কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

সফলতার সোপান!

post title will place here

‘সফলতা’ সবার কাছেই কাঙ্ক্ষিত শব্দ, যার প্রতি সবাই আকৃষ্ট, যা অর্জন করতে সামাহীন কষ্ট করতে হয়। জীবনের প্রতিটি ধাপেই যেটা পাওয়ার ইচ্ছা ক্রমবর্ধমান। কিন্তু সেই জিনিসটা কী? ক্ষমতা, শক্তি, প্রভাব, পটুত্ব, দক্ষতা, যোগ্যতা, নিপুণতা, আধিপত্য, রাজকীয় ক্ষমতা, সম্মান, সম্ভ্রম, পরিচিতি, আকাঙ্ক্ষিত-স্পৃহাপূর্ণ ডিগ্রি অর্জনই কি সাফল্য, না-কি এর মানে অন্য কিছু? ধনী এবং ক্ষমতাধর ব্যক্তিটি যদি দিনশেষে অসুখী ও অতৃপ্তই থাকে, তাহলে কি তাকে খুব একটা সফল বলা যায়? মনে রাখতে হবে, সুখ বা আনন্দ সাফল্যের চাবিকাঠি নয়। বরং সুখ আর আনন্দ সাফল্যের ছোট্ট উপাদানমাত্র। সেটা ব্যক্তিভেদে, অবস্থাভেদে একেকজনের কাছে একেক রকম মনে হয়।

সোপান-১:বাধা-বিপত্তি ও ব্যর্থতার আবরণ চিরে সফলতার মুখ

জীবনে সফলতার স্বাদ পেতে হলে শত বাধা-বিপত্তি, উৎপাত, উপদ্রব, দৌরাত্ম্য, ঝামেলা, অন্তরায়ের উপস্থিতি সত্ত্বেও চেষ্টায় রত থাকতে হবে। এই নিরত থাকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ— ছোট-বড় নানা রকম ব্যর্থতা, ভুলত্রুটি, নিরুৎসাহের মোলাকাতে বিচলিত না হওয়া। এসব বাধাকে চোখের জল ঝরার কারণ মনে না করে ক্রমাগতভাবে নিজের কাজ অব্যাহত রাখা। 

ব্যর্থতার মধ্য দিয়েই সফলতার উপকরণ রচিত হয়। প্রতিদিন আমরা অম্বরের গাঁয়ে সূর্যের যে ঝলমলে হাসিটা দেখি, তার জন্য সূর্যকে শীতের জমাটবাঁধা কুয়াশার মতো আবরণ চিরে এবং আরো অনেক বাধা অতিক্রম করে সাক্ষাৎ করতে হয় মোদের সাথে। তেমনিভাবে মানুষেরও তার লক্ষ্যে পৌঁছতে অনেক দুর্গম পথ ও দুর্বোধ্য অবস্থা পাড়ি দিতে হয় এবং অদম্য-অপ্রতিরোধ্য চেষ্টায় নিজেকে রত রাখতে হয়।

ব্যর্থতা হতে উত্তরিত হয়ে সফলতার ইতিহাস যারা সৃষ্টি করেছেন, তাদের উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। সেই সব বিখ্যাত ব্যক্তিদের সফলতার পেছনে জীবনের উষালগ্নেই রয়েছে ব্যর্থতার গল্প। কারো কারো জীবনে বড় বড় ব্যর্থতাই সফলতার হাতিয়ার হিসেবে দেখা দিয়েছে। পৃথিবীতে কেউ ব্যর্থ হতে চায় না, সবাই সফল হতে চায়। কিন্তু সেই চাওয়া এবং পাওয়ার মাঝে একটা বিরাটকায় পাঁচিল (দেয়াল) দণ্ডায়মান, সেই পাঁচিল পেরিয়ে যে বিজয়নিশান উড়াতে পারে, সেই সফলতার মোলাকাত লাভ করে।

সোপান-২: সফলতার জন্য কঠোর পরিশ্রমএবং প্রয়াস প্রয়োগ

দুর্বলকে যোগায় শক্তি, দিশেহারাকে দেখায় পথ, অন্ধকারে জ্বালায় আলোর মশাল। হতাশা, ব্যর্থতা, গ্লানির তিক্ত অনুভূতিগুলো যখন মস্তিষ্ককে বেষ্টন করে, তখন সামনে পুরোগামী হওয়ার জন্য সম্বল হয় ‘চরম প্রয়াস ও চেষ্টার প্রতিজ্ঞা’।

সুতরাং বারংবার চেষ্টা ও পরিশ্রম বৈ কোনো কাজ সম্পাদন করা সম্ভব নয়। 

‘চরম প্রয়াস ও পরিশ্রম ছাড়া সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়’- এর একটি দৃষ্টান্ত : ধরুন! একজন লোক দুপুরের খাবার খেতে রেস্টুরেন্টে গেলেন। ভেতরে ঢুকে দেখলেন রেস্টুরেন্টের তিনটি দরজা। প্রথমটিতে লেখা— বাঙালি খাবার, দ্বিতীয়টিতে— ইন্ডিয়ান খাবার, তৃতীয়টিতে— চাইনিজ খাবার। লোকটি সিদ্ধান্ত নিলো চাইনিজ খাবারটিই খাওয়া যাক। ঢুকে পড়ল ‘চাইনিজ দরজায়’। সেখানে দেখতে পেল আরো দুটি দরজা— ১. বসে খাবেন, ২. বাসায় নিয়ে খাবেন। লোকটি যেহেতু বসে খাবে, তাই ‘বসে খাবেন’ দরজায় ঢুকে পড়ল। সেখানে গিয়ে দেখল আরো দুটি দরজা- ১. ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম.রযিয়াল্লাহু আনহু. Room ২. আলাইহিস সালামoআলাইহিস সালাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম.রযিয়াল্লাহু আনহু. Room. লোকটি চিন্তা করল একটু আরাম-আয়েশেই খাওয়া যাক। সেই সুবাদে এসি রুমে ঢুকে পড়ল। এসি রুমের ভেতরে আরো দুটি দরজা- ১. ফ্রিতে খাবেন, ২. টাকা দিয়ে খাবেন। লোকটি খুব বেশি খুশি হলো যে, এত সুন্দর জায়গা, এত সুন্দর খাবার ব্যবস্থাপনা; যদি ফ্রিতে খাই, তাহলে তো ভালোই হয়। তাই সে ‘ফ্রিতে খাবেন’ দরজায় ঢুকে পড়ল। তারপর খেয়াল করল— যেখান দিয়ে সে ঢুকেছে, সেখান দিয়েই তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। 

এখান থেকে আহরিত শিক্ষা হলো :

() Special বা বিশেষ জিনিসগুলো কখনোই ফ্রিতে পাওয়া যায় না। Special জিনিস পেতে হলে পরিশ্রম করতে হয়। অনুরূপভাবে সফলতাও মূল্যবান ও স্পেশাল জিনিস। সেটা পেতে হলে অবশ্যই কষ্ট-ক্লেশ স্বীকার করতে হবে। 

() গল্পে উদ্ধৃত লোকটি (ফ্রিতে খাওয়ার) সুযোগে আপ্লুত হয়ে যেভাবে খাবার থেকে বঞ্চিত হয়েছে, ঠিক তেমনি সফলতা অর্জনে কষ্টহীনতা ও opportunists বা সুযোগ-সুবিধার পথ খুঁজলে সফলতার রাজপথ থেকে ছিটকে পড়তে হবে। 

مَن جَدَّ وَجَدَ ‘যে চেষ্টা করে, সে (তা অর্জনে) সফল হয়’ একটা আরবী প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে।

আমরা স্বাভাবিকভাবে দৃষ্টি দিলেই দেখতে পাই যে, মানুষ চেষ্টার ফলশ্রুতিতে অনেক অসম্ভব ব্যাপারকে কিছুটা হলেও সম্ভবে রূপ দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ—

চাঁদকে হাতের মুঠোয় না আনতে পারলেও চাঁদের মাটিতে পদার্পণ করতে পেরেছে। পাখির মতো পাখা মেলে গগণ বুকে উড়তে না পারলেও শূন্যে চলার বাহন তৈরি করেছে। মুহূর্তেই নিজের কথাকে শত মাইল দূরে থাকা মানুষটির কানে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে।

এগুলো কম সাফল্যের প্রতীক নয়; এসবকিছুই ‘চেষ্টা’ নামক বৃক্ষের সুমিষ্ট ফল। 

এ কথার অনুকূলে সবকিছুই যে চেষ্টার মাধ্যমে হবে, তা নয়। কতিপয় অসম্ভব বিষয় রয়েছে, যেগুলো মানুষ হাজারো প্রচেষ্টায় সম্পন্ন করতে সক্ষম নয়। যেমন— মৃতকে জীবিত করা, মাতৃগর্ভে সন্তান আনা, কে কোথায়, কোন সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে এটা জানা ইত্যাদি। 

এ জাতীয় বিষয় ব্যতিরেকে অন্য যেসব বিষয় সাধন করতে সমর্থ হওয়া যায়, তা অর্জনে সর্বদাই আল্লাহর উপর ভরসা ও চেষ্টার অবরোহণীতে আরোহণ করে উপরে ওঠায় রত থাকতে হবে। 

এ কারণেই বলা হয়ে থাকে, اَلسَّعْيُ مِنَّا وَالْإِتْمَامُ مِنَ اللهِ ‘আমরা চেষ্টা করতে পারি, কিন্তু দেওয়ার মালিক আল্লাহ’।

আর চেষ্টা করলে যে আল্লাহ তাআলা তার ফলাফল প্রদান করেন, কুরআনুল কারীমেই তার অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়। আল্লাহ বলেন, وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى ‘আর মানুষের জন্য তাই প্রাপ্য, যা সে চেষ্টা করে’ (আন-নাজম, ৫৩/৩৯)

সর্বোপরি, রবের কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা এটাই— তিনি আমাদেরকে সমস্ত প্রকার বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে উভয় জগতে সফলকাম হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন! 

শিক্ষার্থী, মাদরাসাতুল হাদীস, নাজির বাজার, বংশাল, ঢাকা।

Magazine