০), প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবারের ছিয়াম (তিরমিযী, হা/৭৪৫), প্রতি মাসে ‘আইয়্যামে বীয’-এর ৩টি ছিয়াম (তিরমিযী, হা/৭৬১), আশূরায়ে মুহাররমের ছিয়াম (মুসলিম, হা/১১৬২), আরাফার ছিয়াম (তিরমিযী, হা/৭৪৯), ছওমে দাঊদ আলাইহিস সালাম (বুখারী, হা/১৯৭৯), সাধারণ নফল ছিয়াম (বুখারী, হা/২৮৪০) সহ যত সুন্নাত ছিয়ামের নির্দেশনা শরীআতে আছে, সেগুলো পালন করে আমাদেরকে সারা বছর ছিয়ামের শিক্ষা ধরে রাখতে হবে।
কুরআন তেলাওয়াত ও শ্রবণ, ক্বিয়ামুল লায়ল, দান-ছাদাক্বা, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা, সদাচরণ, নেশাদার দ্রব্য বর্জন, গান-বাজনা বর্জন, দাওয়াতী কার্যক্রম, অন্নহীনে অন্নদান, অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো ইত্যাদি যেসব ভালোকাজের অভ্যাস আমাদের রামাযানে গড়ে উঠেছিল, সেগুলোর ধারা জারি রাখতে হবে। রামাযান চলে গেলেও এগুলো কিন্তু বিদায় নেয়নি; বরং সারা বছর এগুলো করার প্রতি ইসলাম উৎসাহিত করেছে।
যারা রামাযানের বিদায়ের সাথে সাথে এসব ইবাদত-বন্দেগী ও ভালো কাজকে বিদায় জানায়, তারা মোটেও ভালো মানুষ হতে পারে না। সালাফে ছালেহীনের কেউ কেউ বলেছেন, ‘নিকৃষ্ট ক্বওম তারাই, যারা রামাযানের বাইরে অন্য মাসে আল্লাহকে চিনে না’ (লাত্বাইফুল মাআরেফ, পৃ. ২২২)। বরং এ আচরণ মহান আল্লাহর সাথে ধোঁকা ও প্রতারণার শামিল। আরেকটি বিষয় হলো, আমরা আসলে কার ইবাদত করি? রামাযানের নাকি রামাযানের রবের? যদি রামাযানের রবের ইবাদত করে থাকি, তাহলে তিনি কিন্তু অন্যান্য মাসেরও রব। সুতরাং সারা বছর মহান রবের ইবাদতের বিকল্প নেই। আমরা কি অক্ষমতার খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে পার পেয়ে যাব? অবশ্যই না। আসলে রামাযানে প্রমাণিত হয়েছে যে, আমাদের মধ্যে আমল করার যোগ্যতা ও সক্ষমতা রয়েছে। তা না হলে গত এক মাস পারলাম কী করে?
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সর্বদা দ্বীনের উপর অবিচল রাখুন। আমীন!