কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

আহলান ওয়া সাহলান, ইয়া রামাযান!

আমাদের পাপ ও পঙ্কিলতার ঘনকৃষ্ণ মেঘমালা দ্বারা আচ্ছাদিত ১১টি মাসের মধ্য থেকে হঠাৎ রামাযান নামক এক ঝলক বিদ্যুৎ চমকিত হতে যাচ্ছে। রামাযানের আগমনে অবিরাম বৃষ্টিধারার ন্যায় রিমঝিম করে ঝরতে থাকবে রহমতের বারিধারা। খুলে দেওয়া হবে তওবার দ্বারসমূহ। শয়তানদের অবরুদ্ধ করা হবে আর বন্ধ করা হবে জাহান্নামের দরজা। উন্মুক্ত করা হবে জান্নাতের দুয়ার। শুরু হয়ে যাবে সাহরীর সেই হর্ষ; খাবার নিয়ে ইফতারের দীর্ঘ প্রতীক্ষা। রামাযান হচ্ছে, আমলের বসন্তকাল। পুণ্যের মৌসুম। গুনাহ মাফের এক অনুপম মাধ্যম। জান্নাতে প্রবেশের সর্বোৎকৃষ্ট মার্গ।

প্রিয় রামাযান! স্বাগত তোমাকে! তুমি তো হৃদয়ের ডায়েরিতে লিখে দাও আল্লাহ ও রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ভালোবাসার মহাকাব্য। কুরআনের রংতুলিতে এঁকে দাও বর্ণিল এক জীবন-চিত্র। ইলাহী আলোয় উদ্ভাসিত করে দাও আমাদের জীবন। খুঁজে দাও ছিরাতুল মুস্তাক্বীমের পথ। সাজিয়ে দাও জীবনের ছন্দ। এক ক্লিকেই ডিলিট করে দাও পাপের সমস্ত ফোল্ডার। করে দাও রবের সাথে নিরবিচ্ছিন্ন এক সংযোগ। কখনো এক পশলা বৃষ্টি হয়ে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে দাও হৃদয়-কোণে জমে থাকা ধুলোবালির আস্তরণ। কখনো-বা ঘোর অমানিশার মাঝে দেখা দাও একখণ্ড রোদ্দুর হয়ে। কখনো আবার স্নিগ্ধ বাতাসের ন্যায় এক ফুঁ-তেই নিভিয়ে দাও মনের কালো ধোঁয়া। মন-মাঝারে বইয়ে দেও ভোরবিহানের মৃদুল সমীরণের শীতল ছোঁয়া।

কেন রামাযান মাস এত তাৎপর্যবহ? কী রয়েছে তাতে? চলো জেনে নেওয়া যাক—

(১) হিজরী পঞ্জিকার ১২টি মাসের মধ্যে শুধু একটি মাসের নামই পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। আর সে মাসটি হলো রামাযান। যা এ মাসটির অসামান্য মর্যাদার পরিচয় বহন করে (আল-বাক্বারা, ২/১৮৫)

(২) ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি অন্যতম স্তম্ভ এই রামাযান।[1]

(৩) রামাযানের গুরুত্ব বোঝাতে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আদম সন্তানের প্রত্যেকটি নেক আমল ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, কিন্তু এর ব্যতিক্রম হলো ছওম। কেননা, ছওম আমার জন্যে রাখা হয় এবং আমিই এর প্রতিদান দিব।[2]

(৪) এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম (আল-ক্বদর, ৯৭/১-৫)

(৫) এ মাসে পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয় (আল-বাক্বারা, ২/১৮৫)। এছাড়াও রামাযানের রয়েছে আরো অনেক গুরুত্ব ও ফযীলত। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছে,رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ دَخَلَ عَلَيْهِ رَمَضَانُ ثُمَّ انْسَلَخَ قَبْلَ أَنْ يُغْفَرَ لَهُ ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলোধূসরিত হোক, যে রামাযান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল’।[3]

প্রিয় ভাই! তুমি কি খুব বেশি পাপ করে ফেলেছ? এ পাপ ঝেড়ে পরিষ্কার করতে চাও? রহমতের বারিধারায় জীবনকে ধুয়েমুছে ছাপ চাও? তাহলে ছিয়াম রাখো। কুরআন খুলে পুণ্য অর্জন করো। গুনাহের মার্জনা পেতে দু’হাত তোলো। অনুতপ্ত হয়ে রবের দ্বারে নত হও বরকতমুখর রামাযানের দিনে। রামাযান তো তোমারই প্রতীক্ষায়। প্রতিদিনই তো মোবাইল ফোনে সময় কাটাও বা অনর্থক কথাবার্তা ও কাজকর্মে রাত পার করে দেও। এ ক’টা দিন না হয় রবের ইবাদাতেই রাত কাটাও। সারা জীবন তো পাপের সাগরে ডুবে থাকলে। এবার তো খুঁজে নিতে হবে পুণ্যের রাজ্য। অতএব, অশ্রু ঝরাও। আমলে ডুবে থাকো দিবানিশি। কুরআন খুলে কথা বলো রবের সাথে। জয় করে নাও প্রভুর মন। তুমি দেখো, আল্লাহ তোমাকে মাফ করে দিবেন, ইনশাআল্লাহ। তিনি তো ‘গফূরুর রহীম’ (আল-বাক্বারা, ২/১৭৩)

প্রিয় ছওম পালনকারী! মাত্র ৩০টা দিন। এ ক’টা দিন একটু কষ্ট করে ছিয়াম রাখো, তোমার রবের জন্য। শুধুই তোমার রবের জন্য। আচ্ছা, তখন কেমন লাগবে, যখন কোটি মানুষের ভিড়ে أَيْنَ الصَّائِمُونَ (ছওম পালনকারীরা কোথায়) বলে তোমাকেও ডাকা হবে রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশের জন্য?[4] জানো, তোমার মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে কত প্রিয়? মিশকের ঘ্রাণের চেয়েও প্রিয়![5] আর এই ছিয়াম ক্বিয়ামতের সেই কঠিন দিনে তোমার পক্ষে সুপারিশও করবে। কী বলবে, জানো? বলবে, ‘হে আমার রব! আমি দিনের বেলা ছিয়াম পালনকারীকে পানাহার ও যৌন কর্ম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব, তুমি আমার সুপারিশ কবুল করো’।[6]

হে প্রিয় রামাযান! তোমাকে আমাদের খুবই প্রয়োজন। একটু জলদি আসো। জানোই তো, আমরা বড় পাপী। আর ধীরে ধীরে যাও। যেন কুরআনটা খতম করতে পারি। লায়লাতুল ক্বদরের নিষুপ্ত রজনিতে অশ্রুসিক্ত করে গুনাহগুলো মুছে নিতে পারি। মনের সকল আশা-আকাঙ্ক্ষা ও কল্পনাগুলো বাস্তবে রূপ দিতে পারি। হে রামাযান! আমরা তো তোমার আগমনের অপেক্ষায়। তোমাকে জানাই, আহলান ওয়া সাহলান, ইয়া রামাযান!

সাব্বির আহমাদ

অধ্যয়নরত, মাদরাসাতুল হাদীস, নাজির বাজার, বংশাল, ঢাকা।


[1]. ছহীহ বুখারী, হা/৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬; মিশকাত, হা/৪।

[2]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৯২৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১১৫১; মিশকাত, হা/১৯৫৯।

[3]. তিরমিযী, হা/৩৫৪৫, হাসান ছহীহ; মিশকাত, হা/৯২৭।

[4]. ছহীহ বুখারী, হা/১৮৯৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১১৫২।

[5]. ছহীহ মুসলিম, হা/১১৫১।

[6]. বায়হাক্বী, শুআবুল ঈমান, ৩/৩৭৮, হা/১৮৩৯; মিশকাত, হা/১৯৬৩।

Magazine