কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

প্রশ্ন (৩৪) : সূরা হিজরের ৮৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যা জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : সূরা হিজরের ৮৭ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর আমি তোমাকে ‘সাব‘আ মাছানী’ তথা বারবার পঠিত সাতটি আয়াত এবং মহাগ্রন্থ আল-কুরআন দান করেছি’। হাফেয ইবনে কাছীর রাহিমাহুল্লাহ তার তাফসীরে ইবনে কাছীরে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘সাব‘আ মাছানী’র অর্থ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। প্রথম মত : আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহুম, মুজাহিদ, সাঈদ ইবনে জুবায়ের, যাহহাক রাহিমাহুমুল্লাহ এবং আরও অনেকের মতে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, সাতটি দীর্ঘ সূরা। অর্থাৎ সূরা বাক্বারাহ, আলে ইমরান, নিসা, মায়েদা, আন‘আম, আ‘রাফ এবং সূরা ইউনুস। এ ব্যাপারে ইবনে আববাস ও সাঈদ ইবনে জুবায়ের রাযিয়াল্লাহু আনহুম-এর স্পষ্ট ভাষ্য আছে। ইবনে আবী হাতেম তার পিতা থেকে, তিনি ইবনে আবী ওমর থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, সুফিয়ান বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, সূরা বাক্বারাহ, আলে ইমরান, নিসা, মায়েদা, আন‘আম, আ‘রাফ এবং সূরা আনফাল ও তাওবা (আনফাল ও তাওবাকে একটি সূরা হিসাব করে)।

দ্বিতীয় মত : ‘সাব‘আ মাছানী’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, সূরা ফাতিহা। এই মতের পক্ষে গেছেন ওমর, আলী, ইবনে মাসঊদ, ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহুম। ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘বিসমিল্লাহ’ হল এর সপ্তম নম্বর আয়াত। আল্লাহ এটা বিশেষভাবে তোমাদেরকে দান করেছেন। ক্বাতাদা রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, আমাদের নিকট আলোচনা করা হয়েছে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল সূরা ফাতিহা। কারণ তার আয়াতগুলো প্রত্যেক ক্বিরাআতে বারবার পড়া হয়। অন্য বর্ণনায় আছে, ফরয-নফল সকল ছালাতের প্রতি রাক‘আতে সেগুলো পাঠ করা হয়। ইবনে জারীর রাহিমাহুল্লাহ এই মতটি পসন্দ করেছেন এবং তার মতের স্বপক্ষে ছহীহ বুখারীর দু’টি হাদীছ দিয়ে দলীল পেশ করেছেন।

প্রথম হাদীছ : (হাদীছের সারাংশ হল), সাঈদ ইবনে মু‘আল্লা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘আমি কি তোমাকে কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরা শিখিয়ে দিব না? আমি বললাম, অবশ্যই। অতঃপর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মসজিদ থেকে বের হয়ে চলে যেতে উদ্যত হলেন, তখন আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দিলাম। তখন তিনি বললেন, ‘সেটা হল اَلْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ এটাই হল ‘সাব‘আ মাছানী’। এটাই হল মহাগ্রন্থ আল-কুরআন, যা আমাকে দেওয়া হয়েছে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৪৪৭৪; মিশকাত, হা/২১১৮)। দ্বিতীয় হাদীছ : আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘উম্মুল কুরআনই হল ‘সাব‘আ মাছানী’ এবং মহাগ্রন্থ আল-কুরআন’ (ছহীহ বুখারী, হা/৪৭০৪)। ‘সাব‘আ মাছানী’ দ্বারা যে সূরা ফাতিহাই উদ্দেশ্য, এটা তার সুস্পষ্ট প্রমাণ (ইবনে কাছীর, সূরা হিজর, আয়াত ৮৭-এর আলোচনা)।

-মিলন হোসাইন

রহিমানপুর, ঠাকুরগাঁও।


Magazine