কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

আসল বিজয়ী কে?

 মহান আল্লাহ বলেন, ‘যেদিন তাদের মুখমণ্ডল অগ্নিতে উলট-পালট করা হবে, *সেদিন তারা বলবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহকে মানতাম ও রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মানতাম! তারা আরও বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নেতা ও বড়দের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করুন এবং তাদেরকে দিন মহা অভিশাপ’ (আল-আহযাব, ৩৩/৬৬-৬৮)

পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে বর্তমান পর্যন্ত সকল ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, সত্য কখনও সংখ্যাধিক্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল না; ঈমানের বলে বলীয়ান হওয়ার কারণেই সত্যের পতাকাবাহীরা কখনই কথিত সংখ্যাধিক্যদের পরোয়া করেনি। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, সত্যের অনুসারীরা সকল সময়ই সংখ্যায় কম ছিল। আর কম থাকাটাই সত্যের পরিচয়, যা স্পষ্টভাবে আল-কুরআনের পাতায় পাতায় বর্ণিত হয়েছে। তাই সংখ্যাধিক্যের উপর ভিত্তি করে নিজেকে সত্যের একনিষ্ঠ অনুসারী ভেবে আত্মতৃপ্তিতে ভোগা উচিত নয়; বরং চিন্তা-গবেষণা করে দেখতে হবে আমার পছন্দের নেতা এবং নেতার মতামতগুলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শের সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ? 

যদি সত্য পথের সন্ধান করতে হয়, তবে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বদর, উহুদ, খন্দক, আহযাব, হুদায়বিয়া, মক্কা বিজয় ও হুনাইনসহ অন্যান্য জিহাদে অংশগ্রহণকারী মুসলিম সৈন্যসংখ্যা এবং এর বিপরীতে কাফেরদের সমরস্ত্র সজ্জিত বিশাল সৈন্যবহরকে ভালো করে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখতে হবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং একনিষ্ঠ ভালোবাসা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে দেখতে হবে। তখন এর উত্তর পেতে আর কারও অসুবিধা হবে না। খুব নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, প্রত্যেক চিন্তাশীলের অন্তরদৃষ্টি খুলে যাবে ইনশা-আল্লাহ। এরপর আসুন! খুলাফায়ে রাশেদীনের স্বর্ণযুগের সাফল্যের দিকে তাকিয়ে দেখা যাক, তারা কি সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন, না-কি সংখ্যালঘিষ্ঠ ছিলেন? তারা ছিলেন হাতে গোনা স্বল্পসংখ্যক ছাহাবা। তবে তাঁরা ঈমানের বলে বলীয়ান এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একান্ত অনুগত ছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা বলে, আমরা আল্লাহ ও রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং আনুগত্য স্বীকার করেছি। কিন্তু তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়; বস্তুত তারা মুমিন নয়’ (আন-নূর, ২৪/৪৭)

আল্লাহ তাঁর অনুগত বান্দাদের পরিচয় দিতে গিয়ে এইভাবে বলেছেন, ‘মুমিনের বক্তব্য কেবল একথাই, যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকে তাদেরকে আহ্বান করা হয়, তখন তারা বলে, আমরা শ্রবণ করলাম ও মান্য করলাম। আর তারাই সফলকাম’ (আন-নূর, ২৪/৫১)

আল্লাহ প্রদত্ত এরকম স্পষ্ট দলীল থাকার পর কুরআন ও সুন্নাহর অনুসারীদের বিরোধিতার কোনো প্রশ্নই থাকতে পারে না। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ সংখ্যাধিক্যতার দোহাই দিয়ে শিরক, বিদআত, কুফর ইত্যাদি কর্মে জড়িত থাকাকে অহংকারের বিষয় মনে করে এবং ছহীহ আক্বীদায় বিশ্বাসীদেরকে ওয়াহাবী, লা মাযহাবী ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করতে বিন্দুমাত্র দিধাবোধ করে না; এমনকি আহলে খবীছ বলে গালি দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। অতীত ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, সত্য পথের অনুসারীরা সর্বদা বিপথগামী সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের দ্বারা নিপীড়িত-নির্যাতিত হয়েছে; বর্তমানেও হচ্ছে, হবে— এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। মহান আল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার বান্দাদের মধ্যে একদল ছিল যারা বলত, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন ও আমাদের উপর দয়া করুন, আপনি দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। কিন্তু তাদের নিয়ে তোমরা এত ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে যে, তা তোমাদেরকে আমার কথা ভুলিয়ে দিয়েছিল; তোমরা তো তাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতে। তাদের ধৈর্যের কারণে আজ আমি এমনভাবে পুরস্কৃত করলাম যে, তারাই হলো সফলকাম’ (আল-মুমিনূন, ২৩/১০৯-১১১)

মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। তাহলে তিনি তোমাদের কর্মকে ত্রুটিমুক্ত করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্য করে, তারা অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে’ (আল-আহযাব, ৩৩/৭০-৭১)

এখন আল্লাহ ছহীহ আক্বীদার বিপরীতে চলা লোকদেরকে বুঝ দিলেই বুঝতে পারবেন ইনশা-আল্লাহ, নয়তো নয়। আল্লাহ হেদায়াতের মালিক। আল্লাহ আপনি আমাদের সকলকে হেদায়াত দান করুন ও কবুল করুন— আমীন!

* বি’র আলী, হাই উম্মে খালেদ, মদীনা, সঊদী আরব।

Magazine