[১]
মনে করুন, আপনার আদরের ছেলে যাকে ঘিরে আপনার কত স্বপ্ন, কত আশা সেই সন্তান হঠাৎ একদিন বলতে শুরু করল যে, সে মনে মনে নিজেকে মেয়ে মনে করে, তার মেয়েদের মতো চলতে, মেয়েদের কাপড় পরিধান করতে ভালো লাগে। শুধু তা-ই নয়; সে এখন সামাজিকভাবে মেয়ের স্বীকৃতি পেতে চায়। অর্থাৎ তাকে এখন থেকে মেয়ে মনে করতে হবে, মেয়ের অধিকার দিতে হবে। আরও ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, সে একটা ছেলেকে পছন্দ করে, যাকে সে বিবাহ করতে চায়।
হোয়াট? হোয়াট ননসেন্স! সে তো আস্তো একটা ছেলে। আর ছেলে হয়ে কেবল মনে মনে মেয়ের ভান করে আরেকটা ছেলের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে, তাকে বিয়ে পর্যন্ত করতে চায়। এ কেমন রুচির বহিঃপ্রকাশ? এ কেমন বিকৃত মানসিকতা? এ তো সমকামিতা! সন্তানের মুখ থেকে এ জাতীয় বিকৃত ও কুরুচিপূর্ণ কথা শুনে আপনার মাথা ঠিক থাকবে তো? মা-বাবা হিসেবে আপনার তখন কেমন লাগবে তা একটু চিন্তা করুন তো। সন্তানের এমন বেহায়াপনার দাবি কি আপনি সজ্ঞানে কোনোদিন মেনে নিতে পারবেন? তার এমন নির্লজ্জ দাবি আপনার মানসিক অবস্থাকে কোন অবস্থায় নিয়ে দাঁড় করাবে, তা কি আপনি আজকের দিনে সুস্থ মস্তিষ্কে ভাবতে পারছেন?
আপনি যা-ই ভাবেন, অদূর ভবিষ্যতে আপনার সন্তানের মুখে ঐ জাতীয় বিকৃত কথা সহজলভ্য করার জন্য সকল ব্যবস্থা করে রেখেছে এ সমাজের সুশীলদের মুখোশ পরে থাকা কিছু নিকৃষ্ট মানুষ। এই বিকৃত রুচির জ্ঞানপাপীরা এজন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তারা তাদের মিশন নিয়ে কতটা এগিয়ে গিয়েছে, কতটা সফল হয়েছে তা একটা মুসলিম দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের ট্যাক্সের টাকায় মুসলিম সন্তানদের অ্যাকাডেমিক বইয়ের পাতায় তাদের সীমালঙ্ঘনকারী কনটেন্টের সংযোজন থেকে সহজে অনুমেয়। কত বিশাল স্পর্ধা তাদের! কতটা সাহস হলে এরা এমনটা করতে পারে— ভাবা যায়!
সত্যি কথা বলতে কী, এরা আমাদের সন্তানদের ঈমান চুরির ভয়াবহ মিশনে নেমেছে। তারই অংশ হিসেবে সর্বশেষ এরা পাঠ্যবইয়ে হাত দিয়েছে, যাতে শিশুকাল থেকে বাচ্চাদের মস্তিষ্কে কুফরী চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়ে ঈমান থেকে দূরে রাখা যায়। অথচ ঈমান হচ্ছে একজন মুসলিমের আসল সম্পদ, যা থাকা-না থাকার উপর জান্নাত-জাহান্নামের ফয়সালা হবে।
এবার বুঝতে পারছেন কি, এরা আমাদের কোথায় হাত দিয়েছে? তারা তো রীতিমতো আমাদের সন্তানদেরকে জাহান্নামে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে। আর আমরা কতই-না বেখবর। এখনই যদি আমরা এসব ঈমান চোরদের শক্ত করে না ধরি, তবে বর্তমান প্রজন্ম তো বটেই সামনের প্রজন্মগুলো নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করেও ঈমানহীন অবস্থায় বেড়ে উঠবে তা বলাই বাহুল্য। তারা বুঝবেই না যে, তাদের ঈমান আছে কী নাই। ইসলামের দুশমনেরা এই ফলাফলের জন্যই তাদের মিশন চালিয়ে যাচ্ছে। আর এদিকে আমরা পড়ে আছি রেজাল্টের কম্পিটিশনে।
আপনি সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ের পুরাতন ভার্সন ৫১-৫৭ (২০২৩) নতুন ভার্সন ৩৯-৪৪ (২০২৪) নম্বর পৃষ্ঠা খুলে দেখুন যে, ওখানে শরীফ থেকে শরীফা হওয়ার যে নির্লজ্জতার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, সেই শিক্ষার ফলাফল হতে যাচ্ছে উপরে দেখানো লোমহর্ষক দৃশ্যপট। সে খবর আছে কি আপনার? জেনেশুনে আজকের নীরবতা ও প্রতিবাদবিমুখিতা একদিন আপনাকে, আপনার পরবর্তী প্রজন্মকে সেই ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
অতএব, সন্তানকে শিক্ষার নামে পাঠ্যবইয়ে কী পড়তে দেওয়া হচ্ছে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। শুধু স্কুল-কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আর প্রাইভেট মাস্টার রেখে দিলেই হবে না, নিজেকে তাদের পড়াশোনায়, চলাফেরায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। তারা কাদের সাথে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে, মোবাইলের স্ক্রিনে কী করছে এগুলো পূর্ণ মনিটরিং এর মধ্যে রাখতে হবে। আজকাল সমকামিতার অনেক অ্যাপস বের হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে ঘরে বসেই এই ঘৃণ্য কাজে যুক্ত হওয়া যায়। তাই সন্তানের মোবাইল ব্যবহারে বাড়তি সাবধানতা অতীব জরুরী।
[২]
প্রায় সবার কাছে পরিচিত থাকায় শিক্ষিত নামধারী কুলাঙ্গাররা যখন সমকামী শব্দকে প্রকাশ্য ব্যবহার করতে পারছে না, তখন তারা ট্রান্সজেন্ডার নাম দিয়ে সমকামিতাকে ঢাকার চেষ্টা করছে। তাতেও যখন ব্যর্থ হচ্ছে, তখন ট্রান্সজেন্ডার আর হিজড়া এক করে তথা হিজড়া শব্দকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, হিজড়াদের প্রতি সহানুভূতি কাজে লাগিয়ে সমকামিতাকে ঢাকতে চাইছে।
হিজড়া আর ট্রান্সজেন্ডার দুটো একেবারেই ভিন্ন বিষয়। হিজড়া হচ্ছে যারা জন্মগতভাবে শারীরিক ত্রুটি কিংবা অস্বাভাবিকত্ব নিয়ে জন্মায়। আর ট্রান্সজেন্ডার সম্পূর্ণ সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ যে কিনা নিজেকে তার মনে যা চাইবে তা পরিচয় দিতে পারবে।
একজন পুরুষ যদি মনে মনে তাকে নারী মনে করে, তবে তাকে নারী মনে করতে হবে, সমাজে তাকে নারীর স্বীকৃতি দিতে হবে। একইভাবে, একজন নারী যদি মনে মনে তাকে পুরুষ মনে করে, তবে তাকে পুরুষ মনে করতে হবে, সমাজে পুরুষের স্বীকৃতি দিতে হবে। আর এটাকেই তো সমকামিতা বলে। অথচ তারা ট্রান্সজেন্ডার নাম দিয়ে, হোক না সার্জারি করে, সমকামিতাকে আড়াল করতে চাইছে। এখানেই তো শেষ নয়। যেহেতু তারা নারী দাবি করছে, সেহেতু তাদেরকে তাদের দাবি অনুযায়ী নারীর সকল অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। চিন্তা করুন, বিষয়টিকে তারা কত গভীরে নিয়ে যাচ্ছে। সমাজে কত ভয়াবহ লেভেলের বিশৃঙ্খলা তথা ফেতনা সৃষ্টি হবে, তা ভাবতেই পারবেন না।
হিজড়াদের প্রতি বরাবরই আমাদের সিম্প্যাথি রয়েছে। তারা সমাজে অবহেলিত না থাকুক, প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হোক এটা আমরা চাই। কিন্তু তাই বলে তাদের নাম করে ট্রান্সজেন্ডার নামক কীটদের তো ঠাঁই দেওয়া যায় না।
ট্রান্সজেন্ডার নামক সমকামীরা সমাজের স্বীকৃতি কিংবা আইনি বৈধতার মাধ্যমে কী কী চাচ্ছে, জানেন? পুরুষ হয়ে নারী দাবি করা ট্রান্সজেন্ডাররা যা যা চাচ্ছে, তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো—
(১) নারীদের পোশাক পরিধান করে নারীদের মতো চলাফেরা করতে চায়, পুরুষ বিয়ে করতে চায় তথা সমলিঙ্গের সাথে সহবাস করতে চায়।
(২) ক্লাসরুমে নারীদের সাথে বসতে চায়, নারীদের হোস্টেলে থাকতে চায়, নারীদের টয়লেট সবকিছু ব্যবহার করতে চায়।
(৩) নারীদের কোটায় চাকরি চায়, হাসপাতালে ‘উইমেন্স অনলি’ ব্লকে যেতে চায়।
(৪) সমাজ নারী হিসেবে ট্রিট করুক সেটা চায়।
(৫) সম্পত্তিতে নারীর অধিকার চায়।
একইভাবে, নারী হয়ে পুরুষ দাবি করা ট্রান্সজেন্ডাররা তার বিপরীতগুলো চায়। একজন পুরুষ হয়ে কেবল মনে মনে নারী দাবি করার বিষয় যদি মেনে নেওয়া হয়, তবে স্কুল-কলেজ তথা সর্বক্ষেত্রে আপনার মেয়ের পাশে তাকে বসতে দিতে হবে অথচ সে আস্তো একটা পুরুষ। তার শক্ত বাহুই তো সাক্ষী দেয় যে, এ আবার কীভাবে মেয়ে হয়। সেই তাকে কিনা মেয়েদের হোস্টেলে মেয়েদের সাথে থাকতে দিতে হবে। সম্পত্তিতে নারীর অধিকার অনুযায়ী তাকেও অধিকার দিতে হবে। এখন আপনিই বলুন, আপনার মেয়ের পাশে কি তার বসা কখনো মেনে নিতে পারবেন? একই হোস্টেলে একই রুমে তার থাকা কি মেনে নিতে পারবেন? কস্মিনকালেও কি এগুলো মেনে নেওয়া যায়, বলুন? মেনে নেওয়া তো বহু দূরের কথা, এসব ঘৃণ্য তথা বমি এসে যাওয়ার মতো বিষয় নিয়ে তো চিন্তাই করা যায় না। অথচ সামাজিক স্বীকৃতি ও আইনি বৈধতার মাধ্যমে তারা এগুলোই আদায় করে নিতে চাচ্ছে, সমাজে নরমাল করতে চাচ্ছে। আইন পাশ হয়ে গেলে কী অবস্থা হবে তা কি এবার বুঝতে পারছেন?
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে আইন পাশ করার সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন আমরা যদি নড়েচড়ে না বসি, তবে তারা ঠিকই আইন পাশ করিয়ে তারা তাদের অধিকারের বৈধতা পেয়ে যাবে। এতে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি বেড়ে যাবে। ধর্ষণ করেও ট্রান্সজেন্ডারের নাম দিয়ে তাদের বেঁচে যাওয়ার সুযোগ থাকবে। সমকামিতা নরমাল বিষয়ে পরিণত হয়ে যাবে। নারী ও পুরুষের আলাদা পরিচয় থাকবে না। নারীদের জন্য নির্ধারিত স্থানে ট্রান্সজেন্ডার নামক পুরুষের অনুপ্রবেশ ঘটবে। নারীদের জন্য সকল সুযোগ-সুবিধায় তারা ভাগ বসাবে। উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। পাশ্চাত্যের মতো পরিবার ও সমাজ বলতে কিচ্ছু থাকবে না। এছাড়া, আরও কত যে সমস্যা হবে, তা কল্পনারও অতীত। আর এভাবে চলতে থাকলে লূত আলাইহিস সালাম-এর জাতির মতো আল্লাহর গযব নাযিল হবে। তার কি ভয় হয় না আমাদের?!
[৩]
আল্লাহর সাথে শয়তানের পাঁচটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ ছিল যে, আমি তাদের আরও নির্দেশ দেব- যেন তারা আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিকে বিকৃত করে দেয়। উল্লেখ্য, আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে প্রকৃতিগতভাবে যেমন রেখেছেন, তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন আনাই হচ্ছে সৃষ্টির বিকৃতি। এই যে ট্রান্সজেন্ডার, তারা তো বায়লোজিক্যালি হয় পুরুষ, না হয় নারী। কিন্তু তারা যখন আল্লাহর দেওয়া ফিতরাতকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পুরুষ হয়েও নারীর মতো আর নারী হয়েও পুরুষের মতো হতে চাচ্ছে, এটাকেই বলে সৃষ্টির স্পষ্ট বিকৃতি। শয়তানের চ্যালেঞ্জগুলো উল্লেখ করে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের হুঁশিয়ার করে বলেছেন, যে ব্যক্তি এসব কাজ করে আল্লাহ তাআলার বদলে শয়তানকে নিজের অভিভাবক বানিয়ে নেবে, সে এক সুস্পষ্ট ক্ষতি ও লোকসানের সম্মুখীন হবে (আন-নিসা, ৪/১১৮-১১৯)। আর এই ক্ষতিটা আল্লাহর ক্ষমা না পাওয়ার ক্ষতি, আল্লাহর ভয়ঙ্কর আযাবে পতিত হওয়ার ক্ষতি সর্বোপরি জান্নাত হারানোর ক্ষতি।
সমকামিতার জন্য মহান আল্লাহ নবী লূত আলাইহিস সালাম-এর জাতিকে ধ্বংস করেছিলেন। তাও যমীন উল্টিয়ে দিয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়; লূত আলাইহিস সালাম-এর স্ত্রী যিনি সরাসরি সমকামিতায় সম্পৃক্ত না থেকেও শুধু সমকামিতার পক্ষে থাকার কারণে তাকেও আল্লাহ পাকড়াও করেছিলেন, ভয়ানক আযাবের সম্মুখীন করেছিলেন। এজন্য আমাদের যারা সমকামিতায় লিপ্ত নয় ঠিক কিন্তু লূত আলাইহিস সালাম-এর স্ত্রীর মতো এর বিপক্ষে কিছু বলছেন না, হয়তো নীরব থাকছেন, তাদের উচিত লূত আলাইহিস সালাম-এর স্ত্রীর পরিণতি থেকে শিক্ষা নেওয়া। লূত আলাইহিস সালাম-এর জাতির লোমহর্ষক পরিণতি থেকে বোঝা যায়, সমকামিতার পাপ আল্লাহর কাছে কত জঘন্য লেভেলের পাপ।
LGBT এর সাথে সম্পৃক্ততা হওয়া থেকে বেঁচে থাকা এবং এ নিয়ে সচেতনতার লক্ষ্যে এসব বিষয় নিয়ে আমাদের জানা থাকা খুবই দরকার। জানা না থাকলে তারা যে কত পাপিষ্ঠ দাবি নিয়ে জনসম্মুখে আসছে, তা আমরা বুঝতে পারব না। আর তা বুঝতে না পারলে আমাদের নীরবতার সুযোগে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তাদের বিকৃত চিন্তা ছড়িয়ে দিবে। যাহোক, LGBT এর পূর্ণরূপ হচ্ছে যথাক্রমে Lesbian, gay, bisexual and transgender. তারা তাদের তথাকথিত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আশির দশকে LGBT নামক সমকামিতার একটি সম্প্রদায় গড়ে তোলে। প্রসঙ্গত, তাদের তথাকথিত সামাজিক আন্দোলনের প্রতীক হচ্ছে রংধনু বা রেইনবো।
এবার LGBT এর সংজ্ঞা জেনে নিই। মূলত, আল্লাহর দেওয়া নিয়মের বাইরে গিয়ে এমন পুরুষ যে পুরুষের প্রতি আসক্ত তাকে Gay বলে, এমন নারী যে নারীর প্রতি আসক্ত তাকে Lesbian বলে, এমন মানুষ যে নারী ও পুরুষ উভয়ের প্রতি আসক্ত তাকে Bisexual বলে, এমন মানুষ যে ইচ্ছাকৃতভাবে হোক সার্জারি করে অথবা মনে মনে ছেলে থেকে মেয়েতে আর মেয়ে থেকে ছেলেতে রূপান্তরিত হয় তাকে transgender বলে।
[৪]
ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু নিয়ে আজকে আমরা যারা নীরব থাকছি, শুধু ফেইসবুকের এ জাতীয় কনটেন্টগুলো স্ক্রলিং করাতে সীমাবদ্ধ থাকছি, কাল যখন আপনার সন্তানসন্ততি, ভাই-বোন কিংবা পরিবারের কেউ আপনাকে অবাক করে দিয়ে এই বিকৃত রুচির যৌনতার সাথে যুক্ত হবে, নিজেকে সমকামী হিসেবে বুক ফুলিয়ে আজকের কিছু খবিশদের মতো আত্মপ্রকাশ করবে, তখন ঠিকই হাড়েহাড়ে টের পাবেন যে, এটা আপনার জন্য মূলত আজকের দিনগুলোতে নীরবতার দুনিয়াবি এক শাস্তি।
আমরা যারা লেখনীর মাধ্যমে, বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিবাদ করতে অপারগ, তাদের উচিত অন্তত ফেইসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়ার যত প্ল্যাটফর্মে আমরা অ্যাকটিভ রয়েছি, সেগুলোতে প্রতিবাদী কনটেন্ট বেশি বেশি শেয়ার করা, যাতে বেশি মানুষ এজাতীয় জঘন্য বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে, সচেতন হতে পারে এবং নিজেদের জায়গা থেকে প্রতিবাদ করতে পারে। এতে যারা ট্রান্সজেন্ডারের নামে সমকামিতা প্রতিষ্ঠার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে, তাদের উপর চাপ সৃষ্টি হবে, তাদের শয়তানী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে।
এছাড়া, আইনি বৈধতা পাওয়া নিয়ে তারা যে অলীক স্বপ্ন দেখছে, সেটাতে ভাটা পড়বে। কাজেই আমরা যেন বিশেষ করে এমন ইস্যুতে কোনোভাবেই নীরব না থাকি। তা না হলে পরবর্তীতে এদেরকে আর থামানো যাবে না, এদের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। ঐ যে কথায় বলে না, বসতে দিলে শুতে চায়। এদের অবস্থা হচ্ছে তেমনি। অতএব, প্রিয় ভাই ও বোন আমার! আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিবাদ করি, মানুষকে সচেতন করি। কেননা এটা ঈমানের প্রশ্ন, এটা আল্লাহর লা‘নত পাওয়ার প্রশ্ন, সর্বোপরি আল্লাহর গযবে সম্মুখীন হওয়ার প্রশ্ন। জাগো, ওহে মানুষ, জাগো!
সমকামিতার ফলে বংশবৃদ্ধি হুমকির মুখে পড়বে। এজন্য এটা শুধু মুসলিমদের ইস্যু নয়; এটা সকল ধর্মাবলম্বীদের ইস্যু। এমন ইস্যুতে কেউ নীরব থাকতে পারে না। এমন ইস্যুর মিডল গ্রাউন্ড বলতে কিছু নেই, হয় পক্ষে না হয় বিপক্ষে। সমাজের বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি দূর করতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করে যেতে হবে। আজকের নীরবতা একদিন আপনার অনেক পস্তানোর কারণ হবে। সেদিন আফসোস করেও লাভ হবে না।
শয়তানের কুমন্ত্রণায় কেউ এটা ভেবে বসবেন না যে, আমি সামান্য একজনের প্রতিবাদে কী আসবে আর যাবে। মনে রাখবেন, কোটি হতে হলে ‘এক’ এর প্রয়োজন আছে। এখন ‘এক’ যদি বলে আমি সামান্য একের কী প্রয়োজন কোটি তো বিশাল, তাহলে তো আর ‘কোটি’ হওয়া সম্ভব না। তেমনি আপনি নিজেকে সামান্য একজনে কী আসবে না আসবে ভেবে প্রতিবাদ না করলে কাঙ্ক্ষিত ফল আদায় হবে না। শক্ত প্রতিবাদের জন্য প্রতিটা মানুষের সম্পৃক্ততা জরুরী।
অতএব, যে-কোনোভাবে আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রতিবাদের সাথে যুক্ত হতেই হবে। তা না হলে পরবর্তী প্রজন্মের বেড়ে উঠার সুস্থ প্ল্যাটফর্ম তথা আমাদের প্রতি তাদের হক্ব নষ্ট করার দায় আমাদেরকেই নিতে হবে। তারা যখন জানবে আমাদের আজকের দিনগুলোতে শক্ত প্রতিবাদ না করার কারণে তাদের সময়ে সমকামিতা নরমালাইজ হয়েছে, সমাজে অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে, তখন কিন্তু তারা এই ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমাদের প্রতি একরাশ ঘৃণাই প্রকাশ করবে যে, কী করলেন আমাদের বড়রা। এতে আমরা তাদের কাছ থেকে দু‘আর বদলে বদ-দু‘আই পাবে, যা কখনোই কাম্য নয়।
রাকিব আলী
* আম্বরখানা, সিলেট।