প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাবি প্রতিষ্ঠার ইতিহাস থেকে আরও জানা যায়, পূর্ব বাংলার মুসলিমদেরকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য ঢাবির প্রতিষ্ঠা। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্নে কলকাতার তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত ও হিন্দু নেতারা এর বিরুদ্ধে স্মারকলিপি দেয়। মক্কা বিশ্ববিদ্যালয় বলেও অনেকে ব্যঙ্গ করে। কারণ মুসলিমদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
পূর্ব বাংলায় নয়টি কলেজ থাকলেও, ছিল না কোনো উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দাবিকে সম্মান জানিয়ে লর্ড কার্জন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সম্মতি দেন।[1] উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, পূর্ববঙ্গে মুসলিম সমাজে যে নবজাগরণ শুরু হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তারই ফল।
বড় আফসোস এবং হতাশার কথা হলো, ঢাবি প্রতিষ্ঠার এই ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানেন না এমন লোকদেরকে ঢাবিতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তৎকালীন অবহেলিত মুসলিমদের স্বার্থ প্রতিষ্ঠার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে সামনে নিয়েই ঢাবির প্রতিষ্ঠা। আজ আমাদের আপামর জনতার ট্যাক্সের পয়সায় চালিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের বিরুদ্ধেই?
হ্যাঁ, আজ মুসলিমদের স্বার্থের বিরুদ্ধেই একে ব্যবহার করা হচ্ছে। মুসলিম নারীদের ধর্মীয় অধিকার— হিজাব-নিকাব পরার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। ধর্মীয় স্বাধীনতায় নগ্ন হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। অথচ নৃবিজ্ঞানের ভাষায় বললে, হিজাব, পর্দা, নিকাব এগুলো হলো একটি জাতির সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য। জাতি-বর্ণ-ধর্ম ভেদে এক একজন ব্যক্তি তার ধর্মীয় পোশাক পরিধান করবে। এটাই তার অধিকার। এই অধিকার কেড়ে নেওয়া মানে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করা। মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া।
এখন যদি মুসলিম নারীদেরকে জোরপূর্বক মুখ খুলতে বাধ্য করা হয়। পরপুরুষের সামনে চেহারা প্রদর্শন করতে বাধ্য করা হয়, তবে এটা হবে তাদের ধর্মীয় অধিকার হরণ করা।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক নারী শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন পরীক্ষা ও প্রেক্ষাপটে মুখ খুলতে বাধ্য করছেন। এমনকি অশালীন মন্তব্যও করছেন।
বিষয়টি নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হলেও তেমন কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এরপর আবার আপিল করা হয়েছে। এভাবে ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় বিধানের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক মন্তব্য প্রচার ও প্রচারণা। এর মানে কী? তবে কি এরা আরেকবার মুসলিমদেরকে রাজপথে নামিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ হাছিলের নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে চান?
তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে ব্যক্তিপরিচয় শনাক্তকরণ করা খুব কঠিন কাজ? তবে আমরা কি সে পথে হাঁটতে পারি না? ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রযুক্তির যুগে কেনো ধর্মপ্রাণ নারীদেরকে হিজাব-নিকাব খুলতে বাধ্য করা হবে? শ্রেণিকক্ষে, পরীক্ষার হলে বাড়তি হয়রানি কেনো করা হবে?
আমাদের নারীবাদীরা যারা নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে কাজ করেন, তারা কি কখনো নারীবান্ধব পুরুষমুক্ত যাবতীয় প্রতিষ্ঠানের কথা বলেছেন? এখানে কি তাদের কোনো দায়িত্ব ও কর্তব্য নেই?
স্বাধীনতার ৫২ বছর বয়সেও নারীবান্ধব পরিবেশ কেনো হলো না? কেনো নারী শিক্ষিকার তত্ত্বাবধানে তাদেরকে শনাক্ত করা যায় না? আজ কেনো আমরা আমাদের মেয়েদের জন্য পুরুষমুক্ত নিরাপদ শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি এখনো? এ দায় ও ব্যর্থতা কার?
শতভাগ পুরুষমুক্ত নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরি সরকারের গুরু দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তাও আজ অবহেলায় পরিণত হয়েছে। মুখে নারী অধিকার বললেও আমাদের নারী অধিকার কর্মীরা আজও নারীবান্ধব স্বতন্ত্র কর্মক্ষেত্রের কথা বলেন না। তবে কীভাবে আমার আপনার মা-বোন-মেয়েরা নিরাপদ জীবনযাপন করবে? কীভাবে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে? আর কীভাবে চেহারা খোলার হয়রানি থেকে বাঁচবে?
প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক; নয়নপুর, রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস, গাজীপুর।
[1]. দৈনিক প্রথম আলো, ৩০ জুন, ২০২১।