কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

প্রশ্ন (৬): বর্তমান সমাজের করুণ অবস্থা (গান-বাজনা, যেনা, নেশা, গোপন পাপ, ভয়ংকর প্রযুক্তি ইত্যাদি) দেখে আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য চিন্তা হয়। এ অবস্থায় যদি স্ত্রী-সন্তানহীন হয়ে মৃত্যুর আশা পোষণ করি, তাহলে কি পাপ হবে?

উত্তর:  সমাজের করুণ অবস্থার কারণে বিবাহ থেকে বিরত থাকা, সংসার ও জাগতিক সুখ থেকে সরে গিয়ে শুধু উপাসনায় লিপ্ত থাকা নিন্দনীয়। এটি খ্রিষ্টানদের পথ অনুসরণ করার মতো, যারা বিবাহ ত্যাগ করে আশ্রমে গিয়ে সন্ন্যাসীর জীবনযাপন গ্রহণ করে। আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনের তাবাত্তুল ও সন্ন্যাসী জীবনযাপন থেকে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর রাহবানিয়্যাত (সন্ন্যাসী জীবন) এটা তারা নিজেরাই উদ্ভাবন করেছে, আমি তা তাদের ওপর ফরয করিনি। তারা তো কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে এটি গ্রহণ করেছিল, কিন্তু তারা তা যথাযথভাবে পালন করেনি’ (আল-হাদীদ, ৫৭/২৭)। অতএব, একজন মুসলিমের কর্তব্য হলো মানবজাতির শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তিত্ব নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পথ অনুসরণ করা, যিনি ছিলেন সর্বাধিক পরহেজগার ও আল্লাহভীরু এবং যার জীবনপদ্ধতি থেকে কেউ বিমুখ হতে পারে না। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উছমান ইবনু মাযঊন রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে তাবাত্তুল (বিবাহ থেকে বিরত থাকা) গ্রহণ থেকে নিষেধ করেন। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তাকে অনুমতি দিতেন, তবে আমরা (ছাহাবীরাও) খাসি হয়ে যেতাম’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫০৭৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪০২)। আনাস ইবনু মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনজন লোক নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণের ঘরে এসেছিলেন এবং তারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইবাদতের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। যখন তাদেরকে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইবাদতের বিবরণ জানানো হলো, তখন তারা সেটিকে যেন অল্প মনে করল (অর্থাৎ নিজেদের তুলনায় কম মনে হলো)। তারা বলল, আমরা তো নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মতো নই! তাঁর তো অতীত ও ভবিষ্যতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে! তখন তাদের একজন বলল, আমি সারা রাত ছালাত আদায় করব, কখনো বিশ্রাম নেব না। অন্যজন বলল, আমি সারাজীবন ছিয়াম রাখব, কখনো ছিয়াম ভাঙব না। আরেকজন বলল, আমি নারীদের থেকে দূরে থাকব, কখনো বিবাহ করব না। এরপর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে এলেন এবং বললেন, ‘তোমরাই কি এ কথা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সবার চেয়ে আল্লাহকে বেশি ভয় করি এবং তাঁর ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি তাক্বওয়াবান; তবুও আমি ছিয়াম রাখি আর ভঙ্গও করি, ছালাত আদায় করি আর ঘুমাইও এবং নারীদের সঙ্গে বিবাহও করি। অতএব, যে ব্যক্তি আমার সুন্নাহ থেকে বিমুখ হয়, সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়’ (ছছহ বুখারী, হা/৫০৬৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪০১)। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে মুসলিম মানুষদের সাথে মেলামেশা করে এবং তাদের দেওয়া যন্ত্রণায় ধৈর্যধারণ করে, সে এমন মুসলিমের চেয়ে উত্তম যে মানুষদের সাথে মেলামেশাও করে না এবং তাদের দেওয়া যন্ত্রণায় ধৈর্যও ধরে না’ (তিরমিযী, হা/২৫০৭)। সুতরাং এমতাবস্থায় স্ত্রী-সন্তানহীন হয়ে মৃত্যুর আশা করা পাপ হবে। তাই সুন্নাত অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে এবং পরবর্তী বংশধরের হেদায়াতের জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করতে হবে।

প্রশ্নকারী : মো. সামসুদ্দিন

শীতল মাঠ, পত্নীতলা, নওগাঁ।

Magazine