কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

সফলতা লাভে জিহ্বা সংরক্ষণের ভূমিকা

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْجَنَّةَ.

সরল অনুবাদ : সাহল ইবনু সা‘দ রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি উভয় চোয়ালের মধ্যভাগ (জিহ্বা) এবং দুই রানের মধ্যভাগ (লজ্জাস্থান) হেফাযতের দায়িত্ব গ্রহণ করবে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশের দায়িত্ব গ্রহণ করব’।[1]

ব্যাখ্যা : এই হাদীছে জিহ্বা ও গোপনাঙ্গের অপব্যবহারের পরিণাম সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এদু’টি শরীরের সবচেয়ে বিপজ্জনক অঙ্গগুলোর অন্যতম। দুই চোয়ালের মাঝের অঙ্গ হলো জিহ্বা এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী অঙ্গ হলো যৌনাঙ্গ। পুরুষ হোক বা নারী হোক যদি কেউ তার জিহ্বাকে হারাম কথাবার্তা এবং গোপনাঙ্গকে ব্যভিচার থেকে রক্ষা করে, তবে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জান্নাতের গ্যারান্টি দেন। অর্থাৎ জিহ্বা এবং গোপনাঙ্গ হেফাযতের পুরস্কার হলো জান্নাত।

আল্লাহ প্রদত্ত অনুগ্রহের মধ্যে অন্যতম হলো জিহ্বা। কথা বলা ও মনের ভাব প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম এই জিহ্বা। মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইন্দ্রিয় এটি। আল্লাহ বলেন, ‘আমি কি তাকে দু’টি চোখ, একটি জিহ্বা ও দুটি ঠোঁট প্রদান করিনি? (আল-বালাদ, ৯০/৮-৯)। আমাদের অন্তরে যে কল্পনার উদ্রেক হয়, তার প্রকাশ এর মাধ্যমে হয়। অতএব জিহ্বা যেমন মানুষের কল্যাণ লাভের মাধ্যম, তেমনি তার অকল্যাণের উৎস। সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ ও কল্যাণ-অকল্যাণের পার্থক্য করা জিহ্বা ব্যতীত সম্ভব নয়।

জিহ্বা অন্তরের মুখপাত্র ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রতিনিধি। অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তার নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণসহ সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তার নিকট দায়বদ্ধ থাকে। জিহ্বার সংশোধনে তারা সংশোধিত আর তার কলুষতায় তারা কলুষিত হয়। আবূ সাইদ খুদরী রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীছে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন আদম সন্তান সকাল করে, তখন তার সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জিহ্বার নিকট বিনীত হয়ে বলে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। আমরা তোমার মাধ্যমে পরিচালিত হই। যদি তুমি সোজা থাক, তবে আমরাও সোজা থাকি। আর যদি তুমি বক্র হও, তবে আমরাও বক্র হয়ে যাই’।[2] অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সক্ষমতা ও অক্ষমতার উপর জিহ্বা প্রভাব বিস্তার করে। অবাধ্যতা, সীমালঙ্ঘন, ধ্বংসযজ্ঞ ও সীমা অতিক্রমের ক্ষেত্রে জিহ্বার ব্যাপক বিধ্বংসী প্রভাব রয়েছে। মালেক ইবনু দীনার রহিমাহুল্লাহ বলেন, যখন তুমি হৃদয়ে কঠোরতা, শরীরে অক্ষমতা এবং জীবিকায় সংকীর্ণতা দেখবে, তখন তুমি মনে করবে যে, তুমি এমন সব কথা বল, যার কোনো অর্থ নেই।[3]

সংঘটিত যে কোনো অবাধ্যতায় জিহ্বা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। অতএব, যে এক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শন করবে, এর ফলাফলকে গুরুত্বহীন মনে করবে, যা ইচ্ছে তাই বলবে, বেপরোয় কথা বলবে; এর মাধ্যমে তার পাপ ও পদস্খলনের পথ উন্মুক্ত হয়ে যাবে। এর ক্ষতি থেকে সে ততক্ষণ পর্যন্ত মুক্তি পাবে না, যতক্ষণ না সে শারঈ বাধ্যবাধকতার জালে একে আটকাবে। সুতরাং কিছু বলার পূর্বে প্রত্যেককে ভেবে নিতে হবে। যদি সেখানে কল্যাণ দেখা যায়, তবে কথা বলবে আর যদি অকল্যাণ দেখা যায়, তবে চুপ থাকবে। আবূ হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীছে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে, সে যেন কল্যাণকর কথা বলে অথবা চুপ থাকে’।[4]

জিহ্বার বিচরণক্ষেত্রের কোনো সীমানা নেই। এর রাজত্ব সর্বত্র বিরাজমান। এর ধ্বংস ক্ষমতা সুদূরপ্রসারী। তাই এই উম্মতের আলেম ও সৎকর্মপরায়ণশীলগণ জিহ্বার পরিণাম সম্পর্কে সর্বদা সতর্ক করেছেন। এর ধ্বংসাত্মক ক্ষেত্র সম্পর্কে ভীত ও সন্ত্রস্ত থেকেছেন। আবূ বকর রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এটি আমাকে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে বাধ্য করে।[5] ইবনু মাসঊদ রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি ছাফা পাহাড়ে দাঁড়িয়ে তালবিয়া পড়তে পড়তে বললেন, ‘তোমরা অবশ্যই জিহ্বা সম্পর্কে সতর্ক থাকো। ভালো কথা বলতে থাকো সেটা তোমাদের জন্য গনীমত হিসেবে গণ্য হবে। অশ্লীল বলা থেকে বিরত থাকো, তবে অনুশোচনা থেকে নিরাপত্তা লাভ করবে’।[6] উমার ইবনু আব্দিল আযীয রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, সকল রহস্য গচ্ছিত রাখার উৎস হচ্ছে হৃদয়, ঠোঁট হলো এর তালা এবং জিহ্বা হলো এসকল রহস্য উন্মোচনের চাবি’।[7]

জিহ্বা অপব্যবহারের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। এটি সকল অনিষ্টের মূল। সকল পাপের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে এটি। বিচক্ষণতা ও নির্বুদ্ধিতা প্রকাশের মাপকাঠি এটি। সুফিয়ান ইবনু আব্দুল্লাহ রহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি একদিন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যে জিনিসগুলো আপনি আমার জন্য ভয়ের বস্তু বলে মনে করেন, তার মধ্যে অধিক ভয়ংকর কোন জিনিস? সুফিয়ান রহিমাহুল্লাহ বলেন, এটা শুনে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জিহ্বা ধরে বললেন, এটা।[8] এর অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার জীবনকে যে কোনো সময় বিপন্ন করে তুলতে পারে। অত্যন্ত নরম কোষে গঠিত এই ইন্দ্রিয়ের সংযত ব্যবহার মানুষকে পৌঁছে দিতে পারে সাফল্যের শীর্ষ চূড়ায়। কুরআন তেলাওয়াত, আল্লাহর যিকির, তাসবীহ পাঠ ইত্যাদির মধ্যে একে সীমিত রাখা জ্ঞানীদের কাজ। কারণ তখন স্মৃতিতে কেবল আল্লাহ তাআলার যিকির বিদ্যমান থাকে। আব্দুল্লাহ ইবনু বিশর রহিমাহুল্লাহ বর্ণিত হাদীছে এসেছে। তিনি বলেছেন, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার নিকট শরীআতের বিষয় বেশি হয়ে গেছে। অতএব, আপনি আমাকে এমন আমল সম্পর্কে বলুন যা আমি আঁকড়ে ধরতে পারি। তখন আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমার জিহ্বাকে সর্বদা আল্লাহর যিকিরে সিক্ত রাখো’।[9]

মানুয়ের উচ্চারিত শব্দের প্রভাব অত্যন্ত ভয়বহ। এর উপরেই তার সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ভর করে। ইহকালীন জীবনে সুখ ও পরকালীন জীবনে শান্তি এর উপর ভিত্তি করে রচিত হয়। এর আলোকে আল্লাহ তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। তাইতো এর সংরক্ষণের জন্য সদাপ্রস্তুত ফেরেশতামণ্ডলী রেখেছেন। মানুষ যখনই কোনো বাক্য উচ্চারণ করে, তখনই তা সংরক্ষণের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে সদাপ্রস্তুত ফেরেশতামণ্ডলী রয়েছেন (ক্বাফ, ৫০/১৮)

জিহ্বার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পাপ সংঘটিত হয়। এর পাপ থেকে রক্ষা পেতে মানুষকে কঠিনভাবে সংযমের কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে। একান্তই কঠিন নির্যাতনের শিকার না হওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তি কারও সমালোচনায় লিপ্ত হতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মন্দ বিষয়ের প্রকাশ মোটেই পছন্দ করেন না তবে কোনো ব্যক্তি নির্যাতিত হলে সেটা ভিন্ন কথা (আন-নিসা, ৪/১৪৮)। অর্থাৎ কেবল নির্যাতিত ব্যক্তিই কষ্টের কথা নিষ্কৃতি প্রাপ্তি কিংবা সত্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে অন্যকে অবহিত করতে পারে।

একজন মুসলিমের জীবন, সম্পদ ও সম্মান অপর মুসলিমের নিকট অত্যন্ত পবিত্র। কারও জীবন, সম্পদ ও ইজ্জত যেন বিপন্ন না হয়, সে সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বনে শরীআত বিশেষ তাগিদ দিয়েছে। কোনো ব্যক্তির চরিত্র, সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে কথা বলা, তার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হওয়া, হিংসা বা শত্রুতাবশত তার দোষ-ত্রুটি খোঁজার চেষ্টা করা সম্পূর্ণ নিষেধ। তিনি বলেছেন, ‘তোমার যে বিষয়ের জ্ঞান নাই সে সম্পর্কে জানার চেষ্টা করো না। নিশ্চয় শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তরের পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে’ (আল-ইসরা, ১৭/৩৬)

ধারণাপ্রসূত তথ্যের উপর ভিত্তি করে কারও সমালোচনা বা মন্তব্য করা যাবে না। এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার পরিণাম খুবই ভয়াবহ। আল্লাহ তাআলা এই ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক ধারণা করা থেকে বিরত থাকো; কেননা কতক ধারণার কারণে পাপ হয়’ (আল-হুজুরাত, ৪৯/১২)। কারও সম্পর্কে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মুমিন নারী-পুরুষকে এমন অভিযোগে অভিযুক্ত করে কষ্ট দেয় যার সাথে সে সম্পৃক্ত নয় তবে তারা মিথ্যা অপবাদ দিল এবং সুষ্পষ্ট পাপ সংঘটিত করল’ (আল-আহযাব, ৩৩/৫৮)

একজন মুমিনের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ, চিন্তাভাবনা ও কর্মপন্থা অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত ও সুপরিকল্পিত হয়। স্বেচ্ছাচারিতা কিংবা প্রবৃত্তির অনুসরণ তার জন্য শোভা পায় না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের উপর আল্লাহর পক্ষ হতে নিযুক্ত সংরক্ষক ফেরেশতা রয়েছে। তারা হলেন সম্মানিত লেখকদ্বয়। তোমরা যা কর তা সম্পর্কে তারা সম্যক অবহিত’ (আল-ইনফিত্বার, ৮২/১০-১২)

গীবত, চোগলখোরি, পরনিন্দা, পরচর্চা বর্তমান সমাজের অতি পরিচিত চিত্র। পারিবারিক জীবনে, কর্মক্ষেত্রে, চায়ের দোকানে, বিনোদন স্পটে এর ব্যাপকতা লক্ষণীয়। গীবত, পরনিন্দা ও পরচর্চা চলতে থাকে। কিন্তু এর পরিণাম সম্পর্কে খুব কম মানুষই সতর্কতা অবলম্বন করে। আবূ হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীছে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মানুষ আল্লাহর অসন্তুষ্টির এমন কথা বলে, যার পরিণাম সমর্কে সে মোটেও ভাবে না। অথচ এর মাধ্যমে আল্লাহ তাকে জাহান্নামের তলদেশে পৌঁছিয়ে দেন’।[10] কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে মন্তব্য করা খুব সহজ, তবে এটা কতটা সঠিক বা কতটুকু যৌক্তিক সে ভাবনা থেকে মুখ ফিরানোর সুযোগ নেই। অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কোন জিনিস অধিকহারে মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে? তিনি উত্তরে বলেন, ‘মুখ ও লজ্জাস্থান’।[11]

জিহ্বা দ্বারা উচ্চারিত সবকিছুই ফেরেশতারা সংরক্ষণ করে রাখেন। কিয়ামতের দিন এগুলোর হিসাব দিতে হবে। সেদিন জিহ্বা, হাত-পাসহ সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সাক্ষ্য দেবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যেদিন তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে তাদের জিহ্বা, তাদের হাত ও পা সাক্ষ্য দেবে’ (আন-নূর, ২৪/২৪)

মানুষকে আনন্দ দেওয়ার উদ্দেশ্যে কৌতুক, হাসির গল্প ইত্যাদি অনর্থক কথা বলার অনুমোদন ইসলাম করে না। আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরীদ করে, আর তারা সেগুলোকে হাসিঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি’ (লুক্বমান, ৩১/৬)। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ঐ ব্যক্তির জন্য ধ্বংস যে শুধু এজন্য কথা বলে যে, মানুষকে হাসাবে। ফলে সে মিথ্যা কথা বলে। তার জন্য শুধু ধ্বংস আর ধ্বংস’।[12]

জিহ্বার ভয়াবহ প্রভাবের অন্যতম দিক হলো মানুষের সকল সৎ আমল ধ্বংস করে দেওয়া। মুআয ইবনু জাবাল রযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীছে তা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে। মুআয ইবনু জাবাল রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি ও জান্নাত প্রাপ্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে ফরয ও নফল ইবাদত যথাযথভাবে পালনের কথা বললেন। তিনি আরও বললেন, ইসলামের স্তম্ভ হলো ছালাত এবং একে গতিশীল রাখার উপায় হলো জিহাদ। কিন্তু জিহ্বার অপব্যবহারের কারণে উল্লিখিত সকল আমল নষ্ট হয়ে যাবে বলে তিনি মুআযকে কঠিনভাবে সতর্ক করেন। কারণ জিহ্বার উপার্জিত অপকর্মই সকল সৎ ইবাদত ধ্বংসের মূল।[13]

সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের উচিত, কথা বলার ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া। যাবতীয় পাপের অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিনয়ের সাথে আল্লাহর নিকট জিহ্বার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। আবূ আহমাদ শাকাল ইবনু হুমাইদ রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে একটি দু‘আ শিক্ষা দিন, তিনি আমাকে এই দু‘আ পড়তে বলেন, اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِى وَمِنْ شَرِّ بَصَرِى وَمِنْ شَرِّ لِسَانِى وَمِنْ شَرِّ قَلْبِى وَمِنْ شَرِّ مَنِيِّى ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কানের অনিষ্টতা, চোখের কুদৃষ্টি, জিহ্বার কুবাক্য, অন্তরের কপটতা ও কামনার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই’।[14] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সবাইকে বোঝার ও আমল করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

মুহাম্মদ মুস্তফা কামাল

প্রভাষক (আরবি), বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, বরিশাল।


[1]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৪৭৪।

[2]. তিরমিযী, হা/২৪০৭, হাসান।

[3]. ফায়যুল ক্বাদীর (দারুল কিতাব আল-ইলমিয়্যাহ, লেবানন : প্রথম প্রকাশ- ১৪১৫ হি.), ১/৩৬৯।

[4]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৪৭৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৪৭।

[5]. সিলসিলা ছহীহা, পৃ. ৫৩৫; মুসনাদে বাযযার, পৃ. ৮৪।

[6]. ত্বাবারানী, হা/১০৪৪৬; বায়হাক্বী, শুআবুল ঈমান, পৃ. ৪৯৩৩।

[7]. মাওয়ারদী, আদাবুদ্দুনয়া, পৃ. ৩০৮।

[8]. তিরমিযী, হা/২৪১০, হাদীছ ছহীহ।

[9]. মুসনাদে আহমদ, হা/১৭৬৮০; তিরমিযী, হা/৩৩৭৫, হাদীছ ছহীহ।

[10]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৪৭৮।

[11]. তিরমিযী, হা/২০০৪, হাসান।

[12]. আবূ দাঊদ, হা/৪৯৯০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৬৭, হাসান।

[13]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২২০১৬ (সংক্ষেপিত)।

[14]. আবূ দাঊদ, হা/১৫৫১, হাদীছ ছহীহ।

Magazine