‘আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ’-এর সম্মানিত সিনিয়র মুহাদ্দিছ, দেশবরেণ্য সালাফী আলেমে দ্বীন, ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীস জামা’আত’-এর মুহতারাম আমীরে জামাআত, ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর সাবেক সিনিয়র নায়েবে আমীর ও ‘আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী’-এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ শায়খ আব্দুস সামাদ সালাফী মাদনী (৮৭) গত ১৮ জুন, ২০২৫ ইং, রোজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়াস্থ ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইনতিকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন)। মৃত্যুকালে তিনি ৩ ছেলে ও ৩ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। পরদিন তিনটি জানাযার ছালাত অনুষ্ঠিত হয়— ১ম জানাযা সকাল ৮টায় আল জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, রাজশাহী, ২য় জানাযা সকাল ১১টায় আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী ও ৩য় জানাযা দুপুর ১:৩০ মিনিটে সারাংপুর, গোদাগাড়ী, রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হয় এবং জানাযা শেষে নিজ গ্রামে সমাহিত করা হয়। জানাযায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্বশীলবৃন্দ এবং বিপুল সংখ্যক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন।
শায়খ আব্দুস সামাদ সালাফী p রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার সারাংপুর মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আলাতুলী ইউনিয়নে। দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার পর তিনি উচ্চতর ইসলামী শিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রথমে পাকিস্তানের করাচিস্থ আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহতে এবং পরে সঊদী আরবের মদ ীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন এবং সেখান থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা লাভের পর তিনি সঊদী সরকারের মাবঊস (প্রেরিত দাঈ) হিসেবে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তিনি মহিমাগঞ্জ আলিয়া মাদরাসার মুহাদ্দিছ, মাদরাসা ইশাআতুল ইসলাম আস-সালাফিয়্যাহতে অধ্যক্ষ, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফীর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ও সর্বশেষ সুস্থ থাকাকালীন অবস্থা পর্যন্ত আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহতে সিনিয়র মুহাদ্দিছ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ শিক্ষকতা পেশায় তৈরি করেছেন হাজারো আলেমে দ্বীন, যারা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে দ্বীনের খেদমতে নিয়োজিত আছেন।
শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন সফল সংগঠক। দীর্ঘদিন ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর নায়েবে আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন; দায়িত্বপালনকালে দেশের আনাচে-কানাচে দাওয়াতি কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন, ‘তাওহীদ ট্রাস্ট’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলামী দাওয়াহ কার্যক্রম পরিচালনা, মসজিদ ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। নায়েবে আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীস জামা’আত’-এর আমীর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সংগঠনটির আমীর হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর নায়েবে আমীর থাকা অবস্থায় ২০০৫ সালে তিনি ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করেন এবং প্রায় দেড় বছর কারানির্যাতন ভোগ করেন। সাংগঠনিক কাজে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হওয়ার পরও দাওয়াতী কাজে আপসহীন ভূমিকা পালন করেন।
আল্লাহ তাআলা শায়খের গুনাহখাতা ক্ষমা করুন, তাঁর দ্বীনি খেদমত কবুল করুন এবং জান্নাতুল ফেরদাউস নছীব করুন। সেই সাথে তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্যধারণ করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!