কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

বাহ্যিক আমলের পূর্বেই অন্তরের আমল

post title will place here

সমস্ত গুণকীর্তন মহান রবের জন্য। দরূদ ও শান্তি বর্ষিত হোক মানবতার মুক্তির দিশারী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর। আমাদের সকল ইবাদত একমাত্র মহামহিম আল্লাহর জন্য ও রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণে নিবেদিত।

মানুষ যেসব আমল করে, তা দুই প্রকার— ১. অন্তরের আমল এবং ২. বাহ্যিক আমল। অন্তরের আমল হলো— ভালোবাসা, ভয় করা, আশা করা, ভরসা করা ইত্যাদি। আর বাহ্যিক আমল হলো— ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি আদায় করা। বাহ্যিক আমলের চেয়ে অন্তরের আমলের গুরুত্ব অধিক। অন্তরের সকল আমলের মূল হলো এই তিনটি। তথা— ১. الحب বা ভালোবাসা, ২. الخوف বা ভয় করা এবং ৩. الرجاء বা আশা-আকাঙ্ক্ষা করা। কারো মাঝে যদি অন্তরের আমল না থাকে, তাহলে তার বাহ্যিক আমল কোনো কাজে আসবে না। তাই বাহ্যিক আমলের চেয়ে অন্তরের আমল অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আর অন্তরের যত আমল আছে, তার মূল হলো এই তিনটি আমল।

একজন মুমিন সর্বদা নিজেকে প্রশ্ন করবে, তার মাঝে কি এই তিনটি গুণ আছে? সে কি আল্লাহকে ভালোবাসে? তার কাছে কী প্রমাণ আছে, যার দ্বারা বুঝা যায় যে সে আল্লাহকে ভালোবাসে? তেমনি দ্বিতীয় গুণ الخوف বা ভয় করা। সে নিজেকে প্রশ্ন করবে, সে কি আল্লাহকে ভয় করে? তার কাছে এমন কী প্রমাণ আছে যে, সে আল্লাহকে ভয় করে? তেমনি তৃতীয় গুণ হলো الرجاء বা আল্লাহর কাছে আশা করা। সে নিজেকে প্রশ্ন করবে, সে কি আল্লাহর কাছে আশা করে? তার কাছে এমন কী প্রমাণ আছে, যা দ্বারা বুঝা যায় যে, সে আল্লাহর কাছে আশা করে?

সে এই তিনটিকে একটি পাখির সাথে তুলনা করবে। الحب হলো পাখির মাথা, الخوف হলো পাখির ডান পাশের ডানা আর الرجاء হলো পাখির বাম পাশের ডানা। এখন দেখুন, যদি الحب না থাকে অর্থাৎ পাখির মাথা কেটে ফেলা হয়, তাহলে সে আর বাঁচবে না। الخوف বা তার ডান পাশের ডানা যদি না থাকে, তবে সে উড়তে পারবে না, পড়ে যাবে। তাই পাখিটিকে উড়তে হলে, রবের পানে ছুটতে হলে তার তিনটিই থাকতে হবে। যার থেকে একটি ছুটে গেলে সে আর উড়তে পারবে না।

আপনি কীভাবে বুঝবেন আপনার মাঝে আল্লাহর ভালোবাসা আছে? যখন দেখবেন রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ পালন করছেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করছেন, তখন বুঝতে পারবেন আপনি আল্লাহকে ভালোবাসেন। তাই তো আল্লাহ তাআলা বলেন, قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ ‘হে নবী! আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার আনুগত্য করো, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন’ (আলে ইমরান, ৩/৩১)

তাই যেকোনো ইবাদত কিংবা আমল করার পূর্বে ভাববেন, এটা কি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণে করছেন? যদি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমলটি করার আদেশ দিয়ে থাকেন বা তিনি নিজে করে থাকেন, তবে তা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী করবেন। আর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি আদেশ না করে থাকেন বা কাজটি থেকে নিষেধ করে থাকেন, তবে সেই কাজটি থেকে বিরত থাকবেন। এটাই হলো ভালোবাসার প্রমাণ।

তেমনি দ্বিতীয় হলো الخوف বা ভয় করা। যখন দেখবেন বড় পাপ তো বটেই, ছোট পাপগুলোতে জড়াতেও বিবেকে বাধা দিচ্ছে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকছেন; আল্লাহর অবাধ্যতার কোনো কাজ করতে গেলেই পরকালের কঠিন শাস্তির চিন্তা মাথায় ভেসে উঠছে, তখন বুঝবেন আপনার মাঝে আল্লাহর ভয় আছে। 

তৃতীয় বিষয় হলো الرجاء বা আশা করা। যখন দেখবেন চিরস্থায়ী সুখের আশায় ক্ষণিকের এই দুনিয়াকে তুচ্ছ মনে হচ্ছে, মহান রবের সান্নিধ্য লাভের আশায় ফরয ও নফল ইবাদতগুলোতে তৃপ্তি অনুভব করছেন, তখন বুঝতে পারবেন যে আপনি আল্লাহর কাছে আশা করেন। 

আপনি যত আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্য করবেন, আল্লাহর প্রতি আপনার ভালোবাসা তত বাড়বে। পক্ষান্তরে আপনি যতটা আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিরত থাকবেন, দূরে থাকবেন, আল্লাহর প্রতি তত আপনার ভালোবাসা কমবে। তেমনি আপনি যতটুকু পাপ কাজ করবেন, আপনার থেকে ততটুকু আল্লাহর ভয় কমবে আর যত বেশি পাপ কাজ থেকে দূরে থাকবেন তত আল্লাহর প্রতি ভয় বাড়বে। আর আপনি যত বেশি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ বাস্তবায়ন করবেন বা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কাজ যেভাবে করেছেন সেই কাজ সেভাবে করবেন, আল্লাহর কাছে আপনার আশা (জান্নাত) ও আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আকাঙ্ক্ষা তত বাড়বে। আর যত দূরে থাকবেন তত কমতে থাকবে।

অতএব, হে মুসলিম ভাই! আপনি প্রতিটি ক্ষণেই, প্রতিটি মুহূর্তেই নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আপনার মাঝে এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ আছে কি-না? আল্লাহর ভালোবাসা, ভয় ও আশা-আকাঙ্ক্ষা আছে কি-না? থাকলে এই তিনটিকে মজবুত করতে সচেষ্ট হোন আর না থাকলে সেগুলো অর্জন করার প্রতি ধাবিত হোন। আপনার ইবাদতের মাঝে এই তিনটি বিষয় থাকা আবশ্যক। আল্লাহর কাছে কামনা করছি, তিনি আমাদেরকে এই তিনটি গুণে গুণান্বিত হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

অধ্যয়নরত, মাদরাসা মুহাম্মাদীয়া আরাবীয়া, উত্তর যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।

Magazine