কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

আফগানিস্তান, তালেবান ও খোরাসান : বর্তমান প্রেক্ষাপট

পাঠক হয়তো যতক্ষণ এই লেখাটি পড়বেন, ততক্ষণে কাবুলসহ পুরো আফগানিস্তান তালেবানের নিয়ন্ত্রণে হতে পারে। আবার এটাও হতে পারে যে, আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল নিয়ে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে –আল্লাহ তাদেরকে নিরাপদে রাখুন-। অবস্থা যেটাই হোক সমগ্র পৃথিবীতে এখন টক অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড হচ্ছে— তালেবানের প্রত্যাবর্তন। আজকের বক্ষমান প্রবন্ধে আমরা উক্ত বিষয় সম্পর্কে আলোচনা পেশ করব ইনশা-আল্লাহ।

আফগানিস্তানের ইতিহাস : আদিকাল থেকেই আফগানিস্তান পাহাড়-পর্বতে ঘেরা মরু এলাকা। হিন্দুকুশ পর্বতমালা, খায়বার পাস, আমু দরিয়া এগুলো আফগানিস্তানের বৈচিত্র্যময় পরিবেশের একেকটি বড় নিয়ামক। বহু ঐতিহাসিক ঘটনা বিজড়িত এই আফগানিস্তান। যুদ্ধ-বিগ্রহের দিক থেকে দেখলে বড় বড় মুজাহিদ শাসক এই জমিন আবাদ করেছেন। যেমন ১৭ বার ভারত আক্রমণ করা সুলতান মাহমূদ গজনভী অন্যতম। গজনী শহরকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল তাঁর সাম্রাজ্য। গজনী নামে শহরটি এখনো আফগানিস্তানে আছে। গুজরাটের রাজপুত ও পাঞ্জাবের মারাঠাদেরকে বিখ্যাত পানিপথের যুদ্ধে পরাজিত করতে আফগানিস্তান থেকে জিহাদ করতে এসেছিলেন আহমাদ শাহ আবদালী। আফগানিস্তানের কাবুল ও হিরাতের মাঝে অবস্থিত ঘুর নামক শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে মুহাম্মাদ ঘুরীর ঘুরী সাম্রাজ্য। এই জমিন থেকেই মঙ্গোলীয়দের সামনে সিনা টান করে যুদ্ধ করেছিলেন জালালুদ্দীন খাওয়ারিজম শাহ। দিল্লীর যারা মোঘল শাসক ছিলেন, তারাও মূলত আফগানিস্তান থেকেই এসেছিলেন। যহীরুদ্দীন মুহাম্মাদ বাবর আফগান থেকে এসে ইবরাহীম লোদিকে পরাজিত করে মোঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। বুঝা গেলো, দীর্ঘ একটা সময় ধরে পাক-ভারতের ভূ-রাজনীতিতে আফগানদের একক আধিপত্য ছিল, যা অনস্বীকার্য সত্য।

খোরাসান : আফগানিস্তান নামটির সাথে খোরাসান নামটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। খোরাসান শব্দ ব্যবহার করে অনেক

হাদীছ রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি হাদীছ তাহক্বীক্বসহ নিম্নে পেশ করা হলো—

হাদীছ : ১

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ يَخْرُجُ مِنْ خُرَاسَانَ رَايَاتٌ سُودٌ لَا يَرُدُّهَا شَيْءٌ حَتَّى تُنْصَبَ بِإِيلِيَاءَ.

আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘খোরাসান থেকে কালো পতাকা বের হবে। এই পতাকাকে কেউ থামাতে পারবে না; এমনকি এই পতাকা বায়তুল মাক্বদিসে স্থাপিত হবে’।[1]

তাহক্বীক্ব: উক্ত হাদীছের সনদে রিশদীন ইবনু সা‘দ নামক একজন রাবী আছেন, যিনি যঈফ। তাকে ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন, আবূ হাতিম, ইমাম আহমাদ ও নাসাঈসহ অধিকাংশ মুহাদ্দিছ যঈফ বলেছেন।[2]

হাদীছ : ২

عَنْ ثَوْبَانَ رضي الله عنه قَالَ إِذَا رَأَيْتُمُ الرَّايَاتِ السُّودَ خَرَجَتْ مِنْ قِبَلِ خُرَاسَانَ فَأْتُوهَا وَلَوْ حَبْوًا فَإِنَّ فِيهَا خَلِيفَةَ اللَّهِ الْمَهْدِيَّ».

ছাওবান রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন তোমরা দেখবে যে, খোরাসান থেকে কালো পতাকা বের হবে তখন তোমরা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তার সাথে যুক্ত হও। কেননা তাদের মধ্যেই আল্লাহর খলীফা মাহদীকে পাবে’।[3]

তাহক্বীক্ব : খোরাসান কেন্দ্রিক বর্ণিত এটিই সবচেয়ে কম দুর্বল হাদীছ। এই সনদের সকল রাবী মযবূত। তবে আবূ ক্বিলাবা একজন মুদাল্লিস রাবী। তিনি এই হাদীছ ‘আন’ শব্দ দিয়ে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং সনদটি যঈফ। যদিও আবূ ক্বিলাবা ইবনু হাজার আসক্বালানীর নিকট প্রথম স্তরের মুদাল্লিস।[4] ইবনু হাজার আসক্বালানী এই রাবীকে প্রথম স্তরে রেখেছেন। কারণ হচ্ছে আবূ ক্বিলাবা থেকে আনআন সূত্রে আবূ আসমা ও ছাওবান হয়ে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত হুবহু এই সনদে কিছু হাদীছ ছহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। আর আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু এর অনেক হাদীছ যা আবূ ক্বিলাবা থেকে ‘আনআন' সূত্রে বর্ণিত ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিম শরীফে আছে। তবে হাদীছটির সনদের সমালোচনার পাশাপাশি মতনেও ‘নাকারাত’ (সমালোচনা) আছে বলে মন্তব্য করেছেন ইমাম নাছিরুদ্দীন আলবানী। বিশেষ করে আল্লাহর খলীফা মাহদী তাদের সাথে থাকবেন এই বাক্যটি বহু ছহীহ হাদীছের বিরোধী।

উল্লেখ্য, ছাওবান থেকে বর্ণিত এই হাদীছের আরো কিছু সনদ আছে, তবে সেগুলো আরো দুর্বল। যেমন মুসনাদে আহমাদের (হা/২২৩৮৭) সনদে শারীক ইবনু আব্দুল্লাহ আন-নাখঈ ও আলী ইবনু যায়েদ আছেন, যারা উভয়েই দুর্বল রাবী।[5] এছাড়া বায়হাক্বীর দালায়িলুন নবুঅতে (৬/৫১৬) হাদীছটি মাওকূফ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।

সারর্মম : খোরাসান নাম নিয়ে যতগুলো হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তার সবগুলোতেই দুর্বলতা আছে।

একমাত্র ছহীহ হাদীছ : একদা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমান ফারসী রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর উপর হাত রেখে বললেন,

«لَوْ كَانَ الإِيمَانُ عِنْدَ الثُّرَيَّا، لَنَالَهُ رِجَالٌ أَوْ رَجُلٌ مِنْ هَؤُلاَءِ»

‘ঈমান যদি ছুরাইয়া তারকার কাছেও থাকে, তবুও সালমান ফারেসীদের লোকেরা ঈমানকে সেখান থেকে নিয়ে আসবে’।[6] অন্য বর্ণনায় ঈমানের জায়গায় দ্বীনের কথা বলা হয়েছে। অন্য আরেক বর্ণনায় ঈমানের জায়গায় ইলমের কথা বলা হয়েছে।[7]

ফারেসগণ হচ্ছে নূহ আলাইহিস সালাম-এর ছেলে সামের বংশধর। যাদেরকে আজম বা অনারব বলা হয়। ফারেস বা ফুরস বলতে সাধারণত ‘বিলাদ মা ওরায়িন নাহার’ বুঝানো হয়। কেননা কিয়ামতের পূর্বমুহূর্তে ইমাম মাহদীকে সহযোগিতা করার জন্য একদল মানুষ ‘মা ওরায়িন নাহার’ থেকে বের হবে মর্মে কিছু রিওয়ায়েত পাওয়া যায়।[8] যদিও এই বিষয়ে মারফূ‘ সূত্রের বর্ণিত প্রায় রেওয়ায়েত দুর্বল। ইমাম যুহরী থেকে মুরসাল সূত্রে হাসান কিছু বর্ণনা রয়েছে, যা দলীল হিসেবে যথেষ্ট নয়।[9]

যাহোক, ইমাম ইয়াকুত আল-হামাবী রাহিমাহুল্লাহ তার মু‘জামুল বুলদান গ্রন্থে ‘মা ওরায়িন নাহার’ বিষয়ে বলেন,يراد به ما وراء نهر جيحون بخراسان ‘এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, খোরাসানের জায়হূন নদীর পশ্চাদ্বর্তী অঞ্চল’।[10] জায়হূন নদীকে স্থানীয় ভাষায় বর্তমানে ‘আমু দরিয়া’ বলা হয়। বর্তমান আফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশের ওয়াখান করিডোরের পর্বতমালা থেকে আমু দরিয়ার উৎপত্তি। এরপর আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের মধ্য দিয়ে অরল সাগরে পতিত হয়েছে শ্লথ গতির এই নদীটি। সেই হিসেবে উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, ইরান ও আফগানিস্তানের বৃহৎ অংশ ‘মা ওরায়িন নাহার’-এর অন্তর্ভুক্ত বা খোরাসান হিসেবে গণ্য। যুগে যুগে অনেক মহান মুহাদ্দিছ এই এলাকায় জন্ম গ্রহণ করেন। তন্মধ্যে অন্যতম— ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম আবূ দাঊদ, ইমাম তিরমিযী, ইমাম নাসাঈ, ইমাম ইবনু মাজাহ, ইমাম দারেমী, ইমাম বায়হাক্বী ও ইমাম ইবনু খুযায়মা রাহিমাহুমুল্লাহ। যা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীছের সত্যতার প্রমাণ বহন করে।[11] খোরাসান তথা ‘বিলাদ মা ওরায়িন নাহার’ এর অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে যেগুলো সে সময় ইলমের মারকায ছিল তার কিছুর নাম নিম্নে পেশ করা হলো—

বোখারা : বর্তমান উজবেকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম বুখারীর জন্মস্থান।

সমরকন্দ : বর্তমান উজবেকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম দারেমীর জন্মস্থান।

তিরমিয : ইমাম তিরমিযীর জন্মস্থান। আমু দরিয়ার তীরবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি গ্রাম যা এখনো তিরমিয নামে প্রসিদ্ধ। আফগানিস্তানের মাযার শরীফের পাশে উজবেকিস্তানের সীমান্তে অবস্থিত এই গ্রামটি।

বুস্ত : হাদীছ শাস্ত্রের দুই মহান ইমাম— ইমাম ইবনু হিব্বান ও ইমাম খত্ত্বাবীর জন্মস্থান। বর্তমান আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশের লশকারগাহ নামক জায়গাটিই মূলত সেই কালের বুস্ত নগরী। যেখানে ইবনু হিব্বান ও ইমাম খাত্ত্বাবী রাহিমাহুমাল্লাহ বেড়ে উঠেছেন।

সিজিস্তান : ইমাম আবূ দাঊদের জন্মস্থান। বর্তমান আফগানিস্তান, ইরান ও পাকিস্তান সীমান্তবর্তী যে বালূচ অঞ্চল, এটাই মূলত সেই সময়ের সিজিস্তান। এখানেই ইমাম আবূ দাঊদ রাহিমাহুল্লাহ-এর জন্ম ও বেড়ে উঠা।

নিশাপুর : বর্তমান ইরানে অবস্থিত। ইমাম বুখারী বোখারা থেকে হিজরত করে এই নিশাপুরেই এসেছিলেন। এখানেই ইমাম মুসলিম, ইমাম হাকেম ও ইমাম ইবনু খুযায়মার বেড়ে উঠা এবং তাদের দারস-তাদরীসের স্থান।

রাই : বর্তমান ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে অনতিদূরে অবস্থিত। হাদীছ জগতের দুই দিকপাল ইমাম— আবূ হাতিম আর-রাযী ও ইমাম আবূ যুরআ আর-রাযী উভয়েই এই রাইয়ে বেড়ে উঠেছেন এবং এখানেই দারস দিয়েছেন। রাই নগরীর দিকে সম্পৃক্ত করেই তাদেরকে রাযী বলা হতো।

বালখ : বর্তমান আফগানিস্তানে অবস্থিত। ইসলামের ইতিহাসে জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। ইবনে সিনা, উমার খইয়্যাম, খাওয়ারিযমীসহ অনেকেই এই শহরে জ্ঞান হাছিল করতে আসতেন।

হিরাত : বর্তমানে আফগানিস্তানে অবস্থিত। ইসলামের ইতিহাসে জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্রস্থল ছিল। জালালুদ্দীন রূমী, শাহনামার লেখক বিখ্যাত কবি ফেরদৌসীসহ বহু আলেম-ওলামার পদধূলি রয়েছে এখানে।

বাগলান : বর্তমান আফগানিস্তানে অবস্থিত। কুতুবে সিত্তাহর সংকলক ছয় জন ইমামের শিক্ষক কুতায়বা ইবনু সাঈদ আল-বাগলানীর জন্মস্থান।

জুযাজান : ইলমুল জারহি ওয়াত তা‘দীল শাস্ত্রের মহান ইমাম আবূ ইসহাক্ব আল-জুযাজানীর জন্মস্থান হচ্ছে অফগানিস্তানের জুযাজান প্রদেশে, যা এখনো এই নামেই পরিচিত।

মরো : ইংরেজিতে মারভ বলা হয়। আফগানিস্তানের মাযার শরীফ ও হেরাত সীমান্তবর্তী তুর্কমেনিস্তানে অবস্থিত শহরটি এখনো এই নামেই পরিচিত। বড় বড় বিখ্যাত ইমামের জন্ম হয়েছে এই শহরে। তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে— ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারক রাহিমাহুল্লাহ ও ইমাম ইসহাক্ব ইবনু রাহওয়াইহ রাহিমাহুল্লাহ। এছাড়া যত ইমামের নামের শেষে আমরা মারওয়াযী দেখতে পাই, তাদের সকলকে এই শহরের দিকে সম্পৃক্ত করে মারওয়াযী বলা হয়ে থাকে।

উল্লিখিত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয় যে আজকের আফগানিস্তান, ইরান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এই অঞ্চলগুলোতেই মূলত হাদীছের সবচেয়ে বেশি খেদমত হয়েছে। বিশেষ করে মৌলিক খেদমতগুলো এই অঞ্চল তথা খোরাসানের ইমামদের হাতেই হয়েছে।

তালেবানের উত্থান : আফগানিস্তানের সাথে তালেবানের নাম জড়িত হয় মূলত রাশিয়ার সাথে যুদ্ধপরবর্তী সময়ে। রাশিয়ার সাথে যুদ্ধের সময়ে তালেবান নামক কোনো দল ছিল না। ১৯৮৯ সালে রাশিয়ানরা আফিগানিস্তান থেকে নিজেদের পাততাড়ি গুটিয়ে নিলে ১৯৯২ সালে মুজাহিদদের হাতে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাঠপুতলি সরকারের পতন ঘটে। ক্ষমতা দখলের পর যুদ্ধরত মুজাহিদগণের মধ্যে গৃহযুদ্ধ দেখা দেয়। এই গৃহযুদ্ধ চলে দীর্ঘ চার বছর। এই গৃহযুদ্ধ থামিয়ে আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে কান্দাহারের কিছু মাদরাসা ছাত্রদের নিয়ে মোল্লা মুহাম্মাদ উমার সর্বপ্রথম তালেবান গঠন করেন। তালেবান অর্থ ছাত্র। যেটাকে আমরা আরবীতে ত্বলেব বলে থাকি, সেটাই পশতু ভাষায় তালেবান। শান্তির জন্য মুখিয়ে থাকা আফগানরা তালেবানের মধ্যে আশার আলো দেখতে পায়। দীর্ঘদিনের রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ ও তারপরে নিজেদের মধ্যে গৃহযুদ্ধে ত্যক্তবিরক্ত আফগানরা দলে দলে তালেবানের নিকট অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে থাকে। এভাবে ১৯৯৬ সালে কাবুলের ক্ষমতায় আসে তালেবান। ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মাত্র তিনটি দেশ তালেবানকে স্বীকৃতি প্রদান করে— যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান ও সঊদী আরব। ক্ষমতায় আসার পর বহুদিনের পুরাতন বামিয়ানের মূর্তি ভেঙে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসে তারা। যে যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েতের বিরুদ্ধে আফগান মুজাহিদদের সহযোগিতা করেছিল; যার মদদে ও স্বীকৃতিতে তালেবানরা ক্ষমতায় ছিল, সেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তালেবানের মধুর হাড়ি ভেঙে যায় টুইন টাওয়ার হামলার পর। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলা হলে আমেরিকা এই হামলার জন্য সরাসরি তালেবানদের দায়ী না করে আফগানে আশ্রয় গ্রহণ করা আল-কায়েদা গ্রুপ ও তাদের নেতা উসামা বিন লাদেনকে দায়ী করেন। তালেবান সরকারের উপর আর্ন্তজাতিক চাপ বাড়তে থাকে উসামা বিন লাদেনকে হস্তান্তরের জন্য। মোল্লা মুহম্মাদ উমার শেষ সময় পর্যন্ত এই চাপের কাছে নতিস্বীকার করেননি। ফলত আমেরিকা পাকিস্তানকে সাথে নিয়ে ঐতিহাসিক সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ শুরু করে। পতন হয় তালেবান সরকারের। আজও এই নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিশ্লেষণ হয় যে, তালেবানেরা যদি উসামা বিন লাদেনকে সমর্পণ করে দিত, তাহলে এভাবে তাদের ক্ষমতা হারাতে হতো না। কারো মতে এই সিদ্ধান্ত তালেবানদের আত্মমর্যাদার প্রতীক আর কারো মতে এই সিদ্ধান্ত তালেবানদের বোকামি ও হঠকারিতার পরিচয় বহন করে।

আমেরিকার হাতে তালেবান নিয়ন্ত্রিত কাবুলের পতন ঘটলে সেখানে নিজেদের পছন্দমতো সরকার বসায় আমেরিকা। পাকিস্তানের এবোটাবাদে ড্রোন হামলা চালিয়ে উসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে আমেরিকা। মোল্লা মুহাম্মাদ উমারের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। হাজার হাজার তালেবান পাহাড় ও গুহায় আশ্রয় নেয়। লাখো আফগান সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়। কাবুলে আমেরিকার পছন্দসই সরকার নিয়ে ভারত কোটি কোটি টাকার প্রজেক্ট হাতে নেয় আফগানিস্তানে। সুদীর্ঘ ২০ বছর এভাবেই চলতে থাকে। এর মধ্যে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী পাহাড়ী অঞ্চলগুলোতে পাকিস্তানী তালেবানের উৎপাত বাড়তে থাকে। পাকিস্তান সরকার আফগান তালেবানকে সহযোগিতা করলেও পাকিস্তানী তালেবানকে খারেজী বা জঙ্গী মনে করে। ফলত ‘অপারেশন জারব-ই-আযাব’সহ বিভিন্ন ভয়ংকর সেনা অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানের অনেক জঙ্গী গ্রুপকে নিঃশেষ করে দেয় পাকিস্তান। নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে আফগান বর্ডারে কাঁটাতারের বেড়া দেয়, যা ছিল পাকিস্তানের নিরাপত্তার ইতিহাসে এক কঠিনতম সফল প্রজেক্ট। পাকিস্তানপন্থী বিশ্লেষকগণের ধারণা, আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব বাড়তে থাকায় আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও জঙ্গী দলকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে জঙ্গী হামলা চালাতে উদ্বুদ্ধ করা হয়ে থাকে, যার সার্বিক প্রশিক্ষণ ভারত দিয়ে থাকে। তাই আফগানিস্তান থেকে অনুপ্রবশ ঠেকাতে দীর্ঘতম এই বর্ডারে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়।

ধীরে ধীরে দৃশ্যপট চেঞ্জ হতে থাকে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকারের সাথে তালেবানের শান্তিচুক্তি হয়। সরকারি ক্ষমতায় নেই এই রকম একটা দলের সাথে বিশ্বের সুপার পাওয়ারের এই ধরনের চুক্তি হয়তো এটাই প্রথম। চুক্তির প্রায় সব শর্তগুলোই বাহ্যিকভাবে তালেবানদের পক্ষে। যেমন- আগে তালেবান বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। একটি বিদেশী সেনাও আফগানিস্তানে থাকবে না। চুক্তির আশ্চর্য দিক হচ্ছে, চলমান সরকারের সাথে তালেবানের কোনো ধরনের সমঝোতা না থাকা। আর এটাকেই এই চুক্তির বা আমেরিকার সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলা হয়। তারা নিজেরা যাদেরকে ধ্বংস করতে এসেছিল, তাদের সাথেই আবার চুক্তি করল। যাদেরকে ২০ বছর যাবত লালনপালন করল, সেই কাবুল সরকারের সাথে কোনো সমঝোতাও করিয়ে দিতে পারল না তালেবানের। এমনকি কাবুল সরকারের টিকে থাকার সামান্যতম নিশ্চয়তাও দিতে পারল না আমেরিকা। শুধু তাই নয়, সাংবাদিকদের দাবি অনুযায়ী, রাতের আঁধারে বাতি নিভিয়ে নিজেদের অনুগত সরকারকে অবহিত না করে চুপিসারে তাদের বিখ্যাত কেন্দ্রীয় সেনাঘাঁটি বাগরাম ঘাঁটি ত্যাগ করে আমেরিকা। আমেরিকার মতো সুপার পাওয়ারের আফগানিস্তানের মাটিতে এই ধরনের আচরণে বিশ্ব অবাক। এ ধরনের আচরণের আসল কারণ কী? নানা মুনির নানা মত। নিম্নে কিছু মত পেশ করা হলো—

একদলের মতে, আমেরিকা সত্যি সত্যিই আফগানিস্তানে সফল হয়নি। নিজেদের আর্থিক ক্ষতি কমিয়ে আনতে তারা এ ধরনের চুক্তি করে আফগান ত্যাগ করছে।

কারো মতে, আফগানিস্তানে নিকট অতীতে দায়িশ বা আইসিসের প্রভাব বিস্তার শুরু হচ্ছিল। আমেরিকা চায়নি যে, ইরাকের মতো আফগানের কোনো এলাকা আইসিসের হাতে চলে যাক। তাই তারা আইসিসের বিপরীতে তালেবানদের যোগ্য অলটারনেটিভ মনে করেছে। এই কারণের কিছুটা বাস্তবতাও আছে। তালেবানদের সাথে আইসিসের যুদ্ধের কিছু খবর গত দুই তিন বছরে পত্রিকার পাতাতেও এসেছে। এখানে একটা প্রশ্ন আসতে পারে, আমেরিকার নিকটে আইসিস ও তালেবান দুইটাই তো ইসলামপন্থী জঙ্গী, তাহলে কেন তাদের মধ্যে থেকে তালেবানকে বেছে নিল আমেরিকা? এই প্রশ্নের উত্তরে বিশ্লেষকগণ বলে থাকেন, তালেবানরা মূলত জাতীয়তাবাদী জিহাদী দল। তারা আফগান জাতীয়তাবাদকে প্রাধান্য দেয়। ফলত অন্য কোনো দেশ নিয়ে তাদের সার্বজনীন কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই।

কারো মতে, এই অঞ্চলে রাশিয়া-চীনের বাড়তি প্রভাব কমাতে তারা তালেবানকেই লটারির চাল হিসেবে গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে তালেবানদের উত্থানকে কাজে লাগিয়ে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিম স্বাধীনতাকামীদের সহযোগিতা করতে চায় আমেরিকা। যাতে করে চীনকে অস্থিতিশীর পরিবেশের সম্মুখীন করা যায়। রোহিঙ্গাসহ তালেবানদের সহযোগিতায় রাশিয়া ও তার অনুগত দেশগুলোকে অস্থিতিশীল করে তোলার গোপন ইচ্ছা লালন করে আমেরিকা। হয়তো এই ধরনের মৌখিক কোনো চুক্তিও হয়ে থাকতে পারে তালেবান ও আমেরিকার মধ্যে।

অন্যদিকে বাহ্যিকভাবে দেখা যাচ্ছে, তালেবান কূটনৈতিকভাবে রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তানকে এক প্রকার নিজেদের পক্ষে নিয়েছে। তালেবানরা পাকিস্তানকে এই মর্মে নিশ্চিত করেছে যে, তারা ক্ষমতায় আসলে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে কোনো জঙ্গী দলকে পাকিস্তানের মধ্যে কোনো ধরনের নাশকতা চালানোর সুযোগ দিবে না। আর এই কারণেই মূলত পাকিস্তানও আমেরিকাকে সেনাঘাঁটি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। যা আমেরিকা-পাকিস্তান সম্পর্ককে নতুন করে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। অন্যদিকে তারা চীনকে নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, তাদের কোম্পানিগুলোর সহায়তাতেই আফগানিস্তানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করা হবে। চীন হয়ে পাকিস্তানের বুক চিরে বালুচিস্তান হয়ে গোয়াদার গভীর সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত চীনের যে বিশাল প্রজেক্ট চলছে তার সাথে আফগানিস্তানও যুক্ত হবে। পেশোয়ার থেকে কাবুল ও কোয়েটা থেকে কান্দাহার উন্নতমানের যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলা হবে। জিনজিয়াং প্রদেশের স্বাধীনতাকামীদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে ঘোষণা দিবে এবং তাদের নিয়ে কোনো ধরনের মাথা ঘামাবে না তালেবান। তালেবানরা ভারত ও রাশিয়াকেও নিরাপত্তা বিষয়ে নিশ্চয়তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে রাশিয়া-চীন তালেবানদের কথা বিশ্বাস করলেও ভারত বিশ্বাস করেনি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। যার কিছুটা প্রভাব কাশ্মীরের রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছে।

সবচেয়ে মজার বিষয় : আমাদের বাংলাদেশী মুসলিমদের অনেকেই যারা সবসময় সঊদী আরবের জাত উদ্ধার করতে ব্যস্ত থাকে এবং তুরস্কের এরদোগানকে সুলতান সোলেমান বা আরতুগ্রল মনে করে থাকেন। তাদের অধিকাংশই আবার আফগানিস্তানের তালেবানদের পক্ষাবলম্বন করে থাকে। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য যে, আফগানিস্তানের মাটিতে বাঙ্গালীর স্বপ্নের সুলতান এরদোগান তালেবানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সব বিদেশী সেনা চলে গেলেও তুরস্ক যেতে রাজী নয়। ন্যাটোর সাথে আসা একমাত্র দেশ হিসেবে তুরস্ক কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে চায়। তুরস্কের এমন দাবিতে চরম ক্ষিপ্ত তালেবান। তালেবানরা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, যতই মুসলিম দেশ হোক যদি তুরস্ক তার সেনাবাহিনী আফগানে রাখে, তাহলে তাদের সাথে সেই ব্যবহারই করা হবে, যা অন্য দখলদারদের সাথে করা হয়েছে; বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। এদিকে বিশ্লেষকগণ বলছেন, শেষ পর্যন্ত তুরস্ক যদি আফগান ছাড়েও, তাহলেও প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তুরস্ক তার নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ান মিলিশিয়া গ্রুপগুলোকে জিহাদের নামে আফগানিস্তান পাঠাবে এবং জিহাদের নাম দিয়েই তালেবানকে উচিত শিক্ষা দিবে। তুরস্কের এই ধরনের তৎপরতায় ফলাফল যেটাই আসুক, এতটুকু নিশ্চিত যে, তালেবানদের উত্থানের প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে পর্যন্ত থাকবে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে তালেবানরা যেহেতু সুন্নী, সেহেতু অনেকেই ইরান-তুরস্ক নিয়ন্ত্রিত শীআ গ্রুপগুলোর বিপদ দেখতে পাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যের মাটিতে।

তালেবানের পরিকল্পনা কী?

যে তালেবানদের নিয়ে এত জল্পনা-কল্পনা তারা আসলে কী করবে? এই বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা অসম্ভব। তবে তাদের সাম্প্রতিক কালের কিছু কার্যক্রম দেখলে যে পরিকল্পনাগুলো স্পষ্ট হয় তা নিম্নরূপ :

আমেরিকা যে উত্তর ফ্রন্টকে কাজে লাগিয়ে তালেবানদের পতন ঘটিয়েছিল, তালেবানরা এই যাত্রায় সবার আগে সেই উত্তর ফ্রন্টের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিচ্ছে। এজন্যই বর্তমান বিজয়াভিযানের অধিকাংশই সংখ্যালঘু এলাকাগুলোতে পরিচালনা করছে। পশতু এলাকাগুলো অটোমেটিক তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তাই তারা প্রথমেই হাযারা শীআ, ইসমাঈলী শীআ, তাজিক, উজবেক, তুরক ইত্যাদি জাতি-গোত্র অধ্যুষিত এলাকাগুলো দখলে নিচ্ছে। যার ফলস্বরূপ উত্তর সীমান্তের বাদাখশান প্রদেশ ও গুরুত্বপূর্ণ ওয়াখান করিডোর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় তলেবান।

তাদের ইদানীং কূটনৈতিক বুদ্ধিমত্তা দেখলে মনে হয়, তাদের চিন্তায় এখন কোনোমতে ক্ষমতায় যাওয়া। ক্ষমতায় যেতে কাকে-কীভাবে নিশ্চয়তা দিতে হবে, সেটা তারা কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত সফলতার সাথে দিয়ে যাচ্ছে। এই কারণেই তারা আমেরিকাপন্থী সকল রাজনীতিবিদ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে। যার ফলে প্রচুর পরিমাণে আফগান বাহিনীর সদস্যরা তালেবানদের হাতে আত্মসর্মপণ করছে।

তাদের এই ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতায় আরেকটি বিষয় ফুটে উঠে যে, তারা হয়তো আগেরবারের মতো আবেগী কোনো সিদ্ধান্ত নিবে না; বরং নিজেদেরকে জাতীয়তাবাদী পরিচয় দিয়ে আফগানিস্তানের অবকাঠামোগত উন্নয়নে মনোযোগ দিবে। এই রাস্তায় যদি তাদের কোনো কম্প্রমাইজ করতে হয়, তাহলে তারা হয়তো তাও করবে।

আমরা মহান আল্লাহর নিকট এতটুকু দু‘আ করি— গত ৪০ দশক থেকে যুদ্ধের আগুনে পুড়তে থাকা আফগানিস্তানকে আর যেন কোনো যুদ্ধ দেখতে না হয়; না গৃহযুদ্ধ, না বাহিরের আক্রমণ। আফগানিস্তানে মহান আল্লাহ শান্তি ফিরিয়ে দিন! নিরীহ মুসলিম-মুসলিমার জানমাল ইজ্জত-আবরুর হেফাযত হোক- আমীন ইয়া রব্ব!

আবু মুহাম্মাদ

নওদাপাড়া, রাজশাহী।


[1]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৭৭৫।

[2]. আল-কামিল, ৪/৬৮; ইবনু আবী হাতিম, আল-জারহু ওয়াত তা‘দীল, ৩/৫১৩।

[3]. মুসতাদরাকে হাকেম, হা/৮৫৩১।

[4]. আহলিত তাক্বদীস, ১/২১।

[5]. মীযানুল ই‘তিদাল, ৩/১২৮।

[6]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৮৯৭।

[7]. ফাতহুল বারী, ৮/৬৪২।

[8]. আবূ দাঊদ, হা/৪২৯০; নুয়াইম ইবনু হাম্মাদ, ফিতান, হা/৯১৩; ইবনু মাজাহ, হা/৪০৮৪ ও ৪০৮২।

[9]. নুয়াইম ইবনু হাম্মাদ, ফিতান, হা/৫৪৫, পৃ. ২০৯-৩০০।

[10]. মু‘জামুল বুলদান, ৫/৪৫।

[11]. বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : ড. রামাযানের লিখিত আয়িম্মাতু ইলমিল হাদীছ ফী বিলাদ মা ওরায়িন নাহার।

Magazine