কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

মুসলিম পরিবার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর (পর্ব-৭)

post title will place here

(নভেম্বর’২০ সংখ্যায় প্রকাশিতের পর) 

প্রশ্ন: কোনো কোনো মুসলিমদেশে সহশিক্ষার প্রচলন আছে। ছাত্র-ছাত্রীরা একই রুমে পাশাপাশি চেয়ারে বসে ক্লাস করে। এর হুকুম জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর: আমি মনে করি, সহশিক্ষা রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানে নারী-পুরুষ কারো জন্যই পড়াশোনা করা জায়েয নয়। কারণ, এটি তার চারিত্রিক নিষ্কলুষতার জন্য হুমকিস্বরূপ। একজন পুরুষ যতই সচ্চরিত্রবান ও সংযমশীল হোক না কেন, তার পাশের চেয়ারে যদি কোনো নারী থাকে, তাহলে ফেতনা থেকে দূরে থাকা তার জন্য খুবই দুরূহ ব্যাপার হয়ে যায়, বিশেষ করে ঐ নারী যদি সুন্দরী ও রূপসজ্জাকারী হয়। আর ফেতনা ও অশ্লীলতার দিকে নিয়ে যায় এমন সব বিষয়ই হারাম। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন মুসলিম ভাইদেরকে এসমস্ত বিষয় থেকে রক্ষা করেন, যা তাদের যৌবনের জন্য ফেতনা-ফাসাদ ও অনিষ্ট ছাড়া কিছুই নয়।

প্রশ্ন: এসব দেশে যদি পৃথকভাবে শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে কী করবে?

উত্তর: যে দেশে সহশিক্ষা নেই, সেখানে পড়াশোনার জন্য চলে যাবে। আমি এ অবস্থাতেও সহশিক্ষা বৈধ বলতে পারছি না। তবে এ ব্যাপারে অন্য কেউ ভিন্ন মত পোষণ করতে পারে।

প্রশ্ন: কোনো কোনো সমাজে একটা প্রথা চালু আছে, নারীরা হাতে আবরণ দিয়ে পর-পুরুষের সাথে মুছাফাহা করে। এর হুকুম কী? ছোট-বড় সকল নারীর জন্য কি একই হুকুম প্রযোজ্য হবে?

উত্তর: সরাসরি হোক বা আবরণ দিয়ে হোক কোনো অবস্থাতেই পর-পুরুষের সাথে মুছাফাহা করা বৈধ নয়। কেননা এতে ফেতনা সৃষ্টি হবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا ‘তোমরা যেনার ধারেকাছেও যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট পথ’ (আল-ইসরা, ১৭/৩২)। এ আয়াত থেকে বুঝা যায়, যেনার দিকে প্ররোচিত করে এমন সব বিষয় পরিত্যাগ করা আমাদের জন্য অপরিহার্য, চাই সেটা গুপ্তাঙ্গের অথবা অন্য অঙ্গের যেনা হোক। তবে গুপ্তাঙ্গের যেনা সবচেয়ে মারাত্মক ও গর্হিত অপরাধ। কোনো পর-পুরুষ যদি নারীর হাত স্পর্শ করে, তবে নিঃসন্দেহে তার যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হবে। উপরন্তু হাদীছে পর-পুরুষের সাথে মুছাফাহার ব্যাপারে কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। আর এক্ষেত্রে যুবতী ও বৃদ্ধার মধ্যে হুকুমের কোনো পার্থক্য নেই। সকলের জন্যই পর-পুরুষের সাথে মুছাফাহা করা হারাম। কারণ কথায় বলে, لِكُلِّ سَاقِطَةٍ لاَقِطَةٌ ‘প্রত্যেক বর্জিত জিনিসের সংগ্রাহক থাকে’। এছাড়া যুবতী ও বৃদ্ধা নির্ণয়েও মতপার্থক্য হতে পারে। কেউ একজনকে বৃদ্ধা বললে অন্য আরেকজন তাকে যুবতি বলে। অতএব, সকলের ক্ষেত্রে একই হুকুম প্রযোজ্য হবে।

প্রশ্ন: পর-পুরুষের সাথে একজন নারীর কতটুকু সম্পর্ক বৈধ এবং কতটুকু অবৈধ তার বিশদ বিবরণ আপনি আমাদের সামনে পেশ করেছেন। কিন্তু এক্ষণে প্রশ্ন হলো, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা কি বৈধ? নারী-পুরুষ কি একসাথে কাজ করতে পারবে? বিশেষ করে এটা অনেক দেশে ব্যাপকভাবে প্রচলিত।

উত্তর: আমি মনে করি, সরকারি-বেসরকারি যে-কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কর্মস্থলে নারী-পুরুষের একসাথে কাজ করা বৈধ নয়। কেননা এর অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। কিছু না হলেও কমপক্ষে এর মাধ্যমে নারীর লজ্জাশীলতা ও পুরুষের ব্যক্তিত্ব লোপ পায়। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সহাবস্থান ইসলামী শরীআহ ও সালাফে ছালেহীনের আদর্শ পরিপন্থী বিষয়। আপনারা কি জানেন না যে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের জন্য ঈদগাহে পৃথক স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন? নারীরা পুরুষদের সাথে মিলে-মিশে একাকার হয়ে যেতেন না। ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদের উদ্দেশ্যে খুৎবা শেষ করে নারীদের নিকট যেতেন এবং তাদেরকে ওয়ায-নছীহত করতেন। এতে বুঝা যায়, নারীরা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খুৎবা শুনতে পেতেন না। আর শুনলেও পুরোপুরি আয়ত্ত করতে পারতেন না।

আপনারা কি জানেন না যে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নারীদের জন্য সর্বোত্তম কাতার হলো শেষ কাতার আর মন্দ কাতার হলো প্রথম কাতার। পক্ষান্তরে পুরুষদের জন্য সর্বোত্তম কাতার হলো প্রথম কাতার আর মন্দ কাতার হলো শেষ কাতার’।[1] মহিলাদের প্রথম কাতার পুরুষদের অধিক নিকটবর্তী হওয়ার কারণে মন্দ কাতার বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে শেষ কাতার পুরুষদের থেকে অধিক দূরবর্তী হওয়ার কারণে সর্বোত্তম কাতার বলা হয়েছে।

ভেবে দেখুন, ইবাদতের ক্ষেত্রে যদি এমন সতর্কতা অবলম্বন করা হয়, তাহলে অন্য ক্ষেত্রে আরো কত সতর্ক হতে হবে! অথচ ইবাদতের সময় মানুষ যৌন আকাঙ্ক্ষা থেকে সবচেয়ে দূরে থাকে। ইবাদতের বাইরে নারী-পুরুষের সহাবস্থান নিশ্চয়ই বেশি ভয়ংকর। কারণ, শয়তান বনূ আদমের শিরায় শিরায় বিচরণ করে। অতএব, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সহাবস্থানের ফলে ভয়ংকর ফেতনা সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব কিছুই না।

আমি মুসলিম ভাইদেরকে অনুরোধ করব, তারা যেন সহাবস্থান কেন্দ্রীক কর্মস্থল থেকে দূরে থাকে। কারণ, এটা তাদের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমার মৃত্যুর পরে পুরুষের জন্য নারীদের থেকে বড় কোনো ফেতনা নেই’।[2] আল-হামদুলিল্লাহ, আমরা মুসলিম। আমাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আমাদের উচিত, অন্যদের থেকে এক্ষেত্রে পৃথক হওয়া এবং সর্বদা মহান আল্লাহর প্রশংসা করা, যিনি আমাদেরকে শরীআত প্রণয়নের মাধ্যমে ধন্য করেছেন। আমাদের মনে রাখা উচিত, আমরা প্রজ্ঞাবান আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত শরীআতের অনুসরণ করি, যিনি দেশ ও মানুষের কল্যাণ বিষয়ে সর্বজ্ঞাত। যারা আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরে যাবে, তারা পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত হবে এবং দুনিয়ায় ফাসাদ সৃষ্টি করবে। আমরা ইদানীং শুনতে পাচ্ছি, যাদের মধ্যে নারী-পুরুষের সহাবস্থান বাধাহীন ছিল, তারা আজ এটা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সম্ভবপর চেষ্টা করছে। কিন্তু দূর থেকে তারা কীভাবে এর সমাধান করবে? মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা, তিনি যেন এদেশকে এবং সকল মুসলিম দেশকে সকল প্রকার অনিষ্ট, ক্ষতি এবং ফেতনা থেকে রক্ষা করেন।

প্রশ্ন: নারীরা কোন কোন কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে পারবে, যা তার দ্বীন পালনের জন্য হুমকি হবে না?

উত্তর: শুধু নারীদের সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে তারা কাজ করতে পারবে। যেমন- মহিলা মাদরাসা বা স্কুলে শিক্ষা, প্রশাসন, প্রযুক্তি ইত্যাদি যে-কোনো ক্ষেত্রেই হোক না কেন। নারীরা বাড়িতে বসে দর্জির কাজ তথা মেয়েদের পোশাক সেলাইয়ের কাজও করতে পারে। যেসব কর্মক্ষেত্র পুরুষদের সাথে সংশ্লিষ্ট, সেখানে নারীদের কাজ করা বৈধ নয়। কারণ, সেখানে পুরুষদের সাথে মিশতে বাধ্য হবে। আর এ অবস্থায় ভয়াবহ ফেতনা সৃষ্টি হবে, যা থেকে সতর্ক থাকা অপরিহার্য। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার মৃত্যুর পর পুরুষদের জন্য নারীদের থেকে বড় কোনো ফেতনা নেই’। অতএব, সকলের উচিত, ফেতনা সৃষ্টির ক্ষেত্র এবং মাধ্যম থেকে নিজেকে ও পরিবারকে সর্বাবস্থায় রক্ষা করা।

প্রশ্ন: বর্তমানে যুবকদের মধ্যে একটা বিষয় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তা হলো— শিল্পী, গায়িকাসহ বিভিন্ন শ্রেণির নারীদের ছবি সংগ্রহ করে সেগুলোকে উপভোগ করা। তারা দাবি করে, এসব ছবি দেখা বৈধ। কারণ, এগুলো শুধু ছবি, বাস্তব নয়। আমরা এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাচ্ছি।

উত্তর: বিষয়টা নিয়ে এ ধরনের শিথিলতা বড়ই বিপজ্জনক। কারণ বাস্তবে দেখা যায়, কোনো মানুষ যখন টেলিভিশন অথবা বিভিন্ন ম্যাগাজিনে কোনো নারীকে দেখে, তখন অবশ্যই ঐ নারীর প্রতি তার আকর্ষণ সৃষ্টি হয় এবং তাকে সরাসরি দেখার জন্য উৎসুক হয়ে থাকে। আমরা জানতে পেরেছি, কিছু যুবক সুন্দরী নারীদের ছবি সংগ্রহ করে সেগুলোকে উপভোগ করে। এটা তাদের বড় ফেতনায় পতিত হওয়ারই ইঙ্গিত বহন করে। অতএব, পত্রিকা, ম্যাগাজিন বা অন্য কিছুতে নারীদের ছবি দেখা কোনোভাবেই বৈধ নয়। কেননা এক্ষেত্রে ফেতনার এমন আশঙ্কা আছে, যা তার দ্বীনের জন্য ক্ষতিকর। শুধু তাই নয়, তার অন্তর সর্বাবস্থায় নারীদেরকে দেখার জন্য উৎসুক হয়ে থাকবে। ফলে তাদেরকে সরাসরি দেখাও আরম্ভ করবে।

প্রশ্ন: কোনো মুসলিম অথবা ফাসেক্ব অথবা কাফের নারীর সামনে একজন মুসলিম নারীর লজ্জাস্থানের সীমা কতটুকু?

উত্তর: দ্বীনের ভিন্নতার কারণে একজন নারীর সামনে আরেকজন নারীর লজ্জাস্থানের সীমার পার্থক্য নেই। অতএব, এক্ষেত্রে মুসলিম নারী এবং কাফের নারীর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তেমনিভাবে কোনো সচ্চরিত্রবান নারী এবং ফাসেক্ব নারীর মধ্যেও এ বিষয়ে কোনো পার্থক্য নেই। তবে যদি অন্য কোনো কারণে নারীকে বেশি সতর্ক থাকতে হয়, তাহলে ভিন্ন কথা। স্বাভাবিক অবস্থায় কোনো পার্থক্য নেই। তবে আমাদের জানা আবশ্যক যে, নারীর লজ্জাস্থান তার পোশাকের মানদণ্ড নয়। যদিও অন্য নারীর সামনে একজন মুসলিম নারীর লজ্জাস্থান হলো, নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত; কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সে শুধু নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত পোশাক পরে থাকবে। তবে শালীন পোশাক পরার পরও কোনো কারণে যদি নারীর বুক অথবা স্তন অন্য নারীর সামনে বের হয়ে যায়, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু অন্য নারীর সামনে একজন নারীর লজ্জাস্থান নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত— এ যুক্তি দিয়ে শুধু নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত পোশাক পরা বৈধ নয়। আর আমার মনে হয় না, কোনো আলেম এমনটা বলতে পারেন।

প্রশ্ন: স্বামীর সামনে রূপসজ্জা করার জন্য ফেস পাউডার ব্যবহারের হুকুম কী?

উত্তর: কোনো ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলে এগুলো দ্বারা রূপসজ্জা করা বৈধ। এক্ষেত্রে আসল হলো বৈধতা, যতক্ষণ না স্পষ্টভাবে হারামের দলীল সাব্যস্ত হয়। তবে আমি শুনেছি, ফেস পাউডার নারীর ত্বকে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং খুব অল্প বয়সেই তার ত্বক পরিবর্তন হয়ে যায়। কারণ, সাধারণত প্রতিটি কাজের যেমন অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া থাকে, তেমনি দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়াও লক্ষ করা যায়। সুতরাং সন্দেহাতীতভাবে যদি প্রমাণিত হয়, এগুলো ব্যবহারে নারীর কোনো ক্ষতি হয় না, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, রূপসজ্জার মাধ্যমে স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ভালোবাসাও বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে যে স্বামী রূপসজ্জা পছন্দ করে। কেননা সব পুরুষের চাহিদা একরকম নয়। কেউ কেউ সাজসজ্জাকে গুরুত্ব দেয় না। আবার কেউ আছে এগুলোর প্রতি আসক্ত।

নারীদের মাঝে পারস্পরিক সাক্ষাতের সময় রূপসজ্জা করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যেন শরীআতের সীমার মধ্যে হয়।

প্রশ্ন: অবিবাহিতা নারীরা কি ফেস পাউডার দিয়ে রূপচর্চা করে অন্য নারীদের মাঝে আসতে পারে?

উত্তর: কোনো কোনো বিদ্বানের মতানুযায়ী অবিবাহিতা নারীদের রূপসজ্জা করা উচিত নয়। কারণ, তাদেরকে রূপসজ্জা করতে বলা হয়নি। একারণে আমিও মনে করি, অবিবাহিতা নারীদের রূপসজ্জা করা থেকে বিরত থাকা উচিত। আর বিবাহিতা নারীদের রূপসজ্জা করার হুকুম তো আমি আগেই বলেছি।

প্রশ্ন: নারীদের জন্য বাড়িতে সুগন্ধি দিয়ে বাইরে বের হওয়ার হুকুম কী?

উত্তর: নারীরা যদি বাড়িতে সুগন্ধি মেখে বাজার বা অন্য কোনো জায়গায় বের হয় এবং সুগন্ধি প্রকাশিত হয়, তাহলে এটা জায়েয হবে না। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যদি কোনো নারী সুগন্ধি মাখে, তাহলে সে যেন আমাদের সাথে এশার ছালাতে উপস্থিত না হয়’।[3] তবে হ্যাঁ, তারা যদি বাড়ির গেটেই গাড়িতে চড়ে যায় এবং কোনো পর-পুরুষের সাথে সাক্ষাৎ না হয়, তাহলে সুগন্ধি ব্যবহারে কোনো সমস্যা নেই।

প্রশ্ন: কাফেরদের তৈরি নারীদের পোশাক যদি শরীরকে ভালোভাবে আবৃত করে এবং তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন উদ্দেশ্য না হয়, তাহলে সে পোশাকের হুকুম কী?

উত্তর: ‘সাদৃশ্য অবলম্বনের উদ্দেশ্য’ কথাটি অবান্তর। কারণ সাদৃশ্য হলেই সেটি নিষিদ্ধ হবে। সাদৃশ্য অবলম্বনের উদ্দেশ্যে করুক বা না করুক। এসব পোশাক যদি কাফেরদের নিজস্ব হয় এবং অন্য কেউ পরিধান না করে, তাহলে কোনো মুসলিম ব্যক্তির সে পোশাক পরা বৈধ নয়। তবে যদি মুসলিম-অমুসলিম সকলের মাঝে প্রচলিত থাকে কিন্তু আমাদের দেশে না থাকে, তাহলে সেটি পরিধানে কোনো সমস্যা নেই। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে প্রসিদ্ধি লাভের জন্য না হয়। কারণ, প্রসিদ্ধি লাভ উদ্দেশ্য হলে সেটি হারাম।

প্রশ্ন: নারীর পোশাক টাইট এবং খাটো হওয়ার কারণে যদি তার পায়ের নলা মাহরাম পুরুষ এবং অন্য নারীদের সামনে প্রকাশ পায়, তাহলে তার হুকুম কী?

উত্তর: আমি আগেও বলেছি, নারীদেরকে এমন পোশাক পরতে হবে, যাতে তার পুরো শরীর ভালোভাবে ঢেকে যায়। যদিও মাহরাম পুরুষ এবং অন্যান্য নারীর সামনে পায়ের নলা বের করা বৈধ, কিন্তু সর্বাবস্থায় লম্বা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা নারীদের উপর আবশ্যকীয় বিষয়। বিশেষ করে বর্তমান যুগে এ ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে এবং পোশাকের ক্ষেত্রে কাফেরদের সাদৃশ্য অবলম্বনের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করতে হবে।

প্রশ্ন: সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে যুবতী মেয়েদের মাথার চুল কাটার হুকুম কী?

উত্তর: তারা যদি চুল এমনভাবে কাটে, যাতে পুরুষের সদৃশ হয়, তাহলে তা হারাম। কেননা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী নারীদেরকে লা‘নত করেছেন। এমনিভাবে তাদের চুল কাটা যদি কাফের নারীদের অনুরূপ হয়, তাহলেও তা হারাম। কেননা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করলো, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হলো’।[4] তবে যদি এরকম কোনো কিছু উদ্দেশ্য নাও হয়, তবুও হাম্বলী মাযহাবে এটি মাকরূহ বলে প্রসিদ্ধ। অবশ্য এ মতের স্পষ্ট দলীল না থাকলেও এটাকে গ্রহণ করা সবার জন্য কল্যাণকর বলে মনে করি। কেননা বৈধ বলে বিষয়টাকে শিথিলভাবে নিলে পর্যায়ক্রমে হারামে পতিত হবে। অতএব হারাম থেকে রক্ষা পেতে মাকরূহ গণ্য করা খুবই যুক্তিযুক্ত।

প্রশ্ন: বলা হয়, আপনি যখন বুলূগুল মারাম হাদীছগ্রন্থ ব্যাখ্যা করছিলেন, তখন ওযূর সময় পুরুষের মাথা মাসাহ করার আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, পুরুষ ব্যক্তি মাথার অগ্রভাগ থেকে পিছন পর্যন্ত, অতঃপর পিছন থেকে আবার অগ্রভাগ পর্যন্ত মাসাহ করবে, যাতে পানি চুলের ভিতর পৌঁছে যায়। এ কথা কি সঠিক? নারীদের ক্ষেত্রেও কি একই হুকুম প্রযোজ্য হবে? কেননা তাদের চুল লম্বা এবং ঘ হওয়ার কারণে এটি তাদের জন্য অনেক কঠিন।

উত্তর: হ্যাঁ! আমি বলেছি, মাথা মাসাহ করার সময় মাথার অগ্রভাগ থেকে শুরু করে পিছন পর্যন্ত, অতঃপর পিছন থেকে আবার অগ্রভাগ পর্যন্ত মাসাহ করবে। কারণ, এটা ছহীহ সুন্নাহ দ্বারা সাব্যস্ত। কিন্তু চুলের ভিতরে পানি পৌঁছানোর কথাটা আমার উপর মিথ্যারোপ। আমি এটা বলিনি। মাসাহর মাধ্যমে পানি চুলের ভিতরে পৌঁছানো অসম্ভব। কারণ মাসাহ হলো, পানিতে হাত ভিজিয়ে মাথায় সে হাত স্পর্শ করা। এর মাধ্যমে পানি চুলের ভিতরে পৌঁছবে না। তবে মাথা নাড়া করা থাকলে সেটা ভিন্ন কথা। এক্ষণে প্রশ্ন হলো, মাথা মাসাহর এই পদ্ধতি কি নারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে? হ্যাঁ! কারণ শারঈ আহকাম এর ক্ষেত্রে মূলনীতি হচ্ছে, পুরুষের জন্য যে হুকুম সাব্যস্ত হবে, নারীদের জন্যও একই হুকুম প্রযোজ্য হবে। তেমনিভাবে নারীদের জন্য যে হুকুম সাব্যস্ত হবে, পুরুষের জন্যও একই হুকুম প্রযোজ্য হবে। তবে তাদের মধ্যে পার্থক্যের কোনো দলীল পাওয়া গেলে সেটা ভিন্ন কথা। মাথা মাসাহর ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের পার্থক্যের কোনো দলীল আছে বলে আমার জানা নেই। অতএব, নারীরাও মাথার অগ্রভাগ থেকে শুরু করে পিছন পর্যন্ত মাসাহ করবে। তাদের চুল যতই বড় হোক না কেন হুকুমের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ, মাথা মাসাহ অর্থ এই নয় যে, শক্তি দিয়ে চুলে চাপ দিবে যাতে চুল ভিজে যায় অথবা ভিতরে পানি চলে যায়; বরং উচিত হলো, আস্তে আস্তে মাসাহ করা।

(ইনশা-আল্লাহ চলবে)

 পিএইচডি, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।


[1]. ছহীহ মুসলিম, হা/৪৪০।

[2]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০৯৬।

[3]. ছহীহ মুসলিম, হা/৪৪৩।

[4]. আবূ দাঊদ, হা/৪০৩১।

Magazine