পোশাক বিতর্ক বাংলাদেশের অতি সাম্প্রতিক বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। কে কী রকম পোশাক পরবে, সেটা তার স্বাধীনতা বলে দাবি করা হচ্ছে। এই বিষয়ে সবাই একমত যে, পছন্দমত পোশাক পরার স্বাধীনতা সবারই আছে। কিন্তু বিতর্ক হলো— অরুচিশীল, অশালীন ছোট পোশাক কিংবা অমার্জিত পোশাক নিয়ে। স্বাধীনতার নামে যাচ্ছেতাই পোশাক পরা কি ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষের কাজ হতে পারে? কখনই না। কারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ কখনও অমার্জিত এমন কোনো পোশাক পরিধান করতে পারে না, যা তার সম্পর্কে অন্যের মনে খারাপ ধারণা নিয়ে আসতে পারে। বিশেষ করে, নারীদের পোশাকের ক্ষেত্রে রুচিশীল পোশাক না পরে যাচ্ছেতাই পোশাক পরে রাস্তায় বের হওয়ার কারণেই তারা ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে, ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।
এই পোশাক বিতর্কে অনেকেই মন্তব্য করেছেন যে, শুধু পোশাকই নারীদের ধর্ষণের একমাত্র কারণ নয়। এটা শতভাগ সত্য কথা। কিন্তু একজন ব্যক্তিত্ববান নারী কি অশালীন পোশাক পরে ঘর থেকে বের হতে পারে? কোনো নারী যদি অশালীন পোশাক পরে ঘর থেকে বের হয়, এরপর ধর্ষণের শিকার হয়, তাতে এই অশালীন পোশাকের দায় হচ্ছে ৯০ শতাংশ বাকি ১০ শতাংশ ধর্ষকের লালসার দায়। কিন্তু নারীরা এই বিষয়টিকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে ৯০ শতাংশ দায়ই দেন ধর্ষকের উপর, যা আদৌ বাস্তবতাভিত্তিক কথা হতে পারে না।
ইভটিজিং এর ক্ষেত্রেও বিষয়টা প্রায় একই রকম। তবে কিছু ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। ইভটিজারদের অধিকাংশই রাস্তার বখাটে ছেলে। তারা যেকোনো নারীকেই উত্যক্ত করতে পারে। তাদের লালসার কাছে নারীই মুখ্যবিষয়। তবে এক্ষেত্রেও নারীদের ছোট, অমার্জিত, অশালীন পোশাকই ইভটিজারদের ইভটিজিংয়ের প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠে। তাই নারীদের উচিত, নিজেদেরকে শালীন পোশাকে আবৃত করে বাইরে বের হওয়া।
বাংলাদেশে দিন দিন ধর্ষণ ও ধর্ষকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবুও কি নারীরা তাদের পোশাকের স্বাধীনতাকেই বড় করে দেখবে? তারা কি তাদের মান-সম্মানটাকে বড় বিষয় মনে করে না? সবকিছুরই একটা নির্দিষ্ট সীমা আছে। তাই নারীর পোশাকের স্বাধীনতারও একটা নির্দিষ্ট সীমা থাকা উচিত। কারণ অতিরিক্ত স্বাধীনতা নারীদের জন্য কোনো কালেই কোনো কল্যাণ বয়ে আনেনি; বরং অতিরিক্ত স্বাধীনতা বরাবরই তাদের ক্ষতির কারণ হয়েছে। সেদিন ইউটিউবে দেখলাম, যারা পোশাকের স্বাধীনতা নিয়ে আন্দোলন করছে, তাদের পোশাক রুচিশীল পোশাকের পর্যায়ে পড়ে না। এমন পোশাক পরে আন্দোলন করে তারা কি বাংলাদেশের মেয়েদেরকে নগ্নতার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে না?
নারী হলো লোভনীয় বস্তু। নারীর প্রতি পুরুষের লোভ চিরন্তন। তাই লোভনীয় বস্তুকে যেমন মানুষদের থেকে সযতনে ঢেকে রাখতে হয়, তেমনি নারীদেরকেও তাদের নিজেদেরকে সযতনে ঢেকে চলতে হবে। এছাড়া ইসলামী বিধান অনুসারে রাস্তায় বের হলে হাতমোজা, পা-মোজা পরা উচিত। আর নারীদের থাকার মূল জায়গা হলো ঘর। তাদের যথাসম্ভব ঘরেই থাকা উচিত। যদি জরুরী কোনো দরকার না থাকে, তবে রাস্তায়, হাট-বাজারে ঘুরে বেড়ানো তাদের জন্য মোটেই কল্যাণকর হবে না। এছাড়া যেসব ঘরে পুরুষ মানুষ আছে, সেসব ঘরের নারীদের বাইরে বের হওয়ার তেমন কোনো প্রয়োজনই নেই। তবুও তারা ফ্যাশনকৃত বোরকা পরে, গায়ে পারফিউম দিয়ে পুরুষদের পাশ দিয়ে চলে। যার ফলে সংঘটিত হচ্ছে ইভটিজিং এবং ধর্ষণের মতো ঘটনা। আর এগুলো এখন যেন নিত্য অপরাধে পরিণত হয়েছে। এককথায়, ইসলামের পর্দাবিধান না মেনে পোশাক বির্তকে জড়ানো নারীদের কারণেই এসব অপরাধ প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে।
তাই আসুন! সবাই রুচিশীল ও শালীন পোশাক পরিধান করি। স্বাধীনতার নামে নগ্নতাকে আমরা কখনই যেন গ্রহণ না করি। আমরা যদি সচেতন ও সতর্ক হই, তবেই পোশাক বির্তকের নামে অতিরিক্ত স্বাধীনতার অবসান হবে। আর অসংখ্য নারী বাঁচতে পারবে ইভটিজিং এবং ধর্ষণের নিষ্ঠুর থাবা থেকে। আল্লাহ আমাদের বুঝার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!
মো. জোবাইদুল ইসলাম
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থী, মিরসরাই, চট্টগ্রাম।