উত্তর : ছালাতে চার স্থানে রাফঊল ইয়াদায়েন করতে হয়। তা হলো: তাকবীরে তাহরীমা বাঁধার সময়, প্রত্যেক বার রুকূতে যাওয়া ও রুকূ হতে উঠার সময় এবং তিন বা চার রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাতের তৃতীয় রাক‘আত শুরু করার সময়। ইবনু ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ছালাত শুরু করতেন, তখন দুই হাত দুই কাঁধ বরাবর উঠাতেন। অতঃপর যখন রুকূর জন্য তাকবীর বলতেন এবং রুকূ হতে মাথা উঠাতেন, তখনও এরূপভাবে দুই হাত উঠাতেন আর বলতেন, ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ রাববানা লাকাল হামদ’। কিন্তু সিজদায় যেতে এরূপ করতেন না (ছহীহ বুখারী, হা/৭৩৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৩৯০; তাহ্ক্বীক্ব মিশকাত, হা/৭৯৩)। উল্লেখ্য যে, রাফঊল ইয়াদায়েন শরী‘আতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। রাফঊল ইয়াদায়েন করা সম্পর্কে চার খলীফা সহ প্রায় ২৫ জন ছাহাবী থেকে বর্ণিত ছহীহ হাদীছ সমূহ রয়েছে। একটি হিসাব মতে রাফঊল ইয়াদায়েন এর হাদীছের রাবী সংখ্যা আশারায়ে মুবাশ্শারাহ সহ অন্যূন ৫০ জন ছাহাবী (ফিক্বহুস সুন্নাহ, ১/১০৭ পৃঃ ; ফাৎহুল বারী, ২/২৫৮ পৃঃ, হা/৭৩৭-এর ব্যাখ্যা) এবং সর্বমোট ছহীহ হাদীছ ও আছারের সংখ্যা অন্যূন চার শত। ইমাম সুয়ূত্বী রাহিমাহুল্লাহ ও আলবানী রাহিমাহুল্লাহ প্রমুখ বিদ্বানগণ রাফঊল ইয়াদায়েন এর হাদীছকে ‘মুতাওয়াতির’ (যা ব্যাপকভাবে ও অবিরত ধারায় বর্ণিত) পর্যায়ের বলে মন্তব্য করেছেন (তুহফাতুল আহওয়াযী, ২/১০০, ১০৬ পৃঃ; আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন্নাবী, পৃঃ ১০৯)। ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
لَمْ يَثْبُتْ عَنْ أَحَدٍ مِّنْهُمْ تَرْكُهُ. و قَالَ لاَ أَسَانِيْدَ أَصَحُّ مِنْ أَسَانِيْدِ الرَّفْعِ-
অর্থাৎ কোন ছাহাবী রাফঊল ইয়াদায়েন তরক করেছেন বলে প্রমাণিত হয়নি। তিনি আরও বলেন ‘রাফঊল ইয়াদায়েন’-এর হাদীছ সমূহের সনদের চেয়ে বিশুদ্ধতম সনদ আর নেই’ (ফাৎহুল বারী, ২/২৫৭ পৃঃ, হা/৭৩৬-এর ব্যাখ্যা)। সুতরাং তাকে উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নেই। কেউ যদি স্বেচ্ছায় তা উপেক্ষা করে তাহলে সে সুন্নাতকে অমান্য করল (ছহীহ ইবনু খুযায়মা, হা/১৯৭; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২১৩০)।
ছালাতে রাফঊল ইয়াদায়েনের জন্য ১০টি করে নেকী বেশী হয় (সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩২৮৬)। উক্ববা ইবনে আমের জুহানী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যখন মুছল্লী রুকূতে যাওয়ার সময় এবং রুকূ থেকে উঠার সময় দু’হাত উত্তোলন করবে তখন তার জন্য প্রত্যেক ইশারায় দশটি করে নেকী হবে (বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান, হা/৮৩৯; আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃঃ ১২৯)। পক্ষান্তরে, রাফঊল ইয়াদায়েন না করলে ছালাতের নেকী কম হয়। আম্মার ইবনু ইয়াসার রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এমন অনেক লোক আছে যারা ছালাত আদায় করে। কিন্তু তাদের ছালাত পুরোপুরি কবুল না হওয়ায় পরিপূর্ণ নেকী তারা পায় না। বরং তাদের কেউ দশ ভাগের এক ভাগ, কেউ নয় ভাগের এক ভাগ, কেউ আট ভাগের এক ভাগ, কেউ সাত ভাগের এক ভাগ, কেউ ছয় ভাগের এক ভাগ, কেউ পাঁচ ভাগের এক ভাগ, কেউ চার ভাগের এক ভাগ, কেউ তিনের একাংশ বা অর্ধাংশ নেকী প্রাপ্ত হয়ে থাকে (আবুদাঊদ, হা/৭৯৬)।
মনিরুল ইসলাম
পুঠিয়া, রাজশাহী।