পথশিশু আমাদের নিত্য পরিচিত একটি শব্দ। যারা পথে থাকে, পথে খায়, পথেই ঘুমায় তারাই পথশিশু। সাধারণত পথশিশুদের নেই কোনো আপনজন, নেই মা-বাবা কিংবা বাড়ি-ঘরও। তাই পথই তাদের একান্ত আপন। পথশিশুরা কীভাবে থাকে, কীভাবে খায়, কীভাবে ঘুমায়? তা কারো অজানা নয়। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে একটা বিশাল সংখ্যক পথশিশুদের বাস। ইউনিসেফের তথ্য মতে, সর্বশেষ বাংলাদেশে মোট পথশিশুর সংখ্যা ৯ লাখ ৭৯ হাজার। (এভাবে চললে) ২০২৪ সালে যার পরিমাণ দাঁড়াবে ১৬ লাখ ১৫ হাজারে।[1]
কিন্তু এই বিশাল সংখ্যক পথশিশুর পুর্নবাসনের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি? হয়তো এর উত্তর হবে- না, এখনো নেয়নি। কিন্তু কেন? এইসব পথশিশু তাহলে কী করে দু’মুঠো খাবার যোগাড় করে? কেউ হয়তো কারো কাজ করে, আবার কেউ চুরি-ছিনতাই করে, কেউ মাদক ব্যবসা করে। তবে ইদানীং রাজধানীসহ শহরাঞ্চলে চুরি-ছিনতাই বেড়ে গেছে অনেক। তার কারণ হলো পথশিশুরা দু’মুঠো খাবারের পাশাপাশি এখন আসক্ত হয়ে গেছে মাদকে।
মাদকাসক্ত পথশিশুরা তাদের মাদক কেনার টাকা জোগাড় করার জন্য হরহামেশাই চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদেরকে জড়াচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো, তারা কোন্ মাদকে আসক্ত? সেই মাদক তাদের কাছে কীভাবে আসে? তারা এতসব অপরাধ করার পরও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি? চলুন প্রথমে জানা যাক, পথশিশুদের মাদকাসক্তের হার কত? বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের গবেষণা মতে, বাংলাদেশে মোট পথশিশুর ৮৫ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে মাদকাসক্ত।[2]
এবার আসি- তারা কোন্ মাদকে আসক্ত! তথ্য মতে, পথশিশুদের অধিকাংশই ‘ড্যান্ডি’ নামক মাদকে আসক্ত, যা হলো এক ধরনের আঠা জাতীয় মাদক। এই মাদক তারা পলিথিনে নিয়ে নিশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করে। আর এই ‘ড্যান্ডি’ নামক মাদকে আসক্তি এতটাই তীব্র যে, তারা যখন এই মাদক সেবন না করতে পারে, তখন তারা অস্থির হয়ে যায়। আবার এই মাদক সেবনের টাকা জোগাড় করতেই তারা চলন্ত গাড়ি থেকে, মানুষের পকেট থেকে, চলন্ত যানবাহনে বসা মানুষদের থেকে চুরি-ছিনতাই করছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা মতে, মাদকাসক্তির ৭ বছরের মধ্যেই ৮০ শতাংশ পথশিশু অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে।[3]
মাদক সেবন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। সুতরাং প্রশাসনের উচিত এই ব্যাপারে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া। এবার জানা যাক, পথশিশুদের হাতে এই মাদক আসে কোথা থেকে? উত্তর হলো- হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে। ‘ড্যান্ডি’ নামক আঠা জাতীয় এই মাদক হার্ডওয়্যারের দোকানগুলোতে খুব সহজেই পাওয়া যায়। যদিও ১৮ বছর বয়সের নিচে কারো কাছে এইসব পণ্য বিক্রি করা বৈধ নয়, তবুও তারা নিয়মভঙ্গ করে এইসব পণ্য অবাধেই বিক্রি করছে। এখানেও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ একান্ত জরুরী।
সবশেষে একথাই বলতে চাই যে, সরকারের উচিত পথশিশুদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করত দেশে মাদক নির্মূল করা এবং পুলিশ প্রশাসনকে আরও সচেতন হয়ে কাজ করা জন্য নির্দেশ দেওয়া। বিশেষ করে UNICEF যেহেতু এই পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে, তাদেরও উচিত হবে এই ছিন্নমূল পথশিশুদের পুর্নবাসনের দিকে নজর দিয়ে তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে সহায়তা করা।
মাদকে জড়াচ্ছে পথশিশুরা
মো. জোবাইদুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, আলিম ২য় বর্ষ, সুফিয়া নুরিয়া ফাযিল মাদরাসা, মিরসরাই, চট্টগ্রাম।
[1]. https://www.jagonews24.com/opinion/article/722717.
[2].https://www.jugantor.com/todays-paper/city-news/135455.
[3]. https://www.dailynayadiganta.com/opinion/607460.