اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَّا نَبِيَّ بَعْدَهُ
রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট হলে, জনগণ ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে, জীবিকা নির্বাহের পথ বন্ধ হলে, দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে গেলে, রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অরক্ষিত হলে, মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ না হলে প্রতিবাদ জানানোর অনুমোদন ইসলামে দিয়েছে। ইসলাম সমাজতন্ত্রের বেড়াজালে, সামরিক শাসনের কঠোরতায় ও রাজতন্ত্রের এককেন্দ্রিকতায় সীমাবদ্ধ নয়; ইসলাম কল্যাণকর সার্বজনীন জীবনব্যবস্থা। ইসলাম মানুষকে তার অধিকার রক্ষা সুযোগ দিয়েছে। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় সে শহীদ, যে তার দ্বীন রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে সে শহীদ, নিজের জীবন রক্ষা করত গিয়ে মৃত্যুবরণ করে সে শহীদ, যে নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে সে শহীদ’ (তিরমিযী, হা/১৪২১)। কিন্তু স্বৈরাশাসকের আক্রমণ বা নির্যাতনের প্রবল আশঙ্কা থাকলে এবং তাদের অপসারণ সম্ভবপর মনে না হলে আন্দোলন-সংগ্রাম করে সাধারণ মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলা যাবে না। কেননা মানুষ হত্যা ও জানমালের ক্ষতি এবং আতঙ্ক সৃষ্টি ইসলামে জায়েয নয়।
এক্ষেত্রে ইসলামের বিকল্প ও সর্বোত্তম পথ হলো— আক্বীদা ও আমল সংশোধন করা, ঈমানী চেতনা ও দৃঢ়তায় সমৃদ্ধ হয়ে আল্লাহর ইবাদত ও সান্নিধ্যে আত্মনিয়োগ করা এবং ইসলামের বিধান ও আদর্শকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরা। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি জনপদবাসী ঈমান আনত এবং (আল্লাহ তাআলাকে) যথাযথ ভয় করত, তবে আমি তাদের উপর আকাশ ও যমীনের বরকতের (রিযিক্বের) দরজাসমূহ খুলে দিতাম’ (আল-আ‘রাফ, ৭/৯৬)।
ইসলামের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো বিপদমুক্তির জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা। বিপদ বা সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। রিযিক্ব উপার্জনের জন্য যথাযথ চেষ্টা করা। হাত গুটিয়ে বসে থাকার সুযোগ ইসলামে নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ তাই পায় যার জন্য সে চেষ্টা করে’ (আন-নাজম, ৫৩/৩৯)। মানুষ যদি অন্যায় হতে দেখে, যদি তার অর্থসম্পদ ও জীবিকা ধ্বংস হয়; যদি রাষ্ট্রের সম্পদ বিশেষ শ্রেণির হাতে চলে যায়, নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়; তবে এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য চেষ্টার অনুমোদন ইসলামে আছে। ‘আল্লাহ তাআলা কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না; যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করে’ (আর-রা‘দ, ১৩/১১)।
উক্ত পরিবর্তনের চেষ্টার অন্যতম উপায় হচ্ছে সরাসরি রাষ্ট্রপ্রধানকে নাছীহা করা। পাশাপাশি বিভিন্ন বক্তব্য ও জুমআর খুৎবায় জনগণের সামনে সঠিক বিষয়টি তুলে ধরা। মুখ, কলম ও মিডিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে বৈধ উপায়ে জনগণের দাবি তুলে ধরা। তবে এ ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করা যাবে না। মানুষের জানমালের যেন ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা করা বা রক্তপাত ঘটানোর অনুমোদন ইসলামে নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিন-মুসলিমকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আল্লাহ তার ওপর ক্রোধান্বিত হবেন, তাকে অভিশাপ দেবেন আর তিনি পরকালে তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত করে রাখবেন’ (আন-নিসা, ৪/৯২)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের ওপর অস্ত্র উঠাবে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়’ (বুখারী, হা/৬৮৭৪)।
হরতাল অনেক সময় ভয়াল রূপ ধারণ করে। হরতালের আগের রাত ও পরের দিনে জনগণ অতঙ্ক পড়তে পারে। অথচ রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুসলিমের অন্য মুসলিমকে ভয় দেখানো বৈধ নয়’ (আবূ দাঊদ, হা/৫০০৪)। এতে দেশ ও সম্পদের ক্ষতি সাধিত হয়। বিদায় হজ্জের ভাষণে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের রক্ত, সম্পদ ও সম্মান একে অন্যের জন্য হারাম’ (বুখারী, হা/১৬৫২)। হরতাল কোনো ইসলামিক আদর্শ নয়। হরতালে সর্বসাধারণের চলাচলের পথ নিরাপদ থাকে না। অথচ আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের চলাচলের পথকে নিরাপদ করার আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা ঈমানের একটি শাখা’ (মুসলিম, হা/৩৫)।
অশান্তিপূর্ণ ও বেআইনী কাজকর্মের বৈধতা ইসলাম দেয় না। রাজনৈতিক অধিকার চর্চার নামে বারবার হরতালে জনগণ যদি মৌলিক অধিকার বঞ্চিত হয় বা তাদের দৈনিক আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যায়, সে হরতাল বৈধ হবে না। আল্লাহ আমাদের সকলকে বোঝার ও অনুধাবন করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন! (স.)