আল্লাহর গভীর নৈকট্য অর্জনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা সূরা আল-ফাতিহার। একজন মুসলিমের জীবনে সূরা আল-ফাতিহার তাৎপর্য অপরিসীম। আল্লাহ তাআলার সাথে গভীর ও নিবিড় সম্পর্কের মাধ্যম ছালাতের সর্ববৃহৎ রুকন সূরা আল-ফাতিহা। জমহূর উলামায়ে কেরামের মতে, সূরা আল-ফাতিহা পাঠ ব্যতীত ছালাত শুদ্ধ হবে না।[1] সূরা আল-ফাতিহা আল-কুরআনে অবতীর্ণ প্রথম পূর্ণাঙ্গ সূরা। যদিও সূরা আল-আলাক্বের পাঁচটি আয়াত সর্বপ্রথম অবতীর্ণ হয়, কিন্তু সেটা পূর্ণাঙ্গ নয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হাদিয়া হিসেবে প্রদত্ত প্রথম সূরা হলো সূরা আল-ফাতিহা।
بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লাহ) সূরা আল-ফাতিহার অংশ, না-কি অংশ নয়— তা নিয়ে উলামায়ে কেরামের মধ্যে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে। ইমাম আবূ হানীফা রাহিমাহুল্লাহ-সহ বেশ কয়েকজন আলেমের মতে বিসমিল্লাহ সূরা আল-ফাতিহার অংশ নয়। অপরপক্ষে জমহূর উলামা মনে করেন, বিসমিল্লাহ সূরা আল-ফাতিহার অংশ, যা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। তাই আমরা সূরা আল-ফাতিহার তাফসীর বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করব।
যেকোনো বিষয়ের নামকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামকরণের মাধ্যমে তার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে। কুরআন মাজীদের ১১৪টি সূরার প্রত্যেকটির নির্দিষ্ট নাম আছে। কোনো কোনো সূরার প্রথম শব্দ দিয়ে আর কোনো কোনো সূরার অভ্যন্তরীণ ভাবধারা ও বিষয়বস্তুর আলোকে নামকরণ করা হয়েছে। কুরআনুল কারীমে সূরা আল-ফাতিহার অবস্থান, মর্যাদা, বিষয়বস্তু ও ভাবধারার আলোকে তার নামকরণ করা হয়েছে।
সূরা আল-ফাতিহার অনেকগুলো নাম রয়েছে। এ নামগুলোর কিছু কিছু শরীআত কর্তৃক নির্ধারিত আর কিছু কিছু আলেমগণ গবেষণা করে বের করেছেন। ইবনু কাছীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ছহীহ হাদীছে সূরা আল-ফাতিহার মোট ৮টি নাম বর্ণিত হয়েছে। যথা— (১) উম্মুল কুরআন (কুরআনের মূল)। (২) উম্মুল কিতাব (কিতাবের মূল)। (৩) আস-সাবউল মাছানী (সাতটি বারবার পঠিতব্য আয়াত)। (৪) আল-কুরআনুল আযীম (মহান কুরআন)।[2] (৫) আল-হামদু (যাবতীয় প্রশংসা)। (৬) ছালাত।[3] (৭) রুক্বিয়াহ (ফুঁকদান)।[4] (৮) ফাতিহাতুল কিতাব।[5] এ নামগুলোর ব্যাপারে সকল আলেম একমত। কারণ এ সূরা দিয়েই কুরআন পাঠ শুরু হয়। কুরআনুল কারীম লেখা শুরু হয় এবং এটা দিয়েই ছালাত শুরু হয়।[6]
আল্লাহর নাম (اسم الله) এখানে নাম (اسم) এমন একটি শব্দ, যা একটি সত্তা বা অর্থবহ কোনো বিষয়কে নির্দেশ করে। ‘আল্লাহ’ এমন একটি মহিমাপূর্ণ শব্দ, যা সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর সত্তাগত ইলাহী নামকে বুঝায়। সত্যিকার অর্থে তিনিই একমাত্র উপাস্য; তিনি ছাড়া অন্য কেউ উপাস্য হওয়ার যোগ্য নয়। এটি মহান আল্লাহর বিশেষ নাম আর এ নামে অন্য কাউকেও নামকরণ করা যাবে না।[7] সারকথা হলো, যার উপাসনা করা হয়, তিনিই একমাত্র উপাস্য এবং উপাসনার যোগ্য। কোনো প্রকার সহযোগী ছাড়াই মহিমা ও পরিপূর্ণতার বৈশিষ্ট্যে অনন্য হওয়ার কারণে এই নাম শুধু তাঁকেই মানায়।
بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লাহ)-এর মধ্যে বা (ب) বর্ণটি একটি উহ্য ক্রিয়ার সাথে সংযুক্ত। এর অর্থ হলো, আমি আল্লাহ তাআলার নামের বরকত কামনা করে তেলাওয়াত শুরু করছি। এটি এমন একটি পদ্ধতি, যার উপর মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তবে এর দ্বারা ঐ অর্থ উদ্দেশ্য নয়, যে অর্থে মুশরিকরা তাদের দেবতার নামের কল্যাণ কামনা করে তাদের কাজ শুরু করে। তারা বলে, আল-লাতের নামে, আল-উযযার নামে শুরু করছি। بِسْمِ اللهِ এর ক্রিয়াকে বিলুপ্ত করা হয়েছে, যাতে তেলাওয়াতের সময় সর্বপ্রথম যেটি আসে সেটি আল্লাহর নাম হয়।[8]
নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি সর্বপ্রথম সূরা আল-আলাক্ব-এর প্রথম পাঁচটি আয়াত অবতীর্ণ হয়। এতে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নাম নিয়ে পাঠ করতে বলা হয়। সম্ভবত এই আদেশের কারণে সূরা আত-তাওবা ব্যতীত প্রত্যেক সূরার প্রথমে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিসমিল্লাহ ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি সূরার প্রথমে বিসমিল্লাহ-এর তাৎপর্য ও বাহ্যিক গঠন একটি স্বর্ণমুকুট হিসেবে শোভা পায়। বিশেষ করে প্রত্যেক দুইটি সূরার মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে। হাদীছে এসেছে, ‘রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরার সমাপ্তি তখনই বুঝতে পারতেন, যখন বিসমিল্লাহ নাযিল করা হতো’।[9] তবে প্রত্যেক সূরা ও কুরআন তেলাওয়াতের পূর্বে বিসমিল্লাহ পাঠের অর্থ এমন নয় যে, শুধু আল্লাহর নাম নিয়েই কুরআন তেলাওয়াত শুরু করতে হবে। বরং এর দ্বারা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দুনিয়া ও পরকালে সমস্ত নেয়ামত আল্লাহর তরফ থেকে আসে। তাছাড়া এর মাধ্যমে একথাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রতি যে দয়া ও অনুগ্রহ করেন বিশেষ করে শরীআতের মতো মহান নেয়ামত অবতীর্ণ করে, তা আমাদের জন্মগত কোনো অধিকার নয়; বরং তা আল্লাহ তাআলার একান্ত মেহেরবানী।
তাছাড়া এই বাক্য দ্বারা আল্লাহর নিকট এই প্রার্থনাও করা হয় যে, তিনি যেন অনুগ্রহপূর্বক তার পবিত্র বাণী বুঝা ও তদনুযায়ী আমল করার তাওফীক্ব দান করেন। এ ছোট্ট বাক্যের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য শুধু কুরআন তেলাওয়াতের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। বরং প্রত্যেক ভালো কাজ আরম্ভ করার পূর্বে এটি পাঠ করার জন্য হাদীছে নির্দেশনা এসেছে। কারণ প্রত্যেক ভালো কাজের পূর্বে এটি পাঠ না করলে এর কল্যাণকর পরিণাম লাভে সমর্থ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিভিন্ন কথা ও কাজে এর প্রমাণ রেখেছেন। যেমন তিনি প্রতিদিন সকাল-বিকাল বলতেন, بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ‘আমি সে আল্লাহর নামে শুরু করছি, যার নামে শুরু করলে যমীন ও আসমানে কেউ কোনো ক্ষতি করতে পারে না আর আল্লাহ তো সব কিছু শোনেন ও সবকিছু দেখেন’।[10]
প্রতিটি কাজ বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করার অর্থ হলো উক্ত কাজের ভোগ ও ব্যবহারে মহান আল্লাহর অনুমতি প্রার্থনা করা। পৃথিবীর সমস্ত সম্পদের মালিক আল্লাহ। তিনি এই সকল সম্পদ ভোগের অধিকার মানুষকে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলার সম্পদের প্রয়োজন নেই। কারণ তিনি খাওয়া, পান করা, সন্তান জন্মদান ও পরিবার গ্রহণ করা ইত্যাদি জৈবিক চাহিদা থেকে পবিত্র। সূরা আল-ইখলাছে তিনি বলেন, لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ ‘তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি’ (আল-ইখলাছ, ১১২/৩)। যে মহান রব্বুল আলামীনের সম্পদ ভোগ ও ব্যবহারের প্রয়োজন নেই, অথচ তিনি সমগ্র সম্পদের মালিক। তাহলে এত সব সম্পদ তিনি কী করবেন? এ সকল সম্পদ তিনি মানুষকে প্রদান করেন। তবে মহান রব্বুল আলামীনের অবদান কত বড় একবার ভেবে দেখুন!
উক্ত অবদান ছাড়াও তিনি পরকালেও আমাদেরকে তার রহমত দিয়ে আচ্ছাদিত করে রাখবেন। এত বড় অবদানের বিনিময়ে আল্লাহর মানুষের নিকট চাওয়া হলো, এ সকল সম্পদ ভোগ ও ব্যবহারের সময় বিসমিল্লাহ বলে এ সকল সম্পদের দাতা হিসেবে তাঁকে স্বীকৃতি দেওয়া। এমনিভাবে স্ত্রী সহবাস, সুস্বাদু খাবার গ্রহণ ও অন্যান্য আনন্দ উপভোগের সময়ে তাঁর নাম স্মরণ করে তাঁকে সকল নেয়ামতের দাতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, যাতে তাঁর প্রদত্ত নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা সম্ভব হয়।
সকল সম্পদের মালিক মহান রব্বুল আলামীন। দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ তাআলা মানুষকে সম্পদ সাময়িক ভোগ করার সুযোগ দিয়েছেন। একজন মুসলিম কোনো প্রাণী যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ বলে যবেহ করে আল্লাহ তাআলার কাছে এই স্বীকৃতি প্রদান করে যে, প্রাণীটি তিনি তাকে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার জগতে কাফেরদেরকে অধিক সুযোগ-সুবিধা দান করেন। কারণ কাফেররা পরকালে কোনো সুযোগ পাবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, وَلَوْلَا أَنْ يَكُونَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً لَجَعَلْنَا لِمَنْ يَكْفُرُ بِالرَّحْمَنِ لِبُيُوتِهِمْ سُقُفًا مِنْ فِضَّةٍ وَمَعَارِجَ عَلَيْهَا يَظْهَرُونَ - وَلِبُيُوتِهِمْ أَبْوَابًا وَسُرُرًا عَلَيْهَا يَتَّكِئُونَ - وَزُخْرُفًا وَإِنْ كُلُّ ذَلِكَ لَمَّا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةُ عِنْدَ رَبِّكَ لِلْمُتَّقِينَ ‘যদি সব মানুষ একই জাতিতে পরিণত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকত, তবে যারা পরম করুণাময়ের প্রতি কুফরী করে, আমি তাদের গৃহসমূহের জন্য রৌপ্যনির্মিত ছাদ ও ঊর্ধ্বে আরোহণের সিঁড়ি তৈরি করে দিতাম। আর তাদের গৃহসমূহের জন্য দরজা ও পালঙ্ক, যাতে তারা হেলান দেয়। আর তাদের জন্য স্বর্ণনির্মিত এর সব কয়টিই দুনিয়ার জীবনের ভোগ-সামগ্রী। আর আখেরাত তো আপনার রবের কাছে মুত্তাক্বীদের জন্য’ (আয-যুখরুফ, ৪৩/৩৩-৩৫)।
ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতে রহমতের জন্য আর-রহমানের ব্যবহার— এ ব্যাখ্যার আলোকে কাফের, ফাসেক্ব ও মুশরিক তথা যারা জাহান্নামী তারাও আল্লাহর রহমতের অন্তর্ভুক্ত। এর অর্থ এখন এটাই দাঁড়ায় যে, মুসলিম, কাফের ও অন্য ধর্মের অনুসারী সকলেই আল্লাহর দয়া লাভ করবে। আর রহীম শব্দটি আখেরাতের সাথে নির্দিষ্ট। কারণ আখেরাতে দয়া একমাত্র মুমিনদের জন্য। যেমন পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, وَكَانَ بِالْمُؤْمِنِينَ رَحِيمًا ‘আর তিনি মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহশীল’ (আল-আহযাব, ৩৩/৪৩)। এখানে আর-রহীমকে শুধু মুমিনের সাথে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও একটি হাদীছে মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলাকে দুনিয়া ও আখেরাতের আর-রহীম বলেছেন।[11]
আর-রহমান ও আর-রহীম শব্দদ্বয় আল্লাহ তাআলার দুটি গুণবাচক নাম। ‘আর-রহমান’ ও ‘আর-রহীম’ শব্দদ্বয় উভয়ে ‘রহমত’ থেকে নির্গত, সালাফী মানহাজ অনুযায়ী এটি আল্লাহর সত্তার সাথে সম্পৃক্ত এমন একটি গুণ, যার বাস্তবতা সম্পর্কে মানুষ জানে না।
গুণ দুটি একই অর্থে ব্যবহৃত হয় না; বরং একটি এক অর্থে আর অপরটি আরেক অর্থে ব্যবহৃত হয়। আর-রহমান শব্দটি ব্যাপক ও বড় বড় রহমতের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কেননা ‘ফা‘লান’ এর ওযনে ‘রহমান’ বস্তুর আধিক্য ও বড়ত্ব এর অর্থ দেয়। তবে এ অর্থ সর্বদা বিদ্যমান থাকে না। আর আর-রহীম এর রহমত সর্বদা বিদ্যমান থাকে। কেননা ‘ফাঈল’ এর ওযনে গঠিত শব্দ স্থায়ী বিদ্যমানতার অর্থ দেয়। যেমন ‘কারীম’ ও ‘যরীফ’ শব্দদ্বয়ে ভদ্র ও বুদ্ধিমান গুণের স্থায়ী থাকা বুঝায়। এমনটা যেন বলা হয়েছে তাঁর মহান রহমত সর্বদা বহমান।[12]
ইবনুল ক্বাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ গুণদ্বয়ের মধ্যে পার্থক্যের বর্ণনায় বলেন, ‘আর-রহমান’ তাঁর সত্তার মধ্যে বিদ্যমান গুণকে নির্দেশ করে আর ‘আর-রহীম’ যাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয় তাদের সাথে তাঁর সম্পর্কের নির্দেশ করে। অতএব, ‘আর-রহমান’ প্রমাণ করে যে, রহমত তাঁর গুণ আর ‘আর-রহীম’ নির্দেশ করে যে, তিনি তাঁর সৃষ্টির প্রতি করুণা করেন। তাই ‘আর-রহমান’ তাঁর সত্তাগত এবং ‘আর-রহীম’ তাঁর কর্মগত গুণ।[13]
‘আর-রহমান’ আল্লাহর এমন একটি গুণবাচক নাম, যার ব্যবহার তিনি ব্যতীত অন্য কারও জন্য বৈধ নয়। কুরআন, হাদীছ এমনকি আরবদের সাহিত্যেও আল্লাহ ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে এর ব্যবহৃত লক্ষ করা যায় না। পক্ষান্তরে ‘আর-রহীম’ শব্দটি আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য সৃষ্টির কারও কারও গুণ হতে পারে। তবে আল্লাহর নামের ক্ষেত্রে শব্দটি যে অর্থে ব্যবহৃত হবে, অন্যদের ক্ষেত্রেও একই অর্থে ব্যবহৃত হবে এমনটা নয়। প্রত্যেক সত্তা অনুসারে তার গুণাগুণ নির্দিষ্ট হয়ে থাকে। এখানে একই স্থানে এ দুটি গুণবাচক নাম উল্লেখ করার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
যেহেতু মানুষের শক্তি-সামর্থ্য অত্যন্ত সীমাবদ্ধ। সে যে কাজই শুরু করুক না কেন, তা যে সে আশানুরূপ ও শতভাগ সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারবে, এমন কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। এমতাবস্থায় সে যদি আল্লাহর নাম নিয়ে কাজ শুরু করে এবং আল্লাহর অসীম দয়া ও রহমতের প্রতি দৃঢ় মনে গভীর আশা জাগ্রত রেখে আল্লাহর রহমত কামনা করে, তবে সে সংশ্লিষ্ট কাজ সুষ্ঠুরূপে সম্পন্ন করার ব্যাপারে শতভাগ সাফল্য আসবে ইনশা-আল্লাহ। তখন তার মধ্যে নিজের ক্ষমতা-যোগ্যতা ও মানুষের তদবীর অপেক্ষা আল্লাহর অসীম অনুগ্রহের উপরই অধিক নির্ভরতা ও ভরসা বৃদ্ধি পাবে এবং যেকোনো কাজ কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারবে।
(ইনশা-আল্লাহ চলবে)
মুহাম্মদ মুস্তফা কামাল
প্রভাষক (আরবী), বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বরিশাল।
[1]. মুহাম্মাদ ইবনু ছালেহ আল-উছায়মীন, তাফসীরুল কুরআনুল কারীম, সূরা আল-ফাতিহা ও আল-বাক্বারা, ১/৩।
[2]. আল-হিজর ১৫/৮৭; ছহীহ বুখারী তা‘লীক্ব, হা/৪৭০৪; তিরমিযী, হা/৩১২৪; আবূ দাঊদ, হা/১৪৫৭।
[3]. ছহীহ মুসলিম, হা/৩৯৫; নাসাঈ, হা/৯০৯; মিশকাত, হা/৮২৩।
[4]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৭৩৬।
[5]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৫৬; ছহীহ মুসলিম, হা/৩৯৪, ৮০৬।
[6]. তাফসীর ইবনু কাছীর, সূরা আল-ফাতিহার তাফসীর দ্রষ্টব্য।
[7]. আত-তাফসীরুল মুইয়াসসার, সূরা আল-ফাতিহার তাফসীর দ্রষ্টব্য।
[8]. মুহাম্মাদ হুসাইন, মুসুআতুল আ‘মাল আল-কামিলা, (প্রথম সংস্করণ, সিরিয়া, দারুন নাওয়াদির), ১/৭-১১।
[9]. আবূ দাঊদ, হা/৭৮৮।
[10]. আবূ দাঊদ, হা/৫০৮৮; ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৬৯।
[11]. ত্ববারানী, আল-মু‘জামুছ ছাগীর, হা/৫৫৮।
[12]. ইবনু জামা‘আহ, কাশফুল মা‘আনী ফিল মুতাশাবিহ মিনাল মাছানী, পৃ. ৮৫।
[13]. ইবনুল ক্বাইয়িম, বাদায়ে‘উল ফাওয়ায়েদ, ১/২৪ ‘রহমান ও রহীম’-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।