ভূমিকা: মানব ইতিহাসে প্রতিটি সভ্যতার মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল শান্তি ও নিরাপত্তা। অস্থিরতা, সংঘাত এবং অনিশ্চয়তা যখন বিশ্বজুড়ে এক নিত্যনৈমিত্তিক বাস্তবতা, তখন শান্তির প্রকৃত ভিত্তি খুঁজে বের করা আমাদের জন্য সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। ইসলাম মানবজাতির জন্য এক পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে ব্যক্তিগত আত্মশুদ্ধি থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার এক সুদূরপ্রসারী পথনির্দেশনা প্রদান করে।
ইসলামের দৃষ্টিতে শান্তি ও নিরাপত্তা: ‘ইসলাম’ শব্দটির অর্থ মেনে নেওয়া, আত্মসমর্পণ করা, অনুগত হওয়া। শব্দটি সালাম মূলধাতু থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ শান্তি। আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করার মাধ্যমে অর্জিত হয় অন্তরের প্রকৃত শান্তি, যা পরবর্তীতে বৃহত্তর সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শান্তির উৎস হয়ে উঠে। কুরআন ও সুন্নাহর পাতায় পাতায় শান্তি, ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার গুরুত্ব প্রতিধ্বনিত হয়েছে। যেমন—
১. তাওহীদ: ইসলামের মূলভিত্তি তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ব। এই বিশ্বাস মানুষকে সকল প্রকার মানবিক দাসত্ব থেকে মুক্ত করে এবং একমাত্র আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হতে শেখায়। এটি ক্ষমতার লোভ, ধ্বংসাত্মক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বিভেদমূলক চিন্তাভাবনা থেকে মানুষকে দূরে রাখে, যা সাধারণত সংঘাতের প্রধান উৎস। যখন সবাই এক সত্তার উপাসনা করে, তখন পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষের ভিত্তি দুর্বল হয়ে যায়। এ জন্য তাওহীদ হলো ঐক্যের মূল ও সংঘাতের নিরসনকারী। মহান আল্লাহ বলেন,شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ ‘আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি ছাড়া প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই। আর ফেরেশতাগণ এবং জ্ঞানীরাও। তিনি ন্যায়-নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (আলে ইমরান, ৩/১৮)।
২. আদল বা ন্যায়বিচার: ইসলামে ন্যায়বিচারকে শান্তির অপরিহার্য স্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ন্যায়বিচারবিহীন সমাজে শান্তি একটি মরীচিকা মাত্র। আদল প্রতিষ্ঠা যুলম-নির্যাতন বন্ধ করে এবং সকল স্তরে স্থিতিশীলতা আনয়ন করে। আদল হচ্ছে ন্যায়বিচারের আলোকবর্তিকা। মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ لِلَّهِ وَلَوْ عَلَىٰ أَنفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায়বিচারের সাক্ষ্যদানে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত হও, যদিও তা তোমাদের নিজেদের বা পিতামাতা ও নিকটাত্মীয়ের বিরুদ্ধে যায়’ (আন-নিসা, ৪/১৩৫)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,إِنَّ الْمُقْسِطِينَ عِنْدَ اللَّهِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ عَنْ يَمِينِ الرَّحْمَنِ عَزَّ وَجَلَّ، الَّذِينَ يَعْدِلُونَ فِي حُكْمِهِمْ وَأَهْلِيهِمْ وَمَا وَلُوا ‘নিশ্চয়ই ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিরা দয়াময় আল্লাহ তাআলার ডান পাশে নূরের মিম্বরের উপর থাকবেন। তারা সেসব লোক, যারা তাদের বিচারব্যবস্থায়, তাদের পরিবারে এবং যেসব বিষয়ে তাদের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে, সেগুলোতে ন্যায়সংগত আচরণ করেছে’।[1]
৩. রহমত: ইসলাম দয়া ও সহানুভূতির গুরুত্বকে উচ্চকিত করে। এই মানবিক মূল্যবোধগুলো সমাজে পারস্পরিক সম্পর্ককে মজবুত করে এবং সংঘাতের শিকড় উপড়ে ফেলে। এ জন্য দয়া ও সহানুভূতির বন্ধন অটুট রাখা প্রয়োজন। আল্লাহ ঘোষণা করেন, وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ ‘আর আমরা আপনাকে জগৎসমূহের জন্য শুধু রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি’ (আল-আম্বিয়া, ২১/১০৭)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি, ارْحَمُوا مَنْ فِي الْأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ ‘যারা পৃথিবীতে আছে তাদের প্রতি দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন’।[2]
৪. জান ও মালের নিরাপত্তা: ইসলামে মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়। একটি রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে, রাষ্ট্র তার সকল নাগরিকের জীবন, সম্পদ, সম্মান ও ধর্মীয় স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। আর এতেই জীবনের পবিত্রতা নিহিত। মহান আল্লাহর কঠোর হুঁশিয়ারি,مِنْ أَجْلِ ذَٰلِكَ كَتَبْنَا عَلَىٰ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنَّهُ مَن قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا ‘এ কারণেই বনী ইসরাঈলের জন্য আমরা এ বিধান দিলাম যে, যে ব্যক্তি প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া অন্য কোনো কারণে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করল। আর যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সমস্ত মানুষকে বাঁচাল’ (আল-মায়েদা, ৫/৩২)। বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘোষণা, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ, তোমাদের সম্মান তোমাদের উপর হারাম, তোমাদের এই নগরে, তোমাদের এই মাসে আজকের দিনটি যেমন হারাম’।[3]
নিরাপদ দেশ ও জাতির স্বপ্ন: ইসলামী শরীআহ, আইন ও নীতির মাধ্যমে একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র গঠনের এক সুসংহত রূপরেখা প্রদান করে—
ক. রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও সুশাসনের ভিত্তি:
শরীআহর প্রয়োগ: ইসলামী শরীআহ হলো আইন ও বিচার ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। এটি মানুষের জন্য সার্বজনীন কল্যাণ ও সুবিচার নিশ্চিত করে। শরীআহভিত্তিক শাসনব্যবস্থা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অবিচারকে কঠোরভাবে দমন করে, যা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং জনগণের আস্থা বৃদ্ধিতে অপরিহার্য। এজন্য বলা যায়, শরীআহর প্রয়োগই ন্যায়বিচারের চালিকাশক্তি। মহান আল্লাহর সুস্পষ্ট নির্দেশনা,وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ ‘যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান অনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই কাফের’ (আল-মায়েদা, ৫/৪৪)।
শূরা: ইসলামে পরামর্শের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণকে (শূরা) উৎসাহিত করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণের প্রতিনিধি বা জ্ঞানী ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ নেওয়া হলে তা অধিকতর গ্রহণযোগ্য হয় এবং জনগণের মধ্যে একাত্মতা ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। এ জন্য শূরা তথা পরামর্শভিত্তিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলা একান্ত জরুরী। আল্লাহর বাণী, وَأَمْرُهُمْ شُورَىٰ بَيْنَهُمْ ‘আর তাদের পারস্পরিক কার্যাবলি পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়’ (আশ-শূরা, ৪২/৩৮)।
ঐতিহাসিক বহু ঘটনা শূরার গুরুত্ব প্রমাণ করে। বদরের যুদ্ধ এর এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। যুদ্ধের পূর্বে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাহাবীদের সাথে পরামর্শ করেন যে, মুসলিম বাহিনী কোথায় অবস্থান করবে। প্রথমে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি স্থানে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ছাহাবী হুবাব ইবনুল মুনযির রাযিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এটি কি আল্লাহর নির্দেশ নাকি আপনার ব্যক্তিগত অভিমত ও যুদ্ধকৌশল? রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এটি আমার ব্যক্তিগত অভিমত ও যুদ্ধের কৌশল’। তখন হুবাব রাযিয়াল্লাহু আনহু পরামর্শ দেন যে, শত্রুদের পানির উৎস বন্ধ করার জন্য অন্য একটি স্থানে অবস্থান করা উচিত। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এই পরামর্শ গ্রহণ করেন এবং সেই অনুযায়ী মুসলিম বাহিনী তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে।[4] এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, সর্বশ্রেষ্ঠ নেতাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ করতেন এবং শ্রেষ্ঠ পরামর্শকে স্বাগত জানাতেন। এটি শুধু রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বেই নয়, বরং জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পরামর্শের গুরুত্বকে তুলে ধরে।
আর্থসামাজিক ন্যায়বিচার: যাকাত ও ছাদাক্বার মতো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাগুলো সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে এবং দারিদ্র্য হ্রাস করে। দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রায়শই সামাজিক অস্থিরতা ও অপরাধের জন্ম দেয়। ইসলাম এই বৈষম্য দূর করে একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের পথ দেখায় আর এটিই প্রকৃত বৈষম্যমুক্ত সমাজ। মহান আল্লাহর নির্দেশনা,خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا ‘তাদের সম্পদ থেকে ছাদাকা (যাকাত) গ্রহণ করুন, যা দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন ও পরিশুদ্ধ করবেন’ (আত-তাওবা, ৯/১০৩)।
ক্বরযেহাসানা: ইসলামী অর্থনীতিতে করযে হাসানা (উত্তম ঋণ) একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এটি সূদবিহীন ঋণ, যা অভাবী মানুষকে বিনা লাভে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করে। সূদভিত্তিক অর্থনীতি যেখানে ধনীকে আরও ধনী করে এবং গরীবকে ঋণের জালে আবদ্ধ করে, সেখানে করযে হাসানা বৈষম্য কমিয়ে সমাজের সকল স্তরে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সংহতি বৃদ্ধি করে। এটি এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে দাতা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দান করে এবং গ্রহীতা তার প্রয়োজন মেটানোর সুযোগ পায়, যা পারস্পরিক সহযোগিতা ও ভ্রাতৃত্বের জন্ম দেয়। এটি সূদের বিকল্প ও সামাজিক সংহতি। আল্লাহর বাণী,مَّن ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافًا كَثِيرَةً وَاللَّهُ يَقْبِضُ وَيَبْسُطُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ ‘কে সে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে? তাহলে তিনি তাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন। আর আল্লাহই সংকোচন ও প্রশস্ততা দান করেন। আর তাঁরই কাছে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে’ (আল-বাক্বারা, ২/২৪৫)। এই আয়াতটি উত্তম ঋণের প্রতি উৎসাহিত করে এবং এর ছওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি পাওয়ার কথা বলে।
খ. অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা:
দণ্ডবিধি বা হুদূদ অপরাধ দমনের প্রাচীর: ইসলামে সুনির্দিষ্ট কিছু অপরাধের জন্য কঠোর দণ্ডবিধি (হুদূদ) নির্ধারণ করা হয়েছে, যেমন– চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার ইত্যাদি। এই দণ্ডবিধিগুলো অপরাধ দমনে সহায়ক এবং সমাজে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখে। কারণ শাস্তির ভয় অপরাধ প্রবণতা কমায়।
আল্লাহর বিধান (চুরির শাস্তি): আল্লাহ তাআলা বলেন, وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوا أَيْدِيَهُمَا جَزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِّنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ ‘পুরুষ চোর ও নারী চোর, উভয়ের হাত কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ, আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (আল-মায়েদা, ৫/৩৮)।
জনগণের অংশগ্রহণ (আমর বিল মা‘রূফ ওয়া নাহী আনিল মুনকার): রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য শুধু সামরিক বা পুলিশি শক্তিই যথেষ্ট নয়, জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণও প্রয়োজন। ইসলাম নাগরিকদেরকে সৎকাজে আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধ করার মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার আহ্বান জানায়। আল্লাহর বাণী,كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ ‘তোমরাই সর্বোত্তম জাতি, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের আদেশ দেবে, মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করবে’ (আলে ইমরান, ৩/১১০)।
গ. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও পররাষ্ট্রনীতি:
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান: ইসলাম আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার নীতি অবলম্বন করে। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম সহযোগিতার সেতুবন্ধন ও বিশ্বশান্তির দিগন্ত। মহান আল্লাহর নির্দেশ, وَإِن جَنَحُوا لِلسَّلْمِ فَاجْنَحْ لَهَا وَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ‘আর যদি তারা সন্ধির দিকে ঝুঁকে, তাহলে আপনিও তার দিকে ঝুঁকে পড়ুন এবং আল্লাহর উপর ভরসা করুন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী’ (আল-আনফাল, ৮/৬১)।
চুক্তি বজায় রাখা: ইসলাম চুক্তি রক্ষা ও অঙ্গীকার পূরণের ওপর জোর দেয়। আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহ মেনে চলা রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করে, যা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অপরিহার্য। আল্লাহ তাআলা বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَوْفُوا بِالْعُقُودِ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করো’ (আল-মায়েদা, ৫/১)।
মানবতার সেবা: ইসলাম জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের কথা বলে। দুর্যোগ ও সংকটের সময় মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর উচিত অন্য রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করা, যা বিশ্বব্যাপী মানবিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে। এটিই ইসলামের বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের অনন্য দৃষ্টান্ত। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا، نَفَّسَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টসমূহের একটি কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তাআলা তার ক্বিয়ামতের দিনের কষ্টসমূহের একটি কষ্ট দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোনো নিঃস্ব ব্যক্তির উপর সহজতা আরোপ করবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখেরাতে তার জন্য সহজ করে দিবেন’।[5]
ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত ও বর্তমান প্রেক্ষাপট: ইসলামের ইতিহাসে মদীনা সনদ একটি অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত। এটি ছিল মহানবী a কর্তৃক প্রণীত একটি লিখিত সংবিধান, যা মদীনায় বসবাসকারী মুসলিম, ইয়াহূদী, পৌত্তলিক ও অন্যান্য গোত্রের মধ্যে একটি শান্তিপূর্ণ, বহুজাতিক ও সহনশীল সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই সনদ ধর্মীয় স্বাধীনতা, পারস্পরিক নিরাপত্তা এবং সকল নাগরিকের সমান অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়, যা সেই সময়কার বিশ্বের জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। ঐতিহাসিক উইলিয়াম মন্টগোমারি ওয়াটের (W. Montgomery Watt) মতো পশ্চিমা গবেষকদের লেখাতেও এই সনদের গুরুত্ব ও আধুনিক রাষ্ট্রকাঠামোর সাথে এর সাদৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে।
আধুনিক বিশ্বে যেখানে জাতিগত সংঘাত, সন্ত্রাসবাদ ও অর্থনৈতিক অসমতা শান্তির জন্য বড় হুমকি, সেখানে ইসলামের এই নীতিগুলো এক নতুন আশার আলো দেখায়। বিশেষ করে ফিলিস্তীনের জেরুযালেমের প্রতি উমার ইবনুল খাত্ত্বাব রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে তিনি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করেছিলেন, তা আধুনিক বিশ্বে সহাবস্থানের এক অনন্য উদাহরণ। মুসলিম দেশগুলো যদি কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে নিজেদের শাসনব্যবস্থা ও সামাজিক কাঠামো গড়ে তোলে, তাহলে তারা শুধু নিজেদের নিরাপত্তা নয়; বরং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায়ও এক অনুকরণীয় আদর্শ স্থাপন করতে পারে।
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান: শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার পথে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন- ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা, উগ্রবাদ ও বৈদেশিক হস্তক্ষেপ। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা প্রয়োজন। তাহলেই আমরা শান্তির পথে অবিচল যাত্রা অব্যাহত রাখতে পারব।
সঠিক জ্ঞান ও শিক্ষা: ইসলামের প্রকৃত ও উদার শিক্ষা প্রচার করা অত্যাবশ্যক। এ পথই আলোর পথ। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ ‘ইলম (জ্ঞান) অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয’।[6]
আন্তঃধর্মীয় সংলাপ: বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সংলাপ বৃদ্ধি করা অপরিহার্য। এটি ভুল বোঝাবুঝি দূর করে এবং সম্প্রীতি বাড়ায়। ইসলাম ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহনশীলতা ও ন্যায়সঙ্গত আচরণের নির্দেশ দেয়। কুরআনে আল্লাহর নির্দেশ,لَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ ‘যারা তোমাদের সাথে দ্বীনের বিষয়ে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করতে ও তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন’ (আল-মুমতাহিনা, ৬০/৮)। কুরআনে আল্লাহর আহ্বান,قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَىٰ كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ ‘বলুন, হে কিতাবধারীরা! তোমরা এমন এক কথার দিকে আসো, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে সমান’ (আলে ইমরান, ৩/৬৪)। এই আয়াতটি সংলাপ ও সাধারণ ভিত্তির উপর ঐক্যের আহ্বান জানায়।
শক্তিশালী ও ন্যায়পরায়ণ নেতৃত্ব: এমন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা উচিত, যারা ইসলামের নীতি অনুসারে ন্যায়বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বই একটি জাতিকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করতে পারে। এটি প্রতিটি মুসলিমের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে’।[7] এটি শাসক থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সবার দায়িত্বশীলতার গুরুত্ব তুলে ধরে। কুরআনে আল্লাহ নির্দেশ দিয়ে বলেন,إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُم بَيْنَ النَّاسِ أَن تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যেন আমানতসমূহ তার হক্বদারদের কাছে পৌঁছে দাও। আর যখন তোমরা মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে, তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করবে’ (আন-নিসা, ৪/৫৮)। এই আয়াতটি নেতৃত্বের জন্য ন্যায়বিচার ও আমানতদারিতার গুরুত্ব তুলে ধরে।
গণতন্ত্র নয়, ইসলামী খেলাফত: আধুনিক বিশ্বের প্রচলিত শাসনব্যবস্থা গণতন্ত্র বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে, শুধু ব্যক্তি ও সমাজের জন্যই নয়, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান করে। ইসলামী খেলাফত এমন একটি শাসনব্যবস্থা, যেখানে সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর এবং তাঁর আইন (শরীআহ) অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হয়। এটি শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি কার্যকরী মডেল হতে পারে, যা গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত এবং উত্তরণের একমাত্র সঠিক উপায়।
আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও শরীআহর বাস্তবায়ন: খেলাফতে আইন প্রণয়নের চূড়ান্ত ক্ষমতা মানুষের হাতে নয়, বরং আল্লাহর হাতে। কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী সকল আইন ও নীতিমালা তৈরি হয়। এটি স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অন্যায় আইন প্রণয়নকে প্রতিরোধ করে, যা প্রায়শই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেখা যায়। কুরআনের দলীল,إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ‘বিধান দেওয়া তো শুধু আল্লাহরই জন্য। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করবে না। এটাই সরল দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না’ (ইউসুফ, ১২/৪০)।
খলীফার দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতা: খলীফা (শাসক) জনগণের প্রতি এবং সর্বোপরি আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। তার মূল দায়িত্ব হলো শরীআহর আলোকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং তাদের অধিকার রক্ষা করা।
খলীফা উমার ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহু একবার বলেছিলেন, যদি ফোরাত নদীর তীরে একটি মেষ ছানা ক্ষুধায় মারা যায়, তবে আমি ভয় করি যে, মহান আল্লাহ আমাকে এজন্য জবাবদিহি করবেন।[8] এই উক্তি মুসলিম শাসকের চরম দায়িত্বশীলতার ইঙ্গিত দেয়। এটি দেখায় যে, একজন খলীফা নিজেকে কেবল মানুষের কাছে নয়; বরং মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার কাছেও জবাবদিহি করতে বাধ্য মনে করেন, যা তাকে সর্বোচ্চ সততা ও ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখতে উদ্বুদ্ধ করে।
উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি: খেলাফত একটি একক উম্মাহর ধারণাকে শক্তিশালী করে, যেখানে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভেদ গৌণ হয়ে পড়ে। এটি মুসলিম বিশ্বের বিভাজন দূর করে একটি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ সত্তা গঠনে সাহায্য করে, যা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক হুমকি মোকাবিলায় কার্যকর। কুরআনের আহ্বান, وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ‘আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (আলে ইমরান, ৩/১০৩)।
স্থায়িত্ব ও স্থিতিশীলতা: গণতন্ত্রে ঘনঘন সরকার পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা যেতে পারে। খেলাফত যদি শরীআহ অনুযায়ী পরিচালিত হয়, তবে এর একটি স্থিতিশীল কাঠামো থাকে, যা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং উন্নয়নের জন্য সহায়ক। এটি রাজনৈতিক কলহ ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হওয়ার প্রবণতা কমায়।
এককথায় ইসলামী খেলাফত একটি আদর্শিক মডেল, এর মৌলিক নীতিগুলো একটি স্থিতিশীল, ন্যায়পরায়ণ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
উপসংহার: ইসলামে একটি নিরাপদ দেশ ও জাতির স্বপ্ন নিছক কল্পনা নয়, বরং সুনির্দিষ্ট ইলাহী নীতি ও আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি বাস্তবসম্মত লক্ষ্য। তাওহীদ, ন্যায়বিচার, দয়া, মানবাধিকার ও সুশাসনের মতো মৌলিক ইসলামী নীতিগুলো কুরআন ও সুন্নাহর অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। ইসলামী খেলাফতের আদর্শিক মডেল, যা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব এবং ন্যায়বিচারকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়, তা একটি প্রকৃত শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে সহায়ক হতে পারে। যদি মুসলিম উম্মাহ এই নীতিগুলোকে সত্যিকার অর্থে ধারণ করে এবং প্রয়োগ করে; তবে তারা কেবল নিজেদের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য এক অনুকরণীয় আদর্শ স্থাপন করতে পারবে এবং শান্তির প্রকৃত ভিত্তি স্থাপন করতে সক্ষম হবে। একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য ইসলামের এই চিরন্তন শিক্ষাগুলোর দিকেই আমাদের ফিরে তাকাতে হবে। তাহলেই শান্তির পতাকা বাংলার আকাশে পতপত করে উড়বে, ইনশা-আল্লাহ!
আবূ লাবীবা মুহাম্মাদ মাকছুদ
খত্বীব, নওহাটা গরুহাট জামে মসজিদ, রাজশাহী।
[1]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮২৭।
[2]. তিরমিযী, হা/১৯২৪।
[3]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬৭৯।
[4]. সীরাত ইবনে হিশাম, ১/৬২৬-৬২৭।
[5]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৯৯।
[6]. ইবনু মাজাহ, হা/২২৪।
[7]. ছহীহ বুখারী, হা/৭১৩৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮২৯।
[8]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ, হা/৩৪৪৮৬।
