কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

বৈজ্ঞানিক তত্ত্বে আল-কুরআন

post title will place here

বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও কুরাআনের তত্ত্ব কি পরস্পর সাংঘর্ষিক? কুরআন কি বিজ্ঞানের বিরোধিতা করে? বর্তমানে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে বিজ্ঞান যে বিষয়ে আবিষ্কার করতে পারেনি আর কুরআন বহু আগেই সেই বিষয়ে বাতলে দিয়েছে সেটাকে আমরা বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক মনে করি। আসলে বিজ্ঞানীরা নিজেরাও স্বীকার করে যে, অনেক বিষয় তারা এখনও আবিষ্কার করতে পারেনি। বিজ্ঞান ও কুরআন নিয়ে মানুষের কৌতূহল বরাবরের মতোই রয়েছে। আজ আমি আপনাদের কাছে অপ্রতুল জ্ঞান নিয়েই কুরআন ও বিজ্ঞান নিয়ে দুয়েকটি নমুনা পেশ করার প্রয়াশ পাব ইনশা-আল্লাহ।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সূরা ইয়াসীনের শুরুতে শপথ করে বলেছেন, ‘বিজ্ঞানময় কুরআনের শপথ’। আল-কুরআনে বৈজ্ঞানিক অনেক গূঢ় তথ্য আছে বলে আল্লাহ তাআলা কুরআন এর নাম ‘হাকীম’ রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে সবকিছুর বর্ণনা দিয়েছেন। এজন্য মহান আল্লাহ বলেছেন, مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ ‘আমি এই কিতাবে কোনো কিছুই বাদ দেইনি’ (আনআম, ৬/৩৮)

মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে আল্লাহ তাআলা অনেক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বর্ণনা করেছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন, أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ ‘যারা কুফুরী করে তারা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে। অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে; তবু কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?’ (আল-আম্বিয়া, ২১/৩০)

বর্তমানকালের আধুনিক বিজ্ঞান অতি সাম্প্রতিককালে যে তত্ত্বকে ‘বিগব্যাং তত্ত্ব’ বলে আবিষ্কার করেছে, সেই তথ্য মহান আল্লাহ ১৪০০ বছর আগে পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا ‘আকাশ আর যমীন এক সঙ্গে সংযুক্ত ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে আলাদা করে দিলাম’ (আল-আম্বিয়া, ২১/৩০)। আধুনিক বিজ্ঞান দাবি করে পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র সবকিছু একসাথে জমাট বেঁধে ছিল। এরপর প্রচণ্ড একটি বিস্ফোরণ হয় আর এই বিস্ফোরণের ফলে পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহের সৃষ্টি হয়। বস্তুত তারা যদি কুরআনকে গবেষণা করত, তাহলে আরও অনেক আগেই এই ‘বিগব্যাং তত্ত্ব’ তারা আবিষ্কার করতে পারত। কুরআনের বর্ণিত আল্লাহর এই সৃষ্টিতত্ত্ব সর্বকালের সকল মানুষের জন্য একটি অনন্য উপমা। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, وَأَوْحَى رَبُّكَ إِلَى النَّحْلِ أَنِ اتَّخِذِي مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا وَمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُونَ - ثُمَّ كُلِي مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِي سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًا يَخْرُجُ مِنْ بُطُونِهَا شَرَابٌ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِلنَّاسِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ ‘তোমার রব মৌমাছির অন্তরে ইঙ্গিত দ্বারা নির্দেশ দিয়েছেন, তুমি গৃহ নির্মাণ করো পাহাড়, বৃক্ষ এবং মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে। এরপর প্রত্যেক ফল হতে কিছু কিছু আহার করো, অতঃপর তোমার রবের সহজ পথ অনুসরণ করো। ওর উদর হতে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়, যাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিষেধক। অবশ্যই এতে রয়েছে নিদর্শন চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য’ (আন-নাহল, ১৬/৬৮-৬৯)

মৌমাছির আচরণ ও যোগাযোগের ওপর গবেষণার জন্য ১৯৭৩ সালে নোবেল পান ভন-ফ্রিচ। কোনো নতুন বাগান বা ফুলের সন্ধান পাওয়ার পর একটি মৌমাছি আবার মৌচাকে ফিরে যায় এবং মৌমাছি নৃত্য নামক আচরণের মাধ্যমে তার সহকর্মী মৌমাছিদেরকে সেখানে যাওয়ার সঠিক গতিপথ ও মানচিত্র বলে দেয়। অন্যান্য শ্রমিকমৌমাছিকে তথ্য দেওয়ার লক্ষ্যে এ ধরনের আচরণ আলোকচিত্র ও অন্যান্য পদ্ধতির সাহায্যে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আগে মানুষ ভাবত কর্মী মৌমাছিরা পুরুষ এবং ঘরে ফিরে এসে তাদেরকে একটি রাজা মৌমাছির কাছে জবাবদিহিতা করতে হয়। কিন্তু এটা সত্য নয়, কারণ আল্লাহ তাআলা কুরআনে স্ত্রীবাচক শব্দ ব্যবহার করেছেন যা প্রমাণ করে শ্রমিক মৌমাছিরা স্ত্রী এবং তারা রাজা নয়, বরং রাণী মৌমাছির কাছে জবাবদিহিতা করে। মৌমাছিদের বোধশক্তি ও তীক্ষ্ম বুদ্ধি তাদের শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে সুন্দররূপে অনুমান করা যায়। এ দুর্বল প্রাণীর জীবনব্যবস্থা মানুষের রাজনীতি ও শাসননীতির সাথে চমৎকার মিল রয়েছে। সমগ্র আইন-শৃঙ্খলা একটি বড় মৌমাছির হাতে থাকে এবং সেই হয় মৌমাছির শাসক। আল্লাহ তাআলা এসব বর্ণনা করার পর বলছেন, এগুলোর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য। সুতরাং মানুষ যদি এ ছোট্ট প্রাণীকে নিয়ে চিন্তা করে, তাহলে অনেক শিক্ষা অর্জন করতে পারবে।[1]

বিজ্ঞানী ভন-ফ্রিচ মৌমাছি নিয়ে যে গবেষণা করে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, সে বিষয়ে মহান আল্লাহ ১৪০০ বছর আগে আল-কুরআনে বলে দিয়েছেন। কুরআনের এসব বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বড় বড় বিজ্ঞানীদেরকেও অবাক করে।

আল্লাহ তাআলা আরও বলেছেন, لَا الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ ‘সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া এরং রাতের পক্ষে সম্ভব নয় দিনকে অতিক্রম করা; আর প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সাঁতার কাটে’ (ইয়াসীন, ৩৬/৪০)। সূরা ইয়াসীনের এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা আরেকটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বর্ণনা করেছেন। তা হলো চাঁদ, সূর্য নিজ নিজ কক্ষ পথে আবর্তন করে। এমনকি প্রতিটি গ্রহেরই একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথ রয়েছে আর সেগুলো সেই কক্ষপথেই আবর্তিত হয়। সুতরাং মহান আল্লাহ বলে দিলেন যে, তিনিই এই ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন এবং তাঁর নির্দেশেই সৌরজগতের সকল কিছু পরিচালিত হয়। যে তত্ত্ব বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছে অল্প কিছু কাল আগে, তা মহান আল্লাহ অনেক আগেই বলে দিয়েছেন।

অতএব, একজন মুমিন-মুসলিম কিংবা একজন বিজ্ঞানী যখন রবের দেওয়া এই কালাম গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়বে, তখন রবের প্রতি কৃতজ্ঞতায় তার মাথা রবের সামনে সেজদায় নত করে দিবে।

মো. জোবাইদুল ইসলাম

 মিরসরাই, চট্টগ্রাম।


[1]. তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ, সূরা আন-নাহল, ১৬/৬৮-এর তাফসীর দ্রষ্টব্য।

Magazine