[১]
ইসলাম পৃথিবীর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট নীতি-নৈতিকতাসম্পন্ন মানবিক ধর্ম। মানবিক, সামাজিক, পারিবারিক ছাড়াও রাষ্ট্র পর্যন্ত সুষম নীতিমালা নির্ধারিত রয়েছে কেবল ইসলাম ধর্মে। ফলে সামাজিক মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতার বিষয়টি সব মত, পথ ও দল থেকে ভিন্ন এবং সুস্পষ্ট। পৃথিবীর ইতিহাস বলছে, এ যাবৎ পৃথিবীতে যত সভ্যতার উত্থান-পতন ঘটেছে, তার মৌলিক কারণ হলো— নৈতিকতা। যে জাতি মানবিক চাহিদা তথা যৌনতার ব্যাপারে যত বেশি সংযমী, সে জাতি তত বেশি সমৃদ্ধশালী ও অগ্ৰগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সাথে সাথে সভ্যতার শোচনীয় দুরবস্থা, অধঃপতনের অন্যতম কারণ ছিল— অবাধ যৌনাচার, অনিয়ন্ত্রিত ও বিকৃত যৌনাচার এবং মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। বিশ্বব্যাপী ইসলামের শত্রুরা পৃথিবীতে তাদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য বহুকাল থেকেই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা তৈরি করে চলেছে। তাদের সেই নীল নকশার মধ্যে অন্যতম একটি হলো— ট্রান্সজেন্ডার ও সমকামিতা। যত দিন যাচ্ছে, ততই তাদের কার্যক্রম, কাজের কৌশল, পরিধি বৃদ্ধি করছে। গোটা বিশ্ব জুড়ে তাদের এই নগ্ন ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতাকে মানব মনে স্বাভাবিকরণ ও মানুষকে এর প্রতি সহনশীল করে তোলার জন্য তারা বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তার বাস্তব প্রয়োগও ইতোমধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে। অথচ এই ট্রান্সজেন্ডার ও সমকামিতা নিঃসন্দেহে ইসলামী শরীআতে হারাম এবং মানুষের স্বভাবজাত মানবিক মূল্যবোধ, আল্লাহর দেওয়া ফিতরাতবিরোধী জঘন্য পাপ। এমনকি এটা পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড। নিঃসন্দেহে এটাকে সমর্থন করা, বৈধতা প্রদান করার অর্থই হলো— নৈতিক মূল্যবোধ, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করা। সর্বোপরি আল্লাহর ফিতরাতবিরোধী কার্যক্রম দ্বারা আল্লাহকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো- যা তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামান্তর। খোদ ইয়াহূদী-খ্রিষ্টান মহল তো এটাই চায়। তারা মনস্তাত্ত্বিকভাবে মুসলিমবিশ্বকে করায়ত্ত করতে চায়। তারা তাদের মতাদর্শ ছাড়াও বিভিন্ন কিছু চাপিয়ে দিতে চায়। মুসলিমদের আদর্শিক পরাজয় চায়। সেটা মুসলিমরা ইচ্ছায় মানুক কিংবা অনিচ্ছায়। এই বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ে তারা পৃথিবীর উপর অনেক আগ থেকেই বিজয়ের পথে পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য নানা ধরনের নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করে চলেছে। বিজ্ঞান বলছে, ট্রান্সজেন্ডার ও সমকামিতার কোনো ভিত্তি নেই, এটি জন্মগত না; বরং এটি হচ্ছে স্বেচ্ছায় বেছে নেওয়া একটি বিকৃতি। এই বিকৃতিটাই তারা ছড়িয়ে দিতে চায় গোটা বিশ্বে। বিভিন্ন এনজিও, সংস্থা আর সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। রিপোর্ট বলছে, পৃথিবীর ১৯৫টিরও বেশি দেশ সমকামিতার বৈধতা দিয়েছে। এমনকি সমকামী বিয়ে বৈধতা দেওয়া হয়েছে ২৭টির বেশি দেশে। মূলত এই লজ্জাজনক, ন্যাক্কারজনক কাজটা একদিনে হয়নি, বরং এই কাজে সফল হতে তাদের কয়েক দশক সময় লেগেছে। কিন্তু তারা তাদের মিশন চালাতে পিছপা হয়নি। বরং এই কাজে অর্থ, সময়, বুদ্ধি, শ্রম চলমান রেখেছিল, সেই সাথে তারা বিভিন্ন এনজিও, সমাজসেবা সংস্থা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আর বিনোদনের বিভিন্ন মাধ্যমে গোটা দুনিয়ায় তাদের এই মত, পথ সর্বমহলে শিথিল, সহনশীল ও গ্ৰহণযোগ্য করে তোলার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বৈশ্বিক এজেন্ডা হিসেবে তাদের বিভিন্ন এনজিও, সমাজসেবা সংস্থা, দেশি-বিদেশি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অনেক প্লাটফর্ম কাজ করে চলছে। তন্মধ্যে OHCHR, UNDP, UNICEF, UNODC, UNESCO, UNAIDS, WFP ছাড়াও আরো অনেক বিশ্বসংস্থা বিদ্যমান।
সমকামিতাকে স্বাভাবিক বিষয় বলে উপস্থাপন করার জন্য দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নাটক-সিনেমাতেও এর বিভিন্ন চরিত্র ইতিপূর্বে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। এটা তাদের আরেকটি টোপ। যেই টোপ গোটা বিশ্ব সহজেই গিলবে বলে তারা এমনটি করেছে। কারণ হলো পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বিশেষ করে যুবক প্রজন্ম হলিউড মুভি, সিরিজের নীরব দর্শক। ফলে এগুলো মুভি, সিনেমাতে উপস্থাপন করার মাধ্যমে একসময় এটাকে তারা স্বভাবজাতভাবেই স্বাভাবিক বলে মনে করতে বাধ্য হবে। এমনকি কোনো একসময় এর পক্ষে সাফাই গাইবে।
এমনিভাবে তারা বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতিকেও করায়ত্ত করেছে। বিশ্বের বড় বড় ধনী গ্ৰুপ, কোম্পানি, কর্পোরেশন থেকে অনুদান গ্ৰহণ করে। অ্যাপল, মাইক্রোসফট কিংবা আমাজন সবার কাছ থেকে পাওয়া অনুদান গ্ৰহণ করার মাধ্যমে তারা সমকামিতা, ট্রান্সজেন্ডার ছাড়াও যত ধরনের বিকৃত মানসিকতা, মূল্যবোধ আছে- সেই খাতে তারা তাদের অর্থ যোগান দিয়ে চলেছে। ফলে বিশ্বব্যাপী তাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে শিশু-কিশোরও। তারা বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, হাইস্কুল, প্রাইমারি স্কুল ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ে পর্যায়ক্রমে পড়ালেখার নামে ‘যৌনাচার, সমকামিতা’ শিক্ষা দিচ্ছে। এজন্য তারা একটি ঐক্য পরিষদ তৈরি করেছে নাম দিয়েছে— Gay Straight Alliance Club. তাদের কাজেই হলো প্রতিটি স্কুলের শিশুদের শিশুমনে সমকামিতার প্রসার এবং স্বাভাবিককরণ করা। গোটা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রকে যৌনাচারের নোংরামি শিক্ষা দিয়ে সমাজ, জীবনকে অধঃপতিত ও একটি অসভ্য সমাজ গঠনের জন্য তারা এমন প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা এমন কারিকুলাম প্রণয়ন করে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। সেই কারিকুলাম থেকে আমাদের বাংলাদেশও কিন্তু পিছিয়ে নেই! সমকামিতাকে স্বাভাবিককরণ ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য তারা সেলিব্রিটিদের দ্বারা নানা ধরনের সিনেমা, নাটক, ওয়েব সিরিজ ছাড়াও নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে। বিশ্ববিখ্যাত সব তারকাদের নিয়ে তারা বড় বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উপস্থাপন করে বিকৃত যৌনাচারের স্থিরচিত্র। আর এই সমকামিতা, ট্রান্সজেন্ডার নামক বিকৃত মানসিকতাকে একটি স্টাইল, মডেল হিসেবে উপস্থাপন করছে এবং সেই সাথে তাদেরকে যুবক প্রজন্মের কাছে ভালো ও আকর্ষণীয় করে তুলছে। বিভিন্ন ম্যাগাজিন, বিনোদনমূলক সংবাদ প্রভৃতির মাধ্যমে ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতার মত ও পথকে লালন করা তারকাকে বিশ্বে বড় স্টাইলিস, সেলিব্রিটি বানানোর জন্য প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়। এজন্যই তো বিটিএস-এর মতো বিকৃত যৌনাচার মানসিক ভারসাম্যহীন দলের সাফাই গাইতে দেখা যায় ইয়াং জেনারেশন ভাই-বোনদের। এমনকি আশ্চর্যের বিষয় হলো— অনেক তরুণ-তরুণী বিটিএস-এর আর্মি বলেও দাবি করে। তাদেরকে অন্ধের মতো ভালোবাসে। তাদের বিরুদ্ধে কিছু মন্তব্য করলেই তাদের গায়ে আগুন জ্বলে ওঠে। বিশ্বজুড়ে এমন নোংরামি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শুধু বিটিএস-এর মতো সংগঠন নয়; বরং আরো অনেক সংগঠন আছে। এমনকি এমন যৌনাচার, নোংরামিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তারা বিনামূল্যে কনডম, লুব্রিকেন্ট বিতরণ করতেও পিছিয়ে নেই। সেই সাথে যৌনতাকে নরমালাইজ করার জন্য শিশুদের অবাধ মেলামেশা করার জন্য বৈশ্বিক পরিকল্পনা করছে। যা বিভিন্ন মুসলিম দেশে বিষয়টি সহজেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশও এক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে। বিশেষ করে বামপন্থি, স্বার্থান্বেষী বুদ্ধিজীবী ও তথাকথিত সুশীল সমাজ বেশি তোড়জোড় করছে। সময়ে সময়ে এরা নড়েচড়ে বসে, কথা বলে, পরিকল্পনা করে। বিশ্ব মোড়লদের এবং জাতিসংঘের বাণীকে এরা মনেপ্রাণে মানে। জাতিসংঘ ও বিশ্ব মোড়ল বলেছে, সমকামী বিয়ে বৈধ। এজন্য জাতিসংঘ-এর প্রতি জনগণের সহনশীলতা পোষণের জন্য পদক্ষেপ নেয় Frআলাইহিস সালামআলাইহিস সালাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামরাযিয়াল্লাহু আনহুমd আলাইহিস সালামরাহিমাহুমাল্লাহআলাইহিমাস সালামছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামl ক্যাম্পেইন। এভাবেই এই বিকৃত, অসভ্য যৌনাচারকে সমাজে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
[২]
ট্রান্সজেন্ডার হলো সমকালীন বিশ্বের একটি বিষাক্ত ভাইরাস ট্রেনডার। এই মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে খোদ আমেরিকা, ইউরোপ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে চলছে নানা ধরনের আয়োজন, কার্যক্রম এবং প্রদর্শনী। মূলত ট্রান্সজেন্ডার বলতে সহজ ভাষায় বোঝায়, লিঙ্গ পরিবর্তন তথা কেউ যদি জন্মগতভাবে পুরুষ হয়ে জন্মগ্ৰহণ করে এবং সময় ও যুগের চাহিদায় সে নিজেকে যদি মনে করে সে পুরুষ না বরং সে নারী, তাহলে সে পরিচয় দেওয়ার ক্ষেত্রে যেই আইডেন্টিফাই পছন্দ করবে সেটাই সে ধারণ করতে পারবে। এখানে মনে রাখবেন যে, এই পরিচয়কে আবার হিজড়া পরিচয়ের সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না। এরা জেন্ডার বৈষম্যকে কেন্দ্র করে একটি বিকৃত, কুরুচি এবং অশ্লীলতাকে ছড়ানোর জন্য এমন নোংরা ষড়যন্ত্রের নীল নকশা তৈরি করে। তারা হিজড়ার পরিচয়ের দিকে ঝুঁকে না; বরং এর সাথে মিল রেখে মাঝখান থেকে ট্রান্সজেন্ডারকে উদ্ভব করে। যদিও হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার সম্পূর্ণ বিপরীত এবং বিধান ভিন্ন। ট্রান্সজেন্ডারকে যদিও প্রতিষ্ঠিত মতবাদ ও একে ধারণ করে পরিচয় দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সাম্রাজ্যবাদী মহল এবং তারা এটাকে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বিজ্ঞানসম্মত, সহজ, স্বাভাবিক ও জন্মগত বলে প্রচারণা করছে। অথচ সারা দুনিয়ার বিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, দর্শনশাস্ত্রে এমন ভূঁইফোড়, নোংরা চিন্তা, মতবাদকে বহু আগেই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে। বিজ্ঞান বলেন কিংবা চিকিৎসাবিজ্ঞান সবাই বিনা বাক্যে এটাকে নাকচ করেছে ও করছে। কেননা এটা পরিচয়বিরোধী, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি ধর্মবিরোধী। এমন শ্রেণিবিন্যাসে আল্লাহ তাআলা আশরাফুল মাখলূক্বাত মানুষকে সৃষ্টি করেননি যে, যে ব্যক্তি পুরুষ হয়ে জন্ম নিবে তাকে নারী পরিচয় দিতে হবে কিংবা নারী হয়ে জন্ম নিবে তাকে পুরুষ পরিচয় দিতে হবে! নিঃসন্দেহে এটা একটি হীন, নোংরা ষড়যন্ত্রের নীল নকশা। কেননা যদি এমন পরিচয় দেওয়া হয়, তাহলে সমাজে অবাধ যৌনাচার, সমকামিতা ছড়িয়ে পড়বে। সময়ে সময়ে ব্যক্তির পরিচয়ের পরিবর্তন করে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করবে। ‘সুবিধাবাদ জিন্দাবাদ’ ক্বায়েম হবে। নিজের স্বভাব, সমাজ, পরিবার, রাষ্ট্রবিরোধী ট্রান্সজেন্ডার এমন চিন্তার ফসল নিয়েই যে আমদানি তা কিন্তু নয়; বরং আরো অনেক চিন্তা-চেতনা সমাজে ছড়িয়ে দিতে চায়। যার মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্যই হলো ইসলাম ও মুসলিম। কেননা ইসলামে এরকম নোংরামি ও অশ্লীলতার কোনো সুযোগ নেই। বরঞ্চ এধরনের যত নোংরামি আছে, সে সকলের বিরুদ্ধে ইসলাম অবস্থান সুস্পষ্ট করেছে। ফলে এমন কোনো জানালা নেই, যেটার দ্বারা এমন মতবাদ উঁকি দিবে আর সেটাই স্বাভাবিককরণ করা যাবে। কেননা ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা কিংবা পশুকামিতা যাই হোক না কেনো, সর্বধরনের এমন হীন কাজ ইসলামী শরীআতে হারাম এবং মারাত্মক গর্হিত কাজ। ট্রান্সজেন্ডারের মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তারা হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার শব্দের মাঝে কোনো রকম পার্থক্য ছাড়াই বুঝাতে চাচ্ছে যে, মূলত ট্রান্সজেন্ডার হলো হিজড়া। সহজ ভাষায় তৃতীয় লিঙ্গ বলতে ট্রান্সজেন্ডার। সত্যি কথা বলতে এরা হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার পরিচয় শব্দের পার্থক্য না করে হিজড়া শব্দকে নিজেদের হীন উদ্দেশ্য হাছিল করার জন্য ব্যবহার করতে উদগ্রীব। প্রকৃতপক্ষে হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার-এর মাঝে বিশাল পার্থক্য বিদ্যমান। একটি হলো জেনেটিক সমস্যা আর অপরটি স্বঘোষিত আইডেন্টিফাই। সহজ ভাষায় বলি, হিজড়া হলো একটি জন্মগত জেনেটিক সমস্যা (জন্মগত সমস্যা), যা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ফিতরাতগতভাবে হয়ে থাকে। আর ট্রান্সজেন্ডার হলো, স্বঘোষিত নারী কিংবা পুরুষ বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার আইডেন্টিফাই, যা বৃহৎ পরিসরে স্বার্থ হাছিল করার জন্য ব্যবহার করতে চায় এবং পৃথিবীব্যাপী অশ্লীলতা, অন্যায়, সংঘাত ছড়িয়ে দিতে চায়। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশের মধ্যে এই ঘৃণিত কাজকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পায়তারা চালায়। যেমন পাকিস্তানে ট্রান্সজেন্ডার ২০১৮ সালে সংসদে আইন পাশ করা হলে পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১৭ মে আইনটি বাতিল করতে বাধ্য হয়। কারণ হলো, এই মতবাদ যদি এভাবে চালু থাকে, তাহলে তাদের পারিবারিক, সমাজব্যবস্থা টিকে থাকা হুমকির মুখে পড়বে। কেননা ট্রান্সজেন্ডার হলো জন্মগত পরিচয়ের সাথে মনস্তাত্ত্বিক জেন্ডার আইডেন্টিফাইয়ের অনুভূতির মারাত্মক সংঘর্ষ, যা চলমান থাকলে পৃথিবীতে বিপর্যয় নেমে আসবে। ট্রান্সজেন্ডার মানুষের পরিচয়গত বিষয়টিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। একজন মানুষ নিজেকে পুরুষ না নারী বলে পরিচয় দিবে এতেই সে হীনম্মন্যতা, সংকীর্ণতা এবং সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবে। প্রশ্ন হলো আপাতত ধরেই নিলাম যে, সে কোনো একটি পরিচয় ধারণ করল। তাহলে পরবর্তী ধাপে তার হুকুম কী হবে? ধরুন, একজন পুরুষ সে ট্রান্সজেন্ডার পরিচয় গ্ৰহণ করে, এখন সে নারী বলে পরিচয় দিচ্ছে! এক্ষেত্রে ইসলামী শরীআতে তার বিধান কী হবে? তার ইবাদত, উত্তরাধিকার, বিভিন্ন বিধান কীভাবে বর্তাবে? এমনিভাবে অনেক সমস্যা, জটিলতা ও প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে যার উত্তর তাদের কাছে নেই। এটা তো শরীআতের দৃষ্টিতে বললাম। বাস্তবতার নিরিখে যদি বলা হয়, বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা অফিস-আদালত যেটা শুধু নারী কিংবা পুরুষ পরিচালিত সেখানে কি এমন কাউকে নিয়োগ দিবে, যে নিজেকে নারী কিংবা পুরুষ বলে পরিচয় দেয় বা ট্রান্সজেন্ডার-এর ভাষায় নিজেকে আলাদা কিছু দাবি করে তাকে চাকরি কিংবা পড়ালেখার সুযোগ দিবে? নিঃসন্দেহে এটা মানতে চাইবে না। এমনভাবে বাসে, গাড়িতে, বিমানে ছাড়াও যেখানে সেখানে নির্ধারিত নারী আসন কিংবা পুরুষ আসন সুবিধা অর্জনের জন্য যে কেউ এমনটি করতে পারে, যে বলবে, আপাতত আমি নারী বা পুরুষ! এভাবে স্বঘোষিত আইডেন্টিফাই সমাজ ভাঙনের এবং পরিবেশের স্থিতিশীলতা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে এবং দিনে দিনে জটিলতা সৃষ্টি হবে। জটিলতার সমীকরণে সমাজের অশ্লীলতা, যেনা, ব্যভিচার প্রকাশ্যে ছড়ানোর একটি বীভৎস রূপই হলো— ট্রান্সজেন্ডার। একজন মানুষ বাহ্যিকভাবে পুরুষ কিন্তু মনন জগতে সে নিজেকে নারী বলে দাবি করে! কিংবা একজন নারী বাহ্যিকভাবে নারী কিন্তু মনন জগতে সে নিজেকে পুরুষ দাবি করে! তাহলে শারীরিক সম্পর্ক (বৈবাহিক জীবন) কার সাথে করবে? যদি সেই পুরুষ নিজেকে মনন জগতে নারী দাবি করে আর নারী নিজেকে পুরুষ দাবি করে, তাহলে তো প্রকারান্তরে সমকামিতাই হচ্ছে। এমন নোংরামি চিন্তা পাশ্চাত্য সভ্যতা চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে গোটা দুনিয়ায়। আমাদের বাংলাদেশও এমন ষড়যন্ত্রের শিকার। বেশ কয়েক বছর থেকে এই মতবাদকে নরমালাইজ করার জন্য অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটাকে নির্লজ্জভাবে বৈধতার সাফাই কিংবা সহজ, স্বাভাবিক করার জন্য মিডিয়া জোরালো ভূমিকা রাখতে মরিয়া। অনেক নাট্যকার, লেখক, বুদ্ধিজীবীও লজ্জা-শরম বেঁচে খেয়েছে! নইলে এমন কুরুচিপূর্ণ মতবাদকে কীভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, তার জন্য এত গলাবাজি, সভা, সেমিনার, বিবৃতি দেওয়া যায়? মনে রাখবেন, এটা শুধু একটি মতবাদ নয়, বরং এটা আমাদের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নাম। অতএব, এমন কুরুচিপূর্ণ মতবাদকে সমাজজীবন থেকে বিতাড়িত করতে হবে এবং আল্লাহর চিরকল্যাণকর বিধান প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যে বা যারা এমন অসভ্যতাকে সমাজে ছড়িয়ে দিতে চায়, তাদের গোঁমর ফাঁস করতে হবে, যা ইতোমধ্যে সবাই জেনেছে। সেই সাথে জনসাধারণকে বুঝাতে হবে এদের বীভৎস ষড়যন্ত্র। আল্লাহ আমাদেরকে ঈমান, আমল বিনষ্টকারী সকল মতবাদ, মিশন, ভিশন থেকে আমাদের নীতি-নৈতিকতাকে পবিত্র রাখার তাওফীক্ব দান করুন এবং আমাদের ইলমী যোগ্যতা দান করুন, যেন ইসলাম ও কুফরের মধ্যে তুলনামূলক পার্থক্য করে নব্য জাহেলিয়াতকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে বাতিলকে চূর্ণ করতে পারি- আমীন!
মাযহারুল ইসলাম
দাওরায়ে হাদীছ, মাদরাসা দারুস সুন্নাহ, মিরপুর, ঢাকা; শিক্ষক, হোসেনপুর দারুল হুদা সালাফিয়্যাহ মাদরাসা, খানসামা, দিনাজপুর।