প্রত্যেক নেক্কার মানুষের মাঝে কিছু বিশেষ গুণ থাকে। এই গুণগুলো রপ্ত করতে পারলে সুখের সবচেয়ে বড় দরজাটি আমাদের জন্য খুলে যায়। তেমনি একজন নেককার মানুষ ছিলেন শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়া রহিমাহুল্লাহ, যার মন ছিল তার রবের প্রতি আস্থায় পরিপূর্ণ। একবার তিনি কিছু বিদআতীর সাথে তর্কের সময় আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ আস্থা দেখিয়েছিলেন। বিদআতীরা ওই সময় খুবই বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। তারা নানা ধরনের ছলচাতুরী করে মানুষদের ধোঁকায় ফেলতে পারত। আগুনের মধ্যে হেঁটে তারা মানুষকে অবাক করে দিত। ইমাম ইবনু তায়মিয়া রহিমাহুল্লাহ তাদের প্রতারণা বুঝতে পারলেন। এগুলো কোনো অলৌকিক ক্ষমতা ছিল না, বরং তারা বিভিন্ন পদার্থ মেখে আগুনের মধ্যে হাঁটত। কিন্তু কে শোনে কার কথা। অবস্থা বেগতিক দেকে ইবনু তায়মিয়া তাদের সাথে তর্কে লিপ্ত হলেন। বিতর্কের উত্তেজনা চরম আকারে পৌঁছল। বিতর্ক সেদিনের জন্য স্থগিত করা হলো। পর দিন দুই পক্ষ আবার তর্কে অংশ নিলো। সেদিনের অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে ইমাম ইবনু তায়মিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘সে দিন আমি ইস্তিখারা ছালাত আদায় করলাম এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলাম, হে আল্লাহ! আমাকে সহযোগিতা করুন এবং সৎ পথ দেখান। আমি বারবার আল্লাহকে ডাকতে থাকলাম। আমার মনে হলো আমাকে আগুনে নামতে হলে আমি তাই করব। আল্লাহ যদি ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-কে আগুন থেকে রক্ষা করেন, তাহলে আমাকেও তাই করবেন। পর দিন বিতর্ক শুরু হলো। একসময় প্রতিপক্ষ বলে দিল আমরা আগুনের মধ্যে হাঁটতে পারি। ইবনু তায়মিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেই দিলেন যে, ‘আমিও আগুনে হাঁটতে পারি। এই শর্তে প্রতিপক্ষ রাজি হয়ে গেলো। কিন্তু ইবনু তায়মিয়া রহিমাহুল্লাহ শর্ত জুড়ে দিলেন, সবাইকে নিজের শরীরে গরম পানি আর সিরকা মাখাতে হবে। প্রতিপক্ষের মুখ একেবারে কালো হয়ে গেলো। ইবনু তাইময়া রহিমাহুল্লাহ বারবার শর্ত জুড়ে দিতে লাগলেন এবং সবাই পালাতে লাগল। আর দর্শকরা খুশিতে এই আয়াত পড়ল, فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوا صَاغِرِينَ ‘তাই সেখানে তারা পরাজিত হলো এবং লাঞ্ছিত হলো’ (আল-আ‘রাফ, ৭/১১৯)।
দেখুন, ইমাম ইবনে তায়মিয়া কীভাবে আল্লাহর উপর ভরসা করেছিলেন। আল্লাহর উপর তাঁর ঈমান কেমন ছিল।[1]
শিক্ষা : আল্লাহর উপর ভরসা রাখলে যে কোনো বড় সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া যায়। ক্ষমতাধর খারাপ লোককে প্রতিহত করা সহজ হয়। ঈমান শক্তিশালী হয়। জীবন সুন্দর হয়, সুখের হয়। অপরদিকে মিথ্যার আশ্রয় নিলে সবদিক থেকে বিপদ চেপে ধরে।
আব্দুল আহাদ আল-লাবীব
শিক্ষার্থী, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ,
ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহী।
[1]. হায়ছাম ক্বাসেম, আল-মুনাযারাত আল-আক্বাদিয়্যাহ লিশাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, পৃ. ১১৬-১১৭।