কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

প্রশ্ন (৪৪) : তাক্বলীদ করা কী সবার জন্য হারাম? এ ব্যাপারে সালাফদের বক্তব্য জানতে চাই।

উত্তর: তাক্বলীদ ও ইত্তেবা দুটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। তাক্বলীদ হলো- কোন শারঈ বিষয়ে কারো কথাকে বিনা দলীল-প্রমাণে চোখ বুজে গ্রহণ করা (জুরজানী, কিতাবুত তা‘রীফ, ৬৪ পৃ.)। ইত্তেবা হলো- বিশুদ্ধ দলীল অনুযায়ী রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর অনুসরণ করাকে ইত্তেবা বলা হয় (আল ক্বওলুল মুফীদ ‘শাওকানী’, ১৪ পৃ.)। তাক্বলীদ অর্থ অন্ধ অনুসরণ যা সবার জন্য হারাম। হোক না সে আলেম কিংবা সাধারণ কোনো ব্যক্তি। কেননা স্বর্ণ যুগ থেকে ৪র্থ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত কোনো মাযহাব ছিল না। তখন সাধারণ মানুষ, আলেম-উলামার কেউ তাক্বলীদ করেনি। চার মাযহাবের আবির্ভাব ঘটেছে তাবে-তাবেঈনদের পরে। শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহিমাহুল্লাহ বলেন, হিজরী ৪র্থ শতাব্দীর পূর্বে কোন মুসলিমরা নির্দিষ্টভাবে কোন একজন বিদ্বানের মাযহাবের তাক্বলীদের উপরে সংঘবদ্ধ ছিল না (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ, ১/১৫২-৫৩, ‘চতুর্থ শতাব্দী ও তার পরের লোকদের অবস্থা বর্ণনা’ অনুচ্ছেদ)। অত্র বিবরণে বুঝা যায়, ভারতীয় বিদ্বানদের নিকটেও ৪০০ হিজরীর পূর্বে কোন মাযহাব ছিল না। তাক্বলীদের ব্যাপারে সালাফদের বক্তব্য: ১. ইমাম আবূ হানিফা রহিমাহুল্লাহ বলেন, لا يحل لأحد أن يأخذ بقولنا ما لم يعلم من أين أخذناه ‘আমরা কোথা থেকে গ্রহণ করেছি, তা না জেনে আমাদের কথা গ্রহণ করা কারো জন্য বৈধ নয়’ (হাশিয়া ইবনু আবেদীন, ৬/২৯৩)। ‘যখন ছহীহ হাদীছ পাবে, জেনো সেটাই আমার মাযহাব’ (হাশিয়াহ ইবনে আবেদীন ১/৬৩)। ২. ইমাম শাফেঈ রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘রাসূলুললাহ ছা-এর প্রত্যেকটি হাদীছই আমার কথা, যদিও আমার নিকট থেকে তোমরা তা না শুনে থাক’ (ইবনু আবী হাতেম, পৃ. ৯৩)। ৩. ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘তুমি আমার তাক্বলীদ কর না এবং তাক্বলীদ কর না মালেক, শাফেঈ, আওযাঈ ও ছাওরীর। বরং তাঁরা যে উৎস হতে গ্রহণ করেছেন, সেখান থেকে তোমরাও গ্রহণ কর’ (ই‘লামুল মুওয়াক্কি‘ঈন, ২/৩০২)। ৪. ইমাম মালেক রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘আমি একজন মানুষ মাত্র। আমি ভুল করি, আবার ঠিকও করি। অতএব আমার সিদ্ধান্তগুলো তোমরা যাচাই কর। যেগুলো কুরআন ও সুন্নাহর অনুকূলে হবে সেগুলো গ্রহণ কর। আর যেগুলো কুরআন ও সুন্নাহর প্রতিকূলে হবে তা প্রত্যাখ্যান কর’ (ইমাম ইবনু হাযম, আল-ইহকাম ফী উছূলিল আহকাম, ৬/১৪৯)। এসকল বক্তব্য স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, তাক্বলীদ সালাফদের নিকট একটি গর্হিত কাজ ছিল।

প্রশ্নকারী : তাজবির উল হক

বাকলিয়া, চট্টগ্রাম।


Magazine