কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

নারীদের ছিয়াম

post title will place here

রামাযানের আগমনের অপেক্ষায় কিছু নারী মুখিয়ে থাকে। কীভাবে এই মহিমান্বিত মাসটির যথাযথ কদর করা যায় এই চিন্তায় কয়েক মাস আগ থেকেই বিভোর থাকে। হ্যাঁ, ওই সকল প্রিয় বোনের জন্যই আজকের এই লেখাটা। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,النِّسَاءُ شَقَائِقُ الرِّجَالِ ‏ ‘নারীরা তো পুরুষের ন্যায় (বিধানের ক্ষেত্রে)’।[1]

পুরুষরা যেমন তাদের উপর ধার্যকৃত ছিয়াম পালন করতে বাধ্য, অনুরূপ নারীরাও। কিন্তু নারীরা কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে পুরুষদের ন্যায় গোটা মাস একাধারে ছিয়াম রাখতে পারে না। অবশ্যই এতে নারীদের কোনো দোষ নেই। মহান আল্লাহই এটা তাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন।

 আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ﴾ ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের পূর্বের জাতিদের ন্যায় তোমাদের উপরও ছিয়াম ফরয করা হয়েছে, যাতে তোমরা মুত্তাক্বী হতে পার’ (আল-বাক্বারা, ২/১৮৩)

এই আয়াতের পর্যায়ভুক্ত নারী-পুরুষ সকলে। নারীরা যখন সুস্থ থাকবে অর্থাৎ তাদের পিরিয়ড বা প্রসূতির সময় থাকবে না, তখন পুরুষদের মতো ছিয়াম রাখবে। নারী-পুরুষের ছিয়ামের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। সব ইবাদতের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান। অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে পার্থক্য আছে।

রামাযানের দিনের বেলা পুরুষরা যেমন অশ্লীলতা, পাপাচার, অহেতুক কথাবার্তা, কাজ-কর্ম ও গান-বাজনা থেকে দূরে থাকবে, অনুরূপ নারীরাও। তবে একটা কথা বড্ড তিক্ত মনে হলেও সত্য— তা হলো রামাযানের দিনে আছরের ছালাতের আগ পর্যন্ত মোটামুটি সকল নারী অবসর থাকে। ইফতারের জোগাড় ব্যস্ততা শুরু হয় আছরের পর থেকে। আছরের আগ পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়টাতে কিছু নারী গীবত, পরনিন্দার পসরা সাজিয়ে থাকে। প্রিয় বোন! দেখুন আপনার সম্পর্কে আপনার নবী কী বলেছেন,مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ للهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই’।[2]

আমার দৃঢ় বিশ্বাস এতদিন আপনি এই হাদীছটা জানতেন না বিধায় পরনিন্দায় মজে ছিলেন। সুতরাং আজ থেকে আর অপলাপ করবেন না।

পিরিয়ডের সময় নারীরা ছিয়াম রাখবে না। রামাযান শেষ হলে সারা বছরের মাঝে যেকোনো সময় রাখতে পারবে। তবে আমরা মনে করি যত তাড়াতাড়ি করা যায়, তত তাড়াতাড়ি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া যাবে। তাই উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব ক্বাযা আদায়া করা। 

আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা-কে পিরিয়ডের সময় ছিয়াম পালন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,فَنُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّوْمِ وَلاَ نُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّلاَةِ‏ ‘(আমরা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে ঋতুবতী হলে) তিনি আমাদের ছিয়াম ক্বাযার নির্দেশ দিতেন। কিন্তু ছালাত ক্বাযা আদায়ের নির্দেশ দিতেন না’।[3] উল্লেখ্য, কথাটা বলতে ইতস্তত লাগলেও বলতে হবে। কারণ সত্য উন্মোচনে স্বয়ং আল্লাহও লজ্জাবোধ করেন না। হাদীছে এসেছে, إِنَّ اللهَ لَا يَسْتَحِي مِنَ الحقِّ ‘নিশ্চয় আল্লাহ সত্য প্রকাশে লজ্জাবোধ করেন না’।[4]

অনেক নারীর সাথে তার স্বামী রামাযানের দিনের বেলায় একটু আনন্দ-উল্লাস করতে চায়। বুঝতেই তো পারছেন আমি কী বোঝাতে চাচ্ছি। এক্ষেত্রে কথা হলো সহবাস ছাড়া সবকিছু করা যাবে। আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা বলেন,إِنْ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيُقَبِّلُ بَعْضَ أَزْوَاجِهِ وَهُوَ صَائِمٌ ثُمَّ ضَحِكَتْ ‘ছিয়াম অবস্থায় নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোনো কোনো স্ত্রীকে চুমু খেতেন। (এ কথা বলে) আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা হেসে দিলেন’।[5]

এ হাদীছে কিন্তু যুবক ও বৃদ্ধের মাঝে কোনো পার্থক্য করা হয়নি‌। কিছু বিদ্বান পার্থক্য করেছেন। তারা বলেছেন, বৃদ্ধ হলে স্ত্রীকে চুমু দিতে পারবে ও জড়িয়ে ধরতে পারবে। কিন্তু যুবক হলে পারবে না। অবশ্য এর পেছনে কোনো দলীল নেই। 

এখন কথা হলো কারো যদি চুমু দেওয়ার কারণে বা জড়িয়ে ধরার কারণে বীর্যপাত হয়ে যায়, তাহলে ছিয়াম ভেঙে যাবে। আবার এই ছিয়ামটা পরে করতে হবে। আমাদের অনেকের ধারণা ৬০টি ছিয়াম করতে হবে। আদতে বিষয়টা এমন নয়। স্ত্রী সহবাস করে কেউ ছিয়াম ভঙ্গ করলে এই হুকুম তার জন্য বর্তাবে। অর্থাৎ ৬০টি ছিয়াম রাখতে হবে। প্রিয় বোন! আপনার স্বামীকে বলুন, রামাযানের রাতে আপনার সাথে যা ইচ্ছে করতে; দিনের বেলায় যেন কিছু না করে। নচেৎ সমস্যা হতে পারে।

রামাযানে কোনো নারীর বাচ্চা হলে সে সুস্থ হলে অবশিষ্ট ছিয়ামগুলো রাখবে। আর যে ছিয়ামগুলো রাখতে পারেনি রামাযানের পরে তা রেখে দিবে। গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারিণীর যদি ছিয়াম রাখতে সমস্যা না হয়, তাহলে রামাযান মাসে ছিয়াম রাখবে। আর যদি সমস্যা হয়, তাহলে রামাযানের পরে যে কোনো মাসে ছিয়াম রেখে দিবে। পরবর্তীতে যদি ছিয়াম রাখতে অপারগ হয়ে যায়, তাহলে ফিদইয়া দিবে। অর্থাৎ অর্ধ ছা‘ করে ৩০ জন মিসকীনকে চাউল দান করবে বা ৬০ জন মিসকীনকে খাবার খাওয়াবে। আল্লাহ বলেন, ﴿وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ﴾ ‘আর যারা ছিয়াম পালনে অপারগ, তারা মিসকীনকে খাদ্য দিবে’ (আল-বাক্বারা, ২/১৮৪)

অসুস্থ নারী কীভাবে ছিয়াম রাখবে?

অসুস্থ নারী যদি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে রামাযানের পর ছিয়াম রাখবে। আর যদি সম্ভাবনা না থাকে তাহলে ফিদইয়া দিবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ﴾ ‘আর যারা ছিয়াম পালনে অপারগ তারা মিসকীনকে খাদ্য দিবে’ (আল-বাক্বারা, ২/১৮৪)

কোনো নারী যদি রামাযানে সফর করে। আর সফর করে ছিয়াম রাখতে যদি তার কষ্ট না হয় তাহলে ছিয়াম রাখাই তার জন্য উত্তম হবে। আল্লাহ বলেন, ﴿وَأَن تَصُومُوا خَيْرٌ لَكُمْ﴾ ‘আর ছিয়াম রাখাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর’ (আল-বাক্বারা, ২/১৮৪)

 عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ فِي بَعْضِ أَسْفَارِهِ فِي يَوْمٍ حَارٍّ حَتَّى يَضَعَ الرَّجُلُ يَدَهُ عَلَى رَأْسِهِ مِنْ شِدَّةِ الْحَرِّ وَمَا فِينَا صَائِمٌ إِلاَّ مَا كَانَ مِنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَابْنِ رَوَاحَةَ.

আবূদ্দারদা রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো এক সফরে প্রচণ্ড গরমের দিনে আমরা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে যাত্রা করলাম। গরম এত প্রচণ্ড ছিল যে, প্রত্যেকেই আপন আপন হাত মাথার উপর তুলে ধরেছিলেন। এ সময় নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইবনু রাওয়াহা রযিয়াল্লাহু আনহু ব্যতীত আমাদের কেউই ছিয়ামরত ছিলেন না।[6]

আর যদি কষ্ট হয়, তাহলে ছিয়াম না রাখাই উত্তম। আল্লাহ বলেন, ﴿وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ﴾ ‘আর যে অসুস্থ বা সফরে রয়েছে, সে অন্য কোনো সময় ছিয়াম রাখবে’ (আল-বাক্বারা, ২/১৮৫)। অন্য একটি হাদীছে এসেছে,

 عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ فَرَأَى زِحَامًا وَرَجُلاً قَدْ ظُلِّلَ عَلَيْهِ فَقَالَ مَا هَذَا فَقَالُوا صَائِمٌ فَقَالَ لَيْسَ مِنْ الْبِرِّ الصَّوْمُ فِي السَّفَرِ.

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ছিলেন। হঠাৎ তিনি লোকের জটলা এবং ছায়ার নিচে এক ব্যক্তিকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এর কী হয়েছে? লোকেরা বলল, সে ছিয়াম রেখেছে। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘সফরে ছিয়াম পালনে কোনো ছওয়াব নেই’।[7]

কোনো নারী যদি ছিয়াম রেখে মারা যায়, তাহলে তার পরিবার তার ছিয়াম রাখবে। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ صِيَامٌ صَامَ عَنْهُ وَلِيُّهُ ‘কেউ ছিয়াম রেখে মারা গেলে তার অভিভাবক তার পক্ষ হতে ছিয়াম আদায় করবে’।[8] আর কেউ যদি ছিয়াম রাখতে না পারে তাহলে ফিদইয়া দিয়ে দিবে। হাদীছে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ إِذَا مَرِضَ الرَّجُلُ فِى رَمَضَانَ ثُمَّ مَاتَ وَلَمْ يَصُمْ أُطْعِمَ عَنْهُ وَلَمْ يَكُنْ عَلَيْهِ قَضَاءٌ وَإِنْ كَانَ عَلَيْهِ نَذْرٌ قَضَى عَنْهُ وَلِيُّهُ.

ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি রামাযান মাসে অসুস্থ হয়ে রামাযান মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত সুস্থ না হয় এবং এ অবস্থায়ই মারা যায়, তাহলে তার পক্ষ থেকে মিসকীনকে আহার করাতে হবে। আর তার উপর মানতের ছওম থাকলে তার পক্ষ থেকে অভিভাবক তার ক্বাযা আদায় করবে।[9]

রামাযান মাসে নখ কাটা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা ও নাভির নিচের পশম কাটলে ছিয়াম ভঙ্গ হবে না। অনেক নারী মনে করে ছিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে, যা ঠিক নয়।

নারীরা সৃষ্টিগতভাবেই সাজসজ্জা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ইসলাম একে সমর্থন করেছে। রামাযানে দিনের বেলা নারীরা বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করতে পারবে। যেমন মেহেদি দেওয়া, স্নো, পাউডার, চোখে সুরমা ইত্যাদি দেওয়াতে কোনো সমস্যা নেই।

নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে রামাযানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করেছেন এবং তাঁর উম্মতকে ই‘তিকাফ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পর তার স্ত্রীরাও ই‘তিকাফ করেছেন। তাই নারীরা যদি ই‘তিকাফ করতে চায়, তাহলে করতে পারবে। তবে অবশ্যই জামে‘ মসজিদে ই‘তিকাফ করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ﴾ ‘মসজিদে ই‘তিকাফরত অবস্থায় তোমরা তাদের সাথে সহবাস করবে না’ (আল-বাক্বারা, ২/১৮৭)। এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ই‘তিকাফের জন্য মসজিদ শর্ত করেছেন। আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা বলেন,

السُّنَّةُ عَلَى الْمُعْتَكِفِ أَنْ لاَ يَعُودَ مَرِيضًا وَلاَ يَشْهَدَ جَنَازَةً وَلاَ يَمَسَّ امْرَأَةً وَلاَ يُبَاشِرَهَا وَلاَ يَخْرُجَ لِحَاجَةٍ إِلاَّ لِمَا لاَ بُدَّ مِنْهُ وَلاَ اعْتِكَافَ إِلاَّ بِصَوْمٍ وَلاَ اعْتِكَافَ إِلاَّ فِي مَسْجِدٍ جَامِعٍ. ‏

ই‘তিকাফকারীর জন্য সুন্নাত হলো সে কোনো রোগী দেখতে যাবে না, জানাযায় অংশগ্রহণ করবে না, স্ত্রীকে স্পর্শ করবে না, তার সাথে সহবাস করবে না এবং অধিক প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবে না, ছওম না রেখে ই‘তিকাফ করবে না এবং জামে‘ মাসজিদে ই‘তিকাফ করবে।[10]

অনেক নারীকে দেখা যায় ই‘তিকাফ করার মানসে রামাযানের শেষ দশকে ঘরের এক কোণে নির্জন স্থানে ই‘তিকাফে বসে যায়। তাদের এই ই‘তিকাফ হবে না। কারণ ই‘তিকাফ করার জন্য শর্ত হচ্ছে মসজিদ। 

নারী যদি ই‘তিকাফ করে, তাহলে তার স্বামী তার সাথে দেখা করতে যেতে পারবে। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী ছফিয়্যা রযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

 كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُعْتَكِفًا فَأَتَيْتُهُ أَزُورُهُ لَيْلاً فَحَدَّثْتُهُ وَقُمْتُ فَانْقَلَبْتُ فَقَامَ مَعِي لِيَقْلِبَنِي وَكَانَ مَسْكَنُهَا فِي دَارِ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ - فَمَرَّ رَجُلاَنِ مِنَ الأَنْصَارِ فَلَمَّا رَأَيَا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَسْرَعَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى رِسْلِكُمَا إِنَّهَا صَفِيَّةُ بِنْتُ حُيَىٍّ‏.‏ قَالاَ سُبْحَانَ اللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَجْرِي مِنَ الإِنْسَانِ مَجْرَى الدَّمِ فَخَشِيتُ أَنْ يَقْذِفَ فِي قُلُوبِكُمَا شَيْئًا.‏ 

রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ই‘তিকাফ অবস্থায় ছিলেন। এক রাতে আমি তাঁর সাথে দেখা করতে তাঁর নিকট গেলাম। কথাবার্তা শেষ করে আমি ফিরে আসার জন্য দাঁড়ালে তিনিও আমাকে এগিয়ে দিতে দাঁড়ালেন। তার (ছফিয়্যা রযিয়াল্লাহু আনহা–এর বসবাসের স্থান ছিল উছামা ইবনু যায়েদ রযিয়াল্লাহু আনহা-এর ঘর সংলগ্ন)। এ সময় আনছার গোত্রের দুই ব্যক্তি যাচ্ছিলেন। তারা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখে দ্রুত চলে যাচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমরা থামো! ইনি (আমার স্ত্রী) ছফিয়্যা বিনতু হুয়াই’। তারা দু’জনে বললেন, সুবহানাল্লাহ! হে আল্লাহর রাসূল! রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘শয়তান মানুষের মধ্যে রক্তের মতো চলাচল করে। তাই আমার ভয় হচ্ছিল যে, সে তোমাদের দু’জনের মনে মন্দ কিছু নিক্ষেপ করবে’।[11] এই হাদীছে যদিও স্ত্রীর মসজিদে যাওয়ার প্রমাণ আছে। কিন্তু স্বামীও এই হুকুমের আওতাধীন রয়েছে।

পুরুষদের ক্ষেত্রে যে সকল শর্ত রয়েছে, নারীদের ক্ষেত্রেও হুবহু একই শর্ত। অর্থাৎ সহবাস করা যাবে না, প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের হবে না, অনর্থক কথাবার্তা বলবে না। অনেক নারীকে দেখা যায়, ই‘তিকাফে বসে অপর নারীর সাথে বাড়ির যত্তসব কথাবার্তা আছে সবকিছু শেয়ার করে। এগুলো বলা যাবে না। কিছু নারী তো আগ বাড়িয়ে মসজিদে গীবত-পরনিন্দা শুরু করে। এগুলো করলে ই‘তিকাফের যে হেতু আছে, তা বিনষ্ট হয়ে যাবে। ছওয়াবের পরিবর্তে গুনাহের ঝুড়ি কাঁধে করে বাড়ি নিয়ে আসতে হবে।

ই‘তিকাফ করা অবস্থায় কোনো নারীর যদি পিরিয়ড শুরু হয়, তাহলে ই‘তিকাফ ভঙ্গ করে মসজিদ ত্যাগ করবে। ওই অবস্থায় মসজিদে কোনো অবস্থাতেই অবস্থান করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى حَتَّى تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّى تَغْتَسِلُوا﴾ ‘হে ঈমানদারগণ! নেশাগ্ৰস্ত অবস্থায় ছালাতের (মসজিদের) নিকটবর্তী হবে না, যতক্ষণ না যা বলছ তা বুঝতে পারবে এবং অপবিত্র অবস্থায়ও গোসল করার আগ পর্যন্ত, তবে মুসাফির হলে ভিন্ন কথা’ (আন-নিসা, ৪/৪৩)

রামাযানের পর ইচ্ছে করলে ওই ই‘তিকাফের ক্বাযা আদায় করতে পারবে। তবে করাটা আবশ্যক নয়; বরং মুস্তাহাব।

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَكَرَ أَنْ يَعْتَكِفَ الْعَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ فَاسْتَأْذَنَتْهُ عَائِشَةُ فَأَذِنَ لَهَا وَسَأَلَتْ حَفْصَةُ عَائِشَةَ أَنْ تَسْتَأْذِنَ لَهَا فَفَعَلَتْ فَلَمَّا رَأَتْ ذَلِكَ زَيْنَبُ ابْنَةُ جَحْشٍ أَمَرَتْ بِبِنَاءٍ فَبُنِيَ لَهَا قَالَتْ وَكَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى انْصَرَفَ إِلَى بِنَائِهِ فَبَصُرَ بِالأَبْنِيَةِ فَقَالَ مَا هَذَا قَالُوا بِنَاءُ عَائِشَةَ وَحَفْصَةَ وَزَيْنَبَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَالْبِرَّ أَرَدْنَ بِهَذَا مَا أَنَا بِمُعْتَكِفٍ فَرَجَعَ فَلَمَّا أَفْطَرَ اعْتَكَفَ عَشْرًا مِنْ شَوَّالٍ.

আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামাযানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করার ইচ্ছ প্রকাশ করলে আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা তাঁর কাছে ই‘তিকাফ করার অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। এরপর হাফছা রযিয়াল্লাহু আনহা আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা-এর নিকট অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। তা দেখে যায়নাব বিনতু জাহশ রযিয়াল্লাহু আনহা নিজের জন্য তাঁবু লাগানোর নির্দেশ দিলে তা পালন করা হলো। আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের ছালাত আদায় করে নিজের তাঁবুতে ফিরে এসে কয়েকটি তাঁবু দেখতে পেলেন। তখন তিনি বললেন, এ কী ব্যাপার? লোকেরা বলল, আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা হাফছা রযিয়াল্লাহু আনহা ও যায়নাব রযিয়াল্লাহু আনহা-এর তাঁবু। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা কি নেকী পেতে চায়? আমি আর ই‘তিকাফ করবো না। এরপর তিনি ফিরে আসলেন। পরে ছওম শেষ করে শাওয়াল মাসের ১০ দিন ই‘তিকাফ করেন।[12]

আল্লাহ তাআলা প্রিয় বোনদের সুস্থতার সাথে রামাযান সম্পর্কিত বিধানগুলো পালন করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

সাঈদুর রহমান

শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, বীরহাটাব-হাটাব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

[1]. আবূ দাঊদ, হা/২৩৬, হাদীছ হাসান।

[2]. ছহীহ বুখারী, হা/১৯০৩।

[3]. আবূ দাঊদ, হা/২৬৩, হাদীছ ছহীহ।

[4]. ইরওয়াউল গালীল, হা/২০০৫।

[5]. ছহীহ বুখারী, হা/১৯২৮।

[6]. ছহীহ বুখারী, হা/১৯৪৫।

[7]. ছহীহ বুখারী, হা/১৯৪৬।

[8]. ছহীহ বুখারী, হা/১৯৫২।

[9]. আবূ দাঊদ, হা/২৪০১, হাদীছ ছহীহ।

[10]. আবূ দাঊদ, হা/২৪৭৩, হাদীছ হাসান ছহীহ।

[11]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫৮০৮।

[12]. ছহীহ বুখারী, হা/২০৪৫।

Magazine