কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

নারীদের ক্ষমতা

post title will place here

মহান আল্লাহ নারীদেরকে অনেক সম্মানিত করে সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাকো আর ভয় করো রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক’ (আন-নিসা, ৪/১)

এখানে যে বলা হয়েছে, ‘যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে’-এর মানে হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আদম আলাইহিস সালাম-এর বাম পাঁজর থেকে সবার আগে হাওয়া (আ.)-কে বের করেন।

আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ فَإِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ وَإِنَّ أَعْوَجَ شَىْءٍ فِى الضِّلَعِ أَعْلاَهُ فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ ‘তোমরা নারীদেরকে উত্তম নছীহত করো। কেননা নারী জাতিকে পুরুষের পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে উপরের হাড়টি বেশি বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙে ফেলবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে তা সবসময় বাঁকাই থাকবে। অতএব, নারীদের নছীহত করতে থাকো’।[1]

সুধী পাঠক! উক্ত আয়াত এবং হাদীছ লক্ষ করলেই দেখা যাবে যে, নারী জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে পুরুষের বাম পাঁজরের হাড় থেকে আর পাঁজর হলো মানব শরীরের সবচেয়ে সংরক্ষিত স্থান। আর নারী জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবচেয়ে সংরক্ষিত স্থান থেকে। সুতরাং লক্ষ করলেই আমরা বুঝতে পারি যে, নারী জাতির সম্মান ও মর্যাদা কতটা বেশি। এমনকি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীছে একজন পিতার চেয়ে তিন গুণ বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন মাতাকে। এর দ্বারাও বুঝা যায় যে, নারী জাতির মর্যাদা ও গুরুত্ব কতটা বেশি। একজন নারী (মা) যদি সুন্দর বা উত্তম হয়, তাহলে একটি সুন্দর পরিবার, একটি সুন্দর সমাজ গঠিত হবে। একটি সুন্দর সমাজ গঠন হলে, একটি সুন্দর রাষ্ট্র গঠিত হবে এবং তা গঠন করা সম্ভব।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, উছমানী খেলাফত ধ্বংসের পেছনে এবং বর্তমান ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে পুরুষদের পাশাপাশি কিছু নারীর চক্রান্তও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

হে নারী সমাজ! তারা তাদের বুদ্ধির খারাপ দিকটা ব্যবহার করে যদি ইসলামের ক্ষতি করতে পারে, তাহলে আপনি কেন আপনার বুদ্ধির ভালো দিকটা ব্যবহার করে ইসলামের খেদমত করতে পারেন না? একটি কথা মনে রাখবেন, এই পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি যাদের সম্মান দিয়েছেন, তার মধ্যে নারী জাতি অন্যতম। কেননা মহান আল্লাহ দুনিয়াতে সর্বপ্রথম যাকে সালাম দিয়েছিলেন, তিনি কিন্তু একজন নারীই ছিলেন।

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَتَى جِبْرِيلُ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذِهِ خَدِيجَةُ قَدْ أَتَتْ مَعَهَا إِنَاءٌ فِيهِ إِدَامٌ أَوْ طَعَامٌ أَوْ شَرَابٌ فَإِذَا هِىَ أَتَتْكَ فَاقْرَأْ عَلَيْهَا السَّلاَمَ مِنْ رَبِّهَا وَمِنِّى وَبَشِّرْهَا بِبَيْتٍ فِى الْجَنَّةِ مِنْ قَصَبٍ لاَ صَخَبَ فِيهِ وَلاَ نَصَبَ.

আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এই যে দেখছেন খাদীজা একটি পাত্র নিয়ে আসছেন, তাতে তরকারি ও খাদ্যসামগ্রী রয়েছে। তিনি যখন আপনার নিকট আসবেন, তখন আপনি তাকে তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে এবং আমার পক্ষ হতে সালাম দিবেন এবং তাকে জান্নাতের মধ্যে মুক্তাখচিত এমন একটি প্রাসাদের সুসংবাদ প্রদান করবেন, যেখানে নেই কোনো হৈ-হুল্লোড়, নেই কোনো কষ্ট-ক্লেশ।[2]

এমনকি এ পৃথিবীতে থাকাকালীন সর্বপ্রথম যিনি জান্নাতে একটি ঘর চেয়েছিলেন এবং পেয়েছিলেন, তিনিও একজন নারীই ছিলেন। তিনি ছিলেন ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে আমাদের নারীসমাজ নায়িকা, গায়িকা, মডেলদের অনুসরণ ও অনুকরণ করে। তারা তাদেরকে নিজেদের জীবনের আইডল হিসেবে গ্রহণ করে। অথচ ইসলামের সোনালি যুগের নারীসমাজের নাম ইতিহাসের পাতায় ক্বিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। প্রতিটি যুগের প্রতিটি নারীর জন্য তারা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন।

যেমনটা ছিলেন খাদীজা, আয়েশা, ফাতেমা, সুমাইয়া (রা.), ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া-সহ আরও অনেকে। ইতিহাস ঘাটলে এমন অনেক দৃষ্টান্ত দেখা যাবে, যেখানে উত্তম নারীর (হতে পারে তার মা, বোন, স্ত্রী) অনুপ্রেরণায় যুদ্ধক্ষেত্রের কাপুরুষ ব্যক্তি যারা যুদ্ধ করতে ভয় পেত, যুদ্ধের কথা শুনলে যাদের অন্তর কেঁপে উঠত, তারা হয়ে উঠেছিল বীরপুরুষ ও শক্তিশালী যোদ্ধা। পরবর্তীতে তারা ভয় পেত না কোনো শক্রপক্ষকে। ঠিক এমনিভাবে আমাদের সমাজে আরো অনেক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রয়েছে যেখানে দেখা গেছে, একজন উত্তম সহধর্মিণীর সংস্পর্শে এসে অনেক পুরুষ হয়ে উঠেছিল সৎ, পরহেযগার ও ইসলামের খাদেম। আমাদের সমস্ত শরীর যেমন পরিচালিত হয়ে থাকে মস্তিষ্ক দ্বারা, ঠিক তেমনি নারীরাও হতে পারে স্বামীর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের মতোই এবং তার স্বামীকে পরিচালিত করতে পারে দ্বীনের পথে, আল্লাহর অনুগত্যের পথে।

এমনকি তার স্বামীকে গড়ে তুলতে পারে একজন ইসলামের খাদেম হিসেবে। এই মহৎ কাজের ক্ষমতা অর্জন করতে হলে একজন নারীকে হতে হবে ঈমানদার, পরহেযগার, নেককার, আল্লাহভীরু, লজ্জাস্থানের হেফাযতকারিণী, সতীসাধ্বী, উত্তম চরিত্রের অধিকারিণী, পর্দানশিন, দানশীলা, ছালাত আদায়কারিণী, ছিয়াম পালনকারিণী এবং স্বামীর প্রতি অনুগত।

পরিশেষে আল্লাহর নিকট আমার প্রার্থনা, নারীদের মধ্য হতে যারাই এই লেখাটি পড়বেন, তারা যেন উক্ত আলোচনা বুঝে নিজেরা ইসলামের খেদমতে এগিয়ে আসেন এবং তাদের নিজেদের দ্বারা ও অন্যান্য নারী দ্বারা ইসলামের ক্ষতি ও অনিষ্ট সাধন হতে বিরত থাকতে, অন্যদেরকে বিরত রাখতে পারেন। আল্লাহ তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

মো. আব্দুল বারী

শিক্ষার্থী, ছানাবিয়্যাহ ১ম বর্ষ, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহী।


[1]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৩৩১।

[2]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৮২০; ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৩২।

Magazine