কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

ভয়াবহ অর্থসংকটের কবলে দেশ!

post title will place here

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَّا نَبِيَّ بَعْدَهُ

বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ ৫০ বছরে এদেশের ক্ষমতায় রাজনৈতিকভাবে প্রধান দুইটি দল ক্ষমতায় থেকেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক, ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক কারণে জন্মলগ্ন থেকেই এক অশুভ শক্তির শত্রুতার শিকার। যারা কখনোই বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায় না। যারা চায় বাংলাদেশের অর্থনীতি হোক ভঙ্গুর ও পরমুখাপেক্ষী; বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা হোক বেকার তৈরির কারখানা; যাতে আর্ন্তজাতিক প্রতিযোগিতার বিশ্বে তারা পিছিয়ে থাকে। সেই লক্ষ্যেই তাদের বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জোটের কার্যক্রম চলমান আছে। তাদের গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা বৃদ্ধি পেতেই আছে এই দেশের মাটিতে। তারা দেখেছে যখনই বাংলাদেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে তখনই সেনাবাহিনী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে দেশকে ভয়াবহ কবলের হাত থেকে রক্ষা করে। এদেশের সেনাবাহিনীর অকৃত্রিম দেশপ্রেম, জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা, সাধারণ মানুষের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসার অন্যন্য নিদর্শন আছে। কিন্তু বিশেষ অদৃশ্য কারণে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ওপর কালো ছায়া নেমে আসে। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ পিলখানায় ঘটে যায় ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অত্যন্ত চৌকস ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। এই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

দেশটিকে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাকে সামনে রেখে বড় বড় প্রকল্পের নামে দুর্নীতি করার অবাধ সুযোগ দেওয়া হয়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের তথ্যমতে মেগা প্রকল্পে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়, যার প্রায় ৬২ শতাংশ বিদেশি ঋণ। বিদেশ থেকে উচ্চমাত্রার সূদে ঋণ নিয়ে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন চলমান আছে। ফলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে চলমান দেশটি ভয়াবহ অর্থসংকটের কবলে পড়ছে। ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা আমলা, পুলিশ, র‌্যাব, সেনা অফিসার, রাজনৈতিক নেতা যে যেভাবে পারছে দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। বিভিন্ন শিল্পগ্রুপ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়াচ্ছে। ফলে বেশিরভাগ ব্যাংক আর্থিক দৈন্যতার কবলে পড়ে। দেশের ৫৪টি ব্যাংকের অবস্থা বিশ্লেষণ করে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ মোট ৩৮টি ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ১০টি দুর্বল ব্যাংককে একীভূত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় (দি বিজনিস ইস্টানডার্ড,১১ মার্চ ২০০৪)

২০ মাস ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলমান আছে (বণিক বার্তা, ২৭ মার্চ ২০২৪)। অতি মুনাফা লাভের প্রবণতা, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মওজুদদারি, বাজারে পূর্ণ প্রতিযোগিতার অভাব, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, টাকার অবমূল্যায়ন, চাঁদাবাজি, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি ইত্যাদির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় মূল্যস্ফীতি ঘটছে (বণিক বার্তা, ১৫ অক্টোবর ২০২৩)। বিভিন্ন ব্যবসায়িক গ্রুপ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলনের সুযোগ পেয়ে যায়। কোটি কোটি টাকার খেলাপি ঋণের অর্থ বিদেশে পাচার করে। বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের সম্পদের পাহাড় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা; অথচ ২০০৯ সালে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে সঠিক প্রদান করা হয়নি। আইএমএফের হিসাব মতে, এর পরিমাণ ৩ লাখ কোটি টাকারও অধিক আর অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মইনুল ইসলামের মতে এর পরিমাণ ৪ লাখ কোটি টাকা (বণিক বার্তা, অক্টোবর ১৫, ২০২৩)

দুর্নীতি, ঋণখেলাপি ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং সরকারি নিষ্ক্রিয়তা বিদেশে অর্থ পাচারের কারণ। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এর প্রতিবেদন বলছে, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১১ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। দেশটিকে দেউলিয়া করার অপচেষ্টা অব্যাহত আছে। ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের ৮০ শতাংশ সংঘটিত হয়। প্রবাসী আয়ের প্রায় ৫০ শতাংশ হুন্ডির মাধ্যমে তার নিকটজনকে নগদ টাকা পরিশোধ বৈদেশিক মুদ্রা পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে দেশকে রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত করছে। আবার অনেক ব্যবসায়ী তার রফতানি আয়ের একটা বিরাট অংশ বিদেশে রেখে দিচ্ছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমে যাচ্ছে। অর্থ পাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর কিংবা অন্যান্য সংস্থা কার্যকর কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। ডলার সংকটে বিভিন্ন শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করতে না পারায় ব্যবসায়ীরা তাদের উৎপাদন কার্যক্রম ঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারছে না। রিজার্ভ কমতে কমতে ১৮.২৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে (ডেইলি স্টার বাংলা, ১২ মে ২০২৪)। দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে ঋণনির্ভর হওয়ায় ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘দেশে এখন উন্নয়ন ও সংকটের সমান্তরাল বাস্তবতা চলছে। তথ্য-উপাত্ত আর বক্তব্যে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো মনে হলেও ভিতরটা নরবড়ে’। যার কারণে শিল্প উদ্যোক্তাদের অর্থ সংগ্রহের উৎস শেয়ার বাজারের এমন করুণ দশা। বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে বাংলাদেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা ভয়াবহ আর্থিক সংকটে জীবনযাপন করছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। সিপিডির তথ্যানুযায়ী প্রতিটি মানুষের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ দেড় লাখ টাকা।

এদেশের যুবসমাজকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত রাখতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়। শিক্ষার্থীর উপর চাপ কমানোর কথা বলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যায়। চাকরির ক্ষেত্রে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতার সুযোগ না পায় সেটার আলোকে এমনটি করা হচ্ছে। এভাবে একটি জাতিকে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে তাকে অশিক্ষিত রাখার অশুভ প্রয়াস চলমান আছে; একটি জাতির শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে পারলেই তাকে পদানত রাখা যাবে, নিয়ন্ত্রণাধীন রাখা যাবে— যার কারণে শিক্ষাকে আনন্দদায়ক ও আনন্দঘন করার নামে বিজ্ঞান, গণিত, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইত্যাদি কঠিন ও গবেষণা সমৃদ্ধ কাজ থেকে শিক্ষার্থীদের বিরত রাখার অপচেষ্টা চলমান আছে।

এদেশের একটি বৃহৎ অংশ বিদেশের বিভিন্ন দেশে অর্থ উপার্জন করে ডলার প্রেরণ করে। উক্ত ডলার রেমিটেন্স হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোষাগারে জমা হয়। উক্ত ডলার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবহারের সুযোগ থাকায় মনে করা হয় ঋণভিত্তিক বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হলে কোনো সমস্যা হবে না। দক্ষিণ এশিয়ার এই ক্ষুদ্র দেশটি আর্থিক, সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে সমৃদ্ধে পরিণত হতে যাচ্ছে; ঠিক তখনই এদেশের ভাগ্যাকাশে শকুনের হাতছানি। এদেশের অর্থনীতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসকে ক্ষতবিক্ষত করা হয় যাতে এদেশের মানুষ অন্যের পদানত থাকে।

আমরা মনে করি একমাত্র ইসলামী শাসনব্যবস্থাই বাংলাদেশকে এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে। কেননা ইসলামের শাসনব্যবস্থা ন্যায়পরায়ণতার উপর প্রতিষ্ঠিত তাই এখানে দুর্নীতির জন্য থাকবে জিরো টলারেন্স। পাশাপাশি ইসলামের অর্থব্যবস্থা জনবান্ধব হওয়ায় এখানে কালোবাজারি, মুনাফাখোরি ও মজুদদারির মাধ্যমে বাজার সিন্ডিকেট তৈরি করার কোনো সুযোগ নাই। ইসলাম মানুষের মানবতা ও মর্যাদায় বিশ্বাস করে তাই যুলুম-অত্যচার ও অন্যায়ভাবে ক্ষমতা প্রদর্শনের কোনো সুযোগ থাকবে না। আর যেহেতু এই দেশের মানচিত্র ১৯৪৭ সালে ইসলামের উপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেহেতু এই দেশের স্বাধীনতা ও স্বকীয়তার সাথে ইসলাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঢাকা ও কলকাতার বাঙালিদের মধ্যে, ১৯০৫ এর বঙ্গভঙ্গের মধ্যে এবং ১৯৪৭ এর দেশ ভাগের মধ্যে ইসলাম নামটিই সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দেয়। তাই ইসলামবিহীন বাংলাদেশ মানেই নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বাংলাদেশ। গঙ্গা-তিস্তার পানি বঞ্চিত বাংলাদেশ। সীমান্তের ঝুলন্ত ফেলানির বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক দুর্নীতির বাংলাদেশ। কোটার কারণে সরকারি চাকরিতে মেধার অবমূল্যায়নের বাংলাদেশ। অচল শিক্ষনীতির কারণে বেকার তৈরির বাংলাদেশ।

আমরা কায়মনোবাক্যে দু‘আ করি, হে আল্লাহ! আপনি এদেশকে ব্রাহ্মণ্যবাদী দাসত্ব থেকে মুক্ত করুন। এদেশের মানুষকে ধর্মীয়, সামাজিক ও আর্থিকভাবে স্বাধীন জীবনযাপনের সুযোগকে সহজ করে দিন। এদেশের মানুষের অন্তরে পরিপূর্ণ ইসলাম প্রবেশ করিয়ে দিন। ইসলামের ছায়াতলে এদেশের জনগণকে একত্রিত করুন! (স.)

Magazine