তুমি আমার স্বপ্ন। আমার জান্নাত। তুমি আল্লাহর দেওয়া বড় নেয়ামত। তোমায় পেয়ে আমরা গর্বিত। এই তো কদিন আগেও তুমি কিছুই ছিলে না। আজ দুনিয়ার আলোতে বিচরণ করছ। পিতা-মাতার মুখে হাসি ফুটিয়েছ। ধীরে ধীরে বড় হতে চলেছ। কিছুদিন পর কথা বলা শুরু করবে। বাবার দাড়ি ধরে খেলা করবে। বাবা বলে ডাক দিবে। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিবে। তোমার প্রথম বাক্যটি যেন হয় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’- তোমার আম্মু সে চেষ্টাই করে যাচ্ছে।
তুমি আমাদের প্রথম সন্তান। মেয়ে হয়ে জন্মেছ। এতে আমরা বেশি আনন্দিত। তোমাকে দ্বীন শিক্ষা দিতে পারলে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি আছে। তুমি আমাদের রিযিক্বের দ্বার উন্মুক্ত করে দিবে। তোমার বাবা এখনো ছাত্র। এতে কিছু আসে যায় না। তোমাকে পেয়ে আমরা সন্তুষ্ট। মহান রবের প্রতি কৃতজ্ঞ।
তুমি মেয়ে হয়েও অনেক কিছু করতে পারবে। তোমাকে নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি। দ্বীনী স্বপ্ন। তুমি সেটা পূরণ করতে সক্ষম হবে। এ আশাই রাখি। সুসন্তানরূপে গড়ে উঠবে। সে চেষ্টাও করি।
তোমার নাম রুফায়দা। এর অর্থ জানো? কেন রেখেছি এই নাম। অনেকে ভিন্ন নাম রাখতে চেয়েছিল। আমি রাখতে দেইনি। রুফায়দা নামে একজন মহিলা ছাহাবী ছিলেন। তিনি অনেক জনসেবামূলক কাজ করতেন। ডাক্তার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রিয় নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধাহত ছাহাবীদের তার তাঁবুতে পাঠিয়ে দিতেন। এই নামের এক অর্থ সাহায্যকারী। তিনি অনেক সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। আরেক অর্থ প্রতিনিধি। তিনি পুরুষের মতো সাহসী ভূমিকাও পালন করতেন। তুমিও এই ছাহাবীয়ার মতো হবে। তার নামের দ্বারা প্রভাবিত হবে। এটাই কামনা।
তোমার প্রতি বাবার ভালোবাসা অপরিসীম। কাগজে-কলমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এ ভালোবাসাটা তো স্বভাবগত। কলিজার সাথে মিশ্রিত। তোমার হক্ব আদায়ে আমরা সচেষ্ট। তবে একটা বিষয়ে আমি শঙ্কিত। মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা আল্লাহর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় কিনা। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহব্বতকেই সর্বদা প্রাধান্য দিতে হবে। নতুবা পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারব না। প্রিয় নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটাই বলেছেন। এই হাদীছ পড়ে আমি কেঁদেছি। অনেক কেঁদেছি। ভেবেছি ছাহাবায়ে কেরাম এসবের মায়া ত্যাগ করেছেন কীভাবে! তাই তো তারা হয়েছেন পৃথিবীর বুকে শ্রেষ্ঠ। আমরা আছি পিছিয়ে। বসে রইলাম হাত গুটিয়ে। আমরা আশা করি, তুমি আমাদের জন্য রবের অসন্তুষ্টির কারণ হবে না। বরং সবার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
শোনো রুফায়দা! এটা শেষ যামানা। চতুর্দিকে ফেতনা। এই ফেতনায় মেয়েরাই অগ্রগামী। তারাই সংখ্যায় বেশি জাহান্নামী। প্রিয় রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীছে তাই বলেছেন। তারা পোশাক পরেও উলঙ্গ। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এমন নারীদের মতো হবে না। বরং তুমি তাদের সংশোধনে কাজ করবে। তাদের সঠিক পথ দেখাবে। তুমি শ্রোতের বিপরীতে চলবে। তাদের সাথে গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে বেড়াবে না। তুমি আলেম-আলেমার সন্তান। অন্যদের মতো চলাটা তোমার জন্য শোভা পায় না। তুমি তো ছোট থেকেই বোরকা-হিজাব পরিধান করবে। ছালাত ও তেলাওয়াতে অভ্যস্ত হবে। আল-কুরআন হিফয করবে। বাবা-মায়ের চক্ষু শীতল করবে।
রুফায়দা! আম্মু! তোমার সুস্থতার জন্য দু‘আ করি। বাচ্চারা সহজে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। আল্লাহ তোমাকে অনেক ভালো রেখেছেন। আল-হামদুলিল্লাহ। তোমার আম্মুকে বলবে, ছোট থেকেই তোমাকে ঈমান শেখাতে। কারণ ঈমানই সবার আগে। তোমাকে আদব-আখলাক্ব সবই শেখাবে তোমার আম্মুই। বাবা হয়তো কর্মব্যস্ততার কারণে তোমাকে সময় দিতে পারবে না। তাই, তুমি তোমার আম্মুকে মেনে চলবে। তার কথামতো কাজ করবে। তোমার আম্মুই তোমার শিক্ষিকা।
তোমাকে নিয়ে মহান আল্লাহর সমীপে হৃদয়ের কিছু আকুতি পেশ করলাম মাত্র। আল্লাহ তাআলা আমাদের নিরাশ করবেন না, ইনশা-আল্লাহ।
এম কাউছার হামিদ
অধ্যয়নরত, কামিল, সরকারি মাদ্রাসা-ই আলিয়া, ঢাকা।