কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

হৃদয়ের ফেতনা থেকে বাঁচার উপায় এবং উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর মর্যাদা

post title will place here

عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ كُنَّا عِنْدَ عُمَرَ فَقَالَ أَيُّكُمْ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَذْكُرُ الْفِتَنَ فَقَالَ قَوْمٌ نَحْنُ سَمِعْنَاهُ. فَقَالَ لَعَلَّكُمْ تَعْنُونَ فِتْنَةَ الرَّجُلِ فِى أَهْلِهِ وَجَارِهِ قَالُوا أَجَلْ. قَالَ تِلْكَ تُكَفِّرُهَا الصَّلاَةُ وَالصِّيَامُ وَالصَّدَقَةُ وَلَكِنْ أَيُّكُمْ سَمِعَ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَذْكُرُ الْفِتَنَ الَّتِى تَمُوجُ مَوْجَ الْبَحْرِ قَالَ حُذَيْفَةُ فَأَسْكَتَ الْقَوْمُ فَقُلْتُ أَنَا. قَالَ أَنْتَ لِلَّهِ أَبُوكَ. قَالَ حُذَيْفَةُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ «تُعْرَضُ الْفِتَنُ عَلَى الْقُلُوبِ كَالْحَصِيرِ عُودًا عُودًا فَأَىُّ قَلْبٍ أُشْرِبَهَا نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ وَأَىُّ قَلْبٍ أَنْكَرَهَا نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ بَيْضَاءُ حَتَّى تَصِيرَ عَلَى قَلْبَيْنِ عَلَى أَبْيَضَ مِثْلِ الصَّفَا فَلاَ تَضُرُّهُ فِتْنَةٌ مَا دَامَتِ السَّمَوَاتُ وَالأَرْضُ وَالآخَرُ أَسْوَدُ مُرْبَادًّا كَالْكُوزِ مُجَخِّيًا لاَ يَعْرِفُ مَعْرُوفًا وَلاَ يُنْكِرُ مُنْكَرًا إِلاَّ مَا أُشْرِبَ مِنْ هَوَاهُ». قَالَ حُذَيْفَةُ وَحَدَّثْتُهُ أَنَّ بَيْنَكَ وَبَيْنَهَا بَابًا مُغْلَقًا يُوشِكُ أَنْ يُكْسَرَ. قَالَ عُمَرُ أَكَسْرًا لاَ أَبَا لَكَ فَلَوْ أَنَّهُ فُتِحَ لَعَلَّهُ كَانَ يُعَادُ. قُلْتُ لاَ بَلْ يُكْسَرُ. وَحَدَّثْتُهُ أَنَّ ذَلِكَ الْبَابَ رَجُلٌ يُقْتَلُ أَوْ يَمُوتُ. حَدِيثًا لَيْسَ بِالأَغَالِيطِ.

সরল অনুবাদ: হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘আমরা একবার উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট বসে ছিলাম। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ফেতনা সম্পর্কে আলোচনা শুনেছে? কিছু ছাহাবী বললেন, আমরা শুনেছি। উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমরা হয়তো বুঝেছ সেই ফেতনার কথা, যা মানুষের পরিবার ও প্রতিবেশীর সঙ্গে ঘটে থাকে? তারা বললেন, ‘জি, হ্যাঁ, (ঠিক তাই)’। উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘এই ধরনের ফেতনা তো ছালাত, ছিয়াম, যাকাত ও ছাদাক্বার মাধ্যমে মাফ হয়ে যায়। কিন্তু আমি জানতে চাই, তোমাদের মধ্যে কে এমন ফেতনার কথা শুনেছে, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আসবে? এ কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে যান। তখন আমি (হুযায়ফা) বললাম, আমি শুনেছি। উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি? তোমার পিতা আল্লাহর জন্য উৎসর্গ হোক! হুযায়ফা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘ফেতনাগুলো মানুষের অন্তরসমূহের উপর আরোপিত হবে, যেমনভাবে চাটাই শলাকা দিয়ে একটার পর একটা দিয়ে বোনা হয়। যে হৃদয় সেই ফেতনাকে গ্রহণ করবে, তাতে একটি কালো দাগ পড়বে। আর যে হৃদয় ফেতনাকে প্রত্যাখ্যান করবে, তাতে একটি সাদা দাগ পড়বে। এক পর্যায়ে মানুষের হৃদয় দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে যাবে— (১) একটি হৃদয় হবে শুভ্র পাথরের ন্যায় সাদা ও পরিষ্কার; আসমান-যমীন বিদ্যমান থাকা পর্যন্ত কোনো ফেতনা সেটার ক্ষতি করতে পারবে না। (২) অপর হৃদয় হবে কালো, ধূসর ও উল্টানো কলসের মতো, সেটা না কোনো ভালোকে চিনতে পারবে, না কোনো মন্দকে মন্দ মনে করবে; শুধু তার প্রবৃত্তি যা পছন্দ করে, তাই সে সঠিক মনে করবে’। (বন্ধ দরজা সম্পর্কে) হুযায়ফা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে বললাম, ‘আপনার এবং ওই ফেতনার মধ্যে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে, যা শীঘ্রই ভেঙে ফেলা হবে। উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘কী বলছো! সেটা কি ভেঙে ফেলা হবে? সেটা খুলে দেওয়া হলে তো আবার বন্ধ করা যেত!’ আমি বললাম, ‘না, বরং সেটা ভেঙে ফেলা হবে। আমি আরও বললাম যে, সে দরজা হলো একজন ব্যক্তি, যাকে হয়তো হত্যা করা হবে অথবা তিনি মারা যাবেন। এটা এমন হাদীছ, যাতে কোনো ভুল নেই’।[1]

ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্যই আল্লাহর আনুগত্য। আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করা একমাত্র তখনই সম্ভব, যখন কেউ রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অনুসরণ করবে ও তাঁর আদর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করবে। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, (হে রাসূল!) আমরা আপনাকে তাদের উপর পর্যবেক্ষণকারী রূপে প্রেরণ করিনি’ (আন-নিসা, ৪/৮০)

রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীনের প্রতিটি দিক সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি শুধু আল্লাহর বিধান মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন—এমন নয়, বরং জীবনঘনিষ্ঠভাবে দ্বীনকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। কোন কাজ মানুষকে ফেতনায় ফেলবে, কোন পথ তাকে ধ্বংস করবে এবং সে পথ বা ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচার উপায় কী তাও তিনি বলে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে ধ্বংস হওয়ার সে যাতে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর ধ্বংস হয় আর যে জীবিত থাকার সে যাতে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর বেঁচে থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ’ (আল-আনফাল, ৮/৪২)

আজ আমরা ফেতনার এমন যুগে প্রবেশ করেছি, যেখানে বহু হৃদয় অন্ধ হয়ে গেছে, মানুষ ভালোকে ভালো বলা বন্ধ করেছে, মন্দকে মন্দ মনে করা থেকে বিরত থেকেছে।

আমাদের কর্তব্য হলো— (ক) আল্লাহর প্রতি ভয় রাখা, (খ) নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা, (গ) অন্তর থেকে ফেতনাকে ঘৃণা করা এবং (ঘ) অন্তত নিজ হৃদয়ে মন্দের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। আল্লাহ আমাদের অন্তরসমূহকে হেদায়াত দান করুন এবং ফেতনা থেকে হেফাযত করুন- আমীন!

উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর ফেতনা সম্পর্কে জানতে চাওয়ার কারণ হলো, তিনি নিজেকে ফেতনা থেকে বাঁচাতে চাইতেন। তিনি স্পষ্ট করে বললেন, আমি পরিবার বা প্রতিবেশীর সাথে ঘটে যাওয়া ছোটখাটো ফেতনা সম্পর্কে জানতে চাই না; বরং আমি সেই ভয়াবহ, সর্বগ্রাসী ও ব্যাপক ফেতনা সম্পর্কে জানতে চাই, যে ফেতনা সমগ্র সমাজকে গ্রাস করে ফেলবে।

হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, পরিবার-পরিজনও মানুষের জন্য এক ধরনের পরীক্ষা বা ফেতনা। স্ত্রী-সন্তান, ধনসম্পদ ও আত্মীয়স্বজনের কারণে মানুষ নানা প্রলোভন ও পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। তাদেরকে অতিরিক্ত ভালোবাসে, তাদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত থাকে এবং তাদের কারণে দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। ফলে সে আল্লাহর পথে ব্যয় করা থেকে বিরত থাকে, ইবাদতে গাফেল হয় এবং বহু কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের ধনসম্পদ ও তোমাদের সন্তানসন্ততি তোমাদের জন্য ফেতনা’ (আত-তাগাবুন, ৬৪/১৫)। ছহীহ হাদীছে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সন্তান হলো (মানুষের) কৃপণতা ও কাপুরুষতার জায়গা’।[2]

অতএব, বুদ্ধিমান মুমিন সে-ই, যে তার পরিবারকে ভালোবাসে, কিন্তু তাদের ভালোবাসা তাকে আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিরত রাখতে পারে না। সে এ ব্যাপারে সর্বদা সজাগ থাকে। পরিবারের সাথে সংঘটিত ফেতনার আরেকটি ব্যাখ্যা হলো পিতামাতার সন্তানের হক্ব আদায়ে গাফলতি করা। যেমন— তাদের আদব-কায়দা, দ্বীনী শিক্ষা, আল্লাহর বিধিবিধান, উত্তম চরিত্র শেখানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে উদাসীনতা প্রদর্শন করা। এসবই ফেতনার মধ্যে পড়ে। কারণ পিতামাতা তাদের সন্তানের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে দায়বদ্ধ এবং ক্বিয়ামতের দিন এ দায়িত্ব সম্পর্কে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে।

আর প্রতিবেশীর সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা বা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় অবহেলা করা এই শ্রেণির ফেতনার পর্যায়ভুক্ত। এ ধরনের ছোট ছোট ফেতনাও জবাবদিহিতার দাবি রাখে। তবে এসব পাপ এমন নয় যে এগুলো ক্ষমার অযোগ্য, বরং নেক আমলের মাধ্যমে এসব পাপ মুছে যায়।[3] যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই সৎকর্মসমূহ মন্দকর্মকে মোচন করে দেয়’ (হূদ, ১১/১১৪)। এ ধরনের ক্ষুদ্র ফেতনা সম্পর্কে উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ছালাত, ছিয়াম ও ছাদাক্বা এগুলোকে মুছে দেয়।

উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু এমন ফেতনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, যা উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আবির্ভূত হবে এবং সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। তখন হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে সে সম্পর্কে অবহিত করলেন। হুযায়ফা রাযিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন সেই মহান ছাহাবী, যিনি ফেতনা সংক্রান্ত বহু হাদীছের জ্ঞান রাখতেন। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটবর্তী বিশ্বস্ত ছাহাবী, যার কাছে তিনি মুনাফেক্বদের নামসমূহ এবং ফেতনার বহু গোপন তথ্য সংরক্ষণ করেছিলেন।

হুযায়ফা রাযিয়াল্লাহু আনহু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে বললেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘ফেতনাগুলো মানুষের অন্তরে এমনভাবে আরোপিত হবে, যেমন- মাদুর বোনার সময় একটির পর একটি খেজুরের পাতা প্রবেশ করানো হয়’।[4] অর্থাৎ আরবের তাঁতিরা মাদুর তৈরি করার সময় যেমন খেজুরের পাতা একটির পর একটি গেঁথে নেন, তেমনি একের পর এক ফেতনা মানুষের হৃদয়ে এসে গেঁথে যাবে। মানুষের হৃদয়ে ফেতনা ধীরে ধীরে এভাবে প্রবেশের অবস্থাকে জীবন্তভাবে প্রকাশ করতে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন দৃষ্টান্তের অবতারণা করেছেন।

অতএব, ফেতনা মানুষের হৃদয়ে একটু একটু করে প্রবেশ করতে থাকে। কারণ মহান আল্লাহ তাকে ভালোমন্দের যেকোনো একটি গ্রহণ করার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তিনি তার মধ্যে বিবেক এবং লালসা উভয়ই বিদ্যমান রেখেছেন। তার প্রবৃত্তি যদি তার বিবেকের উপর প্রবল হয়, তবে তার অন্তরে ফেতনা প্রবেশ করে আর যদি তার বিবেক তার কামনাকে পরাভূত করতে পারে, তবে সে ফেতনাকে প্রত্যাখ্যান এবং অস্বীকার করে।

রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীতে এসেছে, ‘হৃদয়ে ফেতনা পান করিয়ে দেওয়া হয়’-এর অর্থ হলো, ফেতনা হৃদয়ের উপর এমনভাবে কর্তৃত্ব স্থাপন করে যে, পাপের প্রতি ভালোবাসা ও আসক্তি গভীরভাবে গেঁথে যায়; যেন হৃদয় ফেতনার মিষ্টি বিষে সিক্ত ও পরিতৃপ্ত হয়। তখন পাপ ও অন্যায়ের অনুভূতি মনের মধ্যে থাকে না। আল্লাহ তাআলা বনী ইসরাঈলের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে গো-বৎস পূজার প্রতি তাদের অন্ধ আসক্তির কথা উল্লেখ করেছেন, ‘কুফরের কারণে তাদের অন্তরে গরুপূজার ভালোবাসা পান করিয়ে দেওয়া হয়েছিল’ (আল-বাক্বারা, ২/৯৩)[5]

অতএব, যার অবস্থা এমন হবে তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে যাবে। ইবনু দুরাইদ বলেন, ‘বস্তুর প্রকৃত রং ব্যতীত অন্য কোনো রং পতিত হলে তাকে নোকতা পতিত হওয়া বলে’।[6] এটা সেই হৃদয় যার সম্পর্কে ফেতনায় পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয় এবং এর মালিকের ধ্বংসের আশঙ্কা তৈরি হয়।

অতএব, যখন ফেতনা ক্রমশ মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করতে থাকে, তখন তা এক অদৃশ্য সংঘর্ষে রূপ নেয়। মানুষের ভেতরে দুটি শক্তি বিরাজ করে— একটি হলো বিবেক-বুদ্ধি, যা তাকে সত্য ও সৎপথের দিকে আহ্বান করে; অপরটি হলো প্রবৃত্তি ও লালসা, যা তাকে পাপ ও অন্যায়ের দিকে ধাবিত করে। যখন প্রবৃত্তি বিবেকের উপর আধিপত্য বিস্তার করে, তখন হৃদয় ফেতনাকে গ্রহণ করে ফেলে এবং তার জন্য পথ খুলে দেয়। আর যখন বিবেক প্রবৃত্তির উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়, তখন মানুষ ফেতনাকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

এই দাগই সেই হৃদয়ের চিহ্ন, যা ফেতনায় নিমজ্জিত হয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়ায়। এর মালিক তখন সত্যের আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ে এবং পরিণত হয় অন্ধ ও বিভ্রান্ত আত্মায়।

অন্যদিকে যে হৃদয় ফেতনাকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, এ হৃদয় ফেতনার আঘাতকে প্রতিহত করে এবং এর প্রলোভনকে অস্বীকার করে। হাদীছে এসেছে, ‘যে হৃদয় ফেতনাকে অস্বীকার করে, তাতে একটি সাদা দাগ পড়ে’। ফলে হৃদয় দুটি দলে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি হলো সুস্থ, পবিত্র ও আলোকিত হৃদয়, যা সাদা পাথরের মতো স্বচ্ছ ও দৃঢ়। হাদীছে ‘ছাফা’ শব্দের অর্থ হলো এমন মসৃণ পাথর, যার সাথে কিছুই আটকে থাকতে পারে না। ঠিক তেমনিভাবে একটি সুস্থ হৃদয় এতটাই স্বচ্ছ যে, কোনো ফেতনাই সেখানে জমতে বা লেগে থাকতে পারে না।[7] এ কারণেই রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আকাশ ও যমীন যতদিন থাকবে, ততদিন কোনো ফেতনা এই হৃদয়ের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না’।

আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘অন্যটি ধূসর বর্ণের কালো হৃদয়, যা উল্টানো বা কাত হয়ে পড়ে থাকা পাত্রের মতো’। অর্থাৎ মাটির দিকে কাত হওয়া বা উল্টে যাওয়া পাত্র যেমন পানিশূন্য হয়ে যায়।[8] প্রবৃত্তির প্রতি আকর্ষণ এবং সত্য থেকে বিচ্যুতি অনুযায়ী হৃদয় থেকে ওইভাবে ঈমান বের হয়ে যায়, যেভাবে কাত হওয়া এবং উল্টে যাওয়া পাত্রের অবস্থা অনুযায়ী পানি প্রবাহিত হয়ে বেরিয়ে যায়।

অপরদিকে আরেকটি হৃদয় আছে, যে হৃদয় ফেতনাকে গ্রহণ করে এবং একের পর এক ফেতনাকে পান করে। ধীরে ধীরে সে হৃদয় ফেতনায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় এবং পাপ ও বিভ্রান্তির স্তূপ সেখানে জমতে থাকে। অবশেষে সেই হৃদয় অন্ধকার ও কলুষতায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হৃদয়ের বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন, ‘আরেকটি হৃদয় হয় ধূসর কালো বর্ণের, যেন সেটা উল্টানো বা কাত হয়ে থাকা একটি পাত্র’। অর্থাৎ যেমন কাত হয়ে বা উল্টোভাবে থাকা পাত্র থেকে পানি গড়িয়ে বেরিয়ে যায় এবং তা ফাঁকা হয়ে পড়ে, তেমনি প্রবৃত্তির আকর্ষণ ও গুনাহের আসক্তি হৃদয় থেকে ঈমানকে বের করে দেয়।

আল-মুনযিরী রাহিমাহুল্লাহ এ হাদীছের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘যখন হৃদয় প্রবৃত্তির কাছে বন্দি হয়ে যায় এবং এর ভেতর থেকে আনুগত্য ও নেকীর প্রতি অনুরাগ বিলীন হয়ে যায়, তখন ঈমানের আলো সেখান থেকে সরে যায়। যেমন উপুড় হয়ে থাকা একটি পাত্র থেকে পানি গড়িয়ে বেরিয়ে যায়’।[9]

আর যে হৃদয় সত্য থেকে বিমুখ হয়ে যায়, এরূপ হৃদয়ের অধিকারীকে তুমি নৈতিকতার আদর্শ থেকে বিচ্যুত অবস্থায় পাবে।
সে আর ভালোকে ভালো মনে করতে পারে না, মন্দকে মন্দ হিসেবে চিনতেও পারে না। তার কলুষিত হৃদয় যার দিকে তাকে টেনে নেয়, সে সেদিকেই যায়। তখন তার বিবেক আর তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন ফেতনার বিরুদ্ধে এক অটল প্রাচীর ও নিরাপত্তার দরজা। একটি বর্ণনায় এসেছে, যখন উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু ফেতনার সংবাদ শুনলেন, তিনি সঙ্গে সঙ্গেই হাত তুলে দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ! যেন কোনো ফেতনা আমার ওপর আপতিত না হয়। তখন হুযায়ফা রাযিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে আশ্বস্ত করে বললেন, ভয় পাবেন না। আপনার কোনো সমস্যা হবে না।[10]

হুযায়ফা রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে আশ্বস্ত করার কারণ হলো উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু তখনও বুঝতে পারেননি যে, তিনি নিজেই সেই শক্ত দরজা, যা ভেঙে গেলে সমাজে ফেতনা ছড়িয়ে পড়বে। হুযায়ফা রাযিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, আপনার ও সেই ফেতনার মাঝে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে আর খুব শীঘ্রই সেই দরজা ভেঙে ফেলা হবে। উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞেস করলেন, খুলে ফেলা হবে নাকি ভেঙ্গে ফেলা হবে?’ আমি বললাম, ‘না, সেটি ভেঙে ফেলা হবে। আর জেনে রাখুন! সেই দরজাটি হলেন একজন মানুষ, যাকে হয় হত্যা করা হবে, অথবা তিনি মৃত্যুবরণ করবেন।

হুযায়ফা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে জানিয়ে দিলাম যে, এ কথা আমি কোনো অনুমান বা কল্পনার ভিত্তিতে বলিনি, কোনো লেখকের কল্পিত গল্প থেকেও নয়, গবেষকের ইজতিহাদ থেকেও নয়; বরং এটি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হুবহু হাদীছ, যা সত্য ও প্রমাণিত বাণী।[11]

এর অর্থ হলো ইসলাম ও ফেতনার মাঝে যে একমাত্র প্রাচীর ও প্রতিবন্ধক ছিল, তা ছিলেন উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু। যতদিন তিনি জীবিত ছিলেন, ততদিন ফেতনা উম্মাহর ভেতর প্রবেশ করতে পারেনি। কিন্তু যখন তিনি শাহাদাত বরণ করলেন, তখন সেই শক্ত দরজা ভেঙে গেল।[12]

এই কারণেই হুযায়ফা রাযিয়াল্লাহু আনহু দরজাটিকে ‘খোলা হবে’ বলেননি, বরং ‘ভেঙে ফেলা হবে’ বলেছেন। কারণ কোনো দরজা যদি খোলা হয়, তবে পুনরায় বন্ধ করার সুযোগ থাকে; কিন্তু যে দরজা ভেঙে যায়, সেটা আর পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয় না।[13]

ছাহাবীদের অনেকেই জানতেন যে, উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন ইসলাম ও ফেতনার মাঝখানের সেই দৃঢ় দরজা। একবার উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু আবূ যার রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর হাত ধরে টেনে নিলেন। উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর স্বভাব ছিল কঠোর, তাই আবূ যার রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘হে ফেতনার তালা! আমার হাত ছেড়ে দিন’। উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞেস করলেন, ‘ফেতনার তালা বলতে কী বুঝালে?’ তখন আবূ যার রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘একদিন আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়েছিলাম। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসেছিলেন এবং তাঁর চারপাশে অনেক লোক বসা ছিলেন। আমি গিয়ে সবার পেছনে বসলাম। তখন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যতদিন পর্যন্ত এই ব্যক্তি (উমার) তোমাদের মধ্যে থাকবে, ততদিন ফেতনা তোমাদেরকে স্পর্শ করতে পারবে না’।[14]

আরেক ছাহাবী উছমান ইবনু মাযউন রাযিয়াল্লাহু আনহু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে সম্বোধন করে বলেছিলেন, হে ফেতনা বন্ধের দেয়াল![15] এসব কথা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। কারণ উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে শহীদ করার পরই ফেতনার দরজা উন্মুক্ত হয়ে যায়। চারদিকে ফেতনার আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং ফেতনা থেকে সাবধান থাকো। কেননা এটি হৃদয়কে কলুষিত করে এবং এর ধ্বংস ডেকে আনে। পর্যায়ক্রমে হৃদয়ে ফেতনা পতিত হতে থাকে। হৃদয় যদি প্রথমটিকে গ্রহণ করে, তবে পরেরটি হৃদয়ে এসে বাসা বাঁধে, এ ধারা অব্যাহত থাকে যতক্ষণ না হৃদয় কালো অন্ধকারে ছেয়ে যায়।

পাপ ও অবাধ্যতা হলো অন্যতম বড় ফেতনা। আর এই ফেতনা অল্প অল্প করে হৃদয়ে প্রবেশ করতে থাকে। হে মুমিন ভাই! মানুষের হৃদয়ে যখন পাপ প্রবেশ করে, তখন সে অন্তরে সংকীর্ণতা অনুভব করে। তারপর সে অন্য পাপে জড়িয়ে যায় এবং প্রথম পাপের কথা ভুলে যায়। এক সময় সে ধারাবাহিকভাবে পাপে জড়াতে থাকে। পাপ করা এবং ফেতনায় পড়া একে অপরের পথকে মসৃণ করে। তাদের একটি অপরটিকে বাস্তবায়নে আহ্বান জানায়।

হৃদয়ের ভালোমন্দ যাচাই করার মাপকাঠি হলো সে কতটুকু ভালোকে চিনতে পারে এবং মন্দকে অপছন্দ করতে পারে। কিছু মানুষ আছে যারা মন্দ কাজকে খুব কমই পরোয়া করে। চোখের সামনে অন্যায় হতে দেখলেও তাদের হৃদয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় না; বরং নিজেরাই সেই মন্দে লিপ্ত হয়, এমনকি অন্যকেও এতে লিপ্ত হতে আহ্বান জানায়। কালো ও পাপাসক্ত হৃদয়ের বৈশিষ্ট্য হলো সে কোনো মন্দকে মন্দ বলে মনে করে না। অথচ আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পুণ্য হচ্ছে উত্তম চরিত্র আর পাপ হলো যা তোমার অন্তরে খটকা সৃষ্টি করে এবং মানুষ জানুক তা তুমি অপছন্দ করো’।[16]

বর্তমান সমাজে মানুষের মধ্যে এমন অনেকে আছে, যাদের সামনে অন্যায় সংঘটিত হলেও তাদের হৃদয়ে মন্দ কাজের প্রতি কোনো ঘৃণা সৃষ্টি হয় না; বরং তাদের হৃদয় এসবের নির্যাস পান করে এবং তারা এতে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে যায় যে, তাদের হৃদয় মৃত হয়ে যায়। ফলে তারা আর মন্দ কাজকে মন্দ মনে করে না; তবে তারা ব্যতীত, যাদের প্রতি আল্লাহ দয়া করেছেন আর এদের সংখ্যা খুবই অল্প।

যদি ব্যক্তি তার হৃদয়ে কতটুকু ভালো আছে আর কতটুকু মন্দ আছে তা যাচাই করতে চায়, তবে আল্লাহর কোনো বিধানের সীমালঙ্ঘন করলে কিংবা কোনো ফরয কাজ বর্জন করলে তার মনের অবস্থা কেমন হয় তা তার পরখ করে দেখা উচিত এবং একইভাবে যদি সে এমন কোনো মন্দ কাজ দেখে, যা সে প্রতিকার করতে অক্ষম, এমন সময় তার হৃদয় কতটুকু অস্থির হয়, সেটাও তার পরীক্ষা করে দেখা উচিত। কোনো বান্দা যদি হাত দিয়ে মন্দকে পরিবর্তন করতে না পারে এবং জিহ্বা দিয়েও যদি উক্ত কাজের নিন্দা করা তার পক্ষে অসম্ভব হয়, তবে কমপক্ষে হৃদয়ের মাধ্যমে সেটাকে তার অপছন্দ ও ঘৃণা করা উচিত। কারণ মন্দ কাজের জন্য দুঃখবোধ করা থেকে একজন মুমিন কোনোভাবেই অব্যাহতি পায় না।[17]

নিশ্চয়ই অনেক মন্দ কাজ সংঘটিত হয় আর মুসলিমরা তা দেখে; কিন্তু তারা তা নিষেধ করে না, এমনকি তাদের হৃদয়ে কোনো প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি হয় না। ফলে দেখা যায়, তারা না দুঃখিত হয়, না চিন্তিত হয়; বরং তারা হাসে, আনন্দ করে, খায়, পান করে এবং স্বাভাবিকভাবে এসব পাপের সাথে মিশে যায়। তবে কোথায় সেই হৃদয়ের প্রতিবাদ, যা না থাকলে একটি সরিষা দানার সমপরিমাণও ঈমান অবশিষ্ট থাকে না? সুফিয়ান ছাওরী রাহিমাহুল্লাহ একবার বলেছিলেন, ‘আমি যখন কোনো মন্দ কাজ দেখি; কিন্তু সে বিষয়ে কথা বলি না, তখন আমি (দুঃখ ও কষ্টের যন্ত্রণায়) রক্তবর্ণ প্রস্রাব করি!’[18] তাঁর (সুফিয়ান ছাওরী রাহিমাহুল্লাহ) হৃদয়ে মন্দ কাজের প্রতি ঘৃণা এতটাই প্রবল ছিল এবং তাতে তিনি এতটাই মনোযোগী ছিলেন যে, তাঁর খাওয়াদাওয়া, ঘুমানো ও উঠাবসা সর্বাবস্থায় সেই কষ্ট তার সঙ্গী ছিল। এমনকি দুঃখ-কষ্ট ও চিন্তার তীব্রতায় তিনি রক্তবর্ণ প্রস্রাব করতেন।

হাদীছে যে কালো হৃদয়ের কথা বলা হয়েছে, সেই কালো হৃদয় বলতে এমন হৃদয়কে বুঝানো হয়েছে, যে হৃদয় না ভালোকে গ্রহণ করবে, না মন্দকে অপছন্দ করবে। নিম্নোক্ত হাদীছে এই অর্থকে স্পষ্ট করা হয়েছে, ‘যখন মানুষ ভালোকে ভালো এবং মন্দকে মন্দ বলা বন্ধ করে দেবে, তখন তাদের উপর খারাপ লোকদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। এ সময় তাদের সৎ লোকেরা প্রার্থনা করবে, কিন্তু তাদের প্রার্থনা কবুল হবে না’।[19] এখানে মন্দকে অপছন্দ করার ধরন নির্দিষ্ট করা হয়নি, যা প্রমাণ করে যে, মন্দকে অন্তত অন্তরে ঘৃণা করা ঈমানের সবচেয়ে নিম্নতম স্তর। আমরা কি এতটুকুও করতে পারি না?

আসুন! হে আমার প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা! আমরা হৃদয়কে সজাগ রাখি, হৃদয়কে সংশোধন করি, ফেতনা ও পাপের ক্ষেত্রে সতর্ক হই, মন্দ দেখলে অন্তত অন্তরে ঘৃণা করি। কারণ পাপ ও ফেতনার কারণে হৃদয়ের মৃত্যু ঘটে। ফেতনায় জড়িয়ে গেলে আত্মা নষ্ট হয়ে যায় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি ধ্বংসের সম্মুখীন হয়। আমরা যেন ওইভাবে আমাদের রবের আদেশ পালন করতে পারি, যেভাবে তিনি আমাদের আদেশ করেছেন। ফেতনার ঢেউ থেকে বাঁচতে আমরা জ্ঞান, ঈমান ও তাক্বওয়া বাড়াতে সচেষ্ট থাকি। আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দিন- আমীন!

 মুহাম্মদ মুস্তফা কামাল

প্রভাষক (আরবী), বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বরিশাল।


[1]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৪।

[2]. ইবনু মাজাহ, হা/৩৬৬৬; আহমাদ, হা/১৭৫৯৮।

[3]. ইমাম নববী, শারহু মুসলিম, ২/১৭২।

[4]. প্রাগুক্ত।

[5]. আল-মুফহিম লিমা আশকালা মিন তালখীছে কিতাবে মুসলিম, ১/৩৫৯।

[6]. ইমাম নববী, শারহু মুসলিম, ২/১৭২।

[7]. আল-মুফহিম লিমা আশকালা মিন তালখীছে কিতাবে মুসলিম, ১/৩৫৯।

[8]. প্রাগুক্ত, ১/৩৬০।

[9]. ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, ৩/১৮৬।

[10]. মূসা শাহিন লাশীন, ফাতহুল মুনঈম শারহে ছহীহ মুসলিম, ১/৪৫৯।

[11]. শারহু মুসলিম, ২/১৭৪।

[12]. প্রাগুক্ত।

[13]. আল-মুফহিম লিমা আশকালা মিন তালখীছে কিতাবে মুসলিম, ১/৩৬১।

[14]. মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে আদম ইথুওপী, আল বাহরুল মুহীত্ব আছ ছাজ্জাজ ফী শারহি ছহীহিল ইমাম মুসলিম ইবনিল হাজ্জাজ, ৪/১২৮।

[15]. ইবনে হাজার আসক্বালানী, ফাতহুল বারী, ৬/৭০১।

[16]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৫৩; তিরমিযী, হা/২৩৮৯।

[17]. ছহীহ মুসলিম, হা/৪৯; নাসাঈ, হা/৫০০৮।

[18]. সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/২৪৩-২৫৯।

[19]. আহমাদ, হা/২৩৩৭৫; তিরমিযী, হা/২১৬৯, ‘হাসান’।

Magazine