কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

দ্বীন পালনে উদাসীনতার কুফল ও তার প্রতিকার

post title will place here

[৩০ জুমাদাল আখেরাহ, ১৪৪৫ হি. মোতাবেক ১২ জানুয়ারি, ২০২৪ মদীনা মুনাওয়ারার আল-মাসজিদুল হারামে (মসজিদে নববী) জুমআর খুৎবা প্রদান করেন শায়খ ড. আহমাদ বিন তালেব বিন হামীদ হাফিযাহুল্লাহউক্ত খুৎবা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-এর আরবী বিভাগের সম্মানিত পিএইচডি গবেষক আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ। খুৎবাটি ‘মাসিক আল-ইতিছাম’-এর সুধী পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হলো।]

প্রথমখুৎবা

সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য, যিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন এবং তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই এবং আমাদের নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, যিনি সুসংবাদদাতা, সতর্ককারী ও উজ্জ্বল প্রদীপ। হে আল্লাহ! আপনি আপনার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ ও ছাহাবীদের উপর ছালাত, সালাম ও বরকত অবতীর্ণ করুন।

অতঃপর, আপনারা আল্লাহকে তাঁর পছন্দনীয় আমল সম্পাদন করা ও অপছন্দনীয় আমল পরিহার করার মাধ্যমে ভয় করে চলুন। কেননা তাক্বওয়া অবলম্বনের মধ্যেই পার্থিব সুখ ও পরকালে চিরস্থায়ী জান্নাত লাভের সফলতা নিহিত রয়েছে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! আপনারা অন্তর সংশোধনকারী আমল দ্বারা নিজেদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করুন এবং সম্ভাব্য আমল বিনষ্টকারী বিষয় থেকে এটাকে হেফাযতে রাখুন; কেননা অন্তর হচ্ছে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নিয়ন্ত্রক। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জেনে রাখো! শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখো! সে গোশতের টুকরাটি হলো অন্তর’।[1]

জেনে রাখুন! অন্তরের বড় ব্যাধিসমূহের অন্যতম হলো গাফলতি। মূলত চরম গাফলতির কারণেই কাফের ও মুনাফেক্বরা দুর্ভাগা হয়েছে এবং এটি তাদের স্থায়ীভাবে জাহান্নামী হওয়াকে অবধারিত করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(কাফেরদের উপর আল্লাহর ক্রোধ ও মহা আযাব) এ জন্য যে, তারা আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনকে পছন্দ করেছে। আর নিশ্চয় আল্লাহ কাফের ক্বওমকে হেদায়াত করেন না। এরাই তারা, যাদের অন্তরসমূহ, শ্রবণসমূহ ও দৃষ্টিসমূহের উপর আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তারাই হচ্ছে গাফেল’ (আন-নাহল, ১৬/১০৭-১০৮)। একজন মুসলিমের দ্বারা কল্যাণকর কাজ করা ও অকল্যাণকর কাজ হতে নাজাতের পথ অবলম্বনের ক্ষেত্রে গাফলতি হতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর সকলের জন্যই তাদের আমল অনুসারে মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ যেন তাদেরকে তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দিতে পারেন। আর তাদের প্রতি কোনো যুলম করা হবে না’ (আল-আহক্বা, ৪৬/১৯)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘একদল লোক সবসময় (ছালাতে) দেরি করে এসে পিছনে দাঁড়ায়। আল্লাহর তাদেরকে (নিজ রহমত থেকে) পিছনে রাখবেন’।[2]

নাজাতের উপকরণ গ্রহণে উদাসীনতার শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমাদের উপর যে বিপদ-আপদ আসে তা তোমাদের হাত যা অর্জন করেছে তার কারণে এবং অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন’ (আশ-শূরা, ৪২/৩০)। এই আয়াতে মুসলিমদের ক্ষমা করার কথা বলা হয়েছে, কাফেরদের নয়। কেননা কাফেরদের অপরাধ কুফরী ত্যাগ করা ব্যতীত ক্ষমা করা হয় না।

গাফলতির অর্থ হলো ইচ্ছাকৃতভাবে কল্যাণ কামনা ছেড়ে দেওয়া এবং উপকারী জ্ঞান ও সৎকর্ম থেকে অন্তর শূন্য হওয়া। এটাই হলো ধ্বংসকারী চরম গাফলতি। বস্তুত, এ ধরনের গাফলতি কাফের ও মুনাফেক্বদের মাঝে বিরাজ করে। কারো মাঝে গাফলতি থাকলে সে আল্লাহর নিকট তওবা করা ব্যতীত কখনোই সফলকাম হবে না। যখন গাফলতি বা উদাসীনতা কোনো ব্যক্তির উপর প্রাধান্য বিস্তার করে তখন সে কেবল ধারণা ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করে থাকে এবং এটাকে শয়তান তার নিকট সুশোভিত করে তোলে। এ জাতীয় গাফলতির কারণেই আল্লাহ তাআলা কাফের এবং মুনাফেক্বদের দুনিয়া ও আখেরাতে শাস্তি প্রদান করবেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর অবশ্যই আমি সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য বহু জিন ও মানুষকে। তাদের রয়েছে অন্তর, তা দ্বারা তারা বুঝে না; তাদের রয়েছে চোখ, তা দ্বারা তারা দেখে না এবং তাদের রয়েছে কান, তা দ্বারা তারা শুনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো; বরং তারা অধিক পথভ্রষ্ট। তারাই হচ্ছে গাফেল’ (আল-রাফ, /১৭৯)

মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর অধিকাংশ মানুষই আমার নিদর্শনাবলি সম্পর্কে নিশ্চিতরূপেই উদাসীন’ (ইউনুস, ১০/৯২)। তিনি আরো বলেন, ‘আর তাদেরকে সতর্ক করে দাও পরিতাপ দিবস সম্পর্কে, যখন সব বিষয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে; অথচ তারা উদাসীনতায় বিভোর হয়ে রয়েছে এবং তারা ঈমান আনছে না’ (মারইয়াম, ১৯/৩৯)

গাফলতি একজন মুসলিমের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ, যা তার জন্য ধ্বংস ডেকে আনে এবং কল্যাণের পথসমূহ রুদ্ধ করে দেয়। গাফলতির অসংখ্য ক্ষতিকর ও ব্যাপক অনিষ্টকর দিক রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে; ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করেছেন। তারাই তো ফাসেক্ব’ (আল-হাশর, ৫৯/১৯)। তিনি আরো বলেন, ‘আর আপনি আপনার রবকে নিজ মনে স্মরণ করুন সবিনয়ে, ভীতি সহকারে ও অনুচ্চ স্বরে, সকালে ও সন্ধ্যায়। আর উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না’ (আল-রাফ, /২০৫)

ঈমান, পরিপূর্ণ তাওহীদের জ্ঞান এবং শরীআতে ওয়াজিব ও মুস্তাহাব বিষয় সম্পর্কে উদাসীনতার কারণে একজন মুসলিম পূর্ণ তাওহীদের বিষয়ে ত্রুটি করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের বেশির ভাগই আল্লাহর উপর ঈমান রাখে, তবে তাঁর সাথে (ইবাদতে) শিরক করা অবস্থায়’ (ইউসুফ, ১২/১০৬)

ছালাতের রুকন ও ওয়াজিবসমূহ জানার ব্যাপারে উদাসীনতার কারণে ছালাতে ত্রুটি ঘটে। যেমন আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ব্যক্তিকে তাড়াহুড়া করে ছালাত আদায় করতে দেখলেন। লোকটি ছালাত আদায় শেষে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম প্রদান করলে তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, ‘তুমি ফিরে গিয়ে আবার ছালাত আদায় করো, কেননা তুমি ছালাত আদায় করোনি’। এভাবে তিনবার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ছালাতে ধীরস্থিরতা অবলম্বনের শিক্ষা দিলেন।[3] জামাআতের সাথে ছালাত আদায়ে গাফলতি করা কোনো ব্যক্তির মধ্যে জামাআতের সাথে ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে শিথিলতা তৈরি করে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মুনাফেক্বদের জন্য ফজর ও এশার ছালাত অপেক্ষা অধিক ভারী ছালাত আর নেই। এ দুই ছালাতের কী ফযীলত, তা যদি তারা জানত; তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হতো’।[4]

যাকাতের ছওয়াব ও তা প্রদানে অস্বীকৃতির শাস্তি সম্পর্কে গাফলতি থাকার কারণে তা আদায়ে অবহেলার সৃষ্টি হয়। অথচ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন; কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করেনি, ক্বিয়ামতের দিন তার সম্পদকে (বিষের তীব্রতার কারণে) টাক মাথাবিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের দুই পার্শ্ব কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত মাল’।[5]

মাতা-পিতার অবাধ্যতার শাস্তি সম্পর্কে গাফলতির কারণে সন্তান অবাধ্য হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তিন শ্রেণির লোক জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, দাইয়ূছ (যে তার স্ত্রী, কন্যা ও বোনের চরিত্রহীনতা ও নোংরামিতে চুপ থাকে এবং বাধা দেয় না) এবং পুরুষের বেশধারী নারী’।[6]

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি সম্পর্কে উদাসীনতার কারণে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর উপর শাস্তি আপতিত হবে। যুবায়ের ইবনু মুতঈম রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[7]

যুলমের শাস্তি সম্বন্ধে গাফলতির কারণে যমীনে যুলম বৃদ্ধি পায়। ফলে যমীনে রক্তপাত ঘটে, অন্যের সম্পদ ছিনতাই করা হয়, সম্ভ্রমহানি ঘটে, বাস্তুচ্যুতি হয়, যমীন জনশূন্য হয়, প্রাণী ও শস্যক্ষেত্র ধ্বংস করা হয় এবং সর্বত্র ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করে। অতঃপর যালেমের উপর শাস্তি নাযিল হয়। যেমন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা যালেমদের ছাড় দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন তাদেরকে ধরেন, তখন আর ছাড়েন না’। (বর্ণনাকারী বলেন) এরপর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত পাঠ করেন, ‘আর এরকমই বটে আপনার রবের পাকড়াও, যখন তিনি কোনো জনপদবাসীকে পাকড়াও করেন তাদের যুলমের দরুন। নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও বড় যন্ত্রণাদায়ক, অত্যন্ত কঠিন’ (আল-হূদ, ১১/১০২)[8]

অতএব, গাফলতি হলো সকল অনিষ্টের মূল এবং এর কারণে একজন মুসলিম প্রভূত প্রতিদান থেকে বঞ্চিত হয়। মুসলিম ব্যক্তির মাঝে সমস্ত ত্রুটিবিচ্যুতি উদাসীনতার দ্বার দিয়েই প্রবেশ করে। কাজেই তা থেকে নাজাত পাওয়ার অর্থই হলো পরম সৌভাগ্য লাভ করা।

بارَك اللهُ لي ولكم في القرآن العظيم، ونفعني وإيَّاكم بما فيه...

দ্বিতীয়খুৎবা

যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র আল্লার জন্যই। দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক আল্লাহর শ্রেষ্ঠ জীব মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর। তাঁর পরিবারবর্গ, ছাহাবী এবং তাঁর সকল অনুসারীদের উপর শান্তির ধারা অবতীর্ণ হোক।

আল্লাহর বান্দাগণ! গাফলতি হতে মুক্তি ও বাঁচার উপায় হলো গাফলতির সকল উপকরণ হতে বিরত থাকা, দুনিয়ার প্রতি পরিপূর্ণ ঝুঁকে না পড়া, যা ব্যক্তিকে আখেরাতবিমুখ করে দেয়।

গাফলতি এড়িয়ে চলতে মুমিনের অন্যতম সহায়ক হলো:

(১) আল্লাহর ভয় ও একাগ্রতার সাথে জামাআতে ছালাত আদায় করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমার স্মরণার্থে ছালাত ক্বায়েম করুন’ (ত্ব-হা, ২০/১৪)

(২) গাফলতি থেকে মুক্তিলাভের অন্যতম উপায় হলো সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকির করা। কেননা যিকির নফসকে জীবিত রাখে, শয়তানকে বিতাড়িত করে, একে পবিত্র করে, ইবাদত পালনে শরীরকে শক্তিশালী করে এবং সর্বোপরি নিয়মিত যিকির বান্দাকে পাপের কাজ থেকে হেফাযত করে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে আল্লাহর যিকির করে আর যে যিকির করে না, উভয়ের উদাহরণ মৃত ও জীবন্ত মানুষের মতো’।[9]

(৩) গাফলতি থেকে বান্দাকে রক্ষা করতে পারে নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত। এটি অন্তরের আরোগ্য, ভালো কাজে উৎসাহ প্রদান এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখার মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি কুরআন নাযিল করি যা মুমিনদের জন্য শেফা ও রহমতস্বরূপ’ (বনী ইসরা, ১৭/৮২)

(৪) আলেম ও সৎলোকের সাহচর্য লাভ করা। কেননা তারা আল্লাহর বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দেন এবং শারঈ ইলম শিক্ষা দেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি দৃঢ় চিত্ত হয়ে তাদের সাথে অবস্থান করো, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে আহ্বান করে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের সন্ধানে। পার্থিব জীবনের শোভা ও চাকচিক্য কামনায় তুমি তাদের থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না। তুমি তার আনুগত্য করো না, যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ হতে উদাসীন করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির আনুগত্য করে আর যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমালঙ্ঘনমূলক’ (আল-কাহফ, ১৮/২৮)

(৫) অবান্তর ও অনৈতিক বৈঠকে অংশগ্রহণ না করা এবং খারাপ বন্ধুর সংশ্রব হতে বিরত থাকা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তিনি তো কিতাবে তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করা হচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে, তাহলে তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় নিবিষ্ট হয়; তা না হলে তোমরাও তাদের মতো হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফেক্ব ও কাফেরদের সকলকে জাহান্নামে একত্রকারী’ (আন-নিসা, ৪/১৪০)

(৬) দুনিয়ার তুচ্ছতা ও বিলুপ্তির কথা স্মরণে রাখা এবং দুনিয়ার সৌন্দর্য ও চাকচিক্যে আখেরাতবিমুখ না হওয়া। কেননা তা অধিকাংশ মানুষকে আখেরাত ও সঠিক পথ অনুসরণ হতে নিবৃত রাখে।

(৭) গুনাহ ও পাপের কাজ থেকে বিরত থাকা, কেননা গাফলতির কারণেই বান্দা সকল ধরনের পাপে পতিত হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে শয়তানের স্পর্শে, তাদের মনে কুমন্ত্রণা জাগলে তারা আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন তাদের ঈমান-চক্ষু খুলে যায়। কিন্তু তাদের (অর্থাৎ শয়তানের) সঙ্গী-সাথীরা (কাফের ও মুনাফেক্বরা) তাদেরকে ভ্রান্ত পথে নিয়ে যায় আর এ ব্যাপারে তারা চেষ্টার কোনো ত্রুটি করে না’ (আল-রাফ, ৭/২০১-২০২)

(৮) মৃত্যু ও তৎপরবর্তী অবস্থাকে স্মরণ করা। কেননা এটি উত্তম উপদেশদাতার ন্যায়। যে ব্যক্তি বারবার মৃত্যুর কথা স্মরণ করবে; তার অন্তর পরিশুদ্ধ হবে, আমল হবে পবিত্র এবং সে গাফলতি থেকে মুক্ত হবে। মৃত্যুর সময়ে মুমিন ব্যক্তি আনন্দিত হয় এবং ফাসেক্ব অনুশোচনা করে ও পুনরায় দুনিয়াতে ফিরে আসতে চায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু আসে, তখন সে বলে, হে আমার রব! আমাকে ফেরত পাঠান, যেন আমি সৎকাজ করতে পারি যা আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম’ (আল-মুমিনূ, ২৩/৯৯-১০০)


[1]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৯।

[2]. ছহীহ মুসলিম, হা/৪৩৮।

[3]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৫৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৩৯৭।

[4]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৫৭।

[5]. ছহীহ বুখারী, হা/১৪০৩।

[6]. নাসাঈ, হা/২৫৬৪; সিলসিলা ছহীহা, হা/৬৭৩, ৬৭৪, হাসান।

[7]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৮৪; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৫৬।

[8]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৬৮৬; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৮৩।

[9]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৪০৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৭৯।

Magazine