কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

সাময়িক বন্ধু

আল্লাহ কত সুন্দর করে এই ধরণি সৃষ্টি করেছেন! ওই নীল আকাশটা কতই না সুন্দর। নীল আকাশের নিচে যখন মেঘমালা ভেসে বেড়ায়, তখন তা দেখতে অপরূপ সুন্দর লাগে। এই মেঘমালার নিচে উড়ে চলেছে পাখির দল। এই দৃশ্যটা দেখতে কাকেই না ভালো লাগে। আল্লাহ এই যমীনটাকে কী সুন্দর করে বিস্তৃত করেছেন। এই যমীনে ছোট ছোট ফুটো করে বসবাস করছে পিপীলিকার দল। এই যমীনের উপর রয়েছে অনেক রকমের গাছগাছালি। এই সবুজ শ্যামল গাছগুলো দেখলেই আমাদের প্রাণ জুড়িয়ে যায়। যখন এই সবুজের বুক চিরে বয়ে চলে নদনদী, তখন তো কোনো কথাই নেই। এই সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করে। আর এই নদীতে যখন মাঝি নৌকা চালায়, তখন এই দৃশ্যটা দেখতে যে কতই না সুন্দর লাগে। কিন্তু এখানে একটি ছোট্ট গল্প রয়েছে। এমনই একজন মাঝি একদিন নৌকায় নদীর তীরে বসে ছিল। হঠাৎ একজন লোক দৌড়ে তার ছোট ব্যাগটি নিয়ে উঠে পড়ল নৌকায়। আর বলল, মাঝি ভাইয়া! আমাকে একটু ওপারে রেখে এসো। আমাকে কিছু ছিনতাইকারী মারার জন্য চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি তাদের কাছ থেকে পালিয়ে এসেছি। আমাকে একটু সাহায্য করো। মাঝি লোকটির উপর দয়া করল। কিন্তু লোকটি তীরে পৌঁছার একটু আগেই লাফ দিল এবং মাঝিকে বলল, তুমি এই ব্যাগটা রেখে দাও; কাজে লাগবে। সরলমনা মাঝি ব্যাগটা সাদরে গ্রহণ করল। এদিকে লোকটি কিছুক্ষণের মধ্যে চোখের আড়াল হয়ে গেল। লোকটি যাওয়ার পরই পুলিশ ও একজন ভদ্র লোক আসল। লোকটি মাঝির কাছে ব্যাগটা দেখে বলল, পুলিশ সাহেব! এই তো আমার ব্যাগ। এই মাঝি আমার ব্যাগটা চুরি করেছে। তখন পুলিশ মাঝিকে গ্রেফতার করে নিল। মাঝি পুলিশকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো।

সুধী পাঠক! অপরিচিত মানুষকে খুব শীঘ্রই বন্ধু বানিয়ে নিবেন না। কারণ বন্ধু দুই প্রকার— (১) প্রকৃত বন্ধু। এই বন্ধু সম্পর্কে আপনারা সকলই জানেন। এই বন্ধু সর্বদা আপনার কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে। (২) সাময়িক বন্ধ। এই বন্ধু কিছু সময়ের জন্য আপনাকে আপন করে নিবে। এরপর ক্ষতি করতে একটুও দ্বিধাবোধ করবে না। লেখক বায়দাবা কালীলা ওয়া দিমনায় একটি গল্প এনেছেন— রাস্তার পাশে কেউ একজন একটা কূপ খনন করে রেখেছিল। সেই রাস্তা অতিক্রমকালে পর্যায়ক্রমে সাপ, সিংহ, বানর ও একজন স্বর্ণকার সেখানে পড়ে যায়। তারপর একটি লোক সেখান দিয়ে হাঁটার সময় এই চার জনের মধ্যে মানুষটাকে দেখে থেমে গেল এবং ভাবতে লাগল। এতদিন খারাপ কাজ করলাম, আজ লোকটাকে বাঁচিয়ে একটু ভালো কাজ করি। সে লোকটাকে তোলার জন্য কূপে একটি রশি ফেলল। রশি ফেলা মাত্রই বানরটি রশি ধরে উপরে উঠে গেল। আবার রশি ফেলল, এবার সাপটি উঠে এলো। অতঃপর আবার রশি ফেলল, এবার সিংহ উঠে আসল। সিংহ উঠার পর সাপটি বলল, জনাব এই লোকটাকে বাঁচাবেন না। কারণ এই মানুষ কখনো বন্ধুত্বের মর্যাদা রাখবে না। আমি এই এলাকায় থাকি, কখনো সেখানে গেলে অবশ্যই আমাকে স্মরণ করবেন। এই কথা বলে সাপ বিদায় নিল। এবার বানরটি বলল, আমি ওই এলাকায় থাকি। যদি সেখানে যান, তাহলে আমাকে স্মরণ করবেন। এই বলে বানরটিও বিদায় নিল। অতঃপর সিংহও একই কথা বলে বিদায় নিল। লোকটি তাদের কথায় ভ্রুক্ষেপ করল না। এবার সে স্বর্ণকারকে তোলার জন্য কূপে রশি ফেলল এবং স্বর্ণকার সেখান থেকে উঠে আসল। অতঃপর তাকে সম্মান দেখিয়ে তাদের অনুরূপ কথা বলে বিদায় নিল। উদ্ধারকারী সেই শহরে কোনো এক প্রয়োজনে গেল। শহরে গিয়ে প্রথমে বানরের সাথে সাক্ষাৎ করল। বানর তাকে সম্মানের সাথে বলল, আপনি একটু অপেক্ষা করুন, আমি আসছি। এই বানর বনের ভিতরে গেল। এবার সেখান থেকে তাজা ফলমূল নিয়ে আসল। সে লোকটিকে এই ফল দ্বারা আপ্যায়ন করল। লোকটি তৃপ্তি সহকারে খেল এবং সেখানে থেকে বিদায় নিয়ে সিংহের কাছে গেল। সিংহ তখন বলল, আপনি বসুন, আমি আসছি। এই বলে সিংহ রাজার প্রাসাদে গিয়ে রাজকন্যাকে হত্যা করল। তার গলার হারটা নিয়ে আসল এবং লোকটিকে দিল। লোকটি দ্রুত সেটি নিয়ে বিদায় নিল। সিংহকে জিজ্ঞেসও করল না, হারটা কোথা থেকে নিয়ে আসলে? লোকটি ভাবতে লাগল, এই হারটি স্বর্ণকারের কাছে গিয়ে বেশি মূল্যে বিক্রয় করে দিব। এদিকে রাজা তার রাজ্যে ঘোষণা দিয়েছে, যে তার মেয়ের খুনিকে ধরিয়ে দিবে, তার জন্য পুরস্কার রয়েছে। তো এই উদ্ধারকারী যখন স্বর্ণকারের বাড়িতে গেল। তখন স্বর্ণকার তার কাছে হারটা দেখে চিনে ফেলল এবং মহাখুশী হলো। স্বর্ণকার লোকটিকে বলল, ভাই তুমি এখানে একটু বসো, আমার বাড়িতে তেমন কিছু নেই। আমি বাজার থেকে কিছু নিয়ে আসছি। এই বলে স্বর্ণকার রাজার কাছে গিয়ে তার ব্যাপারে বলল। তখন রাজা তার প্রহরী পাঠিয়ে তাকে বন্দি করে ফেলল।

সুধী পাঠক! এই হচ্ছে আমাদের বন্ধুত্ব। যেখানে মানুষকে উত্তম জাতি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, সেখানে এই মানুষ এভাবে বন্ধুত্বের প্রতিদান দিচ্ছে। আমাদের ভাবা উচিত, এ অন্তরটা কখনো এক অবস্থায় স্থির থাকে না। কখনো বন্ধু হয়ে যায় আবার কখনো বাঁচার খাতিরে এই বন্ধুর সাথে শত্রুতা করতেও দ্বিধাবোধ করে না।

অতএব, এভাবে মানুষের সাথে সাময়িক বন্ধুত্ব করা থেকে যথাসাধ্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে।

আব্দুর রাযযাক বিন মাসির

ছাত্র, ৯ম শ্রেণি, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, রাজশাহী।

Magazine