৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ইং, রোজ শনিবার: এদিন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ-এর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা, ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন হাফিযাহুল্লাহ রাজশাহীতে সরকারি সফরে আসেন। বিমানবন্দর থেকে প্রথমে তিনি সকাল ৯ : ৩০ মিনিটে আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রাজশাহীতে আগমন করেন। মাননীয় উপদেষ্টাকে অভ্যর্থনা জানান আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, বাংলাদেশ-এর মহাপরিচালক শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ এবং তার প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। তিনি প্রথমে প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখেন। তিনি অ্যাকাডেমিক ভবন পরিদর্শন করেন এবং জামি‘আহর শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থা ও পাঠদান পদ্ধতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। অতঃপর বায়তুল হামদ জামে মসজিদে ছাত্র-শিক্ষকবৃন্দের সাথে এক মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের বিষয়টি অবগত হয়ে অভিভূত হন। ‘আমাদের চিন্তা-চেতনা যেন আল্লাহকে সন্তুষ্টির জন্য হয়। আসুন আমরা সবাই মিলে এদেশকে সুখী-সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তুলি’– একথা তিনি বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ হাফিযাহুল্লাহ। তিনি মাননীয় উপদেষ্টাকে স্মরণ করে দেন যে, এই দায়িত্ব তিনি নিজে থেকে চেয়ে নেননি; বরং তাকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অর্পণ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা যেন তার উপর এই অর্পিত দায়িত্ব সহজ করে দেন মর্মে দু‘আ করেন। মতবিনিময় সভা শেষে ছাত্র-শিক্ষকদের পক্ষ থেকে, মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়কে ক্রেস্ট ও নিজ প্রকাশনাসমূহের পুস্তকসমূহ উপহার তুলে দেওয়া হয়। ‘নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন’-এর সহ-সেক্রেটারি ও ‘আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ’-এর পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় ধর্ম উপদষ্টার নিকট রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ২২ দফা প্রস্তাবনা স্মারকলিপি পেশ করেন। এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হলে দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। ২২ দফার মূল লক্ষ্য হলো দেশে সুশাসন অধিকতর কার্যকর করা, জাতীয় ঐক্য ও সংহতি শক্তিশালী করা এবং জনগণের সুসমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা।
প্রস্তাবিত ২২ দফা : ১. সংবিধান সংশোধন ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন করা, ২. প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা, ৩. উচ্চকক্ষে বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্তিকরণ, ৪. প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিজস্ব পরিষদ গঠন, ৫. শরীআতবিরোধী আইন প্রণয়ন নিষিদ্ধকরণ, ৬. শারীআহভিত্তিক বিচারব্যবস্থার প্রবর্তন, ৭. সূদমুক্ত ইসলামী অর্থনীতি চালু করা, ৮. জাতীয় সংগীত পরিবর্তন, ৯. ভারতের সাথে ন্যায্য ও সমতাভিত্তিক চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন, ১০. যৌথ নদীগুলোর ন্যায্য হিস্যা আদায়, ১১. প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন, ১২. রাজধানীর বিকেন্দ্রীকরণ, ১৩. বিচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ স্বাধীন করা, ১৪. পুলিশ বাহিনী সংস্কার, ১৫. বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম নিষিদ্ধকরণ, ১৬. প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার, ১৭. ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, ১৮. মূর্তি ও ভাস্কর্য নির্মাণে অর্থের অপচয় বন্ধ করা, ১৯. কৃষিখাতে ব্যাপক ভর্তুকি প্রদান, ২০. স্বাস্থ্য খাত ও ব্যবসায়িক খাতের উন্নয়ন, ২১. ক্বওমী শিক্ষার যৌক্তিক স্বীকৃতি এবং ২২. ইসলামী ফাউন্ডেশনে সালাফী বা আহলেহাদীছের সংযুক্তি।
এই ২২ দফা প্রস্তাবনা দেশের সর্বস্তরের জনগণের সমর্থন পাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, অবিলম্বে এই প্রস্তাবনাসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং জনকল্যাণ নিশ্চিত করুন। আল্লাহ সহজ করুন- আমীন!