ঈমান-আক্বীদা→ তাওহীদ
ঈমান-আক্বীদা→ নবী-রাসূল
প্রশ্ন (১) : মহান আল্লাহ কি কখনো মুহূর্তের জন্য ও পৃথিবীতে এসেছেন?
প্রশ্নকারী : আব্দুর রহমান
দিনাজপুর।
উত্তর : মহান আল্লাহ আরশে সমুন্নত (সূরা ত্বহা, ৪)। তবে তিনি পৃথিবীতে নয়। বরং প্রতি রাতেই দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে নেমে আসেন। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন, কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন যে, আমার নিকট চাইবে? আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব (ছহীহ বুখারী, হা/১১৪৫; ছাহীহ মুসলিম, হা/৭৫৮)। তবে তাঁর এই আসমানে অবতরণের ধরন ও প্রকৃতি মানুষের জ্ঞানের বহির্ভুত বিষয়। বরং তার পবিত্র স্বকীয় সত্তার জন্য যেভাবে শোভন সেই ভাবেই সেটা হয়ে থাকে।
প্রশ্ন (২) : ঈসা আলাইহিস সালাম-এর কোনোসন্তানছিলকি? পুনরায়যখনতিনিপৃথিবীতেআসবেনতখনকিতিনিবিবাহ-শাদীকরবেন?
প্রশ্নকারী : জুয়েল বিন মনিরুল ইসলাম
পত্নীতলা, নওগাঁ।
উত্তর : কুরআন-হাদীছে ঈসা আলাইহিস সালাম-এর বিবাহ করা না করা ও তার সন্তানাদী সম্পর্কে কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না। আর এটা জানার মধ্যে আমলের ক্ষেত্রে বিন্দু পরিমাণ কোনো লাভও নেই। বিধায় এই বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা বা অনুসন্ধান করা একেবারেই নিঃস্প্রয়োজন।
ঈমান-আক্বীদা→মতবাদ
প্রশ্ন: (৩) কোন বিষয়ে মুজতাহিদ ইমামগণের মধ্যে ইখতিলাফ পরিলক্ষিত হলে করণীয় কী?
উত্তর : এমতাবস্থায় বিষয়টিকে কিতাব ও সুন্নাহর দিকে ফিরিয়ে দিতে হবে। অতঃপর দলীলের আলোকে যেটি অগ্রগণ্য হবে, সেটাকে গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘অতঃপর কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা
উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও রাসূলের নিকট, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতে ঈমান এনে থাক’ (আন-নিসা, ৫৯)। উল্লেখ্য, যদি নির্ভরযোগ্য আলেমদের বক্তব্য পরস্পর বিরোধী হয়, তাহলে অপেক্ষাকৃত বেশী বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য ও জ্ঞানী আলেমের বক্তব্য গ্রহণ করতে হবে। বিষয়টি ঠিক ঐ রোগীর মত, যে তার চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য ও জ্ঞানী ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করে। দুনিয়াবী বিষয়ে যদি এত বেশী সতর্কতা অবলম্বন করা হয়, তাহলে দ্বীনী বিষয়ে আরো কত বেশী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত! (মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ইবনু উছায়মীন, ২৬/৪৮১-৪৮৫ পৃ.; মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ইবনু বায, ২৪/৭১-৭২ পৃ.)। তবে এ ধরণের ইখতিলাফী মাসআলার সংখ্যা খুবই কম।
প্রশ্ন (৪) : জিন জাতিকে আগে সৃষ্টি করা হয়েছে? নাকি ফেরেশতাদেরকে? দলীল সহকারে বিস্তারিত জানাবেন।
প্রশ্নকারী : আব্দুল কুদ্দুস
চিরিরবন্দর, দিনাজপুর।
উত্তর : জিন জাতির পূর্বে ফেরেশতাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কেননা তারা জিন জাতির আমল নামা অবলকন করে ছিলেন। আল্লাহ তাআলা যখন মানব জাতিকে সৃষ্টি করার ইচ্ছা ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন, তখন জিন জাতির অপকর্ম এবং পৃথিবীতে তাদের বিপর্যয় সৃষ্টির অভিজ্ঞতা থেকে তারা মানব সৃষ্টি না করার মতামত ব্যক্ত করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বললেন, আমি পৃথিবীতে পরবর্তী জাতি তথা খলিফা সৃষ্টি করতে চাই। ফেরেশতারা বল, আপনি কি এমন জাতি সৃষ্টি করবেন? যারা সেখানে বিসৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে (আল-বাক্বারা, ৩৯)। যেহেতু ফেরেশতাদের একটি দলের কাজ হচ্ছে, জিন ও মানব জাতির আমল নামা লিখা। সুতরাং জিন ও মানব জাতির পূর্বে ফেরেশতাদের সৃষ্টি।
কুরআন→ তেলাওয়াত
প্রশ্ন (৫) : ছালাতেরপরমসজিদেকুরআনতেলাওয়াতশুরুহয়।এমতাবস্থায়যদিসেখানথেকেচলেআসাহয়তাহলেকিপাপহবে?
প্রশ্নকারী : রাশিদুল ইসলাম আওলাদ
হাতিবান্ধা, লালমণিরহাট।
উত্তর : না, পাপ হবে না। মহান আল্লাহ বলেন, অতঃপর যখন ছালাত শেষ হবে তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিযিক্ব) তালাশ করো’...(জুম‘আহ, ৬২/১০)।
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ছালাত শেষে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়ে রিযিক্ব অন্বেষণের আদেশ করেছেন। তাই কর্মব্যস্ত মানুষ হলে সেখান থেকে চলে যাওয়াতে কোনো দোষ নেই। তবে বিশেষ কোনো প্রয়োজন না থাকলে সেখানে বসে কুরআনের তেলাওয়াত শুনা, কুরআন শেখা, শিখানো অথবা তেলাওয়াত করা ভালো। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা তা মনোযোগ সহকারে শুনো এবং চুপ থাকো’ (সূরা ইনশিক্বাক্ব ২১)। উছমান রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি সর্বত্তোম যে কুরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫০২৭; আবূ দাঊদ, হা/১৪৫২, মিশকাত, হা/২১০৯)।
হাদীছ→উছূলুল হাদীছ
প্রশ্ন (৬) : মাশহুর, গারীব ও আযীয হাদীছ কি গ্রহণযোগ্য বা মানা যাবে?
প্রশ্নকারী : আব্দুল হাসিব
শেরপুর, বগুড়া।
উত্তর : এ পরিভাষাগুলো সনদে রাবীর সংখ্যা কম- বেশীর ভিত্তিতে সজ্ঞায়িত হয়ে থাকে। হাদীছ মাক্ববুল (গ্রহণযোগ্য) বা মারদুদ (প্রত্যাখ্যাত) হওয়ার সাথে এগুলোর কোন সম্পর্ক নেই। বরং এ তিনটি পরিভাষা মাক্ববুল বা মারদুদ উভয়টি হতে পারে। যদি মাক্ববুলের অন্তর্ভূক্ত হয় তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে। আর যদি মারদুদের অন্তর্ভূক্ত হয় তাহলে তা প্রত্যাখ্যাত হবে (বিস্তারিত জানার জন্য তাইসীরুল মুছত্বলাহিল হাদীছ, মুছতালাহুল হাদীছ বা অন্য কোন উছূলে হাদীছের কিতাব পড়ুন)।
পবিত্রতা→ মাসিক-নিফাস-রক্তপ্রদর
প্রশ্ন (৭) : জনৈকমহিলারবর্তমানেহায়েযেরমেয়াদচলছেপ্রায়১৭/১৮দিনপর্যন্ত।তারজন্যছালাতেরবিধানকী?
প্রশ্নকারী : আব্দুল হামীদ
পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর : পূর্ব হতে হায়েযের যে নির্দিষ্ট সময় রয়েছে তা অতিক্রম হওয়ার পরও যদি কোন মহিলার রক্তস্রাব দেখা যায় তাহলে তা ইস্তেহাযা হিসাবে গণ্য হবে। এমতাবস্থায় প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য ওযূ করে ছালাত আদায় করবে। উরওয়া ইবনু যুবাইর রাযিয়াল্লাহু আনহু ফাতিমা বিনতে আবু হুবাইশ রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণনা করেন যে, ফাতিমা সর্বদা ইস্তেহাযায় আক্রান্ত হতেন। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন, যখন হায়েযের রক্ত হয় তখন তা কালো রক্ত হয়, যা সহজে চেনা যায়। এমতাবস্থায় ছালাত হতে বিরত থাকবে। যখন ভিন্ন রক্ত হবে, তখন ওযূ করবে এবং ছালাত আদায় করবে। কেননা এটা শিরার রক্ত (আবুদাঊদ, হা/২৮৬; নাসাঈ, হা/২১৫; মিশকাত, হা/৫৫৮; ফিকহুস সুন্নাহ, ১/৬৮ পৃ.)। উম্মু আতিয়্যা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মেটে ও হলুদ রং হায়েযের মধ্যে গণ্য করতাম না (ছহীহ বুখারী, ‘হায়েয’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ‘হায়েযের দিনগুলো ছাড়া হলুদ এবং মেটে রং দেখা’)।
প্রশ্ন (৮) : নিফাস চলাকালীন স্ত্রী মিলন ঘটলে তার হুকুম কী?
প্রশ্নকারী : ফেরদাউস আলম
উত্তর : হায়েয ও নেফাস চলাকালীন সময়ে স্ত্রী সহবাস করা হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনার কাছে লোকেরা ঋতু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, এটা অপবিত্র। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী গমন থেকে বিরত থাক’ (সূরা আল-বাক্বারাহ ২২২)। এক্ষণে কেউ যদি এই নিষিদ্ধ সময় তথা হায়েয এবং নেফাস চলাকালীন সময় সহবাস করে ফেলে তাহলে তাকে তওবা করতে হবে এবং এক অথবা অর্ধ দ্বীনার সমপরিমাণ স্বর্ণ বা স্বর্ণের বর্তমান বাজার মূল্য ছাদাক্বা করতে হবে। ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে হায়েয অবস্থায় সঙ্গম করল রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে বলেন, সে এক দ্বীনার বা অর্ধ দ্বীনার ছাদাক্বা করবে (আবূ দাঊদ, হা/২৬৪; নাসঈ, হা/২৮৯; ইবনু মাজাহ, হা/৬৪০)। উল্লেখ্য যে, এক দ্বীনার স্বর্ণ মুদ্রা সমান ৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণ। আর এক গ্রাম স্বর্ণের বর্তমান বাজার মূল্য যা হবে তার সাথে উক্ত সংখ্যা গুণ করলে এক দ্বীনার স্বর্ণের মূল্য বের হবে।
প্রশ্ন (৯) : আমাদের সমাজে মহিলারা তাদের হায়েয চলাকালীন অন্য কোনো মৃত মহিলাকে দেখতে ও গোসল দিতে পারে না। এ রকম রীতি কি ঠিক?
প্রশ্নকারী : রুমা আকতার
উত্তর : এধরণের রীতিনীতি ঠিক নয়। এগুলো সামাজিক কুসংস্কারমাত্র। কেননা ঋতুবতী অবস্থায় ছালাত, ছিয়াম, সহবাস ও স্পর্শ করে কুরআন তেলাওয়াত ব্যতীত অন্য কোন কাজ নিষিদ্ধ নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনার কাছে লোকেরা ঋতু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, এটা অপবিত্র। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী গমন থেকে বিরত থাক’ (সূরা আল-বাক্বারাহ ২২২)। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ঋতু অবস্থায় আমাদেরকে ছিয়াম ক্বাযা করার এবং ছালাত ছেড়ে দেয়ার আদেশ দেওয়া হত (ছহীহ মুসলিম, হা/৩৩৫; মিশকাত, হা/২০৩২)।
ইবাদত→ ছালাত
প্রশ্ন (১০) : হিন্দুদেরবাড়ীতেছালাতআদায়করলেছালাতহবেকি?
প্রশ্নকারী : জুয়েল বিন মনিরুল ইসলাম
পত্নীতলা, নওগাঁ।
উত্তর : স্থান পবিত্র হলে এবং সামনে কোন ছবি, মূর্তি না থাকলে অমুসলিমদের বাড়ীতে ছালাত আদায় করা যায়। কেননা ছালাতের নিষিদ্ধ স্থানগুলো হল, (১) কবরস্থান (২) গোসলখানা (৩) উট বাঁধার স্থান ও (৪) অপবিত্র স্থান। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যমীন সর্বত্রই মসজিদ, কবরস্থান ও গোসলখানা ব্যতীত (আবুদাঊদ, হা/৪৯২; তিরমিযী, হা/৩১৭; মিশকাত, হা/৭৩৭)। অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উট বাঁধার স্থানে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন (তিরমিযী, হা/৩৪৮; মিশকাত, হা/৭৩৯)। উল্লেখ্য যে, মন্দিরের চত্বরেও ছালাত আদায় করা যায়, যদি সেখানে কোন ছবি ও মূর্তি না থাকে। ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা তোমাদের গীর্জায় ছালাত আদায় করি না এজন্য যে, সেখানে মূর্তি থাকে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু এমন গীর্জায় ছালাত আদায় করেছেন, যেখানে কোন ছবি বা মূর্তি ছিল না’(ছহীহ বুখারী, ১/৬২ পৃঃ ‘গীর্জায় ছালাত আদায় করা’ অনুচ্ছেদ)। তবে এর অর্থ এটা নয় যে, গীর্জা বা মন্দিরকে মসজিদ বানিয়ে নিতে হবে। কেননা স্থায়ীভাবে কোন স্থানকে মসজিদ হিসাবে গ্রহণ করতে গেলে ঐ স্থানটিকে মসজিদের নামে ওয়াকফ্ করতে হবে (নাসাঈ, হা/৩৩৭২-৭৩)।
প্রশ্ন (১১) : ছবিযুক্তটাকাপকেটেনিয়েছালাতআদায়করলেউক্তছালাতকবুলহবেকি?
প্রশ্নকারী : জুয়েল বিন মনিরুল ইসলাম
পত্নীতলা, নওগাঁ।
উত্তর : ছবিযুক্ত টাকা পকেটে থাকলে ছালাতের কোন ক্ষতি হবে না। কেননা সেটা চোখে দেখা যায় না। একদা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা-কে বললেন, তুমি এ ছবি সম্বলিত চাদরটি আমার সামনে থেকে সরিয়ে নাও। এর ছবি আমার ছালাতের একাগ্রতা নষ্ট করে (ছহীহ বুখারী, হা/৩৭৪; মিশকাত, হা/৭৫৮)। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছবি সম্বলিত কাপড়টি সরিয়ে রাখতে বলেছেন। কিন্তু ঐ ছালাত দ্বিতীয়বার আদায় করেননি। সুতরাং, ছালাতের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে কাপড়ে ছবি থাকলে অথবা খোলা স্থানে টাকা বা ছবি থাকলে ছালাত আদায় করা উচিত নয়। কেননা যেখানে ছবি থাকে সেখানে ফেরেশতা প্রবেশ করে না (ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৪৯; ছহীহ মুসলিম, হা/২৬; মিশকাত, হা/৪৪৮৯)।
প্রশ্ন (১২) : একাকীফজর, মাগরিবওএশারছালাতআদায়করলেনিম্নস্বরেক্বিরাআতকরাযাবেকি?
প্রশ্নকারী : হারুর
নীলফামারী।
উত্তর : নীরবে পড়া যাবে না; বরং একাকী হলেও স্বরবে পড়তে হবে। রাতের জেহরী ছালাতগুলো রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবুবকর রাযিয়াল্লাহু আনহু ও ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু একাকী স্বরবে পড়তেন। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের ছালাতে কোন কোন সময় একটু উচ্চস্বরে ক্বিরআত করতেন আবার কোন কোন সময় নিম্নস্বরে (আবুদাঊদ, হা/১৩২৮, সনদ হাসান; মিশকাত, হা/১২০২)। তিনি ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে নিম্নস্বরে ও আবুবকর রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে উচ্চস্বরে ক্বিরআত পড়ার নির্দেশ দেন (আবুদাঊদ, হা/১৩২৯; মিশকাত, হা/১২০৪)। তবে মাসবুক ব্যক্তি নিম্নস্বরে ক্বিরাআত পড়বে। যাতে অন্য মুছল্লীর সমস্যা না হয় (ফাতওয়া নাজনা দায়েমা ৬ষ্ঠ খ. পৃ. ৪১১-৪১৫)।
প্রশ্ন (১৩) : তাহাজ্জুদেরজন্যউত্তমসময়কখন? ফজরেরআযানেরপূর্বক্ষণেতাহাজ্জুদওবিতরআদায়করাযাবেকি?
প্রশ্নকারী : জেসমিন
রামপুরা, জয়পুরহাট।
উত্তর : তাহাজ্জুদ ছালাত রাত্রের শেষ তৃতীয়ংশে পড়া উত্তম। সুবহে ছাদেক হওয়ার আগ পর্যন্ত বা আযানের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদ ও বিতর পড়তে পারবে। ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি আমার খালা মায়মুনা-এর কাছে রাত কাটিয়েছিলাম। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পরিবার বর্গের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপ আলোচনা করে শুয়ে পড়লেন। তারপর রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশে তিনি উঠলেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে পাঠ করলেন
إِنَّ فِىْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِأُوْلِي الْأَلْبَابِ .
এরপর দাঁড়ালেন এবং মিসওয়াক করে ওযূ করলেন। এরপর তিনি এগারো রাক‘আত ছালাত আদায় করলেন। এরপর বেলাল আযান দিলেন তিনি দু’রাকআত ছালাত আদায় করলেন। তারপর বের হলেন এবং ফজরের ছালাত আদায় করলেন (ছহীহ বুখারী, হা/৪৫৬৯; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৬৩)।
প্রশ্ন (১৪) : বিতর ছালাত পড়তে ভুলে গেলে করণীয় কী?
প্রশ্নকারী : জেসমিন
রামপুরা, জয়পুরহাট।
উত্তর : যদি কেউ বিতর পড়তে ভুলে যায় অথবা বিতর না পড়ে ঘুমিয়ে যায়, তবে স্মরণ হলে কিংবা রাতে বা সকালে ঘুম হতে জেগে উঠার পরে সুযোগ মত তা আদায় করবে। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিতরের ছালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ল অথবা আদায় করতে ভুলে গেল সে যেন যখনই স্মরণ হয় বা ঘুম হতে সজাগ হয়ে আদায় করে নেয় (আবূ দাঊদ, হা/১৪৩১; তিরমিযী, হা/৪৬৫; ইবনু মাজাহ, হা/১১৮৮; মিশকাত, হা/১২৭৯)। অন্যান্য সুন্নাত-নফলের ন্যায় বিতরের ক্বাযাও আদায় করা যায় (ফিক্বহুস সুন্নাহ, ১/১৪৮ পৃ.; নায়লুল আওত্বার ৩/৩১৮-১৯ পৃ.)।
প্রশ্ন (১৫) : যারা অনেক দিন থেকে অসুস্থতার কারণে শয্যাশায়ী হয়ে ছালাত আদায় করতে পারে না তারা যদি ঐ অবস্থায় মারা যায় তাহলে কি ঐ ছালাতের ফারযিয়াত আদায়ের জন্য তাদের পক্ষ থেকে কোনো দান-ছাদাক্বা করা যাবে?
প্রশ্নকারী : কামরুজ্জামান
বুড়িচং, কুমিল্লা।
উত্তর : অসুস্থ্ ব্যক্তির দুইটি অবস্থা হতে পারে- ১. অসুস্থ্ ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। ২. অসুস্থ্ ব্যক্তির জ্ঞান থাকা। মানুষ যতই অসুস্থ্য হোক না কেন যদি তার জ্ঞান থাকে তাহলে ছালাতের সময় হলে অবশ্যই তাকে ছালাত আদায় করতে হবে। নিজে ওযূ করতে অক্ষম হলে অন্যের সাহায্যে ওযূ করে ছালাত আদায় করবে। পানি স্পর্শে সমস্যা হলে তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করবে। দাঁড়িয়ে ছালাত আদায়ে অক্ষম হলে যেভাবে সুবিধা সেভাবে ছালাত আদায় করবে। ইমরান ইবনু হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার অর্শরোগ ছিল। তাই রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে ছালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম, তিনি বললেন, দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করবে, তাতে সমর্থ না হলে বসে; যদি তাতেও সক্ষম না হও তাহলে কাত হয়ে শুয়ে’ (ছহীহ বুখারী, হা/১১১৭)। বিশিষ্ট তাবেঈ আতা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, কিবলার দিকে মুখ করতে অক্ষম ব্যক্তি যে দিকে সম্ভব সে দিক মুখ করে সালাত আদায় করবে (ছহীহ বুখারী, অধ্যায়-১৯)। সুতরাং অসুস্থ্য ব্যক্তিকে ছালাত আদায় করাতে সকল প্রকার সহযোগিতা করা একান্ত কর্তব্য। আর যদি অজ্ঞান হয় তাহলে তার জন্য ছালাতের বিধান প্রযোজ্য নয় (তিরমিযী, হা/১৪২৩; আবূ দাঊদ, হা/৪৪০৩; মিশকাত, হা/৩২৮৭)। উল্লেখ্য যে, কেউ ছালাত আদায় না করে মারা গেলে তার পক্ষ থেকে কাফফারার কোনো বিধান নেই।
প্রশ্ন (১৬) : আমাদের (মেয়েরা) হোস্টেলে ৪ জনকে এক রুমে থাকতে হয়। ৩ জন মুসলিম ও ১ জন হিন্দু। হিন্দু মেয়েটি রুমে ছোট একটা মূর্তি রাখে ও সন্ধ্যায় মাগরিবের সময় ধুপকাঠি জ্বালিয়ে পূজা করে। আমরা সেই রুমেই ছালাত আদায় করি। কেননা হোস্টেলে মেয়েদের ছালাতের জন্য আলাদা কোনো রুম নেই। আমাদের ছালাত কি হচ্ছে? নাকি বাতিল হচ্ছে? এক্ষেত্রেকরণীয়কী?
প্রশ্নকারী : সুমাইয়া ইয়াসমিন
পুঠিয়া, রাজশাহী।
উত্তর : ইসলামে ছবি-মূর্তি একটি নিষিদ্ধ হারাম বিষয়। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের পর সর্বপ্রথম মক্কার ভিতর যে ৩১৩টি মূর্তি ছিল তা ভেঙ্গে চৌচির করেন এবং মুসলিমদের ইবাদতের জন্য মক্কাকে মূর্তি মুক্ত করেন। যে ঘরে মূর্তি বা ছবি থাকে সে ঘরে আল্লাহর রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। এই মর্মে আবূ তালহা রাযিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ঘরে কুকুর এবং প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে ফেরেশতাগণ প্রবেশ করে না’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৪৯; মিশকাত, হা/৪৪৮৯)। অত্র হাদীছ এবং ঘটনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, একজন মুসলিমের জন্য অবশ্য কর্তব্য যে, সে যে ঘরে বসবাস করবে সে ঘরকে ছবি এবং মূর্তি মুক্ত করা। জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘরের দরজায় ঝুলানো কারুকার্য খচিত পর্দায় ছবি এবং বাসায় কুকুর থাকার কারণে প্রবেশ না করে ঘুরে চলে যায় (তিরমিযী, হা/২৯৭০; আবূ দাঊদ, হা/৪১৫৮; মিশকাত, হা/৪৫০১)। উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, আমরা তোমাদের গির্জাসমূহে প্রবেশ করি না, কারণ তাতে মূর্তি রয়েছে। ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা গির্জায় ছালাত আদায় করতেন। তবে যেগুলোতে মূর্তি রয়েছে সেগুলোতে নয় (ছহীহ বুখারী, হা/৫৪)। উল্লিখিত হাদীছসমূহ দ্বারা স্পষ্টত প্রমাণ হয় যে, যে ঘরে প্রকাশ্য ছবি মূর্তি থাকবে সে ঘরে ছালাত হবে না। অতএব ইবাদতের জন্য ঘরকে ছবি মূর্তি মুক্ত করতে হবে। অন্যথায় রুম পরিবর্তন করতে হবে বা কর্তৃপক্ষকে অবগত করত রুমমেন্টকে অন্যত্র শিপ্ট করতে হবে। কেননা মূর্তি বিশিষ্ট ঘরে একজন মুসলিমের বসবাস করাই বৈধ নয়।
প্রশ্ন (১৭) : রুকূ ও সিজদার তাসবীহ কি বিজোড় সংখ্যক পড়তে হবে?
প্রশ্নকারী : ড. গোলাম মোর্তুজা
পদ্মা আবাসিক, রাজশাহী।
উত্তর : রুকু ও সিজদায় যতবার ইচ্ছা তাসবীহ পড়া যাবে জোড়-বেজোড়ের কোনো হিসাব নেই। তবে তিনবার পড়া সুন্নাত এবং একবার পড়া জরুরী। হুযায়ফা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনি এক রাতে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ছালাত আদায় করতে দেখেন। এ সময় তিনি আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,আল্লাহু আকবার বলে যুল মালাকূতি ওয়াল জাবারূতি ওয়াল কিবরিয়া-ই ওয়াল আযমাতি পাঠ করেন। অতপর তিনি সূরা বাক্বারা পড়া শুরু করেন। তারপর তিনি রুকু করেন। তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন যতক্ষণ প্রায় রুকু করলেন ততক্ষণ। তিনি রুকুতে ‘সুবহানা রব্বিয়াল আযীম, সুবহানা রব্বিয়াল আযীম’ পাঠ করেন। অতঃপর তিনি রুকু থেকে উঠে দাড়িয়ে থাকলেন প্রায় ততক্ষণ রুকুতে ছিলেন যতক্ষণ। এ সময় তিনি ‘লি রব্বিয়াল হামদ’ পাঠ করেন। এরপর তিনি সিজদায় যান। সিজদায় তিনি প্রায় ততক্ষণ ছিলেন দাঁড়িয়ে ছিলেন যতক্ষণ। তিনি সিজদায় ‘সুবাহানা রব্বিয়াল আলা’ পাঠ করেন’... (আবূ দাঊদ, হা/৮৭৪; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৭২; নাসাঈ)। হুযাযফা ইবনু ইয়ামান রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রুকুতে তিনবার ‘সুবাহানা রব্বিয়াল আযীম’ এবং সিজদায় ‘সুবহানা রব্বিয়াল আলা’ পড়তে শুনেছেন (ইবনু মাজাহ, হা/৮৮৮)।
প্রশ্ন (১৮) : সুন্নাত ছালাত আদায় না করলে কি পাপ হবে?
প্রশ্নকারী : মুমিন
দিনাজপুর।
উত্তর : সুন্নাত ছালাতগুলোর গুরুত্ব ও ফযিলত অনেক বেশী। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী উম্মে হাবীবা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘যে মুসলিম বান্দা আল্লাহর জন্য দিনে ১২ রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করবে (ফরয নয়) তার জন্য আল্লাহ জান্নাতে একটি ঘর নির্মান করবেন’। উম্মে হাবীবা ম বলেন, এই হাদীছ শোনার পর থেকে সর্বদা আমি এই ছালাত পড়তাম (ছহীহ মুসলিম, হা/৭২৮)। ইবনু মাজাহ’র বর্ণনায় আছে, তা হল, যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত ও পরে দুই রাক‘আত, মাগরিবের পরে দুই রাক‘আত, এশার পরে দুই রাক‘আত এবং ফজরের পূর্বে দুই রাক‘আত (ইবনু মাজাহ, হা/১১৪০, ছহীহ)। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, ক্বিয়ামতের দিন বান্দার ফরজ ছালাতে ঘাটতি থাকলে তা এই সুন্নাত দ্বারা পূরণ করা হবে (আবূ দাঊদ, হা/৮৬৪; তিরমিযী, হা/৪১৩; মিশকাত, হা/১৩৩০)। সুতরাং সুন্নাত ছালাতগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়া যরুরী। তবে কোনো কারণে তা আদায় করতে না পারলে গুনাহ হবে না।
প্রশ্ন (১৯) : ছালাতের মধ্যে হাঁচি আসলে করণীয় কী?
প্রশ্নকারী : জুয়েল বিল মনিরুল ইসলাম
পত্নীতলা, নওগাঁ।
উত্তর : ছালাতের মধ্যে হাঁচি দাতা ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলতে পারবে। তবে উচ্চৈঃস্বরে নয়। বরং নিম্নস্বরে বলবে। রিফাআ ইবনু রাফি রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে ছালাত আদায় করছিলাম। তখন আমার হাঁচি এলো আমি বললাম, اَلْحَمْدُ لِلهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ. রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছালাত শেষ করে বললেন, ছালাতে কে কথা বলছিল? কিন্তু কেউ উত্তর দিল না। দ্বিতীয়বার একই প্রশ্ন করলেন। কিন্তু কেউ উত্তর দিল না। তৃতীয়বার প্রশ্ন করলে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল আমি কথা বলছিলাম। তিনি বললেন, কী বলছিলে? আমি বললাম, الْحَمْدُ لِلهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ অতঃপর নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সেই যাতের কসম, যাঁর আমার প্রাণ আছে! ত্রিশেরও অধিক ফেরেশতা এসেছিল, কে আগে এর ছওয়াব উঠিয়ে নিতে পারে (ছহীহ মুসলিম, হা/৬০০)। তবে তার জওয়াব দেয়ার কোন দলীল নেই।
ইবাদত→ছিয়াম
প্রশ্ন (২০) : আমারউম্মাতততদিনসুন্নাতেরউপরথাকবেযতদিনতারাইফতারকরারজন্যতারকাদেখারঅপেক্ষাকরবেনা- ইবনুহিব্বানেবর্ণিতএহাদীছটিকিছহীহ?
প্রশ্নকারী : আব্দুর রহমান
মোল্লাহাট, বাগেরহাট।
উত্তর : হ্যাঁ, প্রশ্নোল্লিখিত হাদীছটি ছহীহ। সাহল ইবনু সা‘দ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার উম্মত ততদিন সুন্নাতের উপর থাকবে, যতদিন তারা ইফতার করার জন্য তারকা দেখার অপেক্ষা না করবে’। বর্ণনাকারী আরো বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ছিয়াম রাখতেন, তখন কাউকে উপরে উঠার আদেশ দিতেন। যখন সে বলত সূর্য ডুবে গেছে, তখন তিনি ইফতার করে নিতেন’ (ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৩৫১০; ছহীহুল জামে‘, হা/৪৭৭২)।
ইবাদত→হজ্জ-উমরা
প্রশ্ন (২১) : একজনব্যক্তিজীবনেকতবারউমরাকরতেপারে। তারকিনির্দিষ্টকোনোপরিমাণআছে?
প্রশ্নকারী : আনোয়ার হোসেন
কাশিমপুর, গাজীপুর।
উত্তর : একজন ব্যক্তি জীবনে একাধিকবার উমরা করতে পারে যা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী থেকে বুঝা যায়। কিন্তু তার সংখ্যা নির্দিষ্ট নাই। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এক উমরা থেকে পরবর্তী উমরা মধ্যবর্তী সময়ের (ছগীরা গুণাহের) কাফফারাস্বরূপ। আর হজ্জে মবরূরের (ক্রটিমুক্ত) একমাত্র প্রতিদান জান্নাত (নাসাঈ, হা/২৬২২; ইবনু মাজাহ, হা/২৮৮৮)।
উল্লেখ্য যে, এক সফরে দুই উমরাহ করা যাবে না। যেমন হজ্জ বা উমরা করতে গিয়ে এক ব্যক্তি একাধিক ওমরা করতে পারবে না। এ বিষয়ে সঊদী আরবের সাবেক প্রধান মুফতী শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘কিছু সংখ্যক লোক হজ্জের পর অধিক সংখ্যক উমরাহ করার আগ্রহে ‘তানঈম’ বা জি‘ইর্রানাহ নামক স্থানে গিয়ে ইহরাম বেঁধে আসেন। শরী‘আতে এর কোনই প্রমাণ নেই’ (দলীলুল হাজ্জ ওয়াল মু‘তামির, অনু : আব্দুল মতীন সালাফী, ‘সংক্ষিপ্ত নির্দেশাবলী’ অনুচ্ছেদ, মাসআলা-২৪, পৃঃ ৬৫)। সঊদী আরবের সাবেক ২য় মুফতী শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ছালেহ আল-উছায়মীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এটি জায়েয নয়। বরং বিদ‘আত। কেননা এর পক্ষে একমাত্র দলীল হ’ল বিদায় হজ্জের সময় আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা-এর ওমরা। অথচ ঋতু এসে যাওয়ায় প্রথমে হজ্জে ক্বিরান-এর ওমরা করতে ব্যর্থ হওয়ায় হজ্জের পরে তিনি এটা করেছিলেন। তার সাথে ‘তানঈম’ গিয়েছিলেন তার ভাই আব্দুর রহমান। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি পুনরায় ওমরাহ করেননি। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথী অন্য কোন ছাহাবীও এটা করেননি’ (ঐ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া, প্রশ্নোত্তর সংখ্যা ১৫৯৩; ঐ, লিক্বা-উল বাব আল-মাফতূহ, অনুচ্ছেদ ১২১, মাসআলা ২৮)। শায়খ আলবানীও একে নাজায়েয বলেছেন এবং একে ‘ঋতুবতীর ওমরা’ (عمرة الحائض) বলেছেন (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৯৮৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িমও একে নাজায়েয বলেছেন (যাদুল মা‘আদ, ২/৮৯ পৃ.)।
প্রশ্ন (২২) : মাহরামের সামনে পর্দার ক্ষেত্রে মহিলার জন্য কী কী ছাড় রয়েছে? মাহরামের সাথে মহিলারা কি হজ্জে যেতে পারবে এবং সে কতটুকু পর্দা করবে?
প্রশ্নকারী : আফছানা বিনতে আজাদ
মহাদেবপুর, নওগাঁ।
উত্তর : মাহরাম পুরুষের সামনে একজন নারী পূর্ণ পর্দা না করে বরং স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে’ (আন-নূর, ৩১)। এখানে ‘সৌন্দর্য’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সুরমা, মিসওয়াক ও মেহেদী (তাফসীরে ফাতহুল কাদীর, সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসীর)। তাফসীরে ইবনু কাছীরে বলা হয়েছে- ‘সৌন্দর্য’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কানের দুল, বাজুবন্ধ বা চুড়ি, নুপুর ও গলার হার। (তাফসীরে ইবনু কাছীর)। তাই মাহরামের সামনে নারী মাথা, চুল, মুখ, হাত ও পা প্রকাশ করে রাখতে পারে।
মাহরাম সাথে না থাকলে কোনো মহিলার জন্য হজ্জে যাওয়া নিষিদ্ধ (ছহীহ বুখারী, হা/১৮৮৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৩৮)। হজ্জে গিয়ে ইহরাম অবস্থায় নারীদের জন্য মুখ ঢেকে রাখা ও হাতমোজা পরা যাবে না (ছহীহ বুখারী, হা/১৮৩৮; মিশকাত, ২৬৭৮)। তবে পরপুরুষের সামনে পড়লে মাথার কাপড়টি মুখের উপর টেনে দেওয়া যাবে (ইরওয়াউল গালীল, হা/১০২৩; মিশকাত, হা/২৬৯০)।
ইবাদত→যাকাত-ছাদাক্বা
প্রশ্ন (২৩) : কিছুদিনপরেআমরাএকটিমাদরাসাকরতেচাই। তাইমাদরাসাকরারনিয়তেযাকাতেরটাকারেখেদেয়াযাবেকি?
প্রশ্নকারী : আব্দুল্লাহ
ফুলবাড়ী, দিনাজপুর।
উত্তর : কোন হক্বদারকে মাহরুম না করে মাদরাসায় যাকাতের অর্থ প্রদান করা বা উক্ত অর্থ দিয়ে মাদরাসার নামে জমি ক্রয় করা এবং ছাত্রদের জন্য আবাসিক বা একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা যাবে। তবে শর্ত হল অবশ্যই মাদরাসাটি ব্যক্তি মালিকানা ও শিরক-বিদ‘আতমুক্ত হতে হবে এবং তা কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক পরিচালিত হতে হবে। যেখানে কুরআন, হাদীছ, তাফসীর, উছূল, ফিক্বহ, ফারায়েয, বালাগাত, আবরী সাহিত্য ও ব্যাকরণসহ প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করাতে হবে। মূলত এ ধরনের মাদরাসাগুলোতেই প্রকৃত ইলম ও দ্বীন চর্চা হয় এবং ইসলামকে টিকিয়ে রাখতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখে থাকে। এ ধরনের মাদরাসাগুলোকে যাকাতের ৮টি খাতের মধ্যে ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ খাতের অন্তর্ভুক্ত করা হয় (সূরা আত-তওবাহ : ৬০)।
এমনি এক প্রশ্নোত্তরের শেষাংশে একবিংশ শতাব্দির শ্রেষ্ঠ ফক্বীহ শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক এবং একাডেমিক ভবন নির্মাণে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা জায়েয। বই ক্রয় এবং ভবন তৈরি উভয় বিষয়ের মাঝে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, কিতাব থেকে একটু বেশী উপকৃত হয়। কিতাব ছাড়া ইলম অনেকটাই অসম্ভব, যা ভবনের সাথে সম্পৃক্ত নয়। তাছাড়া সেখানে যখন গরীব-ইয়াতীম ছাত্ররা থাকবে, তখন সেই গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের দারিদ্র্যতার জন্য ভবন নির্মাণে ব্যয় করা যাবে (ফকীর বা দরিদ্র ব্যক্তি ৮টি খাতের একটি)। অনুরূপ অন্যান্য মাদরাসাও নির্মাণ করা যাবে যখন মসজিদে দারস দেয়া সম্ভব হবে না। আল্লাহই সর্বাধিক অবগত (মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, মাজমূ‘ঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল, ১৮তম খণ্ড, পৃ. ২৫২-২৫৩)।
ইবাদত→ যিকির ও দু‘আ
প্রশ্ন (২৪) : একমসজিদেরআযানেরজবাবদেয়ারপরযদিআরেকমসজিদেরআযানশুনতেপাইতারওকিজবাবদিতেহবে?
প্রশ্নকারী : হারুন
নীলফামারী।
উত্তর : এক আযানের জওয়াব দেয়ার পর আরেক আযানের জওয়াব দেয়া বাধ্যতামূলক নয়। তবে সম্ভব হলে একাধিক আযানের উত্তর দিবে। কেননা আযানের উত্তর দেয়ার জন্য নির্দিষ্টভাবে একবারকে বা কোন মসজিদের আযানকে বুঝানো হয়নি। বরং রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা যখনই আযান শুনবে তখনই মুয়াজ্জিন যা বলে তোমরাও ঠিক তাই বলবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬১১; ছহীহ মুসলিম, হা/৩৮৩)। তাছাড়া আযানের উত্তর দেয়ার জন্য অশেষ নেকী রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা মুয়াযযিনের আযান শুনলে উত্তরে সে শব্দগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে। আযান শেষে আমার ওপর দরূদ পাঠ করবে। কারণ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে (এর পরিবর্তে) আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ‘ওয়াসীলা’ প্রার্থনা করবে। ‘ওয়াসীলা’ হলো জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু একজন পাবেন। আর আমার আশা এ বান্দা আমিই হব। তাই যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘ওয়াসীলা’র দু‘আ করবে, কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে (ছহীহ মুসলিম, হা/৩৮৪; আবূ দাঊদ, হা/৫২৩; মিশকাত, হা/৬৫৭)।
প্রশ্ন (২৫) : জুম‘আরছালাতশেষেকেউযদিতারসুস্থতারজন্যদু‘আচায়তাহলেকিতারজন্যসম্মিলিতভাবেদু‘আকরাযাবে?
প্রশ্নকারী : শামিম
ডোমার, নীলফামারী।
উত্তর : সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা যাবে না। কেননা এর পক্ষে শারঈ বিধান নেই। বরং সকল মুছল্লীর কাছে আমভাবে দু‘আ প্রার্থী হওয়ার চেয়ে কোন পরহেযগার হক্বপন্থী আলেমের নিকটে দু‘আ চাওয়া উত্তম। তিনি চাইলে এমনিতেই দু‘আ করবেন অথবা ওযূ করে দু’রাক‘আত ছালাত পড়ে হাত তুলে দু‘আ করবেন (ছহীহ বুখারী, ২/৯৪৪ পৃ.)। সবার নিকট দু‘আ চাইলেও উপরোক্ত নিয়মে নিজ নিজ দু‘আ করবে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন রোগীর নিকট গেলে বা তার নিকট কোন রোগীকে আনা হলে তিনি নিম্নোক্ত দু‘আ বলতেন,
أَذْهِبِ الْبَأسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِىْ لَاشِفَاءَ إِلَّاشِفَاءُكَ شِفَاءً لَّا يُغَادِرُ سَقَمًا.
উচ্চারণ : আযহিবিল বা’স রাব্বান্না-স ওয়াশফি আনতাশ শা-ফী লা শিফা-আ ইল্লা শিফ-উকা শিফ-আন লা ইয়ুগা-দিরু সাক্বামা।
অর্থ : কষ্ট দূর কর হে মানুষের প্রতিপালক! আরোগ্য দান কর। তুমিই আরোগ্য দানকারী। কোন আরোগ্য নেই তোমার আরোগ্য ছাড়া। যে আরোগ্য ধোঁকা দেয় না কাউকে (ছহীহ বুখারী, হা/৫৬৭৫; ছহীহ মুসলিম, হা/২১৯১; মিশকাত, হা/১৫৩০)।
প্রশ্ন (২৬) : ইস্তিগফারের জন্য দিনে একশবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ পাঠ করা যাবে কি?
প্রশ্নকারী : নাজনীন পারভীন
আক্কেলপুর, দিনাজপুর।
উত্তর : ইস্তিগফারের জন্য দিনে একশতবার আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করা যাবে। আগার আল মুযানী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, আমার অন্তরে মরিচা পড়ে আর ওই মারিচা পরিষ্কার করার জন্য আমি দিনে একশতবার করে ইস্তিগফার পাঠ করি (ছহীহ মুসলিম, হা/২৭০২; তাবারানী, হা/৮৮৩; মুসতাদরাকে লিল হাকিম, হা/১৮৮১)। তবে অপর বর্ণনায় সত্তরের অধিকবার পড়ার কথাও এসেছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘আল্লাহর কসম! আমি প্রতিদিন সত্তরবারেরও বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই ও তওবা করি (ছহীহ বুখারী, হা/৬৩০৭; মিশকাত, হা/২৩২৩)।
প্রশ্ন (২৭) : সাপ ও বিচ্ছু থেকে বাঁচার জন্য কী দু'আ পড়তে হবে?
প্রশ্নকারী : মিনহাজ পারভেজ
হড়গ্ৰাম, রাজশাহী।
উত্তর : রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেখানো একটি দু‘আ বর্ণিত আছে, সেটি আমল করলে সাপ-বিচ্ছুর দংশন থেকে বাঁচা যাবে। আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে একজন লোক এসে বলল, আল্লাহর রাসূল! আমি গতরাতে একটি বিচ্ছুর দংশনে অনেক কষ্ট পেয়েছি। তিনি বললেন, সন্ধ্যাবেলায় তুমি যদি এই দু‘আ পড়তে। তাহলে সে তোমাকে কোনো ক্ষতি করতে পারত না। দু’আটি হল,
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
অর্থ : আমি আল্লাহ তাআলার পূর্ণ কালাম দ্বারা তাঁর কাছে তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, (ছহীহ মুসলিম, হা/২৭০৯; মিশকাত, হা/২৪২৩)। তিরমিযীতে তিনবার পাঠের কথা উল্লেখ আছে (আলবানী, তিরমিযী, হা/৩৪৩৭)।
আদব-আখলাক
প্রশ্ন (২৮) : রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রেখে কারো নাম ‘মুহাম্মাদ’ বা ‘আহমাদ’ রাখা যাবে কি?
প্রশ্নকারী : ফুরকান
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
উত্তর : আহমাদ এবং মুহাম্মাদ এই নাম দু’টি আল্লাহ প্রদত্ত আমাদের নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম (আছ-ছাফ, ৬; আল-আহযাব, ৪০)। এই দু’টি নাম দ্বারা ব্যক্তির নাম রাখাতে শারয়ী কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। জাবের ইবনু আবদুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে এক ব্যক্তির একটি পুত্র জন্ম নিল। সে তার নাম রাখল মুহাম্মাদ। তখন তার গোত্রের লোকেরা তাকে বলল, আমরা তোমাকে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে নাম রাখার অবকাশ দিব না। সে তখন তার ছেলেটিকে পিঠে বয়ে নিয়ে চলল এবং রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার একটি ছেলের জন্ম হলে আমি তার নাম রাখলাম মুহাম্মাদ। তাতে আমার গোত্রের লোকেরা আমাকে বলছে, আমরা তোমাকে রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে নাম রাখার অবকাশ দিব না। তখন রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমার নামে নাম রাখ, তবে আমার উপনাম অনুসারে উপনাম গ্রহণ করবে না। কেননা আমি হলাম قَاسِمٌ বা বণ্টনকারী; তোমাদের মধ্যে বণ্টন করে থাকি। সুতরাং তোমরা আবুল কাসিম কুনিয়াত গ্রহন করবে না’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩১১৫)। উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর কুনিয়াত দ্বারা নাম না রাখার বিধানটি ছিল তাঁর জীবদ্দশায় প্রযোজ্য। তবে বর্তমানে তাঁর নাম, উপনাম ও কুনয়াত দ্বারা নাম রাখায় কোন সমস্যা নেই।
হালাল-হারাম→ ঘুষ, দুর্নীতি
প্রশ্ন (২৯) : কয়েক বছর আগে ঘুষ দিয়ে চাকরি নিয়েছি। কিন্তু এটা যে মহা অন্যায় তখন জানতাম না। বতর্মানে যদি ক্ষমা চাই তাহলে কি আমার বেতন হালাল হবে? না-কি চাকুরী ছেড়ে দিতে হবে?
প্রশ্নকারী : মাসুদ রানা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
উত্তর : ঘুষ সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং অভিশপ্ত বিষয়। জাবের রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ করেছেন, সুদ গ্রহীতার উপর, সুদদাতার উপর, এর লেখকের উপর ও উহার সাক্ষীদ্বয়ের উপর এবং বলেছেন এরা সকলেই সমান (ছহীহ মুসলিম, হা/৪১৭৭; মিশকাত, হা/২৮০৭)। কোনো ব্যক্তি যোগ্য হিসাবে নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও যদি ঘূষ ছাড়া চাকুরি না হয়; তাহলে সে ব্যক্তি তার প্রাপ্য অধিকার পাওয়ার জন্য ঘূষ দিয়ে চাকুরি নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঘূষ গ্রহিতা ব্যক্তি বা কোম্পানী পাপী হবে। এমন ব্যক্তির চাকুরি দ্বারা উপার্জিত বেতন/অর্থ বৈধ হবে (লাজনা দায়েমা, ফাতাওয়া-৭২২৬৮)। পক্ষান্তরে যদি কোনো ব্যক্তি অযোগ্য হিসাবে নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও ঘূষের বলে চাকুরি নেয়। তাহলে তা ধোকা হবে এবং এই চাকুরি দ্বারা উপার্জিত বেতন/অর্থ হারাম হবে এবং যোগ্য ব্যক্তির হক্ব নষ্টের জন্য কাবীরা গুনাহ হবে। এই অবস্থায় হারাম থেকে বাঁচার জন্য সেই চাকুরি ছেড়ে দিতে হবে।
হালাল-হারাম→প্রসাধনী-সৌন্দর্য
প্রশ্ন: (৩০) বর্তমানে যুবতী মেয়েরা বিউটি পার্লারে গিয়ে বিউটিশিয়ানদের মাধ্যমে যেভাবে রূপচর্চা করছে, তা কি শরী‘আত সম্মত?
উত্তর : বর্তমানে বিউটিশিয়ানদের মাধ্যমে মেয়েরা যেভাবে রূপচর্চা করছে এবং চুল ছেঁটে, ভ্রু চিকন করে ও উলকী ব্যবহারের মাধ্যমে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে, তা শরী‘আত সম্মত নয়। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সৌন্দর্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে শরীরে উলকি অঙ্কনকারী, উলকি গ্রহণকারী, চুল-ভ্রু উত্তোলনকারী, দাঁত চিকনকারী ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টিকারী নারীদের প্রতি আল্লাহ লা‘নত করেছেন। কেননা তা তাঁর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে দেয়’.... (ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৩১; ছহীহ মুসলিম, হা/২১২৫; মিশকাত, হা/৪৪৩১)| নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, ‘কৃত্রিম চুল ব্যবহারকারী ও এর বেশধারী এবং শরীরে উলকি অঙ্কনকারী ও উলকি গ্রহণকারী নারীদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৩৩; ছহীহ মুসলিম, হা/২১২২; মিশকাত, হা/৪৪৩০)।
উল্লেখ্য যে, পার্লারের বিউটিশিয়ানরা যুবতী মেয়েদের সাজানোর সময় তাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্পর্শ ও দর্শন করে তা স্বামী বা অন্যের নিকটে প্রকাশ করতে পারে। ফলে তারা তাদেরকে অন্তরের চোখ দিয়ে কল্পনা করে ও দেখে থাকে। যা যিনার শামিল। আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কোনো নারী যেন অপর কোনো নারীর সাথে ঘনিষ্ঠতার সাথে সাক্ষাতের পরে স্বীয় স্বামীর সামনে উক্ত নারীর (রূপের) এরূপ বর্ণনা না করে, যাতে স্বামী যেন তাকে দেখছে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫২৪০; ছহীহ মুসলিম, হা/২১২২; মিশকাত, হা/৩০৯৯)। অতএব এরূপে রূপ চর্চা করা যাবে না। তবে নিষিদ্ধ সামগ্রী ব্যতীত বৈধ সামগ্রী দ্বারা বাড়ীতে স্বামীর মনোরঞ্জনের জন্য সাজতে পারে।
হালাল-হারাম→ আচার-অনুষ্ঠান
প্রশ্ন (৩১) : বিয়েতে জাকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠান করা এবং নতুন বউকে আগত মেহমানদেরকে দেখানোর বিধান কী?
প্রশ্নকারী : আহসানুল্লাহ বিন আজাদ
মহাদেবপুর, নওগাঁ।
উত্তর : সাদামাঠাভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান করা উত্তম। তবে কারো যদি সামর্থ্য থাকে বিয়েতে অপচয় না করে অনৈসলামীক কার্যকলাপ (গান-বাজনা, আতশবাজী ইত্যাদী) থেকে বিরত থেকে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী সকলকেই বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত করতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘রহমানের বান্দা তারাই যারা খরচ করলে অপব্যয় করে না আবার কৃপনতাও করে না। তারা এই দুইয়ের মাঝে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় অবস্থান করে’ (আল-ফুরক্বান, ২৫/৬৭)। তিনি আরো বলেন, ‘নিশ্চয় তিনি (আল্লাহ) অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না’ (আল-আনআম, ৬/১৪১)। আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুর রহমান ইবনু আউফের গায়ে হলুদ চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, এটা কী? সে বলল, (আল্লাহর রাসূল!) আমি খেজুর দানার সমপরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে এক মহিলাকে বিয়ে করেছি। তখন রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুক! তুমি একটি ছাগল দিয়ে হলেও অলিমা করো’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫১৬৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪২৭; মিশকাত, হা/৩২১০)।
অন্যদিকে নতুন বউকে ঢালাওভাবে সকলের দেখার জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা বাড়িতে অবস্থান করো, পূর্বেকার জাহেলী যুগের নারীদের মতো রূপ-সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না’ (সূরা আল-আহযাব, ৩৩/৩৩)। ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন শ্রেণির ব্যক্তির উপর আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত হারাম করেছে। ১. নেশাদার দ্রব্য পানকারী, ২. পিতা-মাতার অবাধ্য সান্তান, ৩. ঐ পুরুষ যে তার পরিবারে বেহায়াপনা, বেলেল্লাপনা, অশ্লিলতা ও বেপর্দার সুযোগ করে দেয়’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/৬১১৩; মিশকাত, হা/৩৬৫৫)।
প্রশ্ন (৩২) : প্রতিযোগিতামূলক কোনো ‘কুইজ প্রতিযোগিতা’য় পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার ক্ষেত্রে কি লটারি করা যাবে?
প্রশ্নকারী : আব্দুল আহাদ
রানীরবন্দর, চিরিরবন্দর, দিনাজপুর।
উত্তর : কুইজ প্রতিযোগিতা ও শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্দেশ্য যদি হয় ইসলাম ও মুসলিমদের কল্যাণকর কাজের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা তাহলে তাতে লটারী করা যায়। কেননা যে লটারীতে টাকা-পয়সার হার-জিত থাকে না সে লটারী জায়েয। যেমন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লটারীর মাধ্যমে স্ত্রীদেরকে যুদ্ধে নিয়ে যেতেন। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সফরে যেতে ইচ্ছা করতেন, তখন তার স্ত্রীদের মধ্যে লটারীর ব্যবস্থা করতেন এবং তাতে যার নাম উঠত তিনি তাকেই সাথে নিয়ে যেতেন (ছহীহ বুখারী, হা/২৫৯৩; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৭০; মিশকাত, হা/৩২৩২)।
উল্লেখ্য যে, হারাম হল ঐ লটারী যার মাধ্যমে অনেকের নিকট থেকে টাকা নিয়ে ২/৪ জনকে পুরস্কৃত করা হয় এবং তাতে জুয়ার সংমিশ্রন থাকে। কেননা জুয়ামূলক সব ধরনের খেলাধুলা ও প্রতিযোগিতা হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তির বেদী এবং শুভ-অশুভ নির্ণয়ের তীর এসব গর্হিত বিষয়, শয়তানী কাজ। সুতরাং এ থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকো, যেন তোমাদের কল্যাণ হয় (সূরা আল-মায়েদাহ, ৯০)।
হালাল-হারাম→খাদ্য-পানীয়
প্রশ্ন (৩৩) : শিশু ৩/৪ বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করলে পাপ হবে কি?
প্রশ্নকারী : মোফাজ্জল
গাজীপুর।
উত্তর : সন্তানকে পূর্ণ দুই বছর দুধ খাওয়ানো যাবে। তবে পিতা-মাতা ইচ্ছা করলে দুই বছরের কম-বেশীও করতে পারে। তাতে কোন পাপ হবে না (সূরা বাক্বারাহ : ২৩৩; তাফসীর ইবনে কাছীর ২/৩৪২ পৃঃ)। দুই বছরের বিষয়টি দুধ মা প্রমাণের জন্য। নিজ বাচ্চাকে মা প্রয়োজন মত দুধ পান করাবে।
ব্যবসা-বাণিজ্য →সূদী কারবার
প্রশ্ন (৩৪) : আমি এটিএম কার্ড ব্যবহার করি। এখানে মাসে মাসে টাকা সূদ দেওয়া হয়। আমি সেই টাকাগুলো (সূদের টাকা) কোনো গরীব-মিসকীন বা কোনো মসজিদে দান করলে নেকী বা পাপ হবে?
প্রশ্নকারী : আহসানুল্লাহ বিন আজাদ
মহাদেবপুর, নওগাঁ।
উত্তর : সূদের টাকা ভক্ষণ করলে পাপ হবে। কিন্তু কাউকে তা দিয়ে দিলে নেকী বা পাপ কিছুই হবে না। কারণ সূদের টাকা কোনো ব্যক্তির নিজের বৈধ সম্পদ নয়। বরং সূদ আদান-প্রদান করা সুস্পষ্ট হারাম (সূরা আল-বাক্বারা, ২/২৭৫)। তাই নেকীর উদ্দেশ্য ছাড়া মাদরাসা কিংবা জনকল্যাণমূলক কাজে দিয়ে দিতে হবে। তবে মসজিদে না দেওয়াই উচিত।
চিকিৎসা
প্রশ্ন (৩৫) : আযলব্যতীতজন্মনিয়ন্ত্রণেরযেকোনমাধ্যমগ্রহণকরে বীর্যঅপচয়করলেকিবাচ্চানষ্টকরারমতগুনাহহবে?
প্রশ্নকারী : জেসমিন
রামপুরা, জয়পুরহাট।
উত্তর : গুরুতর কারণ যেমন- অসুস্থতা, মৃত্যুর আশঙ্কা ইত্যাদি ছাড়া অধিক সন্তানের ভরণ-পোষণের ভয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা শরী‘আত পরিপন্থী কাজ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা খাদ্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। আমি তাদেরকে এবং তোমাদেরকে জীবিকা প্রদান করে থাকি’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ৩১)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা অধিক প্রেমানুরাগিণী, অধিক সন্তান জন্মদানকারিণী মহিলাকে বিয়ে করো। কারণ আমি ক্বিয়ামতের দিন তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে গর্ব করব’ (আবুদাঊদ, হা/২০৫০; নাসাঈ, হা/৩২২৭; মিশকাত, হা/৩০৯১, সনদ ছহীহ)। তবে স্ত্রী ও সন্তানের স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে স্ত্রীর সম্মতিক্রমে আযল বা সাময়িক জন্মনিয়ন্ত্রণ করা যায়। জাবের রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন কুরআন মাজিদ নাযিল হচ্ছিল তখন আমরা আযল করতাম (ছহীহ বুখারী, হা/৫২০৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৪০; তিরমিযী, হা/১১৩৭; মিশকাত, হা/৩১৮৪)।
পারিবারিক বিধান→আকীকা
প্রশ্ন (৩৬) : আমি পড়াশুনার জন্য পরিবারসহ অস্ট্রেলিয়ায় থাকি। এখানেই আমার সন্তান জন্মগ্রহণ করবে। আমি বাংলাদেশে আমার গ্রামের বাড়িতে সপ্তম দিনে তার আক্বীক্বা দিতে চাই। এটা জায়েয হবে কি? নাকি অস্ট্রেলিয়াতেই আক্বীক্বা করতে হবে?
প্রশ্নকারী : মনির
পি.এইচ.ডি গবেষক, এডিলেইড, অস্ট্রেলিয়া।
উত্তর : আক্বীক্বা করার বিষয়টি কোনো স্থানের সাথে নির্ধারিত নয়; বরং সপ্তম দিনের সাথে নির্দিষ্ট। তাই সপ্তম দিনের হিসাব ঠিক রেখে শিরকী স্থান ব্যতীত যে কোনো স্থানে আক্বীক্বা করলে আক্বীক্বা হয়ে যাবে- ইনশাআল্লাহ। সামুরা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রতেক শিশু তার আকীকার সাথে বন্ধক/দায়বদ্ধ থাকে। তার জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু যবাই করতে হবে, তার মাথা কামাতে হবে এবং নাম রাখতে হবে’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/২০২০১; ইবনু মাজাহ, হা/৩১৬৫)। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ছাহাবাদের পুত্র সন্তানের জন্য দু’টি ছাগল ও কন্যা সন্তানের জন্য একটা ছাগল আক্বীক্বা করার আদেশ করেছেন (তিরমিযী. হা/১৫১৩)।
পারিবারিক বিধান→ বিবাহ-তালাক
প্রশ্ন (৩৭) : জনৈক ব্যক্তি স্ত্রীর মোহরের টাকার বিনিময়ে সমপরিমাণ জমি লিখে দিয়েছেন। এখন উক্ত জমি কে আবাদ করবে এবং তার ফসল কে ভোগ করবে?
প্রশ্নকারী : জুয়েল বিন মনিরুল ইসলাম
পত্নীতলা, নওগাঁ।
উত্তর : স্ত্রী তার মোহর থেকে যদি স্বামীকে প্রদান করে তাহলে উভয় মিলে মিশে তা ভোগ করতে পারে। রাগারাগি করলে পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর তোমারা নারীদেরকে তাদের মোহর স্বতঃস্পূর্ত হয়ে প্রদান করবে, সন্তুষ্ট চিত্তে তারা মোহরের কিয়দাংশ ছেড়ে দিলে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করবে’ (সূরা আন-নিসা, ৪)।
প্রশ্ন (৩৮) : বিয়ের দুই দিন পর মেলামেশার পূর্বেই স্ত্রী খোলা করলে তাকে কতদিন ইদ্দত পালন করতে হবে?
-লুৎফর রহমান
শান্তাহার, বগুড়া।
উত্তর : বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যদি নির্জনবাস হয়ে থাকে (শারীরিক সম্পর্ক হোক বা না হোক), তাহলে তা শারীরিক মিলন বলে গণ্য হবে এবং এক্ষেত্রে এক হায়েয ইদ্দত পালন করতে হবে। ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত। ছাবিত ইবনু ক্বায়স রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর স্ত্রী তার কাছ থেকে খোলা তালাক নিলেন। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ইদ্দাতকাল নির্ধারণ করলেন এক হায়েয (আবূ দাঊদ, হা/২২২৯)। সাথে সাথে স্বামী থেকে প্রাপ্ত সকল মোহর তাকে ফেরত দিবে। ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, ছাবিত ইবনু ক্বায়স রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর স্ত্রী নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ছাবিত ইবনে ক্বায়স রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর ব্যবহার ও দ্বীনদারী সম্পর্কে আমার কোনো অভিযোগ নেই, কিন্তু ইসলামের ছায়ায় থেকে আমার দ্বারা স্বামীর অবাধ্যতা পছন্দ করি না। তখন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তবে কি তুমি তার বাগান তাকে ফেরত দিবে? সে বলল, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি তোমার বাগান গ্রহণ করো এবং তাকে এক তালাক দিয়ে দাও’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫২৭৩; মিশকাত, হা/৩২৭৪)।
প্রশ্ন (৩৯) :বিবাহকরতেচাচ্ছিকিন্তুবাবা-মারাজিহচ্ছেনা।আমিকিতাদেরকেউপেক্ষাকরেবিবাহকরতেপারি?
প্রশ্নকারী : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর : পুরুষ লোক বিবাহের ক্ষেত্রে স্বাধীন। এক্ষেত্রে পিতা-মাতার সম্মতি আবশ্যক নয় যেমন মেয়ের জন্য তা আবশ্যক (তিরমিযী, হা/১১০২; মিশকাত, হা/৩১৩১)। তবে তাদেরকে বুঝিয়ে তাদের সম্মতিতেই বিবাহ করা ভালো। কিন্তু পিতা-মাতা যদি প্রাপ্তবয়স্ক ছেলের বিবাহ দিতে না চায়, অথচ তার পাপে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয়, তাহলে পিতা-মাতার অনুমতি ছাড়াই পুরুষ মানুষ বিবাহ করতে পারে।
প্রশ্ন (৪০) : আমাদের এলাকায় কোনো মেয়েকে তালাক দিলে পুনরায় বিবাহ দেয়ার জন্য হিল্লা করা হয়। এই হিল্লা বিবাহ কি শরীআত সম্মত?
প্রশ্নকারী : আক্বীমুল ইসলাম
জোতপাড়া, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর : ‘হিল্লা বিবাহ’ শরীআতে সম্পূর্ণরূপে হারাম। উক্ববা ইবনু আমের রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের ভাড়াটিয়া পাঁঠা সম্পর্কে বলব না? তারা বললেন, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি বললেন, সে হলো হিল্লাকারী। আর হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কেই আল্লাহ লা‘নত করেছেন’ (ইবনু মাজাহ, হা/১৯৩৬; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/১৪১৮৭)।
প্রশ্ন (৪১) : স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করেছে বলে কি প্রথম স্ত্রীর তালাক চাওয়া বৈধ, যদিও বিবাহ বৈধভাবে শরীয়তসম্মত হয়?
প্রশ্নকারী : রবীউল ইসলাম
গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
উত্তর : শরীয়তের শর্ত মেনে দুজনকেই সুখে রাখতে পারলে প্রথমার তালাক চাওয়া বৈধ নয়। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে স্ত্রীলোক অকারণে তার স্বামীর নিকট থেকে তালাক চাইবে, সে স্ত্রীলোকের জন্য জান্নাতের সুগন্ধও হারাম হয়ে যাবে’ (আবূ দাঊদ, হা/২২২৬, ইবনু মাজাহ, হা/২০৫৫; মিশকাত, হা/৩২৭৯)। অনুরূপভাবে দ্বিতীয়ার জন্যও বৈধ নয় প্রথমাকে তালাক দিতে স্বামীকে চাপ দেওয়া। কারণ আল্লাহ যার যতটুকু রিযিক্ব নির্ধারণ করে রেখেছেন সে ততটুকুই ভোগ করতে পারবে। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো নারী যেন তার বোনের তালাক না চায়, তার পাত্রকে উল্টিয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ নিজে ভোগ করার জন্য। বরং তাকেই যেন বিবাহ করে নেয়। আল্লাহ যার যতটুকু রিযিক্ব নির্ধারণ করে রেখেছেন সে ততটুকুই ভোগ করতে পারবে’ (বুখারী, হা/৬৬০১; মিশকাত, হা/৩১৪৫)।
মৃত্যু-কবর-জানাযা
প্রশ্ন (৪২) : খাদিজা রাযিয়াল্লাহু আনহা-কে দাফন করার পরে সবাই ফিরে গেলেন। কিন্তু রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে দাঁড়িয়ে রইলেন। এটা দেখে ছাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যাবেন না। তিনি বললেন, না, কবরে খাদিজার তিনটি প্রশ্নের জবাব না হওয়া পর্যন্ত যাব না। কিন্তু কবরের নিকটে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে থাকার কারণে ফেরেশতাও আসছে না। তখন আল্লাহ বললেন, এই প্রশ্নের উত্তর আমিই দিয়ে দিলাম। এমন ঘটনার কোনো প্রমাণ আছে কি?
প্রশ্নকারী : জুয়েল বিন মনিরুল ইসলাম
পত্নীতলা, নওগাঁ।
উত্তর : এই বক্তব্যের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং তা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
প্রশ্ন (৪৩) : জানাযারছালাতেপায়েরসাথেপা, কাধেকাধমিলাতেহবেকি?
প্রশ্নকারী : শাকিল হোসাইন
চরগগনপুর, জামালপুর।
উত্তর : হ্যাঁ, পায়ের সাথে পা ও কাধে কাধ মিল করেই দাঁড়াতে হবে। কারণ অন্য ছালাতের মত এটাও একটি ছালাত। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজাশীর জানাযায় সারিবদ্ধ হন এবং চার তাকবীরে জানাযা পড়ান। জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আজ হাবশা দেশের একজন নেককার লোক মৃত্যুবরণ করেছে। তাই তোমরা এসো তার জানাযার ছালাত আদায় করো। রাবী বলেন, আমরা তখন কাতারবন্দি হয়ে দাড়াঁলাম। অতঃপর তিনি তার জানাযা ছালাত আদায় করালেন। আমরা ছিলাম কয়েক কাতার’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৩২০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪১৮৩)। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আমরা জনৈক ব্যক্তির জানাযায় রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম (ছহীহ বুখারী, হা/১৩২১; মিশকাত, হা/১৬৫৮)।
প্রশ্ন (৪৪) : জানাযার ছালাতে ইমামের সাথে সাথে মুক্তাদীদেরকে কি সব দু‘আ-কালাম পড়তে হবে?
প্রশ্নকারী : আব্দুর রশীদ রনি
চন্দ্রগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর।
উত্তর : ইমাম সরবে পড়লে মুক্তাদীগণ আ‘ঊযুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ সহ কেবল সূরা ফাতিহা চুপে চুপে পড়বে এবং পরে দরূদ ও অন্যান্য দু‘আ সমূহ পড়বে। তবে ইমাম নীরবে পড়লে মুক্তাদীগণ সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা এবং অন্যান্য দু‘আ সমূহ পড়বে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোনো মৃতের জানাযা পড়লে তার জন্য নিষ্ঠার সাথে দু‘আ করবে (আবুদাঊদ, হা/৩১৯৯; ইবনে মাজাহ, হা/১৪৯৭; বায়হাক্বী, হা/৬৭৫৫)।
প্রশ্ন (৪৫) : নয় মাসের গর্ভবতী বাচ্চা পেটে মারা গেছে। অপারেশন বা সিজার করে তাকে বের করার পর তার কি জানাযা দিতে হবে?
প্রশ্নকারী : জুয়েল বিন মনিরুল ইসলাম
পত্নীতলা, নওগাঁ।
উত্তর : না, এমতাবস্থায় তার জানাযা দিতে হবে না। শু‘আইব রাহিমাহুল্লাহ হতে বর্ণিত। ইবনু শিহাব রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, .... নবজাত শিশু সরবে কেঁদে থাকলে তার জানাযার ছালাত আদায় করা হবে। আর যে শিশু কাঁদবে না, তার জানাযার ছালাত আদায় করা হবে না। কেননা, সে অপূর্ণাঙ্গ সন্তান (ছহীহ বুখারী, হা/১৩৫৮)।
অপরাধ-দণ্ডবিধি
প্রশ্ন (৪৬) : কেউ যদি অন্যায় করে এবং সে কারণে তাকে দুনিয়াতে শাস্তি দেওয়া হয়। তাহলে কি তাকে ঐ অন্যায়ের শাস্তি পুনরায় পরকালে পেতে হবে?
প্রশ্নকারী : আহসানুল্লাহ বিন আজাদ
মহাদেবপুর, নওগাঁ।
উত্তর : কেউ পাপ বা অন্যায়ের শাস্তি দুনিয়াতে পেয়ে গেলে তাকে আর পরকালে শাস্তি ভোগ করতে হবে না। উবাদাহ্ ইবনু সামিত রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- বলেন,...‘যে ব্যক্তি (শিরক ব্যতীত) অন্য কোন অপরাধ করবে এবং এজন্য দুনিয়ায় শাস্তি পেয়ে যাবে, তাহলে এ শাস্তি তার গুনাহ মাফ হবার কাফফারাহ্ হয়ে যাবে। আর যদি কোন গুনাহের কাজ করে, অথচ আল্লাহ তা ঢেকে রাখেন (বা ধরা না পড়ে), এজন্য দুনিয়ায় এর কোন বিচার না হয়ে থাকে, তাহলে এ কাজ আল্লাহর মর্যীর উপর নির্ভর করবে। তিনি ইচ্ছা করলে আখিরাতে তাকে ক্ষমা করে দিবেন অথবা শাস্তিও দিতে পারেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭০৯; মিশকাত, হা/১৮)।
প্রশ্ন: (৪৭) ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কোন নারী কি জীবন দিতে পারে?
উত্তর : ধষিতা পাপী হবে না। সুতরাং ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কোন নারী জীবন দিতে পারবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা আত্মহত্যা করিও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে কেউ সীমালঙ্ঘন করে অন্যায়ভাবে এটা করবে তাকে অগ্নিতে দগ্ধ করাবো। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজসাধ্য (আন-নিসা, ২৯-৩০)। অতএব, বালা-মছীবত ও ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করা যাবে না। বরং ধৈর্য ধারণ করতে হবে ও আল্লাহর নিকট দু‘আ করতে হবে। মাযলূমের দু‘আ আল্লাহ কবুল করেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,‘ হে মু‘আয! মাযলূমের বদ দু‘আ থেকে বেঁচে থাক। কেননা তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা নেই’ (ছহীহ বুখারী হা/২২৬৮; তিরমিযী হা/১৯৩৭)।
আখিরাত
প্রশ্ন (৪৮) : ক্বিয়ামতের দিন পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার সাথে অন্য সব গ্রহও কি ধ্বংস হবে?
প্রশ্নকারী : আনোয়ার হোসেন
কাশিমপুর, গাজীপুর।
উত্তর : হ্যাঁ, পৃথিবীসহ মহাবিশ্বের যা কিছু আছে সবকিছুই ক্বিয়ামতের দিন ধ্বংস হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবী পৃষ্ঠে যা আছে সবই ধ্বংসশীল, কিন্তু চিরস্থায়ী তোমার প্রতিপালকের চেহারা (সত্তা)- যিনি মহীয়ান, গরীয়ান’ (আর-রহমান, ৫৫/২৬, ২৭)। তিনি আরো বলেন, ‘সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত’ (আল-ক্বাছাছ, ২৮/৮৮)। তিনি বলেন, ’যখন সূর্যকে গুটিয়ে ফেলা হবে। যখন তারকাগুলো খসে পড়বে’ (আত-তাকবীর, ৮১/১, ২)। তিনি বলেন, যখন আসমান চুর্ণ-বিচুর্ণ হবে। যখন তারকা সব ঝরে পড়বে’ (আল-ইনফিতার, ৮২/১, ২)।
বিবিধ
প্রশ্ন (৪৯) : মহিলাদের তা‘লীমী বৈঠকে ১০-১৫ বছর বয়সের ছেলেরা কি কোনো জ্ঞানমূলক বা ইসলাম সম্পর্কে বক্তব্য দিতে পারবে কি?
প্রশ্নকারী : আহসানুল্লাহ বিন আজাদ
মহাদেবপুর, নওগাঁ।
উত্তর : উক্ত বয়সের ছেলে বালেগ হলে পর্দার বিষয়টি নিশ্চিত করে আড়াল থেকে তা‘লীমী বৈঠকে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ থেকে জ্ঞানমূলক বক্তব্য পেশ করাতে শারঈ কোনো বাধা নেই। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে’...(আন-নূর, ২৪/৩১)। আবূ সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, মহিলারা আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, (হে আল্লাহর নবী!) পুরুষেরা তো (দ্বীন শেখার ক্ষেত্রে) আমাদের থেকে এগিয়ে আছে। অতএব, আপনি আমাদের জন্য একটি দিন নির্ধারণ করে দিন, (যে দিনে আমরা আপনার থেকে দ্বীনি মাসআলা-মাসায়েল শিখবো)। অতঃপর তিনি তাদের জন্য একটি দিন নির্ধারণ করে দিলেন। ঐ দিনে তারা একত্রিত হত আর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উপদেশ দিতেন (ছহীহ বুখারী, হা/১০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৩১৪)।
প্রশ্ন (৫০) : কোন গায়র মাহরাম ড্রাইভারের সাথে মহিলার একাকিনী কোথাও যাওয়া বৈধ কি?
প্রশ্নকারী : আবিদা সুলতানা
চরবাগডাঙ্গা, চাপাইনবাবগঞ্জ।
উত্তর : না; গাড়ি, রিক্সা বা বাইকে এমন কোন পুরুষের সাথে মহিলার একাকী যাওয়া বৈধ নয়, যার সাথে কোনও সময় তার বিবাহ বৈধ। বাস, ট্রেন, প্লেন বা জাহাজের কোন সফরে যাওয়া, এমনকি কোন ইবাদতের সফরেও নয়। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি যে নারী ঈমান রাখে, তার মাহরামের সঙ্গ ছাড়া একাকিনী এক দিন এক রাতের দুরত্ব সফর করা বৈধ নয় (ছহীহ বুখারী, হা/১০৮৮; ছহীহ মুসলিম হা/১৩৩৯)। তিনি আরো বলেন, ‘কোন পুরুষ যেন কোন বেগানা নারীর সঙ্গে তার সাথে এগানা পুরুষ ছাড়া অবশ্যই নির্জনতা অবলম্বন না করে। আর মহরাম ব্যতিরেকে কোন নারী যেন সফর না করে। এক ব্যক্তি বলল, হে আলাহর রাসূল! আমার স্ত্রী হজ্জ পালন করতে বের হয়েছে, আর আমি অমুক অমুক যুদ্ধে নাম লিখিয়েছি। তিনি বললেন, যাও, তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজ্জ কর। (বুখারী, হা/৩০০৬; মুসলিম, হা/১৩৪১)। কারণ যখন কোন পুরুষ কোন মহিলার সাথে নির্জনতা অবলম্বন করে, তখন শয়তান তাদের তৃতীয় সাথী হয়। (তিরমিযী, হা/১১৭১; মিশকাত, হা/৩১১৮)।
প্রশ্ন (১) : মহান আল্লাহ কি কখনো মুহূর্তের জন্যও পৃথিবীতে এসেছেন?
-আব্দুর রহমান
দিনাজপুর।
উত্তর : মহান আল্লাহ আরশে সমুন্নত (সূরা ত্বহা, ৪)। তবে তিনি পৃথিবীতে নয়। বরং প্রতি
রাতেই দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে নেমে আসেন। আবূ হুরায়রা c
হতে
বর্ণিত। রাসূল a বলেছেন, মহান আল্লাহ প্রতি রাতের শেষ
তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন, কে
আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি
তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন যে, আমার নিকট চাইবে?
আমি
তাকে তা দিব। কে আছে এমন আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি
তাকে ক্ষমা করব (ছহীহ বুখারী, হা/১১৪৫; ছাহীহ মুসলিম, হা/৭৫৮)।
তবে তাঁর এই আসমানে অবতরণের ধরন
ও প্রকৃতি মানুষের জ্ঞানের বহির্ভুত বিষয়। বরং তার পবিত্র স্বকীয় সত্তার জন্য যেভাবে শোভন সেই ভাবেই সেটা হয়ে থাকে।
ঈমান-আক্বীদা→ নবী-রাসূল
প্রশ্ন (২) : ঈসা e-এর কোনো সন্তান ছিল কি? পুনরায় যখন তিনি পৃথিবীতে আসবেন তখন কি তিনি বিবাহ-শাদী করবেন?
-জুয়েল বিন মনিরুল ইসলাম
পত্নীতলা, নওগাঁ।
উত্তর : কুরআন-হাদীছে ঈসা e-এর বিবাহ করা না করা ও তার
সন্তানাদী সম্পর্কে কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না। আর এটা জানার মধ্যে আমলের ক্ষেত্রে
বিন্দু পরিমাণ কোনো লাভও নেই। বিধায় এই বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা বা অনুসন্ধান করা
একেবারেই নিঃস্প্রয়োজন।
ঈমান-আক্বীদা→মতবাদ
প্রশ্ন: (৩) কোন বিষয়ে মুজতাহিদ
ইমামগণের মধ্যে ইখতিলাফ পরিলক্ষিত হলে করণীয় কী?
উত্তর : এমতাবস্থায় বিষয়টিকে কিতাব ও সুন্নাহর দিকে ফিরিয়ে দিতে
হবে। অতঃপর দলীলের আলোকে যেটি অগ্রগণ্য হবে, সেটাকে গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘অতঃপর কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা
উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও রাসূলের নিকট, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতে ঈমান এনে থাক’ (আন-নিসা, ৫৯)। উল্লেখ্য, যদি নির্ভরযোগ্য আলেমদের বক্তব্য পরস্পর বিরোধী হয়, তাহলে অপেক্ষাকৃত বেশী বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য ও জ্ঞানী আলেমের বক্তব্য গ্রহণ করতে হবে। বিষয়টি ঠিক ঐ রোগীর মত, যে তার চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য ও জ্ঞানী ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার
সর্বাত্মক চেষ্টা করে। দুনিয়াবী বিষয়ে যদি এত বেশী সতর্কতা অবলম্বন করা হয়, তাহলে দ্বীনী বিষয়ে আরো কত বেশী সতর্কতা অবলম্বন করা
উচিত! (মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ইবনু
উছায়মীন, ২৬/৪৮১-৪৮৫ পৃ.; মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ইবনু বায, ২৪/৭১-৭২ পৃ.)। তবে এ ধরণের ইখতিলাফী মাসআলার সংখ্যা খুবই কম।
প্রশ্ন (৪) : জিন জাতিকে আগে সৃষ্টি করা হয়েছে? নাকি ফেরেশতাদেরকে? দলীল সহকারে
বিস্তারিত জানাবেন।
-আব্দুল কুদ্দুস
চিরিরবন্দর, দিনাজপুর।
উত্তর : জিন জাতির পূর্বে ফেরেশতাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
কেননা তারা জিন জাতির আমল নামা অবলকন করে ছিলেন। আল্লাহ তাআলা যখন মানব জাতিকে
সৃষ্টি করার ইচ্ছা ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন, তখন জিন জাতির অপকর্ম এবং
পৃথিবীতে তাদের বিপর্যয় সৃষ্টির অভিজ্ঞতা থেকে তারা মানব সৃষ্টি না করার মতামত
ব্যক্ত করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বললেন, আমি পৃথিবীতে
পরবর্তী জাতি তথা খলিফা সৃষ্টি করতে চাই। ফেরেশতারা বলল, আপনি কি এমন জাতি সৃষ্টি
করবেন? যারা সেখানে বিসৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে (আল-বাক্বারা, ৩৯)। যেহেতু ফেরেশতাদের একটি দলের কাজ
হচ্ছে, জিন ও মানব জাতির আমল নামা লিখা। সুতরাং জিন ও মানব জাতির পূর্বে
ফেরেশতাদের সৃষ্টি।
কুরআন→ তেলাওয়াত
প্রশ্ন (৫) : ছালাতের পর মসজিদে কুরআন তেলাওয়াত শুরু হয়। এমতাবস্থায় যদি সেখান থেকে চলে আসা হয় তাহলে কি পাপ হবে?
-রাশিদুল ইসলাম আওলাদ
হাতিবান্ধা,
লালমণিরহাট।
উত্তর : না, পাপ হবে না। মহান আল্লাহ বলেন,
অতঃপর যখন ছালাত শেষ হবে তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিযিক্ব)
তালাশ করো’...(জুম‘আহ,
৬২/১০)।
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ছালাত শেষে কর্মক্ষেত্রে
যোগ দিয়ে রিযিক্ব অন্বেষণের আদেশ করেছেন। তাই কর্মব্যস্ত মানুষ হলে সেখান থেকে চলে
যাওয়াতে কোনো দোষ নেই। তবে বিশেষ কোনো প্রয়োজন না থাকলে সেখানে বসে কুরআনের
তেলাওয়াত শুনা, কুরআন শেখা, শিখানো অথবা তেলাওয়াত করা ভালো। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন
কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা তা মনোযোগ সহকারে শুনো এবং চুপ থাকো’ (সূরা ইনশিক্বাক্ব ২১)। উছমান c বলেন, রাসূল a বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি সর্বত্তোম যে কুরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫০২৭; আবূ দাঊদ, হা/১৪৫২, মিশকাত, হা/২১০৯)।
হাদীছ→উছূলুল হাদীছ
প্রশ্ন (৬) : মাশহুর, গারীব ও আযীয হাদীছ কি
গ্রহণযোগ্য বা মানা যাবে?
-আব্দুল হাসিব
শেরপুর, বগুড়া।
উত্তর : এ পরিভাষাগুলো সনদে রাবীর সংখ্যা কম- বেশীর ভিত্তিতে
সজ্ঞায়িত হয়ে থাকে। হাদীছ মাক্ববুল (গ্রহণযোগ্য) বা মারদুদ (প্রত্যাখ্যাত) হওয়ার
সাথে এগুলোর কোন সম্পর্ক নেই। বরং এ তিনটি পরিভাষা মাক্ববুল বা মারদুদ উভয়টি হতে
পারে। যদি মাক্ববুলের অন্তর্ভূক্ত হয় তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে। আর যদি মারদুদের
অন্তর্ভূক্ত হয় তাহলে তা প্রত্যাখ্যাত হবে (বিস্তারিত জানার জন্য তাইসীরুল মুছত্বলাহিল হাদীছ, মুছতালাহুল হাদীছ বা অন্য কোন উছূলে হাদীছের কিতাব পড়ুন)।
পবিত্রতা→ মাসিক-নিফাস-রক্তপ্রদর
প্রশ্ন (৭) : জনৈক মহিলার বর্তমানে হায়েযের মেয়াদ চলছে প্রায় ১৭/১৮ দিন পর্যন্ত। তার জন্য ছালাতের বিধান কী?
-আব্দুল হামীদ
পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর : পূর্ব হতে হায়েযের যে নির্দিষ্ট সময় রয়েছে তা অতিক্রম হওয়ার পরও যদি কোন মহিলার
রক্তস্রাব দেখা যায় তাহলে তা ইস্তেহাযা হিসাবে গণ্য হবে। এমতাবস্থায় প্রত্যেক
ওয়াক্তের জন্য ওযূ করে ছালাত আদায় করবে। উরওয়া ইবনু যুবাইর c ফাতিমা বিনতে আবু হুবাইশ g হতে বর্ণনা করেন যে, ফাতিমা সর্বদা ইস্তেহাযায় আক্রান্ত হতেন। নবী করীম a তাকে বলেছিলেন, যখন হায়েযের রক্ত হয় তখন তা কালো রক্ত হয়, যা সহজে
চেনা যায়। এমতাবস্থায় ছালাত হতে বিরত থাকবে। যখন ভিন্ন রক্ত হবে, তখন ওযূ করবে এবং ছালাত আদায় করবে। কেননা এটা শিরার রক্ত (আবুদাঊদ, হা/২৮৬; নাসাঈ, হা/২১৫; মিশকাত, হা/৫৫৮; ফিকহুস সুন্নাহ, ১/৬৮ পৃ.)। উম্মু আতিয়্যা g থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মেটে ও
হলুদ রং হায়েযের মধ্যে গণ্য করতাম না (ছহীহ বুখারী, ‘হায়েয’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ‘হায়েযের দিনগুলো ছাড়া হলুদ এবং মেটে রং দেখা’)।
প্রশ্ন (৮) : নিফাস চলাকালীন
স্ত্রী মিলন ঘটলে তার হুকুম কী?
-ফেরদাউস আলম
উত্তর : হায়েয ও
নেফাস চলাকালীন সময়ে স্ত্রী
সহবাস করা হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনার কাছে লোকেরা
ঋতু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, এটা অপবিত্র। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী গমন থেকে
বিরত থাক’ (সূরা আল-বাক্বারাহ ২২২)। এক্ষণে কেউ যদি এই নিষিদ্ধ সময় তথা হায়েয এবং নেফাস চলাকালীন সময় সহবাস করে ফেলে তাহলে তাকে তওবা করতে হবে এবং এক অথবা অর্ধ দ্বীনার সমপরিমাণ স্বর্ণ বা স্বর্ণের বর্তমান বাজার মূল্য ছাদাক্বা করতে
হবে। ইবনু আব্বাস h বলেন, যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে হায়েয অবস্থায় সঙ্গম করল রাসূল a তার সম্পর্কে বলেন, সে এক দ্বীনার বা অর্ধ দ্বীনার ছাদাক্বা করবে (আবূ দাঊদ, হা/২৬৪; নাসঈ, হা/২৮৯; ইবনু মাজাহ, হা/৬৪০)। উল্লেখ্য যে, এক দ্বীনার স্বর্ণ মুদ্রা সমান ৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণ। আর এক গ্রাম স্বর্ণের বর্তমান বাজার মূল্য যা হবে তার সাথে উক্ত সংখ্যা গুণ করলে এক দ্বীনার স্বর্ণের মূল্য বের হবে।
প্রশ্ন (৯) : আমাদের
সমাজে মহিলারা তাদের হায়েয চলাকালীন অন্য কোনো মৃত মহিলাকে দেখতে ও গোসল দিতে
পারে না। এ রকম রীতি কি ঠিক?
-রুমা আকতার
উত্তর : এধরণের রীতিনীতি ঠিক নয়। এগুলো সামাজিক কুসংস্কারমাত্র।
কেননা ঋতুবতী অবস্থায় ছালাত, ছিয়াম, সহবাস ও স্পর্শ করে কুরআন তেলাওয়াত ব্যতীত
অন্য কোন কাজ নিষিদ্ধ নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনার কাছে লোকেরা
ঋতু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, এটা অপবিত্র। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী গমন থেকে
বিরত থাক’ (সূরা আল-বাক্বারাহ ২২২)। আয়েশা g বলেন, ঋতু অবস্থায় আমাদেরকে ছিয়াম ক্বাযা করার এবং ছালাত ছেড়ে
দেয়ার আদেশ দেওয়া হত (ছহীহ মুসলিম, হা/৩৩৫; মিশকাত, হা/২০৩২)।
ইবাদত→ ছালাত
প্রশ্ন (১০) : হিন্দুদের বাড়ীতে ছালাত আদায় করলে ছালাত হবে কি?
-জুয়েল বিন মনিরুল ইসলাম
পত্নীতলা, নওগাঁ।
উত্তর : স্থান পবিত্র হলে এবং সামনে কোন ছবি, মূর্তি না থাকলে অমুসলিমদের বাড়ীতে ছালাত আদায় করা যায়। কেননা ছালাতের নিষিদ্ধ
স্থানগুলো হল, (১) কবরস্থান (২) গোসলখানা (৩) উট বাঁধার স্থান ও (৪) অপবিত্র
স্থান। রাসূলুল্লাহ a বলেন, ‘যমীন সর্বত্রই মসজিদ, কবরস্থান ও গোসলখানা ব্যতীত (আবুদাঊদ, হা/৪৯২; তিরমিযী, হা/৩১৭; মিশকাত, হা/৭৩৭)। অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ a উট বাঁধার স্থানে ছালাত আদায় করতে নিষেধ
করেছেন (তিরমিযী, হা/৩৪৮; মিশকাত, হা/৭৩৯)। উল্লেখ্য যে, মন্দিরের চত্বরেও
ছালাত আদায় করা যায়, যদি সেখানে কোন ছবি ও মূর্তি না থাকে। ওমর c বলেন, আমরা তোমাদের
গীর্জায় ছালাত আদায় করি না এজন্য যে, সেখানে মূর্তি থাকে। আব্দুল্লাহ ইবনে
আব্বাস c এমন গীর্জায় ছালাত আদায় করেছেন, যেখানে কোন ছবি বা মূর্তি ছিল না’(ছহীহ বুখারী, ১/৬২ পৃঃ ‘গীর্জায় ছালাত আদায় করা’ অনুচ্ছেদ)। তবে এর অর্থ এটা নয় যে, গীর্জা বা মন্দিরকে মসজিদ
বানিয়ে নিতে হবে। কেননা স্থায়ীভাবে কোন স্থানকে মসজিদ হিসাবে গ্রহণ করতে গেলে ঐ স্থানটিকে
মসজিদের নামে ওয়াকফ্ করতে হবে (নাসাঈ, হা/৩৩৭২-৭৩)।
প্রশ্ন (১১) : ছবিযুক্ত টাকা পকেটে নিয়ে ছালাত আদায় করলে উক্ত ছালাত কবুল হবে কি?
-জুয়েল বিন মনিরুল ইসলাম
পত্নীতলা, নওগাঁ।
উত্তর : ছবিযুক্ত টাকা পকেটে থাকলে ছালাতের কোন ক্ষতি হবে
না। কেননা সেটা চোখে দেখা যায় না। একদা রাসূলুল্লাহ a আয়েশা g-কে বললেন, তুমি এ ছবি সম্বলিত চাদরটি আমার সামনে
থেকে সরিয়ে নাও। এর ছবি আমার ছালাতের একাগ্রতা নষ্ট করে (ছহীহ বুখারী, হা/৩৭৪; মিশকাত, হা/৭৫৮)। নবী a ছবি সম্বলিত কাপড়টি সরিয়ে
রাখতে বলেছেন। কিন্তু ঐ ছালাত দ্বিতীয়বার আদায় করেননি। সুতরাং, ছালাতের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে কাপড়ে ছবি থাকলে অথবা খোলা স্থানে টাকা বা ছবি
থাকলে ছালাত আদায় করা উচিত নয়। কেননা যেখানে ছবি থাকে সেখানে ফেরেশতা প্রবেশ করে না
(ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৪৯; ছহীহ
মুসলিম, হা/২৬; মিশকাত, হা/৪৪৮৯)।
প্রশ্ন (১২) : একাকী ফজর, মাগরিব ও এশার ছালাত আদায় করলে নিম্নস্বরে ক্বিরাআত করা যাবে কি?
-হারুর
নীলফামারী।
উত্তর : নীরবে পড়া যাবে না; বরং একাকী হলেও
স্বরবে পড়তে হবে। রাতের জেহরী ছালাতগুলো রাসূল a, আবুবকর c ও ওমর c একাকী স্বরবে পড়তেন। নবী করীম a রাতের ছালাতে কোন কোন সময় একটু উচ্চস্বরে ক্বিরআত
করতেন আবার কোন কোন সময় নিম্নস্বরে (আবুদাঊদ, হা/১৩২৮, সনদ হাসান; মিশকাত, হা/১২০২)। তিনি ওমর c-কে নিম্নস্বরে ও আবুবকর c-কে উচ্চস্বরে ক্বিরআত পড়ার
নির্দেশ দেন (আবুদাঊদ,
হা/১৩২৯; মিশকাত, হা/১২০৪)। তবে মাসবুক ব্যক্তি নিম্নস্বরে ক্বিরাআত পড়বে। যাতে
অন্য মুছল্লীর সমস্যা না হয় (ফাতওয়া নাজনা দায়েমা ৬ষ্ঠ খ. পৃ. ৪১১-৪১৫)।
প্রশ্ন (১৩) : তাহাজ্জুদের জন্য উত্তম সময় কখন? ফজরের আযানের পূর্বক্ষণে তাহাজ্জুদ ও বিতর আদায় করা যাবে কি?
-জেসমিন
রামপুরা, জয়পুরহাট।
উত্তর : তাহাজ্জুদ ছালাত রাত্রের শেষ তৃতীয়ংশে পড়া উত্তম। সুবহে ছাদেক হওয়ার
আগ পর্যন্ত বা আযানের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদ ও বিতর পড়তে পারবে। ইবনু আব্বাস h হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি আমার খালা মায়মুনা-এর কাছে রাত কাটিয়েছিলাম। রাসূল a তার পরিবার বর্গের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপ আলোচনা করে শুয়ে পড়লেন। তারপর রাত্রির
শেষ তৃতীয়াংশে তিনি উঠলেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে পাঠ করলেন
إِنَّ فِىْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ
اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِأُوْلِي الْأَلْبَابِ .
এরপর দাঁড়ালেন এবং মিসওয়াক করে ওযূ করলেন। এরপর তিনি এগারো রাক‘আত ছালাত আদায়
করলেন। এরপর বেলাল আযান দিলেন তিনি দু’রাকআত ছালাত আদায় করলেন। তারপর বের হলেন এবং
ফজরের ছালাত আদায় করলেন (ছহীহ বুখারী, হা/৪৫৬৯; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৬৩)।
প্রশ্ন (১৪) : বিতর ছালাত পড়তে ভুলে গেলে করণীয় কী?
-জেসমিন
রামপুরা, জয়পুরহাট।
উত্তর : যদি কেউ বিতর পড়তে ভুলে যায় অথবা
বিতর না পড়ে ঘুমিয়ে যায়, তবে স্মরণ হলে কিংবা রাতে বা সকালে ঘুম
হতে জেগে উঠার পরে সুযোগ মত তা আদায় করবে। আবূ সা‘ঈদ খুদরী c থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিতরের
ছালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ল অথবা আদায় করতে ভুলে গেল সে যেন যখনই স্মরণ হয় বা
ঘুম হতে সজাগ হয়ে আদায় করে নেয় (আবূ দাঊদ, হা/১৪৩১; তিরমিযী, হা/৪৬৫; ইবনু মাজাহ, হা/১১৮৮; মিশকাত, হা/১২৭৯)। অন্যান্য সুন্নাত-নফলের ন্যায় বিতরের ক্বাযাও
আদায় করা যায় (ফিক্বহুস সুন্নাহ, ১/১৪৮ পৃ.; নায়লুল আওত্বার
৩/৩১৮-১৯ পৃ.)।
প্রশ্ন (১৫) : যারা অনেক
দিন থেকে অসুস্থতার কারণে শয্যাশায়ী হয়ে ছালাত আদায় করতে পারে না তারা যদি ঐ
অবস্থায় মারা যায় তাহলে কি ঐ ছালাতের ফারযিয়াত আদায়ের জন্য তাদের পক্ষ থেকে কোনো
দান-ছাদাক্বা করা যাবে?
-কামরুজ্জামান
বুড়িচং, কুমিল্লা।
উত্তর : অসুস্থ্ ব্যক্তির দুইটি অবস্থা হতে পারে- ১. অসুস্থ্
ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। ২. অসুস্থ্ ব্যক্তির জ্ঞান থাকা। মানুষ যতই অসুস্থ্য
হোক না কেন যদি তার জ্ঞান থাকে তাহলে ছালাতের সময় হলে অবশ্যই তাকে ছালাত আদায় করতে
হবে। নিজে ওযূ করতে অক্ষম হলে অন্যের সাহায্যে ওযূ করে ছালাত আদায় করবে। পানি
স্পর্শে সমস্যা হলে তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করবে। দাঁড়িয়ে ছালাত আদায়ে অক্ষম হলে
যেভাবে সুবিধা সেভাবে ছালাত আদায় করবে। ইমরান ইবনু হুসাইন c থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার অর্শরোগ ছিল। তাই রাসূলুল্লাহ a-এর খিদমতে ছালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম, তিনি বললেন,
দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করবে, তাতে সমর্থ না হলে বসে; যদি তাতেও সক্ষম না হও
তাহলে কাত হয়ে শুয়ে’ (ছহীহ বুখারী, হা/১১১৭)। বিশিষ্ট তাবেঈ আতা p বলেন, কিবলার দিকে মুখ করতে অক্ষম ব্যক্তি যে দিকে সম্ভব সে
দিক মুখ করে সালাত আদায় করবে (ছহীহ বুখারী, অধ্যায়-১৯)। সুতরাং
অসুস্থ্য ব্যক্তিকে ছালাত আদায় করাতে সকল প্রকার সহযোগিতা করা একান্ত কর্তব্য। আর
যদি অজ্ঞান হয় তাহলে তার জন্য ছালাতের বিধান প্রযোজ্য নয় (তিরমিযী, হা/১৪২৩; আবূ দাঊদ, হা/৪৪০৩; মিশকাত, হা/৩২৮৭)। উল্লেখ্য যে, কেউ ছালাত আদায় না করে মারা গেলে তার
পক্ষ থেকে কাফফারার কোনো বিধান নেই।
প্রশ্ন (১৬) : আমাদের (মেয়েরা) হোস্টেলে ৪ জনকে এক রুমে
থাকতে হয়। ৩ জন মুসলিম ও ১ জন হিন্দু। হিন্দু মেয়েটি রুমে ছোট একটা মূর্তি রাখে
ও সন্ধ্যায় মাগরিবের সময় ধুপকাঠি জ্বালিয়ে পূজা করে। আমরা সেই রুমেই ছালাত আদায়
করি। কেননা হোস্টেলে মেয়েদের ছালাতের জন্য আলাদা কোনো রুম নেই। আমাদের ছালাত কি
হচ্ছে? নাকি বাতিল হচ্ছে? এক্ষেত্রে করণীয় কী?
সুমাইয়া ইয়াসমিন
পুঠিয়া,
রাজশাহী।
উত্তর : ইসলামে ছবি-মূর্তি একটি নিষিদ্ধ হারাম বিষয়। আল্লাহর
রাসূল a মক্কা বিজয়ের পর সর্বপ্রথম মক্কার ভিতর যে ৩১৩টি মূর্তি ছিল তা ভেঙ্গে চৌচির
করেন এবং মুসলিমদের ইবাদতের জন্য মক্কাকে মূর্তি মুক্ত করেন। যে ঘরে মূর্তি বা ছবি
থাকে সে ঘরে আল্লাহর রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। এই মর্মে আবূ তালহা c সূত্রে নবী a থেকে বর্ণিত, নবী a বলেন, যে ঘরে কুকুর এবং প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে ফেরেশতাগণ প্রবেশ করে না’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৪৯; মিশকাত,
হা/৪৪৮৯)। অত্র হাদীছ এবং ঘটনা দ্বারা
প্রমাণিত হয় যে, একজন মুসলিমের জন্য অবশ্য কর্তব্য যে, সে যে ঘরে বসবাস করবে সে
ঘরকে ছবি এবং মূর্তি মুক্ত করা। জিবরীল e নবী a-এর ঘরের দরজায় ঝুলানো কারুকার্য খচিত পর্দায় ছবি এবং বাসায়
কুকুর থাকার কারণে প্রবেশ না করে ঘুরে চলে যায় (তিরমিযী, হা/২৯৭০; আবূ দাঊদ, হা/৪১৫৮; মিশকাত, হা/৪৫০১)। উমার c বলেছেন, আমরা তোমাদের গির্জাসমূহে প্রবেশ
করি না, কারণ তাতে মূর্তি রয়েছে। ইবনু আব্বাস h গির্জায় ছালাত আদায় করতেন। তবে যেগুলোতে মূর্তি
রয়েছে সেগুলোতে নয় (ছহীহ
বুখারী, হা/৫৪)। উল্লিখিত হাদীছসমূহ দ্বারা স্পষ্টত
প্রমাণ হয় যে, যে ঘরে প্রকাশ্য ছবি মূর্তি থাকবে সে ঘরে ছালাত হবে না। অতএব
ইবাদতের জন্য ঘরকে ছবি মূর্তি মুক্ত করতে হবে। অন্যথায় রুম পরিবর্তন করতে হবে বা
কর্তৃপক্ষকে অবগত করত রুমমেন্টকে অন্যত্র শিপ্ট করতে হবে। কেননা মূর্তি বিশিষ্ট
ঘরে একজন মুসলিমের বসবাস করাই বৈধ নয়।
প্রশ্ন (১৭) : রুকূ ও
সিজদার তাসবীহ কি বিজোড় সংখ্যক পড়তে হবে?
-ড. গোলাম মোর্তুজা
পদ্মা আবাসিক, রাজশাহী।
উত্তর : রুকু ও সিজদায় যতবার ইচ্ছা তাসবীহ পড়া যাবে জোড়-বেজোড়ের কোনো
হিসাব নেই। তবে তিনবার পড়া সুন্নাত এবং একবার পড়া জরুরী। হুযায়ফা c বলেন, তিনি এক রাতে নবী a-কে ছালাত আদায় করতে দেখেন। এ সময় তিনি আল্লাহু
আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার বলে যুল মালাকূতি ওয়াল জাবারূতি ওয়াল কিবরিয়া-ই
ওয়াল আযমাতি পাঠ করেন। অতপর তিনি সূরা বাক্বারা পড়া শুরু করেন।
তারপর তিনি রুকু করেন। তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন যতক্ষণ প্রায় রুকু করলেন ততক্ষণ। তিনি
রুকুতে ‘সুবহানা রব্বিয়াল আযীম, সুবহানা রব্বিয়াল আযীম’ পাঠ করেন। অতঃপর তিনি রুকু
থেকে উঠে দাড়িয়ে থাকলেন প্রায় ততক্ষণ রুকুতে ছিলেন যতক্ষণ। এ সময় তিনি ‘লি
রব্বিয়াল হামদ’ পাঠ করেন। এরপর তিনি সিজদায় যান। সিজদায় তিনি প্রায় ততক্ষণ ছিলেন
দাঁড়িয়ে ছিলেন যতক্ষণ। তিনি সিজদায় ‘সুবাহানা রব্বিয়াল আলা’ পাঠ করেন’... (আবূ দাঊদ, হা/৮৭৪; ছহীহ মুসলিম,
হা/৭৭২; নাসাঈ)। হুযাযফা ইবনু ইয়ামান c থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল a-কে রুকুতে তিনবার ‘সুবাহানা রব্বিয়াল আযীম’ এবং সিজদায়
‘সুবহানা রব্বিয়াল আলা’ পড়তে শুনেছেন (ইবনু
মাজাহ, হা/৮৮৮)।
প্রশ্ন (১৮) : সুন্নাত ছালাত আদায় না করলে কি পাপ হবে?
-মুমিন
দিনাজপুর।
উত্তর : সুন্নাত ছালাতগুলোর গুরুত্ব ও ফযিলত অনেক বেশী। রাসূল a-এর স্ত্রী উম্মে হাবীবা g বলেন, আমি রাসূল a-কে বলতে শুনেছি, ‘যে মুসলিম বান্দা আল্লাহর জন্য দিনে ১২ রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করবে (ফরয নয়) তার জন্য আল্লাহ জান্নাতে একটি ঘর নির্মান করবেন’। উম্মে হাবীবা ম বলেন, এই হাদীছ শোনার পর থেকে সর্বদা আমি
এই ছালাত পড়তাম (ছহীহ মুসলিম, হা/৭২৮)। ইবনু মাজাহ’র বর্ণনায় আছে, তা হল, যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত ও পরে দুই রাক‘আত, মাগরিবের পরে দুই রাক‘আত, এশার পরে দুই রাক‘আত এবং ফজরের
পূর্বে দুই রাক‘আত (ইবনু মাজাহ, হা/১১৪০, ছহীহ)। রাসূল a আরো বলেন, ক্বিয়ামতের
দিন
বান্দার
ফরজ
ছালাতে
ঘাটতি
থাকলে
তা
এই
সুন্নাত
দ্বারা
পূরণ
করা
হবে (আবূ দাঊদ, হা/৮৬৪; তিরমিযী, হা/৪১৩; মিশকাত,
হা/১৩৩০)। সুতরাং সুন্নাত ছালাতগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়া যরুরী। তবে কোনো কারণে তা আদায় করতে না পারলে গুনাহ হবে না।
প্রশ্ন (১৯) : ছালাতের মধ্যে হাঁচি আসলে করণীয় কী?
-জুয়েল বিল মনিরুল ইসলাম
পত্নীতলা, নওগাঁ।
উত্তর : ছালাতের মধ্যে হাঁচি দাতা ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলতে পারবে। তবে উচ্চৈঃস্বরে নয়। বরং নিম্নস্বরে বলবে। রিফাআ ইবনু রাফি
c থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি একবার রাসূল
a-এর
পিছনে ছালাত আদায়
করছিলাম। তখন আমার
হাঁচি এলো আমি
বললাম, اَلْحَمْدُ لِلهِ حَمْدًا
كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ.
রাসূল a ছালাত শেষ করে বললেন, ছালাতে কে কথা
বলছিল? কিন্তু কেউ উত্তর দিল না। দ্বিতীয়বার একই প্রশ্ন করলেন। কিন্তু কেউ উত্তর
দিল না। তৃতীয়বার প্রশ্ন করলে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল আমি কথা বলছিলাম। তিনি
বললেন, কী বলছিলে? আমি বললাম, الْحَمْدُ لِلهِ حَمْدًا كَثِيرًا
طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ অতঃপর নবী করীম a বললেন, সেই যাতের কসম, যাঁর আমার প্রাণ আছে! ত্রিশেরও
অধিক ফেরেশতা এসেছিল, কে আগে এর ছওয়াব উঠিয়ে নিতে পারে (ছহীহ
মুসলিম,
হা/৬০০)। তবে তার জওয়াব দেয়ার কোন দলীল নেই।
ইবাদত→ছিয়াম
প্রশ্ন (২০) : আমার উম্মাত ততদিন সুন্নাতের উপর থাকবে যতদিন তারা ইফতার করার জন্য তারকা দেখার অপেক্ষা করবে না- ইবনু হিব্বানে বর্ণিত এ হাদীছটি কি ছহীহ?
-আব্দুর রহমান
মোল্লাহাট,
বাগেরহাট।
উত্তর : হ্যাঁ, প্রশ্নোল্লিখিত হাদীছটি ছহীহ। সাহল
ইবনু সা‘দ c বলেন, রাসূল a বলেছেন, ‘আমার উম্মত ততদিন সুন্নাতের উপর থাকবে, যতদিন তারা ইফতার
করার জন্য তারকা দেখার অপেক্ষা না করবে’। বর্ণনাকারী আরো বলেন, নবী a যখন ছিয়াম রাখতেন, তখন কাউকে উপরে উঠার আদেশ দিতেন। যখন সে বলত সূর্য ডুবে গেছে, তখন তিনি ইফতার করে নিতেন’ (ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৩৫১০; ছহীহুল জামে‘, হা/৪৭৭২)।
ইবাদত→হজ্জ-উমরা
প্রশ্ন (২১) : একজন ব্যক্তি জীবনে কতবার উমরা করতে পারে। তার কি নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ আছে?
-আনোয়ার হোসেন
কাশিমপুর, গাজীপুর।
উত্তর : একজন ব্যক্তি জীবনে একাধিকবার উমরা করতে পারে যা রাসূল a-এর বাণী থেকে বুঝা যায়।
কিন্তু তার সংখ্যা নির্দিষ্ট নাই। আবূ হুরায়রা c
বলেন, রাসূল a বলেছেন, ‘এক উমরা থেকে পরবর্তী উমরা
মধ্যবর্তী সময়ের (ছগীরা গুণাহের) কাফফারাস্বরূপ। আর হজ্জে মবরূরের (ক্রটিমুক্ত)
একমাত্র প্রতিদান জান্নাত (নাসাঈ, হা/২৬২২; ইবনু মাজাহ, হা/২৮৮৮)।
উল্লেখ্য যে, এক
সফরে দুই উমরাহ করা যাবে না। যেমন হজ্জ বা উমরা করতে গিয়ে এক ব্যক্তি একাধিক ওমরা করতে
পারবে না। এ বিষয়ে সঊদী আরবের সাবেক প্রধান মুফতী শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায p বলেন, ‘কিছু সংখ্যক লোক
হজ্জের পর অধিক সংখ্যক উমরাহ করার আগ্রহে ‘তানঈম’ বা জি‘ইর্রানাহ নামক স্থানে
গিয়ে ইহরাম বেঁধে আসেন। শরী‘আতে এর কোনই প্রমাণ নেই’ (দলীলুল হাজ্জ ওয়াল
মু‘তামির, অনু : আব্দুল মতীন
সালাফী,
‘সংক্ষিপ্ত
নির্দেশাবলী’ অনুচ্ছেদ, মাসআলা-২৪, পৃঃ ৬৫)। সঊদী
আরবের সাবেক ২য় মুফতী শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ছালেহ আল-উছায়মীন
p বলেন, এটি জায়েয নয়। বরং বিদ‘আত। কেননা এর পক্ষে
একমাত্র দলীল হ’ল বিদায়
হজ্জের সময় আয়েশা g-এর ওমরা। অথচ ঋতু এসে যাওয়ায় প্রথমে হজ্জে
ক্বিরান-এর ওমরা করতে ব্যর্থ হওয়ায় হজ্জের পরে তিনি এটা করেছিলেন। তার সাথে ‘তানঈম’ গিয়েছিলেন তার ভাই
আব্দুর রহমান। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি পুনরায় ওমরাহ করেননি। রাসূলুল্লাহ a-এর সাথী অন্য কোন ছাহাবীও এটা করেননি’ (ঐ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া, প্রশ্নোত্তর সংখ্যা
১৫৯৩; ঐ, লিক্বা-উল বাব আল-মাফতূহ, অনুচ্ছেদ ১২১, মাসআলা ২৮)। শায়খ
আলবানীও একে নাজায়েয বলেছেন এবং একে ‘ঋতুবতীর ওমরা’ (عمرة الحائض) বলেছেন (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৯৮৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। হাফেয
ইবনুল ক্বাইয়িমও একে নাজায়েয বলেছেন (যাদুল মা‘আদ, ২/৮৯ পৃ.)।
প্রশ্ন (২২) : মাহরামের সামনে পর্দার ক্ষেত্রে মহিলার জন্য কী কী ছাড়
রয়েছে? মাহরামের সাথে মহিলারা কি হজ্জে যেতে পারবে এবং সে কতটুকু পর্দা করবে?
আফছানা বিনতে আজাদ
মহাদেবপুর, নওগাঁ।
উত্তর : মাহরাম পুরুষের সামনে একজন নারী পূর্ণ পর্দা না করে বরং
স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ
না করে’ (আন-নূর, ৩১)। এখানে ‘সৌন্দর্য’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সুরমা, মিসওয়াক ও মেহেদী (তাফসীরে ফাতহুল কাদীর, সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসীর)। তাফসীরে ইবনু কাছীরে বলা হয়েছে- ‘সৌন্দর্য’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কানের দুল, বাজুবন্ধ বা চুড়ি, নুপুর ও গলার হার। (তাফসীরে ইবনু কাছীর)। তাই মাহরামের সামনে
নারী মাথা, চুল, মুখ, হাত ও পা প্রকাশ করে রাখতে পারে।
মাহরাম সাথে না থাকলে কোনো মহিলার জন্য হজ্জে যাওয়া
নিষিদ্ধ (ছহীহ বুখারী, হা/১৮৮৬;
ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৩৮)। হজ্জে গিয়ে ইহরাম অবস্থায় নারীদের জন্য মুখ ঢেকে রাখা ও হাতমোজা পরা যাবে না
(ছহীহ বুখারী, হা/১৮৩৮; মিশকাত, ২৬৭৮)। তবে পরপুরুষের সামনে পড়লে মাথার কাপড়টি মুখের উপর টেনে দেওয়া
যাবে (ইরওয়াউল গালীল, হা/১০২৩; মিশকাত, হা/২৬৯০)।
ইবাদত→যাকাত-ছাদাক্বা
প্রশ্ন (২৩) : কিছুদিন পরে আমরা একটি মাদরাসা করতে চাই। তাই মাদরাসা করার নিয়তে যাকাতের টাকা রেখে দেয়া যাবে কি?
-আব্দুল্লাহ
ফুলবাড়ী, দিনাজপুর।
উত্তর : কোন হক্বদারকে মাহরুম না করে মাদরাসায় যাকাতের অর্থ প্রদান করা
বা উক্ত অর্থ দিয়ে মাদরাসার নামে জমি ক্রয় করা এবং ছাত্রদের জন্য আবাসিক বা একাডেমিক
ভবন নির্মাণ করা যাবে। তবে শর্ত হল অবশ্যই মাদরাসাটি ব্যক্তি মালিকানা ও
শিরক-বিদ‘আতমুক্ত হতে হবে এবং তা কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক পরিচালিত হতে হবে। যেখানে
কুরআন, হাদীছ, তাফসীর, উছূল, ফিক্বহ, ফারায়েয, বালাগাত, আবরী সাহিত্য
ও ব্যাকরণসহ প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করাতে হবে। মূলত এ ধরনের মাদরাসাগুলোতেই
প্রকৃত ইলম ও দ্বীন চর্চা হয় এবং ইসলামকে টিকিয়ে রাখতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখে থাকে।
এ ধরনের মাদরাসাগুলোকে যাকাতের ৮টি খাতের মধ্যে ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ খাতের অন্তর্ভুক্ত করা হয় (সূরা আত-তওবাহ : ৬০)।
এমনি এক প্রশ্নোত্তরের শেষাংশে একবিংশ শতাব্দির শ্রেষ্ঠ
ফক্বীহ শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন p বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক এবং
একাডেমিক ভবন নির্মাণে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা জায়েয। বই ক্রয় এবং ভবন তৈরি উভয় বিষয়ের
মাঝে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, কিতাব থেকে একটু বেশী উপকৃত হয়। কিতাব
ছাড়া ইলম অনেকটাই অসম্ভব, যা ভবনের সাথে সম্পৃক্ত নয়। তাছাড়া
সেখানে যখন গরীব-ইয়াতীম ছাত্ররা থাকবে, তখন সেই গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের দারিদ্র্যতার
জন্য ভবন নির্মাণে ব্যয় করা যাবে (ফকীর বা দরিদ্র ব্যক্তি ৮টি খাতের একটি)। অনুরূপ
অন্যান্য মাদরাসাও নির্মাণ করা যাবে যখন মসজিদে দারস দেয়া সম্ভব হবে না। আল্লাহই সর্বাধিক
অবগত (মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, মাজমূ‘ঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল, ১৮তম খণ্ড, পৃ. ২৫২-২৫৩)।
ইবাদত→ যিকির ও দু‘আ
প্রশ্ন (২৪) : এক মসজিদের আযানের জবাব দেয়ার পর যদি আরেক মসজিদের আযান শুনতে পাই তারও কি জবাব দিতে হবে?
-হারুন
নীলফামারী।
উত্তর : এক আযানের জওয়াব দেয়ার পর আরেক আযানের জওয়াব দেয়া
বাধ্যতামূলক নয়। তবে সম্ভব হলে একাধিক আযানের উত্তর দিবে। কেননা আযানের উত্তর দেয়ার জন্য
নির্দিষ্টভাবে একবারকে বা কোন মসজিদের আযানকে বুঝানো হয়নি। বরং রাসূল a বলেছেন, ‘তোমরা যখনই আযান শুনবে তখনই মুয়াজ্জিন যা বলে তোমরাও ঠিক তাই বলবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬১১; ছহীহ মুসলিম, হা/৩৮৩)।
তাছাড়া আযানের উত্তর দেয়ার জন্য অশেষ নেকী রয়েছে। রাসূলুল্লাহ a
বলেছেন, ‘তোমরা মুয়াযযিনের আযান শুনলে উত্তরে সে শব্দগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে।
আযান শেষে আমার ওপর দরূদ পাঠ করবে। কারণ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে
(এর পরিবর্তে) আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর
কাছে ‘ওয়াসীলা’ প্রার্থনা করবে। ‘ওয়াসীলা’ হলো জান্নাতের
সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা
আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু একজন পাবেন। আর আমার আশা এ বান্দা আমিই হব। তাই যে
ব্যক্তি আমার জন্য ‘ওয়াসীলা’র দু‘আ
করবে, কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার জন্য সুপারিশ
করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে (ছহীহ মুসলিম, হা/৩৮৪; আবূ দাঊদ, হা/৫২৩; মিশকাত, হা/৬৫৭)।
প্রশ্ন (২৫) : জুম‘আর ছালাত শেষে কেউ যদি তার সুস্থতার জন্য দু‘আ চায় তাহলে কি তার জন্য সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা যাবে?
-শামিম
ডোমার, নীলফামারী।
উত্তর : সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা যাবে না। কেননা এর পক্ষে শারঈ বিধান নেই। বরং সকল মুছল্লীর কাছে আমভাবে দু‘আ প্রার্থী হওয়ার চেয়ে কোন পরহেযগার হক্বপন্থী আলেমের নিকটে দু‘আ চাওয়া উত্তম। তিনি চাইলে এমনিতেই দু‘আ করবেন অথবা
ওযূ করে দু’রাক‘আত ছালাত পড়ে হাত তুলে দু‘আ করবেন (ছহীহ বুখারী,
২/৯৪৪ পৃ.)। সবার নিকট
দু‘আ চাইলেও উপরোক্ত নিয়মে নিজ নিজ দু‘আ করবে। রাসূলুল্লাহ a কোন রোগীর নিকট গেলে বা
তার নিকট কোন রোগীকে আনা হলে তিনি নিম্নোক্ত দু‘আ বলতেন,
أَذْهِبِ
الْبَأسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِىْ لَاشِفَاءَ إِلَّاشِفَاءُكَ
شِفَاءً لَّا يُغَادِرُ سَقَمًا.
উচ্চারণ : আযহিবিল বা’স রাব্বান্না-স
ওয়াশফি আনতাশ শা-ফী লা শিফা-আ ইল্লা শিফ-উকা শিফ-আন লা ইয়ুগা-দিরু সাক্বামা।
অর্থ : কষ্ট দূর কর হে মানুষের প্রতিপালক!
আরোগ্য দান কর। তুমিই আরোগ্য দানকারী। কোন আরোগ্য নেই তোমার আরোগ্য ছাড়া। যে আরোগ্য
ধোঁকা দেয় না কাউকে (ছহীহ
বুখারী, হা/৫৬৭৫; ছহীহ মুসলিম, হা/২১৯১; মিশকাত, হা/১৫৩০)।
প্রশ্ন (২৬) : ইস্তিগফারের জন্য
দিনে একশবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ পাঠ করা যাবে কি?
-নাজনীন পারভীন
আক্কেলপুর, দিনাজপুর।
উত্তর : ইস্তিগফারের জন্য দিনে একশতবার আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করা যাবে।
আগার আল মুযানী c বলেছেন, আমার অন্তরে মরিচা পড়ে আর ওই মারিচা পরিষ্কার করার জন্য
আমি দিনে একশতবার করে ইস্তিগফার পাঠ করি (ছহীহ মুসলিম, হা/২৭০২; তাবারানী, হা/৮৮৩; মুসতাদরাকে লিল হাকিম, হা/১৮৮১)। তবে অপর বর্ণনায় সত্তরের অধিকবার পড়ার কথাও
এসেছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল a বলেছেন,‘আল্লাহর কসম! আমি প্রতিদিন সত্তরবারেরও বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই
ও তওবা করি (ছহীহ
বুখারী, হা/৬৩০৭; মিশকাত, হা/২৩২৩)।
প্রশ্ন (২৭) : সাপ ও বিচ্ছু থেকে
বাঁচার জন্য কী দু'আ পড়তে হবে?
- মিনহাজ পারভেজ
হড়গ্ৰাম, রাজশাহী।
উত্তর : রাসূল a-এর শেখানো একটি দু‘আ বর্ণিত আছে, সেটি আমল করলে সাপ-বিচ্ছুর দংশন থেকে বাঁচা যাবে। আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল a-এর কাছে একজন লোক এসে বলল, আল্লাহর রাসূল! আমি গতরাতে একটি বিচ্ছুর দংশনে অনেক কষ্ট পেয়েছি। তিনি বললেন, সন্ধ্যাবেলায় তুমি যদি এই দু‘আ পড়তে। তাহলে সে তোমাকে কোনো ক্ষতি করতে
পারত না। দু’আটি হল,
أَعُوذُ
بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
অর্থ : আমি আল্লাহ তাআলার পূর্ণ কালাম দ্বারা তাঁর কাছে তাঁর সৃষ্টির
অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, (ছহীহ মুসলিম,
হা/২৭০৯; মিশকাত, হা/২৪২৩)। তিরমিযীতে তিনবার পাঠের কথা উল্লেখ আছে (আলবানী, তিরমিযী, হা/৩৪৩৭)।
আদব-আখলাক
প্রশ্ন (২৮) : রাসুলুল্লাহ a-এর প্রতি
ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রেখে কারো নাম ‘মুহাম্মাদ’ বা ‘আহমাদ’ রাখা যাবে কি?
-ফুরকান
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
উত্তর : আহমাদ এবং মুহাম্মাদ এই নাম দু’টি আল্লাহ প্রদত্ত
আমাদের নবী a এর নাম (আছ-ছাফ, ৬;
আল-আহযাব, ৪০)। এই দু’টি নাম দ্বারা ব্যক্তির নাম
রাখাতে শারয়ী কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। জাবের ইবনু
আবদুল্লাহ c থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে
এক ব্যক্তির একটি পুত্র জন্ম নিল। সে তার নাম রাখল মুহাম্মাদ। তখন তার গোত্রের লোকেরা তাকে বলল, আমরা তোমাকে নবী a-এর নামে নাম রাখার অবকাশ দিব না। সে তখন তার ছেলেটিকে
পিঠে বয়ে নিয়ে চলল এবং রাসুলুল্লাহ a-এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার একটি ছেলের
জন্ম হলে আমি তার নাম রাখলাম মুহাম্মাদ। তাতে আমার গোত্রের লোকেরা আমাকে বলছে, আমরা তোমাকে রাসুলুল্লাহ a-এর নামে নাম রাখার অবকাশ দিব না। তখন রাসুলুল্লাহ a বললেন, তোমরা আমার নামে নাম রাখ, তবে আমার উপনাম অনুসারে উপনাম গ্রহণ করবে না। কেননা আমি হলাম قَاسِمٌ বা বণ্টনকারী; তোমাদের মধ্যে বণ্টন করে থাকি। সুতরাং তোমরা আবুল
কাসিম কুনিয়াত গ্রহন করবে না’ (ছহীহ
বুখারী, হা/৩১১৫)। উল্লেখ্য
যে, রাসূলুল্লাহ a–এর কুনিয়াত দ্বারা নাম
না রাখার বিধানটি ছিল তাঁর জীবদ্দশায় প্রযোজ্য। তবে বর্তমানে তাঁর নাম, উপনাম ও
কুনয়াত দ্বারা নাম রাখায় কোন সমস্যা নেই।
হালাল-হারাম→ ঘুষ, দুর্নীতি
প্রশ্ন (২৯) : কয়েক বছর
আগে ঘুষ দিয়ে চাকরি নিয়েছি। কিন্তু এটা যে মহা অন্যায় তখন জানতাম না। বতর্মানে
যদি ক্ষমা চাই তাহলে কি আমার বেতন হালাল হবে? না-কি চাকুরী ছেড়ে দিতে হবে?
-মাসুদ রানা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
উত্তর : ঘুষ সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং অভিশপ্ত বিষয়। জাবের c থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ a অভিশাপ করেছেন, সুদ গ্রহীতার উপর, সুদদাতার উপর, এর লেখকের উপর ও উহার সাক্ষীদ্বয়ের উপর এবং বলেছেন
এরা সকলেই সমান (ছহীহ
মুসলিম, হা/৪১৭৭; মিশকাত, হা/২৮০৭)। কোনো
ব্যক্তি যোগ্য হিসাবে নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও যদি ঘূষ ছাড়া চাকুরি না হয়; তাহলে
সে ব্যক্তি তার প্রাপ্য অধিকার পাওয়ার জন্য ঘূষ দিয়ে চাকুরি নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে
ঘূষ গ্রহিতা ব্যক্তি বা কোম্পানী পাপী হবে। এমন ব্যক্তির চাকুরি দ্বারা উপার্জিত
বেতন/অর্থ বৈধ হবে (লাজনা
দায়েমা, ফাতাওয়া-৭২২৬৮)। পক্ষান্তরে যদি কোনো ব্যক্তি অযোগ্য
হিসাবে নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও ঘূষের বলে চাকুরি নেয়। তাহলে তা ধোকা হবে এবং এই
চাকুরি দ্বারা উপার্জিত বেতন/অর্থ হারাম হবে এবং যোগ্য ব্যক্তির হক্ব নষ্টের জন্য
কাবীরা গুনাহ হবে। এই অবস্থায় হারাম থেকে বাঁচার জন্য সেই চাকুরি ছেড়ে দিতে হবে।
হালাল-হারাম→ প্রসাধনী-সৌন্দর্য
প্রশ্ন: (৩০) বর্তমানে যুবতী
মেয়েরা বিউটি পার্লারে গিয়ে বিউটিশিয়ানদের মাধ্যমে যেভাবে রূপচর্চা করছে, তা কি শরী‘আত সম্মত?
উত্তর : বর্তমানে বিউটিশিয়ানদের মাধ্যমে মেয়েরা যেভাবে রূপচর্চা
করছে এবং চুল ছেঁটে, ভ্রু চিকন করে ও উলকী ব্যবহারের
মাধ্যমে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে, তা শরী‘আত সম্মত নয়।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ h হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সৌন্দর্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে শরীরে উলকি অঙ্কনকারী, উলকি গ্রহণকারী, চুল-ভ্রু উত্তোলনকারী, দাঁত চিকনকারী ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টিকারী নারীদের
প্রতি আল্লাহ লা‘নত করেছেন। কেননা তা তাঁর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে দেয়’.... (ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৩১; ছহীহ মুসলিম, হা/২১২৫; মিশকাত, হা/৪৪৩১)| নবী a আরো বলেন, ‘কৃত্রিম চুল ব্যবহারকারী ও এর
বেশধারী এবং শরীরে উলকি অঙ্কনকারী ও উলকি গ্রহণকারী নারীদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা
লা‘নত করেছেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৩৩; ছহীহ মুসলিম, হা/২১২২; মিশকাত, হা/৪৪৩০)।
উল্লেখ্য যে, পার্লারের বিউটিশিয়ানরা যুবতী মেয়েদের
সাজানোর সময় তাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্পর্শ ও দর্শন করে তা স্বামী বা
অন্যের নিকটে প্রকাশ করতে পারে। ফলে তারা তাদেরকে অন্তরের চোখ দিয়ে কল্পনা করে ও
দেখে থাকে। যা যিনার শামিল। আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ h হতে বর্ণিত। রাসূল a বলেন, ‘কোনো নারী
যেন অপর কোনো নারীর সাথে ঘনিষ্ঠতার সাথে সাক্ষাতের পরে স্বীয় স্বামীর সামনে উক্ত
নারীর (রূপের) এরূপ বর্ণনা না করে, যাতে স্বামী যেন তাকে
দেখছে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫২৪০; ছহীহ মুসলিম, হা/২১২২; মিশকাত, হা/৩০৯৯)। অতএব এরূপে রূপ চর্চা করা যাবে না। তবে নিষিদ্ধ
সামগ্রী ব্যতীত বৈধ সামগ্রী দ্বারা বাড়ীতে স্বামীর মনোরঞ্জনের জন্য সাজতে পারে।
হালাল-হারাম→ আচার-অনুষ্ঠান
প্রশ্ন (৩১) : বিয়েতে
জাকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠান করা এবং নতুন বউকে আগত মেহমানদেরকে দেখানোর বিধান কী?
-আহসানুল্লাহ বিন আজাদ
মহাদেবপুর, নওগাঁ।
উত্তর : সাদামাঠাভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান করা উত্তম। তবে
কারো যদি সামর্থ্য থাকে বিয়েতে অপচয় না করে অনৈসলামীক কার্যকলাপ (গান-বাজনা,
আতশবাজী ইত্যাদী) থেকে বিরত থেকে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী
সকলকেই বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত করতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘রহমানের বান্দা
তারাই যারা খরচ করলে অপব্যয় করে না আবার কৃপনতাও করে না। তারা এই দুইয়ের মাঝে
ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় অবস্থান করে’ (আল-ফুরক্বান, ২৫/৬৭)। তিনি আরো বলেন, ‘নিশ্চয় তিনি
(আল্লাহ) অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না’ (আল-আনআম, ৬/১৪১)। আনাস c বলেন, রাসূল a আব্দুর রহমান ইবনু আউফের গায়ে
হলুদ চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, এটা কী? সে বলল, (আল্লাহর রাসূল!) আমি খেজুর দানার
সমপরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে এক মহিলাকে বিয়ে করেছি। তখন রাসূল a বললেন, আল্লাহ তোমাকে বরকত দান
করুক! তুমি একটি ছাগল দিয়ে হলেও অলিমা করো’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫১৬৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪২৭;
মিশকাত, হা/৩২১০)।
অন্যদিকে নতুন বউকে ঢালাওভাবে সকলের দেখার জন্য
উম্মুক্ত করে দেওয়া হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা বাড়িতে অবস্থান করো,
পূর্বেকার জাহেলী যুগের নারীদের মতো রূপ-সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না’ (সূরা আল-আহযাব, ৩৩/৩৩)। ইবনু উমার c বলেন, রাসূল a বলেছেন, তিন শ্রেণির ব্যক্তির উপর আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত হারাম করেছে। ১.
নেশাদার দ্রব্য পানকারী, ২. পিতা-মাতার অবাধ্য সান্তান, ৩. ঐ পুরুষ যে তার পরিবারে
বেহায়াপনা, বেলেল্লাপনা, অশ্লিলতা ও বেপর্দার সুযোগ করে দেয়’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/৬১১৩; মিশকাত,
হা/৩৬৫৫)।
প্রশ্ন (৩২) : প্রতিযোগিতামূলক
কোনো ‘কুইজ প্রতিযোগিতা’য় পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে
শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার ক্ষেত্রে কি লটারি করা যাবে?
-আব্দুল আহাদ
রানীরবন্দর, চিরিরবন্দর, দিনাজপুর।
উত্তর : কুইজ প্রতিযোগিতা ও শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্দেশ্য যদি হয়
ইসলাম ও মুসলিমদের কল্যাণকর কাজের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা তাহলে তাতে লটারী করা
যায়। কেননা যে লটারীতে টাকা-পয়সার হার-জিত থাকে না সে লটারী জায়েয। যেমন
রাসূলুল্লাহ a লটারীর মাধ্যমে স্ত্রীদেরকে
যুদ্ধে নিয়ে যেতেন। আয়েশা g বলেন, রাসূলুল্লাহ a যখন কোন সফরে যেতে ইচ্ছা করতেন, তখন তার স্ত্রীদের মধ্যে লটারীর
ব্যবস্থা করতেন এবং তাতে যার নাম উঠত তিনি তাকেই সাথে নিয়ে যেতেন (ছহীহ বুখারী, হা/২৫৯৩; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৭০; মিশকাত, হা/৩২৩২)।
উল্লেখ্য যে, হারাম হল ঐ লটারী যার মাধ্যমে অনেকের নিকট থেকে টাকা নিয়ে ২/৪
জনকে পুরস্কৃত করা হয় এবং তাতে জুয়ার সংমিশ্রন থাকে। কেননা জুয়ামূলক সব ধরনের
খেলাধুলা ও প্রতিযোগিতা হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তির বেদী এবং
শুভ-অশুভ নির্ণয়ের তীর এসব গর্হিত বিষয়, শয়তানী কাজ। সুতরাং এ থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকো, যেন তোমাদের কল্যাণ
হয় (সূরা আল-মায়েদাহ, ৯০)।
হালাল-হারাম→খাদ্য-পানীয়
প্রশ্ন (৩৩) : শিশু ৩/৪ বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করলে পাপ হবে কি?
-মোফাজ্জল
গাজীপুর।
উত্তর : সন্তানকে পূর্ণ দুই বছর দুধ খাওয়ানো যাবে। তবে পিতা-মাতা ইচ্ছা
করলে দুই বছরের কম-বেশীও করতে পারে। তাতে কোন পাপ হবে না (সূরা বাক্বারাহ : ২৩৩; তাফসীর ইবনে
কাছীর ২/৩৪২ পৃঃ)। দুই বছরের
বিষয়টি দুধ মা প্রমাণের জন্য। নিজ বাচ্চাকে মা প্রয়োজন মত দুধ পান করাবে।
ব্যবসা-বাণিজ্য →সূদী কারবার
প্রশ্ন (৩৪) : আমি এটিএম কার্ড ব্যবহার করি। এখানে মাসে মাসে টাকা সূদ
দেওয়া হয়। আমি সেই টাকাগুলো (সূদের টাকা) কোনো গরীব-মিসকীন বা কোনো মসজিদে দান
করলে নেকী বা পাপ হবে?
আহসানুল্লাহ বিন আজাদ
মহাদেবপুর, নওগাঁ।
উত্তর : সূদের টাকা ভক্ষণ করলে পাপ হবে। কিন্তু কাউকে তা দিয়ে দিলে নেকী
বা পাপ কিছুই হবে না। কারণ সূদের টাকা কোনো ব্যক্তির নিজের বৈধ সম্পদ নয়। বরং সূদ আদান-প্রদান করা সুস্পষ্ট
হারাম (সূরা আল-বাক্বারা, ২/২৭৫)। তাই নেকীর উদ্দেশ্য ছাড়া মাদরাসা কিংবা জনকল্যাণমূলক কাজে দিয়ে দিতে হবে। তবে মসজিদে না দেওয়াই উচিত।
চিকিৎসা
প্রশ্ন (৩৫) : আযল ব্যতীত জন্মনিয়ন্ত্রণের যেকোন মাধ্যম গ্রহণ করে বীর্য অপচয় করলে কি বাচ্চা নষ্ট করার মত গুনাহ হবে?
-জেসমিন
রামপুরা, জয়পুরহাট।
উত্তর : গুরুতর কারণ যেমন- অসুস্থতা, মৃত্যুর আশঙ্কা
ইত্যাদি ছাড়া অধিক সন্তানের ভরণ-পোষণের ভয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা শরী‘আত পরিপন্থী কাজ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা খাদ্যের
ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। আমি তাদেরকে এবং তোমাদেরকে জীবিকা প্রদান করে
থাকি’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ৩১)। রাসূলুল্লাহ a বলেছেন, ‘তোমরা অধিক প্রেমানুরাগিণী, অধিক সন্তান জন্মদানকারিণী মহিলাকে বিয়ে করো। কারণ আমি
ক্বিয়ামতের দিন তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে গর্ব করব’ (আবুদাঊদ, হা/২০৫০; নাসাঈ, হা/৩২২৭; মিশকাত, হা/৩০৯১, সনদ ছহীহ)। তবে স্ত্রী ও সন্তানের স্বাস্থ্যের
দিকে লক্ষ্য রেখে স্ত্রীর সম্মতিক্রমে আযল বা সাময়িক জন্মনিয়ন্ত্রণ করা যায়। জাবের
c হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন কুরআন মাজিদ
নাযিল হচ্ছিল তখন আমরা আযল করতাম (ছহীহ বুখারী, হা/৫২০৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৪০; তিরমিযী, হা/১১৩৭; মিশকাত, হা/৩১৮৪)।
পারিবারিক বিধান→আকীকা
প্রশ্ন (৩৬) : আমি পড়াশুনার জন্য
পরিবারসহ অস্ট্রেলিয়ায় থাকি। এখানেই আমার সন্তান জন্মগ্রহণ করবে। আমি বাংলাদেশে আমার গ্রামের বাড়িতে সপ্তম দিনে তার
আক্বীক্বা দিতে চাই। এটা জায়েয
হবে কি? নাকি অস্ট্রেলিয়াতেই আক্বীক্বা করতে হবে?
-মনির
পি.এইচ.ডি গবেষক, এডিলেইড, অস্ট্রেলিয়া।
উত্তর : আক্বীক্বা করার বিষয়টি কোনো স্থানের সাথে নির্ধারিত নয়; বরং সপ্তম দিনের সাথে
নির্দিষ্ট। তাই সপ্তম দিনের হিসাব ঠিক রেখে শিরকী স্থান ব্যতীত যে কোনো স্থানে
আক্বীক্বা করলে আক্বীক্বা হয়ে যাবে- ইনশাআল্লাহ। সামুরা c থেকে বর্ণিত, রাসূল a বলেন, প্রতেক শিশু তার আকীকার
সাথে বন্ধক/দায়বদ্ধ থাকে। তার জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু যবাই করতে হবে,
তার মাথা কামাতে হবে এবং নাম রাখতে হবে’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/২০২০১; ইবনু মাজাহ, হা/৩১৬৫)। আয়েশা g থেকে বর্ণিত, রাসূল a তাঁর ছাহাবাদের পুত্র সন্তানের জন্য দু’টি ছাগল ও কন্যা সন্তানের জন্য
একটা ছাগল আক্বীক্বা করার আদেশ করেছেন (তিরমিযী. হা/১৫১৩)।
পারিবারিক বিধান→ বিবাহ-তালাক
প্রশ্ন (৩৭) : জনৈক ব্যক্তি স্ত্রীর
মোহরের টাকার বিনিময়ে সমপরিমাণ জমি লিখে দিয়েছেন। এখন উক্ত জমি কে আবাদ করবে এবং তার
ফসল কে ভোগ করবে?
-জুয়েল বিন মনিরুল ইসলাম
পত্নীতলা, নওগাঁ।
উত্তর : স্ত্রী তার মোহর
থেকে যদি স্বামীকে প্রদান করে তাহলে উভয় মিলে মিশে তা ভোগ করতে পারে। রাগারাগি করলে
পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর তোমারা নারীদেরকে তাদের মোহর স্বতঃস্পূর্ত হয়ে প্রদান
করবে, সন্তুষ্ট চিত্তে তারা মোহরের কিয়দাংশ
ছেড়ে দিলে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করবে’ (সূরা
আন-নিসা, ৪)।
প্রশ্ন (৩৮) :
বিয়ের দুই দিন পর মেলামেশার পূর্বেই
স্ত্রী খোলা করলে তাকে কতদিন ইদ্দত পালন করতে হবে?
-লুৎফর রহমান
শান্তাহার, বগুড়া।
উত্তর : বিয়ের পর
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যদি নির্জনবাস হয়ে থাকে (শারীরিক সম্পর্ক হোক বা না হোক),
তাহলে তা শারীরিক মিলন বলে
গণ্য হবে এবং এক্ষেত্রে এক হায়েয ইদ্দত পালন করতে হবে। ইবনু আব্বাস h হতে বর্ণিত।
ছাবিত ইবনু ক্বায়স c-এর স্ত্রী তার কাছ থেকে খোলা তালাক নিলেন। নবী a তার ইদ্দাতকাল নির্ধারণ
করলেন এক হায়েয (আবূ দাঊদ,
হা/২২২৯)। সাথে সাথে
স্বামী থেকে প্রাপ্ত সকল মোহর তাকে ফেরত দিবে। ইবনে আব্বাস c হতে বর্ণিত, ছাবিত ইবনু ক্বায়স c-এর স্ত্রী নবী করীম a-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল a! ছাবিত ইবনে ক্বায়স c-এর ব্যবহার
ও দ্বীনদারী সম্পর্কে আমার কোনো অভিযোগ নেই, কিন্তু ইসলামের
ছায়ায় থেকে আমার দ্বারা স্বামীর অবাধ্যতা পছন্দ করি না। তখন রাসূলুল্লাহ a বললেন, ‘তবে কি তুমি তার বাগান তাকে ফেরত দিবে? সে বলল, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ a বললেন, ‘তুমি তোমার বাগান গ্রহণ করো এবং
তাকে এক তালাক দিয়ে দাও’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫২৭৩; মিশকাত, হা/৩২৭৪)।
প্রশ্ন (৩৯) : বিবাহ করতে চাচ্ছি কিন্তু বাবা-মা রাজি হচ্ছে না। আমি কি তাদেরকে উপেক্ষা করে বিবাহ করতে পারি?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর : পুরুষ লোক বিবাহের
ক্ষেত্রে স্বাধীন। এক্ষেত্রে পিতা-মাতার সম্মতি আবশ্যক নয় যেমন মেয়ের জন্য তা আবশ্যক (তিরমিযী, হা/১১০২; মিশকাত, হা/৩১৩১)। তবে তাদেরকে বুঝিয়ে তাদের সম্মতিতেই বিবাহ করা ভালো।
কিন্তু পিতা-মাতা যদি প্রাপ্তবয়স্ক ছেলের বিবাহ দিতে না চায়, অথচ তার পাপে জড়িয়ে
যাওয়ার আশঙ্কা হয়, তাহলে পিতা-মাতার অনুমতি ছাড়াই পুরুষ মানুষ বিবাহ করতে পারে।
প্রশ্ন (৪০) : আমাদের এলাকায় কোনো
মেয়েকে তালাক দিলে পুনরায় বিবাহ দেয়ার জন্য হিল্লা করা হয়। এই হিল্লা বিবাহ কি
শরীআত সম্মত?
-আক্বীমুল ইসলাম
জোতপাড়া, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর : ‘হিল্লা বিবাহ’ শরীআতে সম্পূর্ণরূপে হারাম। উক্ববা
ইবনু আমের c থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ a বলেছেন, ‘আমি কি
তোমাদের ভাড়াটিয়া পাঁঠা সম্পর্কে বলব না? তারা বললেন, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল a! তিনি বললেন, সে হলো হিল্লাকারী। আর হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কেই
আল্লাহ লা‘নত করেছেন’ (ইবনু
মাজাহ, হা/১৯৩৬; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/১৪১৮৭)।
প্রশ্ন (৪১) : স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ
করেছে বলে কি প্রথম স্ত্রীর তালাক চাওয়া বৈধ, যদিও বিবাহ বৈধভাবে শরীয়তসম্মত হয়?
-রবীউল ইসলাম
গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
উত্তর : শরীয়তের শর্ত মেনে দুজনকেই সুখে রাখতে পারলে প্রথমার তালাক
চাওয়া বৈধ নয়। রাসূল a বলেন, ‘যে স্ত্রীলোক অকারণে তার স্বামীর নিকট থেকে তালাক চাইবে, সে স্ত্রীলোকের জন্য জান্নাতের সুগন্ধও হারাম হয়ে যাবে’
(আবূ দাঊদ, হা/২২২৬, ইবনু মাজাহ, হা/২০৫৫; মিশকাত, হা/৩২৭৯)। অনুরূপভাবে দ্বিতীয়ার জন্যও বৈধ নয় প্রথমাকে তালাক দিতে স্বামীকে
চাপ দেওয়া। কারণ আল্লাহ যার যতটুকু রিযিক্ব নির্ধারণ করে রেখেছেন সে ততটুকুই ভোগ
করতে পারবে। আবূ হুরায়রা c থেকে বর্ণিত, রাসূল a বলেছেন, ‘কোনো নারী যেন তার বোনের তালাক না চায়, তার
পাত্রকে উল্টিয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ নিজে ভোগ করার জন্য। বরং তাকেই যেন বিবাহ করে নেয়।
আল্লাহ যার যতটুকু রিযিক্ব নির্ধারণ করে রেখেছেন সে ততটুকুই ভোগ করতে পারবে’ (বুখারী, হা/৬৬০১; মিশকাত, হা/৩১৪৫)।
মৃত্যু-কবর-জানাযা
প্রশ্ন (৪২) : খাদিজা g-কে দাফন করার পরে সবাই ফিরে গেলেন। কিন্তু
রাসূল a সেখানে দাঁড়িয়ে রইলেন। এটা দেখে ছাহাবীরা
বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যাবেন না। তিনি বললেন, না, কবরে খাদিজার তিনটি প্রশ্নের জবাব না হওয়া পর্যন্ত যাব
না। কিন্তু কবরের নিকটে রাসূল a দাঁড়িয়ে থাকার
কারণে ফেরেশতাও আসছে না। তখন আল্লাহ বললেন, এই প্রশ্নের
উত্তর আমিই দিয়ে দিলাম। এমন ঘটনার কোনো প্রমাণ আছে কি?
-জুয়েল বিন মনিরুল ইসলাম
পত্নীতলা, নওগাঁ।
উত্তর : এই বক্তব্যের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং তা
মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
প্রশ্ন (৪৩) : জানাযার ছালাতে পায়ের সাথে পা, কাধে কাধ মিলাতে হবে কি?
-শাকিল হোসাইন
চরগগনপুর, জামালপুর।
উত্তর : হ্যাঁ, পায়ের সাথে পা ও কাধে কাধ মিল করেই দাঁড়াতে হবে। কারণ অন্য
ছালাতের মত এটাও একটি ছালাত। রাসূল a নাজাশীর জানাযায়
সারিবদ্ধ হন এবং চার তাকবীরে জানাযা পড়ান। জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ c বলেন, রাসূল a বলেছেন, ‘আজ হাবশা দেশের একজন নেককার লোক মৃত্যুবরণ করেছে।
তাই তোমরা এসো তার জানাযার ছালাত আদায় করো। রাবী বলেন, আমরা তখন কাতারবন্দি হয়ে
দাড়াঁলাম। অতঃপর তিনি তার জানাযা ছালাত আদায় করালেন। আমরা ছিলাম কয়েক কাতার’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৩২০; মুসনাদে
আহমাদ, হা/১৪১৮৩)। আব্দুল্লাহ ইবনু
আব্বাস h বলেন,
আমরা জনৈক ব্যক্তির জানাযায় রাসূল a-এর পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম (ছহীহ বুখারী, হা/১৩২১; মিশকাত, হা/১৬৫৮)।
প্রশ্ন (৪৪) : জানাযার ছালাতে
ইমামের সাথে সাথে মুক্তাদীদেরকে কি সব দু‘আ-কালাম পড়তে হবে?
-আব্দুর রশীদ রনি
চন্দ্রগঞ্জ,
লক্ষ্মীপুর।
উত্তর : ইমাম সরবে পড়লে মুক্তাদীগণ
আ‘ঊযুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ সহ কেবল সূরা ফাতিহা চুপে চুপে পড়বে এবং
পরে দরূদ ও অন্যান্য দু‘আ সমূহ পড়বে। তবে
ইমাম নীরবে পড়লে মুক্তাদীগণ সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা এবং অন্যান্য দু‘আ সমূহ
পড়বে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রাসূলুল্লাহ a-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোনো মৃতের জানাযা পড়লে তার জন্য
নিষ্ঠার সাথে দু‘আ করবে (আবুদাঊদ, হা/৩১৯৯;
ইবনে
মাজাহ, হা/১৪৯৭; বায়হাক্বী, হা/৬৭৫৫)।
প্রশ্ন (৪৫) : নয় মাসের গর্ভবতী বাচ্চা পেটে মারা গেছে। অপারেশন বা সিজার করে
তাকে বের করার পর তার কি জানাযা দিতে হবে?
-জুয়েল বিন মনিরুল ইসলাম
পত্নীতলা, নওগাঁ।
উত্তর : না, এমতাবস্থায় তার জানাযা দিতে হবে না। শু‘আইব
p হতে বর্ণিত। ইবনু শিহাব p বলেছেন, .... নবজাত
শিশু সরবে কেঁদে থাকলে তার জানাযার ছালাত আদায় করা হবে। আর যে শিশু কাঁদবে না,
তার
জানাযার ছালাত আদায় করা হবে না। কেননা, সে অপূর্ণাঙ্গ
সন্তান (ছহীহ বুখারী, হা/১৩৫৮)।
অপরাধ-দণ্ডবিধি
প্রশ্ন (৪৬) : কেউ যদি
অন্যায় করে এবং সে কারণে তাকে দুনিয়াতে শাস্তি দেওয়া হয়। তাহলে কি তাকে ঐ অন্যায়ের শাস্তি
পুনরায় পরকালে পেতে হবে?
-আহসানুল্লাহ বিন আজাদ
মহাদেবপুর, নওগাঁ।
উত্তর : কেউ পাপ বা অন্যায়ের শাস্তি দুনিয়াতে পেয়ে গেলে তাকে আর পরকালে
শাস্তি ভোগ করতে হবে না। উবাদাহ্ ইবনু সামিত c হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ a- বলেন,...‘যে ব্যক্তি (শিরক ব্যতীত) অন্য কোন অপরাধ করবে এবং এজন্য দুনিয়ায় শাস্তি পেয়ে
যাবে, তাহলে এ শাস্তি তার গুনাহ মাফ হবার কাফফারাহ্ হয়ে
যাবে। আর যদি কোন গুনাহের কাজ করে, অথচ আল্লাহ তা ঢেকে
রাখেন (বা ধরা না পড়ে), এজন্য দুনিয়ায় এর কোন
বিচার না হয়ে থাকে, তাহলে এ কাজ আল্লাহর মর্যীর উপর
নির্ভর করবে। তিনি ইচ্ছা করলে আখিরাতে তাকে ক্ষমা করে দিবেন অথবা শাস্তিও দিতে
পারেন’ (ছহীহ
বুখারী, হা/১৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭০৯; মিশকাত, হা/১৮)।
প্রশ্ন: (৪৭) ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কোন নারী কি জীবন দিতে
পারে?
উত্তর : ধষিতা পাপী হবে না। সুতরাং ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কোন নারী জীবন দিতে পারবে না। কারণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা আত্মহত্যা করিও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।
আর যে কেউ সীমালঙ্ঘন করে অন্যায়ভাবে এটা করবে
তাকে অগ্নিতে দগ্ধ করাবো। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজসাধ্য (আন-নিসা, ২৯-৩০)। অতএব, বালা-মছীবত ও ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা
করা যাবে না। বরং ধৈর্য ধারণ করতে হবে ও
আল্লাহর নিকট দু‘আ করতে হবে। মাযলূমের দু‘আ আল্লাহ কবুল করেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,‘ হে মু‘আয! মাযলূমের বদ দু‘আ থেকে বেঁচে থাক। কেননা তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা নেই’ (ছহীহ বুখারী হা/২২৬৮; তিরমিযী হা/১৯৩৭)।
আখিরাত
প্রশ্ন (৪৮) : ক্বিয়ামতের দিন পৃথিবী
ধ্বংস হওয়ার সাথে অন্য সব গ্রহও কি ধ্বংস হবে?
-আনোয়ার হোসেন
কাশিমপুর, গাজীপুর।
উত্তর : হ্যাঁ, পৃথিবীসহ মহাবিশ্বের যা কিছু আছে সবকিছুই
ক্বিয়ামতের দিন ধ্বংস হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবী পৃষ্ঠে
যা আছে সবই ধ্বংসশীল, কিন্তু চিরস্থায়ী তোমার প্রতিপালকের চেহারা (সত্তা)-
যিনি মহীয়ান, গরীয়ান’ (আর-রহমান,
৫৫/২৬, ২৭)। তিনি আরো
বলেন, ‘সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত’ (আল-ক্বাছাছ, ২৮/৮৮)। তিনি বলেন, ’যখন সূর্যকে গুটিয়ে ফেলা হবে। যখন তারকাগুলো
খসে পড়বে’ (আত-তাকবীর,
৮১/১, ২)। তিনি বলেন,
যখন আসমান চুর্ণ-বিচুর্ণ
হবে। যখন তারকা সব ঝরে
পড়বে’ (আল-ইনফিতার,
৮২/১, ২)।
বিবিধ
প্রশ্ন (৪৯) : মহিলাদের তা‘লীমী বৈঠকে ১০-১৫ বছর বয়সের
ছেলেরা কি কোনো জ্ঞানমূলক বা ইসলাম সম্পর্কে বক্তব্য দিতে পারবে কি?
-আহসানুল্লাহ বিন আজাদ
মহাদেবপুর, নওগাঁ।
উত্তর : উক্ত বয়সের ছেলে বালেগ হলে পর্দার বিষয়টি নিশ্চিত করে
আড়াল থেকে তা‘লীমী বৈঠকে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ থেকে জ্ঞানমূলক বক্তব্য পেশ করাতে
শারঈ কোনো বাধা নেই। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে’...(আন-নূর, ২৪/৩১)। আবূ সাঈদ খুদরী c থেকে বর্ণিত আছে, মহিলারা আল্লাহর রাসূল a-কে বললেন, (হে আল্লাহর নবী!)
পুরুষেরা তো (দ্বীন শেখার ক্ষেত্রে) আমাদের থেকে এগিয়ে আছে। অতএব, আপনি আমাদের
জন্য একটি দিন নির্ধারণ করে দিন, (যে দিনে আমরা আপনার থেকে দ্বীনি মাসআলা-মাসায়েল
শিখবো)। অতঃপর তিনি তাদের জন্য একটি দিন নির্ধারণ করে দিলেন।
ঐ দিনে তারা একত্রিত হত আর রাসূল a তাদের উপদেশ দিতেন (ছহীহ বুখারী, হা/১০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৩১৪)।
প্রশ্ন (৫০) : কোন গায়র মাহরাম ড্রাইভারের
সাথে মহিলার একাকিনী কোথাও যাওয়া বৈধ কি?
-আবিদা সুলতানা
চরবাগডাঙ্গা, চাপাইনবাবগঞ্জ।
উত্তর : না; গাড়ি, রিক্সা বা বাইকে এমন কোন পুরুষের সাথে
মহিলার একাকী যাওয়া বৈধ নয়, যার সাথে কোনও সময় তার বিবাহ বৈধ।
বাস, ট্রেন, প্লেন বা জাহাজের কোন সফরে যাওয়া, এমনকি কোন ইবাদতের সফরেও নয়। রাসূল a বলেন, আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি যে
নারী ঈমান রাখে, তার মাহরামের
সঙ্গ ছাড়া একাকিনী এক দিন এক রাতের দুরত্ব সফর করা বৈধ নয় (ছহীহ বুখারী, হা/১০৮৮; ছহীহ মুসলিম হা/১৩৩৯)। তিনি আরো বলেন, ‘কোন পুরুষ যেন
কোন বেগানা নারীর সঙ্গে তার সাথে এগানা পুরুষ ছাড়া অবশ্যই নির্জনতা অবলম্বন না করে।
আর মহরাম
ব্যতিরেকে কোন নারী যেন সফর না করে। এক ব্যক্তি বলল, হে আলাহর রাসূল! আমার স্ত্রী হজ্জ পালন করতে বের হয়েছে, আর আমি অমুক অমুক যুদ্ধে
নাম লিখিয়েছি। তিনি বললেন, যাও, তুমি তোমার স্ত্রীর
সঙ্গে হজ্জ কর। (বুখারী, হা/৩০০৬; মুসলিম, হা/১৩৪১)। কারণ যখন কোন পুরুষ কোন মহিলার সাথে নির্জনতা অবলম্বন করে, তখন শয়তান তাদের
তৃতীয় সাথী হয়। (তিরমিযী, হা/১১৭১; মিশকাত, হা/৩১১৮)।