অনেক মুসলিমের মনেই একটা প্রশ্ন জটলা বেঁধে আছে, ‘কেন মানুষ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও ইসলামবিদ্বেষী হয়?’ ‘দু’চোখ দিয়ে ইসলামকে দেখতে পারে না। ইসলামের নাম শুনলেই নাক সিটকায়, মেনে নিতে পারে না ইসলামকে। তারা কী এমন ধূম্রজালে আটকে আছে, যার ফলে তারা ধর্মবিমুখ? বিষয়টি যদি এমন হতো যে, তারা অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত বা মূর্খ, তাহলে মেনে নেওয়া যেত। তারা তো বড় বড় ডিগ্ৰিধারী প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব। সমাজের লোক তাদের কথায় উঠে বসে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে তাদের রয়েছে যথেষ্ট প্রভাব। জ্ঞানের বিভা ছড়াচ্ছে দেশের আপামর জনসাধারণের মাঝে। তারাই বর্তমানে রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি। রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তারা কেন বুঝতে চায় না যে, ইসলাম একটি কল্যাণমুখী, মানববান্ধব ও শাশ্বত ধর্ম। আপনাদের এই কুহেলিকাচ্ছন্ন প্রশ্নের গায়ে মধ্যাহ্নের দীপ্তিময় সূর্যের পরশ বুলিয়ে দিব। নিমিষেই দূর হয়ে যাবে ধোঁয়ার আবছায়া। এখানে একটা কথা বলে রাখি, তারা নিজেদের নাস্তিক দাবি করে। আদতে তারা স্রেফ নাস্তিক নয়; বরং ইসলামবিদ্বেষী। তাদের তো দেখা যায় না ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্মের সমালোচনা করতে। যত বিষোদগারের তির ছোড়ে ইসলামের গায়ে।
এবার শুরু করি আসল কথা। ইসলামবিদ্বেষী হওয়ার কিছু কারণ আমি রপ্ত করেছি। যা আপনাদের সমীপে উল্লেখ করছি।
(১)প্রবৃত্তিপূজা : প্রবৃত্তিপূজা মানে মনে যা চায় তাই করা। মনে যা চায় তা করতে গেলে পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা, গোলযোগ দেখা দিবে। উদাহরণ টেনে একটু বুঝাই। ধরুন, আপনার মন চাচ্ছে আপনার পাশের বাড়ির এক মেয়ের সাথে ব্যভিচার করার। এখন আপনি যদি জোর করে আপনার কামবাসনা চরিতার্থ করতে পা বাড়ান, তাহলে কি ওই মেয়ের বাবা-মা, ভাই, আত্মীয়স্বজন আপনাকে ছেড়ে দিবে? কিছুই বলবে না তারা? অবশ্যই না। বরং আপনাকে তারা গোটাটাই গিলে ফেলতে চাইবে। তাদের বোনের ইযযত নিয়ে আপনি ছিনিমিনি খেলবেন, সেটা তারা কখনই মেনে নেবে না। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে প্রবৃত্তিপূজারি হয়ে চলা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এজন্যই আল্লাহ তাআলা বলেন,وَلَوِ اتَّبَعَ الْحَقُّ أَهْوَاءَهُمْ لَفَسَدَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ وَمَنْ فِيهِنَّ ‘যদি হক্ব তাদের প্রবৃত্তির অনুগামী হতো, তাহলে আসমান-যমীন ও এদুয়ের মাঝে যা আছে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যেত’ (আল-মুমিনূন, ২৩/৭১)।
আপনি যদি লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখতে পাবেন অধিকাংশ ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক চরিত্রহীন, প্রবৃত্তিপূজারি। আর ইসলাম হলো তাদের কুপ্রবৃত্তির প্রতিবন্ধক। তারা চায় যত্রতত্র খোলামেলা নারীদের নিয়ে ঘোরাফেরা করতে, মদ খেতে, রাতভর নারী নিয়ে আনন্দ-ফূর্তিতে মেতে উঠতে, যা ইচ্ছে তাই খেতে, যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে চলতে। হালাল-হারামের কোনো তোয়াক্কা না করতে। যত প্রকার অশ্লীলতা বেহায়াপনা আছে সবই করতে। কিন্তু ইসলাম হলো তাদের এ কাজের প্রতিবন্ধক। এজন্য তারা ইসলামকে মেনে নিতে পারে না, ইসলামের সমালোচনায় অষ্টমুখ হয়ে ওঠে। তাদের সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে একমাত্র ইসলাম। আপনি যদি ইউটিউবে এ কথা লিখে সার্চ দেন যে ‘বাংলাদেশের ১০ জন নিকৃষ্ট নাস্তিকের’ নাম, তাহলে দেখবেন চলে এসেছে বিখ্যাত কিছু নাস্তিক। একজনের হাতে দেখতে পাবেন মদের বোতল, আরেক নারী পরে আছে গেঞ্জি। তাদের এমন এমন কুরুচিপূর্ণ কথা আছে, যা কখনো স্বাভাবিক মানুষ থেকে কল্পনা করা যায় না। তারা চায় নারী-পুরুষ একাকার হয়ে চলুক। সূদ, ঘুষ, মদ, জুয়া যে যেভাবে পারুক উপার্জন করুক, তাতে কোনো আসে যায় না। তাদের এ মতের বাধাদানকারী হলো ইসলাম। এজন্যই তারা ইসলামকে নিয়ে সরগরম করে।
(২) কুসংস্কার বা অধর্মকে ধর্মীয় রীতি মনে করা : একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষিত ব্যক্তির ভালো-মন্দ ঠাহর করার ক্ষমতা রয়েছে। কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায় সব সে বুঝে। কোনটা বিবেকবিরোধী আর কোনটা বিবেকের সাথে যায় অনুধাবন করতে পারে। জাতির মশালধারী এই ব্যক্তি যখন দেখতে পায়, কিছু মানুষ আল্লাহর কাছে ক্ষমা লাভের আশায় তারই মতন একজন রক্তমাংসে গড়া মানুষের পায়ে সিজদা করছে, হরেক রকম উপহার উপঢৌকন দিচ্ছে, কুরবানী করছে তাদের নামে, তখন তাদের বিবেকের দ্বারে স্বভাবতই কড়া নাড়ে। এটা কীভাবে সম্ভব? মানুষ হয়ে একজন তারই মতন মানুষের পায়ে সিজদা করছে? যখন আরাধনায় ব্রতী ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আপনি আপনার
মতনই একজন মানুষের পায়ে সিজদা করলেন, এর হেতু কী?’ ওই মূর্খ মুরীদ লা জওয়াব হয়ে শুধু এতোটুকু বলে, এটাই ইবাদত, আরাধনা। আল্লাহ আমাদের আদেশ করেছেন তাদের চরণে সিজদা করতে, তাদের সম্মান করতে, তাদের সন্তুষ্টিই আল্লাহর সন্তুষ্টি। সরলমনা শিক্ষিত ব্যক্তির মন এই মূর্খতাসুলভ উত্তরে তুষ্ট হতে পারে না। কোনোভাবেই বিবেক প্রবোধ পায় না। পরিশেষে ব্যক্তি মনে করে ধর্ম মানেই এমন অন্ধবিশ্বাস। যার মাঝে যৌক্তিকতার লেশমাত্র নেই। ধর্ম হলো আফিমের মতো। একজন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি যেমন নেশাচ্ছলে অন্ধের মতো কত কিছুই না করে, অনুরূপ ধার্মিক ব্যক্তিরাও যৌক্তিকতাহীন মনগড়া কত কিছুই করে থাকে। এই তরুণ মনে করে এগুলো আন্দাজনির্ভর, ফালতু কাজকর্ম। এই ভদ্রলোকটিকে কে বুঝাবে, যে কাজগুলো সে প্রত্যক্ষ করেছে, এগুলো আদতে ইবাদত নয়; বরং শিরকী কর্মকাণ্ড। আল্লাহ তাআলা কুরআনের অসংখ্য স্থানে এসব শিরকী কাজ নিষেধ করেছেন। হিন্দুদের থেকে অনুপ্রবেশ করেছে এসব রীতি। এই লোকটি এখানে অধর্মকে ধর্ম মনে করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে কিছু ভণ্ডলোকের কারণে। সে ইসলামের প্রকৃত রূপ থেকে বহু দূরে রয়ে গেল। জানতে পারল না ইসলাম এগুলো সমর্থন করে না। সে জেনেছে, তবে ভুল জেনেছে। তার বিবেকই আদতে সঠিক তথ্য দিয়েছে। এগুলো কখনোই ধর্ম হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা কত সুন্দর বলেছেন,إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ ‘যে আল্লাহর সাথে শরীক করবে, আল্লাহ তার উপর জান্নাত হারাম করে দিবেন। আর তার আবাসস্থল হবে জাহান্নাম। যালেমদের জন্য থাকবে না কোনো সাহায্যকারী’ (আল-মায়েদা, ৫/৭২)।
আরও একটু অগ্রসর হই। মাস্টার্স কমপ্লিট করা এক তরুণ গুলিস্তানের মোড়ে দেখতে পেলো, ইয়া বড় এক দাড়িওয়ালা লোক বসে ঝিমুচ্ছে! বেশভূষা উন্মদ সদৃশ। মুখ ঝাপটে আছে ঘনকালো মোচে। গলায় ঝুলছে বড় তালা। তাকে নাকি বলা হয় ‘তালাবাবা’! চুলগুলো উশকোখুশকো ধুলোবালিতে পালিশ করা। মলিন চেহারা, যেন কয়েক শতাব্দী ধরে গোসল করে না। একজন লোককে তার সম্পর্কে প্রশ্ন করল তরুণটি। প্রত্যুত্তরে বলা হলো, ‘এটা আল্লাহর প্রিয় বান্দা। ওরা সদা আল্লাহর ধ্যানে নিমগ্ন থাকে। নেই তাদের পার্থিব মোহ’। এই তরুণ এখন কী মনে করবে? মনে করবে, এরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা! এত অপরিচ্ছন্ন! মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসছে বায়ুর চরকায় চড়ে! আল্লাহর প্রিয় বান্দারা এমন হয়! না, আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া যাবে না। স্মার্ট হতে হবে আমাকে। এমন পাগলের মতো হলে চলবে না। বলুন তো, এই লোকটি কী শিখল? অধর্ম শিখেছে। ধর্মের শিক্ষা হলো, ‘আল্লাহ সুন্দর আর তিনি সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন’।[1]
ইসলামের নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অর্ধেক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।[2] ইসলাম ধর্মের নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য কত কিছু ব্যবহার করতেন! তিনি নিয়মিত সুগন্ধি ব্যবহার করতেন, কেশগুচ্ছ তেল দিয়ে পরিপাটি করে রাখতেন, চোখে সুরমা দিতেন, প্রতিদিন কয়েকবার দাঁত পরিষ্কার করতেন। এগুলো হলো ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও রূপরেখা। এই শিক্ষাগুলো যদি আমাদের আধুনিক সোসাইটির তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রচার করা যেত!
একজন আধুনিক শিক্ষিত তরুণ রাস্তা দিয়ে মধ্যরাতে হাঁটছে। আকাশের চাঁদ মধ্যগগন থেকে আলো ছড়াচ্ছে ঘুমন্ত বিশ্ববাসীর প্রতি। আলোর বিকিরণে তার ছায়া ঢের বড়সড় হয়েছে। তরুণটি আচমকা মাইকের শব্দ শুনতে পেল! তার হৃদয়ে একটু ধাক্কা দিল। এত রাতে কী হচ্ছে সেখানে? কৌতূহলবশত মাইকের শব্দের উৎস খুঁজতে লাগল। কোত্থেকে আসছে এই গগণবিদারী শব্দ। অনুমান করে সামনে এগোচ্ছে সে। দেখতে পেল বিশাল সামিয়ানা! সারা মাঠ কানায় কানায় ভর্তি। লোকে লোকারণ্য। একজন বক্তা এই ভরা মজলিসে ‘ইল্লাল্লাহ, ইল্লাল্লাহ’ যিকির করছে আর উপস্থিত শ্রোতারাও তার সাথে সুর মিলিয়ে যিকির করছে। অনেকে তো পাগলের মতো ঝাঁকড়া চুল নাড়াচ্ছে। কেউ কেউ দৌড় দিয়ে বক্তার পায়ে লুটোপুটি খাচ্ছে। তরুণটি গভীরভাবে পরিবেশটা অবলোকন করছে। এ কী! মাঝে মাঝে লাফিয়ে উঠছে কেউ কেউ! কেউ কেউ তো অবচেতন মনে বাঁশের খুঁটির ওপর উঠে লাফালাফি করছে। এ তো এক পাগলের মেলা। বিকারগ্ৰস্ত লোকদের সমাগম। শিক্ষিত তরুণটি ভাবনায় আত্মানিয়োগ করল। একটা ধর্ম কি এমন হতে পারে? ধর্ম তো এমন হওয়ার কথা নয়। ধর্ম মানুষকে উত্তম বৈশিষ্ট্য শিক্ষা দিবে, সভ্য সুশৃঙ্খল পরিবেশ উপহার দিবে। তারা এমন উন্মাদের মতো আচরণ করছে কেন? চ্যাঁচামেচি করছে কেন নির্বোধের মতো? না, এমন হওয়া যাবে না। ধর্ম মানেই হলো ভণ্ডামি, হঠকারিতা! আল্লাহ বলতে কিছু নেই! আল্লাহ যদি থাকতেন, তাহলে এমন আচরণের আদেশ দিতে পারতেন না! সব হুজুরদের মনগড়া কাজ! ধর্ম বলতে পৃথিবীতে আদৌ কিছু নেই! এক শ্রেণির মানুষ ধর্মের নামে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করছে, ধোঁকা দিচ্ছে, আর নিজের পকেটপূর্তি করছে অন্যের অজস্র টাকা-পয়সা দিয়ে। সরলমনা পাবলিক তাদের প্রবঞ্চনায় প্রলুব্ধ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রিয় ভাই, এই তরুণটির ধারণা এমন হলো কেন? কেন সে ইসলাম সম্পর্কে এমন ধারণা পোষণ করছে? সঠিক ইসলামের দাওয়াত পেলে এমন হতো? কক্ষনো না। ইসলামী শিক্ষা হলো,وَاذْكُرْ رَبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ وَلَا تَكُنْ مِنَ الْغَافِلِينَ ‘তুমি তোমার প্রতিপালককে অনুচ্চ আওয়াজে, মনে মনে সঙ্গোপনে সবিনয়ে সকালে ও সন্ধ্যায় স্মরণ করো। আর গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (আল-আ‘রাফ, ৭/২০৫)।
ইসলামের নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার যুদ্ধ থেকে প্রস্থান করছেন। মনে প্রশান্তি বিরাজ করছে। আল্লাহর অবারিত নেয়ামতের বারি বর্ষিত হয়েছে মুসলিমদের ওপর। শত্রুদের শেষ পর্যন্ত পরাস্ত করেছে মুসলিম সেনানীরা। ছাহাবীগণের মনেও প্রশান্তির হিল্লোল বইছে। উৎফুল্লতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তারা মহান রবের মহিমা বর্ণনা করছেন একটু জোরেশোরে। তাদের যিকিরের গুঞ্জন রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কর্ণকুহরে অনুরণিত হলো, তিনি তাঁদের উদ্দেশ্য করে বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ ارْبَعُوْا عَلَى أَنْفُسِكُمْ فَإِنَّكُمْ لَا تَدْعُوْنَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا إِنَّهُ مَعَكُمْ إِنَّهُ سَمِيْعٌ قَرِيْبٌ تَبَارَكَ اسْمُهُ وَتَعَالَى جَدُّهُ ‘হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের প্রতি সদয় হও। তোমরা তো বধির বা অনুপস্থিত কাউকে ডাকছো না। বরং তিনি তো তোমাদের সঙ্গেই আছেন, তিনি তো শ্রবণকারী ও নিকটবর্তী’।[3]
এই তরুণ যুবকটি ইসলামের প্রকৃত রূপ জানতে পারল না ভণ্ড কিছু ধর্মব্যবসায়ীর কারণে। এই যুবকটি আজ ধর্মব্যবসায়ীদের কারণে সঠিক ইসলাম জানতে পারল না। যার ফলে সে ইসলাম থেকে বহু দূরে অবস্থান করল। ইসলামী বিধানকে মনে করছে সেকেলে। বস্তুবাদী মূলনীতি ও শিক্ষাকে মনে করছে মানবতার মুক্তির মূলমন্ত্র। এর দায়ভার কে নিবে? হে ভণ্ড হুজুর! পরকালে কী জবাব দিবে মহান প্রতিপালকের দরবারে? কিছু তরুণ-তরুণী ইসলামবিমুখ হচ্ছে ভুয়া কুসংস্কারকে ইসলামী বিধান মনে করে, আর কিছু হচ্ছে প্রবৃত্তির পেছনে পড়ে। নিজের মন যা চাচ্ছে তাই করছে।
পাঠককোণ থেকে বলছি, ইসলাম থেকে দূরে অবস্থান করবেন না। ইসলাম আপনার পক্ষের জিনিস, কল্যাণকামী। সদা চায় আপনার অন্তরে প্রশান্তির ফল্গুধারা বর্ষণ করতে।
আপনি বিপদে পড়ুন এটা কখনো আল্লাহ তাআলা চান না। ইসলামী কিছু বই পড়ুন। অযথা অবহেলায় বেখেয়ালে তো ঢের সময় নষ্ট করেছেন। ইসলামের খাতিরে একটু সময় ব্যয় করুন। গবেষণার রুদ্ধ দ্বার উন্মুক্ত করুন। হৃদয়ের আবদ্ধ দুয়ার একটু উন্মোচন করুন। খুলে দিন বন্ধ বাতায়ন। ইসলামী সমীরণ হৃদয়ের সংকীর্ণ জটলাবাঁধা আস্তরণ মুছে দিবে। ইসলামকে নিয়ে এতো সমালোচনা করছেন! আপনি যে বুলি আওড়াচ্ছেন, তা কি ‘অরণ্যে রোদন’ নাকি যথার্থ একটু দেখুন। কারো ব্যাপারে সমালোচনা করতে হলে তার সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে হয়; নচেৎ না জেনে কারো উপর মিথ্যা বুলি জুড়ে দেওয়া অন্যায় বৈ কিছু নয়। আপনি ইসলামের নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে একটু পর্যালোচনা করুন। তাঁর জীবনী শীর্ষক গ্রন্থ ‘আর রাহীকুল মাখতূম’ সময় করে পড়ুন। তাঁর জীবনধারা, কর্মপদ্ধতি, সমাজ সংস্কার কীভাবে করেছেন একটু দেখুন। শুধু বস্তুবাদী ভোগবাদীদের ব্যঙ্গাত্মক রসাত্মক কথা শুনে হাসলে চলবে? অন্ধভাবে তাদের পিছনে ছুটলে চলবে? আপনার না বিবেক আছে? এক্ষেত্রে আপনার বিবেক অবরুদ্ধ কেন? আপনি তো বাহ্যিক প্রমাণপঞ্জিতে বিশ্বাসী। আপনাকে
ভালোবেসে বলছি। একটু ইসলামের মোড়ানো পৃষ্ঠাগুলো ভাঁজ করুন। ঝরে পড়া ইসলামী জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করুন। আপনার জ্ঞানের সংকীর্ণ, অন্ধকারাচ্ছন্ন পথ প্রশস্ত করুন ইসলামী জ্ঞানের জ্যোতি দিয়ে। একবার অবগাহন করুন ইসলামী দরিয়ায়। সন্দেহ-সংশয় ও বাতিলের আবর্জনা আপনার থেকে চিরদিনের জন্য দূর হয়ে যাবে। আসুন না একটু ইসলামের আশপাশে আসি। বদলে যাই, বদলে দেই। ইসলাম আপনাকে বুকে তুলে নিবে। মুছে দিবে আপনার পাপ-পঙ্কিলতা, আপনার অশান্ত বিষণ্ণ মনে গেঁথে দিবে শান্তির বাসন্তী হাওয়া। আপনার সময় আমি নষ্ট করতে চাই না। জানি, আপনি সদা পার্থিব পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত আছেন; কিন্তু ভাই তারপরও একটু সময় বের করে ইসলামকে জানুন। দেখবেন আপনার লেখাপড়া আগের তুলনায় বহুগুণে উৎকর্ষিত হচ্ছে, কিছু একটা তৃপ্তি পাচ্ছেন। আপনি একবার পড়ে দেখুন না! মনে রাখবেন সৃষ্টিকুলকে হৃদয়ের গহীন থেকে ভালোবাসলেও ব্যর্থ ও কষ্ট পাওয়ার সম্ভাবনা আছে; কিন্তু স্রষ্টাকে ভালোবাসলে আপনি সুখী হবেনই ইনশা-আল্লাহ। তিনি আপনার হৃদয়কে এক পশলা মৃদুঠাণ্ডা রহমত দিয়ে শান্ত করবেন। আল্লাহ আপনার কল্যাণ করুন- আমীন!
সাঈদুর রহমান
শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, বীরহাটাব-হাটাব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
[1]. সিলসিলা ছহীহা, ৪/১৬৬।
[2]. ছহীহ মুসলিম, হা/৪২২।
[3]. ছহীহ বুখারী, হা/২৯৯২।