কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

রামাযানের প্রস্তুতি

post title will place here

আবির ও জামিল একই গ্রামে বাস করত। আবিরের বাবা তাকে বড় আলেম বানানোর ইচ্ছে নিয়ে আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রূপগঞ্জে ভর্তি করান, ফলে ছোটবেলাতেই আবিরকে গ্রাম ছাড়তে হয়। অন্যদিকে, জামিল গ্রামের স্কুলেই পড়াশোনা করে। আবির বছরে তিনবার বাড়ি এলেও কেবল তখনই তাদের দেখা হয়। এবার রামাযান উপলক্ষ্যে ছুটিতে বাড়ি ফিরে আবিরের সঙ্গে জামিলের সাক্ষাৎ হয়।

আবির: আস-সালামু আলাইকুম, বন্ধু! কেমন আছিস?

জামিল: ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আল-হামদুলিল্লাহ। তুই কেমন আছিস?

আবির: আল-হামদুলিল্লাহ। আমিও ভালো আছি। বন্ধু, সামনে রামাযান! তুই ছিয়াম রাখবি না?

জামিল: রাখব তো। কিন্তু ছিয়াম বলতে কি তুই রোযাকে বুঝিয়েছিস?

আবির: হ্যাঁ, ছিয়াম বলতে রোযাকে বুঝিয়েছি এবং ছিয়াম বলাই শ্রেয়।

জামিল: আবির, তুই তো মাদরাসায় পড়িস, আমাকে রামাযানের বিধিবিধান সম্পর্কে একটু জানাবি?

আবির: অবশ্যই! আমি তোকে রামাযানের আগের কিছু করণীয় এবং রামাযানের মধ্যবর্তী সময়গুলোর কিছু করণীয় বিষয়গুলো জানানোর জন্যই তো এসেছি। আমার উস্তায আব্দুল আলীম ইবনু কাওছার মাদানী হাফিযাহুল্লাহ, তিনি রামাযান মাস সম্পর্কে খুব সুন্দর একটা আলোচনা করেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছেন, রামাযানে প্রস্তুতিমূলক আমরা কী কী করব? সেগুলো তোকে বলি— (১) রামাযান মাস আসার আগেই রামাযান মাস পাওয়ার জন্য অধিকতর দু‘আ করতে হবে। (২) ক্বাযা ছিয়াম থাকলে রামাযান মাসের আগেই ক্বাযা আদায় করে নিতে হবে। (৩) লিখিত একটি কর্মসূচি তৈরি করতে হবে।

জামিল: লিখিত সূচি তৈরি করতে হবে?

আবির: আচ্ছা বন্ধু! একটু ধৈর্য ধর, আমি তোকে সব বুঝিয়ে বলব।

জামিল: ঠিক আছে, তুই তাহলে বল।

আবির: লিখিত সূচি বলতে সেটাতে এমন কিছু আমল লিখা থাকবে, যেগুলো আমরা অন্যান্য মাসেও পালন করব, তবে রামাযান মাসে তার তুলনায় অধিক বেশি পালন করব। সেগুলো হলো— (১) তারাবীর ছালাত নিয়মিত আদায় করতে হবে। (২) ছিয়াম রাখার প্ল্যান করতে হবে। (৩) আল-কুরআন পড়তে হবে। (৪) দান-ছাদাক্বা করতে হবে। (৫) ছিয়াম পালনকারীকে ইফতার করাতে হবে।

জামিল: মাশা-আল্লাহ! লিখিত সূচিটা খুব সুন্দর হয়েছে। এটা অনুযায়ী আমি রামাযান মাস অতিবাহিত করার চেষ্টা করব, ইনশা-আল্লাহ! তবে বন্ধু! একটা বিষয়ে আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।

আবির: কী চিন্তা হচ্ছে? কোন বিষয়ে?

জামিল: কুরআন পড়া নিয়ে। ৩০ পারা কুরআন আমি কীভাবে শেষ করব?

আবির: বন্ধু! চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কুরআন শেষ করার একটা সহজ টেকনিক আমি তোকে শেখাব, যদি তুই নিয়মানুযায়ী কুরআন পাঠ করিস; তাহলে তুই অবশ্যই অন্তত একবার কুরআন শেষ করতে পারবি।

জামিল: সত্যি বলছিস বন্ধু!

আবির: হ্যাঁ, সত্যি বলছি। জামিল! তুই তো জানিস যে, কুরআন ৩০ পারা, যার প্রত্যেক পারায় ২০টি করে পৃষ্ঠা আছে। কোনো ব্যক্তি যদি প্রত্যেক ৫ ওয়াক্ত ছালাতের পর (ফজরের পর, যোহরের পর, আছরের পর, মাগরিবের ছালাতের পর এবং এশার ছালাতের পর) ৪ পৃষ্ঠা করে কুরআন পড়ে, তাহলে সে দৈনিক (৪×৫)=২০ পৃষ্ঠা অর্থাৎ ১ পারা কুরআন পড়তে সক্ষম হবে।

সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি উক্ত নিয়ম অনুযায়ী কুরআন পাঠ করে, তবে অবশ্যই সে ৩০ দিনে ৩০ পারা কুরআন পাঠ করতে সক্ষম হবে আর এটা তার জন্য কষ্টকর হবে না বলেও আমি আশা করি।

জামিল: মাশা-আল্লাহ! কতই না সুন্দর এই নিয়ম! আমি অবশ্যই এই নিয়মানুযায়ী কুরআন পড়ব, ইনশা-আল্লাহ! এমনকি আমার পরিবার এবং আত্মীয়স্বজন সবাইকে এ সহজ টেকনিক শিখিয়ে দিব, ইনশা-আল্লাহ!

দুই বন্ধু আলোচনা শেষ করে বিদায় নেয়। পরদিন জামিল তার পরিবারের সদস্যদের কুরআন পড়ার সহজ টেকনিক শেখায়, যা শুনে তার বাবা-মা আনন্দিত হন এবং সিদ্ধান্ত নেন, এ বছর তারা অন্তত একবার কুরআন খতম করবেন। রামাযান শুরু হলে জামিল আবিরের উপদেশ অনুসরণ করে মাসটি অতিবাহিত করে এবং উপলব্ধি করে, প্রতিটি পরামর্শই ফলপ্রসূ হয়েছে। কৃতজ্ঞচিত্তে সে আল্লাহর কাছে দু‘আ করে, ‘হে আল্লাহ! আমার বন্ধু আবিরকে দ্বীনের জন্য কবুল করুন’ —আমীন!

শিক্ষা:

উক্ত গল্প থেকে দুটি বিষয়ে আমরা শিক্ষা নিতে পারি—

১. জীবন চলার পথে একজন বন্ধুর খুবই প্রয়োজন, তবে অবশ্যই তাকে হতে হবে আতরওয়ালার মতো অর্থাৎ সৎ বন্ধু।

২. কেউ যদি উপরে উল্লিখিত নিয়মানুযায়ী রামাযান মাস অতিবাহিত করে, তবে আশা করা যায় যে, সে জামিলের মতো সফল হবে, ইনশা-আল্লাহ!

সীমা বিনতে সিরাজুল ইসলাম

ছানাবিয়্যাহ ২য় বর্ষ, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ (বালিকা শাখা), ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহী।

Magazine