কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

11111

আক্বীদা

প্রশ্ন (১): আল্লাহ তাআলার সত্তা ও গুণ নিয়ে আমাদের বিশ্বাস কেমন হওয়া উচিত? OCD (Obsessive Compulsive Disorder)-এর কারণে এসব বিষয়ে সন্দেহ আসেমতাবস্থায় করণীয় কী?

প্রশ্নকারী : 

প্রশ্নকারী : রেদোয়ান, নোয়াখালী।

উত্তর: আল্লাহ তাআলার সত্তা ও গুণ নিয়ে বিশ্বাসকে বলা হয় ‘তাওহীদে আসমা ওয়া ছিফাত’। তা হলো, কুরআনে আল্লাহ তাআলা নিজেকে যেভাবে বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে আল্লাহকে বর্ণনা করেছেন, সেসব বর্ণনায় বিশ্বাস রাখা; কোনো বিকৃতি (تحريف) বা অস্বীকার (تعطيل) ছাড়া এবং কোনোরূপ নির্ধারণ (تكييف) বা তুলনা (تمثيل) করা ছাড়া। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কোনো কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা’ (আশ-শূরা, ৪২/১১)। আর এমন সন্দেহ হলে তার করণীয় হলো, আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষের মনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে এমন প্রশ্নেরও সৃষ্টি হয় যে, এ সৃষ্টিজগত তো আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তাহলে আল্লাহকে সৃষ্টি করল কে?’ রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যার অন্তরে এমন প্রশ্নের উদয় হয়, সে যেন বলে, আমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৪)। আরেক বর্ণনায় এসেছে, আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু ছাহাবী তাঁর সামনে এসে বললেন, আমাদের অন্তরে এমন কিছু খটকার সৃষ্টি হয় যা আমাদের কেউ মুখে উচ্চারণ করতেও মারাত্মক মনে করে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘সত্যিই কি তোমাদের এমন মনে হয়?’ তারা জবাব দিলেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এটিই প্রকৃত ঈমানের নিদর্শন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৩২)।

প্রশ্ন (২): রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার উম্মাহ ৭৩ দলে বিভক্ত হবে; একটি দল জান্নাতী, বাকিরা জাহান্নামী। প্রশ্ন হলো, জান্নাতী দল কারা? আর অন্যরা কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী, নাকি শাস্তি ভোগ করে জান্নাতে যাবে? লীলসহ জানতে চাই।

প্রশ্নকারী : কাউসার মাহমুদ

 বংশাল, ঢাকা।

উত্তর: জান্নাতী (নাজাতপ্রাপ্ত) দল তারাই যারা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর ছাহাবীদের মানহাজে চলে। নাজাতপ্রাপ্ত দল মতবিরোধ ও মতভেদের সময় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার দিকে ফিরে যায়, আল্লাহ তাআলার এই বাণী অনুযায়ী, ‘তোমরা যদি কোনো বিষয়ে বিরোধে লিপ্ত হও, তবে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও— যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে থাক। এটি উত্তম এবং ফলাফলের দিক থেকে উত্তম’ (আন-নিসা, ৪/৫৯)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘তবে না! তোমার প্রতিপালকের কসম! তারা মুমিন হবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের পারস্পরিক বিবাদে তোমাকে বিচারক হিসেবে গ্রহণ করে; তারপর তুমি যা ফয়সালা করবে, তারা নিজেদের মনে তার কোনো আপত্তি পাবে না এবং সম্পূর্ণরূপে তা মেনে নিবে’ (আন-নিসা, ৪/৬৫)। নাজাতপ্রাপ্ত দল কারো কথাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার ওপরে অগ্রাধিকার দেয় না, আল্লাহর এই বাণী অনুসরণ করে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে নিজেদের কিছু অগ্রাধিকার দিয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শোনেন এবং জানেন’ (আল-হুজুরাত, ৪৯/১)। আর বাকিদের পরিণাম ভিন্ন অর্থাৎ তাদের মধ্যে কেউ চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে, যার বিদআত তাকে ইসলাম থেকে বের করে দিয়েছে, সে জাহান্নামে চিরকাল থাকবে। আর যারা কুফরী করেছে এবং আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করেছে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে’ (আল-বাকারা, ২/৩৯)। আবার কেউ কেউ জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে, তার অপরাধ সমপরিমাণ। তারপর তার ঈমান থাকার কারণে জাহান্নাম থেকে বের হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবূ সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতীগণ যখন জান্নাতে আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তখন আল্লাহ বলবেন, যার অন্তঃকরণে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে তাকে বের করো। অতঃপর তাদেরকে এমন অবস্থায় বের করা হবে যে তারা পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। তাদেরকে জীবন-নদে নামিয়ে দেওয়া হবে। এতে তারা তরতাজা হয়ে উঠবে যেমন নদীর তীরে জমাট আবর্জনায় শস্যদানা গজিয়ে ওঠে’। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেন, ‘তোমরা কি দেখ না, সেগুলো হলুদ রঙের বাঁকা হয়ে উঠতে থাকে?’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬৫৬০)।

প্রশ্ন (৩): আমাদের মসজিদের ইমাম জাল হাদীছ ও সুফীক্বীদা প্রচার করেন এবং কাচের গ্লাস দিয়ে ঝাড়ফুঁক করেন, যেখানে জিনের সহযোগিতার আলামত পাওয়া যায়। তার পেছনে ছালাত আদায় করা জায়েয হবে কি? এ ধরনের ঝাড়ফুঁক কি শরীআতসম্মত?

প্রশ্নকারী : তোফায়েল আহমেদ

নলডাঙ্গা, নাটোর।

উত্তর: যদি ইমামের প্রচারিত জাল হাদীছগুলোর বিষয়বস্তু কুফরী না হয় এবং প্রচারিত সুফী আক্বীদা, যেমন- গায়রুল্লাহকে ক্ষমতা দেওয়া, আল্লাহর সঙ্গে সত্তাগত ঐক্য (ওয়াহদাতুল উজূদ) ইত্যাদি স্পষ্ট শিরক বা কুফরী বিশ্বাস না হয়, তাহলে তার পিছনে ছালাত পড়া বৈধ হবে। আর যদি জাল হাদীছগুলোর বিষয়বস্তু কুফরী হয় এবং সুফী আক্বীদাতে স্পষ্ট শিরক বা কুফরী পাওয়া যায়, তাহলে তার পেছনে ছালাত পড়া বৈধ হবে না। আর কাচের গ্লাস, জিনের নাম, অজানা ভাষা, জ্যোতিষ, বা তাবীয-কবচের মাধ্যমে যদি ঝাড়ফুঁক করা হয়; তাহলে তা শিরক এবং জিনের সাহায্য নিলে তা শিরক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। আর এ ধরনের ঝাড়ফুঁক শরীআতসম্মত নয়। আউফ ইবনু মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা জাহেলী যুগে ঝাড়ফুঁক করতাম। অতঃপর আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী? তিনি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের ঝাড়ফুঁকের ব্যবস্থাগুলো আমার সামনে পেশ করো; তবে যেসব ঝাড়ফুঁক শিরকের পর্যায়ে পড়ে না, তাতে কোনো দোষ নেই’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২২০০; আবূ দাঊদ, হা/৩৮৮৬)। উল্লেখ্য, জাল হাদীছ প্রচার করা নাজায়েয। তবে মানুষকে তা থেকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে বলা যায়।

প্রশ্ন (৪) অনেকে বলেন, তাবীয পরলে দুষ্টু জিন আক্রমণ করতে পারে না আর খোলার পর তীব্র আক্রমণ করা হয়, কখনো মৃত্যুঝুঁকিও দেখা দেয়। এ অবস্থায় রোগী ও তার পরিবারের করণীয় কী?

প্রশ্নকারী : শাহরিয়ার নাফিজ

কুমিল্লা।

উত্তর: তাবীয ব্যবহার করা শিরক। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তাবীয ও তাবীয জাতীয় বস্তু এসব শিরক’ (আবূ দাঊদ, হা/৩৮৮৩; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪১৫১)। অন্য বর্ণনায় আছে, ‘যে তাবীয ঝুলাল, সে শিরক করল’ (মুসনাদ আহমাদ, হা/১৭৪০৪)। তাবীয খুললে আক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো, এটা শয়তানের ধোঁকা। তাবীয থাকাকালে সে কিছুটা শান্ত রাখে, যাতে মানুষ বিশ্বাস করে তাবীয-ই রক্ষা করছে। যখন খুলে ফেলা হয়, তখন সে ভয় দেখায় এবং আক্রমণ করে, যাতে মানুষ আবার শিরকে ফিরে যায়। বাস্তবে তাবীয মানুষকে রক্ষা করে না; বরং শয়তানকে শক্তিশালী করে। এ অবস্থায় রোগী ও পরিবারের করণীয়- ১. আল্লাহর উপর ভরসা করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ যদি তোমাকে কষ্টে ফেলেন, তবে তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই’ (আল-আনআম, ৬/১৭)। ২. আন্তরিকভাবে তওবা করা। তাবীয ব্যবহার করা শিরক, তাই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে আন্তরিক তওবা করো। আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের গুনাহ মাফ করবেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত’ (আত-তাহরীম, ৬৬/৮)। মা-বাবা বা আত্মীয়-স্বজন শিরক করতে বললে তাদের কথা মানা যাবে না (লুকমান, ৩১/১৫)। ৩. তাবীয ধ্বংস করা। ৪. শারঈ রুকইয়া (কুরআন ও ছহীহ দু‘আ দিয়ে চিকিৎসা) প্রতিদিন পড়া, যেমন- সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী (আল-বাকারা, ২/২৫৫), সূরা ইখলাছ, ফালাক, নাস পড়া। রাতে ঘুমানোর আগে সূরা ইখলাছ, ফালাক, নাস পড়ে পুরো শরীর মুছে দেওয়া। ৫. ঘরকে শয়তানমুক্ত রাখা, সূরা বাকারা তেলাওয়াত করা। ৬. আযান দেওয়া। ৭. ছবি, মূর্তি, গান-বাজনা ইত্যাদি ঘরে না রাখা।

প্রশ্ন (৫): আমার এলাকায় মানুষ হানাফী মাযহাবের কট্টর অনুসারী। কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী আমলের কথা বললে তারা বিরক্ত হয় ও বিরোধিতা করে। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে তাদেরকে কুরআন-সুন্নাহর পথে আহ্বান জানানো উচিত? আর তারা তা অস্বীকার করলে এর বিধান কী? আহলেহাদীছ নাম শুনলেই তারা বাঁকা চোখে দেখে।

প্রশ্নকারী : মোস্তফা মনোয়ার

হারাগাছ, রংপুর।

উত্তর: এমতাবস্থায় যথাসাধ্য ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে তাদেরকে বুঝাতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান করো এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক করো। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তাঁর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হেদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভালো করেই জানেন’ (আন-নাহল, ১৬/১২৫)। দাওয়াত দেওয়ার পরও যদি জেনেশুনে তারা কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিরোধিতা করে, তাহলে তারা মূলত আল্লাহ ও রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীকে অমান্যকারীদের অন্তর্ভুক্ত। আর ‘আহলেহাদীছ’ কোনো দল বা ব্যক্তির নাম নয়; বরং পৃথিবীতে যেখানে যারা মানুষের মতামত উপেক্ষা করে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ মেনে চলে তারাই ‘আহলেহাদীছ’।

প্রশ্ন (৬): আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যে, মৃত ব্যক্তিকে তিন দিন পর্যন্ত বিলম্ব করে দাফন করা যায়। এ বক্তব্য কি সঠিক?

প্রশ্নকারী : হানিফ বিন রমিজ উদ্দীন

চট্টগ্রাম।

উত্তর: কোনো জরুরী দুর্ঘটনা ব্যতীত মৃত ব্যক্তিকে দ্রুত দাফন করতে হবে। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "أَسْرِعُوا بِالْجنَازَةِ، فَإِنْ تَكُ صَالِحَةً فَخَيْرٌ تُقَدِّمُونَهَا، وَإِنْ يَكُ سِوَى ذَلِكَ فَشَرٌّ تَضَعُونَهُ عَنْ رِقَابِكُمْ ". ‘তোমরা জানাযার যাবতীয় কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করো। কারণ মৃত ব্যক্তি যদি নেককার হয়, তাহলে তোমরা তাকে কল্যাণের দিকে এগিয়ে দিবে। আর যদি সে এমন না হয়, তাহলে তোমরা মন্দ বস্তুকে নিজেদের কাঁধ থেকে নামিয়ে দিবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৩১৫)।

প্রশ্ন (৭): আল্লাহ তাআলা সব গুনাহ ক্ষমা করেন, কিন্তু বান্দার হক্ব নষ্ট করলে ক্ষমা করেন না- এমন কথা শোনা যায়। অনেকের মৃত্যু হয়ে গেলে, তাদের কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগও থাকে না। এমতাবস্থায় কী করা উচিত?

প্রশ্নকারী : রেদোয়ান

নোয়াখালী।

উত্তর: ‘আল্লাহ তাআলা বান্দার হক্ব নষ্টকারীকে ক্ষমা করেন না’ একথা হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে যুলমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেয়, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন তার কোনো দীনার বা দিরহাম থাকবে না। সে দিন তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার যুলমের পরিমাণ তা তার নিকট হতে নেওয়া হবে আর তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ হতে নিয়ে তা তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৪৪৯)। এমতাবস্থায় যদি আর্থিক বিষয়াদি হয়ে থাকে, তাহলে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিছদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তার ওয়ারিছ না পাওয়া গেলে মৃত ব্যক্তির নামে ছাদাকা করে দিবে এবং আল্লাহর কাছে তওবা করবে।

প্রশ্ন (৮): আমরা জানি যে, বদনজর সত্য। গাড়ি, বাড়ি বা অন্য কোনো জিনিসে বদনজর লাগলে এ থেকে বাঁচার উপায় কী?

প্রশ্নকারী : এস. এম. আসিফ ফয়সাল

মোহাম্মদিয়া হাউজিং লি., ঢাকা।

উত্তর: বদনজর সত্য। বদনজরে মানুষের ক্ষতি হয়, যেমন- অসুস্থতা, সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়া ইত্যাদি। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদনজর সম্পর্কে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই বদনজর সত্য। যদি কদরকে তথা ভাগ্যকে অতিক্রম করার কিছু থাকত, তবে বদনজরই তা অতিক্রম করত’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২১৮৮)। বদনজর থেকে বাঁচার পদ্ধতি সমূহ- ১. আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য পর্দা করা। পর্দা বদনজর থেকে রক্ষা করবে, ইন-শা-আল্লাহ! (আন-নূর, ২৪/৩১)। ২. আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চাওয়া (আল-ফালাক্ব, ১১৩/১)। ৩. কুরআনের নির্দিষ্ট সূরাগুলো সকাল-সন্ধ্যায় নিয়মিত তেলাওয়াত করা। যেমন- সূরা নাস, ফালাক্ব, ইখলাছ, আয়াতুল কুরসী। ৪. সকাল ও সন্ধ্যার আযকারের প্রতি যত্নবান হওয়া। ৫. প্রশংসার সময় ‘মা-শা-আল্লাহ’ বলা। যখন কারো সৌন্দর্য, সফলতা, সন্তান ইত্যাদি দেখবেন বা প্রশংসা করবেন, তখন ‘মা-শা-আল্লাহ’ বলা ইত্যাদি।

পবিত্রতা

প্রশ্ন (৯): রক্ত কি নাপাক? হাত কেটে রক্ত বের হলে অল্প বা বেশি হওয়ার মধ্যে কি পার্থক্য আছে? আর ছালাতের সময় রক্ত বের হলে কি ওযূ ভেঙে যায়? লীলসহ জানতে চাই।

প্রশ্নকারী : নুসরাত জাহান ফাহমিদা।

উত্তর: রক্ত নাপাক। হাত বা শরীরের কোনো অঙ্গ কেটে রক্ত বের হলে (পরিমাণে কম হোক বা বেশি হোক তাতে কোনো পার্থক্য নেই) তা নাপাক (আল-আনআম, ৬/১৪৫; ছহীহ বুখারী, হা/৩০৬; মুসলিম, হা/৬৪০)। তবে ছালাতরত অবস্থায় পেশাব-পায়খানার রাস্তা ছাড়া শরীরের কোনো অঙ্গ থেকে রক্ত বের হলে ওযূ ভেঙে যাবে না। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘যাতুর রিকাআ’ গাযওয়ায় ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি উবাদ ইবনু বিশর রাযিয়াল্লাহু আনহু তীরবিদ্ধ হলেন, ফলে তার প্রচুর রক্ত বের হলো। কিন্তু তিনি সিজদা করলেন এবং নিজের ছালাত চালিয়ে গেলেন (আবূ দাঊদ, হা/১৯৮)। ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ ‘মুসলিমরা তাদের আঘাত ও ক্ষত অবস্থায় ছালাত আদায় করেছেন’ মর্মে একটি অধ্যায় উল্লেখ করেছেন।

ছালাত

প্রশ্ন (১০): আমি ৭৮ কিমি দূরে যাব এবং সেখানে ১৫ দিনের বেশি থাকব। এ অবস্থায় ছালাত কি কছর করতে হবে?

প্রশ্নকারী : অন্তর

নোয়াখালী।

উত্তর: সফরে বের হয়ে যতদিন তার কাজ শেষ না হচ্ছে বা স্থায়ী থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত না নিচ্ছে, ততদিন সে কছর করতে পারে। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা সফরে অবস্থানকালে উনিশ দিন পর্যন্ত ছালাত কছর করেন। সেহেতু আমরাও উনিশ দিনের সফরে থাকলে কছর করি এবং এর চেয়ে অধিক হলে পূর্ণ ছালাত আদায় করি (ছহীহ বুখারী, হা/১০৮০)। জাবির বিন আব্দুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুকে বিশ দিন অবস্থানকালীন সময়ে কছর করতেন (আবূ দাঊদ, হা/১২৩৫; আহমাদ, হা/১৪১৩৯)।

যাকাত

প্রশ্ন (১১): আমারকাছেএকভরিসোনাআছে, যানিসাবপরিমাণনয়; কিন্তুএরদামেসাড়েবায়ান্নভরিরূপাকেনাযায়অবস্থায়কিতাতেযাকাতদিতেহবে?

প্রশ্নকারী : মো. আতিকুর রহমান

রাজশাহী।

উত্তর: স্বর্ণের যাকাতের নিসাব হলো সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ। সুতরাং এক ভরি স্বর্ণে যাকাত ফরয হবে না; যদিও এর মূল্য দ্বারা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা ক্রয় করা যায়। কারণ স্বর্ণ ও রূপার নিসাব স্বতন্ত্র ও ভিন্ন ভিন্ন (আবূ দাঊদ, হা/১৫৭৩)।

দান-ছাদাকা

প্রশ্ন (১২): দান বা ছাদাকাকরার সময় যদি নিয়্যত করি, হে আল্লাহ, এই দান আমার পক্ষ থেকে এবং জীবিত-মৃত সব মুসলিমেরও পক্ষ থেকে; তাহলে কি এভাবে নিয়্যত করা জায়েয? আর এর ছওয়াব কি সবার কাছে পৌঁছাবে?

প্রশ্নকারী : কাওছার আহমেদ

টাউনহল, ময়মনসিংহ।

উত্তর: হ্যাঁ, এভাবে নিয়্যত করা জায়েয এবং এই ছাদাকার ছওয়াব উল্লিখিত সবাই পাবে, ইন-শা-আল্লাহ! আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

 أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّ أُمِّي افْتُلِتَتْ نَفْسُهَا ، وَأَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ، فَهَلْ لَهَا أَجْرٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا ؟ قَالَ : " نَعَمْ ".

নিশ্চয় একজন ব্যক্তি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, আমার মা আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেছেন। আমার ধারণা, যদি তিনি কথা বলার সুযোগ পেতেন, তাহলে ছাদাকা করতেন। এখন যদি আমি তার পক্ষ থেকে ছাদাকা করি, তাহলে কি তিনি এর ছওয়াব লাভ করবেন? রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, ‘হ্যাঁ’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৩৮৮)। উল্লেখ্য, উক্ত বিধানের ক্ষেত্রে জীবিত এবং মৃত ব্যক্তির মাঝে পার্থক্য নেই।

ছিয়াম

প্রশ্ন (১৩): আমি শুধু বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছিয়াম পালন করি। সমস্যার কারণে সোমবারের ছিয়ামটা রাখতে পারি না। তাহলে এটা কী সাপ্তাহিক ছিয়াম হিসেবে গণ্য হবে?

প্রশ্নকারী : মো. আতিকুর রহমান

রাজশাহী।

উত্তর: যারা ছিয়ামরত অবস্থায় তাদের আমলকে আল্লাহর সামনে পেশ করতে চায় তাদেরকে সোমবার ও বৃহস্পতিবার দুদিন ছিয়াম রাখতে হবে। এরূপ দুদিন না রাখলে এমন আমল থেকে ফিরে আসতে হবে। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবার ছিয়াম রাখতেন (ইবনু মাজাহ, হা/১৭৪০)। আরেক বর্ণনায় আছে, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবার ছিয়াম রাখতেন। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর নিকট বান্দার আমলসমূহ পেশ করা হয়’ (আবূ দাঊদ, হা/২৪৩৬)।

জায়েয-নাজায়েয

প্রশ্ন (১৪): পণ্য বিক্রির জন্য ক্রেতার কাছে আকর্ষণীয় কিছু মিথ্যা কথা বলা যাবে কি? যেমন- এটা আপনাকে খুব মানাবে। এই পোশাকে আপনাকে অসাধারণ লাগবে

প্রশ্নকারী : মো. জসিম

শাজাহানপুর, বগুড়া।

উত্তর: পণ্য বিক্রি করার জন্য ক্রেতার কাছে আকর্ষণীয় মিথ্যা কথা বলা হারাম এবং কাবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত‌, যা ব্যবসার বরকত নষ্ট করে দেয়। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আর যে ব্যক্তি আমাদের ধোঁকা দিবে, সেও আমাদের দলভুক্ত নয়’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১০১)। হাকীম ইবনু হিযাম রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হয়, ততক্ষণ তাদের ইখতিয়ার থাকবে (ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করা বা বাতিল করা)। যদি তারা সত্য বলে এবং অবস্থা ব্যক্ত করে, তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে আর যদি মিথ্যা বলে এবং দোষ গোপন করে, তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মুছে ফেলা হয় (ছহীহ বুখারী, হা/২০৭৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৩২)।

প্রশ্ন (১৫): জুমর খুবার সময় ইমাম যা বলছেন তা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে মোবাইল বা বই-খাতা দেখা কি জায়েয?

প্রশ্নকারী : মো. শহিদুল ইসলাম

 চারঘাট, রাজশাহী।

উত্তর: জুমআর খুৎবা মনোযোগ দিয়ে শোনা ফরয। খুৎবার সময় অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত হওয়া নিষিদ্ধ। এমনকি কাউকে ‘চুপ করো’ বলাও নিষিদ্ধ। তাই খুৎবার সময় কুরআন-হাদীছ মিলানোর জন্য মোবাইল বা বই দেখা জায়েয নয়; বরং এটা খুৎবা শোনার ফরয হুকুমের বিরোধী। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জুমআর দিন খত্বীব যখন খুৎবা দিচ্ছেন, তখন তুমি যদি তোমার সঙ্গীকে বলো চুপ করো, তবে তুমিও অনর্থক কাজে লিপ্ত হলে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৯৩৪; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৫১)। অত্র হাদীছে শুধু ‘চুপ করো’ বলা যা নেক কাজ হলেও এতটুকুই লঘু (অর্থহীন) কাজ হিসেবে গণ্য হয়েছে। তাহলে মোবাইল দেখা, বই খোলা বা নোট নেওয়া তো আরো বেশি ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে খুৎবার সময় কঙ্কর নাড়াচাড়া করল, সে অনর্থক কাজে লিপ্ত হলো’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৮৫৭)। এখানে ছোট্ট একটি অঙ্গভঙ্গিও অনর্থক কাজ হিসেবে ধরা হয়েছে। মোবাইল চালানো বা বই দেখা তো আরো বড় ব্যস্ততা। সুতরাং এ কর্মগুলো তো আরো নিষিদ্ধ।

প্রশ্ন (১৬): হালাল পশুর কাঁচা মাংস বা কাঁচা মাছ খাওয়া কি জায়েয?

প্রশ্নকারী : আবির আহমেদ লিখন

 জামালপুর।

উত্তর: কাঁচা মাছ খাওয়া মৌলিকভাবে জায়েয। অনুরূপভাবে হালাল প্রাণীর কাঁচা গোশত খাওয়া মৌলিকভাবে জায়েয এই শর্তে যে, শারঈ পদ্ধতিতে যবেহকৃত হতে হবে এবং যবেহ করার সময় যে রক্তগুলো প্রবাহিত হয়, সেগুলো যেন উক্ত গোশতের সাথে মিশ্রিত না হয়। যদি মিশ্রিত হয়, তাহলে তা পানি দিয়ে ধৌত করে তারপর খাওয়া যাবে। কারণ প্রবাহিত রক্ত হারাম (আল-আনআম, ৬/১৪৫)। তবে যদি রেজিস্টার্ড ডাক্তারগণ এ ধরনের কাঁচা গোশত খাওয়া ক্ষতিকর বলেন, তাহলে তা খাওয়া জায়েয হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ‘তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের (ক্ষতির) দিকে ঠেলে দিয়ো না’ (আল-বাকারা, ২/১৯৫)। উল্লেখ্য, হালাল হলেই খেতে হবে তা নয়; বরং সতর্কতার সাথে খেতে হবে। উম্মুল মুনযির রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বাসায় আসলেন। আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু-ও তার সাথে ছিলেন। আমাদের খেজুরের ছড়া ঝুলিয়ে রাখা ছিল। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা থেকে খেতে আরম্ভ করলেন। তার সাথে আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু-ও খেতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে বললেন, ‘হে আলী! থামো থামো! তুমি তো অসুস্থতাজনিত দুর্বল’। বর্ণনাকারী বলেন, আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু বসে গেলেন এবং রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেতে থাকলেন। আমি (উম্মুল মুনযির) তাদের জন্য বীট এবং বার্লি বানিয়ে আনলাম। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে আলী! তুমি এটা খেতে পার, তোমার জন্য এটা বেশি উপযোগী’ (তিরমিযী, হা/২০৩৭)।

প্রশ্ন (১৭): অফিসে কাউকে ডেকে পাঠানোর সময় বলা হয়, ‘বস আপনাকে সালাম দিয়েছেন। শুধু ডাকার উদ্দেশ্যে এভাবে বলা কি জায়েয?

উত্তর: না, জায়েয নয়। বরং এমতাবস্থায় বস আপনাকে ডেকেছেন বা স্মরণ করেছেন এসব ভাষা ব্যবহার করতে হবে। এমতাবস্থায় বস আপনাকে সালাম দিয়েছেন বললে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হবে; যা জায়েয নয়। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিম মুসলিমের ভাই, সে তার খিয়ানত করবে না, তার বিষয়ে মিথ্যা বলবে না, তাকে অপমানিত হতে দিবে না’ (তিরমিযী, হা/১৯২৭)।

প্রশ্ন (১৮): মসজিদ, মাদরাসা বা বিভিন্ন জালসার টাকা তোলার জন্য রাস্তায় মাইক দিয়ে গাড়ি আটকিয়ে তা সংগ্রহ করা কি জায়েয?

উত্তর: ইসলামে মসজিদ, মাদরাসা, গরীবদের সাহায্যের জন্য দান চাওয়া বৈধ। কিন্তু তা হতে হবে সম্মানজনকভাবে, কারো চলাচলে বা স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন না ঘটিয়ে, বিনয়ের সাথে এবং কারো ওপর চাপ সৃষ্টি না করে। এইভাবে মসজিদ, মাদ্রাসা বা বিভিন্ন জালসার জন্য রাস্তায় গাড়ি আটকিয়ে টাকা তোলা নাজায়েয। কেননা এভাবে টাকা তুললে মানুষের চলাফেরায় বিঘ্ন ঘটানো হয়, মানুষকে কষ্ট দেওয়া হয়, অনেক সময় টাকা না থাকলে মানুষ লজ্জিত ও হয়রানির শিকার হয়, ইসলামকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয় ইত্যাদি। উবাদা ইবনু ছামিত রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন যে, ‘ক্ষতি করাও যাবে না, ক্ষতি সহ্যও যাবে না’ (ইবনু মাজাহ, হা/২৩৪০)। হুযায়ফা ইবনু আসীদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলিমদের চলার পথে কষ্ট দেয়, তার উপর তাদের অভিশাপ অবধারিত হয়ে যায়’ (আল-মু‘জামুল কাবীর, ৩/১৭৯, ৩০৫০)।

প্রশ্ন (১৯): আমি টেইলারের কাজ করি। অনেক সময় ব্লাউজ বা থ্রি-পিস এমনভাবে বানাতে হয় যা শরীআতের দৃষ্টিতে পর্দার সাথে মানানসই নয়। আমি মানুষকে বুঝালেও তারা শোনে না। এভাবে পোশাক বানালে কি আমার গুনাহ হবে?

উত্তর: স্বাভাবিকভাবে পোশাক বানানো হালাল কাজ। অনেক সময় কিছু পোশাক থাকে, যেগুলো মানুষ কীভাবে ব্যবহার করবে তা অন্যের পক্ষে নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব নয়। যেমন ব্লাউজ সে বাড়িতে তার স্বামীর সামনেও পরিধান করতে পারে। বাহিরে বের হলে বোরখা পরিধান করেও বের হতে পারে। সুতরাং শুধু সন্দেহের বশবর্তী হয়ে হালাল কাজকে হারাম মনে করার দরকার নাই।

প্রশ্ন (২০): ফেসবুক, ইউটিউব চালাতে গিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু মেয়েদের বিজ্ঞাপন আসে যা দেখতেই হয়। এক্ষেত্রে করণীয় কি?

উত্তর: যদি ইচ্ছাকৃতভাবে না দেখেন, হঠাৎ চোখ পড়ে যায় এবং তৎক্ষণাৎ চোখ ফিরিয়ে নেন, তাহলে এতে গুনাহ নেই; তবে সাবধানতার ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী। অনিচ্ছাকৃত অশ্লীল বা মেয়েদের বিজ্ঞাপন দেখার সময় করণীয়- ১. চোখ সরিয়ে নিন। ২. বিজ্ঞাপন হাইড বা রিপোর্ট করুন। ৩. Restricted Mode চালু করুন (ইউটিউবে)। ৪. ফেসবুকের Ad Preferences ব্যবহার করুন। ৫. নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং ইবাদতে মন দিন। ৬. বিশেষ সফটওয়্যার বা অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করুন। ৫. নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং ইবাদতে মন দিন। ৬. বিশেষ সফটওয়্যার বা অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করুন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে’ (আন-নূর, ২৪/৩০)। ইবনু বুরায়দা রাহিমাহুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে বলেছিলেন, ‘হে আলী! এক দৃষ্টির পড়ার পর আরেক দৃষ্টি অনুসরণ করো না। প্রথম দৃষ্টি তোমার, কিন্তু দ্বিতীয়টি তোমার নয়’ (আবূ দাঊদ, হা/২১৪৯)।

প্রশ্ন (২১): কোনো পুরুষ শিক্ষকের কাছে কি মহিলারা ক্লাস করতে বা শিক্ষা অর্জন করতে পারবে?

ত্তর: শরীআতের সীমা ও সতর্কতা মেনে পুরুষ শিক্ষকের কাছে মহিলারা শিক্ষা অর্জন করতে পারবে, যদি ফেতনার আশঙ্কা না থাকে। যেমন- ১. শিক্ষক যেন সৎ ও ধার্মিক বলে পরিচিত হন। ২. নারীরা যেন কণ্ঠে কোমলতা বা প্রলুব্ধকর ভঙ্গি না করে কথা বলেন। ৩. শিক্ষকের সঙ্গে কথা শুধুমাত্র অ্যাকাডেমিক প্রয়োজনীয় পরিমাণেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ৪. শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষাকালীন সময়ে বা পরে নারীদের একান্তে কোনো কথোপকথন করা যাবে না ইত্যাদি। আবূ সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নারীরা একদা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, পুরুষেরা আপনার নিকট আমাদের চেয়ে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। তাই আপনি নিজে আমাদের জন্য একটি দিন নির্ধারিত করে দিন। তিনি তাদের বিশেষ একটি দিনের অঙ্গীকার করলেন, সে দিন তিনি তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন, তাদের নছীহত করলেন এবং নির্দেশ দিলেন (ছহীহ বুখারী, হা/১০১; ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৩৪)। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো পুরুষ যেন কোনো (বেগানা) নারীর সাথে মাহরাম ব্যতীত একাকী না থাকে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৪৯৩৫)।

্রশ্ন (২২):বাবা-মা চান আমি চাকরি করি, কিন্তু আমার ইচ্ছা ব্যবসা বা কৃষি কাজে। বাবা-মার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এগুলো করা কি জায়েয হবে?

প্রশ্নকারী : সিয়াম

পশ্চিম দেওভোগ, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ।

উত্তর: সন্তানের উপর বাবা-মায়ের অনেক হক্ব রয়েছে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে ও রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীছে বহু স্থানে তাদের প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এর মানে এই নয় যে, সন্তান বাবা-মায়ের পছন্দমতো চাকরি বা পেশা বেছে নিতে বাধ্য। বরং সন্তানের উচিত, মা-বাবার প্রতি সম্মান বজায় রেখে, ভদ্রভাবে নিজের ইচ্ছা ও আগ্রহের বিষয়টি তাদের সামনে তুলে ধরে তাদেরকে সন্তুষ্ট করে এমন পথ বেছে নেওয়া, যেখানে সে আগ্রহী, তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তা শরীআতসম্মত এবং বাস্তবভিত্তিক। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পিতার সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ তাআলার সস্তুষ্টি এবং পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি রয়েছে’ (তিরমিযী, হা/১৮৯৯)।

প্রশ্ন (২৩): বিধর্মীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দোকান দেওয়া বা ভাড়া দেওয়া কি বৈধ?

প্রশ্নকারী : মো. সাজেদুর রহমান সাজু

 সদর, দিনাজপুর।

উত্তর: না, বিধর্মীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান (পূজা, উৎসব, বা মূর্তিপূজার মেলা) উপলক্ষে দোকান দেওয়া বা ভাড়া দেওয়া জায়েয নয়। কারণ এটি কুফর ও শিরককে সহযোগিতা করা হবে। আর অন্যায় কাজে সহযোগিতা করা হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে একে অপরকে সাহায্য করো না (আল-মায়েদা, ৫/২)। সুতরাং অন্য কোনো ধর্ম বা শিরকী কাজে অংশগ্রহণ করা বা তাতে সাহায্য করা মুসলিমের জন্য হারাম। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (জিহাদের উদ্দেশ্যে) একটি ঘোড়া আটকিয়ে রাখে (লালনপালন করে), আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং তাঁর প্রতিশ্রুতির প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে; তবে সেই ঘোড়ার খাওয়া, পান করা, বিষ্ঠা ও প্রস্রাব— সবকিছুই কিয়ামতের দিনে তার নেকীর পাল্লায় (ছওয়াব হিসেবে) ওযন করা হবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৮৫৩)। এ হাদীছ থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহর পথে সহযোগিতার জন্য কোনো কাজ করলে যেমন ছওয়াব হয় তেমনি শিরক, পূজা বা হারাম কাজে সহযোগিতা করলে গুনাহ হয়।

প্রশ্ন (২৪): এককালীন পেমেন্টে এক বছরের জন্য স্বাস্থ্যবীমা নেওয়া হয়, যার টাকা ফেরত দেওয়া হয় না— এটা কি শরীআতসম্মত?

প্রশ্নকারী : হুমাইরা।

উত্তর: না, স্বাস্থ্যবীমাসহ বর্তমানে প্রচলিত এরকম আরো যত বীমা আছে তার কোনোটিই শরীআতে বৈধ নয়। কেননা- ১. এর মাঝে সূদ রয়েছে অর্থাৎ টাকা জমিয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে অধিক টাকা দেওয়া হয়, যা ইসলামে হারাম (আল-বাকারা, ২/২৭৫)। ২. এসব বীমায় এক অনিশ্চিত বিষয়ের উপর চুক্তি করা হয়। কারণ বিপদ-আপদ ও দুর্ঘটনা ঘটবে কি-না সে ব্যাপারে কারো জানা নেই। এরকম অনিশ্চিত বিষয়ের উপর চুক্তি করা স্পষ্ট ধোঁকাবাজি, যা ইসলামে হারাম (ছহীহ মুসলিম, হা/১০১)। ৩. বীমা জুয়ার সাথে সম্পৃক্ত অর্থাৎ এতে হয় ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লাভবান হয় অথবা জমাকারী লাভবান হয় আর জুয়া ইসলামে নিষিদ্ধ (আল-মায়েদা, ৫/৯০)। সুতরাং এমন বীমা থেকে প্রত্যেক মুসলিমের বেঁচে থাকতে হবে।

প্রশ্ন (২৫): রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের পাপাচার, পাত্রপক্ষের কাছে মেয়ের পরিবারের দোষ, বন্ধুকে কারো অযোগ্যতার কথা জানানো বা অফিসের সহকর্মীর গাফিলতি বসকে জানানো— এসব ক্ষেত্রে সত্য বললে তা কি গীবত হবে, নাকি শরীত এতে অনুমতি দেয়?

প্রশ্নকারী : রকিবুল হাসান

 হাওয়ালভাংগী, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা।

উত্তর: গীবতের ব্যাপারে হাদীছে এসেছে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা কি জান, গীবত কী?’ তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, ‘(গীবত হলো) তোমার ভাইয়ের সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে’। প্রশ্ন করা হলো, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাই এর মধ্যে বাস্তবিকই থেকে থাকে, তবে আপনি কী বলেন? তিনি বললেন, ‘তুমি তার সম্পর্কে যা বলছ, তা যদি তার মধ্যে প্রকৃতই থেকে থাকে; তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তো তুমি তার প্রতি অপবাদ আরোপ করলে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৮৯)। কিন্তু ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ ছহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যায় (শরহে মুসলিম ১৬/১৪২) ৬টি ক্ষেত্র উল্লেখ করেছেন, যা গীবতের অন্তর্ভুক্ত নয়- ১. যুলমের অভিযোগ জানানো। যেমন- কেউ কারো যুলমের শিকার হয়ে শাসক বা দায়িত্বশীলের কাছে অভিযোগ করে, অমুক আমার উপর যুলম করেছে- এটা গীবত নয়; বরং ন্যায়বিচারের জন্য বলা অনুমোদিত। মহান বলেন, ‘যিনি অত্যাচারিত, তার পক্ষে অন্যায়ের অভিযোগ প্রকাশ করা অনুমোদিত’ (আন-নিসা, ৪/১৪৮)। ২. অন্যকে গুনাহ বা ক্ষতি থেকে সতর্ক করা। যেমন- কোনো মেয়ের পাত্র সম্পর্কে পরিবারকে জানানো, সে ছালাত পড়ে না, মাদকাসক্ত, প্রতারক ইত্যাদি। বন্ধুকে বলা, অমুকের সঙ্গে ব্যবসা করো না, সে বিশ্বাসযোগ্য নয়। অফিসে বসকে জানানো, এই কর্মচারী দায়িত্বে গাফিল। এগুলো গীবত নয়, বরং সতর্ক করা দায়িত্ব। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দ্বীন হলো নসীহা’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৫৫)। ৩. রাষ্ট্র ও সমাজের মঙ্গলার্থে সতর্ক করা। যেমন- কোনো নেতা বা দায়িত্বশীল ব্যক্তি প্রকাশ্যে ফাসাদ করছে, জনগণকে ভুল পথে নিচ্ছে বা দ্বীনবিরোধী কাজ করছে। এক্ষেত্রে সত্য প্রকাশ করে সাধারণ মুমিনদের সতর্ক করার জন্য বৈধ। তবে তা আদব ও প্রমাণসহ হতে হবে, গীবত বা কটাক্ষের উদ্দেশ্যে নয়। ৪. কোনো মুফতী বা আলেমকে বাস্তব ঘটনা জানানো। যেমন- কেউ বলে, আমার স্বামী এমন-এমন করে, এ অবস্থায় আমার করণীয় কী? এ ধরনের প্রশ্নে অন্যের ত্রুটি বর্ণনা করলে তা গীবত নয়, বরং ফতওয়া চাওয়ার বৈধ উপায়। উম্মু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলেছিলেন, আবূ সুফিয়ান কৃপণ; তিনি আমাকে পর্যাপ্ত খরচ দেন না…। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোনো নিষেধ করেননি (ছহীহ বুখারী, হা/৭১৮০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৪)। ৫. প্রকাশ্য পাপী বা বিদআতকারীকে প্রকাশ করা। যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে গুনাহ করে বা মানুষকে বিভ্রান্ত করে, তার মন্দ কাজ সম্পর্কে সতর্ক করা গীবত নয়। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমার উম্মতের সবাইকে ক্ষমা করা হবে, শুধু তারা ছাড়া যারা প্রকাশ্যে গুনাহ করে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬০৬৯)। ৬. পরিচয়ের জন্য বলা। যেমন- কেউ অন্ধ, খোঁড়া, বধির ইত্যাদি নামে পরিচিত এবং যখন তাকে অন্যভাবে চেনানো সম্ভব নয়।

প্রশ্ন (২৬):খেলা দেখা কি হারাম? যেমন- ক্রিকেট বা ফুটবলবিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় খেলাধুলা সম্পর্কিত প্রশ্ন আসে। তাই খেলা না দেখে শুধু খবর জানা বা পড়া কি ইসলামে জায়ে হবে? এতে কি কোনো পাপ আছে?

প্রশ্নকারী : সাদেক হোসেন

হোসেনপুর, কিশোরগঞ্জ, ঢাকা।

উত্তর: ক্রিকেট ও ফুটবলসহ বর্তমানে প্রচলিত প্রায় সব খেলাই জুয়ার অন্তর্ভুক্ত, যা হারাম। এছাড়াও এতে সময় ও অর্থের অপচয় হয় এবং এতে অশ্লীলতা, বাজে গান, অশালীন পোশাক, গালাগালি থাকে। সুতরাং তা পরিত্যাগ করা আবশ্যক (আল-মায়েদা, ৫/৯০)। এজন্য ভর্তি পরীক্ষা থেকে ‍শুরু করে দেশের যেকোনো পরীক্ষায় পরীক্ষা বোর্ড কমিটির এ সংক্রান্ত প্রশ্ন না দেওয়াই উচিত। তারপরও বর্তমানে যেহেতু বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলোতে এ সংক্রান্ত প্রশ্ন আসে, সুতরাং শুধু শিক্ষাগত প্রয়োজনে খবর জানা বা পড়া যেতে পারে।

হালাল-হারাম

প্রশ্ন (২৭): আমি অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিতে টিকিট বুকিংয়ের কাজ করি। আগে ন্যূনতম টাকা রিচার্জ করতে হয়, পরে বুকিং অনুযায়ী কমিশন ও বোনাস মেলে। এ আয় কি হালাল?

প্রশ্নকারী : মেহেদী হাসান শাকিল

ফুলতলা-চৌড়হাস, কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়া।

উত্তর: ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করার জন্য শুরুতেই কোনো ট্রাভেল ফ্র‍্যাঞ্চাইজির মেম্বারশিপ বা সদস্যপদ ক্রয় বাবদ যে অর্থ প্রদানের শর্তারোপ করা হয়, তা বৈধ নয় এবং এই অর্থ প্রদান ঘুষ প্রদানের নামান্তর। আব্দুল্লাহ বিন আমর রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতার প্রতি অভিসম্পাত করেছেন (আবূ দাঊদ, হা/৩৫৮০)। তবে টিকেট বুকিং এর বৈধ কাজ। এক্ষেত্রে শ্রম দেওয়া এবং এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক, কমিশন ও বোনাস গ্রহণ করা বৈধ (ছহীহ বুখারী, ৩/৯৩; আল-মুগনী, ৫/৩৪৫)।

প্রশ্ন (২৮): ধান লাগানোর আগেই কৃষকের কাছ থেকে অগ্রিম কম দামে ধান কেনা হয় এবং ধান ঠার পর ধান অথবা সে সময়ের বাজারমূল্য অনুযায়ী ধানের দাম নেওয়া হয় (যা অগ্রিম মূল্যের চেয়ে বেশি)। এ ধরনের লেনদেন কি হালাল, নাকি সূদী কারবার?

প্রশ্নকারী : সিহাব আলী

সদর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

উত্তর: অগ্রিম মূল্যে কোনো পণ্য আগেভাগে কেনার একটি পদ্ধতি হচ্ছে, بيع السَلَمবাইয়ে সালাম অর্থাৎ অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করে ভবিষ্যতে পণ্য ক্রয় করা। ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আসেন, তখন মদীনাবাসী ফলে দুই ও তিন বছরের মেয়াদে বাইয়ে সালাম করত। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘কোনো ব্যক্তি বাইয়ে সালাম করলে, সে যেন নির্দিষ্ট মাপে এবং নির্দিষ্ট ওযনে নির্দিষ্ট মেয়াদে বাইয়ে সালাম করে’ (ছহীহ বুখারী, হা/২২৪০)। তবে প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতিতে লেনদেন সূদী হবে। কেননা ধান ওঠার পরে কখনো ধান নেন, আবার কখনো ধানের মূল্যও নেন, যা একই জিনিস এর মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। সুতরাং তা সূদী কারবার। আবূ সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর ও লবণের বিনিময়ে লবণ সমান সমান ও নগদ নগদ হতে হবে। এরপর কেউ যদি বাড়তি কিছু প্রদান করে বা অতিরিক্ত গ্রহণ করে, তবে তা সূদ হয়ে যাবে। গ্রহণকারী ও প্রদানকারী এতে একই রকম হবে (ছহীহ মুসলিম, হা/৩৯৫৬)।

প্রশ্ন (২৯): কেউ যদি আমাকে হাদিয়া দেয় বা খাবারের দাওয়াত দেয় এবং আমি জানি, তার উপার্জন হারাম; তাহলে আমার করণীয় কী? আর যদি না জানি তার উপার্জন হালাল নাকি হারাম, তখন কী করব? কোন কারণে উপার্জন হারাম হয়? আর যদি পরিবারের উপার্জন হারাম হয়, যাদের উপর আমি নির্ভরশীল; তাহলে আমার করণীয় কী?

প্রশ্নকারী : ইসরাত ইশা

 ঝালকাঠি, নবগ্রাম রোড, সুগন্ধী।

উত্তর: আপনি নিশ্চিতরূপে যদি জানতে পারেন যে, হাদিয়া প্রদানকারীর উপার্জন সম্পূর্ণ হারাম, তাহলে তার থেকে হাদিয়া বা খাবার গ্রহণ করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানুষ! তোমরা খাও যমিনে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে তা থেকে’ (আল-বাকারা, ২/১৬৮)। আর যদি জানতে না পারেন যে, তার উপার্জন হারাম নাকি হালাল; তাহলে তার থেকে হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন তার মুসলিম ভাইয়ের কাছে প্রবেশ করে আর সে তাকে কিছু খাবার খাওয়ায়, তখন সে যেন খায় আর তা নিয়ে জিজ্ঞেস না করে। আর যদি সে তাকে কিছু পানীয় দেয়, তবে সে যেন পান করে, কিন্তু (পানীয় সম্পর্কে) প্রশ্ন না করে’ (ছহীহুল জামে‘, হা/৫৮০)। কোনো ব্যক্তির উপার্জন তখনই হারাম হয়, যখন তা ইসলামী শরীআতের নির্ধারিত সীমা ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে। যেসব কারণে উপার্জন হারাম হয়, তা হলো সূদ (রিবা) থেকে আয়, জুয়ার আয়, চুরি, ডাকাতি, ঘুষ বা প্রতারণা করে আয়, হারাম পণ্য বা সেবার মাধ্যমে উপার্জন ইত্যাদি। আপনি যদি হারাম উপার্জনকারী পরিবারের ওপর নির্ভরশীল হন এবং আপনি নিজে উপার্জন করতে সক্ষম না হন (যেমন- আপনি শিশু, ছাত্র, বৃদ্ধ, অসুস্থ ইত্যাদি), তাহলে তাদের উপার্জন ভক্ষণ করলে আপনি পাপী হবেন না। আর যদি আপনি উপার্জনে সক্ষম হন, তাহলে নিজেকে স্বনির্ভর করার চেষ্টা করুন এবং হালাল রিযিক খোঁজার চেষ্টা করুন, পরিবারকে হালাল উপার্জনের দিকনির্দেশনা দিন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যে কেউ আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য (উত্তরণের) পথ করে দেবেন’ (আত-ত্বালাক, ৬৫/২)।

প্রশ্ন (৩০): কাল্পনিক নাম ও ছবি ব্যবহার করে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, লিঙ্ক-ইন ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভেরিফায়েড একাউন্ট তৈরি করে বিক্রি করলে এবং সেগুলো অশ্লীল বা হারাম কাজে ব্যবহার না হলে এই আয় কি হালাল হবে?

প্রশ্নকারী : আব্দুল্লাহ আল মামুন

 রংপুর সদর।

উত্তর: সামাজিক মাধ্যমের নিয়ম (Terms of Service) হিসেবে প্রতিটি বড় প্ল্যাটফর্ম (Facebook, Instagram, LinkedIn) স্পষ্টভাবে বলে দেয় যে, আপনাকে আপনার নিজস্ব আসল নাম ও পরিচয় ব্যবহার করতে হবে। ভুয়া, বিভ্রান্তিকর বা অন্যের পরিচয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা নিষিদ্ধ অর্থাৎ আপনি যদি ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টে ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করেন, তাহলে আপনি তাদের নিয়মও ভঙ্গ করছেন। এটি চুক্তি লঙ্ঘন (نقض العهد), যা শরীআতে কাবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। মহান বলেন, ‘তোমরা তোমাদের অঙ্গীকার পূরণ করো; অঙ্গীকার সম্পর্কে অবশ্যই প্রশ্ন করা হবে’ (আল-ইসরা, ১৭/৩৪)। এভাবে চুক্তি ভঙ্গ করে কাল্পনিক নাম ও ছবি ব্যবহার করে উপার্জন করা হারাম। কেননা এতে মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হয়। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে প্রতারণা করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১০১)।

প্রশ্ন (৩১): মোবাইল বা কম্পিউটারে ফ্রি-ফায়ার, পাবজি ইত্যাদি গেম খেলা কি হালাল? এসব গেমে টুর্নামেন্ট আয়োজন করে প্রাইজ মানি দেওয়া হয়এভাবে খেলে উপার্জন করা কি বৈধ? আর এমন টুর্নামেন্ট আয়োজক কোম্পানিতে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ করে যেখানে টুর্নামেন্টের লোগো, ব্যানার ও পোস্টার তৈরি করতে হয়এই উপার্জন কি হালাল হবে?

প্রশ্নকারী : ইলিয়াস শেখ

মিরপুর, ঢাকা।

উত্তর: ফ্রি-ফায়ার, পাবজিসহ যেকোনো মোবাইল ফোনের গেম খেলা জায়েয নয়। কেননা এতে সময় নষ্ট হয়, বাজি ধরা হয়। আর বাজি ধরে খেলা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! জেনে রাখো, মদ, জুয়া, লটারি ও ভাগ্য নির্ণয়ক তির এ সবই শয়তানের অশ্লীল কর্ম। অতএব, তোমরা এগুলো থেকে বিরত থাকো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। শয়তান তোমাদের মাঝে মদ ও জুয়ার মাধ্যমে শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্বেষ ছড়াতে চায় এবং আল্লাহর যিকির ও ছালাত আদায় করতে বাধা সৃষ্টি করতে চায়। অতএব, তোমরা কি এগুলো থেকে বিরত হবে না’ (আল-মায়েদা, ৫/৯০-৯১)। এছাড়াও এতে দুনিয়া ও আভেরাতের কোনো কল্যাণ নিহিত থাকে না এবং মানুষকে আল্লাহর যিকির থেকে বিমুখ রাখে। সুলায়মান ইবনু বুরায়দা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেন, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নারদাশীর (পাশা বা এমন খেলা যাতে শারীরিক ও শরীআতের কোনো কল্যাণ নেই) খেলবে, সে যেন তার হাতকে শূকরের গোশত ও রক্তে রঞ্জিত করল’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২২৬০; আবূ দাঊদ, হা/৪৯৩৯)। এসব খেলা যখন হারাম, তখন এসব খেলে উপার্জন করাও হারাম এবং এমন টুর্নামেন্টে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কোনো ব্যানার ও পোস্টার তৈরি করে দিয়ে উপার্জন করাও হারাম। কেননা পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সহযোগিতা করতে আল্লাহ তাআলা নিষেধ করেছেন (আল-মায়েদা, ৫/২)।

শিক্ষাব্যবস্থা

প্রশ্ন (৩২): সন্তানকে আলেম বানাতে চাইলে ৪-৫ বছর বয়স থেকে তার শিক্ষা কীভাবে শুরু করা উচিত?

প্রশ্নকারী : শাকিবুল ইসলাম

ফরিদপুর।

উত্তর: সন্তানকে সুযোগ্য আলেম হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পিতামাতার জন্য প্রথম করণীয় হলো, নিয়্যত বিশুদ্ধ করা। পাশাপাশি সন্তানকেও নিয়্যত বিশুদ্ধ করতে তাগিদ দেওয়া। কারণ ইলম অর্জন করা ইবাদত আর ইবাদত বিশুদ্ধ নিয়্যত ব্যতীত শুদ্ধ হয় না (ছহীহ বুখারী, হা/০১; আবূ দাঊদ, হা/৩৬৬৪)। এরপর বিশুদ্ধ আক্বীদা ও মানহাজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাছাই করা। সেখানে প্রথমে নূরানী বিভাগ সম্পন্ন করা। এরপর স্মৃতিশক্তির পর্যায় বিবেচনা করে হিফয বিভাগ সম্পন্ন করা। এরপর কিতাব বিভাগে দাওরায়ে হাদীছ পর্যন্ত নিয়মতান্ত্রিক অধ্যয়ন করা। দাওরায়ে হাদীছ সম্পন্ন করার পর সময় ও সুযোগ হলে তাফসীর, হাদীছ, ফিক্বহ ইত্যাদি বিষয়ে তাখাছ্ছুছ তথা বিশেষজ্ঞতা অর্জন করা। এক্ষেত্রে মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বা এ পর্যায়ের কোনো বিদেশী স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হলে ভালো হয়।

প্রশ্ন (৩৩): পিতামাতা অনেক টাকা খরচ করে আমার পড়াশোনা করাচ্ছেন এবং আশা রাখছেন যে, আমি বড় কিছু হব। যদি আমি পড়াশোনা শেষ না করি বা কিছু না হতে পারি, ফলে তারা কষ্ট পাবেনতাহলে কি আমার গুনাহ হবে?

প্রশ্নকারী : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

 সাভার, ঢাকা।

উত্তর: যদি আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে পড়াশোনা নষ্ট করেন, পরিশ্রম না করেন এবং আর্থিক ক্ষতি করেন, তাহলে সেটা পিতামাতার প্রতি অন্যায় হবে এবং আপনার গুনাহ হবে। আর আপনি যদি চেষ্টা করার পরও সফল না হন বা আপনার পিতামাতা আপনার সফলতাকে সফলতা মনে না করেন, তাহলে আপনি যেখানে পৌঁছেছেন সেটাই আপনার তাকদীর। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ কারও উপর এমন কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না যা তার সাধ্যাতীত’ (আল-বাকারা, ২/২৮৬)।

মীরাছ বা উত্তরাধিকার

প্রশ্ন (৩৪): পিতার মৃত্যু হলে সন্তানরা দাদার সম্পত্তিতে অংশ পায় না। অথচ ইয়াতীম নাতি-নাতনিদের প্রয়োজন বেশি থাকে, তবু ইসলামী শরীআতে তাদের অধিকার নেই। এতে আল্লাহর কী হিকমত রয়েছে?

প্রশ্নকারী : আব্দুর রাকিব বিন আহমেদ

ইকরা ফাউন্ডেশন, সখের বাজার, নীলফামারী।

উত্তর: ইসলামের বিধান অনুযায়ী নাতি তার দাদার ওয়ারিছ হবে না, যদি তার পিতা তার দাদার পূর্বে ইন্তিকাল করে থাকে এবং তার আপন চাচা জীবিত থাকে। এক্ষেত্রে কী হিকমত রয়েছে এটা জানার পূর্বে আমাদের জন্য আবশ্যক হলো দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা যে, ইসলামের প্রত্যেক বিধানে আল্লাহ তাআলার হিকমত রয়েছে এবং মানুষের জন্য কল্যাণ, সেটা আমাদের বুঝে আসুক বা না আসুক। পবিত্র কুরআনে ওয়ারিছদের অংশ বর্ণনা করার পর আল্লাহ তাআলা বলেন,

آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا 

‘তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্য অধিক উপকারী তা তোমরা জান না। এটা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত অংশ। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়’ (আন-নিসা, ৪/১১)। উক্ত আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, কে ওয়ারিছ হবে আর কে হবে না এবং কার অংশ কী পরিমাণ হবে এ ব্যাপারে মানুষ জ্ঞান রাখে না; বরং আল্লাহ তাআলা সর্বাধিক জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা রাখেন। দ্বিতীয়ত, উক্ত বিধানের ক্ষেত্রে আলেমগণ যে হিকমতের কথা উল্লেখ করে থাকেন তা হলো, যখন উক্ত নাতির পিতা ইন্তিকাল করেছিলেন, তখন নাতি ওয়ারিছ হয়েছিল এবং তার উপস্থিতির কারণে তার চাচারা ওয়ারিছ হতে পারেনি। তেমনিভাবে যখন তার দাদা ইন্তিকাল করলেন, তখন তার চাচাদের উপস্থিতির কারণে সে ওয়ায়িছ হতে পারবে না, এটাই শরীআত। কারণ উভয়ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির সরাসরি সন্তানকে তার ভাই বা নাতির ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ইসলাম তার দাদার জন্য এই সুযোগ রেখেছে যে, তিনি তার ইয়াতীম নাতি-নাতনিদের জন্য মোট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে ওছিয়ত করতে পারবেন (ছহীহ বুখারী, হা/৫৬৬৮)। তাদের চাচাদের জন্য উচিত হলো, প্রাপ্ত সম্পত্তি থেকে কিছু অংশ উক্ত ইয়াতীম নাতি-নাতনিদের প্রদান করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَإِذَا حَضَرَ الْقِسْمَةَ أُولُو الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينُ فَارْزُقُوهُمْ مِنْهُ وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَعْرُوفًا

‘আর যখন (মীরাছ) বণ্টনের সময় (ওয়ারিছ নয় এমন) আত্মীয়, ইয়াতীম ও মিসকীন উপস্থিত হয়, তখন তাদেরকেও তা থেকে কিছু দাও এবং তাদেরকে উত্তম কথা বলো’ (আন-নিসা, ৪/৮)। এছাড়াও এসময় চাচারা পরীক্ষিত। তারা পিতার স্থানে ভাতিজাকে লালনপালনের দায়িত্ব পালন করবেন, দায়িত্বে অবহেলা করলে গুনাহগার হবে।

পারিবারিক জীবন

প্রশ্ন (৩৫): আমার স্ত্রীর বান্ধবী মারা যাওয়ায় তার পরিবার আমার স্ত্রীকে মেয়ের মতো ভালোবাসে। তারা চান আমরা তাদের ‘আব্বু-আম্মু’ বলে ডাকব এবং তারাও আমাদের ‘মেয়ে-জামাই’ হিসেবে সম্বোধন করবেন। শরীআতের দৃষ্টিতে এভাবে সম্বোধন করা কি জায়েয?

প্রশ্নকারী : ইউসুফ আলী শামীম

মেলান্দহ, জামালপুর।

উত্তর: সম্মান প্রদর্শন পূর্বক কোনো মুরব্বী পুরুষকে ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করা এবং কোনো মুরব্বী নারীকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করা জায়েয; যদিও তারা জন্মদাতা পিতামাতা না হন। অনুরূপভাবে স্নেহ করে বয়সে ছোট কাউকে ‘সন্তান’ বলে সম্বোধন করা জায়েয, যদিও সে আপন সন্তান না হয়।

রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে يا بني (হে আমার প্রিয় ছেলে!) বলে সম্বোধন করেছেন (ছহীহ মুসলিম, হা/২১৫১)। খাদীজা রাযিয়াল্লাহু আনহা ওয়ারাকা ইবনু নাওফালকে বললেন, হে চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজার কথা শুনুন (ছহীহ বুখারী, হা/৩)। তবে সতর্কতার বিষয় হলো, উক্ত সম্পর্ক এবং সম্বোধন যেন শারঈ সীমারেখা অতিক্রম করতে সহযোগিতা না করে। কারণ অনেকেই এসব সম্বোধনের আড়ালে ইসলামী বিধিবিধান লঙ্ঘন করে। বিশেষ করে পর্দার বিধান লঙ্ঘন করে। সুতরাং যদি ইসলামী বিধিবিধান লঙ্ঘন হয় অথবা লঙ্ঘনের আশঙ্কা থাকে, তাহলে এসব সম্পর্ক ও সম্বোধন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوا وَأَطِيعُوا ‘তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করো, তাঁর বাণী শ্রবণ করো এবং তাঁর আনুগত্য করো’ (আত-তাগাবুন, ৬৪/১৬)।

প্রশ্ন (৩৬): চাকরির কারণে আমি ঢাকায় থাকি, স্ত্রী থাকে গ্রামে। প্রায় এক বছর আলাদা থাকায় স্ত্রী বলে আমি তার হক্ব নষ্ট করছি। কিন্তু তাকে ঢাকায় নিয়ে আসার বা আমার গ্রামে থাকার সামর্থ্য নেই। এ অবস্থায় আমার করণীয় কী?

প্রশ্নকারী : মাহফুজুর রহমান

বাগমারা, রাজশাহী।

উত্তর: উভয়ের সম্মতিতে ও উভয়ের যোগাযোগের ভিত্তিতে স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকা যায়। বরং এতে কেউ বাড়াবাড়ি করলে একজন অপরজনের প্রতি যুলম করা হবে। আর্থিক অবস্থা অনুকূলে হলে স্ত্রীকে সাথে রাখাই উত্তম। এ অবস্থায় আপনার জন্য আমাদের পরামর্শ- ১. সামর্থ্য না থাকলে, সময়ভিত্তিক ভারসাম্য করুন। আপনি যদি পুরোপুরি গ্রামে গিয়ে থাকতে না পারেন, তাহলে মাসে বা দুই মাসে একবার হলেও কয়েকদিনের জন্য স্ত্রীকে সময় দিন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ কোনো প্রাণকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না’ (আল-বাকারা, ২/২৮৬)। ২. ভবিষ্যতে স্ত্রীর সাথে থাকার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করুন এবং আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য চান। ৩. স্ত্রীর সাথে দৈনন্দিন নিয়মিত যোগাযোগ চলমান রাখুন।

প্রশ্ন (৩৭): আমার স্বামী ৫ বছর ধরে প্রবাসে আছেন। তিনি তার উপার্জনের প্রায় সবটাই আমার শ্বশুরবাড়ির চাহিদা পূরণে ব্যয় করেন। আমাদের জন্য ব্যয় খুব সামান্য, কোনো সঞ্চয়ও নেই। সন্তানরা বাবার অনুপস্থিতিতে কষ্ট পাচ্ছে, আমিও হতাশাগ্রস্ত। স্বামীকে বললেও তিনি শুধু ধৈর্য ধরতে বলেন। স্ত্রী হিসেবে এ অবস্থায় আমার করণীয় কী?

প্রশ্নকারী : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

লাঙ্গলকোট, কুমিল্লা।

উত্তর: খরচের ক্ষেত্রে ভারসাম্য ও ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখা উচিত। পিতামাতার যেমন হক্ব আছে, তেমনি সন্তান-সন্ততি ও স্ত্রী-পুত্রেরও হক্ব আছে। তাই সকলের প্রয়োজন পূরণ করাই ন্যায়সঙ্গত। কাউকে বঞ্চিত করা উচিত হবে না। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমার সামর্থ্য অনুযায়ী পরিবারের জন্য ব্যয় করো’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/২২০৭৫)। স্বামীকে স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সামর্থ্যবান যেন নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করে আর যার রিযিক সংকীর্ণ করা হয়েছে সে যেন আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন, তা হতে ব্যয় করে (আত-তালাক, ৬৫/৭)। তিনি আরো বলেন, ‘সন্তানের পিতার দায়িত্ব হলো মায়ের খাওয়া-পরার খরচ বহন করা যথাযথভাবে’ (আল-বাকারা, ২/২৩৩)। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেন, ‘আর তোমাদের উপর তাদের (স্ত্রীদের) ন্যায়সঙ্গত ভরণপোষণের ও পোশাক-পরিচ্ছদের হক্ব রয়েছে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১২১৮)। পিতামাতার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা না থাকলে সন্তানকে সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা করতে হবে। এতে কেউ কারো প্রতি অভিযোগ করলে তা যুলম হবে।

প্রশ্ন (৩৮): এক দ্বীনদার মহিলা (বয়স ২৮) তার গুরুতর অসুস্থ শ্বশুরকে (বয়স ৭০-৮০) অন্য কোনো সহযোগী না থাকায় উঠা-বসা করানো ও ইস্তিঞ্জা (প্রস্রাব-পায়খানা) পরিষ্কার করাতে বাধ্য হন। এতে শরীআতের সমাধান কী? এতে তার গুনাহ হবে কি?

প্রশ্নকারী : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

উত্তর: মাহরাম হিসেবে এরূপ অবস্থায় শ্বশুরের সার্বিক সেবাই বউমাকেই থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের প্রকৃত পুত্রদের স্ত্রীগণ (তাদের শ্বশুরের জন্য মাহরাম)’ (আন-নিসা, ৪/২৩)। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়ার কষ্ট দূর করে, আল্লাহ তার কিয়ামতের কষ্ট দূর করবেন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৯৯)। কাবশা বিনতু কা‘ব ইবনে মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি আবূ কাতাদা রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর পুত্রবধূ ছিলেন। আবূ কাতাদা (শ্বশুর) তার নিকট এলেন। তিনি বলেন, আমি তার জন্য ওযূর পানি ঢাললাম (তিরমিযী, হা/৯২)।

প্রশ্ন (৩৯): সন্তান গর্ভে আসার খবর উৎসাহের সঙ্গে অন্যকে জানানো কি শরীতসম্মত? এতে কোনো ক্ষতি বা উপকারের বিষয় শরীআতে উল্লেখ আছে কি?

প্রশ্নকারী : উমর ফারুক

আকন্দপাড়া, ইসলামপুর, জামালপুর।

উত্তর: কুরআন বা ছহীহ হাদীছে এমন কোনো সরাসরি আদেশ বা নিষেধ নেই। সুতরাং কেউ যদি দু‘আর উদ্দেশ্যে পরিবার বা ঘনিষ্ঠজনকে জানায়, তাহলে জানাতে পারে। তবে ঢালাওভাবে সবাইকে না জানানো ভালো। কেননা তাতে কারো শত্রুতা বাড়তে পারে, বদনজর থাকতে পারে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদনজর সম্পর্কে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই নজর সত্য। যদি কদরকে তথা ভাগ্যকে অতিক্রম করার কিছু থাকত, তবে বদনজরই তা অতিক্রম করত’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২১৮৮)। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে বৎস! তোমার স্বপ্ন তোমার ভাইদেরকে বলো না, তারা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে’ (ইউসুফ, ১২/৫)।

প্রশ্ন (৪০): এক নারী হানাফী মত অনুযায়ী অভিভাবক ছাড়া বিয়ে করেছিলপরে সে জানতে পারে যে, হাদীছ অনুযায়ী অভিভাবক ছাড়া বিয়ে ছহীহ নয়। এখন সে অনুতপ্ত ও ওয়াসওয়াসায় ভুগছে, এখন তার বিয়ের হুকুম কী হবে?অতীতে করা ওই বিয়ের দায় থেকে কি সে মুক্ত থাকবে?

প্রশ্নকারী : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

বরিশাল।

উত্তর: অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে শুদ্ধ হয় না। এটি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্পষ্ট বাণী দ্বারা প্রমাণিত। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে নারী অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করে, তার বিয়ে বাতিল, বাতিল, বাতিল’ (আবূ দাঊদ, হা/২০৮৩; ইবনু মাজাহ, হা/১৮৮০)। এখন তার করণীয় হলো অভিভাবকের অনুমতিসহ নতুন করে বিবাহ করা এবং আগের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। নতুন বিয়ের শর্ত হলো- ১. অভিভাবক (বাবা/দাদা/ভাই বা শরীআত নির্ধারিত অলী) থাকতে হবে। ২. দুইজন মুসলিম, ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী থাকতে হবে। ৩. নতুন করে ইজাব ও কবুল হতে হবে।

মহিলা বিষয়ক

প্রশ্ন (৪১): নারীর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চুল কাটা বা ছাড়ার নিয়ম কী? চুল কাটলে কি গুনাহ হবে?

প্রশ্নকারী : সাকিরুল ইসলাম

শুক্রবাড়ী, গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

উত্তর: জন্মের সপ্তম দিনে ছেলেমেয়ে সকলের চুল মুণ্ডন করতে হবে। তবে সপ্তম দিনের পর মেয়েদের চুল ন্যাড়া করতে হবে মর্মে কোনো হাদীছ নেই। বরং লম্বা রাখাই ভালো। তবে কিছু ছোট করতে পারে। আবূ মূসা আশআরী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা মুণ্ডনকারী নারী থেকে দায়মুক্তি ঘোষণা করেছেন (ছহীহ বুখারী, হা/১২৯৬)। আবূ সালামা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ মাথার চুল কেটে রাখতেন, তা ওয়াফরা এর ন্যায় হয়ে যেত (ঘাড় বরাবর লম্বা চুলই ওয়াফরা) (ছহীহ মুসলিম, হা/৩২০)। ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণকারী পুরুষ এবং পুরুষদের সাদৃশ্য গ্রহণকারী নারীর প্রতি অভিসম্পাত করেছেন (ছহীহ বুখারী, হা/৫৮৮৫)। ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত’ (আবূ দাঊদ, হা/৪০৩১)।

প্রশ্ন (৪২): যদি কোনো মহিলা লুজ ফিটিং (এমন পোশাক যা শরীরের সাথে আঁটসাঁটো হয়ে লেগে থাকে না) বিভিন্ন রঙ ও ডিজাইনের পোশাক পরে, যা সারা শরীর ও মুখ ঢাকে- এতে কি তার পর্দা আদায় হবে?

প্রশ্নকারী : আদনান

পেয়ারাতলা, কুষ্টিয়া।

উত্তর: শরীআতের দৃষ্টিতে শুধু লুজ ফিটিং (ঢিলা) পোশাক পরাই যথেষ্ট নয়; বরং পর্দার শর্তগুলো যথাযথ পালন করতে হবে। তাহলে শারঈ পর্দা বলে গণ্য হবে। নিচে পর্দার শর্তগুলো দেওয়া হলো- ১. শরীর পুরোপুরি ঢাকা (শুধু মুখমণ্ডল খুলতে পারে, তবে ঢেকে রাখাই ভালো)। ২. পোশাক যেন ঢিলেঢালা হয়। ৩. পোশাক যেন ঘন হয়, যাতে শরীরের অঙ্গসৌষ্ঠব ফুটে না ওঠে। ৪. পোশাক যেন আকর্ষণীয় সাজসজ্জা ও এমন রঙের না হয়, যা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ৫. পোশাক যেন পুরুষের পোশাকের অনুরূপ না হয় অথবা কাফের ও ফাসেকের পোশাকের সদৃশ না হয়। ৬. যেন সুগন্ধিযুক্ত না হয়। ৭. প্রাণীর ছবিযুক্ত না হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তবে যা স্বভাবত প্রকাশ পায়’ (আন-নূর, ২৪/৩১)। ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি খ্যাতি লাভের জন্য পোশাক পরে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সেরূপ পোশাক পরাবেন, অতঃপর তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হবে (আবূ দাঊদ, হা/৪০২৯)। অন্য হাদীছে এসেছে, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও নম্রতাবশত সৌন্দর্যবর্ধক পোশাক পরা থেকে বিরত থাকে, আল্লাহ তাকে সম্মানের পোশাক পরিধান করাবেন (আবূ দাঊদ, হা/৪৭৭৮)।

আকীকা

প্রশ্ন (৪৩): বর্তমানে অনেকে আকীকার গোত বণ্টন না করে দাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান করে। এ পদ্ধতি কি শরীতসম্মত, নাকি গোশত বণ্টন করাই উত্তম?

প্রশ্নকারী : মো. ওমর ফারুক

বনশ্রী, ঢাকা।

উত্তম: আকীকা পিতার যিম্মাদারী, যা সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে পালন করতে হবে। আকীকার গোশত পিতার নিজস্ব গোশত। তিনি নিজে খাবেন, আত্মীয়-স্বজনকে দিবেন, মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়াবেন এবং ফকীর-মিসকীনকে দিবেন। এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আকীকার গোশতকে কুরবানীর গোশতের মতো মনে করে দুঃস্থ-গরীবের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে এ ধারণা আদৌ ঠিক নয়। কেননা কুরবানীর গোশত ফকীর-মিসকীনকে দেওয়া আল্লাহর আদেশ। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘প্রত্যেক শিশু তার আকীকার বিনিময়ে দায়বদ্ধ থাকে। কাজেই সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে আকীকা যবেহ করবে এবং তার মাথা মুণ্ডন করে নাম রাখবে’ (আবূ দাঊদ, ২/৩৯২)।

আমল-দু‘আ

প্রশ্ন (৪৪): বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কী কী আমল ও দু‘আ পড়তে হয়?

প্রশ্নকারী : মো. মিনহাজ পারভেজ

হড়গ্রাম, রাজশাহী।

উত্তর: ইসলাম আমাদের বিপদ, দুঃখ-কষ্ট ও পরীক্ষার সময় পড়ার জন্য অনেক দু‘আ ও আমল শিখিয়ে দিয়েছে। নিচে মূল কিছু দু‘আ ও আমল তুলে ধরা হলো- ১. দু‘আ ইউনুস পড়া। لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তুমি পবিত্র, আমি ছিলাম যালিমদের অন্তর্ভুক্ত’। এ দু‘আ পড়লে আল্লাহ বিপদ থেকে মুক্তি দেন (ছহীহ তিরমিযী, হা/৩৫০৫)। ২. এ দু‘আ পড়া لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ الْعَلِيمُ الْحَلِيمُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَرَبُّ الْأَرْضِ ‌رَبُّ ‌الْعَرْشِ ‌الْكَرِيمُ. (ছহীহ বুখারী, হা/৭৪২৬)।

৩. দুশ্চিন্তা দূর করার দু‘আ, اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُْوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, ভীরুতা ও কৃপণতা থেকে, ঋণের বোঝা ও মানুষের যুলম থেকে’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৮৯৩)। ৪. আয়াতুল কুরসী প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ও ঘুমের আগে পড়লে আল্লাহ হেফাযত করবেন (ছহীহ বুখারী, হা/ ২৩১১)। ৫. সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত, সূরা ইখলাছ, ফালাক, নাস সকাল-সন্ধ্যা ও ঘুমের আগে পড়লে সব ধরনের ক্ষতি থেকে নিরাপদে রাখা হয় (ছহীহ বুখারী, হা/৫০১৭; ছহীহ মুসলিম, হা/২১৯২)।

৬. এ দু‘আ পড়া, بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ في الأرْضِ وَلَا في السَّماءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْمُ ‘আল্লাহর নামে (শুরু করছি), যার নামে কোনো কিছুর কোনো ক্ষতি হয় না আসমান ও যমিনে। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ’ (আবূ দাঊদ, হা/৫০৮৮; ছহীহ তিরমিযী, হা/৩৩৮৮)। ৭. ছাদাকা করা (তিরমিযী, হা/৬৬৪)। ৮. নফল ছালাত আদায় করা। এসবের মাধ্যমে বিপদ থেকে মুক্তি চাইতে হবে।

প্রশ্ন (৪৫): জনৈক ব্যক্তি বয়সন্ধিকালে পাপ করে আল্লাহর কসম খেয়ে পাপ থেকে বেঁচে থাকার শপথ করে। অতঃপর আবার সে পাপে জড়িয়ে যায়। আবার সে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায় ও তাহাজ্জুল ছালাত আদায় করে, তাহলে কি তার পাপ ক্ষমা হবে? পাপ থেকে বাঁচার কোনো দু‘আ বা মাধ্যম আছে কি?

-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

উত্তর: এ অবস্থায় নিরাশ না হয়ে ক্ষমা চেয়ে যেতে হবে। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি, ‘এক বান্দা গুনাহ করল। তারপর সে বলল, হে আমার রব! আমি তো গুনাহ করে ফেলেছি। তাই আমার গুনাহ ক্ষমা করে দাও। তার প্রতিপালক বললেন, আমার বান্দা কি একথা জেনেছে যে, তার রয়েছে একজন রব, যিনি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। আমার বান্দাকে আমি মাফ করে দিলাম। তারপর সে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী কিছুকাল অবস্থান করল এবং সে আবার গুনাহতে জড়িয়ে গেল। বান্দা আবার বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আবার গুনাহ করে বসেছি। আমার এ গুনাহ তুমি মাফ করে দাও। তখন আল্লাহ বললেন, আমার বান্দা কি জেনেছে যে, তার আছে একজন রব, যিনি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। এরপর সে বান্দা আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুকাল সে অবস্থায় থাকল। আবারও সে গুনাহতে জড়িয়ে গেল। সে বলল, হে আমার রব! আমি তো আরো একটি গুনাহ করে ফেলেছি। আমার এ গুনাহ মাফ করে দাও। তখন আল্লাহ বললেন, আমার বান্দা কি জেনেছে যে, তার একজন রব আছেন, যিনি গুনাহ মাফ করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। আমি আমার এ বান্দাকে মাফ করে দিলাম। এরকম তিনবার বললেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/৭৫০৭)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘শয়তান বলেছিল,
হে আমার প্রভু! আপনার মহিমার কসম! যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার বান্দাদের প্রাণ তাদের দেহে থাকবে, আমি তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে ছাড়ব না। তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, আমার মহিমা ও গৌরবের কসম! যতক্ষণ তারা আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাদের ক্ষমা করতে থাকব’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/১১২৩৭)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ মাত্রই গুনাহগার। আর গুনাহগারদের মধ্যে তওবাকারীরাই উত্তম’ (তিরমিযী, হা/২৪৯৯)। প্রশ্নকারী যেহেতু কসম করে আবার পাপ করে কসম ভঙ্গ করেছে, সেহেতু তাকে কাফফারা আদায় করতে হবে এবং আল্লাহ তাআলার নিকট তওবা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করবেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যেসব কসম দৃঢ়ভাবে করো, সেগুলোর জন্য কাফফারা হলো দশজন গরিবকে খাবার খাওয়ানো অথবা তাদের পোশাক দান করা অথবা একজন দাস মুক্ত করা’ (আল-মায়েদা, ৫/৮৯)।

পাপ থেকে মুক্তির শারঈ পদ্ধতি: ১. আন্তরিক তওবা (আত-তাহরীম, ৬৬/৮)। ২. তাহাজ্জুদ ও ইস্তেগফার (আয-যারিয়াত, ৫১/১৭–১৮), ৩. পাপের কারণ থেকে দূরে থাকা, পাপের পরিবেশ, বন্ধু, ওয়েবসাইট, চিন্তা বা ছবি থেকে দূরে থাকা (মুসনাদ আহমাদ, হা/২২১৭৪, ছহীহ)। ৪. দু‘আ করা, اللهم اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ ‘হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করো, আমার তওবা কবুল করো। নিশ্চয়ই তুমি তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু’ (তিরমিযী, হা/৩৫৫১)। ৫. নেক আমলে নিজেকে ব্যস্ত রাখা। ছালাত, নফল ছিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, দান-ছাদাকা ইত্যাদি ভালো কাজগুলো করা (তিরমিযী, হা/১৯৮৭)। ৬. হতাশ না হওয়া (আয-যুমার, ৩৯/৫৩)।

প্রশ্ন (৪৬): ইসলামের দৃষ্টিতে জ্ঞান বৃদ্ধির কোনো উপায় বা দু‘আ আছে কি?

প্রশ্নকারী : সাজেদুল ইসলাম

সলঙ্গা, সিরাজগঞ্জ।

উত্তর: জ্ঞান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিশেষ দান। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। যেমন- আল্লাহ তাআলা আদম আলাইহিস সালাম-কে জ্ঞান দান করেছিলেন (আল-বাকারা, ২/৩১)। জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য বেশি বেশি এ দু‘আ করতে হবে, যেমন মূসা আলাইহিস সালাম করতেন, رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন’ (ত্বা-হা, ২০/১১৪)। এছাড়াও বেশি বেশি পড়াশুনা করা, যিকির তথা আল্লাহকে স্মরণ করা, পাপ থেকে দূরে থাকা, অপ্রয়োজনীয় বিষয়সমূহ ত্যাগ করা, রাতে তাহাজ্জুদ পড়ার পর আল্লাহর কাছে দু‘আ করার মাধ্যমে জ্ঞান বৃদ্ধি হয়।

আয়াত ও হাদীছের ব্যাখ্যা

প্রশ্ন (৪৭): মাকামে মাহমূদ’ কি স্থান না মর্যাদা হিসেবে বুঝানো হয়েছে?

প্রশ্নকারী : শাহিদুল ইসলাম

কালিহাতী, টাঙ্গাইল।

উত্তর: ‘মাকামে মাহমূদ’ দ্বারা মর্যাদা ও পদ বুঝানো হয়েছে, স্থান নয়। এটি এমন এক বিশেষ মর্যাদা ও সম্মান, যা আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন একমাত্র তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রদান করবেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর রাতের কিছু অংশে আপনি তাহাজ্জুদের ছালাত আদায় করুন। এটি আপনার জন্য নফল ইবাদত। অচিরেই আপনার রব আপনাকে উত্তম মর্যাদাসম্পন্ন স্থানে (مَقَامًا مَّحْمُودًا) অবস্থান করাবেন’ (আল-ইসরা, ১৭/৭৯)। ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন মানুষ হাঁটু গেঁড়ে বসবে, প্রত্যেক উম্মত তাদের নবীর কাছে গিয়ে বলবে, হে অমুক! আমাদের জন্য সুপারিশ করো। অবশেষে শাফাআত নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌঁছবে। সেদিন আল্লাহ তাঁকে ‘মাকামে মাহমূদ’ অর্থাৎ সুপারিশ করার সম্মানিত পদে অধিষ্ঠিত করবেন। তিনি (নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘এটাই সেই মাকাম, যেখানে আমি আমার রবকে প্রশংসা করব’ (ছহীহ বুখারী, হা/৪৭১৮)।

বিবিধ

প্রশ্ন (৪৮): চাকরির জন্য ব্যাংক একাউন্ট খুলে ডেবিট কার্ড নিয়েছিলাম। এখন কার্ড ব্যবহার করি না, টাকাও নেই। তাই বার্ষিক ফি কাটা হয় না। এ অবস্থায় কি আমার গুনাহ হবে?

প্রশ্নকারী : মামুন

নারায়ণগঞ্জ।

উত্তর: কার্ড সংক্রান্ত বার্ষিক ফি প্রদানের সম্পর্ক কার্ড সংক্রান্ত সেবাপ্রাপ্তির সাথে। যেহেতু বর্তমানে কার্ড ব্যবহার করার মাধ্যমে ব্যাংকের সেবা গ্রহণ করা হচ্ছে না, তাই বার্ষিক ফি প্রদানের বিষয়টি প্রযোজ্য হবে না। সুতরাং গুনাহ হওয়ার আশঙ্কা নেই (আল-মুগনী, ৫/৩২২)। তবে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া এসব কার্ড ব্যবহার করা থেকে বেঁচে থাকাই ভালো।

প্রশ্ন (৪৯): এভারেস্ট বা অন্য কোনো দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থান জয়ের চেষ্টা করতে গিয়ে কেউ মারা গেলে, তা কি আত্মহত্যা বা পাপ হিসেবে গণ্য হবে?

প্রশ্নকারী : মো. আব্দুর রহমান

শাজাহানপুর, বগুড়া।

উত্তর: যদি কেউ অতিরিক্ত ঝুঁকি জেনেশুনে অকারণে বা অহংকার প্রদর্শন করে কোনো দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থান জয় করার চেষ্টা করতে গিয়ে মারা যায়, তাহলে তা আত্মহত্যার শামিল। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমের মাঝে বলেন, ‘আর তোমরা স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ো না। আর তোমরা ইহসান করো, নিশ্চয় আল্লাহ মুহসিনদের ভালোবাসেন’ (আল-বাকারা, ২/ ১৯৫)। আর কেউ যদি কোনো বৈধ লক্ষ্যে (যেমন- উদ্ধার অভিযান, বৈজ্ঞানিক কাজে আরোহণ, গবেষণা ইত্যাদি) আরোহণ করতে গিয়ে দুর্ঘটনাক্রমে পড়ে মারা যায়, তাহলে তা আত্মহত্যার শামিল হবে না।

প্রশ্ন (৫০):রযে হাসানা (বিনা সূদে ধার) কাদের দেওয়া উচিত? আমাদের এলাকায় অধিকাংশ প্রতিবেশী বিলাসিতা, কিস্তি বা অনর্থক কাজে ধার চায়। তাদেরকে ধার না দিলে সম্পর্ক নষ্ট হয় বা অহংকারী মনে করে। এ অবস্থায় আমাদের করণীয় কী?

প্রশ্নকারী : কবিরুল ফরাজী

গোপালগঞ্জ।

উত্তর: করযে হাসানা বা বিনা সূদে ধার দেওয়া ইসলামে অত্যন্ত ছওয়াবের কাজ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কে আছে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে (অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনা সূদে দান বা ধার দেবে), তাহলে আল্লাহ তা বহুগুণ বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দেবেন’ (আল-বাকারা, ২/২৪৫)। তবে তা কেবল প্রকৃত প্রয়োজনে থাকা সৎ, বিশ্বস্ত ও ফেরত দিতে সক্ষম ব্যক্তিদের দেওয়া উচিত। বিলাসিতা বা গাফেল কাজের জন্য কেউ ধার চাইলে, তাকে ধার না দেওয়াই উত্তম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অবিবেচক (অপচয়কারী) লোকদের তোমাদের সেই সম্পদ দিয়ো না, যা আল্লাহ তোমাদের জীবিকার উপায় হিসেবে দিয়েছেন’ (আন-নিসা, ৪/৫)। আর সম্পর্ক নষ্টের ভয় থাকলে নরম আচরণ ও হিকমত সহকারে বলা যে, আমি ধার দেই না বা এ জাতীয় কথা বলা, যেন কারো সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি না হয়। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার উপর অত্যাচার করবে না, তাকে অপদস্ত করবে না এবং হেয় প্রতিপন্ন করবে না’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৬৪)।

Magazine