তাকবীরে তাহরীমা থেকে সালাম ফিরানো পর্যন্ত যেভাবে ছালাত আদায় করতে হয়, ঠিক সেভাবে আদায় করাকে ইক্বামাতুছ ছালাত বলে। কেউ কেউ বলেন, ছালাতের মধ্যে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ও মুস্তাহাবগুলো খুশূ-খুযূ সহকারে যথাযথভাবে আদায় করাই হলো ইক্বামাতুছ ছালাত। যেহেতু আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বোত্তম মাধ্যম ছালাত এবং শেষ বিচারের দিন প্রথম ছালাতের হিসাব নেওয়া হবে।[1] তাই যেনতেনভাবে আদায়কৃত ছালাতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, وَصَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي ‘তোমরা ঐভাবে ছালাত আদায় করো যেভাবে আমাকে ছালাত আদায় করতে দেখো’।[2] এই হাদীছ থেকে বুঝা যায় যে, হাদীছের গ্রন্থসমূহে ছালাত সম্পর্কিত যত ছহীহ হাদীছ আছে, তা বর্জন ও সংযোজন ব্যতীত অনুসরণ করতে হবে আর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পঠিত ছালাত সেভাবে পড়তে হবে, যেভাবে তিনি পড়েছেন। তিনি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর সে ব্যক্তি, যে ছালাতে চুরি করে’। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কীভাবে সে ছালাতে চুরি করে? তিনি বললেন, ‘সে ছালাতের রুকূ ও সিজদা পরিপূর্ণভাবে আদায় করে না’।[3]
নিছক আনুষ্ঠানিকতায় ছালাত ক্বায়েম হয় না, বরং মানুষের আচরণ ও বিশ্বাসের সার্বিক পরিবর্তনই হলো ইক্বামাতুছ ছালাত। মহান আল্লাহ বলেন,﴿قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ - الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ - وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ - وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ - وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ - إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ - فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْعَادُونَ - وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ - وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ - أُولَئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ - الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾ ‘নিশ্চয় মুমিনরা সফলকাম হয়েছে। যারা নিজেদের ছালাতে বিনয়ী ও নম্র। যারা বাজে কথা ও কাজ থেকে দূরে থাকে। যারা যাকাত প্রদানের ব্যাপারে তৎপর হয়। যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে হেফাযত করে। তবে তাদের স্ত্রীদের ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে হেফাযত না করলে তারা তিরস্কৃত হবে না। তবে যদি কেউ এদের ছাড়া অন্য কাউকে (যৌনক্ষুধা মেটাবার জন্য) কামনা করে তবে তারা সীমালঙ্ঘনকারী হবে। যারা তাদের আমানত এবং অঙ্গীকারসমূহ রক্ষণাবেক্ষণ করে। যারা তাদের ছালাতসমূহ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে। তারাই উত্তরাধিকারের প্রতিদান হিসাবে জান্নাতুল ফেরদাউস লাভ করবে এবং সেখানে তারা চিরদিন থাকবে’ (আল-মুমিনূন, ২৩/১-১১)।
ছালাতে উক্ত আয়াতগুলো পড়া হবে আর বাস্তব জীবনে এর শিক্ষা বাস্তবায়িত হবে না তা হতে পারে না। জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! অমুক মহিলা অধিক ছালাত পড়ে, ছিয়াম রাখে এবং দান-ছাদাক্বা করার ব্যাপারে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তবে সে নিজের মুখ দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীদেরকে কষ্ট দেয়। তিনি বললেন, সে জাহান্নামী। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অমুক মহিলা সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে যে, সে কম ছিয়াম পালন করে, দান-ছাদাক্বাও কম করে এবং ছালাতও কম আদায় করে। তার দানের পরিমাণ হলো পনীরের টুকরা বিশেষ। কিন্তু সে নিজের মুখ দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীদেরকে কষ্ট দেয় না। তিনি বললেন, সে জান্নাতী’।[4]
ইবাদত কবুলের প্রথম শর্ত হলো, শিরকমুক্ত ঈমান। দ্বিতীয় শর্ত হলো, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ অনুযায়ী ইবাদত আদায়। তৃতীয় শর্ত হলো, ইখলাছ বা আন্তরিকতা থাকা। ঈমান হলো অন্তরের ইবাদত আর ছালাত হলো শারীরিক ইবাদত। অহী তথা কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয় এমন কোনো ইবাদত গ্রহণযোগ্য নয়। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি এমন কোনো আমাল করল, যার উপর আমার কোনো অনুমোদন নেই, তা প্রত্যাখাত’।[5] মহান আল্লাহ বলেছেন,﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ﴾ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ এবং রাসূলের ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনুগত্য করো আর তোমাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করো না’ (মুহাম্মাদ, ৪৭/৩৩)। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কেউ দ্বীনের ব্যাপারে বিদআত আবিষ্কার করবে কিংবা কোনো বিদআতীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ তাআলা ফেরেশতা ও সকল মানুষের লা‘নত। তার কোনো ফরয কিংবা নফল ইবাদত কবুল হবে না।[6] এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿وَمَنْ يَعْصِ اللهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ لَهُ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا﴾ ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’ (আল-জিন, ৭২/২৩)। তিনি আরও বলেন, ﴿مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ﴾ ‘যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল’ (আন-নিসা, ৪/৮০)। কুরআনুল কারীমে বারবার আল্লাহর আনুগত্যের সাথে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুগত্যের কথা বলে সতর্ক করা হয়েছে যে, যারা আল্লাহ ও রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্যে পার্থক্য করবে, তাদের সমস্ত আমল বাতিল হয়ে যাবে এবং তারা জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করবে। আল-কুরআনের ৫০টিরও বেশি স্থানে এ সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুগত্যের কোনো বিকল্প নেই। এখন প্রশ্ন— যদি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি হাদীছও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় আর তারপর তা সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রত্যাখ্যান করা হয়, তবে কি মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর নাফরমানী হলো না? মহান আল্লাহ স্পষ্টতই বলেছেন, যারা আল্লাহ ও রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্য করবে না তাদের সমস্ত আমল এমনকি ছালাতও বরবাদ হয়ে যাবে। তারা কাফের হিসেবে গণ্য হবে এবং চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে। ছালাত হোক কিংবা অন্য কোনো আমল হোক যদি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুমোদিত পন্থায় না হয়, তবে তা বাতিল হয়ে যাবে।
যেমন- যদি কবর যিয়ারতে একবার সূরা আল-ফাতেহা, ৩ বার আল-ইখলাছ, ১১ বার দরূদ পাঠ করা হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। সিলেটের একটি গোরস্থানের বিলবোর্ডে লেখা আছে, বিসমিল্লাহ ৭ বার, আস্তাগফিরুল্লাহ ৭ বার, দরূদ ১১ বার, আল-ফাতেহা ৩ বার, আন-নাস ৩ বার, আল-ফালাক্ব ৩ বার, আল-ইখলাছ ৩ বার, আল-কাফেরূন ৩ বার, আত-তাকাছুর ৩ বার, আয়াতুল কুরসী ৩ বার পড়ে কবর যিয়ারতের কথা।[7] রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন কোনো আমাল করল যা আমাদের দ্বীনে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’।[8] কবর যিয়ারতের এই পদ্ধতির অনুমোদন কি ইসলামে আছে? এক্ষেত্রে ছাহাবীগণ রাযিয়াল্লাহু আনহুম-কে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আ শিখিয়ে দিতেন—السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَإِنَّا إِنْ شَآءَ اللّهُ بِكُمْ لَلَاحِقُوْنَ نَسْأَلُ اللّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ অর্থ: ‘হে কবরবাসী মুমিন-মুসলিম! তোমাদের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক, আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হতে যাচ্ছি— ইনশা-আল্লাহ। আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের ও তোমাদের জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি’।[9] মাজলিস শেষে সূরা আল-ফাতেহা ১ বার, আল-ইখলাছ ৩ বার, দরূদ ১১ বার তারপর হাত তুলে ইচ্ছামতো দু‘আ করার পদ্ধতি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নহতে নাই। প্রথমে দরূদ তারপর سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রশংসা সহকারে পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া কোনো মা‘বূদ নেই। তোমার নিকটে ক্ষমা চাচ্ছি এবং তোমার নিকটেই ফিরে যাব’[10] বলা— রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পদ্ধতি।
নানা কারণে প্রচলিত ছালাত আর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর ছালাতের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বার ইবনু আযিব রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে ঘুমের দু‘আ শেখানোর সময় তিনি ‘বিনাবিয়্যিকা’-এর স্থলে ‘বিরাসূলিকা’ বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বুকে নিজের হাত দিয়ে মেরে বললেন, ‘ওয়া বিনাবিয়্যিকা’ বলো।[11] এভাবেই নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে শব্দে শব্দে আনুগত্য শিখিয়েছেন। আর দ্বীনের মধ্যে নিকৃষ্টতম কাজ হলো নবাবিষ্কৃত কাজ এবং এই নবাবিষ্কৃত কাজই বিদআত, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।[12] ছালাতসহ যে-কোনো ইবাদত আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হতে হলে অবশ্যই তা বিদআতমুক্ত হতে হবে।
ছালাতের অন্তর্নিহিত অর্থ হলো— এর নিয়মকানুন, আরকান-আহকাম ও দু‘আর অর্থ ভালোভাবে বুঝে ছালাত আদায় এবং এর শিক্ষা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের সর্বস্তরে নিষ্ঠার সাথে পালনই ইক্বামাতুছ ছালাত।
ছালাতে আমাদের জন্য নানাবিধ শিক্ষা রয়েছে। যেমন-
(১) স্বাস্থ্য সুরক্ষার শিক্ষা: (ক) ছালাতের আগে শরীর, কাপড় ও জায়গা পাক তথা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। মহান আল্লাহ মানুষকে তাদের শরীর, পোশাক ও পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার শিক্ষা দিয়েছেন। এভাবে তিনি আমাদেরকে নানা রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখার সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। (খ) মিসওয়াকের মাধ্যমে শরীর সুস্থ রাখার শিক্ষা। দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে ওযূর সময় যদি কেউ নিয়মিত মিসওয়াক করে, তবে সে দাঁত ও মুখের রোগ থেকে সুরক্ষা লাভ করবে। (গ) ছালাতে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে যে ব্যায়াম হয়, তার দ্বারা স্বাস্থ্য সুরক্ষার শিক্ষা পাওয়া যায়।
(২) মিতব্যয়িতার শিক্ষা: রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মুদ (৬৬৫ গ্রাম) পানি দিয়ে ওযূ করতেন এবং চার মুদ (এক ছা‘)’ থেকে পাঁচ মুদ পর্যন্ত পানি দিয়ে গোসল করতেন।[13] এ হাদীছে পানির অপচয় রোধে মিতব্যয়িতা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
(৩) সময়ানুবর্তিতা শিক্ষা: নিশ্চয় নির্দিষ্ট সময়ের ছালাত আদায় মুমিনদের উপর ফরয (আন-নিসা, ৪/১০৩)। সময়মতো ছালাত না পড়লে ছালাত হয় না। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে বলেন, ‘ঐসব মুছল্লীদের জন্য ধ্বংস, যারা তাদের ছালাতের (সময়ের) ব্যাপারে উদাসীন’ (আল-মাঊন, ১০৭/৪-৫)। এই সময়ানুবর্তিতার শিক্ষা শুধু ছালাতের মধ্যে নয়, ছালাতের বাইরেও সকল কাজে সচেতন থাকা ছালাতের শিক্ষা।
(৪) পোশাকে শালীনতার শিক্ষা: ছালাতের পূর্বশর্ত হলো সতর ঢাকা। এর মাধ্যমে আমাদের শালীন পোশাক তথা পর্দা অবলম্বনের শিক্ষা পাওয়া যায়। ফলে যাদের মধ্যে ছালাতের চর্চা আছে, তারা শালীন পোশাক না পরে বাসা থেকে বের হতে পারে না।
(৫) নেতার আনুগত্য শিক্ষা: রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে লোকেরা! তোমরা শোনো ও আনুগত্য করো, যদিও তোমাদের উপর এমন কোনো হাবশীকে নেতা নিযুক্ত করা হয়, যে কৃষ্ণবর্ণের এবং যার মাথায় কোকড়ানো চুল আছে’।[14] তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি যখন রুকূ করি, তোমরাও রুকূ করো এবং আমি যখন মাথা উঠাই, তোমরাও মাথা উঠাও। আমি যখন সিজদা করি, তোমরাও সিজদা করো। আমি যেন কোনো ব্যক্তিকে আমার আগে রুকূ ও সিজদায় যেতে না দেখি’।[15] যে কাউকে নেতা নির্বাচন করা হোক না কেন তারই অনুগত্য করা ছালাতের অন্যতম শিক্ষা। তবে নেতার আনুগত্যের বিষয়টি মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর আনুগত্যের আওতাধীন হতে হবে।
(৬) ভ্রাতৃত্ব, সাম্য ও ভেদাভেদ ভুলে যাওয়ার শিক্ষা: নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের কাতার সোজা করো’। আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমাদের প্রত্যেকেই তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলাতাম।[16] অন্য হাদীছে আছে, ‘তোমরা ফাঁকা বন্ধ করে মিশে দাঁড়াও’। এখানে রাজা-প্রজা, ধনী-দরিদ্র এক কাতারে শামিল হয়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়ায়। তাতে উঁচু-নিচু ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এক কাতারে শামিল হয়।
(৭) পঠিত বিষয় থেকে শিক্ষা: আমাদেরকে ছালাতে পঠিত বিভিন্ন সূরা ও আয়াত হৃদয়ঙ্গম করতে হবে এবং সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবন গঠন করতে হবে। তাছাড়া এর মাধ্যমে ছালাতে খুশূ-খুযূও অর্জিত হয়ে থাকে।
অতএব, ছালাতের অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের আলোকে সমাজের মানুষের আচরণ পরিবর্তন হলে এবং একটি সুন্দর সমাজ গড়ে উঠলে ছালাতের শিক্ষা বাস্তবায়িত হয়েছে বলে মনে করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে প্রকৃতপক্ষে ছালাত প্রতিষ্ঠার এবং সেখান থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাওফীক্ব দিন- আমীন!
রফিকুল আলম আজাদ
বসুন্ধরা প্লাজা, কাউনিয়া ব্রাঞ্চ রোড, বরিশাল।
[1]. তিরমিযী, হা/৩৮৮।
[2]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৩১; মিশকাত, হা/৬৮৩।
[3]. দারেমী, হা/১৩৬৪।
[4]. মিশকাত, হা/৪৯৯২।
[5]. ছহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭।
[6]. ছহীহ বুখারী, হা/২৯৫৫।
[7]. সৌজন্যে: আলোর দিশারী যুব সংঘ, আসামপাড়া, জাফলং, সিলেট।
[8]. ছহীহ মুসলিম, হা/৪৩৪৪।
[9]. ছহীহ মুসলিম, হা/৯৭৫; মিশকাত, হা/১৭৬৪।
[10]. শাওকানী, তুহফাতুয যাকিরীন, হা/৯৩; ইরওয়াউল গালীল, ৩/৯৪, হা/৬২৬-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।
[11]. তিরমিযী, হা/৩৩৯৪।
[12]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮৬৭।
[13]. ছহীহ মুসলিম, হা/৬২৪; ছহীহ বুখারী, হা/২০১।
[14]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৬০।
[15]. ইবনু মাজাহ, হা/৯৬২।
[16]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৮৯।