কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

প্রশ্ন (২৫): রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের পাপাচার, পাত্রপক্ষের কাছে মেয়ের পরিবারের দোষ, বন্ধুকে কারো অযোগ্যতার কথা জানানো বা অফিসের সহকর্মীর গাফিলতি বসকে জানানো— এসব ক্ষেত্রে সত্য বললে তা কি গীবত হবে, নাকি শরীআত এতে অনুমতি দেয়?

উত্তর: গীবতের ব্যাপারে হাদীছে এসেছে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা কি জান, গীবত কী?’ তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, ‘(গীবত হলো) তোমার ভাইয়ের সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে’। প্রশ্ন করা হলো, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাই এর মধ্যে বাস্তবিকই থেকে থাকে, তবে আপনি কী বলেন? তিনি বললেন, ‘তুমি তার সম্পর্কে যা বলছ, তা যদি তার মধ্যে প্রকৃতই থেকে থাকে; তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তো তুমি তার প্রতি অপবাদ আরোপ করলে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৮৯)। কিন্তু ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ ছহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যায় (শরহে মুসলিম ১৬/১৪২) ৬টি ক্ষেত্র উল্লেখ করেছেন, যা গীবতের অন্তর্ভুক্ত নয়- ১. যুলমের অভিযোগ জানানো। যেমন- কেউ কারো যুলমের শিকার হয়ে শাসক বা দায়িত্বশীলের কাছে অভিযোগ করে, অমুক আমার উপর যুলম করেছে- এটা গীবত নয়; বরং ন্যায়বিচারের জন্য বলা অনুমোদিত। মহান বলেন, ‘যিনি অত্যাচারিত, তার পক্ষে অন্যায়ের অভিযোগ প্রকাশ করা অনুমোদিত’ (আন-নিসা, ৪/১৪৮)। ২. অন্যকে গুনাহ বা ক্ষতি থেকে সতর্ক করা। যেমন- কোনো মেয়ের পাত্র সম্পর্কে পরিবারকে জানানো, সে ছালাত পড়ে না, মাদকাসক্ত, প্রতারক ইত্যাদি। বন্ধুকে বলা, অমুকের সঙ্গে ব্যবসা করো না, সে বিশ্বাসযোগ্য নয়। অফিসে বসকে জানানো, এই কর্মচারী দায়িত্বে গাফিল। এগুলো গীবত নয়, বরং সতর্ক করা দায়িত্ব। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দ্বীন হলো নসীহা’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৫৫)। ৩. রাষ্ট্র ও সমাজের মঙ্গলার্থে সতর্ক করা। যেমন- কোনো নেতা বা দায়িত্বশীল ব্যক্তি প্রকাশ্যে ফাসাদ করছে, জনগণকে ভুল পথে নিচ্ছে বা দ্বীনবিরোধী কাজ করছে। এক্ষেত্রে সত্য প্রকাশ করে সাধারণ মুমিনদের সতর্ক করার জন্য বৈধ। তবে তা আদব ও প্রমাণসহ হতে হবে, গীবত বা কটাক্ষের উদ্দেশ্যে নয়। ৪. কোনো মুফতী বা আলেমকে বাস্তব ঘটনা জানানো। যেমন- কেউ বলে, আমার স্বামী এমন-এমন করে, এ অবস্থায় আমার করণীয় কী? এ ধরনের প্রশ্নে অন্যের ত্রুটি বর্ণনা করলে তা গীবত নয়, বরং ফতওয়া চাওয়ার বৈধ উপায়। উম্মু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলেছিলেন, আবূ সুফিয়ান কৃপণ; তিনি আমাকে পর্যাপ্ত খরচ দেন না…। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোনো নিষেধ করেননি (ছহীহ বুখারী, হা/৭১৮০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৪)। ৫. প্রকাশ্য পাপী বা বিদআতকারীকে প্রকাশ করা। যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে গুনাহ করে বা মানুষকে বিভ্রান্ত করে, তার মন্দ কাজ সম্পর্কে সতর্ক করা গীবত নয়। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমার উম্মতের সবাইকে ক্ষমা করা হবে, শুধু তারা ছাড়া যারা প্রকাশ্যে গুনাহ করে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬০৬৯)। ৬. পরিচয়ের জন্য বলা। যেমন- কেউ অন্ধ, খোঁড়া, বধির ইত্যাদি নামে পরিচিত এবং যখন তাকে অন্যভাবে চেনানো সম্ভব নয়।

প্রশ্নকারী : রকিবুল হাসান

 হাওয়ালভাংগী, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা।


Magazine