কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের অন্তরায় নারী অধিকার

post title will place here

সম্প্রতি পাশ্চাত্য এবং ইসলামবিদ্বেষী অপশক্তিগুলো ইসলামের শুভ্র জীবনব্যবস্থায় কালিমা লেপন করার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় মগ্ন। তারা ইসলামের পারিবারিক ব্যবস্থা বিলোপ করার নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য তথাকথিত ‘সমান অধিকার’-এর নামে নারীদেরকে রাজপথে নামিয়ে দিচ্ছে। আর্থিক স্বনির্ভরতা বা সমান অধিকারের টোপ ফেলে সহজ-সরল মুসলিম রমণীদেরকে হিজাব-নিক্বাবের নিরাপদ স্থান ঘর থেকে বের করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ইসলামের ঘোরশত্রু পশ্চিমাদের লালিত কুফরী শক্তির এজেন্টরা মুসলিমদের তাহযীব-তামাদ্দুনের মূল সমেত শেকড় উপড়ে ফেলে মুসলিম মিল্লাতকে একেবারে পঙ্গু করে দেওয়ার যে অতি সূক্ষ্ম মিশন নিয়ে ময়দানে নেমেছে, তারই নাম হলো— ‘নারী স্বাধীনতা, নারী অধিকার’।

বোধগম্যতার মাথা খেয়ে স্বার্থান্বেষী এক কুচক্রী দল অপরদিকে বুলি আওড়াচ্ছে, ইসলাম নারীকে অধিকার তো দেয়ইনি, বরং শৃঙ্খলাবদ্ধ করে চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ করে রেখেছে। নারীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে অসহনীয় যুলম, নিযার্তনের পাহাড়সম বোঝা!

মস্তিষ্কপ্রসূত এরকম হাজারো অবান্তর কথাবার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে লোকসমাজে। বাঁধভাঙা বন্যার মতো বিষোদগারের ঢল নামানো হচ্ছে। অথচ বাস্তবতা এর সম্পূর্ণ উল্টো। আমরা মাথা উঁচিয়ে, বুক টান করে বলব, একমাত্র ইসলামই এমন একটি জীবনব্যবস্থা, যা নারীজাতিকে সর্বাবস্থায় ন্যায্য অধিকার দিয়েছে। তাদেরকে আসীন করেছে মান-মর্যাদার সর্বোচ্চ, সমুজ্জ্বল আসনে। যদি আমরা আইয়্যামে জাহেলিয়্যাত, অন্যান্য ধর্ম বা ইসলামের আগমনের পূর্ববর্তী সময়গুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করি তাহলে বিষয়টি আমাদের নিকট খোলাসা হবে ইনশা-আল্লাহ। কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো—

হিন্দু ধর্মে নারী :

হিন্দু ধর্মে নারীকে মৃত্যু, নরক, সাপ, বিষ ও আগুন থেকেও বিপজ্জনক বলা হয়েছে। স্বামী ছাড়া নারী জাতির স্বতন্ত্র কোনো অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়নি। এজন্য স্বামীর মৃত্যুর সাথে সাথে স্ত্রীকেও সহমরণে যেতে বাধ্য করা হতো। হিন্দুয়ানী সমাজ মাত্র কিছুদিন আগেও নারীকে পুরুষের সেবিকা আর ভোগের সামগ্রী হিসেবেই জানত। ছিল না নারীর প্রতি সম্মান বা শ্রদ্ধার লেশমাত্র। নারী জাতিকেই সকল পাপের উৎস মনে করা হতো। হিন্দু ধর্ম মতে, ‘নারী হচ্ছে নোংরামির জড় এবং তার আগাগোড়া নরক’। প্রাচীন হিন্দুয়ানী সমাজে নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক কিছু বর্বর আচরণের দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো :

(১) হিন্দুদের মনুশাস্ত্রে বলা হয়েছে, ‘নারী স্বামীর সাথে খাবার গ্রহণ করবে না, বরং স্বামীর উচ্ছিষ্টাংশ খাবে’।[1]

কিন্তু ইসলাম স্ত্রী হিসেবে একজন নারীকে স্বামীর সমপরিমাণ অধিকার দিয়েছে। সদাচরণের ক্ষেত্রে স্বামীকে যেভাবে মূল্যায়ন করেছে, অনুরূপভাবে স্ত্রীকেও সম্মানের আসনে আসীন করেছে (আল-বাক্বারা, ২/২২৮)

(২) নারীরা শক্তিহীন বা কর্তৃত্বহীন। তারা পৈত্রিক সম্পত্তির কোনো অংশ পাবে না।[2]

অথচ ইসলাম বলে, মাতা-পিতা ও আত্মীয়স্বজন সকলের সম্পত্তিতে নারী, পুরুষ উভয়েরই অংশ রয়েছে (আন-নিসা, ৪/৭)

(৩) বিবাহিত নারীরা তালাক দিতেও পারবে না আবার নিতেও পারবে না। একবার কারো সাথে বিয়ে হয়ে গেলে আমৃত্যু তার সাথেই থাকতে হবে।

কিন্তু ইসলাম বলে, নারীরা চাইলে তালাক (খোলা তালাক) নিতে পারবে আবার পছন্দমতো অন্য কাউকে বিয়েও করতে পারবে (আল-বাক্বারা, ২/২২৯-২৩২)

(৪) নারীদের মৃতদেহ সৎকারের সময় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে কিছু পাঠ করা নিষেধ।[3]

কিন্তু ইসলাম শিখিয়ে দিচ্ছে, একজন নারীর শেষ বিদায়টাও যেন সুন্দর হয়। তাই তাকে মৃত্যুর পর ভালোভাবে গোসল করাও, কাফনে জড়াও, জানাযার মাধ্যমে তার জন্য দু‘আ করো। এরপর তাকে কবরস্থ করো।[4]

(৫) একজন স্বামী যতই খারাপ হোক না কেন, তথাপি একজন কর্তব্যনিষ্ঠা স্ত্রী ক্রমাগত সেই স্বামীকে দেবতা হিসেবে পূজা করবে।[5]

অথচ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার করার ব্যাপারে অছিয়ত গ্রহণ করো’।[6]

(৬) পুরুষের উচিত নয় নির্জন জায়গায় তার মা, বোন বা কন্যার সাথে অবস্থান করা। পাছে কী হতে কী হয়![7]

অথচ ইসলামে মা, বোন, কন্যাসহ মোট ১৪ শ্রেণির নারীকে বিবাহ করাই হারাম (আন-নিসা, ৪/২৩)। সেখানে এরকম ভাবার তো কোনো সুযোগই থাকে না।

(৭) বিধবা নারীরা পুনরায় বিবাহ করতে পারবে না। তারা নিরামিষ খাবে এবং অত্যন্ত সংকীর্ণভাবে জীবনযাপন করতে হবে।[8]

কিন্তু বিধবা নারীর দায়িত্বশীলকে ইসলাম তার সর্বোচ্চ চূড়া জিহাদকারীর সম্মানে অধিষ্ঠিত করেছে।[9]

(৮) নারীদের সাথে স্থায়ী কোনো বন্ধুত্ব হতে পারে না। নারীদের হৃদয় হলো হায়েনাদের হৃদয়।[10]

অথচ ইসলাম বলে দিচ্ছে, নারী-পুরুষ (স্বামী-স্ত্রী) একে অন্যের পোশাকস্বরূপ (আল-বাক্বারা, ২/১৮৭)

সতীদাহ প্রথা নামক লোমহর্ষক পন্থার কথা না হয় বাদই দিলাম!

খ্রিষ্টধর্মে নারী :

(১) পুরুষকে নারীর জন্য সৃষ্টি করা হয়নি; বরং নারীকে পুরুষের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।

For the man is not of the woman: but the woman of the man. Neither was the man created for the woman; but the woman for the man.[11]

(২) পরিবারে পুত্র সন্তান থাকলে কন্যা সন্তান সম্পদের কোনো অংশ পাবে না।

If a man die, and have no son, then ye shall cause his inheritance to pass unto his daughter.[12]

(৩) ডাইনিকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে।

Thou shalt not suffer a witch to live. Whosoever lieth with a beast shall surely be put to death. He that sacrificed unto any god, save unto the LORD only, he shall be utterly destroyed.[13]

বাইবেলের এই ভার্সের উপর ভিত্তি করে খ্রিষ্টানরা লক্ষ লক্ষ নারীকে ‘ডাইনি’ আখ্যা দিয়ে আগুনে দগ্ধ করেছে। এখনো কিছু কিছু দেশে এমন বর্বর ঘটনার কথা শুনা যায়।

(৪) পুরুষ যদি কোনো পশুর সাথে অপকর্মে জড়িয়ে যায়, তাহলে তাকে হত্যা করতে হবে। আর নারী যদি পশুর সাথে অপকর্ম করার জন্য মাত্র অগ্রসর হয়, তাহলে তাকেও হত্যা করতে হবে।

If a man has sexual relations with an animal, he must be put to death, and you must kill the animal. If a woman approaches an animal to have sexual relations with it, kill both the woman and the animal. They must be put to death; their blood will be on their own heads.[14]

(৫) পুরুষের কর্তা হলো যিশু আর নারীর কর্তা হলো পুরুষ।

But I would have you know, that the head of every man is Christ; and the head of the woman is the man; and the head of Christ is God.[15]

(৬) নারী-পুরুষ একে অপরের শত্রু।

And I will put enmity between thee and the woman, and between thy seed and her seed; it shall bruise thy head, and thou shalt bruise his heel.[16]

(৭) পুরুষ নয়, বরং নারীই প্রতারিত হয়েছিল।

And Adam was not deceived, but the woman being deceived was in the transgression.[17]

(৮) বিয়ের সময় নারীর ভেতর যদি কুমারীত্বের কোনো চিহ্ন না পাওয়া যায়, তাহলে তার পিতার বাড়ির সামনে সকলে মিলে তাকে পাথর মেরে হত্যা করবে।

But if the tokens of virginity be not found for the damsel: Then they shall bring out the damsel to the door of her father's house, and the men of her city shall stone her with stones that she die: because she hath wrought folly in Israel, to play the whore in her father's house: so shalt thou put evil away from among you.[18]

(৯) নারীশিশুর জন্ম মানেই ক্ষতি।

…. the birth of any daughter is a loss.[19]

ঋতুস্রাব হলে খ্রিষ্টধর্মে নারীদের সাথে যে অমানবিক আচরণ করা হয়, তার রগড়ানো বর্ণনা না হয় বাদই দিলাম!

বৌদ্ধধর্মে নারী :

(১) নারীরা অস্পৃশ্য এবং সকল পাপের মূল।

(২) নারীরা পুরোপুরি আলোকিত (Fully Enlightened or Buddha) হতে পারবে না।

ইসলাম বলে, ‘যে ব্যক্তি ভালো কাজ করবে, হোক সে পুরুষ কিংবা নারী এবং সে ঈমানদার হবে, এরূপ লোক জান্নাতে দাখিল হবে। আর তাদের প্রতি বিন্দুমাত্র অবিচার করা হবে না’ (আন-নিসা, ৪/১২৪)

(৩) পুরুষের কাজ হচ্ছে বিরামহীনভাবে জ্ঞানের অন্বেষণ করা। আর নারীদের কাজ হচ্ছে বাড়ি ও স্বামীকে দেখাশুনা করা।[20]

ইসলাম বলে, নারী ও পুরুষ সবার উপর জ্ঞানার্জন করা ফরয।[21]

জাহেলিয়্যাতে নারীর বীভৎস চিত্র :

ইসলামপূর্ব তথা জাহেলী যুগে নারীদের সম্মান বা অধিকার তো দূরের কথা, বেঁচে থাকারই কোনো সুযোগ ছিল না। কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়ার কথা শ্রবণ করার সাথে সাথেই সকলের মুখ কালো হয়ে যেত। তাকে জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলার জন্য সকলেই উন্মাদ হয়ে উঠত এবং এই বর্বর, ন্যাক্কারজনক প্রথাকেই তারা সম্মানের কাজ মনে করত। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُمْ بِالْأُنْثَى ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ - يَتَوَارَى مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ أَيُمْسِكُهُ عَلَى هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ أَلَا سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ ‘আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হতো, তখন তার চেহারা কালো হয়ে যেত। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত। তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয়েছে, সে দুঃখে সে ক্বওমের থেকে আত্মগোপন করে। অপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দিবে, নাকি মাটিতে পুঁতে ফেলবে? জেনে রেখো, তারা যা ফয়সালা করে, তা কতই না মন্দ!’ (আন-নাহল, ১৬/৫৮-৫৯)

ইসলামে নারী :

(ক) নারী হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকার : ইসলাম নারীসমাজকে জাহেলী যুগের জীবন্ত দাফন করার কুপ্রথা থেকে মুক্তি দিয়েছে। তাদের মাঝে পারিবারিক ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ব তৈরি করেছে। যে সমাজে নারীর জন্মই অপমান, লাঞ্ছনার কারণ হয়ে দাঁড়াত, ইসলাম সেই সমাজে প্রবেশ করেই নারী সন্তানের বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করল। আর নারী সন্তান হত্যাকারীদের শুনালো ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি বাণী। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِذَا الْمَوْءُودَةُ سُئِلَتْ - بِأَيِّ ذَنْبٍ قُتِلَتْ ‘আর স্মরণ করো, যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে!’ (আত-তাকভীর, ৮১/৮-৯)

(খ) শিক্ষা লাভের অধিকার : বেঁচে থাকার জন্য শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। সবার জীবনে শিক্ষার প্রয়োজন। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ ‘প্রত্যেক মুসলিমের উপর জ্ঞানার্জন করা ফরয’।[22] ইসলাম যে নারীকে শিক্ষা অর্জনে বাধাগ্রস্ত করেনি, তার স্বচ্ছ দৃষ্টান্ত হলো নবীপত্নী আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা, যিনি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন ২২১০টি হাদীছ, যা সকল ছাহাবীর মাঝে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

(গ) মাতৃত্বের অধিকার : মানবরচিত এ সমাজব্যবস্থা নারীকে মাতৃত্বের সম্মান দেয়নি; বরং নারীকে ভোগ্যসামগ্রী হিসেবে সর্বত্র প্রচারণা চালিয়েছে। যার বাস্তব ফলাফল সর্বজনবিদিত। মাতৃত্বের সম্মান সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَحَقُّ بِحُسْنِ صَحَابَتِي قَالَ ‏"‏ أُمُّكَ ‏"‏‏.‏ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ‏"‏ أُمُّكَ ‏"‏‏.‏ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ‏"‏ أُمُّكَ ‏"‏‏.‏ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ‏"‏ ثُمَّ أَبُوكَ ‏ ‘এক লোক রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হক্বদার? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি বললেন, অতঃপর কে? নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মা। তিনি বললেন, অতঃপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। তিনি বললেন, অতঃপর কে? তিনি বললেন, অতঃপর তোমার বাবা’।[23]

(ঘ) স্ত্রী হিসেবে নারীর অধিকার : নারী বা পুরুষ কখনো একে অপরকে ছাড়া পূর্ণতায় পৌঁছতে পারে না। এ বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে বিবাহের মাধ্যমে অভিনব এক পন্থা বাতলে দিয়েছে। বিবাহের মাধ্যমে মূলত নারীসমাজকেই ইসলাম লাভবান করেছে। দিয়েছে মান-সম্মান আর অধিকারের শীর্ষ চূড়া। বিবাহের মাধ্যমে মানুষ তার প্রাকৃতিক চাহিদা বৈধ পন্থায় পুরা করে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন,وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ ‘তাঁর নিদর্শনাবলির অন্তর্ভুক্ত, তিনি তোমাদের থেকেই তোমাদের স্ত্রীদের সৃজন করেছেন, যেন তোমরা তাদের থেকে প্রশান্তি লাভ করতে পার। আর তিনি তোমাদের মাঝে দয়া ও ভালোবাসার বন্ধন সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মাঝে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় নিহিত’ (আর-আর-রূম, ৩০/২১)

(ঙ) প্রতিদানের ক্ষেত্রে নারীর অধিকার : পবিত্র কুরআন ও হাদীছের মাধ্যমে মানবজীবনে সফল হওয়ার অনেক পথের দিশা ইসলাম প্রদর্শন করেছে। ঘোষণা করেছে মহাপুরস্কার। এক্ষেত্রে ইসলাম নারীকে সমান অধিকারে অধিষ্ঠিত করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ ‘পুরুষ বা নারী, যে মুমিন অবস্থায় সৎকাজ করবে, তাকে আমি পবিত্র জীবন দান করব এবং অবশ্যই তাদের কর্মের তুলনায় উত্তম প্রতিদান প্রদান করব’ (আন-নাহল, ১৬/৯৭)

(চ) সম্পদে নারীর অধিকার : সম্পত্তির মালিকানার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন, وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ ‘তাদের পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনদের রেখে যাওয়া ধনসম্পদে নারীদের জন্যও (সে সম্পদে) অংশ রয়েছে’ (আন-নিসা, /)

জাহেলিয়্যাতে নারী নিজেই ছিল পুরুষের ভোগ-বিলাসের সম্পদ। ইসলাম এসে নারীকে দিলো স্বতন্ত্র সম্পদের অধিকার। নারীর ভরণপোষণের দায়িত্ব কখনো পিতার কাঁধে, কখনো স্বামীর কাঁধে। কেউই না থাকলে নারীর দায়িত্ব ভার তুলে নিবে রাষ্ট্র। একজন নারী আমৃত্যু কখনোই অভিভাবকহীন নন।

নারীর নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রেও ইসলাম গুরুত্ব দিয়েছে। বেগানা নারীর শরীর স্পর্শ তো দূরের কথা, নারীর প্রতি চোখ তুলে তাকানোও নিষেধ। পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেন, يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ‘তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে’ (আন-নূর, ২৪/৩০)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ ‘কোনো পুরুষ একজন মহিলার সাথে নির্জনে মিলিত হলে তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান’।[24] কারণ, তা নারীর বিপদের কারণ হতে পারে। নারীর প্রতি সকল প্রকারের অন্যায়, অত্যাচারকে ঘোষণা করল মহাপাপ, কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে।

পুরুষের কাছে যে নারী ছিল ভোগ্যসামগ্রী, সেই নারীকেই বানানো হলো তার চরিত্রের ভালো-মন্দের বিচারক। ঘোষণা করা হলো, সেই পুরুষ সবচেয়ে ভালো, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। যেখানে নারীর নাম উচ্চারণ করাই ছিল চরম অপমানের, সেখানে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে নারী অর্থাৎ ‘নিসা’ শব্দটি ৫৭ বার এবং ‘ইমরাআহ’ অর্থাৎ নারী শব্দটি ২৬ বার উল্লেখ করলেন। ‘নিসা’ অর্থাৎ নারীগণ নামে একটি স্বতন্ত্র এবং বৃহৎ সূরাই নাযিল করলেন। যে রব নারীকে অবহেলা, অন্যায়-অত্যাচারের আস্তাকুঁড় থেকে তুলে এনে সীমাহীন মযার্দায় রাণী বানিয়ে রাখলেন, তিনি কি নারী জাতির অকল্যাণ চাইতে পারেন? আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন- আমীন!

শুয়াইব বিন আহমাদ

শিক্ষার্থী, কুল্লিয়া ২য় বর্ষ, মাদরাসা দারুস সুন্নাহ, মিরপুর, ঢাকা।


[1]. হদ্বারাতুল হিন্দ, পৃ. ১৭৯।

[2]. যজুর্বেদ, ৬:৫:৮:২।

[3]. মনুসংহিতা, ২:৬৬।

[4]. ইবনু মাজাহ, হা/১৪৫৮।

[5]. মনুসংহিতা, ৫:১৫৪।

[6]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৩৩১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৬৮।

[7]. মনুসংহিতা, ২:২১৫।

[8]. মনুসংহিতা, ৫।

[9]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৩৫৩।

[10]. ঋগ্বেদ, ১০:৯৫:১৫।

[11]. Corinthians, 11:8-9.

[12]. Numbers, 27:8.

[13]. Exodus, 22:18-20.

[14]. Leviticus, 20:15-16.

[15]. 1 Corinthians, 11:3.

[16]. Genesis, 3:15.

[17]. 1 Timothy, 2:14.

[18]. Deuteronomy, 22:20-21.

[19]. Eccles, 22:3.

[20]. https://en.wikipedia.org/wiki/Women_in_Buddhism.

[21]. ইবনু মাজাহ, হা/২২৪।

[22]. ইবনু মাজাহ, হা/২২৪।

[23]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৭১; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৪৮।

[24]. তিরমিযী, হা/২১৬৫; মিশকাত, হা/৩১১৮, হাদীছ ছহীহ।

Magazine