কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

তওবা : ফিরে আসার গল্প

post title will place here

আজও রবি পূর্ব দিগন্তে উদিত হয়েছে। আলো চারিদিকে মিটিমিটি করে বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সূর্যের কিরণে শিশিরভেজা দূর্বাঘাস ঝলমল করছে। ভুল করে কিন্তু সূর্য পশ্চিম দিগন্তে উদিত হয়নি। আর কেনইবা সূর্য পশ্চিম দিগন্তে উদিত হবে? সচরাচর সূর্য তো পূর্ব দিক থেকেই উদিত হয়। এটাই তো তার রুটিন, যা পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকেই চলে আসছে। তাহলে কেনইবা সূর্য পশ্চিম দিগন্তে উদিত হবে কোনো একদিন? কী বা রহস্য তার মধ্যে? কী উদ্দেশ্য রয়েছে তার মাঝে? আমাদের প্রভু পৃথিবীতে কোনো কিছুই তো উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃজন করেননি। আমরা হয়তো অনেকে বুঝে ফেলেছি। তারপরও কেনো আমরা ঘুরে দাঁড়াই না? কেনই বা আমরা ফিরে আসি না? তাহলে চলো! এবার আমরা একটি ফিরে আসার গল্প শুনে আসি।

বানূ ইসরাঈল গোত্রের এক ব্যক্তির গল্প। সে ছিল অতি ভয়ংকর এক মানব। সে ছিল সমাজের ৮-১০ জন মানুষের থেকে একদম আলাদা। তাকে অবলোকন মাত্র ভয়ে কুঁকড়ে উঠত হাজারো হৃদয়। কারণ সে ছিল অতি ভয়ংকর একজন খুনী। সে খুন করেনি ৫ জন, ১০ জন, ৫০ জন, বরং সে খুন করেছিল ৯৯ জন। ৯৯ জনকে হত্যা করার পর তার মন ব্যাকুল হয়ে উঠল। তার মনে হাজারো অনুশোচনা উঁকি দিল। মনকে তৃপ্ত করার জন্য সে যারপরনাই কোশেশ করতে লাগল। সহসাই দেখা হয়ে গেল এক বুজুর্গ ব্যক্তির সাথে। তার অনুশোচনা-মিশ্রণ হৃদয় যে, সকল পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে আগ্রহী, তাই সে বুজুর্গকে জিজ্ঞেস করল, নিষ্কৃতির কোনো পন্থা আছে কি? সে নিরীক্ষণসহ তাকিয়ে রইল বুজুর্গের প্রতি। বুজুর্গ ভাবগাম্বীর্য কণ্ঠে বলে উঠল, তোমার কোনো নিষ্কৃতি নেই। এরপর সে ক্রোধে তাকেও হত্যা করল। এবার পুরা হলো ১০০ লোক। হ্যাঁ, সে ১০০ লোক হত্যা করেছে।

তারপরও তার অন্তর শান্তি পায়নি। বরং তার অন্তর পূর্বের চেয়ে বেশি অনুশোচনায় ভুগছে। সে পুনরায় কলুষ মোচনের অভিপ্রায়ে উন্মাদের মতো হাঁটছে। অকস্মাৎ সাক্ষাৎ হলো এক প্রৌঢ়ের সাথে। প্রৌঢ় বুঝতে পেরে তাকে বললেন, ঐ পল্লিতে একজন আলেম আছেন। তুমি তার সাথে সাক্ষাৎ করো। তার অন্তরে অনুশোচনার প্রদীপ দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। সে ব্যাকুল হয়ে উঠল প্রভুর আরাধনায় ফিরে আসতে। পুনরায় সে পদক্ষেপ গ্রহণ করল। তারপর তার জীবনের আয়ুর মাঝে নেমে এলো অন্ধকার। মালাকুল মাউত এসে তার রূহ নিয়ে গেলেন। তার অনুশোচনা নিঃশেষ হয়ে গেল। নিথর দেহ মৃত্তিকায় পড়ে রইল। প্রভুর আরাধনায় প্রত্যাবর্তন হলো না। কিন্তু কিয়ৎক্ষণ পর কী ঘটল, সে সম্পর্কে আমরা কি অবগত?

কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তার আত্মাকে নেওয়ার জন্য দু’দল ফেরেশতা আগমন করলেন। এক দল ফেরেশতা উৎকৃষ্ট আত্মা নেওয়ার দায়িত্বে। অপর দল দুষ্ট আত্মা নেওয়ার দায়িত্বে। দুই দল ফেরেশতার মধ্যে বাক-বিতণ্ডা আরম্ভ হয়ে গেল। কারণ এক দল ফেরেশতা বলছেন, আমরা তার আত্মা নিব। আরেক দল বলছেন, না, আমরা নিব। যারা মন্দ আত্মা নেওয়ার দায়িত্বে তারা বিপরীত দলকে বললেন, তোমরা কেনো এই আত্মাকে নিয়ে যাবে? সে তো পাপী! সে তওবা করে পরকালে আগমন করেনি। পুণ্য আত্মার ফেরেশতারা বলে উঠলেন, সে তো তওবা করার উদ্দেশ্যেই অগ্রসর হচ্ছিল। তাই আমরাই তার আত্মা নিয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হব। এভাবেই কিছুক্ষণ তাদের মাঝে তুমুল আকারে বাক-বিতণ্ডা চলল। কিয়ৎক্ষণের মধ্যে আল্লাহর ফয়সালা আসল যে, তোমরা তার জায়গার দৈর্ঘ্য পরিমাপ করো। সে যেখান থেকে অগ্রসর হয়েছিল এবং যেখানে থেমেছিল, ঐটুকু জায়গা পরিমাপ করো। আর সে যে জায়গায় রয়েছে, সেখান থেকে আলেমের গ্রাম পর্যন্ত জায়গার পরিমাপ করো। যদি আলেমের গ্রাম অবধি জায়গা কম হয়, তাহলে তার আত্মা নিবে জান্নাতী ফেরেশতা। আর বেশি হলে, তার আত্মা নিবে জাহান্নামী ফেরেশতা। জায়গা পরিমাপ করার পর দেখা গেল, আলেমের গ্রামের দিকে কিছু পরিমাণ জায়গা কম। সাথে সাথেই তার আত্মা জান্নাতী ফেরেশতাগণ নিয়ে যান। হয়ে যায় সে জান্নাতীদের একজন। পেয়ে যায় জান্নাতে বসবাসের টিকেট। চিরস্থায়ী শান্তি-নিকেতনের ঠিকানা। পূরণ হয় তার মনের ব্যকুলতা।

কীসের অভিপ্রায়ে সে ফিরে পেল সফলতা? সে কি তার রবের আনুগত্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করেছে, তাই? হ্যাঁ, সে ফিরে আসতে পেরেছে রবের শান্তি-নিকেতনে। রব খুশি হয়েছে তার প্রত্যাবর্তনের অভিলাষ দেখে। ১০০ হত্যা করার পরও রব তার পাপ মার্জনা করে দিলেন। সে কিন্তু তওবাও করেনি, বরং তওবা করার প্রবল অভিলাষ করেছিল। এটাতেই প্রভু মহা আনন্দিত। তাহলে আমরা কেনো এত বিষাদগ্রস্ত? কেনো আমরা ফিরে আসছি না প্রভুর শান্তি-নিকেতনে? কেনো প্রত্যাবর্তন করি না প্রভুর নিকট? আমাদের কলুষ অনেক বেশি, তাই ভেবে? পাপ নিয়ে বিষাদগ্রস্ত? প্রভু মার্জনা করবে কিনা এই মনে করে?

হে প্রিয় ভাই! তুমি ফিরে এসো তোমার রবের দরবারে। যেখান থেকে কেউ ফিরে যায় না শূন্য হাতে। যেখানে এসে সবাই পায় শান্তির সূচনালগ্ন। বানূ ইসরাঈলের সে ব্যক্তি যদি ১০০ হত্যা করার পরও শুধু তওবার অভিলাষ করার কারণে প্রভু সন্তুষ্ট হয়ে তাকে জান্নাত উপঢৌকন দেন, তাহলে তোমাকে কেনো নিষ্কৃতি দেবেন না? তোমার পাপ থেকে যদি তুমি প্রত্যাবর্তন করো প্রভুর নিকটে তওবার মাধ্যমে, তাহলে তোমাকে কেনো নিষ্কৃতি দেবেন না? তারপরও কি তুমি ফিরে আসবে না, প্রিয় ভাই আমার? কেনো তুমি নিমজ্জিত রয়েছ হাজারো পাপের সাগরে? ফিরে এসো বেলা ফুরাবার আগেই। এখনো তোমার জীবনের আয়ু ফুরিয়ে যায়নি। এখনো উপস্থিত হননি মালাকুল মাউত। তোমার দুয়ারে এখনো আসেনি মৃত্যু-চিঠি। এমনকি সূর্যও উদিত হয়নি পশ্চিম দিগন্তে। তওবার দ্বার এখনো উন্মুক্ত। অতএব, ফিরে এসো! আর আল্লাহ তো বলেই দিয়েছেন,إِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন’ (আল-বাক্বারা, ২/২২২)

ওমর বিন শফিক

আলিম ১ম বর্ষ, তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।

Magazine