প্রশ্ন: সম্মানিত শায়খ! পিতা যদি তার পুত্রকে খারাপ মেয়ের সাথে বিয়ে করতে বাধ্য করেন অথবা ভালো মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে বাধা দেন, তাহলে পুত্রের করণীয় কী?
উত্তর: পূর্বের প্রশ্নের মতোই একই জবাব। দ্বীন বা চারিত্রিক যে-কোনো ত্রুটির কারণে ছেলে বিয়ে করতে চাচ্ছে না- এমন মেয়ের সাথে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করা পিতার জন্য জায়েয নেই। এমন কত মানুষ আছে, যারা সন্তানদেরকে নিজের পছন্দমতো নারীদেরকে বিয়ে করতে বাধ্য করে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়েছেন। তারা হয়তো বলেছেন, এই মেয়েকে বিয়ে করো! কারণ, সে আমার ভাতিজি অথবা আমার বংশের মেয়ে। এ অবস্থায় ছেলে তার পিতার আদেশ মানতে বাধ্য নয়। আবার পিতার জন্যও জায়েয নেই পুত্রকে বাধ্য করা।
এমনকি ছেলে যদি কোনো ভালো মেয়েকে বিয়ে করতে চায়, আর পিতা তাকে বাধা দেয়, তবে এক্ষেত্রে পিতার আনুগত্য করা জরুরী নয়। কারণ, এ অবস্থায় পিতার কোনো ক্ষতি হচ্ছে না; বরং ভালো মেয়েকে বিয়ে করলে ছেলের ভালো হবে।
যদি আমরা বলি, সন্তান সর্বাবস্থায় পিতার আনুগত্য করতে বাধ্য তাতে সন্তানের উপকার থাকুক বা পিতার ক্ষতি না থাকুক, তাহলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু এই অবস্থায় ছেলের উচিত বিচক্ষণতার সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং সাধ্য অনুযায়ী তার পিতাকে পরিতুষ্ট করা।
প্রশ্ন: সম্মানিত শায়খ! আপনি অনুমতি দিলে বিবাহ অনুষ্ঠানের কিছু শরীআত-বিরোধী কর্মকাণ্ড তুলে ধরব। আশা করব আপনি এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। শরীআত-বিরোধী বিষয়গুলো হলো:
প্রথমত, কোনো কোনো মহিলা এমন পোশাক পরে, যা আমাদের সমাজে প্রচলিত নেই। তারা যুক্তি দেয়, এ পোশাক শুধু নারীদের মধ্যেই পরিধান করা হয়ে থাকে। এসব পোশাক এতই টাইট যে, শরীরের আকর্ষণীয় অঙ্গগুলো সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়। কোনো কোনো পোশাক উপর দিক থেকে খোলা থাকার কারণে বুক বা পিঠ বের হয়ে যায়। অথবা নিচ দিক থেকে হাঁটু পর্যন্ত কাটা থাকে।
দ্বিতীয়ত, কোনো কোনো বিয়েতে মাইক বা সাউন্ড বক্সে নারীদের গান বাজানো হয়, ভিডিও করা হয়। এর থেকেমারাত্মক হলো, স্বামী তার স্ত্রীকে সবার সামনে চুমু দেয়। আল্লাহর বিধানের বিষয়ে সচেতন ব্যক্তিরা তাদেরকে নছীহত করলে তারা বলে, অমুক শায়খ এটিকে জায়েয বলেছেন। আমরা আশা করছি, আপনি সঠিক বিষয়টি মুসলিম সমাজের জন্য স্পষ্ট করবেন।
উত্তর: প্রথম বিষয় বলব, ছহীহ মুসলিমে আবূ হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে সাব্যস্ত হয়েছে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا.
‘জাহান্নামবাসী দু’প্রকার মানুষ, আমি যাদের (এ পর্যন্ত) দেখিনি। একদল মানুষ, যাদের সঙ্গে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তা দ্বারা তারা লোকজনকে মারবে এবং একদল স্ত্রী লোক, যারা কাপড় পরিহিত উলঙ্গ, যারা অন্যদের আকর্ষণকারিণী ও আকৃষ্টা, তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো। ওরা জান্নাতে যেতে পারবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবে না, অথচ এত এত দূর হতে তার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়’।[1]
রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, তাদের পোশাক থাকবে কিন্তু পোশাক খাটো অথবা হালকা অথবা টাইট হওয়ার কারণে পরিপূর্ণ পর্দা হবে না। এ কারণে ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ তার মুসনাদে উসামা ইবনে যায়েদ থেকে হালকা দুর্বল সনদে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ‘কিবতিয়্যাহ’ নামক পোশাক পরালেন। আমি সে পোশাক আমার স্ত্রীকে পরিধান করালে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘তোমার স্ত্রীকে ঐ পোশাকের নিচে পাতলা শেমিজ দিতে বলো! আমার আশঙ্কা হচ্ছে, তার হাড়ের সাইজ প্রকাশিত হয়ে যাবে’।[2]
বুকের উপর দিক খোলা রাখা আল্লাহর নির্দেশের স্পষ্ট লঙ্ঘন। আল্লাহ বলেন, وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ ‘তারা যেন তাদের মাথাসহ বুকের উপর ওড়না রাখে’ (আন-নূর, ২৪/৩১)। ইমাম কুরতুবী রহিমাহুল্লাহ তাঁর তাফসীরে বলেন, এটি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, একজন নারী তার ওড়না এমনভাবে বুকের উপর রাখবে, যাতে বুক সম্পূর্ণভাবে ঢেকে যায়। তারপর আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে একটি আছার বর্ণনা করেছেন। তাঁর ভাই আব্দুর রহমান ইবনে আবূ বকরের মেয়ে হাফছা এমন পাতলা পোশাক পরেছিলেন, যাতে তাঁর গলা ও নিচের অংশ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল। তখন আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা ঐ কাপড় ছিড়ে দেন এবং বলেন, ‘মোটা কাপড় পরতে হবে, যাতে পরিপূর্ণভাবে ঢেকে যায়’।
সাথে সাথে যে পোশাক নিচের দিক থেকে কাটা থাকে এবং তার নিচে কোনো কিছুই না থাকে, নিঃসন্দেহে এটি নিষিদ্ধ। তবে নিচে কোনো কাপড় থাকলে অসুবিধা নেই। তবে পুরুষের মতো যেন না হয়, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। না হলে পুরুষের সাদৃশ্যের কারণে হারাম হবে।
একজন অভিভাবক তার মেয়েকে হারাম পোশাক, সাজসজ্জা করে বা সুগন্ধি মেখে বাইরে বের হতে বাধা দিবে। কারণ, তিনি এই নারীর দায়িত্বশীল এবং এ দায়িত্ব সম্পর্কে ক্বিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হবেন। সেদিন ‘কেউ কারো কোনো উপকারে আসবে না এবং কারো পক্ষে কোনো সুপারিশ কবুল করা হবে না। কারো কাছ থেকে কোনোরূপ বিনিময় নেওয়া হবে না এবং কেউ কোনো সাহায্য পাবে না’ (আল-বাক্বারা, ২/৪৮)।
দ্বিতীয় বিষয়ে বলব, বিয়ের দিন দফ বাজানো জায়েয বা বিয়ের কথা প্রচারের জন্য সুন্নাহ হবে। তবে সেটি শর্তসাপেক্ষে—
প্রথম শর্ত: যে দফ বাজানো জায়েয, সেটি হবে একদিক থেকে বন্ধ। দুই দিক থেকে বন্ধ হলে সেটিকে তবলা বলা হয়। আর তবলা বাজানো জায়েয নেই। কারণ, তবলা বাদ্যযন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত এবং ইসলামে সকল বাদ্যযন্ত্র হারাম। তবে বিয়ের দিন দফ বাজানো বিশেষ দলীল দ্বারা জায়েয প্রমাণিত।
দ্বিতীয় শর্ত: এর সাথে যৌন উত্তেজক গান গাওয়া যাবে না। দফ বাজানো হোক বা না হোক, বিয়ের দিন হোক বা অন্য কোনো দিন হোক, এটি সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ।
তৃতীয় শর্ত: কোনো ফেতনা সৃষ্টি না হওয়া। যেমন- সুন্দর সুললিত কণ্ঠস্বর। যদি এর মাধ্যমে ফেতনা হয়, তবে তা হারাম।
চতুর্থ শর্ত: কাউকে কষ্ট না দেওয়া। কারো কষ্ট হলে এটি নাজায়েয হবে। যেমন- মাইক বাজানো। এতে প্রতিবেশী বা আশেপাশের মানুষের কষ্ট হবে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোরে তেলাওয়াত করে অন্য মুছল্লীদেরকে কষ্ট দিতে নিষেধ করেছেন। সেখানে গান-বাজনার হুকুম কী হতে পারে?
ছবি তোলার বিষয়ে বলব, যে-কোনো বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি এটির নিকৃষ্টতার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে না। আর মুমিন ব্যক্তি চাইবে না— কেউ তার মা, কন্যা, বোন, স্ত্রী ও অন্য মাহরামদের ছবি নিয়ে পণ্যের মতো অন্যদের সামনে উপস্থাপন করুক অথবা খেলনার পাত্র হোক, তাদের ছবি দেখে ফাসেক্বরা উপভোগ করবে। এর থেকে নিকৃষ্ট ও জঘন্য হলো পুরো অনুষ্ঠান ভিডিও করা। সুস্থ বিবেকসম্পন্ন দ্বীনদার কোনো ব্যক্তি এটিকে গ্রহণ করতে পারে না। যার সামান্য ঈমান ও লজ্জা আছে, সে এটিকে সাপোর্ট করবে বলে কল্পনা করা যায় না।
আর নারীদের নাচ তো জঘন্য কাজ। এটিকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন খবর যখন থেকে আমার কানে এসেছে, তখন থেকে এটিকে বৈধ বলে ফতওয়া দেইনি। আর পুরুষদের নাচানাচি তো আরো ঘৃণিত কাজ। এটি নারীদের সাদৃশ্যকরণের পাশাপাশি এর নেতিবাচক পরিণতি কারও অজানা নেই। আর নারী-পুরুষ একসাথে নাচানাচি করলে এটি আরো নিকৃষ্ট ও জঘন্য বলে বিবেচিত হবে। কারণ, নারী-পুরুষের মিক্সিংয়ের কুপ্রভাব ও ভয়াবহতা সুস্পষ্ট। বিশেষ করে বিয়ের উল্লাসে মত্ত থাকলে তো কোনো কথাই নেই।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, একদল নারীর সামনে স্বামী তার স্ত্রীকে চুমু দেয়। আমি খুবই আশ্চর্য হচ্ছি, কীভাবে একজন ব্যক্তি বিয়ের মতো একটি বড় নেয়ামত প্রাপ্ত হয়ে এমন শরীআত ও বিবেক বিরোধী নিকৃষ্ট কাজ করতে পারে! মেয়ের পরিবারই-বা তাকে কীভাবে এ সুযোগ দিচ্ছে? তাদের কি ভয় হয় না, এমন পরিবেশে তাঁর স্ত্রীর থেকে অধিক সুন্দরী ও সুদর্শনা নারী থাকতে পারে, ফলে স্ত্রীকে ভুলে ঐ নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে অন্য অনেক কিছু তার মাথায় চিন্তা আসতে পারে? ফলে জীবনের পরবর্তী ধাপগুলো সুখকর নাও হতে পারে।
পরিশেষে, আমি আমার মুসলিম ভাইদেরকে এমন অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করব। তারা যেন আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেন, সালাফদের পথের অনুসরণ করেন এবং শুধু সুন্নাতী আমলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন। মহান আল্লাহ বলেন,وَلَا تَتَّبِعُوا أَهْوَاءَ قَوْمٍ قَدْ ضَلُّوا مِنْ قَبْلُ وَأَضَلُّوا كَثِيرًا وَضَلُّوا عَنْ سَوَاءِ السَّبِيلِ ‘ঐসব লোকের খেয়ালখুশির অনুসরণ করো না, যারা ইতঃপূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে ও বহু লোককে পথভ্রষ্ট করেছে এবং নিজেরা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে’ (আল-মায়েদা, ৫/৭৭)।
প্রশ্ন: বাচ্চাদের জন্য অনেক শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম ও খেলা রয়েছে, যেগুলোর শুরুতে সাধারণত বাজনা থাকে। আমাদের কাছে এমন একটি সাউন্ড বুকের নমুনা রয়েছে। আমরা আশা করব, আপনি এর সুর শুনবেন এবং আপনার মূল্যবান মতামত জানাবেন।
উত্তর: এটি বাজনা দিয়ে শুরু হয়েছে, যা হারাম বাদ্যযন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত। ছহীহ বুখারীতে আবূ মালেক আল-আশআরী থেকে বর্ণিত হয়েছে! রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অবশ্যই অবশ্যই আমার পরে এমন কিছু লোক আসবে যারা যেনা, রেশম, নেশাদার দ্রব্য ও গান-বাজনা বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে’।[3] এ কারণে এটি ব্যবহার করা জায়েয হবে না, তবে বাজনা মুছে দিলে ভিন্ন কথা। আর এখানে বিভিন্ন প্রাণীর ডাক শোনানো হয়েছে, তার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। ফলে এ বিষয়ে সঠিক ধারণা পাওয়া যাবে না। এ জন্য আমি এর ব্যবহার ন্যায়সংগত মনে করি না। যদি বাজনা থাকে, তবে তা হারাম। আর যদি বাজনা নাও থাকে, তবে এতে তেমন কোনো ফায়দা নেই।
প্রশ্ন: অনেক গেম রয়েছে, যেখানে হাত দিয়ে প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা আছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এগুলোর উদ্দেশ্য বাচ্চাদেরকে শিক্ষা দেওয়া, যেমনটি সাউন্ড বুকে আছে।
উত্তর: এসব যদি ছোটদের বিনোদনের জন্য হয়, তাহলে ছোটদের জন্য যারা পুতুল নিয়ে খেলা জায়েয বলেছেন তাদের দৃষ্টিতে এটিও জায়েয। আর যারা পুতুল নিয়ে খেলা জায়েয মনে করেন না, তাদের দৃষ্টিতে এটিও নাজায়েয। আরেকটি বিষয় আমি লক্ষ করলাম, এখানে অঙ্কনকৃত প্রাণীগুলোর বাস্তবতার সাথে কোনো মিল নেই।
প্রশ্ন: সম্মানিত শায়খ! এমন গেম যদি বাচ্চাদের জন্য জায়েয হয়, তাহলে বাচ্চাদের জন্য তৈরি শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম ও গেমে যে বাজনা রয়েছে, তা কেন জায়েয হবে না? যেমন- সাউন্ড বুক ছোটদের জন্য তৈরি। এক্ষেত্রেও কি শিথিলতা করব না?
উত্তর: না, এক্ষেত্রে শিথিলতা করার সুযোগ নেই। কারণ, সুন্নায় এর কোনো নজির নেই। আর বাদ্যযন্ত্র সর্বাবস্থায় হারাম। কোনো অবস্থায় জায়েয হওয়ার দলীল নেই। তাছাড়া বাচ্চারা যদি বাদ্যযন্ত্রে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন এটি তার স্বভাবে পরিণত হবে।
প্রশ্ন: অনেক ধরনের পুতুল আছে, যেগুলোকে আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা কন্যা বলে নামকরণ করতেন। যার মধ্যে কিছু রয়েছে তুলা দিয়ে তৈরি, যা একটি ব্যাগ সদৃশ। তবে মাথা, দুই হাত ও দুই পা পৃথক করা আছে। আবার কিছু আছে যা দেখতে হুবহু মানুষের মতো, এগুলো বাজারে বিক্রি করা হয়। তাদের মধ্যে কিছু এমন যা কথা বলে, কাঁদে, হাঁটে বা হামাগুড়ি দেয়। অল্পবয়সী মেয়েদের শিক্ষা ও বিনোদনের জন্য এ ধরনের জিনিস তৈরি বা কেনার হুকুম কী?
উত্তর: যেটির মধ্যে পূর্ণ অবয়ব নেই; বরং কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও মাথা আছে, কিন্তু আকৃতি স্পষ্ট নয়, তাহলে এটি নিঃসন্দেহে জায়েয এবং এটিই আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা -এর কন্যাদের মতো,
যেগুলো নিয়ে তিনি খেলতেন।
কিন্তু যদি এটি পরিপূর্ণ আকৃতিবিশিষ্ট হয়, যেন আপনি একটি মানুষকে দেখছেন, বিশেষ করে যদি এটির নড়াচড়া বা কণ্ঠস্বর থাকে, তবে এর অনুমতি সম্পর্কে আমার মনে খটকা আছে। কারণ, এটি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা যে খেলনাগুলো দিয়ে খেলতেন, তা বাহ্যত এরূপ ছিল না। তাই এসব এড়িয়ে চলাই উত্তম। তবে আমি নিশ্চিতভাবে হারাম বলব না। কারণ, এমন অনেক বিষয়ে বড়দের অনুমতি না থাকলেও শিশুদের জন্য ছাড় রয়েছে। ছোটরা স্বভাবতই বিভিন্ন খেলাধুলা ও বিনোদনে আসক্ত থাকে এবং তারা কোনো ইবাদত করতেও বাধ্য নয়, যাতে আমরা বলতে পারি যে, তার সময় বৃথা নষ্ট হচ্ছে। তবে কোনো ব্যক্তি যদি এ বিষয়ে নিরাপদ থাকতে চায়, তবে তার মাথা খুলে ফেলে দিবে অথবা আগুনে নরম করে এর বাহ্যিক আকৃতি মুছে দিবে।
প্রশ্ন: বাচ্চারা নিজেরাই তৈরি করা এবং তাদের জন্য আমাদের তৈরি করা বা তাদের জন্য কেনা বা উপহার হিসেবে খেলনা দেওয়ার মধ্যে কি পার্থক্য আছে?
উত্তর: আমি মনে করি, এটি এভাবে তৈরি করা হারাম, যা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কারণ, এটি সন্দেহাতীতভাবে হারাম ছবি-মূর্তির অন্তর্ভুক্ত। তবে এটি যদি খ্রিষ্টান বা অন্য অমুসলিমদের কাছ থেকে আমাদের কাছে আসে, তবে এটি গ্রহণ করার বিষয়ে আমি প্রথমেই বলেছি। কিন্তু কেনার ক্ষেত্রে আমাদের অন্যান্য জিনিস কেনা উচিত, যাতে ছবি নেই। যেমন- সাইকেল, গাড়ি, ক্রেন ইত্যাদি।
তবে তুলার তৈরি হলে, যার কোনো স্পষ্ট আকৃতি নেই এবং কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থাকলেও চোখ ও নাক নেই, তাহলে তাতে সমস্যা নেই। কারণ এটা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়।
প্রশ্ন: এই পুতুলগুলো মাটি দিয়ে তৈরি করার হুকুম কী?
উত্তর: যে কেউ এমন কিছু তৈরি করে যা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, তবে সেটি নিম্নবর্ণিত হাদীছের অন্তর্ভুক্ত ‘নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছবি নির্মাণকারীদের অভিশাপ দিয়েছেন’।[4] ‘ক্বিয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হবে ঐসব ব্যক্তির, যারা ছবি নির্মাণ করে’।[5] কিন্তু আমি যেমনটি বলেছি যে, ছবিটিতে যদি চোখ, নাক, মুখ, আঙুল স্পষ্ট বুঝা না যায়, তবে এটি পরিপূর্ণ ছবি নয় এবং আল্লাহর সৃষ্টির সদৃশও নয়।
প্রশ্ন: শিশুরা যখন একে অপরের সাথে খেলবে এবং ছেলেটি বাবার ভূমিকা ও মেয়েটি মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করবে, তখন কি তাদেরকে সমর্থন করা যাবে, না-কি বাধা দিতে হবে এবং কেনো?
উত্তর: আমি মনে করি, তাদেরকে বাধা দিতে হবে। কারণ, ছেলেটি ধীরে ধীরে তার সাথে ঘুমাতে চাইবে। একারণে সে পথ বন্ধ করে দেওয়াই উত্তম।
প্রশ্ন: বিভিন্ন প্রকারের গল্প রয়েছে যেগুলোর উদ্দেশ্য হলো, শিশুদের শিক্ষা বা বিনোদন দেওয়া। এর মধ্যে কিছু গল্পে প্রাণীদের কথা বলার বর্ণনা আছে। উদাহরণস্বরূপ, শিশুকে মিথ্যা বলার ভয়ংকর পরিণতি শেখানোর জন্য বলা হয়— একটি শিয়াল একজন ডাক্তারের ভূমিকায় মুরগিকে মিথ্যা বলে এবং ধোঁকা দেয়। তারপর শিয়াল তার মিথ্যার প্রতিফলস্বরূপ গর্তে পড়ে যায়। এমন গল্পের বিষয়ে আপনার মতামত জানাবেন।
উত্তর: আমি এ বিষয়ে আপাতত কিছু বলব না। কারণ, এসব প্রাণীদের কথা বলা, চিকিৎসা দেওয়া, শাস্তি দেওয়া তাদের স্বাভাবিক স্বভাব-প্রকৃতির বিরোধী। তবে বলা হতে পারে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, উদাহরণ পেশ করা। এ কারণেই আমি এ বিষয়ে আপাতত কিছু বলতে চাচ্ছি না।
প্রশ্ন: আরও অনেক গল্প আছে, যেমন মা তার সন্তানকে এমন গল্প বলছেন, যা বাস্তবে ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে তা ঘটেনি। উদাহরণস্বরূপ— হাসান নামে এক শিশু তার প্রতিবেশীদের কষ্ট দেয় এবং তাদের দেয়ালে উঠে। অতঃপর দেয়াল থেকে পড়ে তার হাত ভেঙ্গে যায়। এ ধরনের গল্পের হুকুম কী, যার মাধ্যমে শিশু কিছু ভালো গুণ ও বৈশিষ্ট্য শিখতে পারে? এটি কি মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত হবে?
উত্তর: আমার মনে হয় যদি এটিকে উদাহরণস্বরূপ বলা হয়, এভাবে বলে, একটি শিশু বা একটি ছেলে আছে বা এরকম কিছু আছে নাম উল্লেখ না করে এবং মনে হবে যেন বাস্তবেই ঘটেছে, তবে এতে দোষের কিছু নেই। কারণ এটি উদাহরণস্বরূপ বলা হচ্ছে, বাস্তব নয়। যাহোক, এমন গল্পে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, এতে উপকার আছে; ক্ষতি নেই।
প্রশ্ন: স্কুলে পাঠ্যসূচি অনুযায়ী শিশুকে প্রাণীর ছবি আঁকতে বলা হয় অথবা উদাহরণস্বরূপ তাকে মুরগির অসম্পূর্ণ ছবি দিয়ে বাকিটা পূর্ণ করতে বলা হয়। কখনো আবার তাকে এই ছবিটি কেটে কাগজে আটকাতে বলা হয় অথবা তাকে একটি ছবি দিয়ে রং করতে বলা হয়। শায়খ! এ বিষয়ে আপনার অভিমত জানাবেন।
উত্তর: আমি মনে করি, এটি হারাম এবং অবশ্যই বন্ধ করে দিতে হবে। শিক্ষা কর্মকর্তাদের উচিত, এ বিষয়ে তাদের আমানতদারিতা বজায় রাখা এবং এগুলো বন্ধ করা। যদি তারা ছাত্রদের মেধা যাচাই করতে চায়, তবে তারা শিশুদেরকে একটি গাড়ি বা একটি গাছ বা তাদের পরিচিত এই জাতীয় কিছু অঙ্কন করতে বলতে পারে। এর দ্বারা তার মেধা, বিচক্ষণতা ও ব্যবহারিক জ্ঞান সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। আসলে আজকাল মানুষ শয়তানের প্রবঞ্চনায় এমন কাজে ধাবিত হচ্ছে, অথচ সুন্দর অঙ্কন যাচাইয়ে গাছ, গাড়ি, অট্টালিকা, মানুষ ইত্যাদি অঙ্কনের মধ্যে কোনো তফাত নেই। তাই আমি মনে করি, দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উচিত, এগুলো বন্ধ করা। তবে যদি প্রাণীর ছবি অঙ্কন করতেই হয়, তাহলে মাথা ছাড়াই অঙ্কন করবে।
প্রশ্ন: বইয়ের এই ছবিগুলো কি মুছে দেওয়া অপরিহার্য? আর মাথা ও শরীরের মাঝে দূরত্ব রাখলে কি নিষিদ্ধতা দূরীভূত হবে?
উত্তর: আমি মনে করি, এটি মুছে ফেলার প্রয়োজন নেই। কারণ, এর দ্বারা ছবি নয়; বরং জ্ঞান উদ্দেশ্য। তবে গর্দান ও শরীরের মধ্যে দূরত্ব রাখলে পূর্ণ ছবির সাথে তার পার্থক্য হবে বলে আমি মনে করি না।
প্রশ্ন: প্রাণীর ছবি অঙ্কন না করলে বাচ্চারা ফেল করবে। কারণ, তাকে অঙ্কনের নাম্বার দেওয়া হবে না।
উত্তর: যদি এমন হয়, তাহলে তো ছাত্ররা অঙ্কন করতে বাধ্য এবং এর গুনাহ আদেশকারী এবং যে তাকে বাধ্য করছে, তার উপর বর্তাবে। তবে আমি আশা করব, কর্তৃপক্ষ আল্লাহর বান্দাদেরকে পাপ কাজ করতে বাধ্য করার পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না করে।
প্রশ্ন: কিছু কিন্টারগার্ডেন স্কুল আছে, যারা পাঁচ বা ছয় বছর বয়সী শিশুদের ছেলে-মেয়ে একসাথে শিক্ষা দেয়। আমার প্রশ্ন হলো, কত বছর বয়স পর্যন্ত ছেলে-মেয়েদের একসাথে ক্লাস করানো যায়? বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীরাই এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করে। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানাবেন। কত বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেদেরকে নারীরা পড়াতে পারবে?
উত্তর: আমি মনে করি, এটি বিবেচনার জন্য সিনিয়র স্কলার কাউন্সিলের কাছে পেশ করা উচিত। কারণ, এটি ভবিষ্যতে এবং দীর্ঘমেয়াদে সহশিক্ষার দরজা খুলে দিতে পারে৷ বাচ্চারা একে অন্যের সাথে মিলিত হতে পারে, এতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি এগুলো কোনো নীলনকশা কি না, যেগুলোকে এর চেয়ে ভয়ংকর বিষয়ের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আল্লাহই প্রকৃত বিষয় সম্পর্কে অবগত। সেজন্য এই স্কুলগুলোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য সিনিয়র স্কলার কাউন্সিল বা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের নিকট পাঠাতে হবে, যারা বিষয়টি অধ্যয়নের পর তাদেরকে নিষিদ্ধ করতে পারে।
প্রশ্ন: এমন কিছু স্কুল আছে, যেখানে ছেলে-মেয়েদের আলাদা ক্লাস হয়, কিন্তু তাদের উভয়ের ক্লাস নেন শিক্ষিকাগণ। একজন শিক্ষিকা কত বয়স পর্যন্ত ছেলেদেরকে পড়াতে পারবেন?
উত্তর: আমি যেমনটি বলেছি, সহশিক্ষাকেন্দ্রিক যা কিছু হচ্ছে, সবকিছু বন্ধ করা অপরিহার্য।
প্রশ্ন: সম্মানিত শায়খ! ছোট বাচ্চাদের অনেক পোশাকে প্রাণীর ছবি থাকে, যেগুলো সাধারণত তিন বছরের কম বয়সী বাচ্চাদেরকে পরানো হয়। অনুগ্রহপূর্বক এ পোশাকগুলো পরিধান করানোর হুকুম সম্পর্কে অবহিত করবেন।
উত্তর: উলামায়ে কেরাম বলেছেন, যে পোশাক বড়দের জন্য পরিধান করা হারাম, সে পোশাক ছোটদের জন্যও হারাম। যে পোশাকে প্রাণীর ছবি থাকে, সে পোশাক বড়দের জন্য যেমন হারাম, তেমনি ছোটদের জন্যও হারাম হবে। মুসলিমদের উচিত, এসমস্ত পোশাক বয়কট করা, যাতে মন্দ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিরা এ সুযোগে আমাদের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারে। এভাবে বয়কট করতে পারলে তারা কোনোভাবেই মুসলিম দেশগুলোতে প্রবেশ করতে পারবে না।
প্রশ্ন: স্বর্ণ, রেশমসহ অন্যান্য যে-সব জিনিস মেয়েদের জন্য খাছ, সেগুলো কি ছেলে বাচ্চাদেরকে পরিধান করানো যাবে?
উত্তর: আমার পূর্বের দেওয়া জবাব থেকে এটি বুঝা যাবে। আমি বলেছি, উলামায়ে কেরামের বক্তব্য হলো, বড়দের জন্য যা পরিধান করা হারাম, ছোটদের জন্যও তা পরিধান করা হারাম। এ কারণে মেয়েদের জন্য খাছ বিষয়গুলো ছেলে বাচ্চাদের জন্যও হারাম হবে। আর ছেলেদের জন্য খাছ বিষয়গুলো মেয়ে বাচ্চাদের জন্য হারাম হবে।
প্রশ্ন: তাহলে ছেলে বাচ্চাদের জন্যও টাখনুর নিচে পোশাক ঝুলিয়ে পরা কি হারাম?
উত্তর: হ্যাঁ, একই হুকুম।
প্রশ্ন: কাফেরদের সাদৃশ্য অবলম্বন হয় এমন পোশাক পরিধান করাও কি ছোট বাচ্চাদের জন্য হারাম হবে?
উত্তর: পোশাক বা অন্যান্য ক্ষেত্রে অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা ছোট-বড়, পুরুষ-নারী সকলের জন্য হারাম। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে’।[6] কেননা মুসলিমদের প্রখর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য থাকতে হবে, যা তাদেরকে অন্যদের অনুসরণ থেকে দূরে রাখবে। কারণ তারাই বিজয়ী এবং তাদের দ্বীনই হচ্ছে সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ‘তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না। আর তোমরাই বিজয়ী যদি মুমিন হয়ে থাকো’ (আলে ইমরান, ৩/১৩৯)। তিনি আরও বলেন,هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ ‘তিনিই তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীন-সহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি একে সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন, যদিও মুশরিকরা অপছন্দ করে’ (আত-তাওবা, ৯/৩৩)।
প্রশ্ন: যে খাটো পোশাক পরিধান করলে ঊরু বের হয়ে থাকে, সে পোশাক বাচ্চাদেরকে পরানো জায়েয হবে কি? চাই ছেলে বা মেয়ে বাচ্চা হোক?
উত্তর: যদিও সাত বছরের নিচে আওরাতের বিধান প্রযোজ্য নয়; কিন্তু বাচ্চাদেরকে এ সমস্ত খাটো ও খোলামেলা পোশাক পরিধানে অভ্যস্ত করে তুললে ভবিষ্যতে বড় হলেও তাদের জন্য এটা নরমাল ও হালকা মনে হবে। ঊরু বের হয়ে থাকলে সে লজ্জাও পাবে না এবং এটার প্রতি তার ভ্রুক্ষেপও থাকবে না। কারণ ছোট থেকেই সে এমন পোশাক পরে আসছে। ফলে মানুষের তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা এবং ঐ স্থানের দিকে তাকিয়ে থাকা তার কাছে সমান হয়ে যাবে। এ কারণে আমি মনে করি, বাচ্চাদেরকে ছোট থেকেই খাটো পোশাক পরিধান থেকে বিরত রাখতে হবে এবং প্রশস্ত ও শালীন পোশাক পরিধানে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।
প্রশ্ন: দুল বা অন্য অলংকার পরানোর জন্য বাচ্চা মেয়েদের কান ছিদ্র করার হুকুম কী? এটা কি অঙ্গবিকৃতি ও কষ্টদানের অন্তর্ভুক্ত হবে, যেমনটি অনেক ফক্বীহ মনে করেন?
উত্তর: সঠিক কথা হলো, এতে কোনো অসুবিধা নাই। কারণ, এর মাধ্যমে বৈধ অলংকার পরিধান করা সম্ভব হয়। মহিলা ছাহাবীগণ কানের দুল পরিধান করতেন বলে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ জন্য কান ছিদ্র করতে যে কষ্ট হয়, তা খুবই সামান্য। তবে ছোট অবস্থায় ছিদ্র করলে দ্রুত সেরে উঠে।
প্রশ্ন: নাক ছিদ্রের ক্ষেত্রেও কি একই হুকুম প্রযোজ্য হবে?
উত্তর: হ্যাঁ, যদি সেটাকে সাজসজ্জার স্থান মনে করা হয়।
প্রশ্ন: চুল লম্বা ও ঘন করার উদ্দেশ্যে জন্মের সময় বা পরবর্তীতে মেয়ে বাচ্চাদের চুল মুণ্ডন করার হুকুম কী? ছেলে বাচ্চাদের মতো জন্মের সময় মেয়ে বাচ্চাদের মাথা মুণ্ডন করাও কি সুন্নাত?
উত্তর: ছেলে বাচ্চাদের মতো জন্মের সপ্তম দিনে মেয়ে বাচ্চাদের মাথা মুণ্ডন করা সুন্নাত নয়। তবে বিশেষ কল্যাণার্থে মেয়ে বাচ্চাদের মাথা মুণ্ডন করা যাবে কিনা— এ বিষয়ে আহলুল ইলমদের কেউ কেউ মনে করেন, এটি মাকরূহ। তবে আমার মনে হয়, যদি বাস্তবেই প্রতীয়মান হয় যে, মুণ্ডন করার কারণে চুলের প্রফুল্লতা ও ঘনত্ব আসে, তাহলে মাথা মুণ্ডন করতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, স্বভাবতই প্রয়োজনের কারণে মাকরূহ এর হুকুম বাতিল হয়।
প্রশ্ন: কত বছর বয়সের ছেলেদের সামনে পর্দা করতে হবে? প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর না-কি বুদ্ধি হলেই তার সামনে পর্দা করতে হবে?
উত্তর: যাদের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবে, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ অর্থাৎ, ‘যে শিশু নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের সামনে পর্দা অপরিহার্য নয়’ (আন-নূর, ২৪/৩১)। যে শিশুর নারীদের গোপন অঙ্গের প্রতি আকর্ষণ আছে, সে দিকে তাকায় এবং আলোচনা করে তার সামনে মুখ খোলা রাখা জায়েয নেই। তবে এ বিষয়ে সহজাত বাসনা ও সাহচর্যের উপর ভিত্তি করে বাচ্চাদের মধ্যে পার্থক্য হতে পারে। হতে পারে সে এমন মানুষদের সাথে থাকে, যারা নারীদের নিয়ে বেশি আলোচনা করে। তখন নারীদের বিষয়ে তার বিশেষ গুরুত্ব থাকবে। এমন লোকদের সাথে ওঠাবসা না করলে হয়তো এ বিষয়ে তার আগ্রহই থাকত না। যাহোক মহান আল্লাহ এ বিষয়ে কুরআনে নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন,أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ অর্থাৎ যে শিশু নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ এবং নারীদের বিষয়ে তার কোনো গুরুত্ব নেই, তার সামনে মুখ খোলা রাখা জায়েয।
প্রশ্ন: নাপাকী দূর করার উদ্দেশ্যে বাচ্চাদের পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে কি ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে?
উত্তর: না, ওযূ ভঙ্গ হবে না।
প্রশ্ন: বাচ্চারা ভুল করলে প্রহার করে বা তার মুখে তিতা বা ঝাল কিছু (যেমন- মরিচ) দিয়ে শাস্তি দেওয়া যাবে কি?
উত্তর: উপযুক্ত বয়স হলে প্রহার করা যাবে। সাধারণত ১০ বছর বয়স হলে মারার উপযোগী হয়। তবে মুখের মধ্যে ঝাল কিছু দেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয। কারণ, এতে মুখে ঘা, পেট গরম হওয়া-সহ নানা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে শিষ্টাচার শিখানোর উদ্দেশ্যে মৃদু প্রহার করলে কোনো সমস্যা নেই।
প্রশ্ন: ১০ বছরের কম বয়সী হলে কী হুকুম?
উত্তর: ১০ বছরের কম হলে তার ক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হবে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছালাত ত্যাগকারীর বয়স ১০ হলে প্রহার করার আদেশ করেছেন। বয়স যদি ১০ বছরের কম হয়, কিন্তু যথেষ্ট মেধাসম্পন্ন ও বুঝশক্তি থাকে এবং সুঠাম দেহের অধিকারী হয়, তবে প্রহার করলে সহ্য করতে পারবে। আর অনেক বাচ্চা এমন নাও হতে পারে। মোদ্দাকথা, তাদের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
প্রশ্ন: বাবা-মা যদি বাচ্চাকে কুরআন মুখস্থ করায়, তাহলে কি কোনো সমস্যা আছে? অথচ তারা জানে যে, ঐ বাচ্চা হয়তো টয়লেটে বা কুরআনের অবমাননা হয় এমন অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত করতে পারে। অবশ্য তারা প্রতিনিয়ত ঐ বাচ্চাকে এ বিষয়ে সতর্ক করতে থাকে।
উত্তর: বাবা-মায়ের উচিত, বাচ্চাকে কুরআন শিক্ষা দেওয়া। সাথে সাথে কুরআন পড়ার নিষিদ্ধ স্থান সম্পর্কে সতর্ক করা। যদি তাদের থেকে এমন কিছু ঘটেও যায়, তবুও সমস্যা নেই। কারণ, এখনও তাদের জবাবদিহিতার বয়স হয়নি। তাই তারা পাপী হবে না। তবে বাবা-মা যদি শুনতে পায়, বাচ্চা নিষিদ্ধ স্থানে কুরআন তেলাওয়াত করছে, তাহলে সাথে সাথে সতর্ক করবে। ছহীহ বুখারীতে আমর ইবনে সালামা থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে ছয় বা সাত বছর বয়সে তার সম্প্রদায়ের লোকদের ইমামতি করেছেন।
প্রশ্ন: হাদীছে সন্ধ্যার সময় শয়তান বিচরণের কারণে বাচ্চাদেরকে বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু বাচ্চারা যদি বাড়ির সীমানার মধ্যে উঠানে ঐ সময় খেলাধুলা করে, তবে কি নিষেধের অন্তর্ভুক্ত হবে না-কি বাড়ির সীমানার বাইরে রাস্তায় গেলে নিষেধের মধ্যে পড়বে?
উত্তর: বাড়ির সীমানার মধ্যে থাকলে অসুবিধা নেই। হাদীছে বাড়ির বাইরে রাস্তায় বের হতে দিতে নিষেধ করা হয়েছে।
প্রশ্ন: কোনো মহিলা ছালাত আদায় করার সময় তার বাচ্চা যদি তার সামনে ঘুরাঘুরি করে, তাহলে কি তাকে বাধা দেওয়া অপরিহার্য? উল্লেখ্য, এটা ঘটতেই থাকে। বারবার বাধা দিতে গেলে ছালাতে একাগ্রতা নষ্ট হয়। আবার বাচ্চাকে দূরে রেখে নিভৃতে একাকী ছালাতে দাঁড়ালে বাচ্চার ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
উত্তর: এমতাবস্থায় বাচ্চাকে সামনে দিয়ে ঘুরাফেরা করতে দিলে কোনো অসুবিধা নেই, যেমনটি বিদ্বানগণ বলেছেন। তবে বাচ্চাকে পাশে বসিয়ে কোনো কিছু দিয়ে ব্যস্ত রাখা উচিত, যাতে অন্যদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে। তবে ক্ষুধা বা তৃষ্ণার কারণে যদি তার মায়ের সাথে লেগে থাকে, তাহলে তার প্রয়োজন পূর্ণ করে ছালাতে দাঁড়াতে হবে।
মূল : শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ছলেহ আল-উছায়মীন
-অনুবাদ : ড. আব্দুল্লাহিল কাফী মাদানী*
* পিএইচডি, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।
[1]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫৪৭৫।
[2]. মুসনাদে আহমাদ, ৫/২০৫।
[3]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৫৯০।
[4]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৩৪৭।
[5]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৫০।
[6]. আবূ দাঊদ, হা/৪০৩১।