আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী উজানের কোনো দেশ নদীর ওপর দেওয়া বাঁধের গেট খুলে দেওয়ার ৭২ ঘণ্টা আগে ভাটির দেশকে জানানোর কথা। কিন্তু কোনো পূর্বসতর্কতা ছাড়াই ডুম্বুর ও কলসি বাঁধ খুলে দেয় ভারত। ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট ভারী বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ফেনী ও নোয়াখালীসহ দেশের ১১ জেলার ৭৩টি উপজেলা প্লাবিত হয়। দেশের ১১টি বন্যাকবলিত জেলায় ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬২৯টি পরিবার পানিবন্দি এবং ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৫৪ লাখ মানুষ। সারা দেশ থেকে মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। নানা ব্যক্তি ও সংস্থাও এ কাজে অংশ নেয়। ‘নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন’-এর অধীন পরিচালিত ‘আল-জা‘মিআহ আস-সালাফিয়্যাহ’ ও ‘আদ-দাওআহ ইলাল্লহ’ উদ্ধার, হাদিয়া বিতরণ ও পুনর্বাসন কাজে অংশ নেয়। গত ২২ আগস্ট সকালে শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ বন্যার্তদের উদ্ধার, হাদিয়া বিতরণ ও পুনর্বাসনের সহযোগিতার ঘোষণা দেন। ২২ তারিখ রাতে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে রওনা হয় আদ-দাওয়াহ ইলাল্লহ-এর স্বেচ্ছাসেবকগণ। ২৩ আগস্ট ফজরের পর থেকে সারাদিন ফেনীর মধুপুর ১৫ নং ওয়ার্ডের বন্যায় আটকা পড়া ৪০টি পরিবারের দুই শতাধিক মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার করতে সক্ষম আদ-দাওয়া ইলাল্লাহ-এর স্বেচ্ছাসেবকগণ। এরমধ্যে ১৫টি পরিবারের ৬৫ জন সদস্য সনাতন ধর্মাবলম্বী ছিলেন। নবজাতক শিশু ছিল ১০ জন। এদের মধ্যে একজনের সাত দিন এবং আরেকজনের বয়স ছিল দেড় মাস। পরদিন, ২৪ আগস্ট মহীপালে শায়খ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ ওস্তায সশরীরে উপস্থিত হন। তিনি ফেনী সেনা ক্যাম্পে ২ ট্রাক ত্রাণ হস্তান্তর করেন। অতঃপর তিনি সরেজমিনে মধুপুর ওয়ার্ডে আদ-দাওয়াহ টিমের সদস্যদের সাথে শুকনো খাদ্য হাদিয়া ও নগদ অর্থ বিতরণ করেন। যে সকল পরিবারে অসুস্থ রোগী ও প্রতিবন্ধী ছিল তাদের ত্রাণ, ঔষধ ও নগদ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেন। ২৫ আগস্ট দুপুরের পর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে আদ-দাওয়া ইলাল্লাহ-এর বোট দিয়ে সহযোগিতা করেন আদ-দাওয়াহ ইলাল্লাহ-এর স্বেচ্ছাসেবকগণ। ২৫ আগস্ট ৫ ট্রাকে খাদ্যসামগ্রী হাদিয়া নিয়ে রওনা হয় ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশ্যে। ২৬ আগস্ট, আদ-দাওয়াহ ইলাল্লহ-এর স্বেচ্ছাসেবকগণ সেসব এলাকায় এগুলো পৌঁছে দেন যে-সব এলাকায় তখনো পৌঁছায় নাই। এখন পর্যন্ত উদ্ধার ও উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয় লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। এখন পর্যন্ত মোট ২৩ ট্রাক সামগ্রী হাদিয়া পাঠানো হয়। ১৩ ট্রাকে শুকনা খাদ্য ও ১০ ট্রাক ভারী খাদ্যসামগ্রী। এতে ১৩ হাজার প্যাকেট ছিল। ৫ হাজার ব্যাগে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। ‘নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ প্রথম ধাপে বন্যার্তদের উদ্ধার কাজ সম্পন্ন করে। পরে বেশ কয়েক ধাপে শুকনা খাদ্য— চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, লবণ, খাবার পানি, চাল, ডাল, আলু, ভোজ্য তেল, শিশুখাদ্য দুধ, চিনি, ওরস্যালাইন ও জরুরী ঔষধ, মোমবাতি ও গ্যাস লাইটার ইত্যাদি। তেসরা সেপ্টেম্বর ফেসবুক লাইভে এসে আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক পুনর্বাসনের ঘোষণা দেন এবং গুগল ফরম পূরণের জন্য আহ্বান করেন। পুনর্বাসন কার্যক্রমে সুবিধা পাবেন কৃষক, খামারি, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও গৃহহীন/ক্ষতিগ্রস্ত গৃহমালিকগণ। ২৪ তারিখ বাজেট ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৫০ লক্ষ অর্থ ত্রাণ তহবিলে জমা হয়। দ্বীনি ভাই-বোনদের সহযোগিতায় এ কার্যক্রম চলমান থাকবে ইনশা-আল্লাহ। বন্যার্তদের সহযোগিতা করতে অতি সহজেই ওয়েবসাইট ও নগদ এ্যাপের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে পারেন এমন ব্যবস্থাও করেছে নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন। এ ছাড়াও বিকাশ এ্যাপের মাধ্যমে সহজেই ডোনেশন করার পদ্ধতি কাজ চলমান, সম্পন্ন হয়ে গেলে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে ইনশা-আল্লাহ। বিভিন্ন সংগঠন ও সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সশরীরে ও অনলাইনে সাহায্য পাঠিয়েছেন। কেউ গুচ্ছিত অর্থ কেউবা কানের দুল ইত্যাদি তার বিশ্বস্ত সংস্থা নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনে দিয়েছেন। জাতির দুর্যোগকালে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ কতিপয় মানুষের ক্ষুধা-তৃষ্ণা দূর করতে সহায়তা করেছে। আল্লাহ তাআলা এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে উত্তম প্রতিদান দিন- আমীন!
কুরআন ও দ্বীন শিক্ষা কোর্স : ব্যাচ নং- ০৪
গত ২৪ আগস্ট হতে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং পর্যন্ত, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহীতে ২০ দিনব্যাপী হাতে-কলমে ‘কুরআন ও দ্বীন শিক্ষা’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ‘নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন’-এর অধীন পরিচালিত ‘আদ-দাওয়াহ ইলাল্লহ’ এ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে। প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন’-এর সহ-সেক্রেটারি ও ‘আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ’-এর পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে সনদ ও মূল্যবান বই তুলে দেন। এতে প্রশিক্ষক ছিলেন আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ-এর শিক্ষক, ছাত্র ও আদ-দাওয়াহ ইলাল্লহ-এর দাঈগণ— আব্দুর রাযাযাক বিন ইউসুফ, মুহাম্মাদ ইউসুফ মাদাদী, আব্দুল আহাদ, হাসান আল-বান্নাহ মাদানী, আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক, আব্দুর রহমান বিন আব্দুর রাযযাক, হাফেয শহীদুল ইসলাম, মুসলেহউদ্দিন বিন সিরাজুল ইসলাম, মুহাম্মাদ আল-ফিরোজ, আব্দুল্লাহ আল-মাহমূদ প্রমুখ বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। ব্যাচ নং ৪-এ দেশের বিভিন্ন স্থান হতে ৩৬ জন দ্বীনি ভাই অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে মূল্যায়ন পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়।
মক্তব শিক্ষক প্রশিক্ষণ : ব্যাচ নং- ১২
‘আদ-দাওয়াহ ইলাল্লহ’-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হলো মক্তব শিক্ষক প্রশিক্ষণ। আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহীতে গত তেসরা আগস্ট হতে ৮ই আগস্ট ২০২৪ ইং পর্যন্ত ৬ দিনব্যাপী ১২তম ব্যাচের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এ কর্মশালায় প্রশিক্ষক ছিলেন— শায়েখ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ, মুহাম্মাদ ইউসুফ মাদানী, আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক, হাফেয শহীদুল ইসলাম, মুসলেহউদ্দিন বিন সিরাজুল ইসলাম, মুহাম্মাদ আল-ফিরোজ, আব্দুল্লাহ আল-মাহমূদ প্রমুখ। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মোট ১০ জন মক্তব-শিক্ষক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
মক্তব শিক্ষক প্রশিক্ষণ : ব্যাচ নং- ১৩
আগস্টে দ্বিতীয় ধাপে মক্তব শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। ১০ই আগস্ট হতে ১৫ই আগস্ট এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা চলে। এতে ১৩ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। এ কর্মশালায় প্রশিক্ষক ছিলেন— শায়েখ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ, মুহাম্মাদ ইউসুফ মাদানী, আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক, হাফেয শহীদুল ইসলাম, মুসলেহউদ্দিন বিন সিরাজুল ইসলাম, মুহাম্মাদ আল-ফিরোজ, আব্দুল্লাহ আল-মাহমূদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য যে, এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্দেশ্য হলো দেশব্যাপী মক্তব শিক্ষাকে প্রসারিত করা। সম্পূর্ণ ফ্রি প্রশিক্ষণ দেওয়া। এর ফায়েদা হলো— ১. শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা, ২. মক্তব-শিক্ষার্থীর স্বল্প সময়ে কুরআন শিখানোর কৌশল রপ্ত করা, ৩. শিক্ষার্থীকে সহজে আদব-আখলাক ও নীতি-নৈতিকতা শেখানো, ৪. দেশে প্রচলিত জাল-বানোয়াট ও অর্থহীন ছড়া বা গল্পের পরিবর্তে সত্য ও শিক্ষামূলক ছড়া বা গল্পের মাধ্যমে শিশুদের আন্দোলিত করা, ৫. রাসূল ও ছাহাবীদের জীবনী সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা, যাতে শিক্ষার্থীবৃন্দ তাদের জীবন থেকে আদর্শ গ্রহণ করতে পারে। (আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক প্রণীত নবী ও ছাহাবীদের জীবনীসম্বলিত তথ্যসমৃদ্ধ ‘আদর্শ শিক্ষা’ বইটি পাঠ্যভুক্ত), ৬. শিক্ষকদের হাতের লেখা চর্চা করানো হয়, যাতে শিক্ষার্থীগণ ভুল লেখা হতে বিরত থাকে এবং ৭. শিক্ষকদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দু‘আ চর্চা করানো হয়, যাতে সোনামণিরা নিয়মিত দু‘আ চর্চায় অভ্যস্ত হয়।