আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,
وَاللَّهُ أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُونَ شَيْئًا وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
সরল অনুবাদ: ‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের পেট থেকে বের করেছেন, তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে শোনার শক্তি, দেখার শক্তি আর অন্তর দান করেছেন, যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় করতে পারো’ (আন-নাহল, ১৬/৭৮)।
ব্যাখ্যা: মানবজীবনে যাবতীয় সমস্যার সমাধান ইসলাম দিয়েছে। মানবজাতিকে পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ করে সৃষ্টির ক্ষেত্রে ইসলামের অবদান অতুলনীয়। এই অবদান নৈতিক কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিক গঠনে হতে পারে। মানুষ যদি ইসলামের আদর্শকে চরিত্র গঠনের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে, তবে অবশ্যই এর ইতিবাচক ফলাফল পাবে। কারণ আল্লাহ মানুষের চারিত্রিক উন্নয়নকে তার উপার্জনলব্ধ বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের পেট থেকে বের করে এনেছেন, তোমরা কিছুই জানতে না এবং তোমাদের শ্রবণ, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তরসমূহ দান করেছেন, যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় করতে করো’ (আন-নাহল, ১৬/৭৮)। মানুষের চরিত্র গঠন এবং তাদের আচরণগত উন্নতির জন্য যদি প্রতিপালক না থাকতেন, তবে মানবতা এবং সমাজ ধ্বংস হয়ে যেত। একারণেই একজন নবজাতক শিশু মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার কষ্ট ব্যতীত সব অভিজ্ঞতা থেকে মুক্ত হয়ে উন্মুক্ত, স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল জীবন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। কবি ইবনুর রুমী নবজাতক শিশুর জন্মগ্রহণকে দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘পৃথিবী যখন নবজাতককে তার ধ্বংস হওয়া সম্পর্কে অবহিত করে, তখন নবজাতক উক্ত ভয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় চিৎকার দিয়ে কাঁদে। তাছাড়া তো তার কাঁদার কোনো কারণ থাকতে পারে না। কেননা সে যেখানে ছিল তার চেয়ে উন্মুক্ত ও প্রশস্ত স্থানে এসেছে’।[1]
ড. যাকারিয়া ইবরাহীম মানুষের নৈতিক সংশোধনের উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ তার মতে, মন্দের শিকড় সত্তার প্রকৃতির গভীরে প্রোথিত, যা প্রমাণ করে যে, ধ্বংস করা নির্মাণ করার চেয়ে সহজ এবং হত্যা করা শিক্ষিত করা ও জীবন দানের চেয়ে হালকা। এ ক্ষেত্রে তিনি একেশ্বরবাদী, অথচ নৈরাশ্যবাদী দার্শনিক আবূ হাইয়ানের মানুষের নৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কিত প্রশ্নের সমাধানে প্রদত্ত ব্যাখ্যাকে প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এক ঘণ্টার মধ্যে একাধিক ব্যক্তিকে শত্রুতে পরিণত করা সম্ভব; কিন্তু দীর্ঘকালব্যাপী নিবিড় অধ্যবসায় এবং দৃঢ় আনুগত্য ব্যতীত কাউকেও বন্ধু বানানো সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে যৌক্তিক প্রমাণ হলো অবতরণ সর্বদা আরোহণের চেয়ে সহজ এবং মন্দ কাজের প্রতি অগ্রসর হওয়া সর্বদা আল্লাহর পথে সংগ্রামের চেয়ে হালকা।[2]
অতএব, একেশ্বরবাদী দার্শনিকের মানবচরিত্রের বিকাশ সম্পর্কে হতাশাজনক মতামত থেকে এটা পরিষ্কার যে, একজন ব্যক্তির ধ্বংস তার গঠনের চেয়ে সহজ। কারণ নির্মাণ একটি বিধিবদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণ করে, কিন্তু ধ্বংস বা হত্যার জন্য এমন কোনো ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই। এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে, আল-কুরআন মানুষ ও মানবতার জন্য সর্বকালের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক এবং উত্তম পথপ্রদর্শক। কারণ কুরআনই একমাত্র মহাগ্রন্থ, যা পূর্ণাঙ্গ মানবজীবন গঠনের উৎস। এই গ্রন্থই মানবাত্মায় প্রশান্তি, স্থিতিশীলতা, আশাবাদ এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার চেতনা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল। বিশ্বাস, আধ্যাত্মিক উন্নতি ও ব্যক্তিত্ব গঠনের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বিশ্বের ভয়ের সমস্ত উপকরণ নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছিল। মানুষের ব্যক্তিত্ব, মানসিকতা, আচরণ সুসংহত ও সুগঠিত করার ক্ষেত্রে ইসলাম শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ও অনুকরণীয় ভূমিকা সম্পর্কে শিক্ষাবিদগণ যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, কুরআন মাজীদ সে সম্পর্কে পূর্বেই সম্যক ধারণা দিয়েছে।
অন্যান্য বিশ্বাসের ক্ষেত্রে, সে বিশ্বাস ধর্মীয় হোক, যেমন- ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টান ধর্ম অথবা প্রত্যক্ষবাদ হোক তাদের মতবাদ শিক্ষার মৌলিক ভিত্তি হিসেবে উপযুক্ত নয়। কারণ তারা জীবনকে একদিক থেকে এবং একটি নির্দিষ্ট কোণ থেকে দেখেন। যেমন- খ্রিষ্টানদের বিশুদ্ধ ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি, ইয়াহূদীদের নির্ভেজাল জাগতিক দৃষ্টিভঙ্গি, ধর্মনিরপেক্ষদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অন্যান্য মতামত।[3]
অতএব, এই পৃথিবীতে সামাজিক ও শিক্ষাগত তত্ত্বের ভিন্নতা এবং শিক্ষাগত বিষয়টিকে এক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা মানুষকে তার মৌলিক দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত করে, যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। আর সেটা হলো তাদের বিপথগামী এবং অনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে সন্তান প্রতিপালন এবং তাদের ধ্বংস থেকে বিরত থাকা, যা অনন্ত জীবন লাভের জন্য একটি সমন্বিত জীবন নির্মাণে সহায়ক উপকরণ।
মানুষের দুঃখ-কষ্টের ক্ষেত্রে আল-কুরআনের দর্শন:
প্রথম উদ্দেশ্য হলো মানব সাধনার সীমারেখা ও পদ্ধতি:
মানুষের নৈতিক গুণাবলি বিশ্বাসগত, আবেগগত এবং স্বেচ্ছাসেবাগত মাত্রায় বিভাজন করা যেতে পারে— যাতে তার কষ্ট ও যন্ত্রণা উপশম হয় এবং ঐ সব প্রতিবন্ধকতা থেকে দূরে থাকতে পারে, যা তাকে মহৎ নৈতিক আদর্শ অবলম্বন এবং আত্মগঠনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছার সোপান ঈমান থেকে দূরে রাখে। ইসলাম মানুষ ও মানবতার দুঃখ-কষ্ট লাঘব করার সমাধান উদ্ভাবন করেছে। তবে বিষয়টি এমন নয় যে, ইসলাম সর্বদা এই একটি কাজই করেছে বা করতে পারে। ইসলামী বিধিবিধানের আলোকে প্রতিটি কাজই মানুষের জন্য কল্যাণকর। তবে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে সে করে না, কারণ এর জন্য তার মধ্যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয় না এবং তার বিশ্বাস তাকে এই জাতীয় কাজ করতে গুরুতর চিন্তাভাবনার দিকে ঠেলে দেয় না।[4]
এখান থেকে সাইকিয়াট্রিস্ট হ্যাট্রি লিংক বলছেন, আমরা জীবনের কঠিন সমস্যার সন্তোষজনক সমাধান খুঁজে পাব না এবং আমরা কেবল তথ্য ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের মাধ্যমে সুখের উৎস খুঁজে পাব না। বিজ্ঞানের উত্থান মানে আত্মা এবং নৈতিক মূল্যবোধের স্তরের ভিত্তিতে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে বিভ্রান্তি এবং বিভ্রান্তির ব্যাধি বৃদ্ধি পায়। অতঃপর লিংক আরও বলেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি উপাসনালয়ে আবদ্ধ থাকে বা ইবাদতখানায় বারবার গমন করে এবং ধর্মহীন ব্যক্তির চেয়ে অধিক শক্তিশালী ব্যক্তির জীবনকে সুখের উৎস হিসেবে গ্রহণ করে অথবা ইবাদতের নিদর্শনকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে, তবে মনে করতে হবে যে, সে এমন মহান শক্তির (রবের) সন্ধান লাভ করেছে, যিনি জীবন দানের উৎস। এই শক্তি হলো ঐ আল্লাহর শক্তি, যিনি মহাবিশ্বের নিয়ন্ত্রক, আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা। আর তা হলো আল্লাহ প্রণীত ধারাবাহিকভাবে অবতীর্ণ ইলাহী সংবিধান আসমানী কিতাবকে দৃঢ়ভাবে গ্রহণ করা এবং স্বর্গীয় শিক্ষাকে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা, যা থেকে আমরা ধর্মীয় সত্যের সন্ধান লাভ করি, যা তাদের উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে সম্মিলিত সমস্ত বিজ্ঞানের চেয়ে উচ্চতর এবং পটভূমির মূল্যায়নের আলোকে যুক্তি বা কার্যকারণ তত্ত্বের চেয়ে শক্তিশালী।[5] মনস্তত্ববিদ ড. লিংক তার জীবনের প্রথম দিকে নাস্তিক ছিলেন, অতঃপর তিনি ভয়াবহ দুর্যোগের কবলে পড়ে আল্লাহর অস্তিত্বের সন্ধান পান। তারপর তিনি আল্লাহর উপর ঈমান আনেন এবং ইসলামী শিক্ষার আলোকে তার অসুস্থতার চিকিৎসা করেন।
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের ভিত্তিতে শিক্ষা ও নৈতিক চরিত্রের গঠন মানবতার জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমস্যা সমাধানে বিশ্বাসের দুর্বলতা এবং আল্লাহর প্রতি আস্থার অভাব এক ধরনের পর্যায় ক্রমিক আত্মহত্যা। সুইডেন ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশে মনস্তাত্ত্বিক অস্থিরতা এবং দুর্বল বিশ্বাসের কারণে বহু মানুষ আত্মহত্যা করেছে। লক্ষণীয় যে, গত ৩০ বছরে আত্মহত্যার সংখ্যা ৪০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। ঈমানের দুর্বলতা পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে ৬ মাসে প্রাচ্যের একটি ইসলামী দেশে ৩,০০০ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।[6] উল্লেখ্য, ইসলাম আত্মহত্যা করতে নিষেধ করেছে, তাছাড়া এটি অন্যতম বড় পাপও বটে। ইসলামে যেখানে শরীরকে কষ্ট দেওয়া বা শরীরে ত্রুটি সৃষ্টি করা হারাম, সেখানে আত্মহত্যা কীভাবে বৈধ হতে পারে? আল্লাহর প্রতি দুর্বল বিশ্বাস এবং তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া আত্মহত্যার সবচেয়ে শক্তিশালী অনুঘটক। এই কারণে যখন প্রাচ্যের দেশগুলোর অধিবাসীদের ঈমান অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল এবং তারা আল্লাহর ইবাদতে মত্ত ছিল, তখন আপনি তাদের মধ্যে আত্মহত্যার চিহ্ন পর্যন্ত খুঁজে পাবেন না।
ডা. ব্রিল বলেছেন, ‘ধার্মিক ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতা এবং সমস্ত শারীরিক রোগ যেমন- পেটের পীড়া, হজমের সমস্যা, হৃৎস্পন্দন এবং অন্যান্য মানসিক উদ্বেগ ও আধ্যাত্মিক ব্যাধিগুলোর দ্বারা আক্রান্ত হয় না’।[7] সমস্যার সমাধানে মহান স্রষ্টার প্রতি মনোনিবেশ না করা এবং বিপদাপদের সময় অনুনয় ও বিনয়ের সাথে স্রষ্টার নিকট প্রার্থনা না করা আত্মহত্যার বড় দুটি কারণ। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আমেরিকায় প্রতি ৩৫ মিনিটে একজন আত্মহত্যা করে এবং প্রতি দুই মিনিটে একজন উন্মাদনায় আক্রান্ত হয়।[8]
সুতরাং অন্যায় ও দুর্নীতি দূর করা এবং ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শনে কুরআনের তত্ত্বের নৈতিক মাত্রা এবং ইসলামী বিশ্বাসে এর সত্যতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও মানবিক ও চারিত্রিক মূলনীতির আদর্শ বিবর্জিত নীতিমালা যেমন পশ্চাদপসরণ থেকে মুক্ত নয়, তেমনি কেবল চারিত্রিক মূলনীতি সমাজের সুখ এবং সমাজকে অবক্ষয় থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে কোনো অবদান রাখতে পারে না। যতক্ষণ না এটি এই বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত হয় যে, সমগ্র বিশ্বে একজন মাত্র ইলাহ আছেন, যার ক্ষমতার উপর কেউই জয়ী হতে পারে না। তিনি সকল বস্তুকে সম্পূর্ণ সিস্টেমের আওতায় তৈরি করেছেন ইলাহী ক্ষমতার বিচারে যার প্রতি তিনি মুখাপেক্ষী নন। সকলকে তিনি তাঁর নিকট ফিরিয়ে আনবেন, তাদের হিসাব নিবেন এবং উপকারকারীকে পুরস্কৃত করবেন এবং নির্যাতনকারীকে শাস্তি দেবেন। তারপর সত্যবিমুখ বা শাস্তিযোগ্য ব্যক্তি অনন্তকাল শাস্তি ভোগ করবে।[9]
ইচ্ছা ও পছন্দের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই, নৈতিকতা একমাত্র জিনিস, যা একজন মানুষকে ইহজাগতিক কাঠামোর বাইরে বের করে আনতে পারে। তার ইচ্ছাশক্তি ও পছন্দ পার্থিব কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এর বিপরীতে বিজ্ঞান এবং ইচ্ছাহীন অনুভূতি তাকে বিশ্বে বিলুপ্তির বৃত্ত থেকে বের করে আনতে পারে না। কারণ ইচ্ছা ও পছন্দই সিদ্ধান্ত নেয় সে কী করবে? দেহ, মন বা আত্মার কর্মের উপর বিজ্ঞানের প্রভাব থাকতে পারে। নীতিবানদের নিকট এটাই বড় রহস্যের বিষয়। সত্য উপলব্ধির পরীক্ষা বর্তমানেও চলমান আছে, এ পরীক্ষা পূর্ববর্তী জাতির মধ্যে চলমান ছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন,
أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ
‘তোমরা কি ভেবেছ যে, তোমরা অনায়াসে জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ এখনো তোমাদের নিকট তাদের মতো কিছু আসেনি, যারা তোমাদের পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে। তাদেরকে স্পর্শ করেছিল কষ্ট ও দুর্দশা এবং তারা প্রকম্পিত হয়েছিল। এমনকি রাসূল ও তার সাথী মুমিনগণ বলেছিলেন, কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? জেনে রেখো! নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটবর্তী’ (আল-বাক্বারা, ২/২১৪)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ قَدْ تَبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى لَا انْفِصَامَ لَهَا وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ‘দ্বীনের মধ্যে জবরদস্তির অবকাশ নেই, নিশ্চয় হেদায়াত গোমরাহী হতে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। কাজেই যে ব্যক্তি মিথ্যা মা‘বূদদেরকে (ত্বাগূতকে) অমান্য করল এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল, নিশ্চয়ই সে দৃঢ়তর রজ্জু ধারণ করল; যা ছিন্ন হওয়ার নয়— আল্লাহ সর্বশ্রোতা এবং সর্বজ্ঞাত’ (আল-বাক্বারা, ২/২৫৬)।
উক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায়, ইচ্ছাশক্তি সকল প্রভাব থেকে স্বাধীন।
মানুষের ইচ্ছাশক্তি তার আত্মার মধ্যে তাক্বওয়ার উপাদান গড়ে তোলা; আদর্শ, মূল্যবোধ ও মহান লক্ষ্যকে মূর্ত করে তোলা এবং জীবন সম্পর্কে তাকে প্রকৃত উপলব্ধি প্রদান করা তার ইচ্ছাশক্তির কাজ। আল্লাহ তাআলা বলেন,وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ ‘আল্লাহর রাস্তায় যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, তাদেরকে মৃত মনে করো না, বরং তাদের পালনকর্তার কাছে তারা জীবিত থাকবে’ (আলে ইমরান, ৩/১৬৯)। এই আয়াতে শহীদদের মর্যাদা ও তাদের উঁচু সম্মানের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে মদ্যপানের উপর আল-কুরআনের নিষেধাজ্ঞা মুসলিমদের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল, সাধারণভাবে প্রত্যেকেই এটি পান করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং তারা মানবতাকে অত্যাচারীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।
(ইনশা-আল্লাহ চলবে)
প্রভাষক (আরবী), বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বরিশাল।
[1]. কবি ইবনুর রুমী, আব্বাসীয় যুগ, দিওয়ান.নেট।
[2]. ড. যাকারিয়া ইবরাহীম, আবূ হাইয়্যান আত-তাওহীদী, পৃ. ৩৮-৩৯।
[3]. মাওসূবী, আবূ হেশাম আব্দুল মালেক, আসালিবুত তারবিয়াহ ইনদা আহলিল বায়ত, পৃ. ১৯।
[4]. মুস্তফা মালাকিয়ান, আক্বলানীয়া ওয়াল মানুবীয়া, অনুবাদ: আব্দুল জব্বার আর-রেফায়ী, পৃ. ১৪৫-৪৬।
[5]. ড. হাতেরী লিংকের ইসলামে ফিরে আসা, আহমাদ আমীন, আত-তাকামুল ফীল ইসলাম, ৭/১৮৯-১৯০।
[6]. আহমাদ আমীন, আত-তাকামুল ফীল ইসলাম, ৭/১৯১।
[7]. আহমাদ আমীন, আত-তাকামুল ফীল ইসলাম, ৭/১৯৩।
[8]. প্রাগুক্ত।
[9]. মুহাম্মাদ হুসাইন আত্ববাত্ববাই, আল-মীযান ফী তাফসীরিল কুরআন, ১১/১৫৯-১৬০।