হাদীছের গল্প
লোক দেখানো আমলের ভয়াবহ পরিণতি
আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে ব্যক্তির বিচার করা হবে, সে হচ্ছে একজন শহীদ। তাকে আল্লাহর কাছে উপস্থিত করা হবে। অতঃপর আল্লাহ তাকে দুনিয়াতে প্রদত্ত নে‘মত সমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। আর সেও তা স্মরণ করবে। তারপর আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেন, দুনিয়াতে তুমি কী আমল করেছ? উত্তরে সে বলবে, আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য কাফেরদের সাথে লড়াই করেছি। এমনকি শহীদ হয়েছি। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, বরং তোমাকে যেন বীর-বাহাদুর বলা হয়, সেজন্য তুমি লড়াই করছ। অতঃপর তার ব্যাপারে আদেশ দেওয়া হবে। তখন তাকে উপুড় করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তারপর সে ব্যক্তিকে বিচারের জন্য উপস্থিত করা হবে, সে নিজে দ্বীনি ইলম শিক্ষা করেছে এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছে। তাকে আল্লাহর কাছে হাযির করা হবে এবং তাকে নে‘মতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে। সেও তা স্মরণ করবে। তারপর আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেন, এই সমস্ত নে‘মতের শুকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য তুমি কী আমল করেছ? উত্তরে সে বলবে, আমি তোমার সন্তুষ্টির নিমিত্তে কুরআন তেলাওয়াত করেছি। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। আমার সন্তুষ্টির জন্য নয়। বরং তুমি এজন্য ইলম শিক্ষা করেছ যেন তোমাকে বিদ্বান বলা হয় এবং ক্বারীও বলা হয়। তারপর তাকে উপুড় করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তারপর এমন ব্যক্তিকে বিচারের জন্য আল্লাহর দরবারের উপস্থিত করা হবে, যাকে আল্লাহ বিপুল ধন-সম্পদ দান করেছিলেন। তাকে তার নে‘মতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে এবং সেও তা স্মরণ করবে। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, এই সমস্ত নে‘মতের শুকরিয়ার জন্য তুমি কি আমল করেছ। উত্তরে সে বলবে, যে সমস্ত ক্ষেত্রে ধন-সম্পদ ব্যয় করলে তুমি খুশি হবে, সেখানে ব্যয় করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। আমার সন্তুষ্টির জন্য নয়, বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে দান করেছিলে, যাতে তোমাকে বলা হয় যে, তুমি একজন দানবীর। তারপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হবে। নিদর্শন মোতাবেক তাকে উপুড় করে টানতে টানতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৯০৫; মিশকাত, হা/২০৫)।
শিক্ষা :
লোক দেখানো আমলের পরিণতি খুবই ভয়াবহ। কাজেই প্রতিটি কাজ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই করতে হবে। তা না হলে ক্বিয়ামতের দিন তাকে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
-রিয়াযুল ইসলাম বিন হাবীবুর রহমান
ছাত্র, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ
ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহী।
একজন খুনীর তওবা ও জান্নাত লাভ
আবু সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বানী ইসরাঈলের মাঝে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে নিরানববইটি মানুষ হত্যা করেছিল। অতঃপর বের হয়ে একজন পাদ্রীকে জিজ্ঞেস করল, আমার তওবা কবুল হবার আশা আছে কি? পাদ্রী বলল, না। তখন সে পাদ্রীকেও হত্যা করল। অতঃপর পুনরায় সে জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগল। এক ব্যক্তি তাকে বলল, তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সে রওয়ানা হলো এবং পথিমধ্যে তার মৃত্যু এসে গেল। সে তার বক্ষদেশ দ্বারা সে স্থানটির দিকে ঘুরে গেল। মৃত্যুর পর রহমত ও আযাবের ফেরেশতামণ্ডলী তার রূহকে নিয়ে বাদানুবাদে লিপ্ত হলেন। আল্লাহ সামনের ভূমিকে আদেশ করলেন, তুমি মৃত ব্যক্তির নিকটবর্তী হয়ে যাও এবং পশ্চাতে ফেলে আসা স্থানকে (যেখানে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল) আদেশ দিলেন, তুমি দূরে সরে যাও। অতঃপর ফেরেশতাদের উভয় দলকে নির্দেশ দিলেন, তোমরা এখান থেকে উভয় দিকের দূরত্ব পরিমাপ করো। পরিমাপ করা হলো, দেখা গেল যে, মৃত লোকটি সামনের দিকে এক বিঘত বেশি এগিয়ে আছে। কাজেই তাকে ক্ষমা করা হলো (বুখারী, হা/৩৪৭০; মুসলিম, হা/২৭৬৬; মিশকাত, হা/২৩২৭)।
শিক্ষা :
(১) পাপী যদি পাহাড় পরিমাণ পাপ করে তবুও সে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়ে খালেছ অন্তরে তওবা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করতে পারেন। যেমন তিনি বলেন, ‘হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল পরম দয়ালু’ (সূরা যুমার, ৫৩)। তিনি আরও বলেন, ‘তিনিই তাঁর বান্দার তওবা কবুল করেন ও পাপ মোচন করেন এবং তোমরা যা করো তিনি তা জানেন’ (শুরা, ২৫)।
(২) অজ্ঞ ব্যক্তি কোনো সমস্যায় পড়লে কুরআন-সুন্নাহ হতে অভিজ্ঞ কোনো আলেমের কাছে জিজ্ঞেস করে তার সমস্যার সমাধান করে নিবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা জানো তাহলে সুস্পষ্ট দলীলসহ জ্ঞানীদের কাছে জিজ্ঞেস করো’ (নাহল, ৪৪)।
(৩) কোনো বিষয়ে যথাযথভাবে না জেনে সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে না।
-তামিম ইকবাল
ছাত্র, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ,
ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহী।
আল্লাহর বন্ধুদের ভয় নাই
[সূরা যুহা অবলম্বনে]
মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক মাহমূদ
শিক্ষক (অবঃ), মনিপুর স্কুল এন্ড কলেজ, মিরপুর, ঢাকা।
দিনের শপথ! রাতের শপথ! দিচ্ছে মহান রব
আমিই তোমার আসল বন্ধু, আমিই তোমার সব।
তুমিই আমার সেরা নবী, সেরা রহমত
খালেছভাবে সঙ্গী তোমার, থাকি দিবারাত।
ত্যাগ করিনি নাখোশ হইনি, পরীক্ষা এ সব
অতীত থেকে ভালো তোমার, হবে ভবিষ্যৎ।
নিরাশ্রয়ী নিঃস্ব তুমি, ছিলে যে পথহারা
আশ্রয় দিয়েছি আমি, দিয়েছি ধন ও রাহা।
ইয়াতীম জনে আদর দিও, মিসকীনকেও আহার
নে‘মতের শুকর প্রচার, করো যে আল্লাহর।
ইবাদতের সাথে করো, প্রশংসা বারবার
এতেই তোমার প্রভু খুশি, এটাই তোমার পথ।
প্রথম পরিচয়
মুহাম্মাদ ইমাম হোসেন
শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ
ডাঙ্গীপাড়া, রাজশাহী।
কনকনে শীত, রাতের শেষ ভাগে
টুপটাপ শিশির পড়ছে ঘরের চালে,
কুপির মৃদু আলোয় মুখোমুখি বসে
বাবা মা নিঃশব্দে সাহরি খাচ্ছে।
অভিমানে বুকটা ভারি হয়ে আসে,
এত বলার পরও ডাকেনি আমাকে।
সারা দিন কিচ্ছু খাব না। খাইনি।
কেন খাব আমি বুঝি বড় হইনি!
বড় না হলে কেউ বড় ওয়ানে পড়তে পারে?
রামাযান, এভাবেই প্রথম পরিচয় তোমার সাথে।
অপেক্ষা করি এগারটি মাস তারপর থেকে।
হৃদয়াঙ্গনে আনন্দের শিহরণ জাগিয়ে
যখন এসে দাঁড়াও শা‘বান শেষে,
আমাদের জীর্ণ কুটিরের সম্মুখে;
আমরা হাসি কাঁদি মাথা নত করি প্রভুর পায়ে।
কঠোর হৃদয়গুলো যায় কোমল হয়ে
চারদিকে শান্তির সুবাতাস বইতে থাকে,
স্বার্থের মসনদ আসে ত্যাগের দখলে।
আমরা বলি,
ক্ষমা করো প্রভু হে ভুল ত্রুটি যত
রাইয়ান খুলে দিয়ে জান্নাতে নিয়ো।
লায়লাতুল ক্বদর বনাম মধ্য শা‘বান
শেখ আব্দুল্লাহ আস-সালাফী
হাজিগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, চাঁদপুর।
লায়লাতুল মুবারাক মহিমান্বিত রাত,
নহে এটি কথিত শবে বরাত।
অর্থে ফযীলতে তা লায়লাতুল ক্বদর,
মধ্য শা‘বানের বরাত দিতে হবে ক্ববর।
কুরআন নাযিল হয় ক্বদরের রাতে,
ক্বদর নামক এক সূরা নাযিল করেছেন এতে।
ক্বদর রাত রামাযানে খুলে দেখো কুরআন,
রামাযানের শেষ দশকে হবেই না মধ্য শা‘বান।
আদম শিশুর ভাগ্য তিনবারে পর পর,
সৃষ্টির পূর্বে, মায়ের পেটে ও রজনী ক্বদর।
ভাগ্য রজনী মধ্য শা‘বান তুমি পেলে ভাই কই?
কুরআন হাদীছ পড়ে দেখো তাহা মধ্য শা‘বান নয়।
জানালে কেন শুধু আল্লাহ এক রাতেই আসে দুনিয়ার আকাশে?
সত্য তো আল্লাহ প্রত্যেক রাতেই আসেন রাতের শেষ-তৃতীয়াংশে।
লায়লাতুল ক্বদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম,
বছর মাসে চুরাশি বছর চার মাস অধিক সম।
অল্প সময় অল্প ইবাদতে উম্মতে মুহাম্মাদীকে,
দিলেন আল্লাহ হাজার মাসের উত্তম ভাগ্য রজনীকে।
রাসূল ধ বললেন, যদি পেতে চাও ক্বদর,
খুঁজো রামাযানের শেষ দশকে রাত্রি হবে বিজোড়।
ইবাদত করি মহান প্রভুর সম্মানিত রাত ক্বদর,
ছালাত, তাসবীহ আদায় করি মাগরিব হতে ফজর।
হে আল্লাহ! হে ক্ষমাশীল! করি তোমায় আবেদন,
সুমহান রাত্রিতে আমাদের গোনাহ করে দেও মোচন।
মুনাফিক্ব
আযীযা সারা
৬ষ্ঠ শ্রেণি, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ
বীরহাটাব-হাটাব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
কথায় কথায় মিথ্যা বলা মুনাফিক্বের নিদর্শন
মুনাফিক্বী নষ্ট করে সত্যের পথ প্রদর্শন।
দোষ অন্বেষণ করে বেড়ায় সব মানুষের মাঝে
চোগলখোরি করে সবার চোখে ভালো মানুষ সাজে।
মিথ্যা কথা বলে সে রাত-দিন ভরে
সত্য বলা কঠিন হয় মুনাফিক্বের তরে।
ফজর-এশা আদায় করা বড়ই কষ্ট মুনাফিক্বের কাছে
নিজেকে কলুষিত করে মুনাফিক্বের চরিত্র নিয়ে বাঁচে।
মুনাফিক্ব, সেতো কশ্মিনকালেও মুমিন নয়
পরকালে পাবে সে জাহান্নামে আশ্রয়।
ওয়াদা করে রাখে না ওয়াদা, আমানতের করে খিয়ানত
ইহকালে লাঞ্ছনা, পরকালে শাস্তি ধ্বংস তাদের দু’জগৎ।
বাংলাদেশ সংবাদ
আইনের শাসনে পিছিয়ে গেল বাংলাদেশ
বিশ্বে আইনের শাসন সূচকে গত এক বছরে বাংলাদেশের অনেক অবনতি হয়েছে। বিশ্বের ১২৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৫তম। দক্ষিণ এশিয়ার ৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ অবস্থানে। বৈশ্বিক আইনের শাসন সূচকের গত বছরের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ১২৬টি দেশের মধ্যে ১১২তম অবস্থানে ছিল। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০২তম। অবশ্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এ বছর একই রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভারত বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। পেছনে রয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। নিম্ন মধ্যম আয়ের ৩০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২১তম। ১২৮টি দেশের ১ লাখ ৩০ হাজার খানায় জরিপ ও চার হাজার আইনজীবীর মতামত নিয়ে ডব্লিউজেপি এই সূচক ও প্রতিবেদন তৈরি করেছে। বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার এক হাজার ব্যক্তির ওপরে জরিপকারী সংস্থা ওআরজি কোয়েস্ট সংস্থাটির হয়ে জরিপটি করে। বাংলাদেশের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ নাগরিকের মৌলিক অধিকারের দিক থেকে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৮টি দেশের মধ্যে ১২২তম। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে নিচে। অর্থাৎ ৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অবস্থান সবার নিচে তথা ৬ষ্ঠ। বাংলাদেশের পরে রয়েছে তুরস্ক, ভেনেজুয়েলা, মোজাম্বিক, চীন, মিসর ও ইরান। ভালো অবস্থানে থাকা শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে ডেনমার্ক, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ড। আর তলানিতে রয়েছে কঙ্গো, কম্বোডিয়া ও ভেনেজুয়েলা।
বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে
সত্তরের দশকে বাংলাদেশকে ‘আন্তর্জাতিক ঝুড়ি’ বলেছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার। বিশ্ব এখন বাংলাদেশের ব্যাপারে মত বদলাচ্ছে। ভারতের সাথে তুলনায় বাংলাদেশ অধিকাংশ খাতে না হলেও বহু সূচকে অনেক ভালো করছে, যে সূচকগুলোর দ্বারা জীবনযাত্রার মান নির্ধারিত হয়। প্রথমত, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের দিকে যাচ্ছে আর তাদের প্রবৃদ্ধি সেখানে ৫ শতাংশে নেমে গেছে। দ্বিতীয়ত, লন্ডন আর নিউইয়র্কের নামীদামী সড়কগুলোতে গেলেই দেখা যাবে মেড ইন বাংলাদেশের কাপড়, কিন্তু লুধিয়ানা আর ত্রিপুরার তৈরি কাপড় দেখা যাবে না। বিস্ময়ের কিছু নেই যে, বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রফতানী ২০১৯ অর্থবছরে দুই অঙ্কের কোঠায় চলে গেছে; যেখানে ভারত এখনও বহু পিছিয়ে। ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে জীবনযাত্রা অনেক বেশি আকর্ষণীয়। শুধু তথ্যগুলো দেখলেও তা বোঝা যায়। বাংলাদেশে পুরুষ ও নারীর প্রত্যাশিত জীবনকাল ৭১ আর ৭৪ বছর। ভারতে এটা হলো ৬৭ আর ৭০ বছর। এই বড় ছবিটা খুঁটিয়ে দেখলে পার্থক্যটা আরও প্রকট হয়ে উঠবে। ভারতে প্রতি হাজারে নবজাতকের মৃত্যুর হার ২২.৭৩ জন, বাংলাদেশে এই হার ১৭.১২। শিশু মৃত্যুর হার ভারতে ২৯.৯৪ আর বাংলাদেশে ২৫.১৪। নারীদের ক্ষেত্রে, বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়স্ক নারীদের মধ্যে ৭১ শতাংশ শিক্ষিত, ভারতে এই হার ৬৬ শতাংশ। বাংলাদেশে পরিস্থিতি শুধু ভালোই নয়, সেটা আরও ভালোর দিকে যাচ্ছে। আর ভারত আরও পিছিয়ে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্ব
দিল্লি সহিংসতা : মুসলিম নিধনের মোচ্ছব
গত ২৩ ফেব্রুয়ারী থেকে টানা পাঁচ দিন ধরে দিল্লিতে চলা হিন্দুত্ববাদীদের তাণ্ডবে নিহতের সংখ্যা ৫০ জন ছাড়িয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় পোড়া ও ধ্বংসস্তুপের ভেতরে আরও লাশের অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। হাসপাতালে কাতরাচ্ছে অনেকে। পুলিশের ভয়ে হাসপাতালে যেতে না পেরে গোপনে চিকিৎসা করাচ্ছেন অনেকে। বিভীষিকাময় দিল্লি যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল। যোগীর রাজ্য থেকে এসেছিল সন্ত্রাসী ও সহিংসতার অস্ত্র, ট্রাকে আনা হয় পাথর। গুলির সাথে এসিড হামলাও হয়েছে। মুসলিমদের রক্ষায় পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা বিশ্বকে হতবাক করেছে। বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ঘিরে বিক্ষোভ নিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিম বিদ্বেষী উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন বিজেপি নেতারা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথসহ বহু নেতা ঘৃণাবাদী বক্তব্য দেন। এরই ধারাবাহিকতায় সহিংসতায় উসকানি ছড়ান দিল্লির বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। এরপরই দিল্লির পূর্ব অংশে শুরু হয় নযিরবিহীন সহিংসতা। কয়েক দিনের সহিংসতায় হাসপাতালেই নিহত হয়েছে ৩০ জন। কোথায় কতজনের লাশ পড়ে আছে কেউ জানে না। সংঘবদ্ধ হামলাকারীরা দেশীয় পিস্তল, তলোয়ার, হাতুড়ি, লাঠি ও বড় বড় পাথর নিয়ে হামলা চালায়। উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগর ও শামলির মতো এলাকা থেকে দিল্লিতে এসে হামলায় অংশ নিয়েছে অনেকে।
তালেবান-যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহাসিক চুক্তি
যুদ্ধাবসান ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বহুল আলোচিত শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ১৪ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান ছাড়তে হবে মার্কিন ও ন্যাটো সেনাদের। এখন সেখানে প্রায় ১২ হাজার বিদেশী সৈন্য রয়েছে। চুক্তি মতে, এখন থেকে আফগানিস্তানে আর কোনো হামলা চালাবে না তালেবান। এছাড়া তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আল-কায়েদার কোনো তৎপরতা চালাতে দেবে না। স্বাক্ষরিত চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব উভয়পক্ষেই সমান। উভয়পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা ও সমঝোতার পর কাতারের রাজধানী দোহায় এই ঐতিহাসিক চুক্তি সই হয়। তালেবানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন মোল্লা আব্দুল গনী বরদার এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আফগানবিষয়ক বিশেষ দূত জালমী খলীলজাদ। চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তালেবান প্রতিনিধি দল ছাড়াও সেখানে হাযির ছিলেন পাকিস্তান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, উজবেকিস্তান ও তাজাকিস্তানের প্রতিনিধিবর্গ। দু’বছর ব্যাপী এই আলোচনা নানা টানাপোড়েন এবং কখনো কখনো অনিশ্চয়তার মুখে পড়লেও কেউ ছেড়ে যায়নি। আলোচনা সচল থাকে শেষ পর্যন্ত এবং তারই সুফল হিসাবে স্বাক্ষরিত হলো চুক্তি।
মুসলিম বিশ্ব
নাইজেরিয়ায় গড়ে প্রতি ঘরে একজন হাফেয
কুরআন শিক্ষায় আফ্রিকান দেশ নাইজেরিয়া অনন্য এক গৌরব অর্জন করেছে। সম্প্রতি দেশটির একজন মুসলিম নেতা দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় গড়ে প্রতি ঘরে একজন করে হাফেয রয়েছে। আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়ার কুরআন হিফয করার ঐতিহ্য রয়েছে। প্রত্যেক পরিবার চেষ্টা করে তাদের ঘরে যেন অন্তত একজন কুরআনের হাফেয হন। কোনো কোনো পরিবারের একাধিক সদস্যও হাফেয হন। তাই বলা যায়, নাইজেরিয়ার প্রায় সব মুসলিম পরিবারে একজন হাফেযে কুরআন রয়েছে। আর কেউ কুরআন পড়তে জানে না এমন মুসলিম পরিবার নাইজেরিয়ায় নেই বললেই চলে।
ইসলামিক মুভমেন্ট অব নাইজেরিয়ার একজন মুখপাত্র মুছত্বফা গারবা বলেন, ‘নাইজেরিয়ার ইসলামী শিক্ষা কার্যক্রমের প্রায় সব স্তরে কুরআন শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশেষত কুরআন হিফয করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। মা-বাবা ও অভিভাবকরা শৈশব থেকেই চেষ্টা করেন যেন শিশুরা কুরআনের প্রতি উৎসাহী হয় এবং তারা হিফয সম্পন্ন করতে পারে’। তিনি আরও বলেন, ‘শিশুদের কুরআনের প্রতি উৎসাহিত করতে অভিভাবকরা তাদের ক্বিরাআত মাহফিল ও কুরআনের মজলিসে নিয়ে যান। কন্যাশিশুদের ঘরোয়া পরিবেশে কুরআন শেখানো হয়। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই তারা অল্প অল্প করে হিফয করতে থাকে’।
মুছত্বফা গারবার মতে, দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহজলভ্যতা কুরআনের শিক্ষাকে উৎসাহিত করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও শিশুদের কুরআন হিফয করতে উৎসাহিত করে। ফলে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই হিফয শেষ করতে পারে। এ ছাড়া স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোও শিশুদের মনে আগ্রহ তৈরি করে। নাইজেরিয়ায় শিশু থেকে যুবক বয়সীদের জন্য অসংখ্য কুরআন হিফযের প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে।
সাইন্স ওয়ার্ল্ড
চীনে করোনা আক্রান্তদের সেবায় রোবট ডাক্তার
সম্প্রতি উহানের একটি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবায় রোবট নিয়োগ করা হয়েছে। অসংখ্য রোগীকে একটানা চিকিৎসা সেবা দিতে দিতে ক্লান্ত মানব ডাক্তার-নার্সদের বিশ্রাম দেওয়ার লক্ষ্যেই এই রোবট নিয়োগ করা হয়। মানুষের থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এয়ার ড্রপলেটের মাধ্যমেই একজনের থেকে অন্যজনের শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাসের সংক্রমণ। আক্রান্ত রোগীদের ধারেকাছেও যাওয়াও তাই বিপজ্জনক। চিকিৎসা করতে গিয়ে হাসপাতালে ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন রোগে। করোনার সাঁড়াশি চাপ থেকে রেহাই পেতে তাই অভিনব উপায় বের করল উহানের স্বাস্থ্য দফতর এবং চীনা অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস।
উহানের বিভিন্ন হাসপাতালে জোরকদমে কাজে নেমে পড়েছে ডাক্তার-রোবটরা। কীভাবে রোগীদের আইসোলেশনে নিয়ে যেতে হবে, সেখানে কী কী করণীয়, কেমন ভাবেই বা হবে চিকিৎসা, সব শিখিয়ে-পড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এই রোবটদের। সংক্রমণ কতটা হলে কী ওষুধ দিতে হবে সেটাও ভরে দেওয়া হয়েছে রোবটদের ডেটা সিস্টেমে। ৫-জি পাওয়ারের রোবট। এ টু জেড সব কাজ করতে পারে। ডাক্তারি তো বটেই। হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্বও তাদের। যান্ত্রিক হাত বাড়িয়ে রোগীদের নির্দ্ধিতায় ছুঁচ্ছে এই রোবটরা। শরীরের তাপমাত্রা মাপছে, ওষুধও দিচ্ছে। সময় হলেই খাবারের থালা সাজিয়ে রোগীদের সামনে হাযির করছে ডাক্তার-রোবটরা। রোগীদের জামাকাপড় কাচা, তাদের পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্বও এদেরই ওপরে। দিনের পর দিন আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগীদের একঘেয়েমি কাটাতে হাল্কা বিনোদনও দিচ্ছে তারা।
চীনের অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই রোবট মানুষের মতোই কথা বলতে পারে। মুখের অভিব্যক্তিও আছে। রোগীরা ওষুধ না খেলে বকাঝকাও করছে। তারা আরও বলেন, আক্রান্ত রোগীদের কাছে যাওয়াটা প্রাণঘাতী। সারাদিনই রোগীদের সংস্পর্শে থাকতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্মীদের। সেক্ষেত্রে ঝুঁকি কমাতেই এই রোবটদের কাজে লাগানো হয়েছে।
ইসলামী সম্মেলন ২০২০
আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রাজশাহী, ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারী, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার : আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ রাজশাহী কর্তৃক আয়োজিত দু’দিনব্যাপী ইসলামী সম্মেলন ২০২০ বিভাগীয় শহর রাজশাহীর পবা থানার অন্তর্গত ডাঙ্গীপাড়া, ‘আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ’ ময়দানে সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ফালিল্লা-হিল হামদ। শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৪র্থ বার্ষিক সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ উপস্থিত হন। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ভাড়াকৃত বাসসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তারা সম্মেলনে আসেন।
১ম দিন বাদ আছর অর্থসহ পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়। কুরআন তেলাওয়াত করে আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ এর ১০ম শ্রেণির ছাত্র শিহাবুদ্দীন। ইসলামী সংগীত পরিবেশন করে আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহর ৭ম শ্রেণির ছাত্র শু‘আইব। উদ্বোধনী ভাষণ পেশ করেন সম্মেলনের সম্মানিত সভাপতি ও আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ-এর পরিচালক ও রাজশাহী শাখার প্রিন্সিপ্যাল শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ।
প্রথম দিন পূর্বনির্ধারিত বিষয়বস্তুসমূহের উপর বক্তব্য পেশ করেন শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রাজশাহীর মুহাদ্দিছ শায়খ মোস্তফা মাদানী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার সহযোগী অধ্যাপক ড. আবুবকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া, শায়খ আকরামুযযামান বিন আব্দুস সালাম, মাদরাসা দারুস সুন্নাহ-এর প্রিন্সিপ্যাল শায়খ আব্দুন নূর মাদানী, রাণীবাজার মাদরাসার প্রিন্সিপাল শায়খ সাঈদুর রহমান রিয়াদী, ড. রেজাউল করীম মাদানী, প্রফেসর মুখতার আহমাদ, শায়খ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক, শায়খ আব্দুল মালেক আহমাদ মাদানী, শায়খ আব্দুল মতীন মাদানী, শায়খ গোলাম রববানী, শায়খ আব্দুল গনী মাদানী, শায়খ আখতারুযযামান ও শায়খ জসীমুদ্দীন সালাফী প্রমুখ। আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রাজশাহীর ছাত্রদের মধ্যে বক্তব্য উপস্থাপন করে কুল্লিয়্যাহ ১ম বর্ষের আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল করীম ও আল-আমীন এবং কুল্লিয়্যাহ শেষ বর্ষের মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহ ও মুহাম্মাদ আল-ফিরোজ।
ইসলামী সম্মেলন ২০২০-এর দ্বিতীয় দিন জুম‘আর খুত্ববা প্রদান করেন ইসলামী সম্মেলনের সম্মানিত সভাপতি শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ। বাদ জুম‘আ থেকে আছর পর্যন্ত বিরতি থাকে।
বাদ আছর পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। কুরআন তেলাওয়াত করে আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রাজশাহীর ৭ম শ্রেণির ছাত্র শু‘আইব। এদিন পূর্বনির্ধারিত বিষয়বস্তুসমূহের উপর বক্তব্য পেশ করেন শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ, পিস টিভি বাংলার আলোচক শায়খ সাইফুদ্দীন বেলাল মাদানী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইমাম হোসাইন, বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, ভারত থেকে আগত শায়খ আনোয়ারুল হক ফাইজী, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের প্রিন্সিপাল ও মাসিক আল-ইতিছাম-এর সহকারী সম্পাদক শায়খ আব্দুল আলীম ইবনে কাওছার মাদানী, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রাজশাহীর শিক্ষক ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর, শায়খ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক, বরিশাল সরকারি মডেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মাদ মুস্তাফা কামাল, সিলেট কিউসেট সেন্টারের পরিচালক ড. মুহাম্মাদ আবু তাহের, শায়খ হাশেম আলী, শায়খ আশরাফুল ইসলাম হাটহাজারী ও শায়খ ইউনুস বিন আহসান প্রমুখ। আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রাজশাহীর ছাত্রদের মধ্যে বক্তব্য উপস্থাপন করে কুল্লিয়া শেষ বর্ষের ছাত্র আব্দুল্লাহ রাসেল ও ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র ফায়ছাল আহমাদ।
এছাড়াও দু’দিনব্যাপী ইসলামী সম্মেলনে আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ-এর ছাত্ররা আগত শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে আরবী ও ইংরেজী ভাষায় মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান উপহার দেয়। এছাড়া ছাত্ররা জামি‘আহর প্রধান ফটকে ‘ইসলামী সম্মেলন ২০২০, সফল হোক, আহলান ওয়া সাহলান ইয়া যুয়ূফানাল কেরাম, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ ডাঙ্গীপাড়া, রাজশাহী’ কারুকার্য করে আগত অতিথিদের স্বাগত জানায়।
সমাপনী ভাষণ : শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ সম্মেলনে আগত দ্বীনী ভাইদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত সমাপনী ভাষণ দেন। অতঃপর সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে স্ব-স্ব গন্তব্যে ছহীহ-সালামতে পৌঁছে যাওয়ার জন্য প্রার্থনা করে বৈঠক শেষের দু‘আ পাঠ করেন এবং সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
সালাফী কনফারেন্স ২০২০
আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ৫ ও ৬ মার্চ, রোজ : বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার :
আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ কর্তৃক আয়োজিত দু’দিন ব্যাপী ‘সালাফী কনফারেন্স-২০২০’ নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে বাংলাদেশের অত্যাধুনিক সিটি পূর্বাচলের অদূরে বীরহাটাব-হাটাব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ ময়দানে সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ফালিল্লাহিল হামদ। আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, নারায়ণগঞ্জ ও রাজশাহীর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৪র্থ বার্ষিক সালাফী কনফারেন্সে আশাতীত মানুষের সমাগম হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রংপুর ও রাজশাহীসহ বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে ভাড়াকৃত বাস, মাইক্রো-বাস, ট্রেন ও লঞ্চসহ বিভিন্ন মাধ্যমে লোকজন সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
১ম দিন বাদ আছর আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ-এর ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র হাফেয মাহবূবুর রহমানের কুরআন তেলাওয়াত ও তার সাথীদের আরবী, বাংলা ও ইংরেজীতে অনুবাদের মাধ্যমে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়। ইসলামী সংগীত পেশ করে আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ-এর ছাত্র মুশফিকুর রহমান ও তার সহশিল্পীরা। উদ্বোধনী ভাষণ পেশ করেন শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ।
ইসলামী সম্মেলনে ১ম দিন পূর্ব নির্ধারিত বিষয়ের উপর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পেশ করেন শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ, শায়খ আকরামুযযামান বিন আব্দুস সালাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শায়খ ড. ইমাম হোসাইন, ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর, ড. রেজাউল করীম মাদানী, আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক, শায়খ মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী, শায়খ আব্দুল মালেক আহমাদ মাদানী, বরিশাল সরকারি মডেল কলেজ এর সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মাদ মুস্তাফা কামাল, শায়খ তারেক হাসান বিন বেনজির মাদানী, বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক আহমাদুল্লাহ বিন আব্দুত তাওয়াব, জনাব আরমান উদ্দীন ও বিশিষ্ট গবেষক শায়খ আযহারুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়া আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, নারায়ণগঞ্জ-এর শিক্ষকগণের মধ্যে শায়খ আব্দুল মতীন মাদানী ও শায়খ আহসান হাবীব মাদানী এবং ছাত্রদের মধ্যে কুল্লিয়্যাহ ১ম বর্ষের মামূনুর রশীদ ও দাখিল ফলপ্রার্থী নাঈম গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেন। এছাড়া আরবী ও ইংরেজিতে বক্তব্য পেশ করেছে আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ-এর ৮ম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল আযীয।
সালাফী কনফারেন্স ২০২০-এর ২য় দিন বাদ ফজর দারসে কুরআন পেশ করেন আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের প্রিন্সিপাল ও মাসিক আল-ইতিছাম-এর সহকারী সম্পাদক শায়খ আব্দুল আলীম ইবনে কাওছার মাদানী। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আল-হুদা শিল্পীগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের ছাত্র-ছাত্রীরা পৃথক পৃথক পারফরমেন্স করে। আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শায়খ আহসান হাবীব মাদানীর নেতৃত্বে পৃথক দু’টি নাটিকা মঞ্চস্থ হয়। আর সাড়ে ১০টা থেকে জুম‘আ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় মতবিনিময় সভা। দ্বীনী ভাইয়েরা স্বতস্ফূর্তভাবে তাতে অংশগ্রহণ করেন। জুম‘আর খুৎবা পেশ করেন কনফারেন্সের সম্মানিত সভাপতি শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ। বাদ জুম‘আ থেকে আছর পর্যন্ত বিরতি থাকে।
২য় দিন বাদ আছর পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। কুরআন তেলাওয়াত করে আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, নারায়ণগঞ্জ-এর ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র ওমর ফারূক আর ইসলামী সংগীত পেশ করে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মিনারুল ইসলাম নাহিন। এদিন পূর্বনির্ধারিত বিষয়বস্তুসমূহের উপর বক্তব্য পেশ করেন শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ, ড. আবুবকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া, ড. মুযাফফর বিন মুহসিন, ড. মুহাম্মাদ মানযূরে ইলাহী, ড. মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, নারায়ণগঞ্জ-এর প্রিন্সিপ্যাল শায়খ আব্দুল আলীম ইবনে কাওছার মাদানী, প্রফেসর মুখতার আহমাদ, শায়খ আব্দুর নূর মাদানী, শায়খ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক, শায়খ হাশেম আলী, ড. মুহাম্মাদ আশরাফ উদ্দীন, শায়খ আব্দুল্লাহ আল-মাছূম বিন সিরাজুল ইসলাম ও শায়খ ইসরাফীল বিন তমীজুদ্দীন প্রমুখ। আরো বক্তব্য পেশ করেন আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, নারায়ণগঞ্জ-এর ছাত্রগণের মধ্যে থেকে কুল্লিয়্যা ১ম বর্ষের রঈসুদ্দীন, দাখিল ফলপ্রার্থী ইকরাম ও প্রাক্তন ছাত্র আব্দুল ওয়াহেদ। এছাড়া ইংরেজি বক্তব্য পেশ করে আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ-এর ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ফাহিম ও আরবী বক্তব্য পেশ করে হিফয বিভাগের ছাত্র বাসসাম ইবনে আব্দুল আলীম।
ইসলামী সম্মেলনের বিভিন্ন পর্যায়ে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন মুহাম্মাদ মুস্তাফা কামাল, শায়খ আব্দুল আলীম ইবনে কাওছার মাদানী, ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর ও আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক।
বিদায়ী ভাষণ : সম্মেলনে আগত দ্বীনী ভাইদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বিদায়ী ভাষণ দেন শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ। অতঃপর সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে স্ব-স্ব গন্তব্যে ছহীহ-সালামতে পৌঁছে যাওয়ার জন্য প্রার্থনা করে বৈঠক শেষের দু‘আ পাঠ করেন এবং সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
সমাপনী ও জেডিসি পরীক্ষায় জামি‘আহর ছাত্র-ছাত্রীদের কৃতিত্ব
(১) আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহী :
ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা :
২০১৯ সালের ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহীর বালক ও বালিকা শাখা মিলে ১০৪ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ৪৯ জন A+, ৫১ জন A ও ৪ জন A- পেয়ে শতভাগ পাস করেছে। তার মধ্যে ৫ জন ট্যালেন্টপুলে এবং ২০ জন সাধারণ বৃত্তি লাভ করেছে। বালক শাখা থেকে ৩ জন ট্যালেন্টপুলে ও ১১ জন সাধারণ বৃত্তি এবং বালিকা শাখা থেকে ২ জন ট্যালেন্টপুলে ও ৯ জন সাধারণ বৃত্তি পেয়েছে। ফালিল্লাহিল হাম্দ।
ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীরা হলো- আবু সাঈদ, রেজাঊল করীম, ইবরাহীম, আফীফা আক্তার রিমা ও ওমাইয়া।
সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীরা হলো- সাকিব আল-হাসান, নাঈম আহমাদ নিশান, মাহবূবুর রহমান, শাহাদাত হোসেন, তানভীর ইসলাম, হাসিবুল্লাহ, আব্দুর রাযযাক, শাহাদাত হোসেন, আব্দুল আহাদ, তাসফীক আহমাদ, মাহিন বিন বাদশা, আফীফা আনান তামান্না, লিমা রহমান, সুমাইয়া খাতুন, নুসরাত জাহান, জুবাইদা আক্তার ঐশী, সানজিদা আক্তার সুমী, সানজিদা ঐশী, লুবাবাতুল মাবিয়া ও মারজিয়া আক্তার।
জুনিয়র দাখিল পরীক্ষা (জেডিসি) :
২০১৯ সালের জুনিয়র দাখিল পরীক্ষায় বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহীর বালক ও বালিকা শাখা মিলে মোট ৬৮ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ২ জন A+, ৫৪ জন A, ১০ জন A- ও ২ জন B পেয়ে শতভাগ পাস করেছে। ফালিল্লাহিল হাম্দ।
বালক শাখার ২৬ জনের মধ্যে ২ জন A+, ২০ জন A, ২ জন A- ও ২ জন B পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং বালিকা শাখা থেকে ৪২ জনের মধ্যে ৩৪ জন A ও ৮ জন A- পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
৬৮ জনের মধ্যে ৫ জন বৃত্তি পেয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ! এদের মধ্যে ২ জন ট্যালেন্টপুলে ও ৩ জন সাধারণ বৃত্তি লাভ করেছে। ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলো- আব্দুল্লাহ আল-মুজাহিদ ও সারোয়ার আহমেদ। সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলো- সাখাওয়াত হোসাইন, তোহরুল ইসলাম ও ছিয়াম উদ্দীন।
(২) আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ,বীরহাটাব-হাটাব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ :
ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা :
২০১৯ সালের ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ-এর বালক ও বালিকা শাখা মিলে ৫৩ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। ১০ A+, ২৬ জন A এবং বাকী সবাই A- পেয়ে শতভাগ পাস করেছে। তার মধ্যে ১ জন ট্যালেন্টপুলে ও ১১ জন সাধারণ বৃত্তি লাভ করেছে।
ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী হলো- আফরোজা আক্তার।
সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীরা হলো- মিনহাজুল ইসলাম নাহিদ, সারোয়ার, মা‘রূফ হাসান ছিফাত, শরাফাত হোসেন, নিরব, তানযীমুল ইসলাম ত্ব-হা, রুবাইয়া কামাল তিথি, তাহসিনা রহমান তিনা, মাইমূনা আক্তার, সপিয়া সানজিদা ও মেহেরুন্নেছা মাতৃ।
জুনিয়র দাখিল পরীক্ষা (জেডিসি) :
২০১৯ সালের জুনিয়র দাখিল পরীক্ষায় বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, বীরহাটাব-হাটাব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের বালক ও বালিকা শাখা মিলে ১৭ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে শতভাগ পাস করেছে। তাদের মধ্যে ১ জন A+ এবং বাকী ১৬ জন A পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
১৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪ জন বৃত্তি পেয়েছে। ফালিল্লাহিল হামদ। এদের মধ্যে ১ জন ট্যালেন্টপুলে এবং ৩ জন সাধারণ বৃত্তি লাভ করেছে।
ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী হলো- সুমাইয়া রহমান।
সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীরা হলো- ফাইজুল ইসলাম, ছালেহ আহমেদ নয়ন, সুমাইয়া আক্তার।
প্রশ্ন (১) : ‘সুবহানাল্লাহ’, আল-হামদুলিল্লাহ’, আল্লাহু আকবার’, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ এসব তাসবীহ কি সবসময় পাঠ করা যাবে? গেলে কতবার করে পাঠ করতে হবে?
-ফিরোজ আহমাদ
সাধনপুর, নাটোর।
উত্তর : উক্ত তাসবীহগুলো ছালাতের সালাম ফিরানোর পরে পাঠের ব্যাপারে নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যান্য সময়ে পাঠের ব্যাপারে কোনো সংখ্যা বা পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ছালাতের শেষে ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ ৩৩ বার এবং ‘আল্লাহু আকবার’ ৩৩ বার পড়বে এবং একশত পূর্ণ করার জন্য একবার ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু-লা শারীকালাহু লাহুল মুলকু লালুল হামদু ওয়াহু ওয়া আলা কুল্লি শায়য়্যিন ক্বাদীর’ পড়বে তার সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। যদিও তা সাগরের ফেনা সমপরিমাণ হয় (ছহীহ মুসলিম, হা/৫৯৭; মিশকাত, হা/৯৬৭)। অতএব, ছালাতের সালাম ফিরানোর পর ব্যতীত যে কোনো সময়ে তা গণনা ছাড়াই একাধিকবার পাঠ করতে পারে। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করতেন (ছহীহ মুসলিম, হা/৩৭৩)।
প্রশ্ন (২) : তাসবীহ কি উভয় হাতে গণনা করা যাবে?
-আব্দুর রহমান
গেদীপাড়া, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর : উভয় হাতে তাসবীহ গণনা করা যাবে না। বরং ডান হাতে তাসবীহ গণনা করতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ডান হাতে তাসবীহ গণনা করতে দেখেছি’ (আবুদাঊদ, হা/১৫০২)। তবে ডান হাতে গণনা করতে অক্ষম হলে বাম হাতে গণনা করতে পারে।
প্রশ্ন (৩) : জানাযার ছালাতে ইমাম যদি স্বরবে ক্বিরআত করেন ও দু‘আ-দরূদ পড়েন তাহলে মুক্তাদীরা কি শুধু সূরা ফাতিহা পড়ে চুপ থাকবে; না-কি অন্যান্য দু‘আ-দরূদও পড়বে?
-রফীকুল ইসলাম
সাপাহার, নওগাঁ।
উত্তর : জানাযার ছালাত স্বরবে হোক কিংবা নিরবে হোক সর্বাবস্থায় ইমাম-মুক্তাদী সকলকে সূরা ফাতিহাসহ সকল দু‘আ-দরূদ পড়তে হবে। কেননা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে মুসলিম মারা যায় আর তার জানাযায় এমন চল্লিশজন লোক তার জানাযার ছালাতের জন্য দাঁড়ায়, যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেনি, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার সম্পর্কে তাদের সুপারিশ কবুল করেন (ছহীহ মুসলিম, হা/৯৪৮; মিশকাত, হা/১৬৬০)। এই হাদীছ প্রমাণ করে যে, মুক্তাদীদেরকেও মাইয়্যেতের জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশ করতে হবে।
প্রশ্ন (৪) : মৃত ব্যক্তিকে চুম্বন করা যাবে কি?
-আক্বীমুল ইসলাম
জোতপাড়া, ঠাঁকুরগাও।
উত্তর : মৃত ব্যক্তিকে চুম্বন করা যায়। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার পিতা আবুবকর রাযিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মৃত অবস্থায় চুম্বন করেছিলেন (ছহীহ বুখারী, হা/৪৪৫৫; ইবনু মাজাহ, হা/১৪৫৭; মিশকাত, হা/১৬২৪)।
প্রশ্ন (৫) : নাভীর নিচে কাপড় পরিধান করা যাবে কি?
-কাবীরুল ইসলাম
উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ।
উত্তর : পুরুষদের সতর হল নাভী হতে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত (ছহীহ জামেঊছ ছাগীর, হা/৫৫৮৩; ইরওয়াউল গালীল, হা/২৭১)। সর্বদা তা ঢেকে রাখা ওয়াজিব। আর ওয়াজিব পরিত্যাগ করলে গুনাহ হবে। তবে শরীরের জামা-পাঞ্জাবী দিয়ে যদি নাভি ঢেকে থাকে তাহেল পায়জামা বা প্যান্ট নাভির নীচে পরিধান করলেও সমস্যা নাই। সতর উন্মুক্ত না হলেই হল। তবে প্রয়োজনে হাঁটুর উপরে কাপড় উঠানো যেতে পারে। যেমন রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন হাঁটুর উপর কাপড় উঠিয়ে বসেছিলেন আবুবকর রাযিয়াল্লাহু আনহু তাঁর নিকটে প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি তাকে প্রবেশের অনুমতি দেন। এরপর ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু তাঁর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলে তাকেও অনুমতি দেন। পরবর্তীতে ওছমান রাযিয়াল্লাহু আনহু তার নিকটে প্রবেশের অনুমতি চাইলে রাসূল রাযিয়াল্লাহু আনহু তার কাপড় হাঁটুর নিচে নামিয়ে নেন (ছহীহ বুখারী, হা/৭০৯৭)।
উল্লেখ্য যে, মহিলারা এই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা তাদের দুই হাতের কব্জি ও চেহারা ব্যতীত মাথা হতে পায়ের পাতা পর্যন্ত সর্বাঙ্গ সতর হিসাবে ঢেকে রাখবে। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, ...রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মহিলা যখন বালেগা হয়, তখন তার শরীরের কোনো অঙ্গ দেখা যাওয়া উচিত নয়। তবে কেবলমাত্র এটা এবং এটা ব্যতীত। একথা বলে তিনি তাঁর মুখ ও দুই হাতের কব্জির দিকে ইঙ্গিত করলেন’ (আবুদাঊদ, হা/৪১০৪; মিশকাত, হা/৪৩৭২; ফিক্বহুস সুন্নাহ, ১/১২৫)।
প্রশ্ন (৬) : তালাক্বপ্রাপ্তা মহিলা তালাক্ব পাওয়ার এক মাস পরেই অন্যত্র বিবাহ করলে সে বিবাহ জায়েয হবে কি?
-গোলাম ছামদানী
সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী।
উত্তর : তালাক্বপ্রাপ্তা মহিলাকে যদি তার স্বামী সহবাসের পূর্বেই তালাক্ব দেয় তাহলে ইদ্দতের কোনো প্রয়োজন নেই (আহযাব, ৪৯)। আর যদি সহবাসের পরে তালাক্ব দেয় তাহলে তার ইদ্দত পালনের বিধান হল, (১) যদি মহিলা গর্ভবতী হয় তাহলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত তার ইদ্দত (তালাক্ব, ৪)। (২) যদি গর্ভবতী না হয় তাহলে তার ইদ্দত হলো, তিন হায়েয বা মাসিক (বাক্বারাহ, ২২৮)। তথা স্বামী তালাক্ব দেওয়ার পর হায়েয হবে তারপর পবিত্র হবে। ২য় বার হায়েয হবে তারপর পবিত্র হবে। ৩য় বার হায়েয হবে ও পবিত্র হবে। অতঃপর সে অন্য কোথাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। (৩) যদি বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়ার কারণে অথবা, বার্ধক্য জনিত কারণে অথবা, অন্য কারণে মেয়ের হায়েয বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তার ইদ্দত হলো তিন মাস (তালাক্ব, ৪)।
প্রশ্ন (৭) : ছালাতের মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে ভুল হলে সাহু সিজদা দেওয়া যায়? কীভাবে এই সিজদা দিতে হবে?
-মাহমুদ
পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা।
উত্তর : রাক‘আত কম হলে বা বেশি হলে অথবা, কত রাক‘আত হয়েছে তা নির্ণয় করতে না পারলে কিংবা তাশাহহুদ ছুটে গেলে সাহু সিজদা দিতে হবে। রাক‘আত কম হলে তা পূর্ণ করার পর তাশাহহুদের বৈঠক শেষ করে দু’টি সিজদা দিতে হবে। রাক‘আত বেশি হলে সালাম ফিরানোর পরে হোক অথবা আগে হোক দু’টি সিজদা দিয়ে সালাম ফিরাতে হবে। তাশাহহুদ ছুটে গেলে সিজদা দেয়ার পর সালাম ফিরাতে হবে (ছহীহ বুখারী, হা/১২৩২; ছহীহ মুসলিম, হা/৩৮৯, মিশকাত, হা/১০১৪, ১০১৫, ১০১৭, ১০১৮)। তবে ডাইনে একটি সালাম দিয়ে সাহু সিজদা করার প্রচলিত প্রথার কোনো ভিত্তি নেই। অমনিভাবে সাহু সিজদা করার পরে তাশাহহুদ পড়ারও কোনো ছহীহ হাদীছ নেই।
প্রশ্ন (৮) : বিয়ের সময় বরপক্ষ কনে পক্ষের বাড়ীতে পান, চুন, বাতাসা ইত্যাদি নিয়ে আসে। এগুলোর শারঈ কোনো ভিত্তি আছে কি?
-হাফিয শিশির
জোতপাড়া, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর : বিয়ের সময় কনে পক্ষের বাড়ীতে পান, চুন, বাতাসা ইত্যাদি নিয়ে যাওয়া; বিবাহ অনুষ্ঠানে বর-কনের মালা বদল করা; শ্বাশুড়ীর জন্য কনের আঁচলে পান বাটা দেয়া, হলুদ শাড়ীতে চাউল বেঁধে দেয়া এসবের অধিকাংশ অমুসলিমদের অনুকরণ। তাই এসব আচার ও প্রথা সাধ্যপক্ষে এড়িয়ে চলাই মুমিনের কর্তব্য। কেননা এসব ক্ষেত্রে প্রায়ই শিরক ও বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রভাব থাকে। আর যে কোনো বিদ‘আতী প্রথা সর্বক্ষেত্রেই পরিত্যাজ্য (ছহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮; মিশকাত, হা/১৪০)।
প্রশ্ন (৯) : কাঠ ব্যতীত অন্য কিছু দ্বারা মিম্বার তৈরি করা যাবে কি?
-রাজিবুল ইসলাম
জোতপাড়া, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর : কাঠ ব্যতীত টাইল্স বা ইট-সিমেন্ট বা অন্য কিছু দ্বারা মিম্বার তৈরি করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে এ ধরনের মিম্বার ছিল না। বরং তিনি কাঠের মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন। তাই সুন্নাত হলো কাঠ দ্বারা মিম্বার তৈরি করা এবং মিম্বারের তিনটি স্তর হওয়া। সাহল ইবনু সা‘দ আস-সা‘আদী রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক আনছারী মহিলার নিকট লোক পাঠান। তার নাম সাহ্ল। এই মর্মে যে, তুমি তোমার কাঠমিস্ত্রী গোলামকে নির্দেশ দাও। সে যেন আমার জন্য একটি কাঠের আসন তৈরি করে। যার উপর বসে আমি জনগণের সাথে কথা বলব। ঐ মহিলা তার গোলামকে উক্ত মর্মে নির্দেশ দিলে সে ‘গাবার ঝাউ’ কাঠ দিয়ে তা তৈরি করে নিয়ে আসে। অতঃপর মহিলা তা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পাঠিয়ে দেয়। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এই স্থানে স্থাপন করার নির্দেশ দেন (ছহীহ বুখারী, হা/৯১৭; মিশকাত, হা/১১১৩)। অতএব ইট, পাথর ও টাইলস দ্বারা তৈরি মিম্বার সুন্নাতের পরিপন্থী। ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহও সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন (ছহীহ বুখারী, হা/৪৪৮)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মিম্বারের তিন স্তরে উঠে তিনবার ‘আমীন’ বলেছিলেন মর্মেও ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে (মুস্তাদরাক হাকেম, হা/৭২৫৬, সনদ ছহীহ)। অতএব মিম্বর তিন স্তরের বেশি করা সুন্নাতের বরখেলাফ (সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩৩৫, ১/৩৩৪ পৃঃ)। তাই ঐ সমস্ত আধুনিক মিম্বার ত্যাগ করে তিনস্তর বিশিষ্ট কাঠের মিম্বর তৈরি করে সুন্নাত প্রতিষ্ঠা করা উচিত।
প্রশ্ন (১০) : কালেমায়ে ত্বাইয়্যেবা কোনটি?
- নাজনীন
বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : যে কালেমাতে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের সাক্ষী থাকে তাকে বলে ‘কালেমা শাহাদাত’। আর যাতে শুধু আল্লাহর সাক্ষী থাকে তাকে বলে ‘কালেমা ত্বাইয়্যেবা’। আবু সাঈদ ও আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তিদেরকে ‘লা ইলা-হা ইলাল্লাহ্’র তালক্বীন কর বা শিক্ষা দাও (ছহীহ মুসলিম, হা/৯১৬-৯১৭; মিশকাত, হা/১৬১৬)।
আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঈমানের সত্তরটিরও অধিক শাখা রয়েছে। তার মধ্যে সর্বোত্তম হলো (কালেমা তাইয়্যেবা) ‘লা ইলা-হা ইলাল্লাহ’ (ছহীহ বুখারী, হা/৯; ছহীহ মুসলিম, হা/৩৫; মিশকাত, হা/৫)। আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঈমানের ৭০টিরও অধিক শাখা রয়েছে। তার মধ্যে সর্বাধিক উত্তম হলো, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলা’ (ছহীহ বুখারী, হা/৯; ছহীহ মুসলিম, হা/৩৫; মিশকাত, হা/৫)। অতএব, প্রকৃতপক্ষে কালেমা ত্বাইয়্যেবা হচ্ছে, لَا إلهَ إلَّا اللهُ। সূরা ইবরাহীমের ২৪ নং আয়াতে উল্লেখিত ‘كَلِمَةً طَيِّبَةً’-এর ব্যাখ্যায় ইবনু আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, الْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ ‘কালেমা ত্বাইয়্যেবা হচ্ছে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (তাফসীর কুরতুবী, ৯/৩৫৯ পৃঃ; তাফসীর ইবনে কাছীর, ৪/৪২২ পৃঃ)।
উল্লেখ্য যে, দুই অংশ বিশিষ্ট কালেমা অর্থাৎ لَا إلهَ إلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ মূলত কালেমায়ে শাহাদাত বা শাহাদাতাইনের সংক্ষিপ্ত রূপ। তবে মুসতাদরাকে হাকেমের ৪২২৮ নং হাদীছে لَا إلهَ إلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ -কে কালেমা ত্বাইয়্যেবা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ‘জাল’ (মুখতাছারু তালখীছিয যাহাবী, ২/১০৬৭-১০৬৮ পৃঃ, হা/৪৫৩)।
প্রশ্ন (১১) : সমিতিতে জমাকৃত টাকায় প্রাপ্ত সূদের অংশ না নিয়ে মূল টাকা দিয়ে উক্ত সমিতির সদস্যদের সাথে ভ্রমণে যাওয়া যাবে কি?
-রাহিমা
নাটোর সদর, নাটোর।
উত্তর : প্রশ্নোল্লেখিত বিবরণে বুঝা যায়, সমিতিটি সূদের সাথে সম্পৃক্ত। আর সমিতি সূদের সাথে সম্পৃক্ত হলে তার সদস্য হওয়া যাবে না। কেননা সূদ হারাম। ইরশাদ হয়েছে, اَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ‘আল্লাহ তা‘আলা ব্যবসাকে হালাল এবং সূদকে হারাম করেছেন’ (বাক্বারাহ, ২৭৫)। তবে সমিতি যদি সূদমুক্ত হয় এবং সমিতির টাকা সদস্যরাই খরচ করবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে তাহলে সমিতির টাকা দিয়ে ভ্রমণে যেতে পারে। কিন্তু সমিতি যদি জনকল্যাণমূলক হয়ে থাকে তাহলে সদস্যরা তা দিয়ে ভ্রমণে যেতে পারবে না।
প্রশ্ন (১২) : কুরআন মাজীদ হাত থেকে পড়ে গেলে করণীয় কী? অনেকেই কুরআনের ওযনে চাউল দিয়ে থাকেন। এ আমল সঠিক কি?
-আক্বীমুল ইসলাম
জোতপাড়া, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর : এ জন্য অনুতপ্ত হতে হবে এবং মুছীবত হিসাবে ‘ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেঊন’ পড়া যেতে পারে (বাক্বারাহ, ১৫৬)। সেই সাথে সতর্ক থাকতে হবে যেন এমনটি পুনরায় আর না ঘটে। কারণ কুরআন সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন পবিত্র গ্রন্থ (বুরূজ, ২২)। তবে কুরআনের ওযনে চাউল দিতে হবে এ কথা সঠিক নয়।
প্রশ্ন (১৩) : মসজিদে প্রবেশের সময় যে সালাম দেওয়া হয় তা কাদের উদ্দেশ্যে?
-আব্দুল্লাহ
পুঠিয়া, রাজশাহী।
উত্তর : মসজিদে প্রবেশের সময় মুছাল্লীদের উদ্দেশ্যে সালাম প্রদানের ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো প্রমাণ নেই। তবে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই মসজিদে প্রবেশের সময় তার প্রতি সালাম প্রদানের কথা বলেছেন। আবু হুমাইদ অথবা আবু উসাইদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে তখন সে যেন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি সালাম দেয়। অতঃপর সে যেন বলে ‘আল্লাহুম্মাফতাহলী আব্ওয়াবা রহ্মাতিকা’। আর বের হওয়ার সময় বলবে, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিন ফাযলিকা (আবুদাঊদ, হা/৪৬৫ ছহীহ ইবনু মাজাহ, হা/৭৭২)। এই হাদীছ প্রমাণ করে মসজিদে প্রবেশের সময় ‘আমভাবে সালাম দিয়ে প্রবেশ করা ভাল।
প্রশ্ন (১৪) : বর্তমানে ভুট্টা, সরিষা, আলু, বেগুন ইত্যাদির বিক্রয় মূল্যের তুলনায় আবাদী খরচ অনেক বেশি। এমতাবস্থায় এগুলোর ওশর বের করব কীভাবে?
-মানিক মিঞা
পত্নিতলা, নওগাঁ।
উত্তর : ভুট্টা ও সরিষা উৎপাদনে খরচ কম হোক বা বেশি হোক বিশ ভাগের এক ভাগ ওশর দিতে হবে। কেননা খরচের কারণেই তো বিশ ভাগের এক ভাগ ওশর দিতে হয়। অন্যথা ওশরের বিধান হলো, দশ ভাগের এক ভাগ। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বৃষ্টি ও প্রবাহিত পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা সেচ ব্যতীত উর্বরতার ফলে উৎপন্ন ফসলের উপর (দশমাংশ) ‘উশর ওয়াজিব হয়। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের উপর অর্ধ (বিশ ভাগের এক ভাগ) ‘উশর (ছহীহ বুখারী, হা/১৪৮৩; মিশকাত, হা/১৯৯৭)।
আর আলু ও বেগুনের ওশর দিতে হবে না। কেননা তা শাক-সবজির অন্তর্ভুক্ত। আর শাক-সবজিতে কোন যাকাত (ওশর) নেই। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, لَيْسَ فِى الْخَضْرَوَاتِ زَكَاةٌ ‘শাক-সবজি বা কাঁচা মালে কোনো যাকাত (ওশর) নেই’ (ছহীহ জামেঊছ ছাগীর, হা/৫৪১১)। তাছাড়া যমীন থেকে উৎপাদিত যেসব খাদ্য-শস্য স্বাভাবিকভাবে এক বছর পর্যন্ত থাকে না বরং তার আগেই পচন দেখা দেয়, সেগুলোর ওশর নেই (ফিক্বহুস সুন্নাহ, ১/৩৩৪-৩৬)। তবে এগুলোর বিক্রয়লব্ধ টাকা যদি এক বছর সঞ্চিত থাকে এবং নিছাব পরিমাণ হয়, তাহলে ৪০ ভাগের ১ ভাগ হিসাবে তার যাকাত দিতে হবে (আবুদাঊদ, হা/১৫৭৩-৭৪; মিশকাত, হা/১৭৯৯)।
প্রশ্ন (১৫) : যে সকল বাচ্চাদের প্রতি এখনো ছালাত ফরয হয়নি তাদেরকে মসজিদে আনলে অন্যদের ছালাতের ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটে। এমতাবস্থায় তাদেরকে মসজিদে আনা যাবে কি?
-আহমাদুল্লাহ
শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
উত্তর : যে সকল বাচ্চাদের প্রতি ছালাত ফরয হয়নি তাদেরকে মসজিদ নিয়ে যাওয়াতে শারঈ কোনো নিষেধ নেই। বরং ছালাতের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য তাদেরকে মসজিদে নিয়ে যাওয়া উচিত। যাতে তারা ছোটবেলা থেকেই মসজিদমুখী হয়। তবে অন্যদের ছালাতে যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আবু ক্বাতাদা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যয়নাবের কন্যা উমামাকে কাঁধে নিয়ে ছালাত আদায় করতেন, সিজদায় গেলে নামিয়ে রাখতেন আবার দাঁড়ানোর সময় তাকে কাঁধে উঠিয়ে নিতেন (ছহীহ বুখারী, হা/৫১৬; ছহীহ মুসলিম, হা/৫৪৩; আবুদাঊদ, হা/৯১৭; নাসাঈ, হা/৮২৮)। ইবনু খুযায়মার বর্ণনায় আছে, ছালাতটি ছিল ফরয ছালাত (ছহীহ ইবনু খুযায়মা, হা/৮৬৮)। তবে শিশুর বয়স সাত বছর হলে তাকে ছালাতের জন্য আদেশ করতে হবে এবং দশ বছর হলে ছালাত আদায়ের ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা পরিবারকে ছালাতের জন্য আদেশ করো এবং ছালাতের উপর অবিচলিত থাক’ (ত্বো-হা, ১৩২)। আমর ইবনু শু‘আইব তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের বয়স যখন সাত বছর হবে তখন তাদেরকে ছালাতের নির্দেশ দাও, আর যখন তাদের বয়স দশ বছর হবে তখন ছালাতের জন্য প্রয়োজনে প্রহার কর এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও’ (আবুদাঊদ, হা/৪৯৫; মিশকাত, হা/৫৭২)।
প্রশ্ন (১৬) : শ্বশুর যদি স্বেচ্ছায় জামাইকে টাকা-পয়সা বা গাড়ী-বাড়ী করে দেয় তাহলে কি সেটা যৌতুক হবে?
-খালিদ হাসান
চারঘাট, রাজশাহী।
উত্তর : বিবাহ অনুষ্ঠানের সময় বর পক্ষ থেকে মেয়ে পক্ষের প্রতি চাপ দিয়ে যে টাকা-পয়সা বা অর্থ-সম্পদ নেওয়া হয় তাকে যৌতুক বলে। আর এই যৌতুক নেওয়া হারাম। কেননা মহান আল্লাহ তা‘আলা বরকে মোহর প্রদান করে বিবাহ করার আদেশ দিয়েছেন (সূরা নিসা, ২৫)। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে। কেননা বিয়ে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী, যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন ছিয়াম পালন করে। কেননা ছিয়াম হচ্ছে যৌবনকে দমন করার মাধ্যম (ছহীহ বুখারী, হা/১৯০৫, ৫০৬৫, ৫০৬৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪০০; মিশকাত, হা/৩০৮০)। তবে মেয়ে-জামাইয়ের স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় সুবিধা-অসুবিধা লক্ষ করে শ্বশুর জামাইকে কিছু দিতে পারে। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা! আমার কাছে দুনিয়াবী ধন-সম্পদ হতে যা ইচ্ছা তাই চাইতে পার, কিন্তু আমি তোমাকে আল্লাহর আযাব হতে রক্ষা করতে পারব না (ছহীহ বুখারী, হা/২৭৫৩; মিশকাত, হা/৫৩৭৩)। আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা ফাতেমা রাযিয়াল্লাহু আনহা নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একটা চাকর চাইতে আসলেন। তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কথা বলব না, যা তোমার পক্ষে চাকর অপেক্ষা উত্তম হবে। আর তাহলো- প্রত্যেক ছালাতের সময় ও ঘুমানোর সময় ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’, ৩৩ বার ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ এবং ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে (ছহীহ মুসলিম, হা/২৭২৮; মিশকাত, হা/২৩৮৮)। তাছাড়া ইসলাম পরস্পরকে হাদিয়া দিতে উৎসাহিত করেছে। পরস্পরের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টিতে তা সহায়ক ভূমিকা রাখে (ছহীহ আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৫৯৪)। অতএব, হাদিয়া হিসাবে বিভন্ন সময়ে স্ত্রী ও জামাইকে শ্বশুর বাড়ীর পক্ষ থেকে স্বেচ্ছায় কিছু দেয়া হলে তা অবশ্যই নেওয়া যাবে। এটা যৌতুক হবে না।
প্রশ্ন (১৭) : বিহাই ও বেহান পরস্পরে দেখা-সাক্ষাত করতে পারবে কি?
-জহুরুল ইসলাম
মনিরামপুর, যশোর।
উত্তর : বিহাই ও বেহান পরস্পরে গায়রে মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। বিধায় তাদের পর্দাবিহীন সাক্ষাৎ করা শরী‘আত সম্মত নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যখন তাদের নিকটে (নারীদের) কিছু জিজ্ঞেস করবে, তখন পর্দার অন্তরাল হতে জিজ্ঞেস করো’ (সূরা আহযাব, ৫৩)। এই আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, গায়রে মাহরাম ব্যক্তি পর্দা রক্ষা করে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা ও লেনদেন করতে পারে। তবে পর্দাবিহীন সাক্ষাৎ করা নিষিদ্ধ (সূরা নূর, ৩১)।
প্রশ্ন (১৮) : প্রচ- সর্দির কারণে রুকূ-সিজদায় গেলে নাক দিয়ে খুব ঘনঘন পানি বা সর্দি পড়ে মেঝে বা কার্পেট ভিজে যায়। এমতাবস্থায় বাড়ীতে ছালাত আদায় করতে পারবো কি?
-ফজলে আহমাদ
আতানারায়নপুর, মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : এ ধরনের সাময়িক সমস্যার কারণে বাড়ীতে ছালাত আদায় করা যাবে না। বরং এমতাবস্থায় নাক দিয়ে সর্দি বা পানি কিংবা মুখ দিয়ে থুথু বা কফ বের হলে তা রুমাল বা টিস্যু পেপার দিয়ে ধরে নিতে হবে। অন্যথা পরনের কাপড়ই তার জন্য যথেষ্ট হবে। জাবের রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কোনো একজন যখন ছালাত পড়ে আল্লাহ তা‘আলা তার সম্মুখে থাকেন। সুতরাং সম্মুখ পানে কখনো থুথু ফেলবে না। বরং তা যেন বাম পায়ের নিচে ফেলে। যদি চাপের দ্রুত সম্মুখীন হয় তবে সে তার কাপড়ে এরূপ করবে। অতঃপর তিনি নিজ কাপড়ে থুথু ফেলে এক অংশকে অপর অংশের সাথে ডলে দিলেন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১২০৯; আবুদাঊদ, হা/৭৭৮)।
প্রশ্ন (১৯) : রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পশু দ্বারা পশুকে পাল দেওয়ার বিনিময় গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং বর্তমানে যারা গবাদী পশুর উন্নয়নের জন্য প্রজনন পদ্ধতি করিয়ে থাকে সেই সকল প্রজনন কর্মীর উপার্জন হালাল হবে কি?
-আব্দুস সুবহান
কালাই, জয়পুরহাট।
উত্তর : গবাদী পশুর উন্নয়নের জন্য সরকারী কিংবা বেসরকারী তত্ত্বাবধানে কোনো সংস্থা পদক্ষেপ নিলে অর্থের বিনিময়ে সেখানে প্রজনন করা যাবে এবং এর বিনিময়ে পারিশ্রমিকও গ্রহণ করা যাবে। কারণ যিনি এ কাজ করে থাকেন তিনি একজন ডাক্তার হিসাবে অথবা এ সম্পর্কে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি হিসাবে তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করেন।
উল্লেখ্য, ষাঁড় দেখানোর বিনিময়ে পয়সা গ্রহণ করা নিষেধ বলে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, সেটা এর অন্তর্ভুক্ত হবে না। কারণ অন্য হাদীছে এসেছে, কোনো ব্যক্তির নিকট ষাঁড় বা পাঠা থাকলে তার নিকট কোনো গাভী বা বকরী নিয়ে আসলে রাসূল (সঃ) তার বিনিময় গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। তবে যদি কোনো প্রকার শর্ত ছাড়া হাদিয়া হিসাবে কিছু প্রদান করা হয় তাহলে তা গ্রহণ করা যাবে (তিরমিযী, হা/১২৭৪; মিশকাত, হা/২৮৬৬)। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এরূপ ব্যবসাকে ইসলাম অপসন্দ করেছে। তবে সরকারী পর্যায়ে নয়।
প্রশ্ন (২০) : ‘ক্বিরাআতে ভুল থাকলে ছালাত হবে না’-কথাটি কি সঠিক?
-আব্দুছ ছবুর বিন সেকেন্দার
গুরুদাসপুর, নাটোর।
উত্তর : কথাটি ঠিক নয়। বরং ছালাত হয়ে যাবে। তবে নেকী কম হবে। আম্মার ইবনু ইয়াসার রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এমন অনেক লোক আছে যারা ছালাত আদায় করে কিন্তু তাদের ছালাত পুরাপুরি কবুল না হওয়ায় পরিপূর্ণ নেকী প্রাপ্ত হয় না। বরং তাদের কেউ দশ ভাগের এক ভাগ, কেউ নয় ভাগের এক ভাগ, কেউ আট ভাগের এক ভাগ, কেউ সাত ভাগের এক ভাগ, কেউ ছয় ভাগের এক ভাগ, কেউ পাঁচ ভাগের এক ভাগ, কেউ চার ভাগের এক ভাগ, কেউ তিনের একাংশ বা অর্ধাংশ নেকী প্রাপ্ত হয়ে থাকে (আবুদাঊদ, হা/৭৯৬)। অবশ্য যারা ভালো করার জন্য চেষ্টা করে তাদের জন্য দ্বিগুণ নেকী হবে। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কুরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি সম্মানিত লেখক ফিরিশতাদের সাথে থাকবেন। আর যে কুরআন পড়ে কিন্তু আটকায় এবং কুরআন পড়া তার পক্ষে খুব কষ্টদায়ক হয়, তাহলে তার জন্য দুইগুণ নেকী রয়েছে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৭৯৮; মিশকাত, হা/২১১২)।
প্রশ্ন (২১) : বিয়ের সময় বর পক্ষের গাড়ি থামিয়ে মেয়ে পক্ষের লোকজন টাকা আদায় করে। এটা করা যাবে কি?
-আব্দুছ ছবুর বিন সেকেন্দার
গুরুদাসপুর, নাটোর।
উত্তর : না, বর বা মেয়ে পক্ষের গাড়ি থামিয়ে টাকা আদায় করা যাবে না। এটা একটি সামাজিক কুসংস্কার। যা বিধর্মীদের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে প্রবেশ করেছে। বরং তা পরিহার করা একান্ত কর্তব্য। কেননা, যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে ক্বিয়ামতের দিন তার হাশর সে জাতির সাথেই হবে। ইবনে ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করল, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত (আবুদাঊদ, হা/৪০৩১)। তিনি আরো বলেন, বলেছেন, ‘তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা করো, দাঁড়ি লম্বা করো ও গোঁফ ছোট করো’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৮৯২; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৯; মিশকাত, হা/৪৪২১)।
প্রশ্ন (২২) : হিন্দুরা যদি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে গরু-ছাগল যবেহ করে তাহলে কি তার গোশত খাওয়া যাবে?
-আব্দুছ ছবুর বিন সেকেন্দার
গুরুদাসপুর, নাটোর।
উত্তর : না, হিন্দুরা ‘বিসমিল্লাহ’ বলে গরু-ছাগল যবেহ করলেও তাদের যবেহকৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না। কারণ তারা মুশরিক। আর মুশরিকরা অপবিত্র (সূরা তওবা, ২৮; সূরা ওয়াক্বি‘আহ, ৭৯)। তাছাড়া যবেহকৃত প্রাণীর গোশত হালাল হওয়ার জন্য শর্ত হলো যবেহকারী ঈমানদার হওয়া। কেননা যার অন্তরে ঈমান নেই সে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে প্রাণী যবেহ করলেও তাদ্বারা প্রাণীর গোশত হালাল হবে না (ফাতাওয়া লাজনাহ আদ-দায়েমাহ, ২২/৪৩৫ পৃঃ)।
প্রশ্ন (২৩) : আমি একজন অবিবাহিত ছেলে। দুই বন্ধুর খপ্পরে পড়ে একজন বিবাহিত মেয়ের সাথে যেনা করেছি। তখন এর পাপ সম্পর্কে বুঝতে না পারলেও এখন বুঝতে পারছি যে এটা করা আমার মহা অন্যায় হয়েছে। এখন এই পাপ থেকে ক্ষমা পাওয়ার উপায় কী?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
চিরিরবন্দর, দিনাজপুর।
উত্তর : উক্ত মহাপাপ থেকে মুক্তির জন্য খালেছ অন্তরে তাওবা করতে হবে। কেননা, পৃথিবীতে এমন কোনো পাপ নেই যে পাপ জীবিত অবস্থায় মানুষ খালেছ অন্তরে একনিষ্ঠভাবে তওবা করলে মহান আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। এমর্মে মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলো, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছো (পাপ করেছি) আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না; আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (সূরা আয-যুমার, ৫৩)। সুতরাং, কেউ যদি অপরাধ করার পর আল্লাহর নিকট তওবা করে নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। যেমন নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে একজন মহিলা যেনা করে নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করে তওবা করার কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেছিলেন। সেই মহিলা সম্পর্কে রাসুল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! মহিলাটি এমন (খালেছ) তাওবা করেছে, যদি কোনো বড় যালেমও এই ধরনের তওবা করে, তারও পাপ ক্ষমা হয়ে যাবে। অতঃপর তিনি তার জানাযা পড়ার আদেশ করলেন। অতঃপর তার জানাযা পড়লেন এবং তাকে দাফন করা হলো (ছহীহ মুসলিম, হা/৩২০৮)।
প্রশ্ন (২৪) : স্বামী নির্বাচনে মেয়েদের ভূমিকা কতটুকু? কী রকম স্বামী গ্রহণে অনুমতি দিলে তা শরী‘আতসম্মত হবে?
-বিউটি আক্তার
মেডিকা ডায়াগোনিস্টিক সেন্টার, চিরিরবন্দর, দিনাজপুর।
উত্তর : বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র/স্বামী নির্বাচনে (ছেলেদের মত) মেয়েদেরও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। এক্ষেত্রে তারা অভিভাবকের মাধ্যমে বা তার অনুমতি সাপেক্ষে সৎ, চরিত্রবান ও দ্বীনদার ব্যক্তিকে স্বামী হিসাবে নির্বাচন করবে। আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা যে ব্যক্তির দ্বীনদারী ও নৈতিক চরিত্রে সন্তুষ্ট আছো তোমাদের নিকট সে ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব করলে তবে তার সাথে বিয়ে দাও। তা যদি না করো তাহলে পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হবে (তিরমিযী, হা/১০০৪)। ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ ‘সৎ লোকের কাছে কোনো নারীর নিজেই প্রস্তাব দেওয়া’ শীর্ষক পরিচ্ছেদ রচনা করেছেন (অধ্যায় ৭৬)। সাবিত আল-বুনানী রাহিমাহুল্লাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে ছিলাম। তখন তার কাছে তার কন্যাও ছিলেন। আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, একজন মহিলা নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কি আমার প্রয়োজন আছে? এ কথা শুনে আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর কন্যা বললেন, সে কতই না নির্লজ্জ, ছিঃ! লজ্জার কথা। আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, সে তোমার চেয়েও উত্তম। কেননা সে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্য পেতে অনুরাগী হয়েছিল। এ কারণেই সে নিজেকে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পেশ করেছে (ছহীহ বুখারী, হা/৪৭২৬)। সুতরাং মেয়েদের জীবনসঙ্গী নির্বাচনে ছেলের দ্বীনদারী ও সৎ চরিত্রকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
প্রশ্ন (২৫) : আমি একজন অবিবাহিত ছেলে। আমি ফজরের ছালাত নিয়মিত সঠিক সময়ে আদায় করি। অনেক চিকিৎসা সত্ত্বেও নিরাময় না হওয়ার কারণে হঠাৎ হঠাৎ বিছানায় প্রসাব হয়ে যায়। ফলে মাসে দুই/এক দিন ছালাত ক্বাযা করতে হয় বা তা যোহরের সময় আদায় করি। এক্ষেত্রে কি আমার পাপ হবে?
--নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
মহাদেবপুর, নওগাঁ।
উত্তর : এমন পরিস্থিতিতে ছালাত কাযা করা যাবে না। বরং কাপড় পরিবর্তন করে সম্ভবপর পবিত্রতা অর্জন করে সময়ের মধ্যেই ছালাত আদায় করবে। যদি পূর্ণ পবিত্রতা অর্জনের সুযোগ ও আসবাবপত্র না থাকে তাহলে সে অবস্থাতেই ছালাত আদায় করবে (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে তায়মিয়া, ২১/৪২৯ পৃঃ)। কেননা, দুই শ্রেণীর মানুষ ব্যতীত সকলের জন্য সময়মত ছালাত আদায় করা ফরয। তারা হলো, (১) ঘুমন্ত ব্যক্তি ও (২) ছালাতের কথা ভুলে গেছে এমন ব্যক্তি। আবু ক্বাতাদা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ছাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম নিদ্রাবস্থায় ছালাতের সময় তাদের ঘুমে থাকার বিষয়টি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন, ঘুমে থাকার মধ্যে অবহেলা নেই। অবহেলা হয় জাগ্রত অবস্থায় (যথা সময়ে ছালাত আদায় না করলে)। সুতরাং যদি তোমাদের কেউ ছালাত ভুলে যায় বা ঘুমিয়ে পড়ে, তবে যখনই স্মরণ হয় তখনই পড়ে নেবে (নাসাঈ, হা/১৫৮২)। সুতরাং এই দুই অবস্থা ব্যতীত সকল অবস্থায় সময়মত ছালাত আদায় করা একান্ত অপরিহার্য।
প্রশ্ন (২৬) : আমি ফিজি নামক দেশে যাবো চাকুরি করতে। ফ্লাইট রাত ১২টায়। যেতে সময় লাগবে প্রায় ১২ ঘন্টা। দু’দেশের মধ্যে সময়ের পার্থক্য প্রায় ৬ ঘন্টা। ফলে সেখানে পৌঁছাবো সন্ধ্যা প্রায় ৬ টায়। এমতাবস্থায় ফজর, যোহর ও আছরের ছালাত কখন ও কিভাবে আদায় করব?
আকিদুল বিন সিরাজ
মধুখালি, ফরিদপুর।
উত্তর : যে দেশের উপর দিয়ে বিমান যাচ্ছে সে দেশের স্থানীয় সময় অনুযায়ী ছালাত আদায় করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই ছালাত বিশ্বাসীগণের উপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত’ (নিসা, ১০৩)। আর স্থানীয় সময়টি বিমান ক্রু বা বিমানবালাদের মাধ্যমে জেনে নিতে হবে।
প্রশ্ন (২৭) : আমার কাছে প্রায় চার লক্ষ টাকা আছে। আমার দুই ছেলে ও তাদের সংসার আছে। তবে তাদের আয়ের তেমন কোনো উৎস নেই। এমতাবস্থায় ছেলেদেরকে আয়ের জন্য কিছু করে দেবো? না-কি আমি হজ্জে যেতে পারবো?
-আলতাফ হুসাইন
ক্ষেতলাল, জয়পুরহাট।
উত্তর : এমতাবস্থায় হজ্জ করা যরূরী। কেননা, সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য হজ্জ করা ফরজ (আলে ইমরান, ৯৭)। ছেলে যুবক হওয়ার পর তার জীবন যাপনের জন্য যা প্রয়োজন তা পিতার কোনো দায়িত্বে থাকে না। পিতা ছেলের জন্য যা করেন তা তার অনুগ্রহ মাত্র। যেহেতু পিতার হজ্জে যাওয়ার সামর্থ্য রয়েছে সেহেতু তার হজ্জে যাওয়া একান্ত কর্তব্য (ছহীহ মুসলিম, হা/১৩)।
প্রশ্ন (২৮) : ঘুমানোর পর রাতে যদি হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় তাহলে কি পুনরায় ঘুমানোর দু‘আ পড়ে ঘুমাতে হবে?
-রাজিবুল ইসলাম
আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা।
উত্তর : রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলে পুনরায় দু‘আ পড়ে ঘুমানোর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। এমনকি নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর ছালাত আদায় করে পুনরায় ঘুমিয়েছেন কিন্তু দু‘আ পড়েছেন মর্মেও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে সে নিজের প্রশান্তির জন্য ঘুমের দু‘আ পড়তে বা তাসবীহ-তাহলীল করতে পারে।
প্রশ্ন (২৯) : আমার দাদার পূর্বেই বাবা মারা যান। তখন বাড়ী করার জন্য দাদা আমাকে একটি জমি দেন। অতঃপর দাদা মারা যাওয়ার পর চাচারা আমাকে আরোও কয়েক শতক জমি দিয়েছেন। এই জমি ও দাদার দেওয়া জমি ভোগ করা কি আমার জন্য বৈধ হবে? উল্লেখ্য যে, বাবা মারা যাওয়ার পর দাদা যখন আমাকে জমি দেন তখন আমি জানতাম না যে, বাবা মারা গেলে নাতি তার দাদার সম্পত্তির অংশ পায় না।
-ডাঃ সেলিম রেজা
কুমারখালী, কুষ্টিয়া।
উত্তর : হ্যাঁ, বৈধ হবে। কেননা, যারা উত্তরাধিকারী সূত্রে সম্পদের ভাগ পায় না তাদেরকে দান করা যায়। আবু উমামা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বিদায় হজ্জের দিন বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক হক্বদারের হক্ব প্রদান করেছেন। অতএব ওয়ারিছদের জন্য কোন অছীয়ত করা যাবে না (আবুদাঊদ, হা/২৮৭০; ইবনু মাজাহ, হা/২৭১৩; মিশকাত, হা/ ৩০৭৩)।
প্রশ্ন (৩০) : ফরয গোসল না করে ছালাতের জন্য আযান দেওয়া যাবে কি?
-আকিমুল ইসলাম
জোতপাড়া, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর : পবিত্র অবস্থায় আযান দেওয়া মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয় (আল মুগনী, ১/৪৫৮ পৃঃ)। বিধায় ছোট নাপাকি কিংবা বড় নাপাকি হোক যেকোন অবস্থায় আযান দিলে আযান শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে উত্তম হল, উভয় নাপাকি থেকে মুক্ত হয়ে পবিত্র অবস্থায় আযান দেওয়া (ফাতাওয়া লাজনাহ আদ-দায়িমাহ, ৬/৬৭ পৃঃ)।
প্রশ্ন (৩১) : তায়েফে মানছূরা কারা?
-আব্দুর রহমান
ক্ষেতলাল, জয়পুরহাট।
উত্তর : সঠিক আমল-আক্বীদা ও আদর্শের অনুসারীরাই হল, ‘তায়েফে মানছূরা’ বা সাহায্যপ্রাপ্ত দল। তারা একজন ব্যক্তিও হতে পারেন। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, জামা‘আত হল সেটা যা হক্ব বা সত্যের সাথে মিলে যায়। যদিও তুমি একাকী হও (আল-ওয়াজীজ ফী আক্বীদাতিস সালাফীস সালেহ, ১/২৫পৃঃ)। আর হক্বের মানদ- হচ্ছে যার উপর ১৪০০ বছর পূর্বে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার ছাহাবীরা ছিলেন (তিরমিযী, হা/২৬৪১)।
প্রশ্ন (৩২) : কচ্ছপ ও কুঁচে খাওয়া যাবে কি?
-আকিমুল ইসলাম
জোতপাড়া, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর : কচ্ছপ, কুঁচে এমনকি তার ডিমও রুচি হ’লে খাওয়া যায়। কারণ এগুলো পানিতে বসবাসকারী প্রাণী। আর পানির শিকার (যা হিংস্র নয়) হালাল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমাদের জন্য সাগরের শিকার হালাল করা হয়েছে’ (মায়েদাহ, ৯৬)। হাসান রাহিমাহুল্লাহ কচ্ছপ খাওয়াকে দোষের মনে করতেন না (ছহীহ বুখারী, ‘৭২/১২. অধ্যায় : মহান আল্লাহর বাণী : তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার হালাল করা হয়েছে....’)।
প্রশ্ন (৩৩) : মহিলাদের নাক ফোঁড়ানো কি যরূরী?
-শিমু খাতুন
সাধনপুর, পুঠিয়া, রাজশাহী।
উত্তর : মহিলাদের নাক ফোঁড়ানো যরূরী নয়। কেননা এ ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহতে কোন বক্তব্য পাওয়া যায় না। তবে স্বামীর মনোরঞ্জনের জন্য তা ফোঁড়াতে পারে। অবশ্য মহিলা ছাহাবীদের কান ফোঁড়ানোর ব্যাপারে একাধিক প্রমাণ মিলে। হাদীছে এসেছে ঈদের দিনে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মহিলাদের উদ্দেশ্যে ওয়ায-নছীহত করেন ও তাদেরকে দান-ছাদাক্বা করতে উদ্বুদ্ধ করেন তখন তারা কানে ও গলায় হাত দিয়ে গহনা সমূহ খুলে বেলাল রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর চাদরে প্রদান করতেন (ছহীহ বুখারী, হা/৫২৪৯; আবুদাঊদ, হা/১১৪৬; মিশকাত, হা/১৪২৯)। অত্র হাদীছ প্রমাণ করে যে, মহিলারা সৌন্দর্যের জন্য তাদের শরীরের অঙ্গ ফোঁড়াতে পারে।
প্রশ্ন (৩৪) : সূরা হিজরের ৮৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যা জানিয়ে বাধিত করবেন।
-মিলন হোসাইন
রহিমানপুর, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর : সূরা হিজরের ৮৭ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর আমি তোমাকে ‘সাব‘আ মাছানী’ তথা বারবার পঠিত সাতটি আয়াত এবং মহাগ্রন্থ আল-কুরআন দান করেছি’। হাফেয ইবনে কাছীর রাহিমাহুল্লাহ তার তাফসীরে ইবনে কাছীরে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘সাব‘আ মাছানী’র অর্থ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। প্রথম মত : আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহুম, মুজাহিদ, সাঈদ ইবনে জুবায়ের, যাহহাক রাহিমাহুমুল্লাহ এবং আরও অনেকের মতে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, সাতটি দীর্ঘ সূরা। অর্থাৎ সূরা বাক্বারাহ, আলে ইমরান, নিসা, মায়েদা, আন‘আম, আ‘রাফ এবং সূরা ইউনুস। এ ব্যাপারে ইবনে আববাস ও সাঈদ ইবনে জুবায়ের রাযিয়াল্লাহু আনহুম-এর স্পষ্ট ভাষ্য আছে। ইবনে আবী হাতেম তার পিতা থেকে, তিনি ইবনে আবী ওমর থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, সুফিয়ান বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, সূরা বাক্বারাহ, আলে ইমরান, নিসা, মায়েদা, আন‘আম, আ‘রাফ এবং সূরা আনফাল ও তাওবা (আনফাল ও তাওবাকে একটি সূরা হিসাব করে)।
দ্বিতীয় মত : ‘সাব‘আ মাছানী’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, সূরা ফাতিহা। এই মতের পক্ষে গেছেন ওমর, আলী, ইবনে মাসঊদ, ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহুম। ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘বিসমিল্লাহ’ হল এর সপ্তম নম্বর আয়াত। আল্লাহ এটা বিশেষভাবে তোমাদেরকে দান করেছেন। ক্বাতাদা রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, আমাদের নিকট আলোচনা করা হয়েছে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল সূরা ফাতিহা। কারণ তার আয়াতগুলো প্রত্যেক ক্বিরাআতে বারবার পড়া হয়। অন্য বর্ণনায় আছে, ফরয-নফল সকল ছালাতের প্রতি রাক‘আতে সেগুলো পাঠ করা হয়। ইবনে জারীর রাহিমাহুল্লাহ এই মতটি পসন্দ করেছেন এবং তার মতের স্বপক্ষে ছহীহ বুখারীর দু’টি হাদীছ দিয়ে দলীল পেশ করেছেন।
প্রথম হাদীছ : (হাদীছের সারাংশ হল), সাঈদ ইবনে মু‘আল্লা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘আমি কি তোমাকে কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরা শিখিয়ে দিব না? আমি বললাম, অবশ্যই। অতঃপর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মসজিদ থেকে বের হয়ে চলে যেতে উদ্যত হলেন, তখন আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দিলাম। তখন তিনি বললেন, ‘সেটা হল اَلْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ এটাই হল ‘সাব‘আ মাছানী’। এটাই হল মহাগ্রন্থ আল-কুরআন, যা আমাকে দেওয়া হয়েছে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৪৪৭৪; মিশকাত, হা/২১১৮)। দ্বিতীয় হাদীছ : আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘উম্মুল কুরআনই হল ‘সাব‘আ মাছানী’ এবং মহাগ্রন্থ আল-কুরআন’ (ছহীহ বুখারী, হা/৪৭০৪)। ‘সাব‘আ মাছানী’ দ্বারা যে সূরা ফাতিহাই উদ্দেশ্য, এটা তার সুস্পষ্ট প্রমাণ (ইবনে কাছীর, সূরা হিজর, আয়াত ৮৭-এর আলোচনা)।
প্রশ্ন (৩৫) : ইমাম ছাহেব অসুস্থ হওয়ায় তার পা কেটে ফেলা হয়েছে। এমতাবস্থায় তিনি কি বসে খুৎবা দিতে পারবেন?
-কবির হোসেন, পুঠিয়া, রাজশাহী।
ও শহীদ বিন আযহার, আদমদিঘি, বগুড়া।
উত্তর : এমতাবস্থায় সক্ষম ব্যক্তির কাছে খুৎবা প্রদানের দায়িত্ব সমর্পণ করতে হবে। তবে খুৎবা দেওয়ার মত কোন ব্যক্তি না থাকলে ওযর হিসাবে তিনি বসে খুৎবা দিতে পারেন। কারণ আল্লাহ মানুষের উপর সাধ্যের বাইরে কোন কিছু চাপিয়ে দেন না (বাক্বারাহ, ২৮৬)।
প্রশ্ন (৩৬) : অনেকেই বলে, ‘ক্বিয়ামতের মাঠ হবে মক্কা-মদীনাতে’। এটা কি ঠিক?
-আকিমুল ইসলাম
জোতপাড়া, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর : হাশরের মাঠ মক্কা, মদীনা কিংবা আরাফাতের ময়দানে হবে, এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং ছহীহ হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় হাশরের ময়দান হবে শামের ভূমিতে। আবু যার রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, الشَّامُ أَرْضُ الْمَحْشَرِ وَالْمَنْشَرِ ‘শাম হল হাশর-নাশরের ভূমি’ (মুসনাদে বাযযার, হা/৩৯৬৫; ছহীহুল জামে’, হা/৩৭২৬, ছহীহ)।
প্রশ্ন (৩৭) : আমাদের মসজিদে প্রতি শুক্রবার ফজরের ছালাত শেষে ইমাম মুক্তাদীরকে নিয়ে কবরবাসীর কল্যাণের উদ্দেশ্যে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেন। এভাবে মুনাজাত করা যাবে কি? যদি না যায়, তাহলে তাদের জন্য দু‘আ করার সঠিক পদ্ধতি কী?
-আব্দুল্লাহ
গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
উত্তর : জুম‘আ, ঈদায়েন কিংবা এ ধরণের বিশেষ কোন দিনকে কেন্দ্র করে সম্মিলিত মুনাজাত করা বিদ‘আত বা শরী‘আতের মধ্যে নতুন আবিষ্কার। এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই এই আমল অবশ্য পরিত্যাজ্য। কারণ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ. ‘যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল, যার ব্যাপারে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮; ছহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭)। তাদের জন্য বিভিন্ন সময়ে দু‘আ করা যায়। যেমন, (এক) কবর যিয়ারতের সময় একাকী হাত তুলে দীর্ঘ সময় ধরে তাদের জন্য দু‘আ করা (ছহীহ মুসলিম, হা/৯৭৪; নাসাঈ, হা/৩৯৬৪)। (দুই) গভীর রাতে উঠে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করে তাদের জন্য হাত তুলে দু‘আ করা (আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৭৫৩; ছহীহ বুখারী, হা/১১৪৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৫৮)। (তিন) ফরয ছালাতের শেষ বৈঠকে মাসনূন দু‘আসমূহ পাঠ করার সময়ে তাদের জন্য দু‘আ করা (ছহীহ বুখারী, হা/৮৩৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৪০২)।
প্রশ্ন (৩৮) : কুড়িয়ে পাওয়া টাকা-পয়সা ব্যবহারের ব্যাপারে শারঈ বিধান কী?
-হাসিনুর রহমান
পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর : কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসের বিষয়ে হুকুম তিন ধরনের। প্রথমত, কুড়িয়ে পাওয়া বস্ত্তটি যদি গুরুত্বপূর্ণ ও দামী কোনো ধন-দৌলত না হয় তাহলে মালিকের খোঁজ করা ছাড়াই সে সেটা থেকে উপকার গ্রহণ করতে পারে (আবুদাঊদ, হা/১৭১৭)। চাইলে মসজিদ বা মাদরাসায় দানও করতে পারে। ভালো কাজ হিসাবে তাতে দু’জনই নেকী পাবে (ছহীহ মুসলিম, হা/১০১৭; মিশকাত, হা/২১০)।
দ্বিতীয়ত, যদি কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস পরিমাণ মতো হয় তবে মালিকের কাছে ফেরত দেওয়ার জন্য এক বছর যাবৎ প্রচার করতে হবে। না পাওয়া গেলে নিজে ইচ্ছামত ব্যবহার করতে পারে (নাসাঈ, হা/২৪৯৪; মিশকাত, হা/৩০৩৬)।
তৃতীয়ত, যদি এমন কোনো প্রণী কুড়িয়ে পাওয়া যায় যে নিজের হিফাযত নিজেই করতে পারে। ছোট হিংস্র প্রাণী থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে। যেমন উট ও ঘোড়া। তাহলে তাকে উঠিয়ে নিজ বাড়ীতে নিয়ে যেতে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। বরং তাকে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দিতে হবে (ছহীহ বুখারী, হা/২৪২৮)।
প্রশ্ন (৩৯) : কয়েকজন ব্যক্তি একটি টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে। কিন্তু গস্নাস একটি। এমতাবস্থায় গস্নাসটি বাম হাতে ধরে ডান হাত ঠেকিয়ে পানি পান করা যাবে কি?
-নাজনীন
বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত পদ্ধতি সুন্নাত সম্মত নয়। সুন্নাত হচ্ছে ডান হাত দিয়ে খাওয়া এবং পান করা। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ কিছু খায়, তখন সে যেন ডান হাতে খায়। আর যখন পান করে, তখন সে যেন ডান হাতে পান করে’ (মুসলিম হা/২০২০; মিশকাত হা/৪১৬২)। অপর বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘সাবধান! তোমাদের কেউ যেন বাম হাতে না খায় এবং পান না করে। কেননা শয়তান তার বাম হাতে খায় এবং সে হাতে পানও করে’ (মুসলিম হা/২০২০; মিশকাত হা/৪১৬৩)। রুচির সমস্যা হলে সে ভালোভাবে হাত চেটে খেয়ে টিস্যু ব্যবহার করে ডান হাতে খাওয়ার চেষ্টা করবে।
প্রশ্ন (৪০) : অনেকেই কুরআন তেলাওয়াত শেষে তাতে চুম্বন করে। এটা করা কি ঠিক?
-আক্বীমুল ইসলাম
জোতপাড়া, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর : কুরআন তেলাওয়াত শেষে তাতে চুম্বন করা ঠিক নয়। বরং কুরআন তেলাওয়াত শেষে নিমেণাক্ত দু‘আটি পড়া যায়। তা হল, سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ لآ إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ
উচ্চারণ : সুবহা-নাকা ওয়া বিহামদিকা, লা ইলা-হা ইল্লা আনতা, আস্তাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা (সুনানুন নাসাঈল কুবরা, হা/১০১৪০; আমালুল ইয়াওমে ওয়াল লায়লে লিন নাসাঈ, হা/৩০৮)।
প্রশ্ন (৪১) : মেয়েরা কি কবরস্থানে যেতে ও কবর যিয়ারত করতে পারবে?
-জুলহাস উদ্দীন
পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর : মেয়েরা কবরস্থানে যেতে ও কবর যিয়ারত করতে পারে। একদা আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা তার ভাই আব্দুর রহমান ইবনু আবী বাকর রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর কবর যিয়ারত করেন। তাঁকে বলা হ’ল, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেননি? তিনি বললেন, পরে তিনি অনুমতি দিয়েছেন (আলবানী, আহকামুল জানায়েয, ‘মহিলাদের কবর যিয়ারত’ বিষয়ক আলোচনা)। এছাড়া তিনি আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা-কে কবর যিয়ারত করার দু‘আ শিক্ষা দিয়েছেন (ছহীহ মুসলিম, হা/৯৭৪; নাসাঈ, হা/২০৩৭; আহমাদ, হা/২৫৩২৭; মিশকাত, হা/১৭৬৭)। তবে কান্নাকাটি করলে যাওয়া যাবে না। কেননা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতকারিনী মহিলাদের প্রতি লা‘নত করেছেন। কোন কোন মুহাদ্দিছ বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের কবর যিয়ারত করাকে অপসন্দ করেছেন তাদের ধৈর্যের স্বল্পতা এবং অস্থিরতার আধিক্যের কারণে (তিরমিযী, হা/১০৫৬; মিশকাত, হা/১৭৭০)।
প্রশ্ন (৪২) : মুনাজাত শেষে ‘আমীন’ বলার পর ‘সুম্মা আমীন’ বলার পক্ষে কোন হাদীছ আছে কি?
-নাজমুল হক্ব
বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : ‘সুম্মা আমীন’ অর্থ হচ্ছে অতঃপর আবারো আমীন! সুন্নাতী দু‘আ পাঠ করে অথবা শ্রবণ করে বান্দা আল্লাহর কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, ‘আমীন’ বা ‘হে আল্লাহ তুমি কবুল করো’। আর আরবী ভাষার ব্যাকরণ মতে একটি শব্দ একাধিকবার বললে আধিক্য বা দৃঢ়তা বুঝায়। তাই ‘আমীন’ বলার পর ‘সুম্মা আমীন’ বললে আল্লাহর প্রতি বান্দার অধিক অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়। যেটা দু‘আর উদ্দেশ্য ও শারঈ নির্দেশনা। এছাড়া আমীন ইয়া রাববাল আলামীন, আমীন ইয়া রাবব, আমীন ইয়া রাহমান ইত্যাদীও বলা যায়। তবে ছালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে মুছলস্নী শুধু ‘আমীন’ বলবে। কেননা এক্ষেত্রে বাড়তি বা অতিরিক্ত কিছু বলার সুযোগ নেই (ছহীহ বুখারী, হা/৭৮০; ছহীহ মুসলিম, হা/৪১০; মিশকাত, হা/৮২৫)।
প্রশ্ন (৪৩) : দাওয়াত দিয়ে নিজ পরিবার-পরিজনকে গ্রহণ করাতে না পারলে কি বাহিরে দাওয়াতী কাজ করা যাবে?
-আমীনা আক্তার
শেরপুর।
উত্তর : হ্যাঁ, যাবে। কেননা, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ চাচা আবু তালেবকে দাওয়াত দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি। এতদসত্ত্বেও রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রিসালাতের দাওয়াত অব্যাহত রেখেছিলেন এবং স্বীয় উম্মাতকে তা অব্যাহত রাখতে বলেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার পক্ষ হতে যদি একটি আয়াতও জানা থাকে, তাহলে তা পৌঁছে দাও। বনী ইসরাঈলের কাহিনী বর্ণনা কর, তাতে কোন দোষ নেই। যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেন তাঁর বাসস্থান জাহান্নামে প্রস্ত্তত করে নেয়’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৬১; মিশকাত, হা/১৯৮)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমাদের মাঝে এমন একটি দল থাকা চাই যারা কল্যাণের দিকে আহবান করে, ভাল কাজের আদেশ করে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে। আর তারাই সফলকাম’ (আলে-ইমরান, ১০৪)। এমনকি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হ’লে পরকালে প্রশ্নের সম্মুখীন হ’তে হবে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৭১৩৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮২৯; মিশকাত, হা/৩৬৮৫)।
প্রশ্ন (৪৪) : টাকা-পয়সা ছাড়া স্বর্ণ বা অন্য কোন সম্পদ দ্বারা মোহরানা আদায় করা যাবে কি?
-হাবীবুর রহমান
আদমদিঘি, বগুড়া।
উত্তর : হ্যাঁ, টাকা-পয়সা ছাড়াও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির যে কোন বস্তু দিয়ে মোহরানা প্রদান করা যায়। সাহল বিন সা‘দ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এক মহিলা এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি নিজেকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম। এরপর এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার যদি প্রয়োজন না থাকে তাহ’লে তাকে আমার সঙ্গে বিবাহ দিয়ে দেন। তখন তিনি বললেন, ‘মোহরানা স্বরূপ তোমার নিকট কিছু আছে কি? তখন সে বলল, আমার নিকট এ লুঙ্গি ছাড়া আর কিছুই নেই। তখন তিনি বললেন, ‘যদি একটি লোহার আংটিও হয় তাহ’লে তা দিয়ে মোহরানা দিয়ে দাও’। লোকটি লোহার অংটিও দিতে না পারায় আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র কুরআনের কিছু সূরা শিখানোকে মোহর হিসাবে ধরে বিবাহ পড়িয়ে দিয়েছিলেন (ছহীহ বুখারী, হা/৫১৩৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪২৫; মিশকাত, হা/৩২০২)। জাবের রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে এক মুষ্টি খাদ্য দিয়েও মোহরানা প্রদান করতাম (ছহীহ আবুদাঊদ, হা/২১১০)। ছাবেত ইবনু কায়েস রাযিয়াল্লাহু আনহু তার স্ত্রীকে মোহরানা স্বরূপ একটি বাগান প্রদান করেছিলেন (ছহীহ বুখারী, হা/৫২৭৩; মিশকাত, হা/৩২৭৪)।
প্রশ্ন (৪৫) : মসজিদের পিলার বা খুঁটির ভিতর দিয়ে কাতার দেওয়া যাবে কি?
-শহীদ বিন আযহার
আদমদিঘি, বগুড়া।
উত্তর : না, কাতারের মাঝে পিলার বা খুঁটি থাকলে সেখানে ছালাত আদায় করা যাবে না। মু‘আবিয়া ইবনে কুররা রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর পিতা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে আমাদেরকে দুই খুঁটির মাঝখানে কাতারবদ্ধ হতে নিষেধ করা হত এবং এ থেকে আমাদেরকে কঠোরভাবে বিরত রাখা হত (ইবনে মাজাহ, হা/১০০২)। আনাস ইবনে মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে আমরা (এভাবে দাঁড়ানো থেকে) এড়িয়ে যেতাম (ছহীহ তিরমিযী, হা/২২৯, সনদ ছহীহ)। তবে লোক সমাগম বেশী হওয়ার কারণে স্থান সংকুলান না হলে বাধ্য হয়ে দাঁড়ানো যেতে পারে। অনুরূপ পিলারের মাঝে কেউ একাকী ছালাত আদায় করলে অথবা ইমাম একা দাঁড়ালে কোন সমস্যা নেই।
প্রশ্ন (৪৬) : কবরস্থানে ওয়ায-মাহফিল করা যাবে কি?
-আবু যায়েদ
বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : না, কবরস্থানে ওয়ায-মাহফিল করা যাবে না। এমনকি সেখানে বসাও যাবে না। আবু মারছাদ গানাবী রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কবরের উপর বসো না এবং কবরের দিকে মুখ করে ছালাত আদায় কর না’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৯৭২; মিশকাত, হা/১৬৯৮)। তবে কবরস্থানের যে সকল জায়গায় কবর দেয়া হয়নি সে সকল জায়গায় নিমণবর্ণিত শর্ত সাপেক্ষে ওয়ায-মাহফিল করা বা দ্বীনী কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন, কবরবাসীরা বক্তৃতা শুনতে পাবে; তাদের শাসিত্ম মাফ হবে; তারা মাহফিলের নেকী পাবে ইত্যাদি ভ্রান্ত বিশ্বাস বা ধারণা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকতে হবে।
প্রশ্ন (৪৭) : কবরস্থানের উন্নয়নকল্পে কি দান করা যাবে? মাযারস্থ কবরে দান করলে কি গোনাহ হবে?
-আবু যায়েদ
বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : কবরস্থানের উন্নয়নকল্পে দান করা যাবে। কেননা, তা ভাল কাজে অংশ গ্রহণকেই শামিল করে। তবে মাযারস্থ কবরে দান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা, সেখানে দানকৃত অর্থ-সম্পদ শিরকী ও বিদ‘আতী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নেকী ও তাক্বওয়ার কাজে পরষ্পরকে সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে সহযোগিতা করো না’ (মায়েদাহ, ২)।
প্রশ্ন (৪৮) : সম্মানিত ব্যক্তিদের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা যাবে কি?
-আবুল হাসান
গিন্দগঞ্জ, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : কোন ব্যক্তিরই পায়ে সালাম করা জায়েয নয়। অনুরূপভাবে সমাজে কদমবুচি নামে পদ চুম্বনের যে প্রথা দেখা যায় সেটাও বিধর্মী প্রথা। কোন কোন ছাহাবী জাহেলিয়াতের পুরাতন স্বভাব অনুযায়ী কখনো কখনো ভালবাসার আতিশয্যে নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত, পা, কটিদেশ ইত্যাদি চুম্বন করতে চেয়েছেন। কিন্তু সাধারণভাবে সকল ছাহাবী, তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈদের যুগে মুসলিম সমাজে কোথাও এ রেওয়াজ ছিল না। অতএব, দ্বীন ইসলামের মধ্যে যেকোন সৃষ্ট রীতি প্রত্যাখ্যাত ও বিদ‘আত। যেমন রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনের মধ্যে এমন রীতি সৃষ্টি করল, যা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮; মিশকাত, হা/১৪০)। অতএব, পিতা-মাতা, শিক্ষক-শিক্ষিকা, শ্বশুর-শাশুড়ি বা কোন মুরববীর পায়ে সালাম করা শরী‘আত সম্মত নয়।
প্রশ্ন (৪৯) : মহিলারা ঋতুবতী অবস্থায় দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দু’আ-দরূদ পড়তে পারবে কি?
-আফসানা মারিয়া
পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর : হ্যাঁ, মহিলারা ঋতুবতী অবস্থায় দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দু‘আ-দরূদ পড়তে পারবে। উম্মু আত্বীয়া রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, দুই ঈদের দিনে ঋতুবতী ও পর্দানশীন মহিলাদেরকে ঈদের মাঠে বের করার জন্য আমাদের আদেশ করা হয়েছে। তবে ঋতুবতী মহিলারা মুছাল্লা থেকে পৃথক থাকবে এবং মুসলিমদের জামা‘আতে ও দু‘আতে শরীক হবে (ছহীহ বুখারী, হা/৩৫১; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৯০; মিশকাত, হা/১৪৩১)।
প্রশ্ন (৫০) : ইক্বামত দেওয়ার সময় ডানে ও বামে ঘাড় ঘুরাতে হবে কি?
-আবুল হাসান
গিন্দগঞ্জ, চাঁপাইনবানগগঞ্জ।
উত্তর : ইক্বামতের সময় ডানে ও বামে মুখ বা ঘাড় ঘুরানোর পক্ষে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে আযান দেওয়ার সময় মুয়াযযিনকে ‘হাইয়া আলাছ ছালাহ’ বলার সময় ডানে এবং ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বলার সময় বামে মুখ ঘুরাতে হবে। আবু যুহায়ফা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বেলাল রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে আযানের সময় দেখেছি, তিনি ‘হাইয়া আলাছ ছালাহ ও ফালাহ’ বলার সময় যথাক্রমে ডানে ও বামে মুখ ফিরাতেন (তিরমিযী, হা/১৯৭; ছহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ, ২/২৮৫ পৃঃ; ইরওয়াউল গালীল, হা/২৩০)।
