اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَّا نَبِيَّ بَعْدَهُ
আলেম-উলামার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের বিভিন্ন চিত্র ফুটে উঠছে প্রতিনিয়ত। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, হয়রানি, গ্রেফতারসহ আইনী নানা পদক্ষেপ গ্রহণ সেসব ষড়যন্ত্রেরই কয়েকটি দিক। সম্প্রতি ভূইফোঁড় তথাকথিত ‘গণকমিশন’ কর্তৃক দেশের শতাধিক আলেম ও বক্তাকে হেয়প্রতিপন্ন করে দুদকে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের সেই নির্লজ্জ ধারাবাহিকতারই অংশবিশেষ।
অথচ আলেম-উলামা এদেশের বৈধ নাগরিক, তারা এখানকার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। আলেম-উলামা জাতির রাহবার। প্রকৃত মানুষ তৈরির কারিগর। তারা নিজেরা যেমন যে কোনো অন্যায়ের ব্যাপারে আপসহীন; ছোট-বড় দুর্নীতি থেকে বহু দূরে; তেমনি দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে সবচেয়ে কম সুবিধা ভোগ করা সত্ত্বেও সবচেয়ে বেশি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারাই। জন্মভূমির প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসা, এর স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশ-জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নতির জন্য সর্বকালে তাদের রয়েছে অগ্রণী ভূমিকা। ফেতনা-ফাসাদ, ঝগড়া-বিবাদ, অন্যায়-অনাচার, দুর্নীতি-কদাচার, যেনা-ব্যভিচার, চুরি, ডাকাতি, মারামারি, হানাহানি, হত্যা, লুণ্ঠন ইত্যাদি থেকে জনগণকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আলেম-উলামার অবদান সবচেয়ে বেশি। এমনকি দেশের প্রশাসন যে কাজগুলো হয়তো করতে পারেন না, সেগুলোতে উলামায়ে কেরামের রয়েছে সক্রিয় অংশগ্রহণ। যোগ্য নাগরিক তৈরি, মানবসম্পদ তৈরি, শান্তিময় পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ইত্যাদির জন্য উলামায়ে কেরাম কাজ করে যাচ্ছেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানেও তাদের অবদান কম নয়। এককথায় এদেশের আপামর জনগণকে মানুষের মতো মানুষ তৈরিতে ও একটি শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ দেশ গঠনে আলেম-উলামা পাঠদান, উপদেশদান, জুম‘আ ও ঈদের খুৎবা প্রদান, ধর্মীয় জালসা, লেখনি ইত্যাদি নানা উপায়ে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। একজন মানুষের ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তির জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন আলেম-উলামাই।
সেজন্যই তো ইসলাম আলেম-উলামার সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছে (আল-মুজাদালাহ, ৫৮/১১)। হাদীছে আলেম-উলামাকে পূর্ণিমার চাঁদের সাথে তুলনা করা হয়েছে (আহমাদ, হা/২১৭১৫)। কারণ তারাই মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথের দিশারী। আবূ মুসলিম খাওলানী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠে উলামায়ে কেরাম হচ্ছেন আসমানে তারকারাজির মতো। যখন সেগুলো মানুষের জন্য উদিত হয়, তখন তারা সেগুলো দ্বারা পথ খুঁজে পায়। আর সেগুলো অস্তমিত হলে তারা দিশেহারা হয়ে পড়ে’ (নববী, আল-মাজমূ‘, ১/১৯)। তাদের মর্যাদা, গুরুত্ব ও সার্বজনীন কল্যাণকামিতার কারণেই ফেরেশতা থেকে শুরু করে পানির নিচের মাছ ও গর্তের পিঁপড়া পর্যন্ত সবাই তাদের জন্য কল্যাণের দু‘আ করে (তিরমিযী, হা/২৬৮৫)।
এই যাদের মর্যাদা, এই যাদের অবদান, তাদের বিরুদ্ধাচরণ করা, তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা কারো জন্যই সমীচীন নয়; বরং তা রীতিমতো অন্যায়। হাদীছে কুদুসীতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো অলীর সঙ্গে দুশমনি করবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব’ (বুখারী, হা/৬৫০২)। হাফেয ইবনে হাজার আসক্বালানী রহিমাহুল্লাহ এ হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘এখানে আল্লাহর অলী দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞানী ব্যক্তি, যিনি সর্বদা তার আনুগত্য করেন’ (ফাতহুল বারী, ১১/৩৪২)। ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘দুনিয়া ও আখিরাতে ফক্বীহ ও আলেমগণ যদি আল্লাহর অলী না হবেন, তাহলে আল্লাহর কোনো অলী নেই’ (আল-ফাক্বীহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ, ১/১৫০)। ইবনে আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ফক্বীহকে কষ্ট দিল, সে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কষ্ট দিল। আর যে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কষ্ট দিল, সে স্বয়ং মহান আল্লাহকে কষ্ট দিল’ (আল-মাজমূ‘, ১/২৪)।
অতএব, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্র সকলের প্রতি আমাদের আন্তরিক আহ্বান, আলেম-উলামার প্রতি যথাযথ সম্মান, মর্যাদা, ভক্তি, আদব ও ভালোবাসা বজায় রাখুন। তাদের ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করুন। তাদের ভুলত্রুটি ন্যায়সঙ্গত উপায়ে হিকমতের সাথে সংশোধনের চেষ্টা করুন। সরকারের প্রতি আমাদের বিশেষ আহ্বান, উস্কানি ও ষড়যন্ত্রমূলক যে কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রেখে ন্যায়সঙ্গত অবস্থান গ্রহণ করুন। ‘গণকমিশন’-এর ব্যাপারে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
আমরা মনে করি, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের ভূমিকা ও উলামায়ে কেরামের প্রচেষ্টার মধ্যে সমন্বয় করা গেলে খুব সহজেই একটি সত্যিকার আদর্শ রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!