গোবিন্দ একজন হিন্দু সম্প্রদায়ে নিচু স্তরের ছেলে। সে ছোট থেকে অন্য সব হিন্দু ছেলেমেয়ে থেকে আলাদা প্রকৃতির। সে একজন ভাবুক প্রকৃতির ব্যক্তি। সে কোলাহল একদম পছন্দ করে না। নিঃসঙ্গতা ও নীরবতা তার অতি প্রিয়। সে বরাবর কিছু না কিছু নিয়ে চিন্তাভাবনা করত। যেটা নিয়ে সে একবার চিন্তা করা শুরু করত, সেটার উৎপত্তিস্থল খুঁজে বের করা পযর্ন্ত চেষ্টা চালাত।
যেমন ধরা যাক, একটি ছোট্ট যে কোনো ধরনের বীজ। এই বীজ থেকে কীভাবে এত বড় বৃক্ষ জন্ম নেয়? তাতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল আবার হরেক রকমের স্বাদের ফল হয়। ফলগুলোতে কত পুষ্টি থাকে যা মানুষের হাড়, পেশি গঠনে দেহকে সুস্থ ও সবল রাখতে কতই না সাহায্য করে। কিন্তু এই বীজগুলো হঠাৎ করে কোথা থেকে আসে? সেসব নিয়ে তার বিস্তর চিন্তা। একটি বীজ থেকে এত বড় বৃক্ষের জন্ম হয় কত সহজেই!
আবার ধরো, ভাতের ফেনা। এক পট চাল পাত্রে দিয়ে তাতে পরিমাণমতো জল দিয়ে কিছুক্ষণ জ্বালানি করলে সেই পাত্র থেকে ফেনা উঠে। এটা কেন উঠে তা নিয়ে গোবিন্দ চিন্তায় বিভোর হয়ে থাকত। ভাবত এই ফেনাগুলো কেন উঠে? আবার একসময় হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়ে জল শেষ হয়ে ভাত রান্না হয়। কীভাবে এই ভাতের জল বাষ্পীভূত হয়ে আকাশে মেঘের ঘনত্ব সৃষ্টি করে আবার তা থেকে বৃষ্টির বারিধারা হয়ে ভূমিতে ফিরে আসে? তা নিয়ে সে গবেষণার শহর তৈরি করত নিজের মধ্যে। মা-বাবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যের কাছে তার প্রশ্নের সীমা থাকত না। কিন্তু কেউ তার মনমতো উত্তর দিতে পারত না।
গোবিন্দ স্কুলে পড়াশোনা করে। তার বিশেষ কোনো বন্ধু নেই। কারণ সে কোলাহলমুক্ত থাকতে চায় সবসময়। তারপরও ভিন্ন দু’টি ধর্মের দুই বন্ধু আছে তার। একজন আদনান, সে মুসলিম। অন্যজন হলো ক্রিসটোফার। সে ছিল খ্রিষ্টান। এই দুই বন্ধুও বেশ নীরব প্রকৃতির। এজন্য তাদের মধ্যে অনেক ভাব জমে। চিন্তার জগৎ নিয়ে আলোচনায় মাতে তারা।
গোবিন্দ হিন্দুধর্মের হয়েও সে দেব-দেবী পূজা করত না। কারণ এমনি তার কোলাহল ভালো লাগে না, তার উপর অতিরিক্ত শব্দ গান-বাজনা-নাচ তার পছন্দ না। সবাই তাদের ধর্মীয় উৎসব পূজা পালন করে কিন্তু সে যেত না পূজায়। প্রভুর অস্তিত্ব নিয়ে মনের ভিতরে তার অনেক প্রশ্ন। এখন একা বসে বসে সে এটাই ভাবছে? স্রষ্টার উপলব্ধি তার মাঝে দেখা দিয়েছে।
গোবিন্দ এখন প্রভুকে খুঁজতে শুরু করেছে। সে ঐ পূজা শুধু দেখে আর চিন্তা করে কীসের জন্য এই পূজা করে এরা? কেন করে? যাকে নিজেরাই সৃষ্টি করল, রং করল, চোখ, মুখ, ঠোঁট, জিহ্বা দিল, কেন তার পূজা করে সবাই?! এসব নিয়ে সে মনে মনে চিন্তা করে, কারো কাছে প্রকাশ করে না। কারণ সে জানে কেউ তার উত্তর দিতে পারবে না।
সে প্রভুর অস্তিত্ব খুঁজতে গিয়ে বের করছে ঐ মূর্তিগুলো, যাদের নিজেদের কোনো ক্ষমতা নেই। যে কারো সাহায্য ছাড়া এক পা কোথাও যেতে পারে না। সে কি করে মানুষ সৃষ্টি করল? সে কী করে মানুষকে সাহায্য করবে? উল্টো আমি না তার সাহায্যকারী। সে আমার সাহায্য ছাড়া নড়াচড়া কিছুই করতে পারে না। আমি তাকে সৃষ্টি করলাম সে আবার কীভাবে আমার প্রভু হতে পারে? তার পূজা কেন আমি করব? সবাই কেন তার পূজা করে? যার গায়ে মাছি পড়লে সেটাকে সরাতে পারে না; মানুষকে তাড়িয়ে দিতে হয়, তার পূজা কেন করে? তার কাছে কেন শির নত করব? পৃথিবীতে এতজন দেব-দেবী যদি থাকত, তাহলে তাদের ঝগড়া লাগলে তো পৃথিবী অচল হয়ে যাবে? কোনোকিছু স্বাভাবিক ও নিখুঁতভাবে চলত না।
সূর্যের দেবতা কোনো একদিন রাগ করে সূর্য নাও উঠাতে পারত বা প্রতিদিন সূর্য পূর্বদিক থেকে উঠে, তার একদিন মন চাইল সূর্যকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত করে পূর্ব দিকে অস্তমিত করবে! কই সেটা তো কখনো হয় না?
শনি দেবতা হনুমানজি তো অগ্নিদেবতাকে বলতেই পারে, আগুন বন্ধ করে দাও। জলের দেবীকে বলা হলো, পৃথিবীতে জল দেওয়া বন্ধ করে দাও। তাহলে তো সবকিছু বন্ধ হয়ে যেত বা কিছু ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকত। কিন্তু কয় কখনো এমন কিছু তো হয় না; সবকিছু নিখুঁত ও স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত চলছে।
যদি একেকটা জিনিসের একেকজন করে সৃষ্টিকারী থাকত তাহলে যে যার সৃষ্টিকর্তা সে তার সৃষ্টিকে তার ইচ্ছেমতো চালনা করত? কিন্তু সেসব কিছুই হয় না; সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছে।
গোবিন্দ দিনের বিশাল সূর্যকে দেখে ভাবত, হয়তো এই সূর্যটা আমার প্রভু! কারণ সে সারা পৃথিবীর অন্ধকার দূর করে আলো বিলিয়ে যায়। যখন সন্ধ্যা হয় তখন দেখে সেই বিশাল সূর্য তার অস্তিত্ব বিলীন করে কোথায় গা-ঢাকা দেয়। সে বলে, না, এই সূর্য আমার প্রভু হতে পারে না। আমার প্রভু আমাকে ছেড়ে এভাবে চলে যেতে পারে না।
আবার রাতের আকাশে চাঁদকে ও সন্ধ্যার ধ্রুব তারাকে দেখে তার মনে হয় যে, এগুলো বুঝি আমার স্রষ্টা! কারণ তারা রাতের আকাশে মিটিমিটি আলো দিচ্ছে। কালো আঁধারের মাঝে এই আলো। কিন্তু পরক্ষণে দেখে সকালের আলোয় চাঁদ-তারা হারিয়ে যায়। সে ভাবে, এগুলো আমার প্রভু হতে পারে না। যে স্রষ্টার উপলব্ধি আমার হৃদয়ে, এরা সেই স্রষ্টা নয়।
গোবিন্দ তার আশেপাশের আরও কিছু ধর্মের মানুষকে দেখে। সে তার খ্রিষ্টান বন্ধু ক্রিস্টোফারের ধর্মীয় উৎসব বড় দিনে যায়। গিয়ে দেখে যিশুর একটি মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। অনেক হইচই করে দিনব্যাপী বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান করে তারা সবাই মিলে কেক কাটছে।
গোবিন্দ এই সংস্কৃতি দেখেও চিন্তা করে, তাহলে কি যিশুই আমার সৃষ্টিকর্তা! এদের তো হিন্দুদের মতো এত দেব-দেবী নেই। এখানে শুধু একজন দেব, তাহলে কি যিশু সবকিছু সৃষ্টি করেছেন?
গোবিন্দ কোনো সিদ্ধান্তে যেতে পারল না। কারণ যিশু যদি ঈশ্বরের ছেলে হবেন, তাহলে তিনি ক্রুশবিদ্ধ হয়েছেন কেন? যে নিজের ছেলেকে ক্রুশ থেকে বাঁচাতে পারেনি, যে যিশু স্রষ্টার ছেলে হয়েও এভাবে চলে গেছেন, তিনি ঈশ্বর হতে পারেন না। আমি এই যিশুর অর্চনা করব না।
এরপরে সে বৌদ্ধধর্মের অনুষ্ঠানে যায়। গিয়ে দেখে তারাও স্বর্ণ দিয়ে বৌদ্ধদেবের মূর্তি তৈরি করে তার পূজা করছে। যে মূর্তি নিজেই নড়াচড়া করতে পারে না, সেখানে তার উপাসনা করব কেন? সে আমাকে কোনো সাহায্য করতে পারে না; বরং আমি তাকে সাহায্য করতে পারি।
এরপরে গোবিন্দ তার মুসলিম বন্ধু আদনানের ধর্মীয় উৎসব ঈদে আসে। সে এসে দেখে বিশাল মাঠে খুব সুশ্রী পোশাক পরে সুগন্ধি মেখে একই সঙ্গে লাখো মানুষ একই নিয়মে একই সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে। কোনো বিশৃঙ্খলা নেই, কোনো শব্দ নেই, নিশ্চুপ নীরব এক অদ্ভুত পরিবেশ। যা সে এর আগে কখনো দেখেনি। সামনের একজন মানুষের সঙ্গে সবাই মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে। ইবাদত শেষে বক্তা সাহেব সুন্দর সুন্দর কথা বলছেন। সকলের জন্য মঙ্গল কামনা করছেন।
সবশেষে সবাই একে অপরের সাথে কুশল বিনিময় করেছ। পরস্পরের জন্য দু‘আ করছে। সবার মাঝে যেন এক অনুপম ভ্রাতৃত্ববোধ; গরীব, ধনী, ফকীর, অফিসার রিক্সাচালক কারো কোনো পার্থক্য নেই। এক অপূর্ব দৃশ্য!
এসব দৃশ্য দেখে গোবিন্দ হতবাক হয়ে যায়। পরে বন্ধু আদনানকে জিজ্ঞেস করে, তোরা এত মানুষ মিলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কাকে সিজদা দিলি? আর কেঁদে কেঁদে কার কাছে সবার কল্যাণ ও নিজের গুনাহ মাফ চাইলি?
তখন আদনান বলল, বন্ধু! শোন, আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তা এক আল্লাহকে সবাই মিলে সিজদা করলাম। তাঁকে ধন্যবাদ জানালাম এই ঈদের খুশির দিনটি আমাদের উপহার দিয়েছেন বলে। আমরা তাঁকে দেখতে পাই না, কিন্তু বিশ্বাস করি এই বিশ্বজগৎ তিনি সৃষ্টি করেছেন। আর তিনিই আমাদের খাওয়ান, পরান, বাঁচান আবার মৃত্যু দেন। তিনি মৃত থেকে জীবিত করেন। যেমন মৃত শুকনো বীজ থেকে কী সুন্দর চারাগাছ বের করেন। আবার জীবিত থেকে মৃত বের করে আনেন। যেমন অনেক মানুষের বা প্রাণীর মৃত বাচ্চা প্রসাব করান। সবকিছু আল্লাহর ক্ষমতায় হয়।
গোবিন্দ তখন বলে, এই বিশাল জগৎ একজন কীভাবে চালাতে পারে? তাঁর তো ক্লান্তি আছে; তিনি ঘুমান না? তখন আদনান বলল, না, তাঁর কোনো ক্লান্তি নেই। তিনি কখনো খান না, ঘুমান না সর্বদা জাগ্রত। এমনকি তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না।
একবার এই বিষয়টা চিন্তা করে দেখ, একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী কয়জন হয়? সে বলে, একজন। রাষ্ট্রপতি কয়জন হয়? সে বলে, একজন। প্রতিটি পদের মধ্যে কি কখনো দেখেছিস, একই পদে দু’জন মন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী আছে?
গোবিন্দ বলে, না। দুই বা ততোধিক প্রধানমন্ত্রী থাকলে তো দেশ চলবে না। দুই বা ততোধিক প্রধান থাকলে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে নিতে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। একজন করে আছে বলেই সবকিছু সিদ্ধান্ত তাড়াতাড়ি নিতে পারে; ঠিকঠাকমতো চলে।
এবার আদনান বলল, তাহলে একটি দেশ যদি একজন প্রধান দিয়ে চলতে পারে, তবে পৃথিবী কেন পারে না? এই সৃষ্টিজগতের যদি একাধিক সৃষ্টিকর্তা থাকত, তাহলে সবকিছু কি ঠিকঠাক চলত? কোনোকিছু করতে চাইলে, তাদের একাধিক জনের কথায় সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক কঠিন হয়ে যেত! দেখা যেত, আমরা পানি পাচ্ছি না বা কোনো শস্যফল পাচ্ছি না, ভূমিতে কোনো বৃক্ষ জন্মাচ্ছে না। তখন কী করে প্রাণী ও জীবরা আমরা বাঁচতাম?
দিনে সূর্য আলো দিচ্ছে না। অন্ধকারে কীভাবে চলতাম? আবার এমনও হতে পারত দিনে চন্দ্র আর রাতে সূর্য উদিত হতো! কারণ চাঁদের ও সূর্যের সৃষ্টিকর্তা যদি আলাদা আলাদা হয়, তাহলে তাদের ইচ্ছেও নিশ্চয়ই আলাদা আলাদা হবে।
কিন্তু এসব হয় কি কখনো? সে বলে, না। এসব হয় না। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সূর্যের কক্ষপথ আলাদা করে দিয়েছেন এবং চাঁদের কক্ষপথ ভিন্ন করে দিয়েছেন। কখনো কেউ কারো নাগাল পাবে না। এই যারা গরুর পূজা করে, তারাও তো জুতা পায়ে দেয়; নাকি দেয় না? তুই দিস না? দেয়, আমিও দেই। তাহলে তারা তাদের প্রভুর চামড়ার জুতা পরছে এতে পাপ হচ্ছে না? এটা তো মহাপাপ!
আবার কেউ কেউ বড় গাছের পূজা করে। কিন্তু তারা কি ভাত রান্না করে না? ঘরে আসবাবপত্র বানায় না? তারা তো প্রভুকে কেটে ফেলে তা দিয়ে খাট তৈরি করছে আবার তাতে শুয়ে থাকছে। ভাত রান্না করছে, এটা পাপ না? তো প্রভুকে কাটার সময় সে তাকে বাঁচাতে পারল না, মানুষকে কীভাবে সে বাঁচাবে?
আবার অগ্নিদেবতা চাইলে দাবানল দিয়ে পৃথিবী জ্বালিয়ে দিতে পারে আবার আগুন দেওয়া বন্ধ করেও দিতে পারে। জলের দেবী জল বন্ধ করে দিতে পারে। মেঘদূত বৃষ্টি দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারে। এতে পৃথিবী অনাবাদি ভূমিতে পরিণত হয়ে যেতে পারত। কিন্তু এর কি কোনো কিছু হচ্ছে? সে বলে, না।
আর আমার ধর্মের নাম ইসলাম। এখানে একাধিক কোনো প্রভু নেই। প্রভুর কোনো মূর্তি নেই। মুসলিমরা প্রভুকে না দেখেই বিশ্বাস করি। তাঁর হুকুম মানি; তাঁর পথে চলার চেষ্টা করি। মূলত ইসলাম শব্দের অর্থ আত্মসমর্পণ বা একক স্রষ্টার নিকট নিজেকে সমর্পণ করা। প্রকৃতপক্ষে মানুষ আল্লাহর হুকুম-আহকাম ও তাঁর নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অনুসরণ করলে সফলতা লাভ করবে; ইহকালে-পরকালে পাবে শান্তি আর শান্তি।
এই ধর্মের প্রকৃত অনুসারীর হাতে কেউ কখনো লাঞ্ছিত বা অপমানিত হয় না। বরং নিজে লাঞ্ছিত হতে পারে কিন্তু তার দ্বারা কখনো কারো ক্ষতি হবে না। এই ধর্মে গরীব, ধনী, রিক্সাচালক, ফকীর-মিসকীন সবার সমান অধিকার। মুসলিম একে পরের ভাই ভাই।
গোবিন্দ এরপরে বাড়ি ফিরে আসে। আদনানের কথা চিন্তা করে আর একা বসে ভাবে। আসলেই তো ও যা বলেছে সবই সত্য। গরু তাকে বাঁচাতে পারে না; তার গোশত মানুষ খায়, চামড়া দিয়ে জুতা পরে বেড়ায়। খাটে ঘুমায় সবাই। ঐ গাছও তাকে রক্ষা করতে পারে না। তারা আমাকে কীভাবে বাঁচাবে?
এখন সে ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন ওয়ায-মাহফিল ও কুরআন-তাফসীর মাহফিলে যায়। মনোযোগ দিয়ে বয়ান শুনে। মনে প্রশ্ন জাগলে আলেমদের জিজ্ঞেস করে মনমতো উত্তর পায় সে। সে নিজেও অনেক বই পড়ে। কুরআন, হাদীছ, হেকমা, বাইবেল, বেদ, মহাভারত, রামায়ণ প্রভৃতি বই পড়ে নিজের বুদ্ধি-বিবেক থেকে উপলব্ধি করে যে স্রষ্টা এক।
সে বুঝতে পারে সবকিছুই একজন নিয়ন্ত্রণ করছেন। যাকে তন্দ্রা-নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। যিনি কারো কাছ থেকে জন্ম নেননি এবং তিনিও কাউকে জন্ম দেননি। তিনি অদ্বিতীয় অবিনশ্বর একক মা‘বূদ। যাকে আমি দেখতে না পারি কিন্তু তিনি প্রতিনিয়ত প্রতিটি সেকেন্ড আমাকে দেখছেন। আমাকে ডাকছেন আমার পাপ মাফ চাইতে। তিনি ক্ষমা করার জন্য সদাপ্রস্তুত থাকেন। আমি আর তাঁর কাছ থেকে দূরে থাকতে পারছি না; আর চাই না দূরে থাকতে। আমি ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে থাকতে চাই।
এই বলে গোবিন্দ একজন প্রসিদ্ধ দ্বীনী আলেমের কাছে কালেমা পড়ে নব মুসলিম হয়ে পূর্বের সব গুনাহ মাফ করিয়ে নেয়। আর হৃদয়ে অনুভব করে প্রশান্তি। সে উপলব্ধি করে অন্তর মাঝে এক আল্লাহ বা স্রষ্টার অস্তিত্ব। সে ভাবে, আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে হেদায়াত দেন, যে তাঁকে অন্বেষণ করে, তাঁকে খোঁজে দিবানিশি; সেই ব্যক্তিকে তিনি কখনো নিরাশ করেন না। সে সত্যিই প্রভুকে পায়; আর যে একবার হেদায়াত পেয়ে যায়, তার মতো সৌভাগ্যবান আর কে হতে পারে!
আল্লাহ আমদের হেদায়াত দান করুন এবং দ্বীনের ওপর অবিচল থাকার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!
সাদিয়া আফরোজ
অনার্স ৩য় বর্ষ, বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।