কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

যুলুমের শিকার ভারতীয় মুসলিম

post title will place here

মোদী সরকার স্পষ্ট মুসলিমবিদ্বেষী। এই বিদ্বেষ বিভিন্নভাবে ইতিহাসের কালো অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। প্রায় ৪০ কোটি মুসলিম এই দেশে বাস করে। কিন্তু এত বড় সংখ্যক মুসলিম গোষ্ঠী সবক্ষেত্রেই পিছিয়ে। দলীল হিসেবে ‘সাচার কমিটির রিপোর্ট’ যথেষ্ট। পরাধীনতার সময় থেকে নানা বঞ্চনার শিকার মুসলিমরা। স্বাধীন ভারতে কংগ্রেস শাসনামলেও মুসলিমরা সুখী ছিল না। তবে মোদী বা বিজেপি দাঙ্গাবাজদের শাসনামলের মতো নজিরবিহীন অত্যাচারিত হয়নি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে মুসলিমবিরোধী কার্যকলাপ বিভিন্নভাবে বিভিন্নস্থানে নিয়মিত ঘটে চলেছে। ভারতের কারাগারগুলো মুসলিম কয়েদি দিয়ে ভরা। চাকরিজীবী ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী মুসলিমদের সংখ্যা হাতে গোনা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খেলাধুলায় ভারতীয় মুসলিমদের তেমন পাত্তা দেওয়া হয় না। মোদীর নেতৃত্বে চলা বিজেপি চোর-ডাকাত, ধর্ষক, বদমাইশ, দুর্নীতিগ্রস্ত হিন্দুদের নির্বাচনে টিকিট দেয়। নির্বাচনে জয়লাভ করতে সাহায্য করে। এরা তাদের কুকীর্তি, দুর্নীতি ঢাকতে মুসলিমবিরোধী বক্তব্য, বিবৃতি দিয়ে থাকে। টাকার বিনিময়ে বিজেপি সমর্থক হিন্দুরা বিনা অজুহাতে নিরীহ মুসলিমদের হত্যা করে। আজ এখানে, কাল ওখানে প্রতিদিন মুসলিম হত্যা হয়। এনিয়ে বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রে থাকা সরকারগুলো কোনো কথা বলে না। বরং রাজনৈতিক মুনাফা লাভের জন্য সাধারণ হিন্দুদের ইসলাম ও মুসলিম সম্পর্কিত বিভিন্ন ইস্যুতে উস্কানি দিয়ে থাকে। এমনকি পুলিশ, গোয়েন্দা ও আদালত পর্যন্ত এগুলোর মীমাংসা না করে একচেটিয়া মুসলিমদের ধরপাকড় ও হয়রানি করে থাকে। 

একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতে ২০১৬ সালে প্রায় ২০ হাজার শিশু ধর্ষিত হয়েছে, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে আরও প্রায় ১২,০০০ শিশু। ২০১২ সালে দিল্লির কুখ্যাত নির্ভয়া-কাণ্ড পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল, গোটা বিশ্বে আলোড়ন ফেলেছিল। ২৩ বছর বয়সী এক নারীকে বাসে ধর্ষণ করা হয়, পৈশাচিকভাবে মারা হয়, তারপর দেহ ফেলে দেয়া হয়। পরে অবশ্য অভিযুক্তদের ফাঁসি হয়। ২৪-য়েই ঝাড়খণ্ডে এক ব্রাজিলিয়ান-স্প্যানিশ পর্যটককে সাতজন দল বেঁধে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০১৯ সালে মোট ৩২,০৩৩টি ধর্ষণের অভিযোগের মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশ শিকার দলিত সম্প্রদায়ের। দিল্লিতে ঘটা নির্ভয়া-কাণ্ডের পর আরও একজন তরুণীর জীবন নির্মমভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। উত্তর প্রদেশের হাতরাসে উচ্চবর্ণের পুরুষদের দ্বারা গণধর্ষণ ও নির্যাতনের ১৫ দিন পরে ১৯ বছর বয়সী দিল্লির সাফদারজং হাসপাতালে মারা যান। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) ডেইটা মতে, ১০ বছরে একটি মেয়ে বা মহিলার ধর্ষণের ঝুঁকি বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। এনসিআরবি তথ্য অনুসারে, ২০১০-২০১৯ সময়কালে, ভারত জুড়ে মোট ৩,১৩,২৮৯টি মামলার রিপোর্ট করা হয়েছিল। এরূপ লাখ লাখ ধর্ষণের তথ্য রয়েছে, যা ভারতীয় হিন্দুদের নির্লজ্জতার প্রকাশ্য প্রমাণ। ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির জন্য ভারত সরকার প্রস্তুত নয়। সরকার মুসলিমদের দ্বারা সংঘটিত ধর্ষণ কৌশলে সাম্প্রদায়িক রূপ দিয়ে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাঁধায়। যেমন আসামের ধিং অঞ্চলে হওয়া একটি ধর্ষণকাণ্ডকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা মুসলিম বনাম অসমিয়া মেরূকরণ করে। ফলস্বরূপ উজান আসাম থেকে খেটে খাওয়া বাংলাভাষী মুসলিমদের কর্মস্থল থেকে উগ্র অসমিয়ারা তাড়িয়ে দেয়। যারা জীবিকা নির্বাহে উজান আসামে অবস্থান করত। অন্যদিকে, একই সময়ে মোট ১০টি ধর্ষণকাণ্ড আসামে ঘটে। ৭টিতে হিন্দুরাই জড়িত। জড়িত হিন্দুদের নিয়ে কোনো কথা নেই। কেন্দ্রের মোদী সরকারও ধর্ষণের শাস্তিমূলক কঠোর বিল আনতে চায় না। কারণ বর্তমানে ৪০ জনেরও বেশি বিজেপি সাংসদ এবং বিজেপির সাথে জড়িত বাবা (মন্দিরের পুরোহিত ও স্বয়ম্ভূ ভুয়া বাবা বা সাধু) নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। কিন্তু চূড়ান্ত রায় হয় না। ওরা বিজেপি সরকারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। বিজেপির দলীয় কোষাগারে টাকাও ঢালছে। ধর্ষণের শিকার নাগরিকরা চরম অবহেলার শিকার। টাকাওয়ালা মুসলিমবিরোধী হিন্দুরাই বিজেপি সরকারের লাঠি। অনেক হিন্দু সাধু, যারা ধর্ষণ করেও সম্মানিত; ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ ধর্ষণ করেও বেঁচে আছে। সংবিধানের নিয়ম বা আইনের ধারা ওদের ছুঁতে পারে না। সরকার সেবায় নিয়োজিত। জারজদের জন্য সরকারি সুবিধা উন্মুক্ত। লাল কার্পেট প্রস্তুত। সম্মাননায় ভূষিত। ব্যতিক্রম মুসলিম উম্মাহর অত্যাচারিত ভারতীয় মুসলিম। চুরি, ধর্ষণ বা অন্য অপরাধে মুসলিমদের পাওয়া গেলে সরকার কর্তৃক সকল মুসলিমের সম্মানহানি হয়। ইসলামের অপব্যাখ্যা করা হয়। নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ নিয়ে সমালোচনা করা হয়। মনে হয়, মুসলিম ও ইসলাম সব দোষের গোড়া। ভারতীয় মুসলিমরা মুসলিমবিরোধী চক্রের নানা প্রকার ষড়যন্ত্রের আইনগত, সংবিধানসম্মত মোকাবেলা করতে গেলেও রেহাই হয় না। সংবাদমাধ্যম, পত্র-পত্রিকা, হোয়াটসঅ্যাপ-ফেইসবুক গ্ৰুপ সবসময় মিথ্যাচারে লিপ্ত। প্রতিবাদী মুসলিমদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। অকারণ জেলবন্দি হতে হয়। জমি-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট করা হয়।

আয়াজ আহমাদ

হাইলাকান্দি, আসাম, ভারত।

Magazine