কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

ইসলামে বৃক্ষ

আল্লাহ তাআলা পৃথিবীকে অপরূপ সৌন্দর্যময় করে সৃষ্টি করেছেন। গাছগাছালি, বৃক্ষ-তরুলতা এই সৃষ্টিকে অনিন্দ্য করে তুলেছে। সবুজ পাতায় ছেয়ে থাকা বৃক্ষ প্রাণে শিহরণ জাগায়। ঝিরঝির হিমেল বাতাসে দেহ-মন জুড়িয়ে যায়। গাছের সঙ্গে মানুষের জীবনযাপন ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

গাছ থেকে আমরা অক্সিজেন পাই। সেই অক্সিজেন গ্রহণ করে আমরা বেঁচে থাকি। গবেষকদের মতে, একটি গাছ বছরে প্রায় ১০ থেকে ৪০ কেজি অর্থাৎ গড়ে প্রায় ২৫ কেজি কার্বনডাই অক্সাইড গ্রহণ করে। গাছপালা ও বৃক্ষ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। চারদিক সজীব-সতেজ ও স্বাভাবিক রাখে। দূষণমুক্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ মানবজাতির জন্য অত্যন্ত জরুরী।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বনভূমি থাকার দরকার ২৫ শতাংশ, বর্তমানে আছে প্রায় ১৬ শতাংশ, বনভূমি কম রয়েছে ৯ শতাংশ।[1]

গাছপালা প্রকৃতির সৌন্দর্য: আল্লাহ তাআলা ফলবান গাছপালা ও সবুজ-শ্যামল বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করেছেন। কুরআনে কারীমে বলা হয়েছে,يُنْبِتُ لَكُمْ بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُونَ وَالنَّخِيلَ وَالْأَعْنَابَ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ ‘তোমাদের জন্য পানির সাহায্যে তিনি উৎপন্ন করেন শস্য, যায়তুন, খেজুর, আঙুর এবং সব ধরনের ফল-ফলাদি। নিশ্চয়ই এসবের মধ্যে নিদর্শন রয়েছে, তাদের জন্য, যারা চিন্তা-গবেষণা করে’ (আন-নাহল, ১৬/১১)

মূলত এসব কিছু মানুষের প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণ হিসেবে তৈরি করেছেন। এছাড়াও কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির কিছু দৃশ্য মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়েছে, যেন সব কিছু দেখে মানুষ আল্লাহর শক্তিমত্তার কথা স্মরণ করে।

গাছপালা মহান আল্লাহর অপার নেয়ামত। কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের মাধ্যমে তা প্রতীয়মান হয়। মহান আল্লাহ বলেন,اَوَ لَمْ یَرَوْا اَنَّا نَسُوْقُ الْمَآءَ اِلَى الْاَرْضِ الْجُرُزِ فَنُخْرِجُ بِه زَرْعًا تَاْكُلُ مِنْهُ اَنْعَامُهُمْ وَ اَنْفُسُهُمْ اَفَلَا یُبْصِرُوْنَ ‘তারা কি লক্ষ করে না, নিশ্চয়ই আমরা ঊষর ভূমির ওপর পানি প্রবাহিত করে তার সাহায্যে উদ্গত করি শস্য, যা থেকে তাদের গবাদি পশু এবং তারা নিজেরা আহার গ্রহণ করে?’ (আস-সাজদা, ৩২/২৭)

গাছ আল্লাহকে সিজদা দেয়: আল্লাহ তাআলাকে গাছগাছালি ও বৃক্ষরাজি সিজদা করে। তাঁর তাসবীহ পাঠ ও পবিত্রতা বর্ণনা করে। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللّٰهَ یَسْجُدُ لَه مَنْ فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَنْ فِی الْاَرْضِ وَ الشَّمْسُ وَ الْقَمَرُ وَ النُّجُوْمُ وَ الْجِبَالُ وَ الشَّجَرُ وَ الدَّوَآبُّ وَ كَثِیْرٌ مِّنَ النَّاسِ ‘আপনি কি দেখেননি, নিশ্চয়ই আল্লাহকে সিজদা করে নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে, সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি, পর্বতমালা, বৃক্ষরাজি ও জীবজন্তু এবং বহু মানুষ?’ (আল-হাজ্জ, ২২/১৮)

বৃক্ষরোপণে নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উদ্দীপনা: রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাছ লাগাতে উৎসাহিত করেছেন, যাতে উদ্ভিদ বৃদ্ধি পায় ও পরিবেশ সুস্থ হয় ও বিশ্ব মানবতার জন্য বাসযোগ্য থাকে। আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا أَوْ يَزْرَعُ زَرْعًا فَيَأْكُلُ مِنْهُ طَيْرٌ أَوْ إِنْسَانٌ أَوْ بَهِيمَةٌ إِلاَّ كَانَ لَهُ بِهِ صَدَقَةٌ ‘যদি কোনো মুসলিম কোনো গাছ রোপণ করে অথবা ক্ষেতে ফসল বুনে, আর তা থেকে কোনো পাখি কিংবা মানুষ বা কোনো চতুষ্পদ প্রাণী খায়, তাহলে তা তাঁর জন্য ছাদাক্বা হিসেবে গণ্য হবে’।[2]

বৃক্ষরোপণের ফযীলত: বৃক্ষরোপণ ও গাছ লাগানোর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে যথার্থ মূল্যায়ন পাওয়া যায়। বৃক্ষরোপণ ইবাদত ও নেক আমল হিসেবে গণ্য। বান্দার লালন-পালনে বেড়ে ওঠা বৃক্ষ থেকে সৃষ্টিজীবের কেউ কিছু খেলেই বা একটু উপকৃত হলেই ছওয়াব লেখা হয় তার আমলনামায়। রোপণকারী ব্যক্তির মৃত্যু হলেও তা ছাদাক্বায়ে জারিয়া হিসেবে গণ্য হবে। আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, إِنْ قَامَتِ السَّاعَةُ وَفِي يَدِ أَحَدِكُمْ فَسِيلَةً، فَإِنِ اسْتَطَاعَ أَنْ لَا يَقُومَ حَتَّى يَغْرِسَهَا فَلْيَغْرِسْهَا ‘যদি ক্বিয়ামত সংঘটিত হয়, আর তোমাদের কারো হাতে একটি গাছের চারা থাকে, তবে যদি সে পারে ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগে তা রোপণ করতে, তবে সে যেন সেই চারাটি রোপণ করে’।[3]

প্রয়োজন ছাড়া গাছকাটা নিষিদ্ধ: পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য গাছের ভূমিকা অপরিহার্য। তাই অপ্রয়োজনে বৃক্ষনিধন করা ঠিক নয়।

প্রয়োজনে গাছকাটা যায়: পরিবেশ ও স্থানের জন্য ক্ষতিকর অথবা মানুষের চলাচলে কষ্ট হয় অথবা যে-কোনো প্রয়োজনে গাছ কাটলে কোনো অসুবিধা নেই। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি এক ব্যক্তিকে দেখেছি জান্নাতে সে ঐ গাছের ছায়ায় চলাচল করছে, যে গাছটি সে রাস্তার মোড় থেকে কেটেছিল। গাছটি মানুষকে কষ্ট দিত’।[4]

শেষ কথা: বৃক্ষরোপণ ও গাছ লাগানোর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করা যায়। বৃক্ষরোপণ ইবাদত ও ছাদাক্বায়ে জারিয়া হিসেবে গণ্য। গাছগাছালি আমাদের সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশের জন্য অত্যন্ত জরুরী উপাদান।

অপ্রয়োজনে গাছ না কেটে, প্রচুর (অন্তত বছরে একটা করে হলেও) বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করা আমাদের উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

-শফিক নোমানী

অধ্যয়নরত, মাথিয়া ই.ইউ. ফাজিল (স্নাতক) মাদরাসা, কিশোরগঞ্জ সদর, কিশোরগঞ্জ।


[1]. উইকিপিডিয়া।

[2]. ছহীহ বুখারী, হা/২৩২০; ছহীহ মুসলিম, হা/৪০৫৫।

[3]. আদাবুল মুফরাদ, হা/৪৭৯; মুসনাদে আহমাদ, ৩/১৮৩, ‘ছহীহ’।

[4]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫৮৩৭।

Magazine