কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

পাপমোচন ও জান্নাত লাভের প্রকৃষ্ট মাধ্যম রামাযান

post title will place here

আমরা সবসময় কোনো না কোনোভাবে গুনাহের সাগরে ডুবে আছি। আমাদের জীবনে ছোট ছোট পাপের পরিক্রমায় প্রতিভাত হয় বড় বড় পাপ। যার কুপ্রভাব আমাদের জীবনের পরতে পরতে এঁকে দিচ্ছে ধ্বংসের সুস্পষ্ট ছায়াপাত।

পাপ থেকে পবিত্র করতেই আদম সন্তানের কাছে উপস্থিত হয় রামাযান মাস, যা পাপমোচনের বসন্তকাল। অজস্র নেকী সঞ্চয়ের নিরুপম হাতিয়ার। গুনাহের কুটির ধ্বংসকারী ঘূর্ণিঝড়, যা জীবনে পুঞ্জীভূত পাপের অধ্যায়ে পুণ্যের রঙতুলিতে মুছে দেয় পাপের কৃষ্ণ রেখাগুলো। পাশাপাশি তাতে এঁকে দেয় পুণ্য সঞ্চয়ের রঙিন প্রণালি। প্রভুর ক্ষমা লাভে পুনরায় প্রাণ ফিরে পায় পাপিষ্ঠ মন। যেই মাসের আগমনে বন্ধ হয় জাহান্নামের দুয়ার আর খুলে যায় নেয়ামতে ভর্তি জান্নাতের প্রবেশদ্বার।

এতোসব কল্যাণ লাভের নিমিত্তে রামাযান মাসে বেশি বেশি আমল করার গুরুত্ব প্রসঙ্গে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ دَخَلَ عَلَيْهِ رَمَضَانُ ثُمَّ انْسَلَخَ قَبْلَ أَنْ يُغْفَرَ لَهُ ‘ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক! যে রামাযান মাস পেল, অথচ তার (পাপরাশি) মোচন করার আগেই তা বিদায় নিল’।[1]

উক্ত হাদীছ হতে আহরিত মর্ম হলো, প্রত্যেক মুসলিমের উচিত, রামাযানে বেশি বেশি আমল করে সেই সুযোগটি লুফে নেওয়া। কারণ ইবাদত করার অন্যতম মৌসুম হলো রামাযান। এমনকি আল্লাহর কৃপা লাভের সমস্ত সমারোহ ঘটে উক্ত মাসে।

তাহলে চলুন! জেনে নেওয়া যাক রামাযানের মৌলিক আমলসূচি, যেগুলো সম্পাদন করে আমরা রামাযানের যথাযথ হক্ব আদায় করতে পারব এবং লুফে নিতে পারব কাঙ্ক্ষিত জান্নাত।

() রামাযানের ছিয়াম পালন করা: রামাযান মাসের প্রথম ও মুখ্য আমল হলো ছিয়াম সাধনা করা। কারণ ছিয়াম প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও মুক্বীম মুসলিম নর-নারীর উপর ফরয একটি ইবাদত।

আল্লাহ তাআলা বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন করতে পার’ (আল-বাক্বারা, ২/১৮৩)। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‘যে ব্যক্তি ঈমানসহ ছওয়াবের প্রত্যাশায় রামাযানের ছিয়াম পালন করে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়’।[2]

হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘হাদীছের বাহ্যিক দিক ‘ছগীরা ও কাবীরা’ সকল গুনাহকে শামিল করে। ইবনুল মুনযির রাহিমাহুল্লাহ এ মত পোষণ করেছেন’। ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে, ‘এই হাদীছ কেবল ছগীরা গুনাহের জন্য খাছ’। ইমামুল হারামাইনও (ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ-এর) এই মত পোষণ করেছেন। কাযী ইয়ায ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ-এর এই মতকে আহলুস সুন্নাতের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন। কতিপয় আলেম বলেছেন যে, (আমলনামায়) ছগীরা গুনাহ না থাকলে কাবীরা গুনাহ হালকা করে দেওয়া হয়।[3]

সত্যিকারার্থেই সে ব্যক্তি ব্যর্থ, আল্লাহর অপার অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত এবং হতভাগা, যে রামাযানের সাক্ষাৎ পেয়েও ছিয়াম রাখল না। কারণ রামাযানে ইসলামের বিভিন্ন প্রকার ইবাদতের সমাবেশ ঘটে আর প্রত্যেকটির বিনিময়ে মহামূল্যবান পুরস্কার রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো ছিয়াম, যার পারিতোষিক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নিজ হাতে প্রদান করবেন।[4]

() ক্বিয়ামুল লায়লে রত থাকা: রামাযান মাসে ক্বিয়ামুল লায়ল বা রাতের ছালাত (তারাবীহ/তাহাজ্জুদ) আদায় করলে অনেক ছওয়াবের মালিক হওয়া যায়। এমনকি এর বিনিময়ে বিগত জীবনের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‘যে ব্যক্তি রামাযানে ঈমানের সাথে ছওয়াবের আশায় দাঁড়িয়ে রাতের ছালাত আদায় করে, তার পূর্বের পাপরাশি মাফ করে দেওয়া হয়’।[5] পূর্বে উদ্ধৃত হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী রাহিমাহুল্লাহ-এর ব্যাখ্যাটি এই হাদীছের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। 

() আল্লাহর সমীপে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা: অসীম নিস্তব্ধতার মাঝে ক্ষমার পসরা নিয়ে আগমন করে রামাযান। এটা কলুষতা মোচনের বসন্তকাল। তাই প্রত্যেক মুসলিমের উচিত, বেশি বেশি তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে নিষ্কলুষ হওয়া। তাছাড়াও অধিক ইস্তিগফার করা তো প্রত্যেক মুসলিমের নির্ঘণ্ট হওয়া উচিত। কারণ মহান আল্লাহর বাণী, فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا ‘অতঃপর আমি (নূহ আলাইহিস সালাম-কে) বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল’ (নূহ, ৭১/১০)

আর রামাযান মাস তো আমাদের কাছে আসে আমাদেরকে পঙ্কিলতামুক্ত করতে। তাই আল্লাহর কাছে দুটি হাত তুলে অনুতপ্ত হৃদয়ে অশ্রুসজল নেত্রে একাগ্রতার সুরে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করাই হলো একজন মুসলিমের বৈশিষ্ট্যগত উৎকর্ষতার প্রমাণ।

() গুনাহের কর্ম থেকে বিরত থাকা: মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মত হিসেবে গুনাহ বলতে কোনো কিছু আমাদের জীবন ডায়েরিতে না থাকারই কথা। কিন্তু তারপরও ইবলীসী প্ররোচনায় কখনো আমরা পাপের মাঝে হারিয়ে যাই। কেউবা অল্প পাপের স্পর্শেই বুঝ ফিরে পেয়ে তা বর্জন করে। আবার কেউবা পাপের অতলান্ত সাগরে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে ডুবিয়ে দেয়। অথচ সেই পাপের কারণে আমরা হয়ে যেতে পারি জাহান্নামের যাত্রী! সুতরাং আমাদের সকলকেই সব ধরনের পাপকর্ম থেকে সর্বান্তকরণে বিরত থাকতে হবে। আর রামাযান মাসে তো বিশেষ রীতি অবলম্বনে হলেও এগুলোর ধারেকাছে যাওয়া যাবে না। কারণ পাপকর্ম বর্জন না করে ছিয়াম পালনের প্রকৃত ফলাফলই পাওয়া সম্ভব নয়। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ للهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ ‘যে ব্যক্তি (ছিয়ামরত অবস্থায়) মিথ্যা কথা ও সে অনুযায়ী কাজ করা বর্জন করেনি, তার পানাহার ত্যাগ করাতে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই’।[6]

() কুরআন মাজীদ পাঠ করা: রামাযান কুরআনের মাস। এই মাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা জিবরীল আলাইহিস সালাম-এর মাধ্যমে জীবনযাত্রার শ্রেষ্ঠ সংবিধান আল-কুরআন অবতীর্ণ হয়, যা সত্য ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য নিরূপণকারী, গাঢ় অমানিশার মাঝে জ্বলে ওঠা এক বিজলি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ ‘রামাযান মাস, যাতে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে মানুষের জন্য পথপ্রদর্শনকারী এবং সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী ও হেদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে’ (আল-বাক্বারা, ২/১৮৫)

আয়াতে বলা হয়েছে, মানবজাতির হেদায়াতের পথ বাতলে দেওয়ার জন্য কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। তাই হেদায়াতের পথ খুঁজে নিতে বেশি বেশি তা পাঠ করতে হবে এবং তার মর্মার্থ অনুধাবন করতে হবে। তাছাড়াও কুরআন পাঠে রয়েছে অসংখ্য ছওয়াব এবং পাঠকারীর জন্য তার সুপারিশ। আর রামাযান মাসে ছিয়াম পালনের সাথে তা পাঠ করার তাৎপর্য অপরিসীম। কারণ প্রত্যেক মুমিন বান্দার সর্বোচ্চ মনোরথ ও কামনা-বাসনা হলো চির শান্তির আবাস জান্নাতে যাওয়া। আর জান্নাতে যাওয়ার জন্য কুরআন ও ছিয়াম উভয়টিই তার ধারক-বাহকের জন্য আল্লাহর সমীপে শাফাআত করবে।

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَقُولُ الصِّيَامُ: أَيْ رَبِّ إِنِّي مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ وَيَقُولُ الْقُرْآنُ: مَنَعْتُهُ النُّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ فيشفعان ‘ছিয়াম এবং কুরআন বান্দার জন্য শাফাআত করবে। ছিয়াম বলবে, হে প্রতিপালক! আমি তাকে দিনে খাবার গ্রহণ করতে ও প্রবৃত্তির চাহিদামূলক কাজ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব, তার ব্যাপারে (এখন) আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, হে প্রতিপালক! আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি (সে রাত জেগে কুরআন পাঠে রত ছিল)। অতএব, তার ব্যাপারে (এখন) আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। অতঃপর উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে’।[7]

() দান-ছাদাক্বা করা: বেশি বেশি দান করা আদমসন্তানের অন্যতম গুণ হওয়া উচিত। আর রামাযান মৌসুমে দান-ছাদাক্বা করার আলাদা ফযীলত রয়েছে। রামাযানের আগমনে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দান করার পরিমাণ আরো বেড়ে যেত। ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ بِالْخَيْرِ وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ ‘নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধনসম্পদ ব্যয়ে সবচেয়ে বেশি দানশীল ও উদার ব্যক্তি ছিলেন। আর রামাযানে যখন জিবরীল তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তিনি আরও বেশি পরিমাণে দান-ছাদাক্বা করতেন’।[8]

() ছিয়াম পালনকারীকে ইফতার করানো: ছিয়াম পালনকারীকে ইফতার করানো অন্যতম একটি মহৎ কাজ, যা রামাযান মাসে আল্লাহর অবারিত রহমত, অনুকম্পা অর্জনের বিশেষ মাধ্যম। তার ফলে অপরিমেয় ছওয়াব লাভ করা যায়। তাই তো হাদীছে এসেছে, যায়েদ ইবনে খালেদ আল-জুহানী রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ غَيْرَ أَنَّهُ لاَ يَنْقُصُ مِنْ أَجْرِ الصَّائِمِ شَيْئًا ‘যে ব্যক্তি কোনো ছিয়াম পালনকারীকে ইফতার করায়, সে ব্যক্তির জন্য ছিয়াম পালনকারীর অনুরূপ ছওয়াব রয়েছে। কিন্তু এতে ছিয়াম পালনকারী ব্যক্তির প্রতিদান হতে বিন্দুমাত্র (ছওয়াব) কমানো হবে না’।[9]

() সর্বদা আল্লাহর কাছে কল্যাণের দুআ করা: মুমিন বান্দার অনন্য চরিত্র হলো ক্ষণে ক্ষণেই আল্লাহর কাছে নিষ্ঠার সাথে দু‘আ করবেন, এতে তার তাক্বওয়া প্রকাশ পায়। এজন্য রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আকেই ইবাদত বলেছেন,الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ ‘দু‘আই হলো ইবাদত’।[10]

সুতরাং এই ইবাদত নামক দু‘আ রামাযান মৌসুমে আরো বেশি বেশি করা উচিত। আমাদের সমাজে শুধু ইফতারের আগ মুহূর্তে দু‘আ করার প্রচলন রয়েছে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, রামাযান মাস পুরোটাই দু‘আ কবুলের মাস। তাই ছিয়াম অবস্থায় সবসময় আল্লাহর কাছে একাগ্রচিত্তে দু‘আ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,ثَلَاثٌ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ دَعْوَةُ الْوَالِدِ وَ دَعْوَةُ الصَّائِمِ وَ دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ ‘তিন ব্যক্তির দু‘আ কবুল করা হয়— ১. পিতা-মাতার দু‘আ, ২. ছিয়াম পালনকারীর দু‘আ ও ৩. মুসাফির ব্যক্তির দু‘আ’।[11]

() শেষ ১০ রজনিতে ইবাদতে নিবিষ্ট থাকা: রামাযান মাসের সর্বশেষ ও সবচেয়ে গাম্ভীর্যপূর্ণ ইবাদতসূচি হলো শেষ দশকে একাগ্রচিত্তে ইবাদতের মাঝেই সময় অতিবাহিত করা। কারণ এই ১০ রাতেই রয়েছে ‘লায়লাতুল ক্বদর’ বা মহিমান্বিত রজনি, যা হাজারো মাস অপেক্ষা উত্তম (আল-ক্বদর, ৯৭/)

অতঃপর লায়লাতুল ক্বদরকে পাওয়ার জন্য আরো উত্তম ব্যবস্থা এই শেষ দশকে আছে, তা হলো ই‘তিকাফ। এ ব্যাপারে আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত হয়েছে,أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللهُ ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ ‘নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামাযান মাসের শেষ দশকে তাঁর মৃত্যু অবধি ই‘তিকাফ করেছেন। তাঁর (মৃত্যুর) পরে তাঁর সহধর্মিণীগণ ই‘তিকাফ করেছেন’।[12]

এসকল প্রতিদান লাভের আমলগুলোর সমারোহ ঘটে রামাযানের শেষ দশকে। তাই তো রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশকের আগমনে খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতেন। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ وَأَحْيَا لَيْلَهُ وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ ‘যখন রামাযানের শেষ দশক আসত, তখন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোমর বেঁধে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদত করার জন্য শক্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন) এবং রাতে বিনিদ্র থাকতেন ও পরিবারবর্গকে জাগিয়ে দিতেন’।[13]

অতএব, প্রত্যেক মুসলিমকেই রামাযান মৌসুমের শেষ দশকে ইবাদতে নিবিষ্ট ও একাগ্র হতে হবে। সর্বোপরি, কোনোক্রমেই যেন লায়লাতুল ক্বদরের রাতটি না ছুটে যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে। কারণ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‘যে ব্যক্তি লায়লাতুল ক্বদরে ঈমানের সাথে ছওয়াবের প্রত্যাশায় (রাত জেগে) ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়’।[14]

প্রিয় পাঠক! ভাবনাপূর্ণ হৃদয়ে সেই অবস্থার কথা স্মরণ করুন, যখন হাজারো কোটি মানুষের সমাগমে আপনিও আহূত হবেন ‘রাইয়্যান’ নামক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশের জন্য। জান্নাতের বিশেষ এই দুয়ার দিয়ে প্রবেশের সুখানুভূতি পাওয়ার নিমিত্তে আল্লাহর জন্য নিজের সুখকে একটু বিসর্জন দিন! দেখবেন এর প্রতিদান অনেক মিষ্ট হবে ইনশা-আল্লাহ।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ইসলামের সমস্ত হুকুম-আহকাম পালন করার মাধ্যমে এবং রামাযান মাসের প্রভূত প্রতিদানসহ উল্লিখিত আমলগুলো যথাযথভাবে সম্পাদন করার মাধ্যমে জান্নাতুল ফেরদাউস লাভ করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

রিফাত সাঈদ

শিক্ষার্থী, মাদরাসাতুল হাদীছ, নাজির বাজার, বংশাল, ঢাকা।


[1]. তিরমিযী, হা/৩৫৪৫; মিশকাত, হা/৯২৭, হাদীছ হাসান।

[2]. ছহীহ বুখারী, হা/২০১৪।

[3]. ফাতহুল বারী, ৪/২৫১।

[4]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৯২৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১১৫১।

[5]. ছহীহ বুখারী, হা/২০০৮।

[6]. ছহীহ বুখারী, হা/১৯০৩।

[7]. শুআবুল ঈমান, হা/১৯৯৪; মিশকাত, হা/১৯৬৩।

[8]. ছহীহ বুখারী, হা/১৯০২; ছহীহ মুসলিম, হা/২৩০৮।

[9]. তিরমিযী, হা/৮০৭।

[10]. ইবনু মাজাহ, হা/৩৮২৮; মিশকাত হা/২২৩০।

[11]. সিলসিলা ছহীহা, হা/১৭৯৭।

[12]. ছহীহ বুখারী, হা/২০২৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১১৭২।

[13]. ছহীহ বুখারী, হা/২০২৪; ছহীহ মুসলিম, হা/১১৭৪।

[14]. ছহীহ বুখারী, হা/২০১৪।

Magazine